কল্পনা চাকমা অপহরণের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ
ভোরের কাগজ : ১৬ জুন ‘৯৬
কল্পনা চাকমাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা, মুক্তি দাবি
‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’ নেত্রী কল্পনা চাকমার গ্রেপ্তারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ‘নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা’। এ উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার কোনো অবস্থাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রতিফলিত করে না। সংগঠনটি অবিলম্বে কল্পনা চাকমার মুক্তি দাবি করেছে। বিজ্ঞপ্তি।
ভোরের কাগজ : ১৬ জুন ‘৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে গত রোববার ফেডারেশনের জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চেঙ্গী স্কোয়ারের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের জেলা শাখার সভানেত্রী ননীকা চাকমা। বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতা দীপ্তি শংকর চাকমা, মিলন চাকমা ও মনিতা চাকমা।
আজকের কাগজ : ১৭ জুন ‘৯৬
কল্পনা চাকমা’র মুক্তির দাবিতে সমাবেশ
মোহাম্মদ আজম (খাগড়াছড়ি) : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী কল্পনা চাকমাকে বাঘাইছড়ির নিজ বাড়ি থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহৃত হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
মিছিলটি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষে চেঙ্গী স্কোয়ারে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী ননীকা চাকমার সভানেত্রীত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা দীপ্তিশংকর চাকমা, মিলন চাকমা, মনিতা চাকমা, মিন্টি খীসা প্রমুখ।
বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেয়ার এবং ঘটনার নায়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে ৩ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার নিকট প্রদান করেন।
জনকণ্ঠ : ১৭ জুন ‘৯৬
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা
নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে অপহরণপূর্বক গ্রেফতার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে কল্পনা চাকমার মুক্তির দাবি জানান। তারা ঘটনার সাথে কারা জড়িত আছে তা নির্ধারণে তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ : ১৭ জুন ‘৯৬
কল্পনা চাকমার মুক্তি দাবি করেছে সম্মিলিত নারী সমাজ
সম্মিলিত নারী সমাজ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ই জুন ১৯৯৬, ভোর ৪টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর ৭/৮ জন সদস্য তার গ্রামের বাড়ি নিউ লাল্যাঘোনা, থানা রাঙ্গামাটি থেকে বন্দুকের মুখে অপহরণ করেছে। এই ঘটনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আগে নিরাপত্তা বাহিনীর এহেন কার্যকলাপ নাগরিকের সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার লংঘন করেছে।
সম্মিলিত নারী সমাজ অবিলম্বে কল্পনা চাকমার মুক্তি দাবি করেছে এবং দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতারসহ প্রকাশ্যে তাদের শাস্তি দাবি করেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করছে। খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
ভোরের কাগজ : ১৮ জুন ‘৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে গত রোববার ফেডারেশনের জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চেঙ্গী স্কোয়ারের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের জেলা শাখার সভানেত্রী ননীকা চাকমা। বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতা দীপ্তি শংকর চাকমা, মিলন চাকমা ও মনিতা চাকমা।
সংবাদ : ১৮ জুন ১৯৯৬
কল্পনা চাকমার মুক্তি দাবি, দোষীদের শাস্তি দাবি
শ্রমবিকাশ কেন্দ্রের সমন্বয়ক সীমা দাস সীমু এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ জুন রাত ১টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী ৬/৭ জনের একটি দল তার নিজ বাড়ি নিউ লাল্যাঘোনা (বাঘাইছড়ি থানা, রাঙ্গামাটি) থেকে বন্দুকের মুখে অপহরণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আগে নিরাপত্তা বাহিনীর এই জঘন্য কার্যকলাপ এদেশের জনগণের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার লংঘন করেছে।
তিনি শ্রমবিকাশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
পার্বত্য রাঙামাটির নয়া সাংসদ দীপংকর তালুকদার রাঙামাটির হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি অপহরণকারী যে বা যারাই হোক না কেন, তাকে বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং জেলা প্রশাসনকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে কল্পনা চাকমাকে মুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান।
আজকের কাগজ : ২২ জুন ‘৯৬
অপহরণের ১০ দিন পরও কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করা যায়নি
জেলা প্রতিনিধি (রাঙ্গামাটি) : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ১০ দিন পরও আজো পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাকে অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দাসহ অবিলম্বে তাকে উদ্ধারের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ী গণপরিষদ হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথ উদ্যোগে অতি সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১২ জুন রাতে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থানার নিজ বাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। তার এ অপহরণের জন্য পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ পাহাড়ী গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন সেনা বাহিনীকে দায়ী করেছেন। তাছাড়া এ অপহরণের সঙ্গে স্থানীয় কিছু বাঙালিও জড়িত রয়েছে বলে দাবি করা হয়। তাকে অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন স্থানে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করলেও প্রশাসন আজও পর্যন্ত তাকে উদ্ধারের জন্য তেমন কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে এই অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময় পার্বত্য এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকার অভিজ্ঞমহল মনে করছেন।
ভোরের কাগজ : ২৬ জুন, ১৯৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণ
৩ পার্বত্য জেলায় আজ অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে ঐ ফেডারেশন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ী গণপরিষদ গতকাল মঙ্গলবার রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দ আজ বৃহস্পতিবার তিন পার্বত্য জেলায় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকালের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সজীব চাকমা, মৃগাংক খীসা, বোধিসত্ব চাকমা প্রমুখ।
ভোরের কাগজ : ২৭ জুন ‘৯৬
কল্পনা চাকমার মুক্তির দাবিতে আজ ঢাকায় অনশন ও পার্বত্য অঞ্চলে অবরোধ কর্মসূচি
কাগজ প্রতিবেদক : ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা আজ ২৭ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীক অনশন পালন করবেন। এছাড়া কল্পনা চাকমার মুক্তির দাবিতে পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি সংগঠন পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন তিনটি পার্বত্য জেলায় আজ অর্ধদিবস অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কল্পনা চাকমার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে ৫-দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং আজ ঢাকায় অনশন ও পার্বত্য অঞ্চলে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে কবিতা চাকমা, সমারী চাকমা ও রিপু চাকমা বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় যে, গত ১১ জুন দিবাগত রাত ১টার দিকে লে. ফেরদৌস (কজইছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার, ১৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) ও ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার নুরুল হকের নেতৃত্বে একদল সেনা ও ভিডিপি সদস্য খাগড়াছড়ির নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামে কল্পনার বাড়িতে হানা দিয়ে কল্পনা চাকমাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে কল্পনার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ভোরের কাগজের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি গত রাতে জানান, কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় আহূত সড়ক অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে রাঙ্গামাটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনেও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ শাহআলমের সভাপতিত্বে গতকাল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবীদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, অপহরণ ঘটনার যথাযথ তদন্ত চলছে।
ইত্তেফাক : ২৮ জুন ‘৯৬
নিখোঁজ কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবী
ইত্তেফাক রিপোর্ট ॥ পাহাড়ী মহিলা ফেডারেশন, পাহাড়ী গণপরিষদ ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ গত বুধবার এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অবিলম্বে উদ্ধারের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানাইয়াছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১১ই জুন কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হইয়াছে।
ভোরের কাগজ : ২৮ জুন ‘৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণের জের
অবরোধ চলাকালে সংঘর্ষে বাঘাইছড়িতে হতাহত ১৬?
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : অপহৃত হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার মুক্তির দাবিতে ঐ ফেডারেশন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ী গণপরিষদের ডাকা অবরোধ চলাকালে গতকাল বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি সদরে ভাঙচুর ও বাঘাইছড়ি থানায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে, হতাহতের ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী তথ্য পাওয়া গেছে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ দাবি করেছে, সংঘর্ষে তাদের ৫ সদস্য নিহত হয়েছে। আরেকটি অসমর্থিত সূত্র বলেছে, নিহতের সংখ্যা ৪। তবে সংঘর্ষে আহত ১১ জনকে বাঘাইছড়ি থানা হাসপাতালে ভর্তি, করা হয়েছে এবং এদের সবাই বাঙালি বলে জানা গেছে।
রাঙ্গামাটি সদর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরবর্তী বাঘাইছড়ি থানায় টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, গতকাল সকালে বাবুপাড়া থেকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ী গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা থানা সদরের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় দোকানদার ও বাঙালিদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে এবং বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। সূত্র সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার খবর দিলেও কোন পক্ষের লোকজন নিহত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ দশম শ্রেণীর ছাত্র বিনয় কুমার চাকমাসহ তাদের ৫ জন নিহত হয়েছে বলে মৌখিকভাবে দাবি করেছে। সংঘর্ষে আহত ১১ জনকে বাঘাইছড়ি থানা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের সবাই বাঙালি বলেও জানা গেছে। অপরদিকে সন্ধ্যায় পাহাড়ী ছাত্র নেতা নিখোঁজ রয়েছে বলে প্রচার করেছে। এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি থানা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে অফিস থেকে জানানো হয়, তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংঘর্ষের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, কোনো ধরনের গোলাগুলি হয়নি। সংঘর্ষে আহত ৪ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে রাঙ্গামাটি সদর থানায় অবরোধ চলাকালে স্থানীয় সরকার পরিষদ কার্যালয় ও বিশ্রামাগারে ভাঙচুর হয়েছে। এ ছাড়াও একটি বেবিট্যাক্সি ও ডিজিএফআই-এর পিকআপ ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান রবীন্দ্র লাল চাকমা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। রাঙ্গামাটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছে, তখন এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। তিনি এ অবস্থায় সকল মহলের প্রতি শান্ত ও ধৈর্য্যশীল থাকার আহ্বান জানান।
ভোরের কাগজ : ৩০ জুন ‘৯৬
রাঙ্গামাটিতে রূপনের লাশ ও অপহৃত কল্পনা চাকমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি
পাহাড়ী গণপরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রসিত বিকাশ খীসা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সঞ্চয় চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভানেত্রী কবিতা চাকমা গতকাল শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে বে-আইনি অনুপ্রবেশকারীদের হামলা, রূপন চাকমাকে গুলি করে হত্যা ও তার লাশ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রূপন চাকমার লাশ ফিরিয়ে দেওয়া এবং অপহৃত কল্পনা চাকমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১১ জুন রাত ১টায় লে. ফেরদৌসের নেতৃত্বে একদল সেনা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে। এর প্রতিবাদে ২৭ জুন তিন পার্বত্য জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে অনুপ্রবেশকারীরা রূপকারী হাইস্কুলের ছাত্র রূপন চাকমাকে গুলি করে ছিনিয়ে নিয়েছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি।
ভোরের কাগজ : ১ জুলাই ‘৯৬
ঢা.বি.-র ১৬৭ ছাত্রীর যুক্ত বিবৃতি
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার ও ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৭ জন ছাত্রী এক যুক্ত বিবৃতিতে অবিলম্বে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও অপহরণের ঘটনাবলী সরেজমিন তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১১ জুন কতিপয় সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিজ্ঞপ্তি।
সংবাদ (সম্পাদকীয়) : ৪ জুলাই ১৯৯৬
কোথায় কল্পনা চাকমা?
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে তিন সপ্তাহ হয়ে গেল। এখনও পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত ১২ই জুন রাতে কিছুসংখ্যক সাদা পোশাকধারী সশস্ত্র ব্যক্তি কল্পনা চাকমাকে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে অবস্থিত তার নিজ বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
পত্রপত্রিকায় এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। সকলেই অপহৃত কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কয়েকটি পাহাড়ী সংগঠনের ডাকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা শহরে। রাঙ্গামাটিতে এ কর্মসূচি পালন নিয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষও হয়ে গেছে পাহাড়িদের সাথে ওখানে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের। সংঘর্ষে একজন পাহাড়ি বালক নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে, সরকার কল্পনা চাকমার ব্যাপারে নিশ্চুপ।
অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে নির্বাচনের পূর্ব- রাত্রিতে। আমরা জানি না নির্বাচনের সঙ্গে এই অপহরণের কোন যোগসূত্র ছিল কিনা। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ ঘটনার ব্যাপারে কোন বক্তব্য দেননি। শুধু এটুকু জানা যায় যে, অপহৃত পাহাড়ি নেত্রীর একজন নিকটাত্মীয় সংশ্লিষ্ট বাঘাইছড়ি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ-বলেছে যে, তারা সত্য উদ্ঘাটনে’ সাধ্যমত চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বলা বাহুল্য যে, এ চেষ্টার কোন সাফল্য আমরা এ পর্যন্ত দেখতে পাইনি। কল্পনা চাকমা অপহরণের ওপর সম্প্রতি আমাদের পত্রিকায় একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতেও দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনাটি অত্যন্ত রহস্যজনক। কল্পনা চাকমা পার্বত্য এলাকায় ঘটা বিভিন্ন ঘটনার ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলতেন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে। এটাই হয়তো তার দুর্ভাগ্যের কারণ হয়েছে।
কিন্তু যারাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক, তারা অপরাধী এবং ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য। পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অবস্থা বিরাজ করলেও সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন অনুপস্থিত নয়। এই প্রশাসন কল্পনা চাকমার অপহরণ রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত উদ্বিগ্ন লোকজনের মনে এই প্রশ্ন জেগেছে যে, অপহৃত কল্পনা চাকমা এখনও জীবিত রয়েছেন কিনা। ঘটনা সম্পর্কে সরকারি নীরবতা এ সন্দেহকে আরো ঘনীভূত করে তুলেছে। আইন ও মানবাধিকার বিরোধী এ ঘটনার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্দেশ্যে একটি স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের অবস্থান ও তৎপরতা বর্ণনা করা।
ভোরের কাগজ : ৬ জুলাই ‘৯৬
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সমাবেশ
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারে সরকারের উদ্যোগহীনতা রহস্যজনক
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে বিপ্লবী নারী মুক্তি গতকাল শুক্রবার মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমা নাজনীন বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে তাকে উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া রহস্যজনক। সরকার এমনকি এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিও গঠন করেনি।
সমাবেশে পাহাড়ি এলাকায় সেনা শাসনের অবসান এবং কল্পনা চাকমার মুক্তির দাবিতে সচেতন সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তি।
এদিকে বাংলাদেশ ছাত্র-যুব ঐক্য পরিষদ অবিলম্বে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রেমন্ড আরেঙের সভাপতিত্বে পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের এক সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সত্যেন্দ্র চন্দ্র ভক্ত, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া,তাপস পাল, নির্মল চ্যাটার্জি, চন্দ্রনাথ পোদ্দার, দীপক ভৌমিক, রতন দেবনাথ, রমেন মণ্ডল প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি
সংবাদ : ৭ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদ
উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয়দের সংঘর্ষের পর বাঘাইছড়িতে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বাঘাইছড়ি থেকে ফিরে সুনীল কান্তি দে, ৬ই জুলাই : হিল উইমেন্স ফেডারেশন
নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদে উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয়দের মধ্যে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বাঘাইছড়ি থানা এখন উত্তেজনা ও গুজবের থানায় পরিণত হয়েছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। উপজাতীয় এবং অ-উপজাতীয়দের মধ্যে বিরাজ করছে পারস্পরিক সন্দেহের প্রবণতা। ঘটনার পরপরই রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান রবীন্দ্র লাল চাকমা, জেলা প্রশাসক মোঃ শাহ আলম, পুলিশ সুপার মোঃ নুরুল আনোয়ার এবং সর্বশেষ রাঙ্গামাটি থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে বাঘাইছড়ি থানা ঘুরে আসার পরও উপজাতীয় এবং অ- উপজাতীয়দের মধ্যে সন্দেহের প্রবণতা কাটেনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি সাংসদ দীপংকর তালুকদার গত ২৯ ও ৩০ শে জুন এবং ১লা জুলাই বাঘাইছড়িতে উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে বেশ কয়েকবার পৃথক পৃথকভাবে আলোচনায় মিলিত হয়েছেন। ২৯শে জুন বাঘাইছড়ি থানার বাবুপাড়ায় উপজাতীয়দের সাথে আলোচনাকালে সাংসদ দীপংকর তালুকদারকে উপজাতীয়রা জানান, অবরোধের দিন পাহাড়ী গণ পরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা গিয়ে থানা সদরে অবরোধের কার্যক্রম চালাতে চাইলে কিছুসংখ্যক অ- উপজাতীয় তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় অবরোধের সমর্থকরা বাবুপাড়ায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। এর প্রায় এক ঘন্টার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অ-উপজাতীয়দের একটি বিরাট অংশ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজিপাড়া দিয়ে বাবুপাড়ায় আক্রমণের জন্য আসতে থাকে। এ অবস্থায় স্থানীয় কাচালং কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক পার্শ্ববর্তী বিডিআর হেড কোয়ার্টারে গিয়ে বাবুপাড়ার নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিডিআর ঐ শিক্ষককে জানান এ ব্যাপারে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন আদেশ পাননি। এক পর্যায়ে আক্রমণকারী অ-উপজাতীয়রা উপজাতীয়দের বাড়িতে আগুন লাগাতে চেষ্টা করে। এ সময় কর্তব্যরত জনৈক পুলিশের হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার নুরুল ইসলাম গুলি চালায়। সে গুলিতে রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র রূপম চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়। উপজাতীয়দের অভিযোগ, আক্রমণকারীরা রূপমকে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টেনে নিয়ে যায়। পরে লাশ গুম করে ফেলে। উপজাতীয়দের আরো অভিযোগ, অ-উপজাতীয়দের আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গলতলী গ্রামের মনতোষ চাকমা (২২), খেদারমারা গ্রামের সুকেশ চাকমা (১৮) ও সমর বিজয় চাকমা (১৯) মুসলিম ব্লক গুচ্ছগ্রামের পাশ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অ- উপজাতীয়রা তাদের ধরে ফেলে। এ তিনজনকেও মেরে ফেলা হয়েছে বলে উপজাতীয়দের অভিযোগ। আলোচনা শেষে উপজাতীয়রা সাংসদ দীপংকর তালুকদারকে রূপম চাকমা গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান পরিদর্শনে নিয়ে যান। তখনো পর্যন্ত ঐ স্থানে রক্তের দাগ দেখা গিয়েছিল।
একই দিন সাংসদ দীপংকর তালুকদার থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সংঘর্ষে আহত অ- উপজাতীয়দের দেখতে যান। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবস্থনরত পাঁচজনের মধ্যে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত মারাত্মক আহত জামাল উদ্দিন (৩০) ও রয়েছেন। এ সময় আহতরা জানান, অবরোধকারী উপজাতীয়রা মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র ও গুলতি নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। আহত জামাল উদ্দিনের চোখ গুলতির আঘাতে নষ্ট হয়ে গেছে বলে তারা জানান।
৩০ শে জুন অ-উপজাতীয়রা সাংসদ দীপংকর তালুকদারের কাছে অভিযোগ করে জানান, ২৯শে জুন দুপুরে দেশীয় ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ১৬ বস্তা চালসহ বাঘাইছড়ি থানা সদর থেকে বাঘাইহাটে যাওয়ার পথে বারেবিন্দু ঘাট এলাকার কাচালং নদী থেকে চারজন বাঙালিকে উপজাতীরা অপহরণ করেছে। অবশ্য অভিযোগকারী বাঙালিরা শুধুমাত্র দু’জনের নাম শনাক্ত করতে পেরেছেন। তারা হলেন, জাহেদুল আলম ও কামাল উদ্দিন।
দু’জন মায়ের করুণ আর্তি
৩০শে জুন সকালে রূপকারী গ্রামে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সাংসদ দীপংকর তালুকদার যখন এই গ্রামে ২৭ জুনের গুলিবিদ্ধ রূপম চাকমার বাড়িতে যান তখন রূপমের মা সাংসদ দীপংকর তালুকদারকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন- “বাজি ম পুয়াবোয়া ফেরত দে, নইলে তা সিলুম অলে মরে আনি দে, মুই সিবা চেনেই জীবন কাদেম”-বাবা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও না হলে তার শার্টটি হলেও এনে দাও, আমি তা দেখেই জীবন কাটাবো।
১লা জুলাই ভোরবেলা যখন বাঘাইছড়িস্থ উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউসে ২৯শে জুন তারিখে অপহৃত দেশীয় নৌযান চালক জাহেদুল আলমের বৃদ্ধা মাতা সাংসদ দীপংকরের সাথে দেখা করতে বলেন, তখন সৃষ্টি হল আরেক মর্মস্পর্শী পরিবেশের। ‘৮৮ সালের দুর্ঘটনায় বাঘাইছড়ি দুর্গম এলাকা গঙ্গারামে শান্তিবাহিনীর গুলিতে নিহত ইদ্রিস মাঝির শোকাহত স্ত্রী দীপংকর তালুকদারকে জড়িয়ে ধরে ফেলে কেঁদে বললেন- “অ বাজি ইয়ান কি হইল যে। ‘৮৮ হারাইলাম জামাই, মনে গরজিলাম দে পুয়াহলর মুখ চাইআরে দুনিয়াততুন যাইয়ুম গোই। কিন্তু আল্লায় আরে ইয়ান কি দেখাইল। অবা আর পুয়া আনি দে। (হে বাবা এটি কি হল! ‘৮৮ তে হারালাম স্বামীকে, মনে করেছিলাম ছেলেদের মুখ দেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেব। কিন্তু আল্লা আমাকে এটি কি দেখাল, বাবা আমার ছেলেকে এনে দাও। )
যে কথাগুলো শোনা যাচ্ছে
বাঘাইছড়ির অনেকেই বলতে শুরু করেছেন যে, ২৭ শে জুনের ঘটনার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেরি হল কেন? অনেকের মতে বিডিআর হেড কোয়ার্টারের খুবই কাছাকাছি জায়গায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ার পরও বিডিআরের কি কিছু করণীয় ছিল না? ২৭ শে জুন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকের টেলিফোন লাইন কেটে দেয়ার মতো বে-আইনী কাজ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হল না কেন?
