কল্পনা চাকমার ডায়েরি, চিঠিপত্র ও ছবি
কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচারের দাবি : রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও প্রতিরোধ
কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিক্রিয়া : বিভিন্ন লেখকদের লেখা

কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে স্মারকলিপি ও প্রচারপত্রসমূহ

কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে স্মারকলিপি ও প্রচারপত্রসমূহ

.

কল্পনা অপহরণের এক বছর

অবিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করুন
সকল ধরনের নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম গড়ে তুলুন

চাঞ্চল্যকর কল্পনা চাকমা অপহরণের এক বছর পূর্ণ হলো। গত বছর ১২ জুন ভোর রাতে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থানাধীন নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে কজইছড়ি আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেনেন্ট ফেরদৌস কর্তৃক তিনি অপহৃত হন।

সংসদ নির্বাচনের এত বড় একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টা পূর্বে কল্পনা চাকমার অপহরণ সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। সারা দেশের মানবতাবাদী বিবেকবান মানুষ এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে সো চার হলে সরকার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়। প্রবল গণ চাপের মুখে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হলেও তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। সেনাবাহিনী অপহরণ ঘটনাকে ধামাচাপা দেবার জন্য মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা চালায়। জনতার দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে নিজেরা নির্দোষ সাজার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাতে কল্পনার সন্ধানদাতার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। সামরিক হেলিকপ্টারে প্রচারপত্র ছেড়ে দেয়। এতে জনগণ আরো বেশী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। লেজে গোবরে অবস্থা হওয়াই শেষ মেষ ২৪ পদাতিক ডিভিশন অপহরণ ঘটনা অস্বীকার করে দীর্ঘ বিবৃতি দেয়। এই বিবৃতি অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়ার মত। পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশ ঐ বিভ্রান্তিকর বিবৃতি প্রত্যাখান করে পাল্টা বিবৃতি দেয়। সেনাবাহিনী নীতি লংঘন করে ২৪ পদাতিক ডিভিশন আলাদাভাবে বিবৃতি দিয়ে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে নিরপরাধী সাজার যে অপচেষ্টা চালায় তাতে করে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন সংগঠন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বিবৃতির ওপর প্রশ্ন তোলে এবং প্রত্যাখান করে।

নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ব্যর্থ হয়ে সেনাবাহিনী হাস্যকর ভাবে বিভিন্ন ভাড়াটে সংস্থা দিয়ে তদন্ত চালায় এবং সাংবাদিক সম্মেলনও করে। বিভিন্ন মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে দেশবাসীকে হাসির খোরাক যোগায়।

জনগণ সেনাবাহিনীর প্রযোজিত ও অভিনীত অনেক নাটক দেখেছে। আর নয়, এসব অনেক হয়েছে। জনগণ এবার সরকারের গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেখতে চায়। কল্পনাকে উদ্ধারের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সে সম্পর্কে জানতে চায়। কল্পনাকে অপহরণের পরও কেন তার বৃদ্ধ মা ও দুভাইকে হুমকি দিয়ে সন্ত্রস্ত করে রাখা হয়েছে এর জবাব সরকারকে দিতে।

অপহরণের একটি বছর পূর্ণ হওয়ার পরও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আলামত দেখা যাচ্ছে না। সে সময় নির্বাচনী ব্যস্ততা, নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ, দায়িত্ব বুঝে নেয়া-এ সমস্ত কারণে সময়ের দরকার ছিল। বর্তমানে আবার বাজেট অধিবেশন নানা ধরনের উছিলায় তদন্ত রিপোর্ট ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে সরকারের গড়িমসি সুস্পষ্ট। সরকার কোন ভাবে কল্পনার অপহরণের দায় এড়াতে পারে না। সরকার এটাই প্রমাণ করছে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের নারী সমাজের নিরাপত্তা বিধান করতে অক্ষম। নারী নির্যাতনকারী চিহ্নিত দুশমনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যেখানে বাড়ীতে নিরাপত্তা নেই, রাস্তাঘাট হাট বাজার ও অন্যান্য এলাকার কথাতো আলাদা। দেশে কি আইন শৃংখলা বলে কি কিছু আছে? সরকার কিভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারে? কল্পনা অপহরণের ঘটনা থেকে এই শিক্ষা নিতে হবে যে নিজেদের অধিকার ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য সরকারের করুণার ওপর নির্ভরশীল হওয়া চলে না। আন্দোলন লড়াই সংগ্রাম করেই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। অধিকার এমন জিনিস যা ভিক্ষে মেলে না। চেয়ে নেয়া যায় না। অধিকার নিতে হয় ছিনিয়ে। প্রতিষ্ঠা করতে হয় আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।

অপহরণের একটি বছর পূর্ণ হওয়ার এই দিনটিতে নতুন করে শপথ নিতে হবে। আসুন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম জোরদার করি। সাথে সাথে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলুন:

  • তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে গড়িমসি চলবে না
  • অবিলম্বে কল্পনা চাকমার অপহরণ রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে
  • অপহরণকারী চিহ্নিত অপরাধী লে: ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে
  • এক বছর যাবৎ কেন কল্পনাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হয়নি সরকারকে তার জবাব দিতে হবে।
  • পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে
    তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার, ভূমি বে-দখলকারী বহিরাগতদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মাজনক পুনর্বাসন ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহার ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এই বিষয়গুলো বাদ দিয়ে অন্য যে কোন ধরনের সমঝোতা জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার সামিল হবে।

১২ জুন, ১৯৯৭, ঢাকা
পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন
পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার
প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত

.

