কল্পনা চাকমা অপহরণ : পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার ও নারী অধিকার লংঘন – এডভোকেট খালেদা খাতুন
১. হিল উইমেন্স ফেডারেশন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী নারীদের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ পাহাড়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায় ১০ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সংগঠনের কর্মীরা পাহাড়ী নারীদের সংগঠিত করছে সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী এবং জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্তৃক সংগঠিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। এ কাজকে আরো সুসংহত ও সংগঠিত করার জন্য উক্ত সংগঠন অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নারী এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করছে।
২. ১৯৯৬ সালের ১১ জুন রাত দেড়টার সময় পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রাম থেকে কল্পনা চাকমাকে (২৩) সশস্ত্র সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তাবাহিনীর ৭-৮ জনের একদল লোক অপহরণ করে নিয়ে যায়। কল্পনা চাকমাকে অপহরণকালে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা তার বড়ো দুই ভাইকেও চোখ বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারা কোনো রকমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। পরদিন ১২ জুন বাঘাইছড়ি থানায় একটি মামলা (নম্বর-২/৯৬১) দায়ের করা হয়। মামলার এফআইআর’এর তথ্য গ্রহণ করা হয় বড়ো ভাইয়ের কাছ থেকে। অপহরণকালে দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাই কজুইছড়ি সেনা ক্যাম্পের লেফটেনেন্ট ফেরদৌসকে চিনতে পারে। কারণ লেফটেনেন্ট ফেরদৌস ১৫-২০ জন সদস্যসহ ঐ অপহরণ ঘটনার দুমাস আগে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে কল্পনা চাকমার বাড়ীতে এসে তাকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং একপর্যায়ে ঐ জিজ্ঞাসাবাদ বাদানুবাদে পরিণত হয়। কল্পনা ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক নেত্রী।
৩. কল্পনা অপহরণের ঘটনাটি তদন্তে মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের একটি দল ১৯৯৬ সালের ২ জুলাই রাঙ্গামাটি যায়। আমিও ঐ দলের একজন সদস্য ছিলাম। ঘটনাস্থলে পরিদর্শন ও কল্পনা চাকমার আত্মীয়স্বজনের সাক্ষাতকার গ্রহণের আগে তদন্ত দলটি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা ও (টিএনও), ব্রিগেড কমান্ড অফিসের মেজরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এসব সাক্ষাৎকার ও আলাপ-আলোচনা থেকে যেসব বিষয় বেরিয়ে আসে, সেগুলো সংক্ষেপে হচ্ছেঃ (ক) সরকারি ও সেনা কর্মকর্তারা কল্পনা চাকমা কোথায় আছেন, জীবিত না মৃত এসব কোনো প্রশ্নেরই জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের ভাষ্য ছিল, তদন্তের খাতিরে নাকি কিছুই বলা যাবে না। (খ) লেফটেনেন্ট ফেরদৌসের অবস্থান তখন কোথায় ছিল- এ প্রশ্নেরও জবাব তারা দিতে পারেননি। (গ) পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, তদন্তের স্বার্থে লেফটেনেন্ট ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। (ঘ) পুলিশ কল্পনা অপহরণের মামলাটিকে দুর্বল করার জন্য ঐ মামলার বাদী অপহৃতার ভাইয়ের জবানবন্দী অনুযায়ী তৈরি করা এফআইআর থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের কথা বাদ দেয়। বাদীর জবানবন্দীটিও তাকে পড়ে শোনানো হয়নি। কিন্তু একই ব্যক্তির টিএনওর কাছে দেওয়া জবানবন্দীতে অপহরণ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল।
৪. কল্পনা চাকমা অপহরণের খবরটি প্রথমে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৩ জুন। হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ী গণপরিষদের সংবাদ বিবৃতির বরাত দিয়ে ঐ অপহরণের খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তিন সংগঠনের যুক্ত বিবৃতিতে অপহরণ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করে কল্পনাকে উদ্ধারের জোর দাবি জানানো হয়।
এরপর অন্যান্য সংবাদপত্রেও তিন সংগঠনের ঐ বিবৃতি প্রকাশিত হয়। দৈনিক ভোরের কাগজ ও দি ডেইলি স্টার কল্পনা চাকমা অপহরণের বিষয়ে প্রকাশ করে সরেজমিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ভোরের কাগজে ধারাবাহিকভাবে কল্পনা চাকমার সংগ্রামী চিন্তা- চেতনার ব্যক্তিগত ডায়েরীও প্রকাশিত হয়।