এদিকে সাংসদ দীপংকর তালুকদার (১লা জুলাই) রাঙ্গামাটি ফিরে এসে গত ২রা জুলাই ঢাকায় গেছেন। তিনি জানিয়েছেন অতিসত্বর বাঘাইছড়ি ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাখিল করবেন।
এদিকে বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২৭শে জুনের ঘটনার কারণে এ পর্যন্ত ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
৭ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমা কি হাওয়া হয়ে গেল? প্রধামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ৮২ জন নাগরিক বৃহত্তর চট্টগ্রাম হিল উইমেন্স ফেডাশেনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, গত ১১ জুন রাতে কিছু অস্ত্রধারী কল্পনা চাকমাকে অপহরণের পর এ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টির প্রতি নজর দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন। তাঁরা আদিবাসী জনগণের জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক অধিকারকে স্বীকার করে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের দাবি জানান।
এএলআরডি, উবিনীগ, সেড, ও নিজেরা করি-এর যৌথ উদ্যোগে মানিকগঞ্জে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশের পঁচিশ বছর; সম্পদ, সম্পত্তির অধিকার এবং প্রাণের রাজনীতি ও অর্থনীতি” শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে অংশগ্রহণকারী কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, গবেষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, সমাজকর্মী, আদিবাসী, বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মী প্রমুখ এতে স্বাক্ষর করেন।
আজকের কাগজ : ৮ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমার সন্ধান না মেলায় ৮২ উন্নয়ন গবেষণা কর্মীর উদ্বেগ
৩-৫ জুলাই মানিকগঞ্জের কৈটাতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে দেশের ৮২ জন উন্নয়ন গবেষণা কর্মী এক যুক্ত বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার সন্ধান না মেলায় উদ্বিগ্ন হয়েছেন। উবিনীগ, এএলআরডি, সেড ও নিজেরা করি আয়োজিত বাংলাদেশের পঁচিশ বছর : সম্পদ, সম্পত্তির অধিকার এবং প্রাণের রাজনীতি ও অর্থনীতি, শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা বলেন, আমরা বিভিন্ন পেশা ও কাজের মানুষ একত্রিত হয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রশ্নের সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছি। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমাকে তার নিজবাড়ি থেকে গত ১১ জুন ১৯৯৬ দিবাগত রাতে অস্ত্রের মুখে কতিপয় অস্ত্রধারী অপহরণ করে, অপহরণের প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হচ্ছে, অথচ নারী আন্দোলন ও মানবাধিকারের একজন কর্মী কল্পনা চাকমার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করবো মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টির প্রতি নজর দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করবেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- ফরহাদ মযহার, ফরিদা আখতার, রহমত আলী, নিকোলাস চাকমা, বর্তিকা চাকমা, করুণা চাকমা প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
বাংলাবাজার : ১০ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করার দাবি
বাংলাবাজার রিপোর্ট : পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চাই। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের জাতিসত্ত্বার অধিকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। গতকাল পার্বত্য নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদে ও তার উদ্ধারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট নেতা ফয়জুল হাকিম লালা এ কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বক্তারা কল্পনা চাকমার অপহরণকে সাজানো ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। তারা কল্পনা চাকমার পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সকল বাসিন্দা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কবিতা চাকমা অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের জন্যে সরকারের কাছে আহ্বান জানান। সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার লুৎফুর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সভায় বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী খালেদা খাতুনসহ বিভিন্ন পার্বত্য নেতৃবৃন্দ। উক্ত সমাবেশে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে বক্তারা বলেন, ৭৫-র পর থেকে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডই বেশি ঘটিয়েছে ক্ষমতাসীনরা, এখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি ক্ষমতায়। তারা স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তিতে সকলের সম-অধিকার দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি আয়োজিত এই সমাবেশে কল্পনা চাকমার উদ্ধার ও দোষীদের শাস্তি দাবি করে একাত্মতা ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মানবাধিকার ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ী গণ পরিষদ ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়।
ভোরের কাগজ : ১০ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি। এ উপলক্ষে সংগঠনটি গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাহাজাহান। বক্তব্য রাখেন দিলীপ বড়ুয়া, ফয়জুল হাকিম, রেমন সারেং, কবিতা চাকমা, এড. খালেদা খাতুন ও আবু সাঈদ খান। সভায় অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করা হয়। বিজ্ঞপ্তি।
সংবাদ : ১০ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমাকে ২৯ দিনেও উদ্ধার করতে না পারায় ক্ষোভ, সমাবেশ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ২৯ দিন পরেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল বিকেলে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাহাজাহান। অন্যদের মধ্যে এতে বক্তৃতা করেন, বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের দিলীপ বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের ফয়জুল হাকিম, গারো সংগঠনের রেমন সারেং, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কবিতা চাকমা এবং আইনজীবীদের পক্ষ থেকে খালেদা খাতুন ও আবু সাঈদ খান। সমাবেশ পরিচালনা করেন আনু মোহাম্মদ।
সমাবেশে অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বক্তারা দাবি করেন। এছাড়াও বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ এবং সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার ও সেখানে গণতান্ত্রিক শাসন চালুর দাবি জানান। বক্তারা দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করেন।
সভাশেষে আয়োজিত একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।
জনকণ্ঠ : ১৬ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমার মুক্তি দাবি ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
রবিবার ১২টি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। কল্পনা চাকমার অপহরণ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিতে সংগঠনগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে। সংগঠনগুলো হচ্ছে— অধিকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, উবিনীগ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ল রিভিউ, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এবং সার্ভিসেস ট্রাস্ট, নাগরিক উদ্যোগ, সম্মিলিত নারী সমাজ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ী গণপরিষদ। খবর বিজ্ঞপ্তি’র।
ভোরের কাগজ : ১৭ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমা গেলো কোথায়?
বাঘাইছড়ি ঘুরে এসে প্রিসিলা রাজ : অপহরণের এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও উদ্ধার করা যায়নি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে। কল্পনার অপহরণ নিয়ে পাহাড়ি জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। এ ঘটনার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলেছে।
১১ জুন গভীর রাতে বাঘাইছড়ি থানার প্রত্যন্ত গ্রাম নিউ লাল্যাঘোনার বাড়ি থেকে অপহৃত হয় বাঘাইছড়ি কলেজের স্নাতক শ্রেণীর কল্পনা চাকমা। কল্পনার ভাই কালিন্দী কুমার জানিয়েছেন, তাদের দুই ভাই ও কল্পনাকে যারা রাতে এসে ধরে নিয়ে যায় তাদের কারো কারো পরনে ছিল সেনা পোশাক এবং সঙ্গে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। কল্পনার আরেক ভাই ক্ষুদিরাম অপহরণকারীদের মধ্যে ৩ জনকে চিনতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন। ক্ষুদিরাম বলেছেন তারা হলেন স্থানীয় কজইছড়ি সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ও ২ জন ভিডিপি সদস্য।
কল্পনা অপহরণ মামলার এফআইএর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) নিয়েও ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য। মামলার বাদি কালিন্দী কুমার জানিয়েছেন, এফআইআর তাকে পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি জানান টিএনওর কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছেন এফআইআর-এ তার পুরোপুরি উল্লেখ নেই। এফআইআর কে লিখেছেন তা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। রাঙ্গামাটি ডিসি, এসপি ও বাঘাইছড়ি থানার ওসি এলাকা সফরকারী সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ অন্যান্যদেরকে জানিয়েছেন, বাঘাইছড়ি থানার টিএনও তা লিখেছিলেন। কিন্তু টিএনও হাসান জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন। তিনি কালিন্দী কুমারের অভিযোগ রেকর্ড করে তাকে থানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সাংবাদিকসহ অন্যান্যদেরকে টিএনও জবানবন্দির কপিটি দেখিয়েছেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই জবানবন্দিতে আততায়ীদের ‘হাতে বন্দুক ও টর্চের’ উল্লেখ থাকলেও এফআইএরএ তা নেই। এ ছাড়া কালিন্দী কুমার চাকমা’র জবানবন্দি নেওয়ার পর এফআইআর পড়ে শোনানো হয়নি বলে যে অভিযোগ আছে সে বিষয়ে ওসি শহীদুল্লাহ বলেন, টিএনও কালিন্দী কুমারের জবানবন্দি নিয়েছেন, এবং তাকে পড়ে শুনিয়েছেন।
কিন্তু টিএনও হাসান জাহাঙ্গীর আলম তা অস্বীকার করে বলেছেন, কালিন্দী কুমার তার কাছে এসেই প্রথম জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা এফআইআর হিসেবে রেকর্ড হয়নি। কালিন্দী কুমারের জবানবন্দি লেখার পর তিনি তাকে তা পড়ে শোনাননি স্বীকার করেছেন টিএনও জাহাঙ্গীর আলম।
কল্পনাকে উদ্ধারের ব্যাপারে রাঙ্গামাটির ডিসি ও এসপি জানিয়েছেন, ‘জোর তদন্ত চলছে’। কল্পনাকে উদ্ধারের সম্ভাবনা কতোদূর এ প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, ‘শতকরা একশ ভাগ’। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ওসি বলেন, ‘তথ্যানুসন্ধানে সময় লাগবে। এটা এমন একটা কেস যার কোনো আলামত নেই। অভিযুক্ত কজইছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার- কল্পনার ভাই ক্ষুদিরাম যাকে স্পষ্টভাবে চিনেছেন বলে দাবি করেছেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা এ প্রশ্ন করা হলে এসপি হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। তবে ঐ কমান্ডার এখন কোথায় ‘তদন্তের স্বার্থে’ তা জানাতে অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দলটি রাঙ্গামাটি ব্রিগেড কমান্ডারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর মেজর এফ মাহবুবুর রহমান নামক একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেন। তবে তিনি জানান, আইএসপিআর-এর অনুমতি ছাড়া তারা কিছু বলতে অপারগ। তিনি শুধু বলেন সেনা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে একটি তদন্ত শেষ করে ফলাফল রাঙ্গামাটি ডিসি ও এসপির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কল্পনা অপহরণকে কেন্দ্র করে বাঘাইছড়ির পরিস্থিতি এখন বিস্ফোরণোন্মুখ। ইতিমধ্যেই পাহাড়ি ও বাঙালি অধিবাসীদের একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে একাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে বলে দাবি করেছে উভয়পক্ষই। পাহাড়িদের প্রতিবাদ কর্মসূচির দিন সৃষ্ট সংঘর্ষে ২৭ জুন নিহত হয় রূপন চাকমা নামে দশম শ্রেণীর এক পাহাড়ি ছাত্র।
নিহত রূপনের লাশ হত্যাকারীরা সরিয়ে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। রূপনের মা ইন্দ্রমূখী চাকমা ছেলের লাশ ফেরত চাওয়ার আর্তি জানিয়ে বলেন, তিনি তাকে ধর্মমতে সৎকার করতে চান।
রূপন ছাড়াও নিখোঁজ অন্যান্য পাহাড়ির মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছে মনোতোষ চাকমা (এইচএসসি পরীক্ষার্থী), সমর বিজয় চাকমা ও সুকেশ চাকমা। শেষোক্ত ২ জনই বিটি হাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। হয়রানির আশঙ্কায় পাহাড়িরা এই ৩ জনের ব্যাপারে কোনো জিডি করেনি।
সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কল্পনা চাকমার পরিবার দারুণ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে।
ভোরের কাগজ : ১৮ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমা কোথায়
কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার পর মাসাধিককাল পার হয়েছে। এখনো তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দেশের ১২টি নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃত্ব গত ১৪ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। মহিলা পরিষদ, সম্মিলিত নারীসমাজ, উবিনীগসহ এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মন্ত্রীর কাছে কতিপয় সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার, অপহরণ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, কল্পনার পরিবারবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রভৃতি। ভোরের কাগজ, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে খবর ও নিবন্ধ ছাপা হয়েছে।
গত ১১ জুন দিবাগত রাত ১ টার সময় নিজ বাড়ি (গ্রাম: লাল্যাঘোনা, থানা: বাঘাইছড়ি, জেলা: রাঙ্গামাটি) থেকে অপহৃত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমার (২৩) আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়ের, পার্বত্য জেলাসমূহে অবরোধ, ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকদের বিবৃতি প্রদানসহ নানাভাবে প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা সত্ত্বেও তাকে উদ্ধার করা যায়নি।
খবরে প্রকাশ, সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা কল্পনা চাকমাকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে। হিল উইমেন্স ফেডারেশন গত ২৬ জুন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে যে, একদল সেনা সদস্য কল্পনা চাকমাকে ধরে নিয়ে গেছে। এ অভিযোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কোনো বক্তব্য এখনো পত্রিকায় আসেনি।
পরিবারের একমাত্র কলেজ-শিক্ষিত মেয়ে কল্পনা চাকমা পার্বত্য নারীদের অধিকারের ব্যাপারে বেশ সোচ্চার ছিলেন। তার অপহরণ ঘটনাটি ‘রাজনৈতিক’ বলেই বিশিষ্ট লোকদের অভিমত। সামগ্রিক ঘটনায় আমরা দারুণভাবে উদ্বেগ বোধ করছি। অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য জাতীয়ভাবে লজ্জার ঘটনা। আমরা সবকিছুর আগে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। শুধু নারী বলে, নাকি, পার্বত্য নারীদের নেত্রী বলে, তিনি এমন নিগ্রহের শিকার হলেন, পাশাপাশি সেটাও খুঁজে বের করতে হবে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আমরা জানি না এ ঘটনার পেছনে সেখানে অবস্থানরত সেনাসদস্যদের কোনো তৎপরতা ছিল কি না। যদি থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠবে, কেন? এ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া কঠিন। আমরা আশা করি নতুন সরকার এ অপহরণ রহস্য উদঘাটনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করবে।
জনকণ্ঠ (সম্পাদকীয়) : ২১ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করুন
গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনী রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন স্থানে কল্পনা চাকমার সন্ধানদাতাকে অর্ধলক্ষ টাকা পুরস্কার দানের ঘোষণা সংবলিত একটি লিফলেট বিতরণ করেছে হেলিকপ্টারযোগে। কল্পনা চাকমা এ মুহূর্তে এদেশে একটি অতি পরিচিত নাম। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নিরলস নেত্রী, কলেজ ছাত্রী কল্পনা (২৩) তাঁর বাঘাইছড়ি থানার গ্রামের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বছরের পর বছর ধরে গুম, অপহরণ, হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনাই সাধারণত চাপা থাকে বা চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কল্পনা অপহরণের ঘটনাটি চাপা থাকেনি। বিক্ষুব্ধ পাহাড়ী জনগণ ছাড়াও এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠন, নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা। সভা-সমাবেশ-মিছিল হয়েছে, বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত খবর, সম্পাদকীয় মন্তব্য ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। উবিনীগ, সম্মিলিত নারী সমাজ ও মহিলা পরিষদসহ বারোটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের বিচারের দাবি নিয়ে গত ১৪ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছে। কিন্তু অপহরণের চল্লিশ দিন পরেও কল্পনা চাকমা নিখোঁজই রয়ে গেছেন।
কল্পনা চাকমার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে শুধু পাহাড়ি জনগণের মনেই নয়, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মনে এবং বহির্বিশ্বের মানুষের মনে আজ নানা প্রশ্ন। ১২ জুনের নির্বাচনের আগের রাতেই তাঁকে অপহরণ করা হলো কেন? অপহরণ কে বা কারা করল? এটা কি একটি সাধারণ নারী অপহরণের ঘটনা, নাকি এর উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নের জবাব স্থানীয় প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ দেয়নি বা দিতে পারছে না।
কল্পনা চাকমার রাজনৈতিক সক্রিয়তা, দৃঢ় মনোভাব এবং কিছু পূর্ব ঘটনা সাধারণের মনে এ ধারণাই প্রবল করে তোলে যে তাঁর অপহরণের উদ্দেশ্যটি রাজনৈতিক হবারই সম্ভাবনা বেশি। হিল উইমেন্স ফেডারেশন গত ২৬ জুন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েন একদল সেনা সদস্যকে উক্ত অপহরণের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ সম্পর্কে সেনা কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য এখনও জনগণের গোচরে আসেনি, যদিও তা আসা উচিত বিভ্রান্তি বা সংশয় এড়ানোর জন্য। অপহরণের ৩৭ দিন পরে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারদানের ঘোষণাটি প্রশংসনীয় বটে, তবে বড় বিলম্বিত।
স্বাধীনতার পর থেকে, বিশেষভাবে পঁচাত্তর পরবর্তীকালে একটার পর একটা ভ্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে শান্ত করার পরিবর্তে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। পাহাড়ি জনগণ আর বৃহত্তর বাঙালী জনগণকে পরিকল্পিতভাবে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। সন্দেহ, অবিশ্বাস আর বিদ্বেষের জন্ম দেয়া হয়েছে। পাহাড়ি জনগণের মধ্যে বঞ্চনার অনুভূতি ও ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে। তথাকথিত শান্তিবাহিনী বা জনসংহতির সাথে আবদ্ধ শান্তি প্রক্রিয়ার প্রকৃত অবস্থা কি তা দেশবাসী অজ্ঞাত। কোন অগ্রগতি হয়েছে কিনা, হলে কতটুকু হয়েছে— এসব দেশবাসীকে জানানো হয় না। সংসদেও আলোচিত হয়নি বা হয় না। কেবল মাঝে মাঝে জানানো হয়, বৈঠক হয়েছে বা অস্ত্রবিরতির মেয়াদ অত তারিখ থেকে অত তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ নানিয়াচর বা কল্পনা চাকমা অপহরণের মতো ঘটনা ঘটে দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। দেশের বাইরের মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতি ফিরে আসুক, পাহাড়ি-বাঙালি জনগণের মধ্যে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস দূরীভূত হোক, উভয়ের মধ্যে নিরাপত্তারোধ ও অতীতের মতো সৌহার্দ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক, পাহাড়ি জনগণের মন থেকে নিরাপত্তারোধের অভাব, ভীতি ও বঞ্চনার অনুভুতি দূর হোক, তাদের সাংস্কৃতিক-সামাজিক বৈষয়িক স্বাতন্ত্র্য ও অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত হোক, সংঘাতের অবসান ঘটুক— এটা দেশবাসীর কাম্য। বর্তমান সরকারকে দৃঢ় ও সতর্কভাবে এ কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্যা তার সমাধান হঠকারিতা বা বলপ্রয়োগ দ্বারা সম্ভব নয়।
এ মুহূর্তে আমরা কল্পনা চাকমার উদ্ধারের ওপর জোর দিতে চাই। তাঁর অপহরণ রহস্যের জাল ছিন্ন করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনসহ যা যা করণীয় অনতিবিলম্বে তা করা উচিত। কারণ যত দেরি হবে, উদ্ধার ততই অনিশ্চিত হবে। যারা যে উদ্দেশ্যেই তাঁকে অপহরণ করেছে তারা যে অতি শক্তিশালী, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি যারা চায় না, অশান্তি জিইয়ে রাখার মধ্যে যাদের কায়েমীস্বার্থ নিহিত এমন কোন চক্ৰই হয়ত এ জঘন্য কাজটি করিয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত তাদের স্বরূপ উদঘাটিত করা।
আজকের কাগজ : ২২ জুলাই ‘৯৬
অপহৃত কল্পনা চাকমার উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আবেদন
কাগজ প্রতিবেদক : বেসরকারী সংস্থা ‘আইন ও সালিস কেন্দ্র’ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের অপহৃত নেত্রী কল্পনা চাকমা’র উদ্ধারের দাবিতে তিউনিশিয়া থেকে এল টলার-এর একটি আন্তর্জাতিক আবেদন পেয়েছে।
এ বিষয়ে সংগঠনটি গতকাল এ বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ৩ জুলাই প্ৰধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক এনজিও এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠনের ৩৮ জন প্রতিনিধি এক যৌথ বিবৃতিতে কল্পনা চাকমা’র অপহরণের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন। তারা ঘটনাটির শিগগির তদন্তের এবং কল্পনা চাকমা’র মুক্তির জন্যে বলেন। অপহরণকারীদের বিচারের জন্যে তারা সরকারের নিশ্চিত আশ্বাসেরও আবেদন করেন।
প্রতিনিধিরা এল টলার-এর আয়োজনে তিউনিশিয়ায় এক সম্মেলনে অংশ নেন। তারা আলজিরিয়া, বাংলাদেশ, বেনিন, কানাডা, কলম্বিয়া, কোর্ট ডিআইভার, কিউবা, ইথিওপিয়া, গিনি, হল্যান্ড, ভারত, মাদাগাস্কার, মউরিতানিয়া, মরক্কো, প্যালেস্টাইন, পেরু, ফিলিপাইন, সেনেগাল, স্পেন, তানজানিয়া, তিউনিশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং জায়ার থেকে এসেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুন কল্পনা চাকমাকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ করেছে বলে ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ী গণপরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ করেছে।
সংবাদ : ২২ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমার অনুসন্ধানে অতি তৎপরতায় উদ্বেগ, বিস্ময়