কল্পনা চাকমাকে অপহরণের বছর

তদন্ত রিপোর্টের কি হলো শেখ হাসিনার জবাব চাই

পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু চাঞ্চল্যকর লোমহর্ষক বেদনাবিধুর দিনের মাঝে ১২ই জুন বিশেষভাবে চিহ্নিত একটি দিন। অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ী নেত্রী হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমাদের প্রিয় বোন কল্পনা চাকমা অপহৃত হবার ৪ বছর পূর্ণ হলো আজ।

‘৯৬ সালের এই অভিশপ্ত দিনে কল্পনা চাকমা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র সাত ঘণ্টা পূর্বে দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ী হতে কজইছড়ি সেনা ক্যাম্পকমান্ডার লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগী জওয়ানদের হাতে অপহৃত হয়েছিলেন।

দেশে সে সময় সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলো একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অপহরণের মতো এত বড় একটি গুরুতর অপরাধ ও নির্বাচনী বিধি লংঘন করা সত্ত্বেও চিহ্নিত অপরাধী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগী আনসারদের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোন পদক্ষেপই নেয়নি। অধিকন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম সদস্য মোঃ ইউনুস কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনাকে তৎকালীন সেনা প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। দেশে সুষ্ঠ অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘দেশবরেণ্য’ ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হাবিবুর রহমান ও সদস্য মোঃ ইউনুসদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় কীর্তি (!!!) হচ্ছে কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার পরে ন্যাক্কারজনক কথার্বাতা ও সীমাহীন নিষ্ক্রিয়তা। আর তড়িঘড়ি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনী কালিমার বালিতে উট পাখীর মতো মুখ গুঁজে থাকার অপপ্রয়াস!! কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনা নিয়ে দেশে এক লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেলো! আজ একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিলেন না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন ব্যক্তি!!! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হাবিবুর রহমান, মোঃ ইউনুসসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে এর জন্য দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে একদিন।

নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ পার্বত্য চট্টগ্রামে ও সারাদেশে কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রবল প্রতিবাদের মুখে জনতাকে শান্ত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়েছিলো। সেই তদন্ত কমিটির পেশকৃত রিপোর্ট আজ অবধি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলো না। চিহ্নিত অপহরণকারীর বিরুদ্ধে ন্যূনতম আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, অপহরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের ন্যূনতম প্রশাসনিক দায়িত্ববোধের পরিচয়টুকু দিতে পারলো না আওয়ামী লীগ সরকারের কোন এমপি, মন্ত্রী কিংবা পদস্থ ব্যক্তি। অপহৃত কল্পনা চাকমার শোকাহত বৃদ্ধা মার সাথে সাক্ষাত করার সৌজন্যতাটুকুও প্রদর্শন করেনি সরকারের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। মেয়ে অপহরণের দুঃখ ও শোকে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছেন কল্পনার বৃদ্ধা মা বাঁধুনী চাকমা। তাতে সরকারের কোন খবর হয়নি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাণ্ডজ্ঞানহীন কার্যকলাপের সাথে পাল্লা দিয়ে দালালী ও লাম্পট্যের ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতীয় বেঈমান বিশ্বাসঘাতক সন্তু লারমা। ১০ ফেব্রুয়ারী ‘৯৮ খাগড়াছড়িতে আত্মসমর্পণের দিনে তিনি কল্পনা চাকমাকে অপহরণ ও লোগাং গণহত্যার মতো স্মরণাতীত কালের ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞকে ‘বিতর্কিত বিষয়’ বলার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন। [দেখুন : আজকের কাগজ ১১ ফেব্রুয়ারী ‘৯৮, ভোরের কাগজ ১১ ফেব্রুয়ারী ‘৯৮ ও বিবিসি সান্ধ্য অনুষ্ঠানে প্রচারিত ১০ ফেব্রুয়ারী ‘৯৮]

সরকারের উচ্চপদ ও সুযোগ সুবিধার লোভে জনতার অধিকার আদায়ের আন্দোলন বিকিয়ে দেয়া জাতীয় বেঈমান বিশ্বাসঘাতক সন্তু লারমাকে এর জন্য জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনাকে ‘বিতর্কিত বিষয়’ বলার ধৃষ্টতা দেখানোর জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজের সামনে তাকে একদিন নাকে খত দিতে হবে।

দালালীর পুরস্কার হিসেবে সন্তু লারমা এখন সেনা-পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে অধিষ্ঠিত। আর অপহৃত কল্পনা চাকমারা আজো নিখোঁজ। তদন্ত রিপোর্ট গায়েব! কল্পনার বৃদ্ধা মা বাঁধুনী মেয়ের শোকে মারা গেছেন। তার মতো আরো অনেক নাম না জানা বৃদ্ধা মা অসহায়ভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরে যাচ্ছেন। যেহেতু এখন সন্তু লারমা বাবু আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান তাই এ ধরনের ঘটনা তার ভাষায় ‘বিতর্কিত বিষয়’।