কল্পনা অপহরণের পর হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক সংবাদ সম্মেলনে, বাঘাইছড়ি থানা এলাকায় ধর্মঘট, ঐ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তিনজন নিখোঁজ ও ছাত্র পরিষদকর্মী রূপন চাকমা হত্যাকাণ্ডের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়। মানবাধিকার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচার মাধ্যমগুলো এই অপহরণ সংক্রান্ত ঘটনা প্রকাশে বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এসব ঘটনার সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রচার মাধ্যমগুলো কোনো রকম ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ নীতি গ্রহণ না করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপন করে। কিন্তু প্রচার মাধ্যমগুলো এসব সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু ক্ষতিকর ভূমিকাও পালন করেছে। যেমন ১৯৯৬ সালের ২৭ জুলাই বাঙালিদের সংগঠন পার্বত্য গণপরিষদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় যে, ঐ অপহরণের ঘটনাটি জনসংহতি সমিতির তৎকালীন গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর সাজানো ঘটনা। এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির খবর প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর ৮ আগস্ট ড. কলিমুল্লাহ ও সাইফুল ইসলাম দিলদারের নেতৃত্বাধীন মানবাধিকার কমিশন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজন করে এক বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ সম্মেলন। এতে তারা দাবি করে যে, কল্পনা চাকমা শান্তিবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়ে ভারতের ত্রিপুরার শুক্রে গ্রামে অবস্থান করছে এবং ইতিমধ্যে মায়ের সঙ্গে তার দুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। এ সংবাদ সম্মেলনের খবরটিও বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ী গণপরিষদ ও সম্মিলিত নারীসমাজ এসব বক্তব্য খন্ডন করে বিবৃতি দেয়। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে কল্পনা চাকমার মা বাঁধুনী চাকমা মানবাধিকার কমিশনের তদন্তকে চ্যালেঞ্জ করে সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য স্পষ্ট করেন। ঐ সংবাদ সম্মেলনের খবরও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিবিসির সুবীর ভৌমিক সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে ত্রিপুরা থেকে দেওয়া এক খবরে জানান, অনুসন্ধান চালিয়ে আদৌ ত্রিপুরার কোনো গ্রাম বা শরণার্থী শিবিরে কল্পনা চাকমার সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিবৃতি দেওয়া ও সংবাদ সম্মেলন করার অধিকার সকলেরই আছে। কিন্তু ঐ রকম বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশের আগে এক্ষেত্রে সংবাদপত্রগুলোর উচিত ছিল ঐসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করা।
৫. পাহাড়ী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা এবং সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে অবিলম্বে কল্পনাকে উদ্ধারের দাবি জানায়। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’ সংসদে একই বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হলে তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক, বাঘাইছড়ি থানার ওসিকে আবেদন জানায় কল্পনাকে উদ্ধারের কাজ শুরু করার জন্য।
এতো কিছুর পর সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু সরেজমিনে তদন্ত না করে ঐ কমিটি রাঙ্গামাটি সদরে এবং ঢাকায় তদন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ করলে সে সময়েই কমিটির বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া ঐ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজো প্রকাশিত হয়নি।
কিন্তু দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে পরে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কল্পনা চাকমা অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তবে কে বা কারা তাকে অপহরণ করেছে এবং কল্পনার অবস্থান এখন কোথায় ঐ প্রতিবেদনে সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ঘটনার আরো পরে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সময় দুটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আবারো বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে। ঐ বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়ে ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থান করছে বলে বলা হয়েছে এ মর্মে সংবাদ দুটি প্রকাশিত হয়।
৬. ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে আমরা মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের দলটি কল্পনা চাকমা অপহরণের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করার পর আমাদের দলের পক্ষ থেকে যেসব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দৈনিক ভোরের কাগজ ও ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত হয়েছিল, ঐসব প্রতিবেদন সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। মূল: এ সময়ের পর থেকেই কল্পনা চাকমা একটি ইস্যুতে পরিণত হয়।