পাহাড়ী গণপরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রসিত বি. খীসা এক বিবৃতিতে হেলিকপ্টার দিয়ে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে প্রচারপত্র ছেড়ে অপহৃত কল্পনা চাকমার সন্ধানদানের জন্য পুরস্কার ঘোষণার ঘটনায় বিস্ময় ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি ঐ ঘটনাকে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেবার ব্যর্থ প্রয়াস বলে অভিহিত করে বলেছেন, প্রকারান্তরে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অপহরণের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। যেহেতু ইতিপূর্বে ডঃ ইউনুস (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) কল্পনা চাকমার সন্ধান চেয়ে সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করলে, তাকে সেনাবাহিনী থেকে ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার’ বলে বলা হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে, সেনাবাহিনী কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত ছিল। এ খবর কয়েকটি পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এখন যোগাযোগের ঠিকানা ও অর্ধ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে হেলিকপ্টার দিয়ে প্রচারপত্র ছেড়ে অহেতুক ধূম্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে তিনি দেশে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায়, নির্বাচিত সরকারকে পাশ কাটিয়ে অপহৃত কল্পনা চাকমার অনুসন্ধানের জন্য অতি বেশি তৎপরতা ও পুরস্কার ঘোষণা করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
অবিলম্বে অপহৃত কল্পনা চাকমাকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি বিবৃতিতে আরো বলেছেন, অপহৃত অবস্থায় থাকাকালীন কল্পনা চাকমার যেকোন অঘটনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সকল দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
সংবাদ : ২৩ জুলাই ১৯৯৬
নারী সমাজের সমাবেশ
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা দাবি
সম্মিলিত নারী সমাজের সমাবেশে বক্তারা কল্পনা চাকমার অপহরণের বিষয়টা জাতীয় সংসদে উত্থাপন এবং তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গত ১১ই জুন গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তাকে উদ্ধারের দাবিতে গতকাল সোমবার বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত নারী সমাজের এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভানেত্রীত্ব করেন সম্মিলিত নারী সমাজের আহ্বায়ক রোকেয়া কবীর। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-সম্মিলিত নারী সমাজের নেত্রী খালেদা খাতুন, ফৌজিয়া খন্দকার, ফরিদা আখতার, শিরীন আখতার এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বর্তিকা চাকমা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্চয় চাকমা। সমাবেশে বক্তারা বলেন- নারীরা বার বার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সংসদে কল্পনার বিষয়টি তোলা এবং দোষীদের শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা হোক।
ভোরের কাগজ : ২৩ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণের বিষয়ে সংসদে আলোচনার দাবি
কাগজ প্রতিবেদক : অপহৃত কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, কল্পনাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব। জাতীয় সংসদে কল্পনা অপহরণের বিষয়ে খোলা আলোচনা করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
সম্মিলিত নারী সমাজ গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিকেলে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সংগঠনের আহ্বায়ক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা খাতুন, ফৌজিয়া খন্দকার, শিরীন আখতার, বর্তিকা চাকমা ও সঞ্চয় চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কল্পনা চাকমা কেবল নারী অধিকার কিংবা ভোটাধিকার নয় পুরো সমাজের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তাকে উদ্ধার করার দাবিকে কেবল নারী সমাজের আবেগের বিষয় বলে যারা চালাতে চায় তারা পুরো ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা এর প্রতিকার দাবি করছি। সমাবেশে আরো বলা হয় এখন দেশ চালাচ্ছে নির্বাচিত সরকার। যদিও ১২ জুন নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কল্পনা অপহৃত হয় তবুও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে এ সম্পর্কে জবাব দিতে হবে।
পাহাড়ী গণপরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রসিত বি খীসা এক বিবৃতিতে নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক হেলিকপ্টার দিয়ে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে প্রচারপত্র ছেড়ে অপহৃত কল্পনা চাকমার সন্ধানদানের জন্য পুরস্কার ঘোষণার ঘটনায় বিস্ময় ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে তিনি ঐ ঘটনাকে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপপ্রয়াস বলে অভিহিত করে বলেছেন প্রকারান্তরে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তাবাহিনী অপহরণে দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ইউনূস কল্পনা চাকমার সন্ধান চেয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে সেনাবাহিনী থেকে ‘হৃদয় ঘটিত’ ব্যাপারে বলে জানানো হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে, সেনাবাহিনী কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত ছিল।
ইত্তেফাক : ২৩ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবী
গত ১১ই জুন গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে উদ্ধারের দাবিতে সম্মিলিত নারী সমাজ গতকাল (সোমবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ কল্পনা চাকমার বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করিয়া বলা হয়, নারীরা বারবার নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হইতেছে। সমাবেশে ইয়াসমীন হত্যার তদন্ত তরান্বিত করারও দাবি জানান হয়। রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে খালেদা খাতুন, ফৌজিয়া খন্দকার, ফরিদা আখতার, শিরীন আখতার, বর্তিকা চাকমা ও সঞ্চয় চাকমা বক্তব্য রাখেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
জনকণ্ঠ : ২৩ জুলাই ১৯৯৬
৪১ দিনেও রহস্যের জট খোলেনি
কল্পনা চাকমা কোথায়? কল্পনা কি বেঁচে আছেন? কারা তাঁকে অপহরণ করেছে? ১ মাস ১১ দিন আগে রাঙ্গামাটির এক প্রত্যন্ত পার্বত্য গ্রাম থেকে অপহৃত কল্পনা সম্পর্কে এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। অমীমাংসিত রয়ে গেছে কল্পনা চাকমার অন্তর্ধান রহস্য।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে গত ১১ জুন রাতে একদল লোক তাঁর বাঘাইছড়ির লাল্যাঘোনা গ্রাম থেকে অপহরণ করে। গত এক মাস যাবত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, সম্মিলিত নারী সমাজ, নারীপক্ষসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কল্পনাকে উদ্ধারের সোচ্চার দাবি জানাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তৎপরতার ফলে কল্পনার অন্তর্ধানের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং ঢাকার কয়েকটি থানায় কল্পনার অন্তর্ধান সম্পর্কে যে এফআইআর আছে, তাতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। কল্পনার অপহরণের ঘটনাটি সরেজমিনে তদন্ত করে এসেছেন একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী শিশির মোড়ল। তিনি জানান, কল্পনার মা বাঁধুনি চাকমা বাঘাইছড়ি থানার টিএনও’র কাছে একটি জবানবন্দি দিয়েছেন। টিএনও জবানবন্দিটি লিখে নেন। এই জবানবন্দিই পরে থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করাহয়। কিন্তু বাধুনি চাকমা টিএনও’র কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার সঙ্গে থানার এফআইআর-এর তফাৎ রয়েছে। টিএনও’র কাছে প্রদত্ত জবানবন্দিতে বাঁধুনি চাকমা অপহরণকারীদের হাতে অস্ত্র এবং টর্চ ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু থানায় রেকর্ড করা এফআইআর-র এই তথ্য গোপন করা হয়েছে।
কল্পনার অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে এখন চারটি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। এক. কল্পনাকে সেনাবাহিনী অপহরণ করেছে। দুই. কল্পনা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিন. শান্তিবাহিনীর একটি উপদল কল্পনাকে অপহরণ করেছে। চার. কল্পনা প্রেমে জড়িয়ে পড়েছেন এবং প্রেমিকের সঙ্গে অজ্ঞাতবাসে গেছেন।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং দেশের অধিকাংশ মানবাধিকার সংগঠন কল্পনার অপহরণের ব্যাপারে পরোক্ষ ভাবে একটি বিশেষ মহলকে অভিযুক্ত করছে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্চয় চামকা জনকণ্ঠকে বলেন, লাল্যাঘোনা গ্রামের কাছে কজইছড়িতে ‘৮৭ সাল থেকে একটি আর্মি ক্যাম্প রয়েছে। এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইসহাক নামে এক বাঙালি অপহৃত হয়। এই অপহরণের ঘটনা নিয়ে বাঙালী ও চাকমাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কজইছড়ি ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ১৩ মার্চ এলাকায় একটি শান্তি সমাবেশ করেন। তিনি শান্তি ভঙ্গের বিরুদ্ধে সবাইকে হুঁশিয়ার করে দেন। কিন্তু ১৯ মার্চ রাতে এলাকার ৭ জন চাকমার বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা আগুন দেয়। এর বিরুদ্ধে এলাকার প্রতিবাদ সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন কল্পনা চাকমা। তাঁর সঙ্গে এক কর্মকর্তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।৭ জন উপজাতীয় বাড়িতে আগুন দেয়ার জন্য কল্পনা চাকমা সেনা অফিসারকে দায়ী করেন। সঞ্চয় চাকমা বলেন, আমরা সন্দেহ করছি এই ঘটনার জের হিসাবে কল্পনাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে। কল্পনা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে কিংবা কল্পনা প্রেমে জড়িয়ে পড়ে অজ্ঞাতবাসে গেছেন— এই দুটি বক্তব্যের সমর্থনে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে অসমর্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে কল্পনার অপহরণের জন্য শান্তিবাহিনীর একটি উপদলকে দায়ী করা হয়েছে।
এ বক্তব্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্চয় চাকমা। তিনি বলেন, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কেতন চাকমার পক্ষে কাজ করেছে কল্পনা। বিজয় কেতন চাকমার পিছনে শান্তিবাহিনীর সমর্থন ছিল বলে মনে করা হয়। সুতরাং শান্তিবাহিনী কেন কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করতে যাবে। সেনাবাহিনী প্রথম দিকে কল্পনা চাকমার ঘটনার ব্যাপারে নির্বিকার থাকলেও পরে সক্রিয় হয়ে উঠে। জানা গেছে, কল্পনার ঘটনার ব্যাপারে কয়েকটি পশ্চিমা দূতাবাস সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে কল্পনার সন্ধানদাতার জন্য ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। হেলিকপ্টারে এই সংক্রান্ত লিফলেট পার্বত্য জেলাগুলোতে বিলি করা হয়েছে। কিন্তু ৩টি পার্বত্য জেলা তোলপাড় করেও কল্পনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সংবাদ : ২৩ জুলাই ১৯৯৬
নারী সমাজের সমাবেশ
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা দাবি
সম্মিলিত নারী সমাজের সমাবেশে বক্তারা কল্পনা চাকমার অপহরণের বিষয়টি জাতীয় সংসদের উত্থাপন এবং তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গত ১১ জুন গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তাকে উদ্ধারের দাবিতে গতকাল সোমবার বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত নারী সমাজের এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভানেত্রীত্ব করেন সম্মিলিত নারী সমাজের আহ্বায়ক রোকেয়া কবীর। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-সম্মিলিত নারী সমাজের নেত্রী খালেদা খাতুন, ফৌজিয়া খন্দকার, ফরিদা আখতার, শিরীন আখতার এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বর্তিকা চাকমা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্চয় চাকমা। সমাবেশে বক্তারা বলেন নারীরা বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সংসদের কল্পনার বিষয়টি তোলা এবং দোষীদের শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা হোক।
ভোরের কাগজ : ২৪ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণ
‘নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর দায় চাপানোর প্রয়াস ষড়যন্ত্রমূলক’
চট্টগ্রাম অফিস : হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার কথিত অপহরণের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন। সোমবার সদর দপ্তর, ২৪ পদাতিক ডিভিশন, চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে প্রকাশিত ৯ পৃষ্ঠার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১১ জুন রাতে রাঙ্গামাটি জেলার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের বাড়ি থেকে কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছেন বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো অফিসার বা জোয়ানের কোনো রকম সংশ্রব নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কথিত অপহরণের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর দায় চাপানোর প্রয়াস সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করা ও দেশে-বিদেশে সহানুভূতি কুড়ানোর জন্য শান্তিবাহিনী ও তাদের অঙ্গসংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ী গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের অপতৎপরতার অংশ এটি। এর পক্ষে যুক্তিস্বরূপ বিজ্ঞপ্তিতে ঐসব সংগঠনের বিবৃতি ও বাঘাইছড়ি থানায় কল্পনা চাকমার ভাইয়ের দাখিল করা এফআইআর-এর মধ্যকার বেশকিছু তথ্যগত অসঙ্গতি এবং আরো কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করে বলা হয়, এতে প্রশ্ন জাগে কল্পনা চাকমা সত্যিই অপহৃত হয়েছেন, নাকি স্বেচ্ছায় গা ঢাকা দিয়ে নতুন সরকারকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় অপহরণ ঘটনা সাজিয়েছেন।
ভোরের কাগজ : ২৪ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণ সম্পর্কে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ভাষ্য
চট্টগ্রাম অফিস : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমার অপহরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে ২২ জুলাই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হয়। এটি গতকাল মঙ্গলবার আমাদের হাতে আসে। উক্ত দপ্তরের তথ্য অফিসার মোঃ জসীমউদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উদ্ভুত সন্দেহ দূরীকরণার্থে’ ও পরিপূর্ণ ঘটনা বিশ্লেষণের স্বার্থে’ এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হয়েছে। পত্রিকার স্থান বিবেচনায় দীর্ঘ প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ঈষৎ সংক্ষিপ্ত করে নিচে দেওয়া হলো :
বিগত সংসদ নির্বাচনের পূর্ব রাতে অর্থাৎ ১১ জুন ১৯৯৬ রাতে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রাম হতে হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা নিখোঁজ হন। ঘটনার পরদিন কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে একটি মহল হতে নিরাপত্তাবাহিনীর কতিপয় সদস্যসহ একজন অফিসারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলা হয়। এ প্রেক্ষিতে নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ হতেও আলাদা একটি তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত বলে নিরাপত্তাবাহিনী ঘটনার ব্যাপারে এ যাবৎ নিশ্চুপ থেকেছে। কিন্তু ইদানীং কল্পনা চাকমার কথিত অপহরণের ব্যাপারে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি ও বিবৃতি ছাপা হচ্ছে। কল্পনা চাকমার অপহরণের বিষয়ে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে ও ঘটনার সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। কাজেই এ ব্যাপারে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি নিরসনকল্পে অপহরণের বর্ণিত অভিযোগটির সম্যক অনুধাবন, এর প্রেক্ষাপট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে আনুপূর্বক কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
শান্তিবাহিনী এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি জেলায় তাদের নিজস্ব প্রার্থী হিসেবে তাদের অঙ্গসংগঠন পাহাড়ী গণপরিষদ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য বিজয় কেতন চাকমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রজাপতি মার্কায় দাঁড় করায়। তার পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য তাদের প্রকাশ্য সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), পাহাড়ী গণপরিষদ (পিজিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)-কে নির্দেশ দেয়। অপরদিকে রাঙ্গামাটির অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দীপঙ্কর তালুকদারের পক্ষে নাগরিক কমিটিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয় জনগণ সমর্থন দেয় ও প্রচারণায় নামে।
শান্তিবাহিনীর সমর্থক পিসিপি, পিজিপি ও এইচডব্লিউএফ, দীপঙ্কর তালুকদারের জনপ্রিয়তায় শঙ্কিত হয়ে তার সমর্থক, বিভিন্ন উপজাতীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ উপজাতীয়দেরকে হুমকি ও হয়রানি শুরু করে। গত ৫ জুন দীপঙ্কর তালুকদারের পক্ষে নাগরিক কমিটির সদস্যরা নানিয়াচরে প্রচারণা শেষে রাঙ্গামাটি ফেরার পথে ১৫/২০ জন পিসিপি’র অস্ত্রধারী সদস্য বাবু গৌতম দেওয়ান, সাবেক চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার পরিষদ, রাঙ্গামাটি; হরি কিশোর চাকমা, ভোরের কাগজের প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি ও এডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু, পিসিসি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদককে অপহরণ করে চোখ বেঁধে জঙ্গলে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং প্রায় ৪ ঘন্টা পর দীপঙ্কর তালুকদারের সমর্থনে প্রচারণা না করার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ ছাড়াও গত ৮ জুন রাঙ্গামাটি জেলার বরকল থানা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা মোহন চাকমা, দীপঙ্কর তালুকদরের পক্ষে বড়হরিনাতে প্রচারের গেলে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা তাকেও অপহরণ করে। তিনি এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। অনুরূপভাবে গত ১৩ জুন বরকল থানার শুভলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীরু চাকমাকেও তার গ্রামের বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। বীরু চাকমা সম্প্রতি শান্তিবাহিনীর আস্তানা হতে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি তার বন্দিস্থলে করুণা মোহ্ চাকমাসহ স্থানীয় আরো একাধিক ব্যক্তিকে আটক দেখে এসেছেন বলে ‘দৈনিক আজাদী’র ১৬ জুলাই ৯৬ সংখ্যায় খবর ছাপা হয়েছে। পিসিপি/পিজিপির কর্মীরা ১১ জুন নানিয়ারচর থানার কল্যাণপাড়া হতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্রমুখ চাকমা, অধিপতি দেওয়ান, গৌতম মনি চাকমা ও তুষার কান্তি চাকমাকে রাঙ্গামাটি হতে ফেরার পথে অপহরণ করে। তারা কমলছড় হতেও নির্বাচনের পূর্ব রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তিনজন পোলিং এজেন্টকে অপহরণ করে। এরা হলেন- বিপুলেশ্বর চাকমা, সুই থোয়াই চাকমা এবং চারি মা মার্মা। পরিসংখ্যানে জানা যায় তারা সমগ্র পার্বত্যাঞ্চলে ৩৫ জন আওয়ামী লীগ সমর্থককে নির্বাচনের আগে ও পরে অপহরণ করেছে। নিজেদের মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হওয়াতে আওয়ামী লীগ সমর্থক উপজাতীয়দের উপর শান্তিবাহিনী ও পিসিপি’র নির্যাতন এখনো অব্যাহত আছে।
অপহরণের কথিত বর্ণনা অনুযায়ী কল্পনা চাকমা নির্বাচনের পূর্ব রাতে বাঘাইছড়ির উগলছড়ি হতে তার দুই ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা ওরফে কালীচরণ ও লাল বিহারী চাকমা ওরফে ক্ষুদিরাম-এর সঙ্গে অপহৃত হয়। এই অপহরণের সঙ্গে পূর্বাপর পিসিপি ও শান্তিবাহিনী জড়িত বলে স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা, তবে শান্তিবাহিনী ও পিসিপি’র সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা মুখ খুলতে নারাজ।
সচেতন মহলের ধারণা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে বা সরিয়ে দিয়ে শান্তিবাহিনী ও পিসিপি ভোটের পূর্ব রাতে তাৎক্ষণিক একটি ইস্যু তৈরি করে নির্বাচনে জনমতকে তাদের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
কল্পনা চাকমার বাড়ি হতে ৮০০ গজ দূরে উগলছড়ি সেনা ক্যাম্পের অবস্থান। সেই ক্যাম্পের পূর্বতন অধিনায়ক একজন তরুণ অফিসার, যিনি নির্বাচন উপলক্ষে ১১ জুন সকালে উক্ত ক্যাম্পে যান। সাম্প্রতিককালে উক্ত অফিসার শান্তিবাহিনী বা পিসিপির অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সাফল্যজনক কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করেন। কিছুদিন আগে বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সম্রাটসুর চাকমার বাড়িতে অবৈধ চাঁদা আদায়কারীদের অবস্থানের খবর পেয়ে তিনি একটি তল্লাশি অভিযান চালান। এ ছাড়াও উক্ত অফিসার আরেকটি অপারেশন চালিয়ে পিসিপি’র দুজন অবৈধ চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে উক্ত সম্রাটসুর চাকমা ও পিসিপি কর্মীরা বাঘাইছড়ি থানা এলাকায় সকল ঘটনার সঙ্গে উক্ত অফিসার উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক, জড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় বিশ্লেষণের পর কল্পনা চাকমার কথিত অপহরণের সঙ্গে উক্ত অফিসারের জড়িত থাকার কোন প্রকার সম্ভাবনা আছে কিনা তা বিবেচনা করার জন্য সচেতন মহলের কাছে অনুরোধ রইলো :
ক. অভিযুক্ত অফিসার নির্বাচন উপলক্ষে ১১ জুন সকালে যে টহলদলসহ উগলছড়ি ক্যাম্পে আসেন, সেই টহলদলটি ক্যাম্পে আসেন, সেই টহলদলটি ক্যাম্পে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ১১ জুন রাতে ক্যাম্পসংলগ্ন উপলছড়ি প্রাইমারী স্কুলে রাত্রিযাপন করেন। উক্ত অফিসার যদি ক্যাম্প হতে ৮০০ গজ দূরে কল্পনা চাকমার বাড়িতে কথিত রাত ১-৩০ হতে ২টার মধ্যে অপহরণের জন্য যান তবে সঙ্গত কারণে তার নিজের টহলদলের লোকজন নিয়েই যাওয়ার কথা। কিন্তু উপস্থিত নির্বাচনী কর্মকর্তারা অনুরূপ কোনো তৎপরতাই লক্ষ্য করেননি বলে জানিয়েছেন। উক্ত অফিসার তার টহলদল ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়ে সকাল ৭-১০ মিনিটে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প হতে পোলিং সেন্টারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে যান।
খ. ১১ জুন রাতে উগলছড়ি ক্যাম্পে ৪ জন অফিসার এক সঙ্গে অফিসার বাসস্থানে রাত্রিযাপন করেছেন। উপস্থিত ঊর্ধ্বতন অফিসারের বিনা অনুমতিতে এবং সকলের অগোচরে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও চাকরিচ্যুতির ঝুঁকি নিয়েও একজন অফিসারের পক্ষে একা ক্যাম্পের ৮০০ গজ দূরে যাওয়া যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
গ. কল্পনা চাকমার সঙ্গে উক্ত অফিসারের কোনো যোগাযোগ ছিল বলে এ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেনি। সেখানে ঘটনাটি প্রেমঘটিত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এ ছাড়া নির্বাচনের দায়িত্ব ব্যস্ত একজন অফিসারের পক্ষে নির্বাচনের পূর্ব রাতে অনুরূপ ঘটনা ঘটানোর পেছনে পর্যাপ্ত যুক্তিও খুঁজে পাওয়া যায় না।
কল্পনা চাকমার ভাইয়ের প্রদত্ত এফ আই আর রিপোর্টে উল্লেখিত গুলির শব্দ ক্যাম্পে ও স্কুলে অবস্থানরত নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য অথবা নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত বেসামরিক কর্মকর্তাদের কেউই শুনতে পাননি। গভীর রাতে গোলাগুলি হলে ক্যাম্পের সকলেই সতর্কাবস্থায় নিজ নিজ পূর্বনির্ধারিত অবস্থানে চলে যাওয়ার কথা। একই সঙ্গে আশপাশের উপজাতীয় ও অউপজাতীয় গ্রামের লোকজনেরও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া কথা। অথচ পিসিপির কর্মী, সমর্থক বা তাদের সাজানো কতিপয় ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ গুলির আওয়াজ শুনেছেন বলে জানা যায়নি। অধিকন্তু কথিত ঘটনার পর পর ক্যাম্পে ও স্কুলে অবস্থানরত নিরাপত্তাবাহিনীর সকল সদস্যের গোলাবারুদ ও বাণ্ডুলিয়ার (গুলি রাখার কোমর বন্ধনী) গণনা করে সঠিক পাওয়া যায়। কাজেই একথা সহজেই অনুমেয়, নিরাপত্তাবাহিনীর উপর দায় চাপানোর প্রয়াস সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। শুধু তাই নয়, কল্পনা চাকমা নিখোঁজ হওয়ার পর পিসিপি, পিজিপি ও এইচ ডব্লিউএফ-এর ইস্যুকৃত প্রেস রিলিজের সঙ্গে এফআইআর এর মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। কাজেই সকল ঘটনা পর্যালোচনা করে কল্পনা চাকমার অপহরণের সঙ্গে উক্ত ক্যাম্পের কারো জড়িত থাকার অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।