বড় পরিহাসের বিষয় হচ্ছে এই, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা’র জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দেশে বিদেশের বাবা ও পুরস্কার-ডিগ্রি কুড়িয়ে চলেছেন। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্যাতিত জনতা দিন দিন সর্বশান্ত হয়ে নিজ বাস্তুভিটা হারিয়ে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আখ্যা দিচ্ছেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সমাধান’। আর সন্তু লারমার মতো দালালরা তোতা পাখীর মতো বলে যাচ্ছেন যে, ‘পার্বত্য চুক্তি’র মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাধান নিহিত। ‘চুক্তি বাস্তবায়ন’কেই তারা একমাত্র ধ্যানজ্ঞান করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত দেশপ্রেমিক বন্ধুদের বিরুদ্ধে সেনা-পুলিশের সহায়তায় সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র নারী সংগঠন হিসেবে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পথভ্রষ্ট জনসংহতি সমিতির মধ্যকার গোপন আঁতাতের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে।

কল্পনা চাকমার অপহরণের ৪ বছর পূর্ণ হবার দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ও সমাধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে জনগণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নেবার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন জনতার সাথে একাত্ম হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।

সরকারের কাছে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দাবি হচ্ছে :

অবিলম্বে অপহৃত কল্পনা চাকমার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের অপরাপর অঞ্চলে সংঘটিত সকল ধরনের নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ ইয়াসমীন-সীমা-তানিয়ার মতো শিশু ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার ও জনসংহতি সমিতির পরিচালিত যৌথ দমন-পীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

ভোটার তালিকা প্রণয়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগতদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

পাবর্ত্য চট্টগ্রাম হতে অবিলম্বে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে এবং রাঙ্গামাটির কাউখালী ও নানিয়াচরে পরিচালিত হয়রানিমূলক সেনাঅভিযান বন্ধ করতে হবে।

টিএসসি সড়ক দ্বীপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১২ জুন, ২০০১
হিল উইমেন্স ফেডারেশন
কেন্দ্রীয় কমিটি
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত।

.

কল্পনা চাকমার অপহরণ ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক সম্মেলন :

সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুরা,

আপনারা আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আজ বড় দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দুটি কথা তুলে ধরার জন্য আমরা আপনাদের সম্মুখে দাঁড়িয়েছি।

প্রিয় ভাইয়েরা,

আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, আমাদের সংগঠনের নেত্রী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে ১৩/১৪ দিন পরও মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধা কল্পনা চাকমার ব্যাপারে আমরা দারুন উদ্বিগ্ন। তার ভাগ্যে কি ঘটেছে আমরা আসলেই জানি না। আমরা সত্যিই ভীষণ বিচলিত।

৭১ সালের কালোরাত্রির দিনগুলোতে এদেশের বহু মা-বোন হারিয়ে গেছেন। সেই দুঃসহ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজো অনেকে শিউরে উঠেন।

বন্ধুরা,

আজ এতোটি বছর পরও, আমরা সেই ‘৭১ সালে এদেশের মা-বোনেরা যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছিলো তা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। এটা আমাদের বড় দুঃখ।

আজো আমরা সেই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ভীতি নিয়ে দিন যাপন করছি। কবে হবে অবসান এই অসহনীয় অবস্থার। আমরা আপনাদের মুখাপেক্ষী হয়েছি। আপনাদের শাণিত কলমের মাধ্যমে বস্তুনিষ্টভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক চিত্র ফুটে উঠলে আমরা অন্তত: কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবো।

সাংবাদিক ভাইয়েরা,

আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধা কর্মচঞ্চল এক প্রাণবন্ত উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ী বোন কল্পনা চাকমাকে দুই সপ্তাহ আগে রাতের অন্ধকারে অপহরণ করে নেয়া হয়েছে। সেদিন ১১ই জুন দিবাগতরাত্রি ১টার দিকে লে: ফেরদৌস (কজইছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার, ১৭ ই: বি: রেজিমেন্ট) ও ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার নুরুল হকের নেতৃত্বে একদল সেনা ও ভিডিপি কল্পনা চাকমাকে ধরে নিয়ে যায়। অপহরণকারী লে: ফেরদৌস ও ভিডিপি প্লাটুন কমান্ড। নুরুল হক নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামে কল্পনার বাড়ীতে হানা দেয়। গভীররাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো কল্পনাও বাড়ীতে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলো। অপহরণকারীরা বাড়ী ঘিরে ডাকাতি করে। আর্মিরা যে বাড়ী ঘিরে ফেলেছে, পরিবারের সবাই জেনে যায়। সেজন্য কোন চিৎকার করার সাহস পায়নি। দরজা খুলতে একটু দেরী হলে, তারা দরজা কেটে বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। [পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকজনের গ্রামের বাড়ীগুলো সবই বাঁশের তৈরী। বাঁশের দরজার দড়িতে আটকানো লাগারা (খিল ধরনের) কেটে তারা ঢুকে। ]