ঐ সময় সেনাবাহিনী তাদের দায়-দায়িত্ব এড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রামে হেলিকপ্টার দিয়ে লিফলেট বিলি করে কল্পনা চাকমার সন্ধান দাতার জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে তো বটেই, এমনকি বাংলাদেশও কোনো অপহৃতের সন্ধান চেয়ে হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট বিলি করার সেটিই প্রথম ঘটনা।
এ ছাড়া ঐ সময় সশস্ত্রবাহিনীর আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক দীর্ঘ বিবৃতিতে উল্লিখিত সরেজমিন প্রতিবেদনগুলো অসত্য বলে প্রচার করার প্রয়াস নেয়। ঐ বিবৃতিটিরও ভাষ্য ছিল, কল্পনা চাকমাকে শান্তিবাহিনী অপহরণ করে তারাই আবার তার অপহরণের দায়-দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপর চাপাতে চাইছে।
৭. ১৯৭৩ সালে জনসংহতি সমিতির গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সংখ্যায় নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। দীর্ঘ ২৫ বছর শান্তিবাহিনীর সঙ্গে সেনা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাত চলে। এ সময় সেখানে সংঘটিত হয় অসংখ্য গণহত্যা, গণধর্ষণ, খুন অপহরণ লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা। সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের যৌথ আক্রমণে এসব ঘটনার নির্মম শিকার হন প্রধানত পাহাড়ীরাই। কল্পনা চাকমা অপহরণের আগে অবরুদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রামে এরকম প্রচুর অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দীর্ঘ ২৫ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে পরোক্ষ সেনা শাসন বহাল থাকায় সেসব ঘটনার অধিকাংশই জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি। তথ্যের অবাধ প্রবাহ সে সময় ছিল এক দুরূহ ব্যাপার। ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল লোগাং গণহত্যার পর সম্ভবত কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনাটিতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের পাহাড়ী নির্যাতন, তথা ব্যাপকহারে মানবাধিকার লংঘনে নির্মম ইতিহাসের একাংশ ফাঁস হয়ে পড়ে।
৮. কল্পনা চাকমা যেহেতু প্রধানত হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর নেত্রী ছিলেন, সেহেতু সেনাবাহিনী কর্তৃক তিনি অপহরণের ঘটনায় সর্বত্র ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হলেও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগে ও পরে জনসংহতি সমিতি প্রধান সন্তু লারমা ও তার সহযোগিরা শান্তিচুক্তি ইস্যুতে প্রচুর বক্তব্য দিলেও কল্পনা চাকমা অপহরণসহ পাহাড়ের মানবাধিকার লংঘনের কোনো ইস্যুতেই তেমন কোনো বক্তব্য দেননি। বরং কল্পনার ইস্যুটি বিতর্কিত বিষয় বলে এড়িয়ে গেছেন।
এখন অবশ্য সন্তু লারমাও এখন বিচ্ছিন্ন ভাবে কল্পনা চাকমা অপহরণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার লংঘনের নানা বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
কিন্তু কল্পনা চাকমা ইস্যুটিকে মানবাধিকার লংঘন এবং আদর্শিক অবস্থানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত জোরালোভাবে উর্ধ্বে তুলে ধরেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও তার সহযোগী সংগঠন পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের বিশ্বাসী পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং বর্তমানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিশ্বাসী ( UPDF) United People’s Democretic Front.
৯. আমরা মানবাধিকার কর্মীরা, যারা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কল্পনা ইস্যুটির সঙ্গে জড়িত, আত্মসমালোচনা করলে দেখতে পাবো, এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যুতে আমাদের তথ্যগত, আইনগত, প্রচারগত দিকগুলো সার্বক্ষণিক ও ধারাবাহিকতা আমরা চালিয়ে যেতে পারিনি।
এছাড়া প্রথম থেকে এ পর্যন্ত কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনাটি সার্বক্ষণিক ভাবে দেশবাসীর সামনে জিইয়ে রাখতেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলন, তথা নারী অধিকার আদায়ের জাতীয় আন্দোলন থেকে এভাবেই ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছেন কল্পনা চাকমা।
১০. আমরা মনে করছি, আদর্শগত কারণে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ পৃথক অবস্থানে থেকেই পাহাড়ীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করছে। কিন্তু তাদের উচিত হবে অন্তত কল্পনা চাকমার ইস্যুটিতে এক সঙ্গে আন্দোলন করা।
অপ্রকাশিত, মে ২০০১