ঘটনার পর পর স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কল্পনা চাকমার বাড়িতে গিয়ে তার পরিধেয় বস্ত্র, বই পুস্তক ও নিত্য ব্যবহার্য কোনো সামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, তিনি অপহৃত হয়েছেন, না স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে নিরাপত্তাবাহিনীকে জড়িয়ে একটি ইস্যু তৈরি করে নতুন সরকারকে বিব্রত করার জন্য শান্তিবাহিনীর অপপ্রয়াসকে সমর্থন দিচ্ছেন। এ যাবৎ পরিচালিত কোনো তদন্তেই কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছেন, এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি কথিত অপহরণের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ। যদি স্থানীয় নিরাপত্তাবাহিনী বা অউপজাতীয় ভিডিপি সদস্যরা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করতোই, তবে এতদিনে তা কোনো না কোনোভাবে প্রকাশ হয়ে পড়াই স্বাভাবিক ছিল। তাছাড়া, পার্বত্যাঞ্চলের ভূমি প্রকৃতি সম্বন্ধে যাদের বাস্তব ধারণা আছে তাঁরা স্বীকার করবেন যে, যদি কাউকে সন্ত্রাসীরা পার্বত্যাঞ্চলের গহিন জঙ্গলে আটকে রাখে অথবা সীমান্তের ওপারে নিয়ে যায় বা স্বেচ্ছায় কেউ আত্মগোপন করেন তবে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষে তল্লাশি করে তাকে বের করা সময় সাপেক্ষ ও দুরূহ ব্যাপার।
তাছাড়া, কল্পনা চাকমা সম্প্রতি বেইজিঙে অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী সম্মেলনে অংশগ্রহণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তার আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট রয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। সুতরাং গোপনে বিদেশ চলে গিয়ে অপহরণেল কাহিনী সাজিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীকে জড়িত করা এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি তুলে ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপনের পরিকল্পনার সম্ভাবনা অমূলক নয়।
একটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে অসমর্থিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৮ জুন কল্পনা চাকমাকে নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর স্পিডবোট বাঘাইছড়ি হতে রাঙ্গামাটির দিকে যেতে দেখা গেছে। পার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে যাদের প্রত্যক্ষ ধাণা আছে, তারা একথা অবশ্যই স্বীকার করবেন যে, একজন তরুণ অফিসারের পক্ষে কোনো মহিলাকে নিয়ে স্পিডবোটে বা অন্য কোনোভাবে সদর দপ্তরের অজ্ঞাতসারে পার্বত্যঞ্চলের ভিতরে চলাচল একেবারেই অসম্ভব। একই সঙ্গে কল্পনা চাকমার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিরাপত্তাবাহিনীর কোনো সদস্যের সঙ্গে প্রেমঘটিত ব্যাপার বলেও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি পিসিপি ঢাকা থেকে একদল রিপোর্টার, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পার্বত্যাঞ্চলের দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে নিয়ে যায়, যেখানে অউপজাতীয় জনসাধারণ নিরাপত্তাহীনতার কারণে কখনো প্রবেশ করে না। এসব তদন্তকারীদের নিজেদের সন্দেহ নিরসনকল্পে অথবা এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানার জন্য চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশন সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ছিল, যা উনারা করেননি।
বস্তুত ১২ জুনের ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় পিসিপির ষড়যন্ত্রকারীরা একের পর এক মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত ঘটনার অবতারণা করছে।
কল্পনা, চাকমা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পিসিপির বক্তব্যে এবং মামলার বিবরণীতে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কোথাও কিছু লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তি, পিসিপির বিবৃতিতে কোথাও সেনাবাহিনী, কোথাও ভিডিপি, কোথাও অউপজাতীয়দের দোষারোপ করা হয়েছে। এফআইআর এ ঘটনা ১১ জুন উল্লেখ থাকলেও পিসিপি’র কর্মীরা রাঙ্গামাটিতে প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনাটি ১২ জুন হয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেছে।
শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসদমনে ১৯৭৬ সালে নিয়োজিত হওয়ার পর হতে সুদীর্ঘ ২০ বছরাধিকালে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পার্বত্য বৈরী পরিবেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী।
সুদীর্ঘ ২০ বছর পার্বত্যাঞ্চলে নিয়োজিত থাকাকালে নারী অপহরণের মতো কোনো ঘটনার সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনী কখনো জড়িত ছিল না। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা কঠোর আইনশৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালিত হয়।
চাকমার কথিত অপহরণের জট যত তাড়াতাড়ি খোলে ততই মঙ্গল। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশন কল্পনা চাকমার সন্ধানদাতাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। সবশেষে সকলের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, ঘটনা সম্বন্ধে পূর্বাপর না জেনে পার্বত্যাঞ্চলে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট, রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কিছু করা বা বিবৃতি দেওয়া থেকে যেন সকল মহল বিরত থাকেন।
সংবাদ : ২৫ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণ প্রসঙ্গ
২৪তম ডিভিশনের বক্তব্য প্রত্যাখান করেছে ৩ সংগঠন
পাহাড়ী গণপরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রসিত বি খীসা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্চয় চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সহ-সভানেত্রী কবিতা চাকমা এক যুক্ত বিবৃতিতে কল্পনা চাকমার অপহরণ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখান করে বলেন, সেনাবাহিনীর এই বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, অসঙ্গতিপূর্ণ ও সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, একজন সেনা সদস্যের কুকীর্তি ও অপরাধকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে ২৪ পদাতিক ভিভিশনের বিবৃতি দেশের পুরো সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এবং খোদ প্রতিষ্ঠানটিকেও দেশবাসীর কাছে বিতর্কিত করে তুলেছে।
বিবৃতিতে উপরোক্ত তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, সেনাবাহিনী সংক্রান্ত বক্তব্য- বিবৃতি সাধারণত সেনা সদর দপ্তর থেকে ISPR (Inter Services Public Relations)-এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়ে থাকে। অথচ সেনা সদর দপ্তর ও ISPR-এর ভূমিকাকে পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশন কোন্ বিধিবলে উপরোক্ত বক্তব্য প্রদান করে তা বোধগম্য নয়। তাছাড়া বর্তমানে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত
নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি বাঘাইছড়িতে ঘটনা তদন্ত শেষে ফিরে আসা সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের একটি টিম কর্তৃক ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সাথে যোগাযোগ না করার সেনাবাহিনীর অভিযোগকে খণ্ডন করে বলেন, উক্ত টিমটি গত ২রা জুলাই ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীন ২০৫ রাঙ্গামাটি ব্রিগেড অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা অফিসারের সাথে দেখা করেন। উক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা অফিসার কল্পনা চাকমার অপহরণের ব্যাপারে কোনরূপ মুখ খুলতে চাননি।
নেতৃবৃন্দ কল্পনার অপহরণের পর সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বক্তব্য, কার্যকলাপ ও তৎপরতার মধ্যে অসংগতির উল্লেখ করে বলেন, প্রথমদিকে তারা ঘটনাটি হৃদয় ঘটিত’ ব্যাপার বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। তাতে ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় সেনাবাহিনী এখন হৃদয় ঘটিত’ বলে প্রচারিত নিজেদের বক্তব্যকে নিজেরাই খণ্ডন করতে বাধ্য হচ্ছে। একটি সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে গিয়ে তারা এখন অসংখ্য মিথ্যার জন্ম দিচ্ছে। কাল্পনিকভাবে কল্পনা চাকমার আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট থাকার কথা তারা মরিয়া হয়ে প্রচার করছে। যদি কল্পনা চাকমা সত্যিই বিদেশে পাড়ি দিয়ে সেনাবাহিনীকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার ব্যবস্থা করে, তাহলে ইমিগ্রেশন বিভাগে কেন খোঁজ নেয়া হচ্ছে না? কেনই-বা এতবড় ঘটনা সংসদে আলোচিত হচ্ছে না?
সেনাবাহিনীর অপর একটি যুক্তিকে খণ্ডন করে নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচনের দু’দিন পূর্ব থেকে যেখানে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ, সে অবস্থায় কোন্ বিবেচনা থেকে নির্বাচনের ৭ ঘণ্টা আগে তাৎক্ষণিক ইস্যু তৈরি করে তিন সংগঠন নির্বাচনে জনমত নিজেদের পক্ষে নিতে যাবে। যদি নির্বাচনে এভাবে ইস্যু সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার হীন উদ্দেশ্য থাকে তাহলে কল্পনা চাকমার প্রতিপক্ষরাই তা করতে পারে।
“এই অপহরণের সঙ্গে পূর্বাপর পিসিপি ও শান্তিবাহিনী জড়িত বলে স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা, তবে শান্তিবাহিনী ও পিসিপি সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা মুখ খুলতে নারাজ”- ২৪ পদাতিক ডিভিশনের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যদি ওরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে সরকার কেন স্থানীয় অধিবাসীদের মুখ খোলার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে দিচ্ছে না? কেনইবা ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে না যাতে জনসাধারণ নির্ভয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করতে পারে? এসব কাসুন্দি ঘেঁটে সেনাবাহিনী প্রকারান্তরে নির্বাচিত সরকারকে হেয় করে চলেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অপহরণ ঘটনার সাথে লেঃ ফেরদৌস ও কতিপয় ভিডিপি সদস্যের জড়িত থাকার ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তারা নবনির্বাচিত সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন : অনতিবিলম্বে কল্পনা চাকমার মুক্তি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। এ যাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশ করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
জনকণ্ঠ : ২৫ জুলাই ‘৯৬
তিন সংগঠন সেনাবাহিনীর বক্তব্য প্রত্যাখান করেছে
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন কল্পনা চাকমা সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বক্তব্য প্রত্যাখান করে বলেছে, সেনাবাহিনীর এই বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক, অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। তিন সংগঠনের এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, একজন সেনা সদস্যের কুকীর্তি ও অপরাধকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের উপরোক্ত বিবৃতি দেশের পুরো সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এবং খোদ প্রতিষ্ঠানটিকেও দেশবাসীর কাছে বিতর্কিত করে তুলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী সংক্রান্ত বক্তব্য-বিবৃতি সাধারণত সেনা সদর দফতর থেকে আইএসপিআর-এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়ে থাকে। অথচ সেনা সদর দফতর ও আইএসপিআর-এর ভূমিকাকে পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশন কোন বিধি বলে এই বক্তব্য প্রদান করে তা বোধগম্য নয়।
ভোরের কাগজ : ২৫ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমা অপহরণ : তিন দফা দাবি
২৪ পদাতিকের বক্তব্য প্রত্যাখান করে ৩ সংগঠনের বিবৃতি
কাগজ প্রতিবেদক : পাহাড়ী নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ সম্পর্কে গতকাল বুধবার বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পাহাড়ী গণপরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রসিত বি খীসা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্চয় চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সহ-সভানেত্রী কবিতা চাকমা। গতকাল দেওয়া যুক্ত বিবৃতিতে তারা ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর, অসঙ্গতিপূর্ণ ও সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
পাহাড়ী গণপরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে রবি শংকর চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। একজন সেনা সদস্যের কুকীর্তি ও অপরাধ ধামাচাপা দিতে গিয়ে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ঐ বক্তব্য দেশের পুরো সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করেছে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে দেশবাসীর কাছে বিতর্কিত করে তুলেছে।
বিবৃতিতে নবনির্বাচিত সরকারের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- (১) অবিলম্বে কল্পনা চাকমার মুক্তি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন (২) ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা এবং (৩) এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশ করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি বাঘাইছড়িতে ঘটনা তদন্ত শেষে ফিরে আসা সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের একটি টিমের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সঙ্গে যোগাযোগ না করার অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, ঐ টিম গত ২ জুলাই ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীন ২০৫ রাঙ্গামাটি ব্রিগেড অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা অফিসারের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু ঐ কর্মকর্তা কল্পনা চাকমার অপহরণের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএসপিআরই যথোপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বলে তিনি জানান। যদিও সেনা সদর ও আইএসপিআরকে পাশ কাটিয়ে ২৪ পদাতিক ডিভিশন মঙ্গলবার বিবৃতিটি দিয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, অপহরণ ঘটনার সঙ্গে লে. ফেরদৌস ও কতিপয় ভিডিপি সদস্যের জড়িত থাকার ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
ইত্তেফাক : ২৫ জুলাই ‘৯৬
সেনাবাহিনীর বক্তব্যের জবাবে ৩ সংগঠন
কল্পনা চাকমা সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, সেনা বাহিনীর এই বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক, অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিবৃতিতে বলা হয়, একজন সেনা সদস্যের অপরাধকে ধামাচাপা দিতে গিয়া ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বিবৃতি দেশের সমগ্র সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করাইয়াছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী সংক্রান্ত বক্তব্য-বিবৃতি সাধারণতঃ সেনা সদর দফতর হইতে আইএসপিআর-এর মাধ্যমে প্রদান করা হইয়া থাকে। অথচ সেনা সদর দফতর ও আইএসপিআর-এর ভূমিকাকে পাশ কাটাইয়া চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশন কোন বিধি বলে এই বক্তব্য প্রদান করে, উহা বোধগম্য নয়।
সংবাদ : ২৬ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমার সন্ধান দাবিতে সমাবেশ ও স্মারকলিপি
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে অপহৃত পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীনেত্রী কল্পনা চাকমার সন্ধান দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তারা কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের গ্রেফতার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীন দেশে একজন নারী নেত্রী নিখোঁজ হয়ে যাবেন আর সরকার চুপ করে থাকবে তা হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি আয়োজিত লুৎফর রহমান শাহজাহানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খুশী কবির, সুলতানা কামাল, আনু মোহাম্মদ, ফরিদা আক্তার, নাজমা নাজনীন, বর্তিকা চাকমা প্রমুখ।
খুশী কবির তার বক্তব্যে বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণে আমরা উদ্বিগ্ন। সে এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার সঠিক তথ্য জানতে চাই। তিনি বলেন, কল্পনা সব সময় অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করতেন, তার অপহরণে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
সুলতানা কামাল বলেন, সব ধর্মবর্ণের মানুষ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারবে- এই আশায় আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু এখনও দেখছি মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৪০ দিন হয়ে গেল কল্পনা অপহৃত হয়েছে, কিন্তু এখনো তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশে এখনো শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, আমরা সে আন্দোলনে কল্পনাকে আমাদের পাশে চাই।
সমাবেশের জাতীয় সংসদের স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি পাঠ করেন আনু মোহাম্মদ পরে স্মারকলিপি স্পিকারের কাছে দেয়ার জন্য একটি মিছিল সংসদ অভিমুখে যাত্রা করেন। বাংলা মোটরে পুলিশ মিছিলের গতিরোধ করলে কয়েকজন প্রতিনিধি সংসদ ভবনে গিয়ে ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন স্মারকলিপিতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে :
১. অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। কল্পনা চাকমাকে অপহরণের বিরুদ্ধে আহূত শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ চলাকালে গুলি করে রুপন চাকমাকে হত্যা ও অপর তিনজনকে গুম করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. পার্বত্য অঞ্চলে নারী-পুরুষ সকলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. অবিলম্বে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৫. অবিলম্বে বিচারপতির নেতৃত্বে সমগ্র পরিস্থিতি তদন্তের জন্য একটি গণতদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
আজকের কাগজ : ২৬ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমা’র অপহরণ
‘বিভিন্ন মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে’
কাগজ প্রতিবেদক : ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’র সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকার কারণেই সংখ্যালঘু পাহাড়ি নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছেন। অপহরণের ঘটনার পর এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো সরকারি উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উপরন্তু, কল্পনা চাকমা’র অপহরণের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যে বিভিন্ন মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। দলীয় আহ্বায়ক ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বর্তিকা চাকমা, বিপ্লবী নারী আন্দোলনের নাজমা নাজনীন, সম্মিলিত নারী সমাজের খুশি কবির, নারীপক্ষের ফরিদা আখতার প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এতে স্মারকলিপি পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সমাবেশে পরিচালনা করেন- ছাত্র ফেডারেশনের নেতা ফরহাদ হোসেন। সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নেতা-কর্মীসহ পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে ও তার উদ্ধারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ বক্তারা বলেন, কল্পনা নিখোঁজ হওয়ার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রাম সেনা দফতরের ২৪ ডিভিশন পদাতিকের বক্তব্যকে প্ৰত্যাখান করে বক্তারা বলেন, দেশে ক্ষমতাসীন নির্বাচিত সরকার ও সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ-আইএসপিআরকে পাশ কাটিয়ে ২৪ ডিভিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কারণ বোধগম্য নয়। এ বিজ্ঞপ্তি সত্যের অপলাপ মাত্র।
সমাবেশ শেষে সংসদ ভবন অভিমুখে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
যায়যায় দিন : ২৬ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমা এবং আইনের শাসন
নারী নির্যাতন আইন (১৯৯৫) অনুসারে নারী অপহরণ একটি ফৌজদারি অপরাধ যার শাস্তি ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এই আইনটি প্রয়োগে পুলিশের তৎপরতা কমই দেখা গেছে।
১১ জুন ১৯৯৬-এর রাতে যখন সারা দেশ একটি বহুল প্রচারিত সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের প্রস্তুতি নিল ঠিক তখনই পার্বত্য চট্টগ্রামে তার গ্রামের বাড়ি থেকে কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছিলেন বলে খবর বেরিয়েছে। তার বয়স ছিল বিশের কিছু ওপরে। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা ও সাফল্য উৎসাহিত সমর্থকদের শুভেচ্ছা বাণীতে ভরপুর দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্য কয়েকটিতে কল্পনা চাকমার অপহরণের খবরটি এক কোনায় প্রকাশিত হয়। হিল উইমেন্স ফেডারেশন (Hill Women’s Federa- tion) প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছিল এটি। কল্পনা চাকমা এই সংস্থার একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
পরবর্তী তদন্তগুলোতে এবং কল্পনার পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় জানা গেছে যে শাদা পোশাকে কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি বাঁশের দরজা ভেঙে তাদের ঘরে ঢোকে। এদের মধ্যে একজনের নাম করা হয়েছে। উল্লেখ্য সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পের কাছেই কল্পনার বাড়ি।
হামলাকারীরা টর্চের আলোতে ঘুমন্ত পরিবারের মুখ দেখতে থাকে। তারপর তারা কল্পনা এবং তার দুটি ভাইকে নিয়ে যায়। ভাইরা অন্ধকারে পালাতে পারে। কিন্তু কল্পনা এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।
অনেক কয়েকটি নারী সংস্থা তাদের প্রতিবাদসহ এই বিষয়ে আশু তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবী পেশ করেছে। জানা গেছে স্থানীয় থানাতে একটি এফআইআর ফাইল করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগে বিভিন্ন নারী সংস্থা, বিশেষত, যারা নির্বাচনের সময়ে সহিংস ঘটনা মনিটর করছিল তারা সম্মিলিতভাবে কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করেছে। ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস এই সম্মেলনে বলেন যে, যখন এই খবরটি পান, তখন তিনি উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত ছিলেন। ডঃ ইউনূসের উদ্বেগকে কমান্ডিং অফিসার নাকচ করে বলেন, বিষয়টি ‘হৃদয়ঘটিত’ যাদের ওপর দায়িত্ব জনসাধারণকে রক্ষা করা তাদের মুখে এই ধরনের মন্তব্য অসাধারণ।
অপহৃত হবার পরে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এই বিষয়টি সম্পর্কে কেউ মুখ খুলছে না। হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও অন্য কয়েকটি নারী সংস্থা বারবার জানতে চেয়েছে কল্পনা চাকমা কোথায়? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে এখনো কোনো উত্তর দেয়নি। তারা জানায়নি কোনো তদন্ত হচ্ছে কিনা এবং তদন্ত হয়ে থাকলে এখন পর্যন্ত তার ফল কি?