ঘুম থেকে উঠিয়ে সবাইকে বৈঠকখানায় জড়ো করে। বাতি জ্বালাতে নিষেধ করে। একে একে নাম জিজ্ঞেস করে। কল্পনার ভাই লাল বিহারী চাকমা (২৬) ওরফে ক্ষুদিরামকে নাম বলার সাথে সাথে বাড়ীর উঠোনে বের করে। “স্যারের কাছে যেতে হবে” বলে টেনে নিয়ে যায়। সনাক্ত করার জন্য তার মুখ বরাবর টর্চ জ্বালায়। চোখে আলো না পড়ার জন্য ক্ষুদিরাম হাত দিয়ে আলো প্রটেকশান করে। এতে লে: ফেরদৌস ও অন্যান্যদের মুখে আলো পড়লে ক্ষুদিরাম তাদেরকে স্পষ্ট চিনে ফেলে। সে লে: ফেরদৌসকে আর্মির ক্যামোপ্লাজ গেঞ্জি পরা অবস্থায় দেখতে পায়। কাছে থাকা ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার নুরুল হক পিতা, মৃত মুন্সি মিঞা ও ভিডিপি সালেহ আহম্মেদকে চিনে ফেলে।

লেঃ ফেরদৌস ক্ষুদিরামকে কুয়ার ঘাটে নিয়ে যেতে তার জোওয়ানদের অর্ডার দেয়। এটি কল্পনাদের বাড়ীর পশ্চিমে প্রায় দেড়শ গজ দূরে হবে। (সেখান থেকে তাদের পরিবার পানি তুলে।) কুয়ার ঘাটে নিয়ে ক্ষুদিরামকে চোখ বেঁধে দেয়া হয়। দুহাত সামনে জড়ো করে বেঁধে দেয়।

প্রায় ১০/১৫ মিনিট পরে কল্পনাসহ তার আরো এক বড় ভাই কালিন্দি কুমার চাকমা (৩২) ওরফে কালীচরণকে কুয়ার ঘাটে নিয়ে আসে। কালী চরণকেও তারা চোখ বেঁধে দেয়। কল্পনাকে তখনও চোখ বেঁধে দিতে কালীচরণ দেখেনি। কল্পনা তার হাত ধরা অবস্থায় ছিলো। তাদেরকে সেখান থেকে আবার পশ্চিম দিকে নিয়ে যেতে থাকে। কুয়ার ঘাটের পশ্চিমে বেশ বড় সড় বিল রয়েছে। রীতিমতো নৌকো চলাচল করে। নিজের এলাকা বলে তারা জায়গাটা আন্দাজ করতে পারে। এভাবে কিছু দূর নিয়ে যাবার পর ক্ষুদিরামকে বিলের পাড়ে নিয়ে হাঁটু পানিতে নামায়। তার বাম হাতে একজন ধরে রাখে এবং অন্যজনকে ফায়ার করার ইঙ্গিত দেয়। ক্ষুদিরাম আর মুহূর্ত দেরী না করে হাতের বাঁধন খুলে পানিতে ঝাঁপ দেয়। সাথে সাথে আর্মিরা ফায়ার করলেও সৌভাগ্যক্রমে সে অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে জান বাঁচাতে সক্ষম হয়।

এদিকে ক্ষুদিরামের বড়ভাই কালীচরণ ও কল্পনাকে আর্মিরা বিলের মাঝামাঝি পথে নিয়ে আসে। কালীচরণ গুলিরশব্দ শুনলে, তার ভাইকে মেরেছে এই ভয়ে সেও জানপ্রাণ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাকেও সাথে সাথে গুলি করে। ভাগ্য ভালো, সেও অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যায়। কিন্তু আর কল্পনা চাকমাকে সাথে নিয়ে যেতে পারেনি।

এ সমস্ত পুরো ঘটনাবলী জানতে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। ক্ষুদিরাম রাত্রে আর বাড়ীতে ফেরার সাহস করেনি। সে প্রিয় রঞ্জন চাকমার (৫৫) নামে এক বাড়ী আশ্রয় নেয়। ভোর হলে বাড়ীতে এসে সে পুরো ঘটনাবলী জানায়। সকালে গ্রামের লোকজন মিলে ঘটনাস্থল তদন্ত করতে যায়। ঘটনাস্থলে সামরিক কাজে ব্যবহৃত একটি খালী ব্যান্ডেলী পাওয়া যায়।সকাল ৬.৩০ টার দিকে স্থানীয় উগোলছড়ি আর্মি ক্যাম্পে খবর দিতে গেলে ক্ষুদিরাম ও ইউপি মেম্বার পূণ্য রঞ্জন চাকমাকে (৪০) লে: ফেরদৌস চোখ রাঙিয়ে অভদ্র ভাষায় গালিগালাজ করে। তাদের কোন কথা শুনতে চায়নি।

“ছালা, মদ খাইছ নাকি? পাগল নাকি? শান্তিবাহিনী থেকে কতদিন হলো এখানে এসেছো?” এধরনের অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। তাদেরকে উল্টো দোষী বানিয়ে সম্রস্থ করে রাখতে চায়। ক্যাম্পের এক মেজর সিরাজকে ঘটনাটি অবহিত করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পরে টি.এন.ও’র কাছে ঘটনাবলী জানালে, উনি থানায় এজাহারের পরামর্শ দেন। থানায় এজাহার দিতে গেলে ক্ষুদিরাম লে: ফেরদৌসকে চিনেছে উল্লেখ করলে, থানার ওসি ধমক দেন। ক্ষুদিরামের জবানবন্দী থানায় লেখা হলেও, তার কাছ থেকে তাতে স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। ঘটনাটি রাঙ্গামাটির ডিসি ও এসপিকে ও অবহিত করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি থেকে এডিএম তদন্তে গেলে, কালীচরণ ও ক্ষুদিরামকে বাড়ীতে না থাকার পরামর্শ দেন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে বিহিত ব্যবস্থা করার জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ধর্ণা দিয়েও আজ পর্যন্ত কল্পনা চাকমার কোন হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