আমরা কি ধরে নেব কল্পনা অদৃশ্য হয়ে গেছে কারণ সে একজন নারী অথবা সে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য অথবা তার হামলাকারী সম্ভবত জনগণের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি? নতুন সরকার দেশে আইনের শাসন প্রবর্তনের কথা বলেছেন। কল্পনা চাকমার ক্ষেত্রে কি তারা তাদের অঙ্গীকার এখন রাখবেন?
রীতা হোসেন
ভোরের কাগজ : ২৬ জুলাই ১৯৯৬
কল্পনা চাকমার সন্ধান দাবিতে সমাবেশ ও স্মারকলিপি
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে অপহৃত পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীনেত্রী কল্পনা চাকমার সন্ধান দেয়ায় জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তারা কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীন দেশে একজন নারী নেত্রী নিখোঁজ হয়ে যাবেন আর সরকার চুপ করে থাকবে তা হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি আয়োজিত লুৎফর রহমান শাহজাহানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন খুশী কবির, সুলতানা কামাল, আনু মুহাম্মদ, ফরিদা আখতার, নাজমা নাজনিন, বর্তিকা চাকমা প্রমুখ।
খুশী কবির তার বক্তৃতায় বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণে আমরা উদ্বিগ্ন। সে এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার সঠিক তথ্য জানতে চাই। তিনি বলেন, কল্পনা সব সময় অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করতেন, তার অপহরণে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
সুলতানা কামাল বলেন, সব ধর্ম বর্ণের মানুষ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারবে- এই আশায় আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু এখনও দেখছি মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৪০ দিন হয়ে গেল কল্পনা অপহৃত হয়েছে, কিন্তু এখনো তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশে এখনো শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, আমরা সে আন্দোলনে কল্পনাকে আমাদের পাশে চাই।
সমাবেশে জাতীয় সংসদের স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি পাঠ করেন আনু মুহাম্মদ। পরে স্মারকলিপি স্পিকারের কাছে দেয়ার জন্য একটি মিছিল সংসদ অভিমুখে যাত্রা করেন। বাংলা মোটরে পুলিশ মিছিলের গতিরোধ করলে কয়েকজন প্রতিনিধি সংসদ ভবনে গিয়ে ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।
স্মারকলিপিতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে :
১. অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। কল্পনা চাকমাকে অপহরণের বিরুদ্ধে আহূত শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ চলাকালে গুলি করে রুপন চাকমাকে হত্যা ও অপর তিনজনকে গুম করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। ২. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। ৩. পার্বত্য অঞ্চলে নারী পুরুষ সকলের নিরাপত্তা। ৪. অবিলম্বে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হবে। ৫. অবিলম্বে বিচারপতি নেতৃত্বে সমগ্র পরিস্থিতি তদন্তের জন্য একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
.
ভোরের কাগজ : ২৬ জুলাই ‘৯৬
প্রেসক্লাবে সমাবেশ, স্পিকারকে স্মারকলিপি :
অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবি
কাগজ প্রতিবেদক : অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার, অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পাহাড়ি এলাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার জাতীয় সংরক্ষণ কমিটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। এতে ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাহজাহানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন খুশী কবির, এডভোকেট সুলতানা কামাল, ফরিদা আখতার, মাহবুবুল হক রিপন, বর্তিকা চাকমা প্রমুখ। সমাবেশে স্পিকারকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত স্মারকলিপি পড়ে শোনান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
খুশী কবির বলেন, আমরা কল্পনা চাকমার প্রকৃত অবস্থা জানতে চাই। দেশবাসী খুবই উদ্বেগ এবং হতাশার সঙ্গে কল্পনা চাকমার অপহরণের ব্যাপারে সরকারের নির্বিকার ভাব লক্ষ্য করছে। দেশের একজন প্রতিবাদী নারী অপহৃত হবে অথচ সে বিষয়ে সরকারের কোন ভাবান্তর হবে না এটি গোটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, একটি স্বাধীন দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। অথচ কল্পনা চাকমার ক্ষেত্রে আমরা হতবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম প্রতিবাদী এক নেত্রী উধাও হয়ে যাওয়ার পরও সরকার চুপচাপ রইলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, সেনাবাহিনী তাদের দোষ চাপা দেওয়ার জন্য পত্রিকার মাধ্যমে অনেক মিথ্যে তথ্য পরিবেশন করেছে। পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকার পরও একজন প্রতিবাদী নারী উধাও হয়ে যাবে অথচ সেনাবাহিনী কিছুই জানবে না তা হতে পারে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ শেষে জাতীয় কমিটি একটি মিছিল নিয়ে স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করতে সংসদ অভিমুখে যায়। পুলিশ মিছিলটি বাংলা মোটরের কাছে থামিয়ে দেয়।
বাংলা মোটরে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের ফয়জুল হাকিম লালা, বাসদের বজলুর রশিদ ফিরোজ, পাহাড়ী গণপরিষদের প্রসিত বিকাশ খীসা, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেরামের মোশরেফা মিশু, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সঞ্চয় চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
তারপর পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি নিয়ে স্পিকারের কাছে যান। প্রতিনিধিদল ছিলেন অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাহজাহান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, শামিম আখতার ও বর্তিকা চাকমা।
.
ভোরের কাগজ : ২৭ জুলাই ‘৯৬
সরকারের প্রতি ওয়ার্কার্স পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নিন
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার পার্টির পলিটব্যুরোর দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ৩১ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর সঙ্গে অস্ত্র বিরতির মেয়াদ শেষ হবে। অস্ত্র বিরতির মেয়াদ বারবার বাড়ানো হলেও গত কয়েক মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে উত্তেজনা বেড়েছে। বিশেষ করে গত ১১ জুন রাতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ উত্তেজনা আরো বেড়েছে। সেনাবাহিনী এ অপহরণ ঘটনার দায়িত্ব অস্বীকার করলেও ঘটনাটি রহস্যজনক। সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বেসামরিক সকল কর্তৃপক্ষই এ দায়িত্ব অস্বীকার করেছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর এ অভিযোগই সত্য হচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসন এখনো সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন। বিজ্ঞপ্তি।
.
আজকের কাগজ : ২৮ জুলাই ‘৯৬
কল্পনা চাকমার অপহরণ
খাগড়াছড়িতে শ’ শ’ ছাত্র-জনতা অবস্থান ধর্মঘট করেছে
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে ও তার উদ্ধারের দাবিতে শ’ শ’ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। ধর্মঘটের সমাবেশে পাহাড়ি নেতারা বলেছেন, রূপন, মনতোষ, সমর বিজয় ও সুকেশ চাকমার অপহরণকারী হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে যে কোনো অঘটনের জন্যে সরকার দায়ী থাকবে।
উল্লেখ্য, ৪৭ দিন আগে গত ১১ জুন রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহৃত হন।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ী গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এ অবস্থান ধর্মঘটের আয়োজন করে। সকাল ১০টায় জেলার স্বনির্ভর এলাকা থেকে ধর্মঘটীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। অবস্থান ধর্মঘটের সমাবেশে দীপ্তি শংকর চাকমা, মংনুচিং মারমা, ঝিনু চাকমা, নিকোলাস চাকমা, প্রদীপন খীসা, দীপায়ন চাকমা প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বক্তারা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবিলম্বে কল্পনা চাকমা উদ্ধারের জোর দাবি জানান। অন্যথায় সংগঠনগুলো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে বলে বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
.
ভোরের কাগজ : ২৮ জুলাই ১৯৯৬
প্রতিক্রিয়া
প্রসঙ্গ : কল্পনা চাকমা সম্পর্কিত সেনাবাহিনীর ভাষ্য নীলোৎপল চৌধুরী
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা অপহরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সদরদপ্তর, চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে ২২ জুলাই একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হয়। ভোরের কাগজে প্রেস বিজ্ঞপ্তি (কিছুটা সংক্ষিপ্ত আকারে) ছাপা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার সামান্য কিছু ধারণা আছে। আমার ধারণা একজন সামরিক কর্মকর্তার ভাষায় ‘alarmingly low’। আমি খাগড়াছড়ির ঐ সাবেক বিগ্রেড কমান্ডারের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমার সামান্য জ্ঞান নিয়ে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে বিলি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চাই।
‘আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত বলে নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনার ব্যাপারে এ যাবৎ নিশ্চুপ থেকেছে।’ কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনী হঠাৎ করেই সরব হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে ৫০,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা এবং এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ঘটনা তার প্রমাণ। ঘটনার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি দূর করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার ব্যাপারে যারা সার্বিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের পক্ষ থেকে কল্পনার অবস্থান সম্পর্কে এমন সব কাল্পনিক তথ্য হাজির করা হলো যাতে করে পাঠক সহজেই বিভ্রান্তির শিকার হতে পারেন এবং তদন্তের কাজ বিঘ্নিত হতে পারে। লোগাং হত্যাকাণ্ডসহ আরো অসংখ্য ঘটনার তদন্তের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর এ রকম প্রভাব বিস্তার করা আচরণ পূর্বেও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয় সন্ত্রাস দমনের নামে এবং ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে সেখানে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্ক্ষলা ও শান্তি রক্ষার মূল দায়িত্ব পালন করে আসছে।
একটি বিরাট সংখ্যক সৈন্য সেখানে রাখতে, কাউন্টার-ইনসারজেন্সির নামে প্রশিক্ষণ, ক্যাম্প তৈরি, ইত্যাদি আরো নানা কারণে আমাদের দেশের কতো অর্থ ও সম্পদ ব্যয় হয়েছে- তা আমরা সাধারণ দেশবাসী কোনোদিন জানতে পারিনি। অথচ এতোদিন পর পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-প্রকৃতির অজুহাত দিয়ে কল্পনাকে খুঁজে বের করাটাকে ‘দুরূহ ব্যাপার’ বলে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু মানুষকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত মূলত দুটি পক্ষঃ শান্তিবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনী তা করেছে শান্তি রক্ষার নামে। এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আটকাদেশের বিরুদ্ধে যতোগুলো রিট পিটিশন হাইকোর্টে করা হয়েছে তার সবগুলোতেই আটকাদেশ অবৈধ বলে ঘোষিত হয়েছে। অনেক নেতানেত্রীকে ইতিপূর্বে সেনাবাহিনী আটক রেখেছে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই। আদর্শগত দিক দিয়ে কল্পনার অবস্থান শান্তিবাহিনী বা জেএসএস-এর কাছাকাছি। সুতরাং কল্পনা যদি নিখোঁজ হয় বা অপহৃত হয়, সেক্ষেত্রে প্রথম দৃষ্টি নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর গিয়েই পড়ে। অতীতের অভিজ্ঞতার কারণেই তা হয়।
নাম উল্লেখ না করে পাঠকের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, ইতিপূর্বে একাধিক পাহাড়ি মেয়েকে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা প্রথমে জোর করে ধরে নিয়ে গেছেন এবং পরবর্তী সময়ে বিয়ে করেছেন। অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা আছে। কল্পনার বাড়ির কিছুটা দূরে পাওয়া গিয়েছিল ধর্ষিত রক্তাক্ত অবস্থায় কিশোরী স্বপ্ন রেখার লাশ। এসবের দায়দায়িত্ব কি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এড়াতে পারেন?
নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামে এ বছর ১৯ মার্চ রাতে সাতটি পাহাড়ি পরিবারের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘর পোড়ানো সম্পর্কে কোনো কিছুই নিরাপত্তা বাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির নেই। অথচ ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কল্পনা এবং উগলছড়ি ক্যাম্পের একজন তরুণ অফিসারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কল্পনা চাকমার বাড়িতে গিয়ে তার পরিধেয় বস্ত্র, বইপুস্তক ও নিত্যব্যবহার্য কোন সামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ কিন্তু সম্প্রতি ভোরের কাগজে কল্পনার ডায়েরি থেকে লেখা ছাপা হয়েছে। কল্পনা সবকিছু নিয়ে যাবে আর ডায়েরি রেখে যাবে— এটা কি যুক্তিসঙ্গত?
‘সম্প্রতি পিসিপি ঢাকা থেকে একদল রিপোর্টার, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পার্বত্য এলাকার দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে নিয়ে যায় যেখানে অ- উপজাতীয় লোকজন নিরাপত্তাহীনতার কারণে কখনো প্রবেশ করে না’- সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য হলো, ঢাকা থেকে যারা গিয়েছিলেন তাদের প্রায় সকলেই নিজ বা নিজ সংগঠনের উদ্যোগে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কর্মীরা তাদের যেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে অ-উপজাতীয়রা প্রবেশ করে এমনকি বসবাসও করে। একজন বাঙালি ফেরিওয়ালাকে হাড়িপাতিল নিয়ে দেখা গিয়েছিল ওই এলাকাতে।
কল্পনার মা বাঁধুনি চাকমা, ভাবী চারুবালা ও গ্রামের ব্যবসায়ীসহ আরো অনেকে বলেছেন যে, তারা গুলির শব্দ শুনেছেন। সুতরাং গভীর রাতে সকলকেই গুলির শব্দ শুনতে হবে কেন?
প্রাপ্ত তথ্য এবং দায়ের করা মামলার বিবরণী থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো তরুণ অফিসার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। একই রকমভাবে এটাও নিশ্চিত হওয়া যায় না যে কল্পনা আত্মগোপন করেছে বা শান্তিবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেছে অথবা ‘আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট’ নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী কল্পনার বিকল্প অবস্থান সম্পর্কে যে মত প্রকাশ করেছে তার পিছনে কোনো তথ্য নেই। তা একেবারেই কাল্পনিক।
এটা বিবেচিত হতে পারে দায়িত্ব এড়ানোর পাঁয়তারা হিসেবে- এতকাল পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের নামে যা করা হয়েছে।
নীলোৎপল চৌধুরী : ফ্রি ল্যান্সার (এন.জি.ও কর্মী)।
.
আজকের কাগজ : ১ আগস্ট ১৯৯৬
বিশেষ সাক্ষাতকারে
প্রসিত বিকাশ খীসা
কল্পনা চাকমার অপহরণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার চক্রান্ত
বিপ্লব রহমান : ঠিক ৫০ দিন আগে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা নিখোঁজ হয়েছেন। তার অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। কল্পনার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহলের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যায় দেখা দিয়েছে সংশয়, বিভ্রান্তি। পার্বত্য রাজনীতি হয়ে উঠেছে জটিল থেকে জটিলতর। বিপন্ন হয়ে পড়েছে পাহাড়ের জনপদ। এ বিষয়ে পাহাড়ী গণপরিষদের সাধারণ সম্পাদক, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের অন্যতম সংগঠক প্রসিত বিকাশ খীসা ‘আজকের কাগজ’কে বলেছেন, যারা পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে নানাভাবে চক্রান্ত করা হচ্ছে। যেমন-হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণের এতোদিন পরেও ছেড়ে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক বড়ো বড়ো ঘটনা তো প্রকাশই পায় না, চাপা পড়ে যায়। যেমন-বিগত সরকারের আমলে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা-হুলিয়া, প্রত্যাহার করা হয়নি। রাজনৈতিক কারণে যারা আটকাধীন, তাদের মুক্তি দেয়া হয়নি। অন্যদিকে, ভূমি বেদখল আর বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যাগত শরণার্থিদের দাবি পূরণ করা হয়নি। বিএনপি সরকার হীন দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সমাজের চিহ্নিত অপরাধী বিভিন্ন মামলার দাগী আসামীদের নিয়ে পাহাড়ে যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে এখনো সেখানে বেসামরিক প্রশাসনের ওপর সেনা খবরদারি ও কর্তৃত্ব বজায় রয়েছে।
নিখোঁজ কল্পনা চাকমার অপহরণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পাহড়ী নেতা প্রসিত বলেন, এ বছরে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কল্পনাদের এলাকায় সেনাসদস্যরা নিরীহ গ্রামবাসিদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিলো। সঙ্গত কারণেই কল্পনা ওই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। সে সময় দায়িত্বপ্রান্ত সেনা কর্মকর্তা লে: ফেরদৌসের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিলো, যার সাক্ষি সেই এলাকার লোকজন। ওই অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটাই যেনো কল্পনা চাকমার অপরাধ হয়েছিলো। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত, সবার আগ্রহ ও দৃষ্টি যখন নির্বাচনের দিকে, ওই ফাঁকে লে: ফেরদৌস আক্রোশবশত সেনা জওয়ান ও ভিডিপি সদস্য নিয়ে ১১ জুন গভীররাতে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
কল্পনা চাকমাকে অপহৃত হওয়ায় কেবল রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে নয়, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমনে ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বলতে গেলে সারা দেশে কল্পনার মুক্তির ব্যাপারে দাবি উত্থাপিত হচ্ছে। অপহরণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যে সেবাবাহিনী নানান ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। পাহাড়ী-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মাঝে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব লাগিয়ে তারা দৃশ্যপট থেকে সরে যেতে চাচ্ছে।
সেনাবাহিনীর ২৪ ডিভিশনের বিজ্ঞপ্তিকে প্রত্যাখান করে প্রসিত বি খীসা বলেন, আসলে একটা সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে গেলে হাজারটা মিথ্যার সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই হয়েছে। প্রথমে তারা অপহরণের ঘটনাকে হৃদয়ঘটিত ব্যাপার’ বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলো।
কিন্তু এতে সুবিধা করতে না পেরে তারা পরে ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট ছাড়ে। এতে তাদের ষড়যন্ত্র জনগণের কাছে আরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শেষে হতবিহবল হয়ে তারা এক দীর্ঘ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা আগাগোড়া স্ব- বিরোধী উদ্ভট ও তাতে সত্যের লেশমাত্রও নেই।
পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান কোন পথে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্বত্য জনগণের প্রাণের দাবি সাংবিধানিক গ্যারান্টিসহ সেখানে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার ও শান্তি বাহিনীর রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
একই সঙ্গে এটাও বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে যে, গণধিককৃত জেলা পরিষদের মতো অন্য কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে সমাধানের চেষ্টা করা না হয়। আগের মতো যাতে দফায় দফায় বৈঠক করে কালক্ষেপণ না হয়। তিনি বলেন, মূল সমস্যা সমাধানের আগে, সহায়ক পরিবেশ ও শর্ত সৃষ্টি করে সরকার সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারে। যেমন-পার্বত্য চট্টগ্রামের বে-সামরিক প্রশাসনিক সামরিক প্রভাবমুক্ত, অপহৃত কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার এবং পাহাড়ী গণপরিষদ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীদের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা। এগুলো বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার অচিরেই করতে পারে।
সংবাদ : ১৯ আগস্ট ১৯৯৬
কল্পনার মা বলেন
মানবাধিকার কমিশন মিথ্যাচার করেছে, আমি মেয়েকে ফেরত চাই
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : পার্বত্য চট্টগ্রামে অপহৃত কল্পনা চাকমার মা বাধুনী চাকমা সম্প্রতি তাকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের দেয়া বক্তব্যকে জঘন্য মিথ্যাচার হিসেবে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন। তিনি তার মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাঁধুনী চাকমা এসব জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন আয়োজিত এ সাংবাদিক সম্মেলনে বাঁধুনী চাকমা (কল্পনা চাকমার মা) ছাড়াও বর্তিকা চাকমা, কবিতা চাকমা, ঝিনু চাকমা ও সমারী চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে কল্পনার মা বাঁধুনী চাকমা বলেন, গত ৪ঠা আগস্ট বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের একটি দল হেলিকপ্টারে করে প্রথমে সেনাবাহিনীর জোনে যায়। সেখান থেকে বিকেলে তারা কয়েকজন বিডিআর সদস্য ও স্থানীয় বাঙালিদের নিয়ে তাদের (কল্পনার) বাড়িতে যায়। মানবাধিকার কমিশনের দলটি তার (কল্পনার মায়ের) কাছে শুধুমাত্র অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি অপহরণের ঘটনা বর্ণনা করেন। বাঁধুনী চাকমা আরো জানান যে, তিনি মানবাধিকার কমিশনের দলের কাছে এমন কোন কথা বলেননি যে কল্পনা অপহরণের পরেও দুবার তার সঙ্গে দেখা করেছে। এটি ডাহা মিথ্যা, মানবাধিকার কমিশন উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাকে বিকৃতভাবে উদ্ধৃত করেছে।
বাঁধুনী চাকমা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তথ্য বিকৃত করে পরিবেশনের দায়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
তিনি তার মেয়েকে ফেরত পাওয়া জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই একজন মা হয়ে অন্য একজন মায়ের দুঃখ উপলব্ধি করতে পারবেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনসহ কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল কল্পনা চাকমার অপহরণ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও কাল্পনিক তথ্য ছড়াচ্ছে। দীর্ঘদিনেও সরকারি ভাবে কল্পনাকে উদ্ধারের ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী এ সমস্ত অপপ্রচারের সুযোগ পাচ্ছে।
ফেডারেশনের নেত্রীবৃন্দ আরো বলেন যে, এই স্বার্থন্বেষী মহলটিকে পাহাড়ী গণপরিষদের নামে উড়ো চিঠি দিয়ে বাঘাইছড়ির টিএনও’কে অপহরণের হুমকি দিচ্ছে। টিএনও নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন চালাতে চান বলেই তার বিরুদ্ধে এ হুমকি দিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চক্রান্ত চলছে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রীবৃন্দ জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার বাঘাইছড়িতে ভিডিপি’র গুলিতে নিহত রূপন চাকমাসহ মনোতোষ, সমর বিজয় ও সুকেশ চাকমার স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন করা হবে। এ উপলক্ষে সামাজিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
.
আজকের কাগজ : ১৯ আগস্ট ‘৯৬
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন
কল্পনা চাকমা অপহরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মহল বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে
কাগজ প্রতিবেদক : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, পাহাড়ি নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ সম্পর্কে বিভিন্ন স্বার্থন্বেষী মহল বিভ্রান্তিকর ও কাল্পনিক তথ্য ছড়াচ্ছে। অপহরণের এতোদিন পরেও সরকারিভাবে কল্পনাকে উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী এ সমস্ত অপপ্রচারণার সুযোগ পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুন রাতে কল্পনা চাকমা পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানার নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে অপহৃত হন। তিনি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলীয় নেত্রী সমারী চাকমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে দলীয় নেত্রী বর্তিকা চাকমা, কবিতা চাকমা, ঝিনু চাকমা, অপহৃত কল্পনার মা বাঁধুনী চাকমা, এডভোকেট খালেদা খাতুন, মানবাধিকার কর্মী শাহীন আখতার, শিশির মোড়ল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এতে বক্তারা বলেন, অপহরণ সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য তথাকথিত বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, সেনাবাহিনী ও বাঘাইছড়ির নাগরিক কমিটিসহ কতিপয় . স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও কাল্পনিক তথ্য ছড়াচ্ছে। মানবাধিকার কমিশন গত ৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে যে, তারা কল্পনার মা’র সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং তার মা দাবি করেছে যে, কল্পনা চলে যাওয়ার পর দু’বার তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু কমিশনের এ দাবি মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক।
সংবাদ সম্মেলনে অপহৃত কল্পনার মা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বক্তব্য সমর্থন করেন। তিনি সরকারের কাছে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবি ও এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার উদ্ধার, ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের শাস্তিদান, রুপন-মনোতোষ-সমর বিজয়- সুকেশ চাকমার হত্যাকাণ্ডের বিচার ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করেন।
.
ভোরের কাগজ : ১৯ আগস্ট ’৯৬
‘ওরা হেলিকপ্টার ও বিডিআর নিয়ে গিয়েছিলেন’
মানবাধিকার কমিশনের বক্তব্য কল্পনা চাকমার মা প্রত্যাখান করেছেন
কাগজ প্রতিবেদক : কল্পনা চাকমার অপহরণ সম্পর্কে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বক্তব্য প্রত্যাখান করে অপহৃত কল্পনার মা বাঁধুনী চাকমা বলেছেন, প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কয়েকটি স্বার্থান্বেষী মহল নানা রকম বিভ্রান্তিকর ও কাল্পনিক তথ্য ছড়াচ্ছে। তিনি তার অপহৃত মেয়ে কল্পনাকে ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশাকরি প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন মা হয়ে আমার দুঃখ উপলব্ধি করতে পারবেন।’ গতকাল রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বার বার কেঁদে উঠছিলেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ফেডারেশন নেত্রী কবিতা চাকমা, সমারী চাকমা, বর্তিকা চাকমা ও ঝিনু চাকমা বক্তব্য রাখেন। বাঁধুনী চাকমা বাংলা ভাষা না জানায় তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশ কমিশনের মানবাধিকার নেতারা বাঁধুনী চাকমাকে উদ্ধৃত করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, কল্পনা চলে যাওয়ার পর দুবার তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং সে বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থান করছে। ঢাকায় আয়োজিত ঐ সংবাদ সম্মেলনে কমিশন নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন যে, রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথে বাঘাইছড়ি হয়ে ৭-৮ কিলোমিটার হেঁটে তারা কল্পনাদের বাড়িতে পৌঁছে বাঁধুনী চাকমার সাক্ষাৎকার নেন।
কল্পনার মা গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, গত ৪ আগস্ট মানবাধিকার কমিশনের একটি দল নৌযানে নয়, হেলিকপ্টারে বাঘাইছড়ি সেনা জোনে যায় এবং ২০ জনের মতো বি ডি আর সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে। চাকমা ভাষা জানা স্থানীয় এক বাঙালির মাধ্যমে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদেরকে অপহরণের দিন (১১ জুন রাতে) যা ঘটেছিল কেবল সে সম্পর্কেই জানান। অথচ তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বক্তব্য বিকৃত করে পরিবেশন করেছে।
মানবাধিকার কমিশনের বক্তব্য প্রত্যাখান করে হিল উইমেন্স নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা যদি নিশ্চিতভাবেই কল্পনা চাকমার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন তাহলে সরকার কেন সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করছে না? অথবা, কেন তারা হেলিকপ্টারে বাঘাইছড়ি যাওয়ার কথা বলেছেন? নেতৃবৃন্দ বলেন, সেনাবাহিনী, বাঘাইছড়ির তথাকথিত নাগরিক কমিটি ও কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের সহায়তায় মানবাধিকার কমিশন উদ্দেশ্যমূলক এসব বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
.
সংবাদ : ১৯ আগস্ট ১৯৯৬
কল্পনার মা বলেন
মানবাধিকার কমিশন মিথ্যাচার করেছে, আমি মেয়েকে ফেরত চাই
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : পার্বত্য চট্টগ্রামে অপহৃত কল্পনা চাকমার মা বাধুনী চাকমা সম্প্রতি তাকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের দেয়া বক্তব্যকে জঘন্য মিথ্যাচার হিসেবে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন। তিনি তার মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধামন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাঁধুনী চাকমা এসব জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন আয়োজিত এ সাংবাদিক সম্মেলনে বাঁধুনী চাকমার মা ছাড়াও বর্তিকা চাকমা, কবিতা চাকমা, ঝিনু চাকমা ও সমারী চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে কল্পনার মা বাঁধুনী চাকমা বলেন, গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের একটি দল হেলিকপ্টারে করে প্রথমে সেনাবাহিনীর জোনে যায় সেখান থেকে বিকেলে তারা কয়েকজন বিডিআর সদস্য ও স্থানীয় বাঙালিদের নিয়ে তাদের (কল্পনার) বাড়িতে যায়। মানবাধিকার কমিশনের দলটি তার (কল্পনার মায়ের কাছে শুধুমাত্র অপহরণের ঘটনা বর্ণনা করেন। বাঁধুনী চাকমা আরো জানান যে, তিনি মানবাধিকার কমিশনের দলের কাছে এখন কোন কথা বলেননি যে কল্পনা অপহরণের পরেও দু’বার তার সঙ্গে দেখা করেছে। এটি ডাহা মিথ্যা, মানবাধিকার কমিশন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে বিকৃতভাবে উদ্ধৃত করেছে।
বাঁধুনি চাকমা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তথ্য বিকৃত করে পরিবেশনের দায়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
তিনি তাঁর মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন মা হয়ে অন্য একজন মায়ের দুঃখ উপলব্ধি করতে পারবেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনসহ কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল কল্পনা চাকমার অপহরণ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও কাল্পনিক তথ্য ছড়াচ্ছে। দীর্ঘদিনেও সরকারিভাবে কল্পনাকে উদ্ধারের ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এ সমস্ত অপপ্রচারের সুযোগ পাচ্ছে।
ফেডারেশনের নেত্রীবৃন্দ আরো বলেন যে, এই স্বার্থান্বেষী মহলটি পাহাড়ী গণপরিষদের নামে উড়ো চিঠি দিয়ে বাঘাইছড়ির টিএনও কে অপহরণের হুমকি দিচ্ছে। টিএনও নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন চালাতে চান বলেই তার বিরুদ্ধে এ হুমকি দিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চক্রান্ত চলছে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রীবৃন্দ জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার বাঘাইছড়িতে ভিডিপি’র গুলিতে নিহত রূপন চাকমাসহ মনোতোষ, সমর বিজয় ও সুকেশ চাকমার স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন করা হবে। এ উপলক্ষে সামাজিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
.
সংবাদ : ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬
কল্পনা চাকমাকে নিয়ে ত্রিপুরাতেও নানা বিভ্ৰান্তি
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইছড়ি থেকে অপহৃত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা কি ত্রিপুরায়? এ প্রশ্নটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে ত্রিপুরার উপজাতি শরণার্থী শিবিরে এবং রাজ্য সরকারের নানা পর্যায়েও। বাংলাদেশে কল্পনা চাকমা নিয়ে তোলপাড়ে আলোড়িত ত্রিপুরার উপজাতিরাও। শরণার্থী শিবিরগুলোতে চাকমা নেতারাও এ প্রশ্নের জবাবে দ্বিধাবিভক্ত। প্রচলিত কার্য-কারণ বিশ্লেষণ করে কেউ বলেন, হ্যাঁ, কল্পনা চাকমাকে জনসংহতি সমিতিই অপহরণ করে এনেছে, ১২ জুনের নির্বাচনে তাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আ’লীগ প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য। কিন্তু এরা কেউ বলতে পারেন না কল্পনা কোথায়। কল্পনাকে কেউ দেখেছেন এমন কাউকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অপর পক্ষের মতে কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছেন বাংলাদেশেই। তাদের আশংকা কল্পনা বেঁচে নেই। তবে এদের কেউই তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চান না।
কল্পনা চাকমা ত্রিপুরায় আছেন- এমন মত প্রকাশ করেন সেই সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী কল্পনা এখন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার আন্দারছড়া গ্রামে তার মাসির বাড়িতে আছেন। প্রথমে তাকে রাখা হয়েছিল দক্ষিণ ত্রিপুরার রাইমা ভেলি সাবডিভিশনের শুক্রাই গ্রামে দু’টি গ্রামই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন। আন্দারছড়া গ্রামটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। কল্পনার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য আন্দারছড়া গ্রামে যাবার পথে গ্রাম থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় দু’জন অস্ত্রধারী গার্ড পথ রোধ করে। তারা জানান ঐ গ্রামটি ‘প্রটেক্টটেড এরিয়া’। গ্রামে যেতে দেয়নি। এ দু’জনের পরনেই ছিল সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম। তবে মাথায় ক্যাপের বদলে ছিল কালো কাপড় বাঁধা। ত্রিপুরার অন্যান্য অঞ্চলে যেতে বাধা না দিলেও আন্দারছড়া গ্রামে ঢুকতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এখানে ঢুকতে গিয়েই প্রথম ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বিধিনিষেধের মধ্যে পড়তে হয়।
কল্পনা চাকমা অপহরণ প্রশ্নে শরণার্থী শিবিরগুলোতে যে ধারণা প্রচলিত তার অনুসরণে সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই দফায় শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের পর ভারত সরকার তৃতীয় দফায় প্রত্যাবর্তনের জন্য তালিকা চেয়ে চিঠি দেয় শিবিরগুলোতে। এ নিয়ে করবুক ক্যাম্পে সভা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্প চেয়ারম্যান প্রভাকরণ চাকমা, সন্তু লারমা ওরফে জ্যোতীন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাসহ অন্যরা। সভায় সিদ্ধান্ত হয় আর কোন শরণার্থীকে ১২ জুনের নির্বাচনের আগে দেশে ফিরে যেতে দেয়া হবে না। শরণার্থী প্রত্যাবাসন আপাতত বন্ধ রাখার জন্য সহযোগিতা চেয়ে জনসংহতি সমিতি ভারতের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির (এপিডিআর) কাছে চিঠি দেয়। চিঠিতে তালিকার জন্য ভারত সরকারের চাপ বন্ধ করতে সহযোগিতা চাওয়া হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যে গত ১২ জুনের নির্বাচনে শান্তিবাহিনী সমর্থিত প্রার্থী (খাগড়াছড়িতে হংসধ্বজ চাকমা ও রাঙ্গামাটিতে বিজয় কেতন চাকমা-প্রতীক প্রজাপতি) থাকা সত্ত্বেও কল্পনা চাকমা আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করেন। এতে শান্তিবাহিনী ক্ষুব্ধ হয়। ১৯ মার্চ কল্পনার গ্রামের বাড়ি বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামে সেনাবাহিনী লেঃ ফেরদৌসের নেতৃত্বে রেইড করে। এই ঘটনা সুযোগ এনে দেয় শান্তিবাহিনীর জন্য। ২ দিনপর ১১ ই জুন গভীর রাতে কল্পনাকে শান্তিবাহিনী নিয়ে আসে দক্ষিণ ত্রিপুরার রাইমাভেলি সাবডিভিশনের সীমান্তবর্তী গ্রাম শুক্রাইতে। কল্পনার অবস্থান জানাজানি হয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে মান্দারছড়াতে সরিয়ে আনা হয়। ২৯ শে আগস্ট পর্যন্ত কল্পনা মান্দাছড়াতে ছিল এমন কথাও বলেন অনেকে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ত্রিপুরা রাজ্যে শান্তিবাহিনীর ৪টি ক্যাম্প রয়েছে। বেইস ক্যাম্পটি হচ্ছে রামগড়-সাবলুব সীমান্তের জলেয়া ভগবান টিলায়। অন্য ক্যাম্পগুলো রয়েছে আগরতলার উজান অভয়নগর, উত্তর ত্রিপুরার পেচার থলের মান্দাছড়া ও দক্ষিণ ত্রিপুরার রাইমাভেলিতে। এছাড়া একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে আগরতলা শহরে শালবনে।
ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, রাজ্য নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা কল্পনা চাকমার বিষয়টি জানেন। তারা নিজস্ব উদ্যোগে কল্পনার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন; কিন্তু যেহেতু বিষয়টি কেন্দ্র সরকারের এখতিয়ারভুক্ত, তাই এ ব্যাপারে তাদের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সব মিলিয়ে যা বলা যায় : কল্পনা চাকমা প্রশ্নে বাংলাদেশের মতই ত্রিপুরা শরণার্থী শিবিরের উপজাতিরাও রয়েছে নানা বিভ্রান্তিতে। অনেকে অনেক কথা বললেও তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তবে অনেকের ধারণা দু’দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের সরাসরি আলোচনা অথবা শান্তিবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা হলে অনেক রহস্যেরই কিনারা হতে পারে।
.