সাংবাদিক বন্ধুরা,

দেশে এই যদি অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে আমরা কোথায় যাবো??? কল্পনা চাকমার ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশনের আগ্রহও পরিলক্ষিত হচ্ছে। সারা দেশবাসী যখন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক এই ফাঁকে এত বড় একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেলো তার বিহিত ব্যবস্থা এতোদিন পরও হলো না। নির্বাচন শুরু হওয়ার ৭ ঘন্টা আগে কল্পনাকে অপহরণ করা হয়েছিল। এসব কিসের ইঙ্গিত বহণ করে আপনারাই এর উত্তর খুঁজে বের করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। দেশে আসলে কয়টি সরকার শাসনকার্য চালাচ্ছে আমাদের প্রশ্ন জাগে।

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,

আপনারা জানেন, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর হাতে জিম্মি। সেখানে তারাই সবকিছু। নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্ববধায়ক সরকারের কঠোর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ঐ নির্বাচনী ডামাঢোলে তারা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়েছে। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নারীদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন চলছে। ইতিপূর্বেও বান্দবানের রোয়াংছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী ওয়াই চিং মারমাকে আর্মি ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে ছবি তোলে, জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়।

খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে সংগঠন না করার জন্য হুঁশিয়ারী দিয়ে আসে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভানেত্রী কবিতা চাকমার বাড়ীতে কয়েক বার হানা দেয় তাকে হেনস্ত করার জন্য গুন্ডা মাস্তান ভাড়া করে। সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা সভানেত্রী নৈরঞ্জনা চাকমাকে গতবছর সেনা আশ্রিত মস্তান দিয়ে হেনস্ত করা হয় এবং সংগঠনের কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়। কল্পনা চাকমার অপহরণের পর আর কোন ধরনের নিয়তি আমাদের অপেক্ষা করছে কিনা জানি না। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো কোথায় কি ঘটছে, আসলে দেশবাসী কিছুই জানে না। খাগড়াছড়ি জেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নে রজকীনি ত্রিপুরাকে (১২) পিতা হলেন্দ্র ত্রিপুরা গেল ১৪ মে সৈয়দ আলী নামে আনসারের এক সেপাই বল পূর্বক পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে অজ্ঞান করে রেখে যায়। ঘটনাটি দিতে দুপুরে উক্ত নরপশুটি ২নং প্রকল্প গ্রামে ঢুকে ঘটিয়েছে। সে কুকিছড়া আর্মি ক্যাম্পের ৮নং চেকপোষ্টে টহল দিতো। এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনাবলী দেশবাসীর অজান্তে ঘটে চলছে। এ সবের প্রতিকার চেয়েও কিছুই হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তাবাহিনী নিরাপত্তার নামে নিরীহ পাহাড়িদের নিরাপত্তা হরণ করে চলেছে। এর ভুরি ভুরি নজির রয়েছে।

সাংবাদিক ভাইয়েরা,

আপনাদের মাধ্যমে আমরা কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রেক্ষিতে সরকারের কাছে নিন্মোক্ত দাবি তুলে ধরতে চাই :

১. অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. অপহরণের ঘটনাবলী সরেজমিনে তদন্তের জন্য একটি বিচারবিভাগীয় কমিটি গঠন করতে হবে।

৩. অপহরণের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪ . অপহৃত কল্পনা চাকমাকে যে কোন শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতনের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৫. ভবিষ্যতে আর যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার বিহিত ব্যবস্থা করতে হবে। কল্পনা চাকমার মুক্তির দাবীতে আগামীকাল ২৭ জুন ঢাকায় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীক অনশন পালন হবে। ২৮ জুন তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন পাহাড়ী গণ-পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ডাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় অর্ধদিবস শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী পালিত হবে। আমাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে সহায়তা দেয়ার জন্য আপনাদের আহ্বান জানিয়ে শেষ করছি। ধন্যবাদ ২৬ জুন, ১৯৯৬ জাতীয় প্রেসক্লাব।

১। কবিতা চাকমা, কেন্দ্রীয় সহ-সভানেত্রী হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

২। সমারী চাকমা, কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পদিকা। হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

৩। রিপু চাকমা, সভানেত্রী, ঢাকা শাখা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

.

কল্পনা চাকমার সন্ধান চাই

এএলআরডি, উবিনীগ, সেড ও নিজেরা করি আয়োজিত বাংলাদেশের পঁচিশ বছর : সম্পদ, সম্পত্তির অধিকার এবং প্রাণের রাজনীতি ও অর্থনীতি শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক গবেষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, সমাজকর্মী, আদিবাসী, বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশা ও কাজের মানুষ একত্রিত হয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রশ্নে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার গভীর রাতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছি। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা (২৩) কে তাঁর নিজ বাড়ী (গ্রাম: নিউ লাল্যাঘোনা; থানা: বাঘাইছড়ি; জেলা-রাঙ্গামাটি) থেকে গত ১১ জুন, ১৯৯৬, দিবাগত রাতে অস্ত্রের মুখে কতিপয় অস্ত্রধারী অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পরপরই সংশ্লিষ্ট থানায় ঘটনাটি জানান হয় এবং জিডি এনট্রি করা হয়। আজ অপহরণের ২৫ দিন অতিবাহিত হচ্ছে, অথচ নারী আন্দোলন ও মানবাধিকারের একজন প্রখ্যাত কর্মী কল্পনা চাকমার কোন খোঁজ আজো পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টির প্রতি নজর দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করবেন।

খবর কাগজের তথ্য অনুযায়ী এই ঘটনার সঙ্গে ১৭ বেঙ্গল রেজিমেন্টের কজইছড়ি ক্যাম্পের একজন সামরিক অফিসার যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া এলাকাবাসীরা অফিযোগ করেছেন যে কজইছড়ি ক্যাম্পের একই সেনা অফিসার ১৯ মার্চ, ১৯৯৬ তারিখে ঐ এলাকায় ৭টি পাহাড়ি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ছিল। আমরা অবিলম্বে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনীর সদস্যদের এই সকল মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

৩, ৪ ও ৫ জুলাই, ১৯৯৬ মানিকগঞ্জের কৈট্টায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রাণ এবং প্রাণসম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আদিবাসি জনগণের অবদান এই সম্মেলনে আলোচিত হয়েছে। আদিবাসী জনগণের জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক অধিকারকে স্বীকার করে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানেরও আমরা দাবি জানাই।

.

অংশগ্রহণকারীর নাম – সংস্থা জেলা done page 164

১. সীমা দাস সীমু – উবিনীগ, ঢাকা।

২. কল্যাণী মন্ডল – নিজেরা করি, পাইকগাছা, খুলনা।

৩. শফিকুল ইসলাম কচি – সাংবাদিক পাইকগাছা, খুলনা।

৪. রোকেয়া বেগম – উবিনীগ

৫. কাজী সামছুল আলম – বিউক, বরিশাল।

৬. পারভীন আক্তার – উবিনীগ

৭. মনোয়ারা বেগম – সমতা

৮. ফরিদুল আলম – সাংবাদিক, কক্সবাজার

৯. নুর জাহান বেগম – দাই, কক্সবাজার

১০. মেহেরুন নেছা ছবি – মহিলা বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্ৰ দিনাজপুর।

১১. মমতাজ বেগম – পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, দিনাজপুর।

১২. সাফিয়া – এএলআরডি, ঢাকা।

১৩. ডাঃ সালেক আহমেদ – উবিনীগ, ঢাকা।

১৪. মাধব চন্দ্র রায় – নিজেরা করি

১৫. রাবেয়া বেগম – সিডিএ

১৬. জাফরুল কুদ্দুস – এএলআরডি

১৭. একরাম আলী – উবিনীগ, কক্সবাজার।

১৮. মিহির দাশ – নিজেরা করি, খুলনা।

১৯. আঃ কুদ্দুস – খুলনা

২০. আঃ কাদের – খুলনা

২১. রাবেয়া আক্তার – টাঙ্গাইল

২২. কোহিনুর – টাঙ্গাইল

২৩. শাহীনুর বেগম – টাঙ্গাইল

২৪. রেজাউল হক – উবিনীগ, পাবনা।

২৫. মেহের আফরোজ মিতা – বিকল্প উন্নয়ন কর্মসূচী, বিউক, বরিশাল।

২৬. মাহবুব আলী উজ্জল – উবিনীগ, ঢাকা।

২৭. মোঃ আঃ গফুর মিয়া – উবিনীগ, টাঙ্গাইল।

২৮. মোঃ মোজাম্মেল হোসেন উবিনীগ, টাঙ্গাইল।

২৯. রিপা ওয়ালি – আরডিআরএস, ঢাকা।

৩০. মোঃ রফিকুল আলম – এএলআরডি

৩১. সাহিদা খানম – নিজেরা করি, খুলনা।

৩২. মুহাম্মত আমিন শরীফ – উবিনীগ, কক্সবাজার।

৩৩. মোহাং ফেরদৌস – উবিনীগ, কক্সবাজার।

৩৪. আঃ সালাম – উবিনীগ, কক্সবাজার।

৩৫. নবনীতা রাণী মন্ডল – নিজেরা করি, খুলনা।

৩৬. মো : নুরুল ইসলাম – ঈশ্বরদী, পাবনা।

৩৭. মীর মোস্তাক আহমেদ – সিডিএ, দিনাজপুর।

৩৮. মোঃ আমিনুর রশীদ আমিন – বাঁচতে চাই সমাজ উন্নয়ন সমিতি, পাবনা।

৩৯. আব্দুল লতিফ – সমাজ দর্পণ, দিনাজপুর।

৪০. আলম মারাবী অনিল মারান্ডী – জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, রাজশাহী।

৪১. রবীন্দ্রনাথ মেন্ত্রম – জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, রাজশাহী।

৪২. রেজাউল করিম – সমাজ কল্যাণ সংস্থা, গাইবান্ধা।

৪৩. মোঃ তসলিম উদ্দিন – এফপিএবি, জামালপুর।

৪৪. মোঃ মহিরুল ইসলাম – জিইউকে, গাইবান্ধা।

৪৫. মুঃ রহমত আলী – দি মৰ্ণিং সান

৪৬. আনন্দ মোহন …

৪৭. মনোরঞ্জন বাড়াইক – বাংলাদেশ শ্রমিক ইউনিয়ন সৌদারী বাজার, শ্রীমঙ্গল।

৪৮. অচিন্ত্য বিশ্বাস – বটিয়াঘাটা কলেজ

৪৯. ওয়াহেদুজ্জামান মতি – সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি, টাঙ্গাইল।