ভোরের কাগজ : ১ জানুয়ারি ১৯৯৭
ভোরের কাগজ-এর চোখে ‘৯৬ এর আলোচিত দশ
সাহাবুদ্দীন আহমদ : কাঙ্ক্ষিত নিয়োগ, শেখ হাসিনা : অবশেষে প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়া : প্রধানমন্ত্রী থেকে বিরোধী নেত্রী, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান : বিজ্ঞজনোচিত সাফল্য, আবদুর রহমান বিশ্বাস : বিতর্কিতই রয়ে গেলেন, জেনারেল মোঃ নাসিম : পরিস্থিতির শিকার, আকরাম খান : এসিসি ট্রফি থেকে বাড়তি প্রত্যাশার চাপ, আবুল খায়ের : ঠেকিয়ে বালক বীর, সালমান শাহ : অভিমানী তারুণ্য, আবেগী প্রতিক্রিয়া, কল্পনা চাকমা : কেন হারিয়ে যাবেন?
.
আজকের কাগজ : ১৮ মার্চ ১৯৯৭
কল্পনা চাকমা অপহরণ রহস্যের জট এখনো খোলেনি
বিপ্লব : পাহাড়ী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ রহস্যের জট এখনো খোলেনি। কল্পনার অপহরণ রহস্য উদঘাটনে বিচারপতি আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের উচ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিও এ বিষয়ে কোনো অচলায়তন ভাঙতে পারেনি। তার অপহরণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ছাড়াই তদন্ত কমিটি সম্প্রতি সরকারের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছে। কিন্তু ওই প্রতিবেদনে তার অপহরণ ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী সুনির্দিষ্টভাবে তা উল্লেখ করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় কমিটির দায়িত্বশীল সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।
গত ১১ জুন জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন রাতে কল্পনা চাকমা পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে কয়েকজন দুস্কৃতকারী দ্বারা অপহৃত হন। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রভাবশালী তিন সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ী গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এ ঘটনার জন্য সরাসরি সেনাবাহিনীকে দায়ী করে। সংগঠন তিনটি তার উদ্ধারের দাবিতে ২৭ জুন রাঙামাটি হরতাল আহ্বান করলে হরতালকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও সাম্প্রদায়িক হামলায় একজন পাহাড়ী ছাত্র কর্মী ঘটনাস্থলেই নিহত এবং আরো তিনজন ছাত্র কর্মী নিখোঁজ হয়।
এরপর পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি, তিন পাহাড়ী সংগঠনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তার উদ্ধারের দাবিতে একাধিকবার ঢাকায় ও পার্বত্য জেলাগুলোতে মিছিল সমাবেশ করে। জনমতের চাপে কল্পনা অপহরণের প্রায় এক মাস পর সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। এদিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ২৪ ডিভিশন (পদাতিক) এক বিবৃতিতে, কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার জন্য পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রামরত শান্তিবাহিনীকে দায়ী করে। হেলিকপ্টার থেকে লেফলেট বিলি করার মাধ্যমে অপহৃত কল্পনার সংবাদদাতাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণাও ২৪ ডিভিশন পদাতিক দেয়। এদাকে বিতর্কিত একটি মানবাধিকার সংস্থাসহ কয়েকটি দৈনিক দাবি করে যে, কল্পনা চাকমা স্ব-ইচ্ছায় ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থান করছেন। সে তার নিজেদের লোক দ্বারাই অপহৃত হয়েছে ইত্যাদি।
চট্টগ্রাম সেনাবানিবাসের ওই ভূমিকার পর হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও কল্পনার মা (অপহরণ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্দিষ্টভাবে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করার জন্য লাল্যাঘোনা সেনা ক্যাম্পের জনৈক লেফটেনেন্ট ফেরদৌসকে দায়ী করে। কল্পনার মা তার মেয়ের শান্তিবাহিনী দ্বারা অপহরণ বা স্বেচ্ছায় ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থান করার কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে। হিল উইমেন্স ফেডারেশন তদন্ত কমিটির কাজের ধরন নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেছিলো।
উল্লেখ্য, সরকারি তদন্ত কমিটি কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর রাঙ্গামাটি সফরে অবস্থান করেই প্রায় ৪ মাস শতাধিক পাহাড়ি-অপাহাড়ির সাক্ষ্য গ্রহণ করে। এক সপ্তাহ আগে তারা তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে শান্তিবাহিনী, তথা জনসংহতি সমিতি এ পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
.
সংবাদ : ১৩ জুন ১৯৯৭
তিন সংগঠনের সমাবেশ
কল্পনা চাকমার সন্ধান দিতে না পারায় সরকারের সমালোচনা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের এক বছর পরও তার কোন সন্ধান দিতে না পারায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে পাহাড়ী গণপরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ী ছাত্রপরিষদের নেত্রীবৃন্দ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বর্তিকা চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রসিত বিকাশ খীসা, সঞ্চয় চাকমা।
প্রসিত বিকাশ খীসা বলেন, অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
.
স্বাধিকার : বুলেটিন নং—সাত, ২০ আগস্ট ’৯৭
কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রথম বার্ষিকী পালিত
স্বাধিকার প্রতিনিধি ॥ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রথম বার্ষিকী ১২ই জুন বাঘাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পালন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কবিতা চাকমা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন বাঘাইছড়ি শাখার সভানেত্রী জীতা চাকমা, জ্যোৎস্না চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বাঘাইছড়ি শাখার সভাপতি পূর্ব রঞ্জন চাকমা, পাহাড়ী গণ পরিষদ বাঘাইছড়ি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বিক্রম চাকমা, পাহাড়ী গণ পরিষদের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক এডভোকেট দেবাশীষ চাকমা।
জীতা চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, এটা আজ সবাই জানে কারা আমাদের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করেছে। আজ কল্পনা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু কল্পনার স্বপ্ন, আদর্শ ও অদম্য সাহস আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আমরা কল্পনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবোই।
জ্যোৎস্না চাকমা তার বক্তব্যে কল্পনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, কল্পনা অত্যন্ত ধীর স্থিরভাবে কাজ কর্ম করতেন এবং সব সময় নারী মুক্তির কথা বলতেন। অপহরণের কিছু দিন পূর্বে কল্পনা কুখ্যাত লেঃ ফেরদৌসদের সাথে তার যে বাকবিতন্ডা হয় তা আমাকে বলেছিলেন।
এডভোকেট দেবাশীষ চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, এদেশে দুষ্কৃতিকারী গণহত্যার আসামী ও জুম্ম জনগণের ওপর নিপীড়নকারীদের শাস্তি হয় না। বরং তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। কাপুরুষের মত রাতের আধারে কল্পনাকে অপহরণের পুরস্কার হিসেবে কুখ্যাত লেঃ ফেরদৌসকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অপহরণের এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে সরকার গড়িমসি করছে। সরকারের এই প্রচেষ্টা কখনো শুভ হবে না। তিনি কল্পনার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করার আহ্বান জানান।
সভানেত্রী কবিতা চাকমা বলেন, দেশে ইয়াসমিন, সীমা হত্যার বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, কল্পনা অপহরণের এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও সরকার কল্পনাকে উদ্ধারের কোন প্রচেষ্টা চালায়নি। তদন্ত রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করেনি। কল্পনার পরিবার আজ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন যাপন করছে। তিনি অবিলম্বে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার ও তার পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।
কল্পনা অপহরণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এলাকার স্কুল-কলেজের ছাত্র- ছাত্রীসহ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা যোগদান করে। কল্পনা চাকমার মা মিসেস বাঁধুনী চাকমাও উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ চলাকালে তিনি মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। এতে সমাবেশের সমগ্র পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী সমারী চাকমা।
এদিকে ঢাকায়ও কল্পনা অপহরণের প্রথম বার্ষিকী পালন করা হয়।
.
স্বাধিকার : বুলেটিন নং—সাত, ২০ আগস্ট ‘৯৭
কল্পনা অপহরণের দিবস পালনে সেনাবাহিনী বাধা প্রদান
স্বাধিকার রিপোর্ট ॥ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রথম বর্ষপূর্তি পালনে সেনাবাহিনী নানা হুমকি ও বাঁধা প্রদান করেছে।
কল্পনা চাকমার নিজ এলাকা বাঘাইছড়িতে অপহরণের বর্ষপূর্তি উদযাপনের উদ্যোগ নিলে সেনাবাহিনী নানা ধরনের হুমকি দেয়, প্রশাসনের মাধ্যমে বাঁধা প্রদান করে ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। ১০ই জুন বাঘাইছড়ি জোনের কমান্ডার নিজেই এলাকার চেয়ারম্যান, হেডম্যান ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের ডেকে হুংকার ছেড়ে বলেন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না, বললে পরিণতি ঐ কল্পনার মতো হবে। কমান্ডারের এই কাণ্ডজ্ঞানহীন হুংকারে কোন কাজ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন তার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী কল্পনা অপহরণের বার্ষিকী পালন করেছে।
.
স্বাধিকার : বুলেটিন নং—সাত, ২০ আগস্ট ‘৯৭
মনতোষ-সুকেশ-সমর-রূপন চাকমার শহীদানের বর্ষপূর্তিতে শোক সভা
গত ২৭ শে জুন ছিল অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গীকৃত প্রাণ বীর শহীদ রূপন চাকমার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী এবং মনতোষ-সুকেশ-সমর চাকমার নিখোজ হওয়ার দিন।
গত বছর এদিন হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জনৈক ভি.ডি.পি সদস্যের গুলিতে রূপন চাকমা নিহত হন এবং ঐ প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে মাঝপথে মুসলিম ব্লক নামক স্থান থেকে নিখোঁজ হন মনতোষ, সুকেশ ও সমর। সেই পর থেকে তাদের আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
বাঘাইছড়ির গৌরব রূপন চাকমা সাহস, বীরত্ব ও সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যে তাজা লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাঘাইছড়ির জনপদ, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সে রক্তের ঋণ শোধ হবে না। রূপন চাকমার রক্তের সাথে বেঈমানী করার অধিকার কারোর নেই। যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে রূপনের মতো আরো অসংখ্য বীর যোদ্ধা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বর্ণময় জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই হবে।
এই সংকল্প বুকে ধারণ করেই ২৭ শে জুন বাঘাইছড়ির রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ রূপন ও মনতোষ-সুকেশ-সমরের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল সকাল ৮টায় কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালী ও সমাধি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালনের পর ধর্মীয় মতে সংঘদান করা হয়। সবশেষে শোক সভার আয়োজন করা হয়। পূর্ব রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি সাধারণ সম্পাদক নিকোলাস চাকমা। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিনোলাম মাস্টার, জীতা চাকমা, ভূবন কান্তি চাকমা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ধরণীময় চাকমা।
.
স্বাধিকার : বুলেটিন নং—সাত, ২০ আগস্ট ‘৯৭
কল্পনা কোথায়, শেখ হাসিনা জবাব চাই
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর একটি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। দেশবাসী সরকারের অনেক প্রতিশ্রুতি অনেক, আশ্বাস বাণী শুনে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে সে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস কথার কথা থেকে গেছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা অপহৃত হওয়ার একটি বছরের অধিক হয়ে গেলো। আজ পর্যন্তও সরকার তার হদিস দিতে পারলো না। দেশে বাস্তবিকই আইন শৃংখলা বলে কোন কিছু আছে কিনা সে প্রশ্ন পার্বত্যবাসীর মনে। চিহ্নিত অপহরণকারী প্রমোশন পুরস্কার পেয়ে দম্ভ ভরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর অপহৃত কল্পনা চাকমার আত্মীয় স্বজন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কালাতিপাত করছেন। হায় বিচার তুমি কোথায়! কল্পনার আত্মীয় স্বজন কিভাবে বলবে ‘জনম আমার সার্থক হলো এদেশে জন্মে’।
তদন্ত কমিটি ও রিপোর্টের কি হলো? সরকারের নীরবতাই কি অপরাধ প্রবণতায় উস্কে দেয়া নয়? কল্পনা অপহরণের দায় সরকার এড়াতে পারে না। কল্পনা চাকমার সন্ধান দিতে না পারা, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে না পারা সরকারের বড় ধরনের ব্যর্থতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ছেলে ভোলানো মিষ্টি কথায় ভুলতে প্রস্তুত নয়। সরকার অবিলম্বে কল্পনা চাকমার সন্ধান দিন। চিহ্নিত অপরাধী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের শাস্তি দিন। তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করুন। নইলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজের একমাত্র সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন কল্পনাকে উদ্ধারের জন্য জনতাকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচী নিতে বাধ্য হবে।
.
ভোরের কাগজ : ১২ জুন ১৯৯৯
কল্পনা চাকমার তৃতীয় অন্তর্ধান দিবস আজ
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার তৃতীয় অন্তর্ধান দিবস আজ শনিবার। ১৯৯৬ সালের এই দিনে কল্পনা চাকমা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রাম থেকে অজ্ঞাত দৃস্কৃতকারীদের দ্বারা অপহৃত হন। কল্পনা চাকমা পরিবার ও তার সংগঠন সে সময় এ অপহরণের জন্য সেনাবাহিনীর জনৈক লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসকে দায়ী করে। সেনাবাহিনী অবশ্য তার এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তৎকালীন গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীকে দায়ী করেছিল।
কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ১৯৯৬ সালের ২৭ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামে হরতাল আহ্বান করে। হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে বাঘাইছড়িতে ৪ জন ছাত্র পরিষদ কর্মী রূপন, সুকেশ, সমর ও মনোতোষ চাকমা নিহত হন। এদিকে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে সে সময় একাধিক দেশী-বিদেশী পত্রপত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। জনমতের চাপে সরকার কল্পনাকে উদ্ধারের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু সে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বিরোধী হিল উইমেন্স ফেডারেশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কল্পনা চাকমার অন্তর্ধান দিবস উপলক্ষে সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকায় আজ বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর সেমিনার কক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নারী সমাজ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
.
দৈনিক মাতৃভূমি : ১৩ জুন ১৯৯৯
দোষীদের বিচার দাবি করে কল্পনা চাকমার অপরহণ বার্ষিকী পালিত
কল্পনা চাকমা অপহরণের পর গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ ও নারী নির্যাতন আইনে দোষী সেনা কর্মকর্তার বিচার দাবি জানানোর মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে পাহাড়ি নেত্রী ‘কল্পনা চাকমা অপহরণের তৃতীয় বার্ষিকী’। গতকাল শনিবার হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নারী সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি কবিতা চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসিন, অধ্যাপক মেঘনাগুহ ঠাকুরতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বিপ্লবী ঐক্য ফ্রন্টের আহবায়ক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউডিপিএফ) কেন্দ্রীয় নেতা রবিশঙ্কর চাকমা, মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট খালেদা খাতুন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি পুলক চাকমা। সভা পরিচালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সমারী চাকমা।
সভায় বক্তাগণ বলেন, জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কল্পনা চাকমা ছিলেন অগ্রসর নেত্রী। তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পাহাড়ি-বাঙালিসহ সবার জন্যই অনুপ্রেরণা। বক্তাগণ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেন না তাদের রাজনৈতিক চরিত্রানুযায়ী। কিন্তু এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দলগুলোর সংঘ্যালঘু জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের লড়াইকে জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। সভায় বক্তাগণ সরকারের প্রতি সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। বক্তারা কল্পনা চাকমাকে শুধু পাহাড়ি নেত্রী নয়, বাংলাদেশের নিপীড়িত নারী সমাজের নেত্রী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র পাল্টানোর আন্দোলনের মাধ্যমেই সম্ভব পার্বত্য জনগণের অধিকারে প্রতিষ্ঠা করা।
.
প্রথম আলো : ১৩ জুন ১৯৯৯
কল্পনা চাকমা অপহরণ তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ ও দোষীদের শাস্তি দাবি অপহরণের ৩ বছর পূর্তিতে আলোচনা সভা
নিজস্ব প্রতিবেদক :কল্পনা চাকমা অপহরণের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনা তদন্তের লক্ষ্যে ঘটিত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের দাবি করেছেন। বক্তারা বলেন, কেবল তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করলেই চলবে না, কল্পনা অপহরণের সঙ্গে যুক্ত লেফটেনেন্ট ফেরদৌসসহ অন্যান্যদের যথোপযুক্ত শান্তি দিতে হবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জনসংহতি সমিতির ভূমিকার সমালোচনা করে বলা হয়, সমিতি এ ব্যাপারে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ্য, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙ্গামাটি জেলার লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ী থেকে অপহৃত হয়।
কল্পনা চাকমা অপহরণের তিন বছর পূর্তিতে গতকাল শনিবার বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরীর সেমিনার কক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নারী সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী কবিতা চাকমা। সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আনু মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান মেঘনা গুহঠাকুরতা, শিক্ষক আমেনা মহসীন, এডভোকেট খালেদা খাতুন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সদস্য রবিশঙ্কর চাকমা, বিপ্লবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক মোশরেফা মিশু ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি পুলক চাকমা আলোচনা করেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার, আইনের শাসন ইত্যাদি শব্দগুলো যে কতো প্রতারণামূলক এর প্রমাণ কল্পনা অপহরণের পর গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ না করার মধ্য দিয়ে পাওয়া যায়।
মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, রাষ্ট্রের দমননীতি এবং নারীকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রতীকে রূপান্তরিত কল্পনা চাকমা যে একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ তা আমাদের ভীষণভাবে মনে পড়েছে ওর ডায়েরি পড়ার সুযোগে।
আমেনা মহসীন পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি।
.
যুগান্তর (সোমবার ১২ জুন ২০০০)
কল্পনা চাকমার চতুর্থ অন্তর্ধান দিবস
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : আজ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার চতুর্থ অন্তর্ধান দিবস। পুন:তদন্ত কমিশন গঠন করে কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তিন পার্বত্য জেলায় পৃথক পৃথক সমাবেশ করবে।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাইল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে রাতের অন্ধাকারে কল্পনা চাকমা একদল দুষ্কৃতকারীর হাতে অপহৃত হন।
তিন পার্বত্য জেলায় পৃথক পৃথকভাবে কল্পনা চাকমার চতুর্থ অন্তর্ধান দিবস পালন করলেও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় ভাবে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে দিবসটি পালন করবে। অপরদিকে চুক্তির পক্ষে পাহাড়ী ছাত্রপরিষদ জেলার বাঘাইছড়ি থানায় নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামে কেন্দ্রীয় ভাবে কল্পনা চাকমার চতুর্থ অন্তর্ধান দিবস পালন করবে।
.
যুগান্তর : ১৭ জুন ২০০০
হিল উইমেন্স ফেডারেশন
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে কল্পনা অপহরণ দিবস উপলক্ষে সোমবার মিছিল ও সমাবেশ টিএসসি সড়ক দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়। কবিতা চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চম্পানন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিরা দেওয়ান ও বেনজিন চাকমা। সভায় বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা অপহরণের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত লেঃ ফেরদৌসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
.
The Daily Star: 1 July 1996
DU students urge govt to rescue Kalpana Chakma
Some 170 students of Dhaka University yesterday urged the gov- ernment to take effective steps to rescue Kalpana Chakma, reports UNB. In a joint statement, they alleged that Kalpana, Organising Secretary of Hill Women’s Federation, picked up by some plain cloth security men from her residence in Rangamati district at about 1 am on June 12.
The signatories to the statement include Bithika Banik, Raihana Sultana, Nadira Sultana, Jaynati Bardhan, Shamiara Akter, Rikat Dutta, Arifa Hasin, Shauli Shahid and Sajia Afrin.
.
The Daily Star : 2 July 1996
Mahila Parishad urges govt to rescue Kalpana
Bangladesh Mahila Parishad yesterday urged the Prime Minister, home minister and state minister for women and social welfare affairs to take effective steps to recover kidnapped Kalpana Chakma, the orga- nizing secretary of Hill Women’s Federation, and ensure her safety, reports BSS.
In a statement, Sufia Kamal and Ayesha Khanam, president and general secretary respectively of the parishad said Kalpana Chakma was kidnapped by a gang of miscreants at gun-point from a village in Bagaichari thana under Rangamati district on June 11 last.
The leaders said it was the responsibility of the members of law enforcing agencies to recover Kalpana Chakma.
Govt. urged to rescue Kalpana
The ‘National Committee for Protecting the Fundamental Rights in the Chittagong Hill Tracts has urged the government to rescue Kalpana Chakma who has been reportedly missing since June 12 from her resi- dence at Lailey Ghona of Baghachhari Thana under Rangamati dis- trict.
The National Committee has also demanded discussion of the Hill Tracts issue in the Jatiya Sangsad.
The committee yesterday submitted to the Speaker a memoran- dum in which it expressed grave concern and disappoinment at the government’s reported silence about Kalpana, a leader of the Hill Women’s Federation.
Signed by the Convenor of the Committee, Barrister Lutfar Rahman Shajahan, the memorandum also demanded ‘constitutional recognition’ of the tribal people and withdrawal of the army from the hill tracts.
Earlier the committee held a rally in front of the National Press Club. Khusi Kabir, Farida Akhter, Bartika Chakma and Anu Muhammad spoke at the rally.
.
The Daily Star : 5 July ’96
Abduction of Kalpana
Home Ministry probe demanded
By Staff Correspondent : Naripakkha has demanded a Home Minis- try investigation into the incident of abduction of Kalpana Chakma from Chittagong Hill Tracts recently.
In a statement yesterday, it said although the news of abduction, allegedly by security forces in plain clothes was published in different national dailies, there has been no clarification from the government about the incident, said a press release.
Naripakkha also demanded formation of a commission for a per- manent political solution to the prevailing situation on the Hill Tracts.
.
The Daily Star: 10 July 1996
Int’l appeal for Kalpana’s release
In a statement of Prime Minsiter Sheikh Hasina dated July 3, thirty- eight representatives from international NGOs and social movements expressed their concern about the abduction of Kalpana Chakma. They asked for an immediate investigation into the matter, sought the immediate release of Chakma, and asked the government to ensure that her captors are brought to justice, a press release of Ain O Salish Kendra said yesterday.
The representatives are attending a conference, sponsored by El Taller, in Tunisia and are from the following countries; Algeria, Bangladesh, Benin, Canada, Columbia, Cote D’Ivoire, Cuba, Ethio- pia, Guinea, Holland, India, Madagscar, Mauritania, Morocco, Pales- tine, Peru, Phillippines, Senegal, Spain, Tanzania, Tunisia, the United Kingdom and Zaire. Kalpana Chakma was allegedly abducted by mem- bers of security forces June 12. The government has yet to comment officially on the matter.
.
15 July 1996
The Independent
12 human rights bodies call to rescue Kalpana Chakma
Twelve human rights organisations yesterday jointly submitted a memo- randum to the Home Ministry demanding immediate measures to res- cue Kalpana Chakma Leader of the Hill Women’s Federation reports UNB.
A delegation of the 12 human right organisations called on Home Minister Rafiqul Islam at his office and submitted the memorandum.
The Home Minister advised the delegation to bring the incident to the notice of the Prime Minister as the issue of Chittagong Hill Tracts fell within the jurisdiction of Defence Ministry which is under control of the Prime Minister.
The Minister, however, assured the delegation of his full coopera- tion in this regard, said a press release.
The human rights organisation are Adhiker, Ain-O-Salish, Ubinig, Bangladesh Mahila Parishad, Law Review, Narigrantha Prabartana, Bangladesh Legal Aid and Services Trust, Nagarik Uddayog, Sammilita Nari Samaj, Hill Women’s Federation, Pahari Chhatra Parishad and Pahari Gona Parishad.
.
The Daily Star: 15 July 1996
HR bodies urge Home Ministry to rescue Kalpana
Representatives of twelve human rights organizations have met Home Minister Rafiqul Islam and appealed to him to take necessary steps to rescue Kalpna Chakma immediately, says a joint press release of the twelve organizations.
The organizations have demanded that Kalpana be rescued and a judicial body be formed immediately to investigate into the abduction.
They also appealed to the Home Ministry to take measures to pun- ish the abductors of Kalpana Chakma. The home minister was also urged to compensate the victim for any physical abuse on her person.
The press release, signed among others, by Adhikar, Ain-o-Salish Kendra. Ubining. Bangladesh Mahila Parishad, Law Review, Narigrantha Prabartana, Sammalita Nari Samaj, Hill Women’s Federa- tion, Pahari Chhatra Parishad and Pahari Gano Parishad, requested the home minister to take the matter to the Prime Minister to resolve it as soon as possible.
The problem can be solved by mutual talks, the organizations demanded. The home minister, in response, assured all-out cooperation on his part.
.
Daily Star: 24 July 1996
Kalpana issue
24 Infantry Div terms it a conspiracy against Army
Chittagong, July 23: The 24 Infantry Division of Bangladesh Army has categorically denied any involvement of the security forces in the alleged kidnapping of Kalpana Chakma, reports UNB. Said a press release of the 24 Infantry Division on Monday.
It said the attempt to blame the security forces for the alleged kid- napping of Kalpana Chakma, the organising secretary of Hill Women’s Federation, was “pre-planned” and a “conspiracy” to tarnish the image of the Army.
The 9-page press release detailed what it said the evil activities of the so-called Shantibahini, Pahari Chhatra Parishad, Pahari Gano Parishad and Hill Women’s Federation.
It said after failing to put up any credible allegation against the security forces and the non tribal people, these organisations have cho- sen to “create false issues like kidnapping” of Kalpana Chakma to earn sympathy at home and abroad.
There is many a discrepancy in the press statements issued by these hill organisations and the FIR filed by Kalpana’s brother Kalindi Kumar Chakma in Baghaichhari thana. Also, other evidences clearly show that the allegation against the army was not at all acceptable, it said.
Quoting local sources, the press release added that clothes, books and other personal belongings of Kalpana Chakma were not found in her house immediately after the incident of alleged kidnapping.
“So the question arises, whether Kalpana was really kidnapped as claimed or she went into hiding on her own accord supporting the un- holy efforts of the Shantibahini to embarrass the new government, cre- ating an issue by involving the security forces.”
Referring to the June 12 election, the press release said, the hill organisations had supported the Shantibahini backed PGP leader Bijoy Ketan Chakma in the election against Awami League candidate Dipankar Talukder.
It said these Shantibahini-supported hill organisations, worried by the apparent popularity of Dipankar Talukder among the tribal and non-tribal people, started intimidating and harassing the tribal leaders and the ordinary tribal people.
They had so far kidnapped some 35 Awami League supporters in the hill region before and after the election, it said adding that after the defeat of their own candidate in the polls, the hill organisations had created the kidnap issue of (Kalpana Chakma) in a bid to bring public opinion in their favour.
The security forces, equally concerned with all sections of people, are also eager to know the whereabouts and welfare of Kalpana Chakma, more so “because of the attempt to tarnish the image of the army.”
The press release said the army has not imposed any restriction on inquiry into the incident of alleged kidnap, rather it is extending all necessary cooperation to unearth the truth.
From the very beginning, the security forces was cooperating with the authorities concerned to interrogate any army personnel and even to conduct search at the Ugalchhari army camp.
The press release also mentioned that the 24 Division had an- nounced a Tk. 50.000 reward for anyone providing information on the where abouts of Kalpana Chakma.
The 24 Infantry Division made an earnest appeal to all concerned to refrain from doing anything or issuing any statement without know- ing details of the incident that might impair the image of the security forces engaged in the hill region to protect integrity and sovereignty of the country.
“Because the terrorists are active to fulfil their conspiratorial de- signs by undermining the security forces, cheer the government,” the press release added.
.
The Daily Star : 24 July 1996
Where’s Kalpana?
The abduction of Kalpana Chakma about one and a half months ago from her house in a sleepy village of Baghaichhari has posed a serious question before the country’s civil and the local military administra- tion. Kalpana has been a vocal and politically conscious leader of the Hill Women’s Federation. According to a top leader of the Pahari Chatra Parishad, the home minister has stated that the matter was not under the jurisdiction of his ministry; it was under the defence ministry.
We do not intend to enter into a debate over jurisdiction. But we do refuse to accept the position that a citizen, an unmarried college- going girl in this case, should be left at the mercy of kidnappers for so long. The mystery surrounding her abduction must not be allowed to linger any more. For long 42 days people have been hardly informed of the government attempts at rescuing the girl. Now there is a press re- lease from Chittagong Cantonment on the incident. Let this help clear some of the confusions created in the meantime.
Whichever is the ministry dealing with the case, the responsibility rests with the government and it cannot set idle on a sensitive issue like this. The failure to trace the unfortunate girl’s whereabouts will have an undesirable reflection on the new government. If the defence ministry is in charge of the area, there are even more reasons and a greater compulsion to settle the potentially volatile matter. An issue such as this can be politically inflammatory. The challenge of rescuing Kalpana is a test case for the government to take the hill people into confidence. So there is no scope whatsoever for any failure to initiate appropriate actions against any one suspected of wrong-doing irrespec- tive of his position. We hope the government will do everything in its power to get to the truth of the matter and find Kalpana out.
.
Daily Star: 25 July 1996
Kalpana issue
3 CHT bodies reject Army statement
By Staff Correspondent: Three organisations of Chittagong Hill Tracts yesterday rejected the recent statement of the 24 Infantry Divi- sion of the Army regarding alleged kidnapping of Kalpana Chakma, saying it was “confusing, inconsistent and a distortion of the truth.”
The organisations demanded of the government to form a judicial inquiry comunittee to probe the alleged kidnapping of Kalpana, take measures to rescue her and punish the criminals involved.
In a press statement, Chittagong Hill People’s Council General Secretary Prasit B Khisha, president of Pahari Chhatra Parishad Sanjay Chakma and Hill Women’s Federation vice president Kabita Chakma said that it was beyond their comprehension why the 24 Infantry Divi- sion gave a statement “bypassing the ISPR which usually releases all statements regarding the Army.”
They said that the Army had, at first, tried to cover up the kidnap- ping of Kalpana Chakma, a women’s leader of the hill tracts, by saying that it was an “affair of the heart.”
Now the Army is contradicting its own statement by saying that Kalpana went abroad. The leaders questioned why the Army was not investigating the issue and checking with the immigration department.
.
The Daily Star: 26 July 1996
WP urges govt to take effective steps
for solution to CHT issue
The Workers Party of Bangladesh yesterday asked the government to take effective measures immediately for a political solution to the Chittagong Hill Tracts problem. Reports UNB.
A party politburo statement narrated the tension mounting in the CHT over the last few days, particularly, after the mysterious ‘kidnapping’ of Kalpana Chakma, despite repeated extension of ceasefire with the Shantibahini, the armed wing of Parbatya Chattagram Jana Sanghati Samity (PCJSS).
The existing truce between the government and the PCJSS will expire on July 31.
The party said it is unfortunate that the government as well as the Ministry of Home Affairs neither spoke nor took any step regarding ‘the Hill Women’s Federation leader Kalpana Chakma’s affair.
Expressing concern over the fast-moving situation in CHT nowa- days, the WP politburo mentioned that growing tension would jeopardise the on-going peace process there and further create hin- drances in the path of political solution of the problem.
.
The Daily Star : 27 July 1996
Abduction of Kalpana Chakma
PGP alleges involvement of Shantibahini men
Parbatya Gano Parishad (Council of Hill People) has alleged that Kalpana Chakma was kidnapped by Shantibahini, not any members of the Bangalee community or of the security forces, reports UNB.
The allegation was made by the PGP central leaders at a press conference at the Jatiya Press Club in the city yesterday morning.
Kalpana was kidnapped by 10/12 members of Shantibahini and she was taken to a place of Indian territory nearby. It is known that she was married with a commander of Shantibahini, said PGP president Jalal Uddin Ahmed Chowdhury Alamgir.
He, in this regard, mentioned that during the last general election Kalpana worked in favour of Awami Leage candidate Dipankar Taluker violating the decision of Shantibahini and Jano Sanghati Samity.
According to Alamgir, besides Hill Women’s Federation of which Kalpana was organizing secretary, Pahari Chatra Parishad and Pahari Gano Parishad supported independent candidate Bijoy Ketan Chakma in the June 12 election.
He said these organizations dragged the name of Lieutenant Ferdous into the incident. Lt Ferdous was victimiesed to tarnish the image of Bangladesh Army. “They enacted the drama to keep alive unrest in the hill tracts to fulfil their ulterior motive.”
PGP, in a written statement at the press conference, also urged the government to fulfil its 7-point demand to ensure equal rights of the Bangalee people in the hill tracts region.
PGP general secretary Moniruzzaman Monir and Parbatya Chhatra Parishad leader Sultan Mohammad Giasuddin were among others, present at the press conference.
.
The Daily Star: 1 August 1996
Missing of Kalpana Chakma : Probe body to be formed
A delegation of Marma, Chakma and Tripura Sangha yesterday called on Prime Minister Sheikh Hasina at her chamber in the Jatiya Sangsad Bhaban, reports BSS.
When the delegation referred to the recent missing of Kalpana Chakma, the Prime Minister assured them that a three-member judi- cial enquiry committee would be formed headed by a retired judge of the Supreme Court to probe the incident, find out persons responsible for and see such incident does not occur in the future.
The delegation apprised the Prime Minister of various problems in the hill tract area. The Prime Minister assured the delegation that with the cooperation of all people of the hill tracts, problems in the area would be solved.
Kalpanaranjan Chakma MP, Dipankar Talukr MP and Bir Bahadur MP were also present during the meeting.
.
The Daily Star: 2 August 1996
Memo to PM
Take steps to find Kalpana Chakma
Chittagong Hill Tracts National Coordination and Peace Council (CHTNCPC) yesterday handed over a 10 point memorandum to the Prime Minister and the Leader of the Opposition in Parliament for restoration of permanent peace in the hill tracts.
It urged the government to bring back Chakma refugees from Tripura, India and initiate a realistic peace talks with the Shantibahini by forming a committee in which the CHTNCPC should be included. The memorandum urged the Prime Minister to take steps to find out Kalpana Chakma who has been missing since June 11 as well as 35 other tribal and non-tribal women kidnapped by Shantibahini from the hill tracts recently.
The CHTNCPC held a seminar at the Jatiya Press Club and brought out a ‘peace procession’ before handing over the memorandum.
.
The Daily Star : 06
August 1996 Kalpana issue
Press release was approved by HQ, says ISPR
Questions are being raised in a section of newspapers and periodicals as regards the authority of headquarters, Chittagong area to issue a press release on Kalpana Chakma and Chittagong Hill Tracts (CHT) issues, reports BSS.
Army headquarters consider it pertinent to clarify the matter in order to do away with any sort of misunderstanding on the issue, an ISPR press release said in Dhaka yesterday.
The press release in question was very much vetted and approved by the army headquarters prior to its release.
.
The Daily Star : 09 August 1996
Kalpana Chakma now in Tripura, Claims BHRC
By Staff Correspondent:
Bangladesh Human Rights Commission (BHRC) yesterday claimed that the “so called” abduction of Kalpana Chakma was done under a pre-planned plot by her ‘own people’.
In a press conference at the Jatiya Press Club, representatives of the BHRC, who prepared a report on the basis of their visit to Kalpana Chakma’s village, said that Kalpana was safe and sound and was cur- rently residing at a village called Shukre in Tripura, India.
The executive director of BHRC Advocate K M Huq Kaiser, read- ing out the report, quoted Kalpana’s mother as saying: “After leaving home Kalpana Chakma contacted me twice, the last time being on August 1, 1996.”
Kaiser, however, failed to say how Kalpana contacted her mother. Responding to a question, he said that due to time constraint BHRC investigators could not make detailed queries.
The BHRC report said that there was no involvement of the Bangladesh Armed Forces behind the abduction of the tribal girl.
“The accused Lieutenant Ferdous or any other member of the armed forces was in no way involved in the abduction of Kalpana Chakma. “Kaiser said adding that at the time of the abduction, the investigation team found out that Lt Ferdous was busy doing other duties.
The investigators claimed that they had spoken to a number of people in the area and also in Rangamati, including the Area Com- mander of Rangamati, Brigadier ATM Zahirul Alam. Kaiser, however, did not talk to Kalpana’s brothers the main witnesses of the abduction. “We could not find them in the house,” he said.
Kalpana Chakma, the Organising Secretary of the Hill Women’s Association, was abducted at gun point from her village home at New Lalyaghona under Baghaichari thana in the Rangamati district early morning of June 12 last. Her abduction sparked protests in the area in which one person was killed and several were injured.
.
The Daily Star : 09 August 1996
Body to probe ‘missing’ of Kalpana soon
Home Minister Major (retd) Rafiqul Islam has assured three organisations of the Chittagong hill districts that a judicial enquiry committee would be formed immediately to investigate the reported missing of Kalpana Chakma, reports UNB.
The minister gave the assurance to a seven-member delegation of Hill People’s Council, Hill Students Council and Hill Women’s Fed- eration who called on him at his office yesterday, said a press release of the organisations.
The delegation, led by Hill People’s Council general secretary Prasit B Khisa, included Samiran Chakma, Sanjoy Chakma, Jolymong Marma, Khusi Roy Tripura, Bartika Chakma and Kabita Chakma.
The delegation also handed over to the minister a memorandum containing their five point demand.
Responding to the memorandum, the home minister said the min- istry would look into the cases filed against leaders of the three CHT organizations during the past government, the release added.
.
The Daily Star : 19 August 1996
Kalpana’s Mother Protests BHRC Report
By Staff Correspondent: Bandhuni Chakma, the mother of abducted Kalpana Chakma, yesterday said that the report of the Bangladesh Human Rights Commission (BHRC) on Kalpana claiming that she is now in the Tripura state of India was a ‘blatant lie’.
Bandhuni also denied that she told BHRC that Kalapana had con- tacted her twice after the abduction.
Kalpana’s mother was talking to newsmen at a press conference at the National Press Club. Leaders of the Hill Women’s Federation (HWF) also released a statement at the conference.
“BHRC has misquoted me intentionally,” Bandhuni Chakma said adding “I vehemently condemn and protest this lie”.
She urged the Prime Minister to help rescue her daughter. Meanwhile, the leaders of the HWF said, if the report of the BHRC was correct, the government should take immediate steps to bring her back from Tripura. They demanded rescue of Kalpana and punishment to the abductors. Kabita Chakma, Bartika Chakma, Jhinu Chakma and Somary Chakma of the HWF were present at the press conference.
.
The Independent : 24 August 1996
Govt. Urged to Find Out Kalpana Chakma
Leaders of Pahari Gono Parishad, Paharid Chhatra Parishad and Hill Women’s Federation urged the government to take immediate steps to find out Kalpana Chakma.
The leaders held a joint secretarial level meeting in Dhaka yester- day.
The meeting welcomed the government decision of forming in- quiry committee to investigate the alleged kidnapping of Kalpana Chakma.
The leaders of three organisations agreed to strengthen the move- ment for autonomy in the hill area denying all conspiracies.
The meeting was presided over by central general secretary of Pahari Gono Parishad Prasit B Khisa.
.
The Daily Star: 28 August 1996
Tripti Begum Or Kalpana Chakma?
From Our Correspondent
JHENIDAH, Aug 27: Police are yet to confirm the identity of the girl they rescued from a village in Mohespur thana on Monday suspecting her to be Kalpana Chakma, a tribal girl kidnapped from Rangamati.
According to Mohespur thana police, they were informed that a young woman, aged about 20 who had been staying in the house of one Zillur Rahman Alias Karim Mastan for the last 20-21 days might be Kalpana Chakma. Police then arrested the girl along with Rahman and produced them before the court to-day.
The girl claimed herself as Tripti Begum and said her father Ismail Sardar is an officer of the Jamuna Oil Company. Accounting to her, they are the residents of Agrabad area in Chittagong.
Producing a marriage deed, she said, she married Seikh Shukur Mahmud of new town Jessore on July 15 last. After marriage, they took shelter in the house of Karim Mastan (Fakir) for treatment as she had been suffering from hysteria.
Talking to this correspondent, she alleged that local police and people have been trying to treat her as Kalpana Chakma which was completely false.
But the so called husband of Tripti Begum, Seikh Shukur Mahmud, is yet to be traced.