৫০. কামনাশীষ সাহা শেখর – টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব।

৫১. মোঃ আফছার আলী – জামালপুর

৫২. লায়লা আরজুমান – দৈনিক পূর্বাঞ্চল, খুলনা।

৫৩. মতিউর রহমান মন্টু – বিকল্প উন্নয়ন কর্মসূচী বিউক

৫৪. এডভোকেট সৈয়দ রাশেদ উদ্দীন – কক্সবাজার থিয়েটার

৫৫. ডাঃ ওয়াহিদ মোর্শেদ – আবাসিক চিকিৎসা, কৈট্টা, প্রশিকা।

৫৬. মোঃ আলাউদ্দিন – ঈশ্বরদী

৫৭. মোঃ গোলাম …. – ঈশ্বরদী

৫৮. মোঃ …. – পাকুশী

৫৯. …. – ঈশ্বরদী

৬০. পঞ্চানন বিশ্বাস – নিজেরা করি, খুলনা।

৬১. মুস্তাইন – নিজেরা করি, খুলনা।

৬২. পলাশ চন্দ্র

৬৩. শ্যামলী বৈরাগী – খুলনা

৬৪. শিশির শিকদার – বুর‍্যো-টাঙ্গাইল

৬৫. রাহেলা – টাঙ্গাইল

৬৬. নাতাশা আহমদ – নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, ঢাকা।

৬৭. সাবরীনা শমশদ – সেড, ঢাকা।

৬৮. এম. এ. রশিদ – প্রেসক্লাব, খুলনা।

৬৯. মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ – বোনারপাড়া

৭০. অজন্তা সরকার – আদি, রাজশাহী

৭১. নিকোলাস চাকমা – পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ

৭২. বর্তিকা চাকমা – হিল উইমেন্স ফেডারেশন

৭৩. করুণা চাকমা – হিল উইমেন্স ফেডারেশন

৭৪. লায়লা আরজুমান – দৈনিক পূর্বাঞ্চল, খুলনা।

৭৫. ফরিদা আক্তার – নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা

৭৬. ফরহাদ মজহার – উবিনীগ

৭৭. লুৎফুর রহমান…… – হিল সেন্টার

৭৮. জালাল – খুলনা

৮০. সৈয়দ ঈতোষ খরেন – রাজশাহী

৮১. ড: হাবিবা জামান – সাইমন …. ইউনিভার্সিটি, কানাডা

৮২. হাসিনা খানম লতা

৮৩. গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক – কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ ইয়র্ক

.

পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি

অস্থায়ী যোগাযোগ : ৬৮/২, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০

মাননীয় স্পীকার
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
ঢাকা।

জনাব

আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, গত ১১ জুন দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়। সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এই এলাকায় কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করার পর প্রায় ৪৪ দিন অতিবাহিত হতে চলেছে। ইতিমধ্যে পাহাড়ী-বাঙালি নির্বিশেষে বিভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র ও নারী সংগঠন কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ তো দূরের কথা কোন প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি। অপহরণ ঘটনার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সদস্য জড়িত এরকম অভিযোগ প্রথম থেকেই ছিল। অপহৃত কল্পনা চাকমার ভাই নিজে অপহরণকারীদের নেতা বলে যাকে সনাক্ত করেছেন তিনি সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য লেফটেনেন্ট ফেরদৌস। কিন্তু সামরিক বাহিনী কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। ঘটনার ৪৩ দিনের মাথায় ২৪তম পদাতিক ডিভিশন থেকে বলা হয়েছে অপহরণের ঘটনার সঙ্গে তাদের কোন যোগ নেই। এ ঘটনাকে তারা অত্যন্ত আপত্তিকর ভাবে অপহরণের বিরোধিতাকারীদের চক্রান্তকারী ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। সঙ্গত কারণেই ৪৩ দিন পর এরকম বক্তব্যে আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা গভীর বিস্ময় ও ক্ষোভের সঙ্গে এ ব্যাপারে উপর্যুপরি দাবি, মিছিল ও সমাবেশ সত্ত্বেও সরকারের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করছি। ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য জানানো ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের ব্যাপারে সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততায় আমরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন।

আমরা আপনার মাধ্যমে আমাদের এই উদ্বেগ জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যদের জানাতে চাই এবং জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের দাবি জানাই। আমরা দেশের বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-সংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণ করার জন্য আপনার মাধ্যমে মাননীয় সংসদ সদস্যদের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি নীচের দাবিগুলি পূরণ করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। আমরা আশা করি জাতীয় সংসদ এ বিষয়ে যথাযথ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রমাণ করবে যে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদই এদেশের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্য সকল সংস্থার চেয়ে উচতর ক্ষমতা ধারণ করে। আমাদের দাবিগুলি হলঃ

১. অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। কল্পনা চাকমাকে অপহরণের বিরুদ্ধে আহুত শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ চলাকালে গুলি করে রূপন চাকমাকে হত্যা ও অপর তিন জনকে গুম করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।

২. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

৩. পার্বত্য অঞ্চলে নারী-পুরুষ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. অবিলম্বে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে এবং গণতান্ত্ৰিক শাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

ধন্যবাদসহ
পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটির পক্ষে-আহ্বায়ক
(ব্যারিষ্টার লুৎফর রহমান শাহাজাহান)

.

ASK APPEAL FOR ACTION BANGLADESH

Abduction of Hill Women’s Federation Leader: Recent
Developments, 8 July 1996

Recent Developments

Following information received from the Chittagong Hill Tracts Hill People’s Council regarding the abduction of Kalpana Chakma by armed forces (ASK Appeal dated 24 June 1996), ASK investigated the mat—ter. ASK and journalists from national dailies visited Rangamati Dis- trict and Baghaichari thana on 2-4 July 1996.

We talked with several government officials, including the Dis- trict Commissioner of Rangamati, the Superintendent of police of Rangamati, the army, the Officer in charge of Baghaichari police sta- tion, and the local civil administrator of Baghaichari (Known as a TNO), as well as local people. Government officials were unable to tell us what measures they had taken to investigate the incident or if Kalpana is dead or alive. Also, no one could tell us the whereabouts of the army officer identified by Kalpana’s brother or confirm that he had been questioned about the incident. From these interviews, it appears that the investigation of the abduction of Kalpana Chakma is not progress- ing. Although it has been over 20 days since her abduction, police have no clues or leads.

There is also the question of a possible cover up. We found that the original statement given by Kalpana’s brother to the TNO varies greatly from the First Information Report (FIR) filed with the police. The state- ment recorded by the TNO is far more specific and thorough while the FIR is general and fails to mention that the army may be responsible for the abduction. It is also alleged that the police failed to read the FIR back to Kalpana’s brother before he signed it. The FIR, however, is the foundation of a case. We are concerned that the police may have inten- tionally omitted such vital information in order to weaken the case and protect the army.

Finally, the situation in the Chittagong Hill Tracts appears volatile as tensions between the Chakma and the Bengalis mount. On 27 June 1996, after a call for a strike to protest the abduction and lack of progress of the investigation, a riot broke out between Chakmas and Bengali settlers 200 yards from an army post. Neither police nor army took any action to quell the disturbance. A sixteen year old boy named Rupon Chakma of Jhograbil, Rupgari, Baghaichari, was shot by a Bengali settler using a police gun and is believed to be dead. Three other young men from the same village are missing. Police again were unable to tell us what steps they had taken to investigate the matter. Addition- ally, Chakma villagers told us they are afraid to go to their jobs in Rangamati.

Background

Kalpana Chakma, twenty-three year old organizing secretary of the Hill Women’s Federational, was allegedly abducted by the army from her home in Baghaichari, Rangamati in the Chittagong Hill Tracts (CHT) on 12 June 1996 at 1:30 am along with her two brothers. Her brother, managed to escape. They filed a case with the police the same day (case 12/6/1996 #2). One of her brothers identified one of their abductors as Lieutenant Ferdous. Ferdous has questioned Kalpana about her political activities in mid-April 1996 when he and 15-20 other army soldiers came to Baghaichari.

The Hill Women’s Federation is working towards peace and jus- tice for the Chakma (Pahari) people of the CHT. To exploit the natural resources of the region, the Government of Bangladesh has sought to dilute the power of the Chakmas through political and cultural repres- sion, along with planned in migration of ethnic Bengalis. In the 1960s, the government constructed an artificial lake in Rangamati thereby flooding the homes of thousands of Chakmas rendering them home- less. Many fled to India for refuge, although some are returning through the government brokered repatriation program.

The government’s policies are opposed by armed forces called the Shantibahini who claim to be pro-Chakma. A parliamentary commit- tee has been negotiating with Parbattya Chattagram Jana Sanghati Samity (PCJSS) since 1992, though no agreement has been reached. A cease fire between the Shantibahini and the army is due to expire on 31 July 1996. In the past, the army has been responsible for acts of intimi- dation and terror against the Chakma, including arson, abduction, inur- der and rape.

Requested Action

Please send polite letters of support for Kalpana Chakma and others, expressing your concern about investigation delays and the possibility of a cover up by the police and the army. Ask that Lieutenant Ferdous be located and questined, along with other suspects and witnesses. Ask that the government respect the rights of the Chakma people and en- sure that they have equal access to justice.

Address your letters to:
Prime Minister Sheikh Hasina
People’s Republic of Bangladesh
Prime Minister’s Secretariat
Tejgaon, Dhaka
Bangladesh

with cc to:

Major Rafiqul Islam BU
Minister of Home Affairs
Government of Bangladesh
Secretariat
Topkhana Road
Dhaka, Bangladesh.

Mrs. Shah Alam
District Commissioner
Rangamati District
Chittagong Hill Tracts
Bangladesh

Mr. Farooq Sobhan
Foreign Secretary
Ministry of Foreign Affairs
Government of Bangladesh
Topkhana Road
Dhaka, Bangladesh.

Army Brigade Commander
Rangamati District
Chittagong Hill Tracts
Bangladesh.

Mr. Shaidullah
Officer in Charge
Baghaichari Thana
Rangamati District
Chittagong Hill Tracts
Bangladesh

Mr. Mohammad Nurul Anwar
Superintendent of Police
Rangamati District
Chittagong Hill Tracts
Bangladesh.

Please do not refer to Ain O Salish Kendra in your appeal, but please send us a copy of your appeal for our records. Send to: 26/3 Purana Paltan Line, Dhaka-1000, Bangladesh. Thank you for your support. External Al Index ASa 13/07/96

.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *