কল্পনা চাকমার ডায়েরি
জীবন মানেই তো সংগ্ৰাম
আর তাই তো সংগ্রামী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নোটসমূহ
১৪০২ বাংলায় যে কোন সময়ে নোট করা হয়েছে।
কল্পনা চাকমা
১৯৯৫-৯৬ ইং
নিউ লাল্যাঘোনা
[বি: দ্র: নোট আকারে লেখা, কোন তারিখ নেই।]
ছাত্র আন্দোলন
“ছাত্র জীবনের উদ্দেশ্য শুধু পরীক্ষা পাশ ও স্বর্ণপদক লাভ নহে- দেশ সেবার জন্য প্রাণের সম্পদ ও যোগ্যতা অর্জন করা। দেশ মাতৃকার চরণে নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া দিব—ইহাই একমাত্র সাধনা হওয়া উচিত; এই সাধনার আরম্ভ ছাত্র জীবনেই করিতে হইবে।”
যুব আন্দোলন
“যে প্রতিষ্ঠান বা আন্দোলনের মূলে স্বাধীন-চিন্তা ও নূতন প্রেরণা নাই, সে প্রতিষ্ঠান বা আন্দোলন তরুণের প্রতিষ্ঠান বা তরুণের আন্দোলন বলিয়া অভিহিত হইতে পারে না।”
পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি সংক্রান্ত তথ্য:
মোট আয়তন – ৫,০৯৩ বর্গমাইল
মোট জামির পরিমাণ – ৩২,৫৯,৫২০ একর
চাষ যোগ্য জমি – ১,৩০,০০০ একর
কাপ্তাই বাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ – ৫৪,০০০ একর
উদ্বাস্তু পরবর্তী বাকী লোকদের জন্য চাষযোগ্য জমির ব্যবস্থা করা হয় – ২০,০০০ একর
উদ্বাস্তু পরবর্তী মোট আবাদী জমির পরিমাণ – ৯৬,০০০ একর
মাথাপিছু জমির পরিমাণ – .১৩৭ একর
- পুরুষ শাষিত সমাজে প্রতিদিন নারীদেরকে হতে হয় বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নিগৃহীত ও অপমানিত।
- লাঞ্ছনা বঞ্চনা অপমান অসহায়ত্ব শোষণ নিপীড়ন নির্যাতন ও দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের একমাত্র সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন। তাই বোনেরা—জেগে উঠুন, শৃংখল ভেঙ্গে ফেলুন।
- সৃষ্টির সেরা মানুষ, এ মানুষেরই অর্ধেক নারী জাতি। নারীকে দাসী ভাবা যায় না। নারী কল্যাণের প্রতীক, সৃষ্টি জগতের মাতা।
- নারী স্বাধীনতা ব্যতীত জাতীয় জাগরণ অসম্ভব। নারীদেরকে অসহায় করে না রেখে তাদের আত্মবলে বলীয়ান করে তোলা উচিত।
- অজ্ঞানতা দূর করে বর্তমান বিশ্বে সময়ের গতির সঙ্গে সম পদক্ষেপে চলার জন্যে নারী সমাজকে এগিয়ে আসা দরকার। কারণ এতেই নারী জীবনের সার্থকতা লাভ সম্ভব।
.
পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্য সংক্রান্ত তথ্য:
১৯৮১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট লোকসংখ্যা – ৭,০৮,৪৫৬ জন
তন্মধ্যে জুম্ম – ৪,৩৯,৪৫৮ জন
অ-জুম্ম – ২,৬৮,৯৯৮ জন
১৯৯১ সালে এসে মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় – ৯,৬৭,৪২০ জন
জুম্ম জনসংখ্যা বেড়েছে মোট – ৫৯,১৩৭ জন
অজুম্ম জনসংখ্যা বেড়েছে মোট – ১,৯৯,৮২৭ জন
অর্থাৎ বাঙ্গালী বৃদ্ধির হার – ৭৪.২৯%
জুম্ম বৃদ্ধির হার – ১৩.৪৬%
বর্তমানে মোট জুম্ম সংখ্যা – ৪,৯৮,৫৯৫ জন
মোট বাঙ্গালী সংখ্যা – ৪,৬৮,৮২৫ জন
প্রতি বছর বাঙালী বৃদ্ধি – ১৯৯৮২.৭ (গড় হার )
প্রতি বছর জুম্ম বৃদ্ধি – ৫৯১৩.৭ জন (গড় হার )
মোট জনসংখ্যা – ৯,৬৭,৪২০ জন
[ সূত্র: বাংলাদেশ অবজারভার ২/৩/৯৪ ইং]
.
এক নজরে তিন পার্বত্য জেলা
রাঙ্গামাটি
আয়তন – ৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা – ৪,০১,৩৮৮ জন
জুম্ম জাতি – ২,২৩,২৯২ জন
বাঙালী – ১,৭৮,০৯৬ জন
শিক্ষিত – ৩৬.৪৮ জন
ইউনিয়ন – ৪৭টি
মৌজা – ১৬৪ টি
হেডম্যান – ১৫০ জন
কার্বারী – ১০৯০ জন
মাধ্যমিক বিদ্যালয় (সরকারী) – ৬টি
বেসরকারী – ৩৩টি
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় – ১২টি
প্রাথমিক বিদ্যালয় (সরকারী) – ৩৮৯টি
বেসরকারী – ১১৮টি
চাষযোগ্য জমি – ১,১৭,৬৯৫ একর
সূত্র: বার্ষিকী, রাংগামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদ ’৯৪
.
বান্দরবান
আয়তন – ৪,৫০২ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা – ২,৩০,৫৬৯ জন
জুম্ম জাতি – ১,১০,৩৩৩ জন
বাঙ্গালী – ১,১০,২৩৬ জন
শিক্ষিত হার – ২৩.৮৮%
ইউনিয়ন – ২৯টি
থানা – ৭টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয় (সরকারী) – ৭টি
বেসরকারী – ৪টি
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় – ২১টি
প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী – ২১৯টি
বেসরকারী – ৯১টি
চাষযোগ্য জমি – ১৬,৬৪০ একর
পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট আয়তন – ১৩,২৭৮.১৩ বর্গ কি.মি
- উপযুক্ত শিক্ষাই নারীর নারীত্বের সৃষ্টি করে। আর তাই এরূপ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নারীকে দেশ-জাতি গঠনে অবদান রাখতে হবে।
.
খাগড়াছড়ি
আয়তন – ২,৬৬০ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা – ৩,২৯,৯২৩ জন
জুম্ম জাতি – ১,৯৮,৬৩৫ জন
অজুম্ম জাতি – ১,২৫,৬৪০ জন
ইউনিয়ন – ৩৪টি
থানা – ৮টি
চাষযোগ্য জমি – ৯২,৭৮১ একর
“বস্তুতঃ যখন মানুষেরা তাদের হৃদয়ে একই আদর্শবলী পোষণ করে তখন তাদের পরষ্পরকে কিছুতেই বিচিছন্ন করতে পারে না—তা কারাগারের প্রাচীরই হোক বা গোরস্থানের মাটির স্তুপই হোক।”—ফিদেল ক্যাস্ট্রো
.
আর রেখ না আঁধারে আমায় দেখতে দাও
একটি খাঁচাবন্দি পাখি যখন উড়তে চায় এর মানে কি এই দাঁড়ায় যে, সে কেবল নিজেই উড়বে আর কেউ নয়? যারা আগে থেকেই উড়ছিল তাদের খাঁচাবন্দি করতে হবে? আমার মনে হয় যারা তাকে খাঁচায় আটকিয়েছে তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা খাঁচাবন্দি পাখির পক্ষে স্বাভাবিক অবশ্য সে যদি বুঝতে পারে সে খাঁচায় আটকা পড়েছে। এই খাঁচা তার স্থান নয়, অনন্ত একটি আকাশ দাবি করবার অধিকার আছে।
আসলে পুরুষ নারীতে প্রাকৃতিক ভিন্নতা আছে ঠিকই কিন্তু তা কাউকে সবল বা দুর্বল করেনা। যোগ্য বা অযোগ্য করেনা। এই যোগ্যতা অযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে সমাজপতিদের চাপানো আইন, রীতি-নীতি খাদ্য ও কাজ নির্ণয়ের মাধ্যমে
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর কোনও পৃথক অস্তিত্ব স্বীকার করে না। এই সমাজে মেয়েরা স্বামীর ঘরে More or less দাসীর ভূমিকা পালন করে। Exception (ব্যতিক্রম) কখনও Example হয় না।
- বাংলাদেশের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) নারী শিক্ষার ওপর জোর দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, “একজন পুরুষকে শিক্ষা দিলে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষা দেয়া হয়, আর একজন নারীকে শিক্ষা দিলে একটি পুরো পরিবারকে শিক্ষা দেয়া হয়।” এখানে পরিকল্পনাবিদরা নারীকে ভাল মা হিসেবেই শুধু দেখতে চায়, পরিবারের মধ্যে পুরনো ধ্যান ধারণার ভাঙবার জন্য যতোটুকু দরকার ঠিক ততটুকু দেখানো হয়নি।
- বাংলাদেশের সংবিধানে নারীকে সম্পত্তির সমানাধিকার দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে পারিবারিক সম্পর্ক এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ধৰ্ম।
- আমাদের দেশে তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের সংগ্রাম শুধুই রাজনৈতিক নয়, সেই সাথে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে পুরুষ আধিপত্যের নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম। আমরা জানি বিশ্বজুড়ে পশ্চাৎপদ দেশে ও সমাজে নারীদের পারিবারিক সামাজিক নিপীড়ন একই রকম। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের দেশে মেয়েরা বেশী নিপীড়িত। কেননা আইন করেই মেয়েদের প্রতি বৈষম্য আরোপিত রয়েছে।
- জনসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশ নারী হওয়া সত্ত্বেও সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামে নারীদের ভূমিকা ও সমস্যা এদেশে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয় না। প্রসঙ্গত: আমরা একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে পারি। সাম্প্রতিক আন্দোলনের মধ্যে অজস্র দফাগুলোর মধ্যে আমরা যদি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রণীত এবং অবহেলিত দশ দফার দিকে দৃষ্টি দেই, সেখানেও দেখা যাবে অনেক বিষয় থাকলেও নির্দিষ্টভাবে নারীদের সমস্যা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। প্রয়োজনীয়তা বহু ক্ষেত্রে সচেতন পুরুষ সমাজ অনুভব না করার ফলে নারীমুক্তির প্রশ্নটিকে শ্রেণী সংগ্রাম রাজনৈতিক সংগ্রামে একটি জরুরী কিন্তু অবহেলিত বিষয় হিসেবে রয়েছে।
- মহিলাদের অর্থনৈতিক অধিকার সীমিত বা নেই বললেই চলে। প্রকৃত পক্ষে নারীকে জমিসহ কোন প্রকার সম্পদেই সমানাধিকার দেয়া হয়নি। তদুপরি ব্যাংক, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ থেকে সুযোগ নেবার কোন সহজ পথই নেই।
- যে দেশে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা কেন্দ্রীভূত হয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে আর অগণিত মানুষ রয়েছে বঞ্চিত সেখানে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না।
- যে দেশে সামাজিক বৈষম্য বেকারত্ব চিকিৎসা ও শিক্ষার অভাব রয়েছে সেদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর যেখানে ব্যাপক মানুষ প্রাইমারী শিক্ষার গণ্ডী পেরুতে পারে না সেখানকার—জনগণ গণতন্ত্রের সঠিক অর্থ উপলব্ধি করতে পারে না।
(১৯৯৫ ইং সালে যে কোন সময়ের নোটকরা)
.
“সর্বাগ্রে বাঙলা, ইংরেজী এবং ইউরোপীয় (continental) সাহিত্যের নামকরা বই সংগ্রহ তারপর ভারতের ইতিহাস, ইংল্যান্ডের ইতিহাস এবং পৃথিবীর সকল দেশের ইতিহাসের বই তারপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় পুস্তক এবং মহাপুরুষদের জীবনী সংগ্রহ করা।”
— তরুণের স্বপ্ন, সুভাষ চন্দ্র বসু
.
এক নজরে বাঘাইছড়ি থানা, ১৯৯১ ইং অনুযায়ী
১. আয়তন: ৭০৩ বর্গমাইল
২. লোকসংখ্যা:
গোত্র অনুযায়ী
মুসলিম – ১৪,৬৩১ জন
বৌদ্ধ – ৩৭,৮৩১ জন
হিন্দু – ৩,৭৮১ জন
খৃষ্টান – ৮৯৮ জন
অন্যান্য – ২৩৯ জন
মোট জনসংখ্যা – ৭,৩৮০ জন
জাতি ভিত্তিক
মুসলিম – ১৪,৬৩১ জন
চাকমা – ৩৮,০৭২ জন
মারমা – ৮৮ জন
পাংথু – ৬%
লুসাই – ১৩৭ জন
হিন্দু – ৩,৭৮১ জন
খিয়াং – ৪৪
ত্রিপুরা – ২,২৮২ জন
মোট সংখ্যা – ৫৯,০৪১ জন।
তন্মধ্যে পাহাড়ী – ৫৮,৪১০ জন
বাঙালী – ১৪,৬৩১ জন
জমির পরিমাণ – ২৫,২২৪ একর
.
১ম জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর প্রতিনিধি বৃন্দের প্রতি প্রদত্ত বক্তব্য
স্থান: পাইওনিয়ার ক্লাব, খাগড়াছড়ি
তারিখ: ২১ মে ১৯৯৫ ইং
আমরা জানি, বিশ্বজুড়ে পশ্চাৎপদ দেশে ও সমাজে নারীদের পারিবারিক ও সামাজিক নিপীড়ন প্রায় একই রকম। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের দেশের মেয়েরা বেশী নিপীড়িত। কেননা আইন করেই নারীদের প্রতি বৈষম্য আরোপিত হয়েছে। তার অধিক আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের অবস্থান এই পার্বত্য অঞ্চলের অন্তরালে রয়েছে বুকফাটা আর্তনাদ গগণ বিদারী মহাচিৎকার।
পার্বত্য অঞ্চলের আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলিতে নারী সমাজের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। একদিকে সেনা ও বাঙালীদের কর্তৃক ধর্ষণ-নির্যাতন, শ্লীলতাহানী অপমান অসহায়ত্বের নির্মম অত্যাচারের স্টীম রোলার। অন্যদিকে সামাজিক বৈষম্য গণ্ডীবদ্ধ জীবন যাপন নারী পুরুষের বিভেদ। অপরদিকে জাতিগত নিপীড়নের বর্বরতম হত্যাকান্ড।
এই অবস্থায় রাজনীতিবিদ হিসেবে নারীর ভূমিকা পালন অত্যন্ত কঠিন কাজ নি:সন্দেহে। আমাদেরকে অগ্নি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে হবে। ইতিপূর্বে আমাদের নারী সমাজ নিজস্ব স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে বৃহত্তর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার তথা নারী পুরুষের সম অধিকারের আন্দোলনে উপনীত হয়েছে। আমাদের জানা আছে, সমাজের নিপীড়িত শ্রেণী ও জনগণের মুক্তি ব্যতীত পৃথকভাবে নারী জাতির মুক্তি হতে পারে না, শোষিত কোন জাতি যেমনি অন্য একটি জাতিকে অধিকার দিতে পারেনা তেমনি দিতে পারেনা জীবনের নিরাপত্তা। কাজেই বোনেরা জাতীয় আন্দোলনের কাজ সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েই নারীদের সমঅধিকারের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক ক্ষেত্রে আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। আমাদের ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থা, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা আমাদের অস্বীকার করবার নয়। এই লক্ষ্যে আমাদের হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সংগ্রাম শুধু রাজনৈতিক নয়, সেই সাথে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে পুরুষ আধিপত্যের নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম।
তাই সামাজিকভাবে আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। এই সমাজ পরিবর্তনের জন্য আমাদের তথা সকল প্রগতিমনা নারী-পুরুষদের নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। সে কারণে আমাদের নারী সমাজের আরো সচেতনতা বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ক্ষমতা ও দক্ষতার সমন্বয়ে গড়ে উঠতে হবে সকল পর্যায়ের নেত্রী কর্মিদের এই যোগ্য নেতৃত্বে যেন পারি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে।
.
প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সমবেত নারীদের প্রতি আমার উপস্থাপিত প্রদত্ত বক্তব্য
স্থান: টাউন হল, খাগড়াছড়ি।
তারিখ: ১৫ জানুয়ারি, ১৯৯৫ ইং
দূর অতীত থেকেই নারী জাতির উপর নির্যাতন নিপীড়ন চলে আসছে। নারী জাতির লাঞ্ছনা-বঞ্চনা অপমান দাসত্ব কোন গোপন ব্যাপার নয়। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই তা বিভিন্ন রূপে নগ্নভাবে প্রকাশিত। এরই মধ্যে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সমস্যার জন্য নারী পুরুষ সকলকে নির্বিচারে হত্যা করছে নির্যাতন চালাচেছ। নারীদের উপর অমানবিক ধর্ষণ নির্যাতন লাঞ্ছনা-বঞ্চনা শ্লীলতাহানী নারীহত্যা ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
এই আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের সংগঠন এইচ ডব্লিউ এফ ইতিমধ্যে নিজস্ব স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করছে। জুম্মজাতির অধিকার এবং নারীদের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উপনীত হয়েছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং নারীদের সমান অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নিয়োজিত। কিন্তু আমরা জানি সমাজের নিপীড়িত শ্রেণী ও জনগণের মুক্তি ব্যতিত পৃথকভাবে নারী জাতির মুক্তি হতে পারে না। … কারণ নারীর উপর শোষণ নির্যাতন সমাজে বিদ্যমান শ্রেণী শোষণ নির্যাতন ও মানুষ মানুষে অসাম্যের ব্যবস্থা থেকেই উদ্ভুত। যে মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ নিপীড়নের বর্বর ব্যবস্থা যতদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে দূরীভূত না হবে অর্থাৎ পাহাড়ি জনগণের প্রাণের দাবি স্বায়ত্তশাসন যতদিন পর্যন্ত দেয়া না হয় ততদিন এর একটি রূপ হিসেবে নারী নিপীড়নও দূরীভূত হতে পারে না।
তাই আজ সম্মেলনের মধ্যে দাঁড়িয়ে জোর দাবি জানাতে চাই- অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সমস্যার একমাত্র সমাধান স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই হবে এবং নারীদের ক্ষেত্রে যে ধর্মীয় বাদানুবাদ আছে সেগুলো সংস্কার করতে হবে। আমরা আর গণ্ডিবদ্ধ জীবন চাইনা। চাই মুক্ত জীবন।
আমাদের এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আর ঘরের কোণায় বসে থাকার সময় নেই। শুধু গিন্নী হয়ে রান্নাঘরে বসে থাকলে চলবে না। এই লক্ষ্যে আমাদের ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থা নারীদের গণ্ডিবদ্ধ জীবন যাপন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এটা আমাদের অস্বীকার করার নয়। সে জন্য আমাদের এই ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থা পেছনে রেখে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার তথা নারীদের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সকল প্রগতিশীল নারী পুরুষদের এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই। নারী পুরুষের বিভেদ আমরা মানিনা। যে বিভেদ আমরা প্রত্যক্ষ করি তা সামাজিক। অতএব বন্ধুরা এ বিভেদকে সামাজিকভাবে উৎখাত করা সম্ভব। এই ঘুণেধরা সমাজ পরিবর্তনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে আমাদের সবাইকে এবং বর্তমান যুব তারুণ্য শক্তিকে।
আমরা এখনো সামাজিকভাবে, ধর্মীয়ভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে, রাজনৈতিকভাবে অবহেলিত তথা নাগরিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। সর্বোপরি যারাই হীন, যারাই মনুষ্যত্বহীন তারাই মনে করে নারী শুধু পণ্য সামগ্রী, নারী শুধু ভোগের জিনিস, শুধু ব্যবহারের জিনিস, শুধু খেলার পুতুল। তাই সেই নরপশুরা নারীদেরকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করছে, নির্যাতন চালাচেছ, হত্যা করছে। এই সব অমানবিক অত্যাচার পশুত্ব আচরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত সেনা সদস্যরা। সংঘটিত অসংখ্য ধর্ষণ নির্যাতন এর জলন্ত প্ৰমাণ।
তাই আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই- নারী কোন পণ্য সামগ্রী নয়, কারোর ভোগের জিনিস নয়, কারোর ব্যবহারের জিনিস নয়, কারোর খেলার পুতুল নয়। কেবল সন্তান উৎপাদনের যন্ত্রও নয়, নারীও একজন মানুষ। মানুষ হিসেবে সমান মর্যাদা থাকতে হবে। আমরা এইসব নিপীড়ন নির্যাতন আর নীরবে সহ্য করবো না। এইসব ধর্ষণ, হত্যা, শ্লীলতাহানী এই নির্মম অবমাননা আর নিরবে হজম করতে দেয়া হবে না। যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবোই দাঁড়াবো।
আমরা সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ অংশের অর্ধেক। বাস্তবিক পক্ষে আমরাই সৃষ্টি জগতের মাতা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান-অসহায়ত্ব, শোষণ-নিপীড়ন নির্যাতন ও দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের একমাত্র সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন। তাই বোনেরা — জেগে উঠুন
শৃংখল ভেঙ্গে ফেলুন।
আমাদের অধিকার একদিন প্রতিষ্ঠা হবেই হবেই।
আমরা এদেশের অর্ধেক নারী সমাজ। আমাদের ছাড়া কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়। কাজেই দেশের উন্নয়নের চিন্তা করলেও আমাদের নারীদেরকে বাদ দিয়ে তা আমরা করতে পারবো না কোনক্রমেই। আমরা চাই এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা যেখানে ধনী গরীব শ্রেণীভেদ থাকবে না। নারী পুরুষ উচু নীচু ভাব বা অধিকার বৈষম্যতা থাকবে না। এক শ্রেণীর মানুষ অন্যশ্রেণীর মানুষকে শোষণ করতে পারবে না। সব মানুষই মানবিক গুণাবলীতে এক বিচার করতে হবে এবং জীবন জীবিকায় সর্বক্ষেত্রে সমান সুবিধা পাবে। নারী পুরুষের সমান অধিকার থাকবে। মানুষের দ্বারা মানুষকে শোষণ বা নির্যাতন করা চলবে না এবং চলা উচিত নয়। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজ কি প্রমাণ করে? আমাদের দেশের সামাজিক অবকাঠামো এমন ভাবেই তৈরী যে, এখানে নারীরা একদিকে শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, মধ্যবিত্ত গরীব মানুষদের অংশ হিসেবে শোষিত হচ্ছে। অন্যদিকে নিজেদের পরিবেশের মধ্যেই পুরুষের অধীন হয়ে থাকছে এবং পুরুষের রোজগারের ওপর নির্ভর করছে।
.
নতুনের সন্ধান
তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ ইং
ছাত্র আন্দোলন
অধ্যয়ন কোনও দিন তপস্যা হইতে পারেনা। অধ্যয়নের অর্থ কতকগুলি গ্রন্থ পাঠ ও কতকগুলি পরীক্ষা পাশ। ইহার দ্বারা মানুষ স্বর্ণপদক লাভ করিতে পারে হয়তো বড় চাকুরী পাইতে পারে- কিন্তু মনুষ্যত্ব অর্জন করিতে পারে না। পুস্তক পাঠ করিয়া আমরা উচ্চভাব বা আদর্শ শিক্ষা করিতে পারি- একথা সত্য কিন্তু সে সব ভাব যে পর্যন্ত আমরা উপলব্ধি ও হৃদয়ঙ্গম করিয়া কার্যে পরিণত না করিতেছি সে পর্যন্ত আমাদের চরিত্র গঠন হইতে পারেনা।
যখন মানুষের অদম্য শক্তি ও উৎসাহ আছে, অফুরন্ত কল্পনা শক্তি ও ত্যাগ স্পৃহা আছে, নিঃস্বার্থভাবে মানুষ তখন ভালবাসিতে পারে- কখনই সে আদর্শের চরণে আত্মবলিদান করিতে পারে- অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া ভাবের তরঙ্গে জীবনতরী ভাসাইয়া দিতে পারে। সুতরাং কৈশোর ও যৌবনই সাধনার প্রকৃত সময়। টাটকা রাঙ্গা ফুলেই দেবীর আরাধনা হইয়া থাকে, পুরানো বাসী ফুলের দ্বারা সে পূজার কাজ সমাধা হইতে পারে না। তাই বলি হে আমার তরুণ ভাইসব তোমাদেরও হৃদয় যখন পবিত্র, শক্তি যখন অফুরন্ত উৎসাহ যখন অদম্য এবং ভবিষ্যৎ যখন আশার রক্তিম রাগে রঞ্জিত, সেই শুভ সময়ে জীবন সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শের চরণে আত্মোৎসর্গ কর।
আজকাল স্কুল ও কলেজে ভাল ছেলে নামে একশ্রেণীর জীব দেখিতে পাওয়া যায়, আমি তাহাদিগকে কৃপার চক্ষে দেখিয়া থাকি। তাহারা গ্রন্থকীট, পুথির বাহিরে তাহাদের অস্তিত্ব নাই এবং পরীক্ষার প্রাঙ্গনে তাহাদের জীবন পর্যবসিত হয়। ইহাদের তুলনা করুন ‘বখাটে’ রবার্ট ক্লাইভকে। এই ‘বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো’ ছেলে সাত সমুদ্র তের নদী পার হইয়া অজানার সন্ধানে ভক্ষণ করিতে করিতে ইংরেজ জাতির জন্য সাম্রাজ্য জয় করে। ইংল্যাণ্ডের ভাল ছেলেরা যাহা করিতে পারে নাই, তাহা সম্পন্ন করিল ‘বখাটে’ রবার্ট ক্লাইভ। ইংরেজ জাতি মনুষ্যত্বের মর্যাদা দিতে জানে তাই তাহারা সর্বোচ্চ সম্মান ক্লাইভকে কৃতজ্ঞচিত্তে অর্পণ করিল। ‘বখাটে’ রবার্ট শেষ জীবন হইল লর্ড ক্লাইভ।
দুই
সভায় আসিবার প্রবৃত্তি বা সাহস যে আমার হইয়াছে তার একমাত্র কারণ এই যে, আমি মনে করি আমি আপনাদের মতই ছাত্র। বাস্তব জীবনের কঠিন আঘাতে যে জ্ঞানের উন্মেষ হয় সেই জ্ঞান আহরণে আমি এখন রত।
প্রত্যেক ব্যক্তির বা জাতির একটা ধর্ম বা আদর্শ ideal আছে। সে ideal বা আদর্শকে অবলম্বন ও আশ্রয় করিয়া সে গড়িয়া উঠে। সেই ideal কে স্বার্থক করাই তার জীবনের উদ্দেশ্য এবং সেই ideal বা আদর্শকে বাদ দিলে তার জীবন অর্থহীন ও নিপ্ৰয়োজন হইয়া পড়ে। দেশ ও কালের গন্ডীর মধ্যে আদর্শের ক্রমবিকাশ ও অভিব্যক্তি এক দিনে বা এক বৎসরে হয় না। মনীষীরা বলে থাকেন—আদর্শ একটা প্রাণহীন গতিহীন বস্তু নয়। তার বেগ আছে, গতি আছে, প্রাণ সঞ্চারণী শক্তি আছে।
আজ এই কথাটি আমি খুব বড় করিয়া ছাত্র সমাজের মধ্যে বলিতে আসিয়াছি- যে যুগে আপনারা জন্মিয়াছেন সে যুগের ধর্ম- পরিপূর্ণ ও সর্বাঙ্গীন মুক্তিলাভ। স্বাধীন দেশে স্বাধীন আবহাওয়ার মধ্যে আমাদের জাতি জম্মিতে চায়- বর্ধিত হইতে চায় এবং মরিতে চায়। ‘পুরুষ অবরুদ্ধ আপন দেশে, নারী অবরুদ্ধ নিজ নিবাসে।’ এ অবস্থায় আর কতদিন চলিবে? আর আমাদের নারী সমাজের বর্ণনা করিবার সময়ে আমরা কতদিন আর বলিব—
‘সচল হয়েও অচল সে যে
বস্তার চেয়েও ভারী,
মানুষ হয়েও সং-এর পুতুল
বঙ্গদেশের নারী।’
স্বাধীনতার নামে অনেকের আতঙ্ক উপস্থিত হয়। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার কথা ভাবিলে অনেকে স্বপ্ন দেখেন রক্ত গঙ্গার এবং ফাঁসি কাষ্ঠের এবং সামাজিক স্বাধীনতার কথা ভাবিলে অনেকে দর্শন করেন উচ্ছৃঙ্খলতার বিভীষিকা। কিন্তু আমি উচ্ছৃঙ্খলাতার ভয়ে ভীত নই, মানুষের যদি ভগবান বিরাজ করেন অথবা মানুষের মধ্যে যদি মানবতা থাকে- যদি ভগবান সত্য হন -যদি মানুষ সত্য হয়- তবে মানুষ চিরকাল পথ ভ্রষ্ট বা ভ্রান্ত হইতে পারেন। স্বাধীনতার মদিরা পান করিয়া যদি আমরা কিছু সময়ের জন্য অপ্রকৃতিস্থ হই তাহা হইলেও অচিরে আমরা আত্মস্থ হইব, আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির যে দাবী তাহা ভুল ভ্রান্তি করিবার অধিকারের দাবী বই আর কিছু নয় অতএব উচচ্ছৃঙ্খলতার বিভীষিকা না দেখিয়া মুক্ত পথে আগুয়ান হও; নিজের মানবতার বিশ্বাসী হইয়া। মনুষ্যত্ব লাভের চেষ্টায় সর্বদা নিরত হও।
আজ দেশের মধ্যে তিনটি সম্প্রদায় একপ্রকার নিশ্চেষ্ট হইয়া পড়িয়া আছে। নারী সমাজ, উপেক্ষিত তথাকথিত অনুন্নত সমাজ এবং কৃষক ও শ্রমিক সমাজ। ইহাদের নিকট গিয়া বল—তোমরাও মানুষ, মনুষ্যত্বের পূর্ণ অধিকার তোমরাই পাইবে। অতএব ওঠো, জাগো, নিশ্চেষ্টতা পরিহার করিয়া নিজের অধিকার কারিয়া লও।
‘নব নব সৃষ্টিই জীবনের লক্ষণ’
স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি সমাজ ও ব্যক্তি, নর ও নারী, ধনী ও দরিদ্র সকলের জন্য স্বাধীনতা, শুধু ইহা রাষ্ট্রীয় বন্ধন- মুক্তি নহে ইহা অর্থের সমানবিভাগ, জাতি ভেদ ও সমাজিক অবিচারের নিরাকরণ ও সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামি বর্জনও সূচিত করে। জীবনের একটি মাত্র উদ্দেশ্য আছে, তাহা হইতেছে সকল প্রকার বন্ধন হইতে মুক্তি। স্বাধীনতার জন্য উদগ্র আকাঙ্খাই হইতেছে জীবনের মূল সুর- সদ্যোজাত শিশুর প্রথম ক্রন্দন ধ্বনিই তো বন্ধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা। আপনাদের নিজেদের প্রাণে এবং দেশবাসীর প্রাণে স্বাধীনতার এই তীব্র আকাঙ্খাটি জাগাইয়া তুলুন।
দেশের সমগ্র নারী জাতিকে উদ্বুদ্ধ করিবে। আজ নারীকে সমাজে ও রাষ্ট্রে পুরুষের সমান অধিকার লইয়া দাঁড়াইতে হইবে।
সমাজের বন্ধন মুক্ত করিতে হইলে সামাজিক ব্যাপার এবং আইনসঙ্গত বিষয়ে মহিলাদিগকে সমান অধিকার দিতে হইবে। সমাজে, রাজনীতি ক্ষেত্রে, আর্থিক ব্যাপারে সর্বত্র এবং সর্ব বিষয়ে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমানাধিকার দিতে হইবে- ইহাতে বৈষম্য রাখিলে চলিবে না। কেবল অন্ন বস্ত্র পাইলেই মানুষ জীবন ধারণ করিতে পারে না।
সংগৃহীত- নূতনের সন্ধান, ছাত্র আন্দোলন থেকে। সুভাষ চন্দ্র বসু
.
৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন ‘৯৫
তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ ইং
বেইজিং বিশ্ব নারী সম্মেলনের খসড়ার মূল দলিল হিসেবে বিবেচিত ‘দ্য প্লাটফরম ফর অ্যাকশন’-এ নারী সমাজের অগ্রগতির পথে বাধা বলে ১২টি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে-
১.দারিদ্র্য, ২. শিক্ষা, ৩. স্বাস্থ্য, ৪. নির্যাতন, ৫. সশস্ত্র সংঘাত ৬. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, ৭. ক্ষমতা ও নীতিনির্ধারণে অংশীদারিত্ব, ৮. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানাদি, ৯. মানবাধিকার, ১০.গণমাধ্যম, ১১. পরিবেশ উন্নয়ন এবং ১২. কন্যা সন্তান। মোট কথা আগামী শতাব্দীতে নারী সমাজের ভাগ্যেন্নয়নই ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের প্রত্যাশা।
বিশ্বের নারী সমাজ সুদীর্ঘকাল ধরে যে পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষ কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়েছে সে সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। বৰ্তমান শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে পরিচিত ইংল্যান্ডেও নারীর ভোটাধিকার ছিল না। নারী হয়ে জন্মাবার অপরাধে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের মতো মহীয়সী নারীকে পর্যন্ত সে দেশের মেডিকেল কলেজে পড়তে দেয়া হয়নি। আর ভারতের শংকরাচার্যের মতো বিশ্ববিখ্যাত হিন্দু শাস্ত্রকার পর্যন্ত নারীকে আখ্যায়িত করেছেন ‘নরকের দ্বার’ রূপে। আজো ভারতের কোনো কোনো রাজ্যে নারীকে ‘বেদ’ পড়তে দেয়া হয় না। বিংশ শতাব্দীর শেষ পদে পৌঁছেও বহু দেশে নারী শ্রমিকেরা পুরুষের চেয়ে কম মজুরী পায়।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ সর্ব প্রথম আমেরিকায় বস্ত্র শিল্পের নারী শ্রমিকরা কাজের সময় ১৬ ঘন্টার পরিবর্তে ১০ ঘন্টা করা ও মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে মিছিল বের করে সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ আক্রমণ চালায়। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরে বস্ত্র শিল্পের নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকারের দাবিতে মিছিল বের করলে নারী শ্রমিকরা মালিক পক্ষের পেটোয়া বাহিনীদের হাতে লাঞ্ছিত ও আহত হয়। তাদের সেদিনের দাবিই পরবর্তীতে বিশ্বের সমগ্র নারী সমাজের দাবিতে পরিণত হয়। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে ইন্টারন্যাশনাল সোসালিস্ট উইমেন্স কনফারেন্সে জার্মানির সমাজতন্ত্রী নেত্রী ক্লারা সেৎর্কিন নারী আন্দোলনের মর্যাদাপূর্ণ ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব রাখেন। সেই থেকে নারী আন্দোলন আরো সংগঠিত হতে থাকে। ১৯৬০ সালে ব্যাপক ভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে মেক্সিকো নগরীতে প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলন এবং প্রথম নারী দশক, ১৯৮০ সালে কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় বিশ্ব নারী সম্মেলন, ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিশ্বে নারীর সমান মর্যাদা উন্নয়নের বাধাগুলোর অপসারণ ও কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং নারীমুক্তি আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। এখানে স্মর্তব্য ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ঘোষণা করে এবং সেই থেকে সারা বিশ্বে দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
— সংগৃহীত দৈনিক গিরিদর্পণ
.
যুব আন্দোলন
তরুণের আদর্শ- বর্তমানের সকল প্রকার বন্ধন, অত্যাচার, অবিচার ও অনাচার ধ্বংস করিয়া নূতন সমাজ ও নূতন জাতি সৃষ্টি করা।
তরুণ প্রাণের লক্ষণ কি? লক্ষণ এই যে, সে বর্তমানকে বা বাস্তবকে অখন্ড সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে পারে না। সে বন্ধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করিতে চায় এবং সে চায় আনিতে ধ্বংসের মহাশশ্মানের বুকে সৃষ্টির অবিরাম তান্ডব নৃত্য, ধ্বংস ও সৃষ্টি লীলার মধ্যে যে আত্মহারা হইতে পারে একমাত্র সেই ব্যক্তিই তরুণ।
ফুল যখন ফোটে তখন প্রত্যেক পাপড়ির মধ্যে তার সুষমা ও সৌরভ আত্মপ্রকাশ লাভ করে। বহুদিন শয্যাশায়ী থাকার পর মানুষ যখন পূর্বস্বাস্থ্য ফিরিয়া পায় তখন শরীরের প্রত্যেক অঙ্গের ভিতর দিয়া শক্তি, তেজ ও প্রফুল্লতা ফুটিয়া উঠে। শৈশব কৈশোর পার হইয়া আমরা যখন যৌবন রাজ্যে অভিষিক্ত হই তখন প্রকৃতি দেবী সকল সম্পদে আমাদিগকে ভূষিত করেন। শারীরিক শক্তি, মানসিক তেজ, নৈতিক বল, শৌর্য, বীর্য- সব দিক দিয়া আমরা মানুষ হইয়া উঠি। ব্যক্তির জীবনে যতগুলি দিক আছে এবং জাতির জীবনে যতগুলি দিক আছে- ততগুলি দিক আছে যুব-আন্দোলনের।
- বয়সের গুণে মানুষ অভিজ্ঞতা,দূরদর্শিতা ও সাবধানতা লাভ করে।
- আমরা যেন ‘অজানার’ ভয়ে সর্বদা ভীত, বাহির অপেক্ষা আমরা যেন ঘরকেই ভালবাসি, তাই আমাদের Spirit of adventure এত কম।
- বাহিরের জন্য, ‘অজানার’ জন্য পাগল হইতে শিখিতে হইবে। ঘরের কোণে অথবা দেশের কোণে লুকাইয়া থাকিলে চলিবে না। সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরিয়া নিজের চোখে দেখিতে হইবে এবং দেশ দেশান্তর হইতে জ্ঞানাহরণ করিয়া আনিতে হইবে।
.
স্বপ্ন বা আদর্শ কি?
আমি চাই একটা নূতন সর্বাঙ্গীন মুক্তি সম্পন্ন সমাজ এবং তার উপরে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র; যে সমাজে ব্যক্তি সর্বভাবে মুক্ত হইবে এবং সমাজের চাপে আর নিষ্পেষিত হইবে না যে সমাজে জাতিভেদের অচলায়তন আর থাকিবে না- যে সমাজে নারী মুক্ত হইয়া সমাজে এবং রাষ্ট্রের, পুরুষের সহিত সমান অধিকার ভোগ করিবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবায় সমান ভাবে আত্মনিয়োগ করিবে, যে সমাজে অর্থের বৈষম্য থাকিবে না, যে সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তি শিক্ষা ও উন্নতির সমান সুযোগ পাইবে, যে সমাজে শ্রমের এবং কর্মের পূর্ণ মর্যাদা থাকিবে এবং অলসের ও নিষ্কর্মার কোন স্থান থাকিবে না; যে রাষ্ট্র বিজাতীয় প্রভাব প্রতিপত্তির হস্ত হইতে সর্ব বিষয়ে মুক্ত হইবে, যে রাষ্ট্র আমাদের স্বদেশীসমাজের যন্ত্রস্বরূপ হইয়া কাজ করিবে, সর্বোপরি যে সমাজ ও রাষ্ট্র এদেশবাসীর অভাব মোচন করিয়া পরন্তু বিশ্বমানবের নিকট আদর্শ সমাজ ও আদর্শ রাষ্ট্র বলিয়া প্রতিভাত হইবে- আমি সেই সমাজ ও সেই রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়া থাকি।
- রাজনীতির ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে মতান্তর হওয়া অনিবার্য এবং মতান্তরের জন্য ঝগড়া বিবাদ হওয়াও বোধ হয় তদ্রুপ অনিবার্য। কিন্তু মতান্তর যেন মতান্তরে পরিণত না হয় এবং ব্যক্তিগত নিন্দা ও গালাগালি যেন আমাদের মন্ত্র না হইয়া দাঁড়ায়- এ বিষয়ে আমাদের সাবধান ও সতর্ক হওয়া উচিত। তারপর গণ-আন্দোলনে যোগদান করিয়া আমরা যদি এতটা অসহিঞ্চু হইয়া পড়ি যে, ভোটের পরিবর্তে লাঠি ও ছোরা ব্যবহার করিতে আমরা দ্বিধা বোধ করি না, তাহা হইলে দেশের দুর্দিন আসিয়াছে বুঝিতে হইবে।
- অজ্ঞান-নিশা প্রায় কাটিয়া গিয়াছে, আমরা জাতীয় চৈতন্য ফিরিয়া পাইতেছি। আঘাত বিপদ আছে বলিয়াই জীবনের মূল্য আছে। ত্যাগ, শোক ও অত্যাচার না থাকিলে জীবনের কি কোন সৌন্দর্য, কোন বিচিত্ৰতা থাকিত?
.
পুরুষতন্ত্র কি?
পুরুষতন্ত্র (Patriarchy): নারী পুরুষের শারীরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি -এই সব কিছুকেই এখন এক কথায় ‘পুরুষতন্ত্র’ আখ্যা দেয়া হয়। নারী নির্যাতন নারীর প্রতি বৈষম্য, অশ্রদ্ধা, অপমান তো আছেই নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের যে কোন ধরনের পার্থক্যমূলক আচরণকেও সাধারণভাবে ‘পুরুষতন্ত্র’ আখ্যা দেয়া হয়। পুরুষতন্ত্রের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ :
ব্যক্তিগত জীবনে আমরা পুরুষতন্ত্রকে হামেশাই টের পাই। এরই কয়েকটি উদাহরণ-
১. সন্তানের ক্ষেত্রে মেয়ের চেয়ে ছেলে বেশী আকাঙ্খা করা। অনেক মেয়েই নিজের জীবনে অনুভব করেছে যে, মেয়ে হয়ে জন্ম হওয়ার কারণে বাবা মা আত্মীয়স্বজন তাকে আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করেনি। অনেকের মুখ কালো হয়েছে।
২. পরিবারের সম্পত্তির ওপর মেয়েদের ভাগ না থাকা বা অসম ভাগ থাকা। সম্পত্তির অধিকার ও বণ্টনে অসাম্য পুরুষতন্ত্রের খুবই গোড়ার ব্যাপার।
৩. সংসারের দায় দায়িত্বের ক্ষেত্রে পুরুষের কাজ হচ্ছে আয় উপার্জন করা আর মেয়ের কাজ সন্তান লালন পালন। এরই নাম সংসার। পুরুষই পরিবার প্রধান, নারী নয়। নারী কোন কারণে পুরুষের চেয়ে বেশী আয় উপার্জন করলেও পুরুষের বর্তমানে নারী কোনদিন পরিবার প্রধান হিসাবে স্বীকৃতি পায় না। বাড়িতে কোন পুরুষ না থাকলে তাকে পরিপূর্ণ পরিবার হিসাবে সমাজে স্বীকৃতি দেয়া হয় না।
৪. বাড়িতে মেয়েদের ঘরকন্নার কাজ করা, ঘরের কাজে ছেলেদের কোন ভূমিকা না থাকা। ঘরে রান্নার কাজ মানেই মেয়েদের আর কোন মেরামত মেশিনপত্র নিয়ে কাজ বা ভারি কাজ ছেলেদের কাজ বলে গণ্য করা। কিন্তু রান্না করা মানেই নারীর কাজ বা ভারি কাজ মানেই পুরুষের, ব্যাপারটি এতো সরল নয়। পুরুষতান্ত্রিক কাজের বিভাজনটা এর চেয়েও জটিল। যেমন রেস্তোরা বা হোটেলে বাবুর্চিগিরি মেয়েরা করে না, করে পুরুষ। পুকুর থেকে কলসি করে পানি আনা যতোই ভারি কাজ হোক তাকে কিন্তু আবার ভারি কাজ বলে গণ্য করা হয় না। তাহলে দেখা যাচ্ছে কোথায় কেমন করে কি ভাবে কাজ হচ্ছে তার মধ্যেই লিঙ্গভেদ করবার একটা অলিখিত প্ৰথা আছে, নারী পুরুষ ভাগ আছে। আবার কোন কাজ ভারি আর কোন কাজ হাল্কা তারও লিঙ্গ স্থির করার একটা অলিখিত নিয়ম আছে।
৫. স্বামীর পরিচয়ে মিসেস বা বেগম হিসেবে। স্ত্রীর পরিচয়, সন্তানদের পরিচয় পিতার পরিচয়ে। এর মর্মকথা হলো সমাজ মানে পিতাদের সমাজ, স্ত্রী সেখানে গৌন, সমাজের বাইরের ব্যাপার। স্ত্রী সেখানে থাকলেও পরিচয় ও স্বীকৃতির সামাজিকতায় গৌন থাকে এবং প্রায়ই অদৃশ্য হয়ে যায়।
৬. মেয়েদের স্কুলে না পাঠানো। মেয়েদের পড়ে কি হবে? এই ভাব।
৭. ভাল স্বামী পাবে আশায় মেয়েদের মাস্টার রেখে বা গানের স্কুলে পাঠিয়ে গান শেখানো। অন্যদিকে ছেলেদের নিয়মিত পড়াশুনা করা আর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া। ছেলেরা নাচ শিখতে চাইলে চোখ কপালে তোলা। মেয়েদের শরীর সর্বস্ব গণ্য করা, সেই কারণে নৃত্যকলা মেয়েদের ব্যাপার এই ধারণা বদ্ধমূল থাকা। ছেলেদের শরীর নাচের উপযুক্ত নয় গণ্য করা।
৮. ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণকারীর খবর না ছেপে ধর্ষিতার খবর ছাপানো। অথচ সমাজে অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর চেয়ে অপরাধীকেই চেনানো হয়।
৯. সন্তান ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর কোন ভূমিকা স্বীকার না করা। পুরুষ চাইলেই সন্তান হবে আর না চাইলে হবে না, নারীর ওপর এই নিয়ন্ত্রণ বহাল থাকা। একই সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জনসংখ্যা কমাবার জন্য নারীর জরায়ুর ওপর রাষ্ট্র, এক ধরনের এনজিও, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সাহায্যদাতাদের নিয়ন্ত্রণ। এর নারীর অলিখিত স্বামী নারী কিভাবে স্বামীর সঙ্গে বিছানায় যায় কি করে না করে সেই সকল অতীব ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর খোঁজখবর এরা হামেশা রাখে এবং বিভিন্ন জন্মনিরোধক পদ্ধতি দিয়ে নারী ও তার জরায়ুর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। সন্তান হবে কি হবেনা সেই সিদ্ধান্ত এখন আর এক স্বামীর সিদ্ধান্ত নয় সকল স্বামীর সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
১০. অফিসে আদালতে কর্মক্ষেত্রে নারী হিসাবে অবহেলা, অপমান ও নানাবিধ যৌন নির্যাতনের স্বীকার হওয়া।
১১. প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর ঠোট বন্ধ রাখতে উপদেশ দেওয়া। নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না- এই পুরুষতান্ত্রিক এর মতলব হচ্ছে নারীর আকাঙ্খার প্রকাশকে দাবিয়ে রাখা।
১২. যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীর আনন্দ পাওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করা বা আনন্দ পাওয়াকে খারাপ ভাবে দেখা। অন্যদিক থেকে আনন্দ পাওয়ার নামে বহুগামী পুরুষের মতো নারীকে বহুগামী হওয়ার উপদেশ দিয়ে পুরুষের সঙ্গে সাম্য অর্জনের তত্ত্ব প্রচার করা। অর্থাৎ নারীকে পুরুষ হওয়ার উপদেশ দেওয়া।
১৩. নারী পুরুষের সমানাধিকার ও সাম্য অর্জনের জন্য নারীকে পুরুষের মতো আচার আচরণ চলাফেরা রপ্ত করতে বলা ও পুরুষের মতো হয়ে ওঠার সাধনা করা। অথচ নারী হিসাবে নিজের হীনমন্যতা কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আসল কর্তব্য হচ্ছে, পুরুষকে তথাকথিত ‘পুরুষত্ব ভাঙ্গা, পুরুষকে তার প্রাসাদ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনা এবং প্রমাণ করা যে শুধু পুরুষের শরীর আছে বলে সে নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ এই বোগাস অহংকার পরিত্যাগ করতে হবে।
তালিকা ইচ্ছে করলে আরো বাড়ানো যায়, সেটা বলাই বাহুল্য।
- এরিষ্টটল মনে করতেন নারী হচ্ছে নষ্ট পুরুষ। এই কারণে যে নারীর মধ্যে আত্মা বলে কোন পদার্থ নেই। যেমন নেই দাসদের। শারীরিক কারণেই নারীর বুদ্ধি মগজ কিছু থাকতে পারে না। ফলে নারী কোন সিদ্ধান্ত নিতেও অক্ষম। পুরুষ যেহেতু শারীরিকভাবে শ্রেষ্ঠ অতএব পুরুষের জন্মই হয়েছে শাসক হবার জন্য আর পুরুষদের দ্বারা শাসিত হওয়াই নারীর নিয়তি। নারী পুরুষের ভিন্নতার মধ্যে এমন কিছু নেই যাতে পুরুষ ক্ষমতাবান আর নারী অবলা। ক্ষমতা যদি শরীর দিয়ে প্রমাণ হয় তাহলে হাতি নিশ্চয়ই পুরুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী।
- ধরে নেওয়া যাক্- নারী বিনা প্রতিবাদে কোন সংগ্রাম ছাড়া এটা মেনে নেয়। এটা মারাত্মক ভুল এবং সবচেয়ে দয়ালু পুরুষতন্ত্র ও ইতিহাসে রচনার সময় এই ভুল করে।
- পুরুষতন্ত্রের পরিবর্তে যদি কোন দিন নারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে হয়ত এ রকম হতে পারে- নারীর পরিবর্তে পুরুষই হতে পারে ভোগ্যবস্তু। কিন্তু সেও কি কোন ও কাম সভ্যতা? ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লায় কোনও একদিকে ওজনটা অসম্ভব ভারী থাকুক- আমরা কি সেটাই চাই? ‘পুরুষতন্ত্রের পরিবর্তে নারীতন্ত্র নয়; প্রতিষ্ঠিত হোক মানবতন্ত্র- এই কি আমাদের একান্ত অভীপ্সা নয়? নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষকে যেন পায় বিষয়ীর সম্মান। সব জাতির সব শ্রেণীর মানুষ।
.
দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বোথা সরকারের প্রতি আহ্বান এবং দৃপ্ত অঙ্গীকার
আমরা বোথা সরকারকে আহ্বান করছি তিনি হিংসার পথ পরিহার করুন। আমরা তাঁকে আহ্বান করছি জাতি বৈষম্যের তিনি সম্পূর্ণ মূলোৎপাটন করুন। আমরা তাঁকে আহ্বান করছি- জনগণের সংগঠন ‘আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেস’ এর প্রতি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন।
আমরা তাঁকে আহ্বান করছি- জাতি বৈষম্যের প্রতিবাদের জন্য যাঁদের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে তাঁদের সকলকে মুক্তি দিন, যাদের নিষিদ্ধ অথবা নির্বাসিত করা হয়েছে তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে আদেশ প্রত্যাহার করুন। আমরা আহ্বান করছি স্বাধীন রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রতিশ্রুতি দিন, যার ফলে জনগণ নির্ধারণ করতে পারে তাদের শাসন ব্যবস্থার রূপ কী হবে।
আমার ব্যক্তিগত মুক্তি আমার কাছে অতি প্রিয়, তার চেয়ে অধিক মূল্যবান জনগণের মুক্তি। আমি যে দিন কারাবাসে তারপর থেকে আজ পর্যন্ত বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাধীনতা প্রিয়তার ফলে নির্যাতিতও হয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের সকলের বিধবা পত্নী, সহায় সম্বলহীন শিশু, শোকার্ত পিতামাতা সবার কাছে আমি ঋণী। এই দীর্ঘ নিষ্ফল বৎসরগুলি শুধুমাত্র আমার একার নিঃসঙ্গতা ও যন্ত্রণার ইতিহাস নয়- এ তাঁদের সবার ইতিহাস।
জীবনকে আমি সকলের মতই ভালবাসি। কিন্তু আমি কোনশর্তেই আমার জন্মগত অধিকার বিকিয়ে দিতে প্রস্তুত নই, প্রস্তুত নই আমার মুক্তির আশায় জনগণের জন্মগত অধিকার বিকিয়ে দিতে। জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে এবং সেই জনগণের যে সংগঠন আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেস নিষিদ্ধ থাকবে অথচ আমার জন্য মুক্তির প্রস্তাব -এ মুক্তি প্রস্তাবের অর্থ কি? দিতে হবে তারা যতক্ষণ স্বাধীন নই, আমি কোন মুচলেকা দিতে প্রস্তুত নই, মুচলেকা দেব না। আমি জেলেই ফিরতে চাই।
- পশ্চাৎপদ দেশে এমনকি অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশেও নারী পুরুষের অধিকারের ক্ষেত্রে বাস্তবত: অনেক বৈষম্য দেখা যায়। আমাদের মতো পশ্চৎপদ দেশে এই বৈষম্য আরও অনেক বেশী।
আসলে যে সমাজে সাধারণভাবে শ্রেণীবিভাগ, বৈষম্য, শোষণ নির্যাতন থাকে, সে সমাজে নারীর ওপরও থাকে শোষণ নির্যাতন। শুধু তাই নয়, মূলত নারীর তুলনামূলক অর্থনৈতিক অক্ষমতার কারণে এ ধরনের সমাজে গুরুষের থেকে নারীর ওপরও শোষণ নির্যাতনের মাত্রা অনেক বেশী থাকে।
কাজেই নারীকে শোষণ নির্যাতন মুক্ত করতে হলে বিছিন্নভাবে শুধু নারী মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা সম্ভব নয়। নারী ও পুরুষের মুক্তি যেহেতু পৃথকভাবে সম্ভব নয় এ মুক্তি পরষ্পরের সাথে সম্পর্কিত তাই নারী ও পুরুষকে বড়লোকদের শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে দেশীয় শোষক শ্রেণী ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে একত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে 1 নারীকে বাদ দিয়ে কোন সমাজে মুক্তি আন্দোলনের সাফল্য, কোন দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কিছুতেই সম্ভব নয়। আর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হলো সমাজে পুরুষ ও নারীর সম অধিকার ঠিকমতো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের পদক্ষেপ।
সংগৃহীত- মুক্তি কোন পথে?
.
- অন্যায় অবিচার অসত্য শোষণ নির্যাতনের যে প্রতিবাদ করেনা, যে সত্য সুন্দর কল্যাণ ও ন্যায়ের পাশে এসে দাঁড়ায় না সে কখনোই স্বাধীন মানুষ হতে পারে না। যাবতীয় অন্যায় অসভ্যের অধীনতাকে অস্বীকার করে প্রতিবাদী চেতনার বিকাশ ঘটানোই হচ্ছে স্বাধীন মানুষের মৌলিক সংজ্ঞা এবং শর্ত।
.
জাতির পিতা লারমার স্মরণে
১০ই নভেম্বর ১৯৯৫ ইং
আমি গভীর শোক, দুঃখ ও শ্রদ্ধাচিত্তে সর্বপ্রথমে স্মরণ করছি যিনি শৃঙ্খল মুক্তির মহান লক্ষ্যে অধিকার আনারের সংগ্রানে নিজেকে আত্মাহুতি দিয়েছেন সেই বীর শহীদ জুম্ম জাতির পথ প্রদর্শক মহান নেতা, জাতির পিতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে।
সেই সাথে আরো স্মরণ করছি যারা বিভীষিকাময় বর্বরতম লোম হর্ষক হত্যাযজ্ঞে দেবেন-**-পলাশ চক্রদের হাতে নির্মমভাবে ৮ জন বীরযোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন সেই হত্যাযজ্ঞের বীর শহীদদেরকে।
আমি সকল শোক সন্তপ্ত শহীদ পরিবারবর্গ ও আত্মীয় পরিজনদের সাথে সমব্যথী হয়ে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করছি।
১০ই নভেম্বর-১৯৮৩ সাল ছিল জুম্ম জনগণের এক চরম দুর্দিন। বিশ্বাসঘাতক ও জাতীয় শত্রুরা মহান নেতা এম এন লারমাকে শুধু হত্যা করেনি। তার সাথে গোটা জুম্ম জাতিকে হত্যা করার অপচেষ্টা করেছিল। কিন্তু যে ব্যক্তি একটি জাতিকে অন্ধকার থেকে তুলে এনে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকার প্রেরণা দিয়েছিল যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে যে জাতি দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছে, সে জাতি তাকে কোনদিন ভুলবে না। তাই আমাদের মহান নেতা আমাদের মাঝে না থাকলেও তার আদর্শ আজ প্রতিটি মুক্তিকামী জুম্ম জনগণের আদর্শ হয়ে রয়েছে এবং আগামীতেও থাকবে। তাই মহান নেতাকে যারা হত্যা করে গোটা জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
আজ দীর্ঘ ১২টি বছর গড়িয়ে গেছে সময়ের ঢালু সিঁড়ি পথ ধরে। প্রজন্ম গভীর শোক, শ্রদ্ধাভরে পালন করে যায় এম এন লারমার স্মৃতি। প্রতি বছর জলপাই গোষ্ঠির চিরুণী সতর্কতার মধ্যেও স্মরণ সভা হয় পর্বত চূড়ায় উপত্যকায় অববাহিকায়, শোকসভা জমে গাছ তলায় সন্তর্পনে। খালি পায়ে শ্রদ্ধা জানায় হাজার হাজার ছাত্র জনতা। শ্রদ্ধার্ঘ্যের পুষ্পপমাল্যে ভরে যায় এম এন লারমার প্রতিকৃতি। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে জেলখানা পর্যন্ত সারম্বড়ে পালিত হয় মৃত্যু বার্ষিকী, নেতার তিরোধানের বেদনাকাতর স্মৃতিগুলো নাড়া দিয়ে যায় সব জুম্ম নারী পুরুষের হৃদয়ে। নেতার মৃত্যু হয়, নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠে যুগের প্রয়োজনে। সংগ্রাম এগিয়ে যায়। নতুনের সাহসী পাদশব্দে জেগে উঠে আন্দোলনের রাঙা রাজপথ গিরিপথ। প্রতিবাদ তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হয়। হতে বাধ্য।
“আন্দোলনের প্রধান রূপ হবে গণসংগ্রাম। সংগঠনের প্রধান রূপ হবে গণসংগঠন। গণ- আয়তনে ক্রিয়াকলাপ হবে আমাদের আন্দোলন- সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য একটা বিশেষ পর্যায়ে বিশেষত পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তনের সময় অন্যান্য রূপ সামনে চলে আসতে পারে। তবে তা কখনই আন্দোলনের চরিত্রকে বর্জন করবে না। আন্দোলনের অন্যান্য রূপ স্বাভাবিক সময়ে গণসংগ্রাম ও গণসংগঠনকে ছাপিয়ে উঠতে পারবে না।’
.
তিন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে নানিয়ারচরে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত শোক সভার প্রদত্ত বক্তব্য:
তারিখ: ১৭ই নভেম্বর ’৯৫
স্থান: খেদারমারা উচচ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গন
আমি গভীর শোক, দুঃখ ও শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করছি সেই নানিয়ারচরের বীর শহীদদের যারা শৃঙ্খল মুক্তির মহান লক্ষ্যে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেদের আত্মহুতি দিয়েছেন। যারা বিভীষিকাময় বর্বরতম লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের সেনা ও বেআইনী অনুপ্রবেশকারীদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন, যারা সংগঠনের আদর্শের পতাকাকে সমুন্নত রাখতে এবং জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার কবচ স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন আমাদের চেতনাকে শাণিত করেছেন আমাদের আরো বেশী সাহসী ও উৎসর্গীকৃত প্রাণ হবার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন সেই সব বীর শহীদদেরকে।
আমি সকল শোক সন্তপ্ত শহীদ পরিবারবর্গ ও আত্মীয় পরিজনদের সাথে সমব্যথী হয়ে সংহতি ও একত্মতা প্রকাশ করছি।
সংগ্রামী ছাত্র জনতা,
আমাদের পিসিপি, পিজিপি এবং এইচ ডব্লিউ এফ এই তিন সংগঠন হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৫-৮টি বছর ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। এই বছরগুলোতে অনেক ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে সংঘটিত হয়েছে। আমরা হারিয়েছি আন্দোলনের তথা মিছিলের অনেক সাথী সহযোদ্ধাকে। ১৯৯২ সালে ১৩ই অক্টোবর ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভরদাসমনি, ৯৩ সালের মার্চে সাহসী তরুণ নীতিশ চাকমা, ৩১শে অক্টোবর ১২ বছরের কিশোরী মিস স্বপ্না রেখা চাকমা, ৯৪ সালের ১৭ই অক্টোবর জ্ঞান আলো চাকমা, ২৬শে অক্টোবর লাল রিজফ বম সহ লংগুদু, মাল্যা, লোগাং, নানিয়ারচরের গণহত্যায় হাজার হাজার নিরীহ জুম্ম নর- নারীকে আমরা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়েছি। তারাও আমাদের মত আশা আকাঙ্খা নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের স্বপ্ন দেখেছিল। শুধু কি তাই? এই সংগঠন গঠনের পূর্বে ও ১৯৮০ সালে কাউখালীর কলমপতি, ৮১ সালে মাটিরাঙ্গায়, ৮৪ সালে ভূষণছড়া, ৮৬ সালে পানছড়ি দীঘিনালা মাটিরাঙ্গা খাগড়াছড়ি, ৮৮ সালে এই বাঘাইছড়ির হিরাচর খাগড়াছড়ি সার্বোয়াতলী গণহত্যায় হাজার হাজার নিরীহ জুম্ম নরনারী শহীদ হয়েছেন। এসব গণহত্যার প্রতিবাদকারী এবং প্রতিরোধ প্রতিশোধ নেয়ার উত্তরাধিকারী সংগঠন পিসিপি, পিজিপি এবং এইচ ডব্লিউ এফ। গঠনলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আপোষহীন আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এ পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে’। এবং ‘শিয়ালের মত একশত বছর বাঁচার চেয়ে সিংহের মত একদিন বাঁচাও শ্রেয়’।
সংগ্রামী জনতা,
দেশ আজ বর্ণনাতীত অরাজকতার মধ্যদিয়ে চলছে, দুর্নীতি-দুঃশাসনে জনগণের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। জনগণের নির্বাচিত সরকার জনগণের সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশ জুড়ে আজ অন্যায় অনাচার চলছে। জনগণের এখন চরম দুঃসময়। স্বৈরশাসনের পতনের পর গণতন্ত্রের লেবাসধারী সংসদীয় গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে দেশে আরো এক নতুন ডিজাইনের স্বৈরাশাসন দিব্যি চলছে। বাংলাদেশের কথা সমগ্র বিশ্বের গণতন্ত্রমনা মানুষের জন্য এটা সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য। সমগ্র জনগণের সীমাহীন দুর্দশার জন্য আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলে সংঘটিত হলো পর পর ৩টি ধারাবাহিক গণহত্যা, ২টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ১৯৯১, ৯২, ৯৩, ৯৫- এর হত্যাকান্ড।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত বর্তমান ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের গণতন্ত্রের আচ্ছাদনে এই সাম্প্রদায়িকতার চরম বহিঃপ্রকাশ। এটা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুসৃত পূর্বতন সরকারের পদাংক অনুসরণের ধারা। যে ধারায় নিরপরাধ হাজারোধিক জুম্মকে প্রাণ দিতে হয়েছে হাজার হাজার জুম্ম পরিবারকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে, শত শত জুম্ম নারী পাশবিকতার শিকার হয়েছে, ৫০ হাজারের অধিক জুম্ম নর নারীকে দীর্ঘ কয়েক বৎসর যাবৎ বিদেশের মাটিতে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে আর সমগ্র জুম্ম জনগণ নিজদেশে গ্রামবন্দী পাড়াবন্দী হয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এহেন অত্যাচার নির্যাতন, ধর্ষণ, জেল, ভূমি বেদখল, সর্বোপরি গণহত্যার মাধ্যমে জুম্ম জাতির উচ্ছেদ ও সকল প্রকার মানবাধিকার লংঘনে ও জুম্ম জনগণের আন্দোলন থেমে থাকেনি এবং থাকবে না।
সংগ্রামী সাথীরা,
নিঃসন্দেহে আমরা কঠিন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি অসততা অনৈতিকতা অবক্ষয় দালালদের বিচরণ আমাদের সমাজ রাজনীতিকে গ্রাস করে চলেছে। সরকার ও সরকারের রক্তচক্ষুর কৌশল আমাদেরকে অনৈতিকতার শৃংখলে শৃংখলিত করতে উদ্যত। তবুও আমাদের ছাত্র রাজনীতি ছাত্র আন্দোলন ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে পারছে। এ পরিস্থিতিতে তরুণ প্রজন্মের কিছু অংশ দিশেহারা হয়েছে তারুণ্যের সৃজনশীলতা বিনষ্ট হয়ে জেলা পরিষদ ও সেনাবাহিনীর দাবার গুটি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু আমরাতো সেই ছাত্র সমাজ যারা দুঃশাসন রক্তচক্ষু সামরিক রাইফেল কামানের সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্ভীক লড়াইয়ের পরীক্ষিত সৈনিক। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়াবার সেই সাহসী যোদ্ধা। আমরাতো আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সেই অতন্দ্র প্রহরী যারা শুধু শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করেই ক্ষান্ত হইনা, নতুন ইতিহাস নির্মাণ করি। ইতিহাস নির্মাণের যে দক্ষ কারিগর হিসাবে পরিচয় বহনকারী আমাদের ছাত্র সমাজকেই আবার এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে নবতর ধারার দুর্ণিবার ছাত্র আন্দোলন।
.
স্মরণীয় স্মৃতিচারণ : এইচ ডব্লিউ এফ প্রসঙ্গ
বিজয়’দার সাথে সফর করা দিনগুলো যেন চিরদিন জাগরুক অহরহ। কয়েকদিন ঘুরার পর এখন বিষণ্ন মনে বাড়ি ফিরলাম।
ব্যাপক বাধা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দু’একজন এগিয়ে আসেন এবং বিশ দশকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি’ নামে একটি গণ সংগঠন গড়ে উঠে। যদিও এর আগে উনিশ’শ পনের সালে রাজমোহন দেওয়ানের নেতৃত্বে ‘চাকমা যুব সমিতি’ আরও পরে ১৯২৮ সালে ঘনশ্যাম দেওয়ানের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘চাকমা যুবক সংঘ’।
১৭ই নভেম্বর’৯৫ ইং রোজ শুক্রবার বাঘাইছড়ি থানা শাখার পিসিপি, পিজিপি ও এইচ ডব্লিউ এফ -এর যৌথ উদ্যোগে বিগত ১৯৯৩ সারের নানিয়ারচরের গণহত্যা দিবস। খেদারমারা মাঠ প্রাঙ্গনে উদযাপিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ী গণ পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মিঃ বিজয় কেতন চাকমা এবং এইচ ডব্লিউ এফ থেকে আমিসহ অনেক নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার মুরুব্বী বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ এলাকার ছাত্র জনতা উপস্থিত ছিলেন। উক্ত আলোচনা সভার পরের দিন আমি, বিজয়’দার আহ্বানে মহন্ত, স্মরণিকা এবং আমি মোট চারজন কাচালং এলাকার দুঃখীদের দুর্দশা জানার জন্য নেমে পড়ি। এতে প্রথমে ১৮/১১/৯৫ইং রওনা হয়ে সেদিন তুলাবানে অজয়’দার বাড়িতে ভাত খেয়ে সন্ধ্যায় মগবানে কয়েকজন মুরুব্বীর সাথে কিছু মত বিনিময় করে রাতটা বিশ্বজিৎ বাবুর (গলাছড়ি) বাড়িতে কাটলো। তারপরের দিন সুদূর বাঘাইহাটের উদ্দেশ্যে ট্রলারে উঠি যথা সময়ে (১৯/১১/৯৫ইং) পৌঁছি সে স্থানে। তারপর বাজার ঘুরার পর বাঁশের মার্কেটের অভিমুখে রওনা দেই। অনেক পায়ে হাটার পর গঙ্গারাম মুখে বাঁশের মার্কেটে পৌঁছি। তথায় কাটন্যাদের সাথে কিছু মত বিনিময় করার পর রওনা দিলে সেনাবাহিনীরা কিছু বলার জন্য আমাদের ডাকে, এবং তথায় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মতিউরের সাথে অনেকক্ষণ বিজয়’দা মতবিনিময় করার পর ট্রলার দিয়ে আবার চলে আসি বাঘাইহাট গুচ্ছগ্রামে। তাতে আমাদের সফরসঙ্গী আমরা চারজন বাদেও চিকন্যা’দাসহ সুমন আমাদের একসাথে ভাত খেলেন সেখানে। তবে চিকন্যা’দা আমাদের সফরের সময় বিস্তারিত সবকিছু বুঝিয়ে দেন। সেখানে খাওয়ার পর আবার ফিরে আসলাম মারিশ্যায়। সেখানে সন্ধ্যা হয় এবং জীবংগছড়ায় এসে আমি আর স্মরণিকা দেব’দাদের বাড়িতে রাত্রী যাপন করি। এর পরেরদিন (২০/১১/৯৫ইং) গ্রামের মুরুব্বীদের সাথে কিছু মত বিনিময় করার পর বিজয়’দা আগ্রহের সহিত আমাদের গ্রাম ঘুরে দেখলেন। আমরা জ্যোৎস্না, মহন্ত দা এবং বিজয়’দা মোট চারজন অনেক কৌতূহলে ঘুরে বেড়ালাম। অবশেষে জ্যোৎস্নাদের বাসায় দুপুরের খাবার পর বিজয়’দা এবং মহন্ত’দা কে বিদায় দিয়ে আসি।
.
তসলিমা নাসরিন হতে উদ্ধৃতি
অনভ্যাস
অনেকে বলে আগে মূল সমস্যার কথা আগে বলুন। ধর্ম নারীকে কত রকম অমর্যাদা করেছে তা জানালে লোকে বলে অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া নারীমুক্তি সম্ভব নয় সেটিই আগে বলুন। আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা বললে চলে যৌনমুক্তি ছাড়া নারীর সত্যিকার মুক্তি নেই। অযথা অন্য কথা লিখে কী লাভ, আর পুরুষতন্ত্রের প্রতিবাদ করতে গেলে লোকে পরামর্শ দেয় আসলে ধর্ম থেকে নিস্তার না পেলে নারীর স্বাধীনতার জন্য চেঁচিয়ে কোন লাভ নেই, সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী লোকেরা বলে, ছো: এইসব ফালতু কথা লিখে কেবল সময় খরচ। আসল কথা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা নির্মূল না হলে নারী কখনও মানুষ হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না।
সকলেই ভাবছে আগে একটি হতে হবে পরে আপনা-আপনি বাকিগুলো হবে। কিন্তু মাঝখানে আমারও একটি কথা আছে, সেটি হল, যে কোন অন্যায় এবং বৈষম্যের প্রতিবাদ করতে হবে। সমস্যা কোনওটি ছোট, কোনওটি বড়। কিন্তু কোনওটিই তুচ্ছ নয়। যেহেতু তুচ্ছ নয় প্রতিবাদ করতেই হবে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত। ছোট বড় সকল বৈষম্যের প্রতিবাদ আর এই প্রতিবাদ করবার দায়িত্ব আমার একার নয়- সকলের গার্মেন্টসের শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত।
এক রাবণ গিয়ে ভিন্ন রাবণ আসবে। চীন দেশের মেয়েদের পায়ে লোহার জুতো পরিয়ে রাখা হত। এর ফলে চীনা মেয়েদের পা আকারে ছোট হয়ে গেছে। সেরকম বহু বছরের শৃঙ্খল তো এখানকার নারীর মনে ও শরীরে এদের মনও তাই হয়ে গেছে মরচেপড়া। মরচে পড়া মনে নতুন ভাবনাই আসেনা। প্রতিবাদ তো দূরের কথা।
অনেকটা খাঁচার পাখির মত, না উড়তে উড়তে পাখি যেমন উড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলে, এদেশের নারীরা ও তাদের চার পাশের খাঁচা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসবার হারিয়ে ফেলেছে। অনভ্যাসে তারা প্রতিবাদের ভাষা ভুলে গেছে। আমাদের যাদের এখনও কন্ঠ রোধ হয়নি তাদের উচিত চিৎকার করা, ঘুমন্ত নারীর কানে যেন সেই চিৎকার পৌঁছে।
নারী ভোজ
প্রাচীন পৃথিবীর বিশাল অঞ্চল জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় বিচিত্র পদ্ধতিতে কুমারী বলি হয়েছে। কখনও এদের হত্যা করা হয়েছে সন্তান কামনায়, কখনও ধরিত্রীকে ঋতুমতী করে শস্যের ফলন বৃদ্ধির সংস্কারে, কখনও নদী বা জলদেবতার সন্তুষ্ঠির জন্য, কখনও মহামারির হাত থেকে গোষ্ঠিকে রক্ষা করবার আশায়, কখনও অপদেবতা প্রেতাত্মার তুষ্টিতে, কখনও যুদ্ধজয়ের জন্য।
এখনকার পৃথিবীকে আমরা আধুনিক বলি এবং মানুষকে বলি সভ্য। এখনও কি পুরুষের তৈরী ধর্ম ও বিকৃত সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদের বলি দিচ্ছেনা হয়ত জ্যান্ত পুঁতে ফেলছে না বা আগুনে পোড়াচ্ছে না কিন্তু এখনকার জীবিত মেয়েরা আর কতটা জীবন্ত? তারা এক একজন নিজেদেরই লাশ বহন করে চলছে নিজেদের ভিতর। পুরানো দিনের বলি বোধহয় এর চেয়েও কম কষ্টকর কারণ তখন নিরন্তন একটি কষ্ট বহন করে বেড়াতে হত না। মুহূর্তে মৃত্যু এবং মুহূর্তেই মুক্তি। এখন মুক্তি নেই, এখন কেবল মৃত্যুর সংগে সচল বসবাস। এও এক বিচিত্র বলি। প্রাচীন কালে বলি দেয়া কয়েকটি উদাহরণ:
গ্রীসের উর্বরতা বিবাহ এবং প্রজননের দেবী আর্তেমিস একবার আগামেমননের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তিনি প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে চাইলেন আগামেমননের কন্যা ইফজেনিয়াকে। ইফজেনিয়াকে বলি দেবার সময় আর্তেমিস অবশ্য একটি মৃগী হলি দিতে আদেশ করলেন আর ইফজেনিয়া হয়ে গেল আর্তেমিসের মন্দিরে দেবদাসী। দেবদাসী হওয়া এবং বলি হওয়ার মধ্যে আমি কোনও পার্থক্য করি না।
ট্রয়ের নৃপতি প্রিয়াসের কন্যা পলিকসেনা ছিল একিলিসের বাগদত্তা। ট্রয় ধ্বংসে একিলিসের মৃত্যুর পর প্রেতাত্মা এসে দাবি করল পলিকসেনার বলি। গ্রীকরা একিলিসের সমাধির উপর অগত্যা পলিকসেনাকে বলি দিল। প্রেতাত্মার উদ্দেশ্যেও বলি হয়। বলি অবশ্য কেবল নারীকেই দেওয়া হয়।
দুর্ভিক্ষ বা মহামারীতে এথেন্সের জনগণ এক দৈব বাণীর আদেশ মান্য করে গোরিসটাস সাইকুপস হাইনিনাইজেনন এর সমাধির উপর হেসিস্থানের কন্যাদের বলি দিত
সূত্র : অনভ্যাস ও নারী ভোজ, তসলিমা নাসরিন
.
- পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের প্রশ্নে পাহাড়ীরাও বলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা হলে আপনা আপনি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
.
“যতদিন জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন নারীদের মুক্তি হবে না। আজ বাঙ্গালী শাসকশ্রেণী আমাদের শোষণ করবে কাল ক্ষমতায় গেলে পাহাড়ি বুর্জোয়াশ্রেণী শোষণ করবে।”
— বিপ্লবী নারী মুক্তি
.
সিদ্ধার্থ চাকমার বই ‘প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম’ থেকে পার্বত্য অঞ্চলের ইতিহাসের কিছু তথ্য
তারিখ: ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৫ ইং
→ পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৮৬০ সালে।
→ ১৭৮৭ সালে বৃটিশ ইন্ডিয়া কোম্পপানী পার্বত্য চট্টগ্রাম অরণ্যাঞ্চল দখল করে।
→ ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বৃটিশ ভারতের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
→ বৃটিশ ইন্ডিয়া সরকার ১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নন্ রেগুলেটেড জেলার মর্যাদা দেয়।
→ ১৮৬০ সাল থেকে শুরু করে ১৯০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশাসন সম্পপর্কিত যে সব নিয়ম-বিধি জারী হয়েছিল, তারই সুসংহত কাঠামো ও নীতি নির্ধারক হল ১৯০০ সালের রেগুলেশন।
→ পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত ১৯০০ সালের রেগুলেশন অনুসারে শাসিত হয়।
→ পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা প্রথমবারের মত ভোটাধিকার ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে লাভ করে।
→ ১৯৭২ সালে জন্ম নেয় জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক দল ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’।
→ ১৯৫৭ সালে গঠিত হয়েছিল পাহাড়ী ছাত্র সমিতি
→ ১৯৭৩ সালে শান্তিবাহিনী গঠন।
→ ১৯৬৬ সালেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সরকারি সফরে চীনে গেলে তাঁর অবর্তমানে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন জাতীয় পরিষদের স্পীকার ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বহির্ভূত এলাকা (এক্সক্লুডেড এরিয়া)-র মর্যাদা তুলে দেন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য প্রতিবেশী জেলাগুলি আগেই নির্দেশ পেয়ে কয়েক হাজার অনুপজাতি পরিবার দু’ দিনেই পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে লুটপাট করে উপজাতিদের জমি দখল নিয়ে উপজাতিদেরই ঘরছাড়া করে।
→ ১৯৬৬ সালের ১লা মার্চ ভারতের মিজোরামের একদল মিজো বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান লালডেঙ্গা।
→ পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার সম্ভাবনা খুটিয়ে দেখার উদ্দেশ্যে সত্তর সালের ১৬ই মে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঝোপ ঝাড়ের ভেতর বসেছিল সেই গোপন সভা। সভায় উপস্থিত ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, জ্যোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয় লারমা সন্তু, অমিয়সেন চাকমা, কালি মাধব চাকমা ও পঙ্কজ দেওয়ান। সেই গোপন সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যে, উপজাতিদের সামাজিক সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার অর্জন তা সংরক্ষণ এবং বিকাশের মাধ্যমে তাদের (উপজাতিদের) অবলুপ্তি থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ও সর্ব শ্রেণীর উপজাতি সম্প্রদায় ভিত্তিক একটি আঞ্চলিক দল গঠিত হবে।
.
২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৫
২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৫ ইং রোজ শনিবার প্রথম বারের মত চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় আমাদের গ্রামে আসেন। এইদিন সন্ধ্যায় এসে রাত্রিযাপন করার পর সকালের দিকে রওয়ানা দেয়। তার সাথে ছিলেন রাঙ্গামাটি পৌরসভার চেয়ারম্যান মনিস্বপন দেওয়ান, ম্যাজিষ্ট্রেট সুপ্রিয় এবং তার স্ত্রীসহ রাজার পরিবার এবং অন্যান্য প্রজাবৃন্দ সাথে ছিলো। তাঁর সাথে রাঙ্গামাটি মহিলা কলেজের প্রভাষক রূপক খীসা ও সুশোভন চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
১৩ জানুয়ারি ১৯৯৬
একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, ‘যে কানো দেশের সামগ্রিক ও পূর্ণ বিকাশ, সারা বিশ্বের কল্যাণ ও শান্তির জন্য প্রয়োজন জীবনের ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ।’ আর সেজন্য দেশ ও সমাজ থেকে সমস্ত অশুভ চক্রান্তকে নির্মূল করতে হবে। নতুন করে সেই অমর মন্ত্র উচচারণ করতে হবে।
‘শুন হে মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।’
সেই মানুষ হিসাবে সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। বাংলাদেশের নারী সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সে প্রয়াস চালাচ্ছে। বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর বয়সকে উপেক্ষা করে এবং জাহানারা ইমাম রোগকে তুচ্ছ করে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সংগ্রহে:—চিন্তা, উর্মি রহমান
.
রোকেয়া দিবস পালন ৯ ডিসেম্বর
১৩ জানুয়ারি ১৯৯৬
এটা রোকেয়ার মৃত্যু দিবস হলেও এটা হয়ে যায় রোকেয়াকে স্মরণ করে বাংলাদেশের নারী জাগরণের নতুন দিক উন্মোচন করা। তাই রোকেয়া দিবস কেবল একজন মহান ব্যক্তিকে স্মরণ করার মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ নেই, এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে আমাদের আন্দোলনের প্রতিটি ধাপ।
আমরা দেশে বিদেশের সকল সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি যাঁরা নারীর সংগ্রামে আপোষহীন। আমরা এমন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই যেখানে নারী আর পুরুষতান্ত্রিক নিগড়ে নির্যাতিত হবে না এবং তার পরিপূর্ণ মুক্তি লাভ করার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাঁধা অপসারিত হবে।
—চিন্তা, পায়রাবন্দ ঘোষণা
শিক্ষাই মানুষকে জন্মগত জ্ঞান ক্ষমতাকে সমাজের উপযোগী করে তোলে। নারী ও পুরুষের অসম শিক্ষা এবং অবস্থানে সমাজের সকল উন্নতিকে ব্যাহত করে। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমে নারীকে আদর্শ মাতা, গৃহিনী এবং নাগরিক হিসাবে গড়ে তুললেই সমাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।
দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক-সামাজিক-ধর্মীয়-অর্থনৈতিক শোষণ-নিপীড়ন-নির্যাতনকে প্রতিরোধ করতে হলে তৃণমূল পর্যায় থেকে জনগণকে সংগঠিত করে এগুতে হবে।
একমাত্র জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে নারী সমাজের সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই প্রকৃত নারী মুক্তির পথ উন্মুক্ত হতে পারে।
—শ্ৰীমতি পল্লবী
নারী সমাজের মধ্যে যদি অধিকার সচেতনতা গড়ে না উঠে তাহলে প্রকৃত নারী মুক্তি আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে না।
নারীদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের প্রতি শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষের শুভবুদ্ধি ও সম্ভাবনা জাগ্রত করার মানসে নারী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা আন্দোলনের প্রারম্ভে মনে করা হলেও কিন্তু কালক্রমে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইহা স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে যে প্রকৃতপক্ষে নারী আন্দোলন শুধু মাত্র নারী সমাজের জন্য হতে পারে না বরঞ্চ ইহা সমগ্র সমাজের জন্যই ও সমগ্র সমাজের স্বার্থে এই আন্দোলন। অতএব, নারী আন্দোলনের সফলতা ব্যর্থতা সবই হচ্ছে সমগ্র সমাজের সাফল্য অসাফল্য।
— মহিলা সমিতি
.
তর্ক বিতর্ক অনুষ্ঠান
সর্ব প্রথম বক্তৃতার মঞ্চে আরোহন ১৯৯১ ইং- প্রসঙ্গে
২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬
বিগত ১৯৯১ ইং সালের বাঘাইছড়ি থানা ময়দানে এক বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। তখন আমি বাঘাইছড়ি উচচ বিদ্যালয়ের এস এস সি পরীক্ষার্থী ছিলাম। তখনি উক্ত মেলার উদ্যোগে এক বিতর্ক সভার প্রতিযোগিতা হয়। এতে আমিও অংশগ্রহণ করি এবং সফলতায় উপনিত হই। আজ ২৪/২/৯৬ ইং -এ পা রেখে তখনকার কথা মনে পড়ে সেই বক্তব্য এখানে লিপিবদ্ধ করলাম-
বিষয় ছিল: ‘অসির চেয়ে মসি বড়’
আমি এর পক্ষে ছিলাম। তখন থেকে পরবর্তী পর্যায়ে আমি বক্তব্যর মঞ্চে উঠা শুরু আজ অবধি। সে যাক্ সবকিছুর মূলে আমার শ্রদ্ধেয় বড়ভাই দেব প্রসাদ দেওয়ানের অবদান কিছুতেই ভুলতে পারব না। যা করছি বলছি সবই তাঁর অবদান।
অত্যন্ত বাস্তব এবং যুক্তিসংগত কারণে আজকের বিতর্কে ‘অসি থেকে মসি বড়’ এ বিষয়ে পক্ষ অবলম্বন করছি। সম্মানিত সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলী। অসি থেকে যে মসি বড় এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে তার আগে ‘অসি এবং মসি’ এ দুটি শব্দকে একটু বিশ্লেষণ করা দরকার। অসি বলতে আমরা সাধারণত বুঝি তরবারি বা তলোয়ারকে। যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে ক্ষমতা, শক্তি ও কোন কিছু ধ্বংস করার সামর্থ্য। আর মসি বলতে বুঝি কলমের কালিকে। যার সাথে যুক্ত রয়েছে মেধা বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা; অর্থাৎ সৃজনশীল এক উদ্ভাবনী শক্তি।
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দরিদ্র দেশ। আমাদের এ দেশে একটার পর একটা সমস্যা ও অভাব লেগেই আছে। খাদ্য থেকে শুরু করে শিল্পজদ্রব্যসহ নিত্য নৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় আনুসঙ্গিক জিনিস পত্র যাই বলেন না কেন সব কিছুরই সত্যিকার অভাব রয়েছে। আর এ সমস্ত (অভাব) পূরণের জন্য সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি ও শর্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণসহ আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করে থাকে। যা সম্ভব হচ্ছে অসির মাধ্যমে। পক্ষান্তরে প্রতি পক্ষের বিজ্ঞ বন্ধুদের অসি দিয়ে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া সম্ভব হতো কি? অসি দিয়ে যেমন কোন ব্যক্তিকে বশ করা যায় না, তেমনি কোন রাষ্ট্রের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় না।
অতি সম্প্রতি ইরাকের কুয়েত দখলের ঘটনা কারো অজানা নয়। ইরাক ক্ষমতা ও শক্তির জোরে ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে কুয়েত দখল করলেও ইরাককে শেষ পর্যন্ত মসি দিয়ে তৈরী জাতিসংঘের বিধিবিধানে ফিরে যেতে হলো। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল পারস্পরিক ভৌগলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি মেনে চলার। কিন্তু ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেন তার অসির জোরে কুয়েত দখল করলেও তিনি শেষ পর্যন্ত মসির কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। অতএব বিজ্ঞ বন্ধুগণ আপনারা তারপরও কি বলতে চান অসি মসির চেয়ে বড়?
মানুষ সামাজিক জীব। আমরা মানুষ আর সে জন্য আমরা সমাজের সকল রীতিনীতি নিয়ম কানুন মেনে চলি সেই সাথে রাষ্ট্রীয় অনুশাসনও মেনে চলি এবং আমাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করে থাকি। সমাজে যদি কেই অন্যের অধিকার হরণ করে কিংবা আইন অমান্য করে বা অপরাধ করে তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ আমি বলবো- বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের অধিকার আছে লাইসেন্স নিয়ে অস্ত্র রাখার। সেই সাথে সরকার কতগুলি নিয়মকানুন বেঁধে দেয় অর্থাৎ অস্ত্র খানা কি ভাবে ব্যবহার করবো তার বিধি বিধান। এ সকল বিধিবিধান অমান্য করে যদি কেউ অপব্যবহার করে তাহলে সে অস্ত্র আইন মোতাবেক শাস্তি ভোগ করবে। অর্থাৎ এখানেও অস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতেছে মসি। কাজেই প্রতিপক্ষের বন্ধুদের বলতে চাই অনর্থক তর্কের খাতিরে তর্ক না করে আমাদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলুন অসির চেয়ে মসি বড়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ শুধু মসি নিয়ে বিশ্বকবিতে পরিণত হয়েছেন। তেমনি বিদ্রোহী কবি নজরুল, সুকান্ত, জসীমউদ্দিন, হোমার, সেক্সপিয়র সহ বহু কবি সাহিত্যিক আমাদের মাঝে অমর হয়ে রয়েছেন। পক্ষান্তরে বৌদ্ধ ধর্মের জাতকে অঙ্গুলিমাল আর ইসলাম ধর্মের হোসেন হত্যাকারী সীমারের তরবারির ভূমিকা যুগে যুগে মানবতার ইতিহাসকেও করেছে পালিত আর জন্ম দিয়েছে এক কুখ্যাত কলংকজনক অধ্যায়ের।
অসি দিয়ে না পাওয়া যায় মানুষের মন। তেমনি চলেনা রাষ্ট্রের অনুশাসন। তাইতো ফিলিপাইনের মার্কোসকে দীর্ঘকাল স্বৈরশাসন কায়েম করেও শেষ বয়সে হাওয়াই দ্বীপে নির্বাসনে কাটিয়ে মৃত্যু বরণ করতে হলো। আর আমাদের এই বাংলাদেশে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারেরও পতন হলো। তাই প্রতিপক্ষের বিজ্ঞ বন্ধুগণ আরো একবার ভেবে দেখুন।
প্রবাদে বলে মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। কথাটি একেবাবে সত্য। কারণ অসি বড় জোর দু/একজন মানুষ খুন করতে পারে। আর মসি সেই হত্যাকরীকে খুনী রায় দিয়ে যাবৎজীবন পর্যন্ত কারাদন্ড দিতে পারে। আর তাই অসিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সদা সর্বত্র মসির দরকার হয়। যেমনটি শুনছিলাম গত ৯তারিখে সাড়ে ৮টায় বাংলা সংবাদে- আমেরিকা আরব রাষ্ট্রসমূহের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবকে কংগ্রেসে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ কংগ্রেসে বহু বাক বিতণ্ডার পরে মসিই ঠিক করে দেবে আমেরিকা অস্ত্র বিক্রি করবে কিনা।
আর এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর পদত্যাগ করেও তাঁকে কাজ চালিয়ে যাবার জন্য রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করেন কারণ সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হলে সমগ্র ভারত অচল হয়ে জনজীবনে দুর্দশা নেমে আসবে। সুতরাং দেখতেই তো পাচ্ছেন মসির অনুপস্থিতি একটা দেশকেও অচল করে দিতে পারে। আর পক্ষান্তরে আপনাদের অসির অনুপস্থিতি সমাজে ডাকাত আর সন্ত্রাস থেকে মানুষকে দেয় শান্তি ও নিরাপত্তা, মসীর শক্তি অসীম। আর অসির শক্তি যত বড় মরণাস্ত্রই হোক না কেন তা প্রয়োগ করার আগে সংসদের অনুমতির দরকার হয়।
অনেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে উদাহরণ দিয়ে থাকেন। ক্ষমতার জোরে দেশ স্বাধীন করেছি। তাই আজকে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। কিন্তু আমি বলবো দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেও পাকিস্তানের পরাজয় ঘটেনি। পাকিস্তানের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেছে পাকিস্তানের সেনাপতি জেনারেল নিয়াজি ভারতের জেনারেল অরোরা সিং এর কাছে; আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর প্রদানের মধ্য দিয়ে। প্রতিপক্ষের বন্ধুরা এরপরও কি বলবেন? অসির চেয়ে মসি বড় নয়।
এক গল্প মনে পড়লো- একদিন এক ভদ্রলোক ঢাকাগামী গাড়িতে বসে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পাশে বসা আরো এক ভদ্রলোক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাবেন? প্রতি উত্তরে ভদ্রলোক বললেন, রাঙ্গামাটিতে।
আমাদের প্রতিপক্ষের বন্ধুদের অবস্থাও ঠিক তাই মসীর পৃথিবীতে বসে অসির গণগানে পঞ্চমুখ। আর তাই বলছি বন্ধুগণ, আরো একবার ভেবে দেখুন। সেই ভদ্রলোকের মত ঢাকা গাড়িতে উঠে রাঙ্গামাটি যাবার কথা ভাবলে সিদ্ধান্তটুকু ভুল না করলেও ঠিক করতেছেন না।
যুক্তি খণ্ডন: প্রতিপক্ষের এক বন্ধু রাম রাবণের যুদ্ধকে কথা তুলে ধরলেন। সে বন্ধুকে বলছি আপনি বোধ হয় বাল্যশিক্ষা বইটি পড়েননি। সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে, ‘বাল্মীকি রামায়ন রচনা করেন’। অর্থাৎ কিছু কিছু মাল মসলা দিয়ে কাহিনীকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান যুগে রাম লক্ষণের চাইতেও শতগুণে শক্তিশালী পারমানবিক বোমা, রাসায়নিক বোমা তৈরী হয়েছে। যা ব্যবহার করলে পৃথীবি ও ধ্বংস হয়ে যায়। আর সে সর্বত্র বোমার চাবিখানা থাকে মসি নিয়ন্ত্রক যারা অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতাদের হাতে।
যুক্তি খণ্ডন: প্রতি পক্ষের এক বন্ধু বলেছেন আদিম যুগের অস্ত্রের প্রয়োজনের কথা। আমি বলবো আদিম যুগ অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। সে যুগের মানুষ অসভ্য বর্বর ছিল। আর প্রতিপক্ষের বন্ধু বুঝি আধুনিক সভ্য সমাজের একজন হয়েও সেই আদিম যুগে ফিরে যেতে চাচ্ছেন?
যদি প্রয়োজন হয় অন্যথায় নয়
‘পাগলে কিনা বলে আর ছাগলে কি না খায়’
প্রতিপক্ষের বন্ধুরা এতই শক্তি ও ক্ষমতার প্রয়োজনের কথা বলেছেন যে, ক্ষমতা যেন সবকিছুই পাল্টিয়ে দিতে সক্ষম তাহলে বন্ধুগণ আপনাদের অসির ক্ষমতা দিয়ে দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানাতে পারবেন কি?
প্রতিপক্ষের বন্ধুরা হিটলারের কথাও তুলে ধরেছেন। আপনারা কি জানেন না? হিটলার তার সমর শক্তি দিয়ে বিশ্ব জয়ের আকাঙ্খা তাকে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে হয়েছিলো। আপনারাও কি চান হিটলারের মতন আত্মহত্যা করতে।
শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের বন্ধুদের একটা জিনিস লক্ষ্য করছি আপনারা ‘অসির চেয়ে মসি বড়’ এ বিষয়টির বিরোধিতা করে বিপক্ষে বিতর্কে এসেছেন। অথচ আজকে আপনারা অসি না এনে মসির সরঞ্জাম কাগজ ও কলম নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। এটা কি আপনাদের স্ব-বিরোধিতা নয় কি?
ধন্যবাদ সভাপতি, ধন্যবাদ সবাইকে।
.
বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্য ’৯১
বাঘাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়
১৯৯১ইং সালের আমরা যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম তাদের অর্থাৎ আমাদের বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্য । তবে সময়ের অসংকুলানের কারণে উত্থাপিত হয় নাই]
সম্বোধন: মাননীয় সভাপতি এবং আজকের এই বিদায়ী সভার আগত সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মণ্ডলী, উপস্থিত বিভিন্ন গণ্যমান্য মুরুব্বীগণ এবং আমার প্রাণপ্রিয় বাঘাইছড়ি উচচ বিদ্যালয়ের স্নেহের ছাত্র-ছাত্রী ভাই ও বোনেরা।
সময়ের চাকাটা ঘুরতে ঘুরতে ঠিক আজকে যে সময়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি যে কারণে… তাকে এক কথায় বলা যায় ‘বিদায়’। আর তাই স্বাভাবিক ভাবে বিদায়ী ছাত্র ছাত্রী আমরা যারা উপস্থিত রয়েছি তারা সকলেই এ মুহূর্তে অনুভুতির বিশালতায় মগ্ন। অনেক স্মৃতি যেখানে হাসি, আনন্দ, দুঃখ-বেদনা জাগরুক অহরহ।
আজ দীর্ঘ পাঁচ বৎসর শিক্ষা জীবনে চেনা জানা ছোট ভাই বোনদের সাথে সম্পর্ক, বিনয়ী ব্যবহার এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু শিক্ষক মণ্ডলীর কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তা একেবারেই তরতাজা। সময়, কাল, পরিক্রমার পর যথারীতি স্কুল থেকে বিদায় নেবার পালা। যা স্বাভাবিক তাই সত্য। আর এই সত্যকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে একজন বিদায়ী হয়েও।
শুধু নিয়ে যাচ্ছি স্মৃতি, রেখে যাচ্ছি স্মৃতি। স্মৃতির মহা সমারোহে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে যদি কোন সময়ে কারো সাথে কোন প্রকার অসদাচরণ করে থাকি তার জন্য। অনেকের সাথে পরিচয় বন্ধুত্ব। হয়ত কর্মজীবনে ব্যবধান আসবে। তারপরও সামাজিক দায়িত্বে যে যেখানে থাকি দেশ গড়ব সংগ্রাম নিজেদের আত্মনিয়োগ করবো। এ প্রত্যাশা থাকলো।
সবাইকে ধন্যবাদ।
.
বিদায়ী সভা কাচালং কলেজ
মূলত আমি ১৯৯৩ সনের কাচালং কলেজের এইচ এস সি পরীক্ষার্থী ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত উক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত থাকে। এবং ৯৩ সালের পরীক্ষার্থীদের বিদায়ী সম্বধনা ও দেয়া হয় নাই। ১৯৯৪ এসেও আমাদের বিদায় নিতে হয়েছে। তখনকার বিদায়ী বক্তব্য লিপিবদ্ধ করলাম-
সম্বোধন : বিদায় অনুষ্ঠানে অনেককিছু বলবার থাকলেও সহসা বলা যায় না। কারণ বিদায় শব্দটির সাথে অনেককিছু যুক্ত রয়েছে। তবে শিক্ষা জীবনের বিদায় মানে হচ্ছে স্তর পরিবর্তন। যা শিক্ষা জীবনের অগ্রগতি ও সাফল্যের সিঁড়ি বলতে পারি। আর তাই আজকের এ বিদায় হওয়ার ভয়ে বিমূর্ষ হবার পরিবর্তে উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দ উপভোগের বিষয়।
সময়ের চাকাটা ঘুরতে ঘুরতে ঠিক আজকে যে সময়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি যে কারণে … তাকে এক কথায় বলা যায় ‘বিদায়’। আর তাই স্বাভাবিক ভাবে বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রী আমরা যারা, উপস্থিত রয়েছি তারা সকলেই এ মুহূর্তে অনুভূতির বিশালতায় মগ্ন। অনেক স্মৃতি- যেখানে হাসি, আনন্দ, দুঃখ-বেদনা জাগরুক অহরহ।
প্রসঙ্গক্রমে দু’একটি কথা উল্লেখ করি, আমরা জানি আমাদের দেশ বিশ্বের দরিদ্র দেশ সমূহের মধ্যে অন্যতম। তার উপর রয়েছে সামাজিক বৈষম্য। স্বভাবতই শিক্ষা জীবন পরিসমাপ্তির পর সমাজের বিভিন্ন স্তরে কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখনি ধরা দেবে আমাদের সামনে সমাজের সঠিক চিত্র। এবং ভাঙ্গতে হবে অনেক প্রতিকূলতার সিঁড়ি। তাই ছাত্ৰ- ছাত্রী ভাই বোনেরা সামাজিক দায়িত্বে যে যেখানে থাকি দেশ গড়ব সংগ্রাম নিজেদের আত্মনিয়োগ করবো। বৈষম্য মূলক শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামোতে গড়ে উঠলেও সমাজ অ, “দের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। কিন্তু বাস্তব জীবনে কে কি দিতে পারি তার জব সময়েই দেবে। তাই আজকের ছাত্র ছাত্রী ভাই ও বোনেরা আমরা যারা ‘৯৩ এ পরীক্ষার্থী ছিলাম দুর্ভাগ্যবশত ‘৯৪ এ এসে বিদায় নিতে হচ্ছে। তাই ‘৯৩ এর হতাশা যেন ‘৯৪ এ না হয় তার জন্য উপস্থিত সবাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অধ্যয়ন কালে, চেনা জানা ছোট ভাই বোনদের সাথে সম্পর্ক বিনয়ী ব্যবহার এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু শিক্ষক মণ্ডলীর কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তা একেবারেই তরতাজা। সময় কাল পরিক্রমার পর যথারীতি কলেজ থেকে বিদায় নেবার পালা। যা স্বাভাবিক তাই সত্য। আর এই সত্যকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে একজন বিদায়ী হয়েও। বিদায়ের মূল প্রসঙ্গে এসে বলবো ‘শুধু নিয়ে যাচ্ছি স্মৃতি, রেখে যাচ্ছি স্মৃতি’। স্মৃতির মহাসমারোহে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বিদায়ী ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকে যদি কোন সময়ে কারো সাথে কোন প্রকার অসদাচরণ করে থাকি তার জন্য। পরিশেষে স্তর বিশেষ নমস্কার এবং শুভেচছা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
.
- নারী আন্দোলনকে অবশ্যই একটা গণআন্দোলন হিসেবে এগিয়ে নিতে হবে। নারীদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়রি বিছিন্ন ভাবে দেখা যাবে না। নারীর অধিকার অর্জনের অর্থ পুরুষের অধিকার খর্ব করা নয়। নারী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হবে- নারীদের সামাজিক কাজের উৎপাদনের মধ্যে টেনে আনা ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রদান করা, পারিবারিক দাসত্ব থেকে নারীদের মুক্ত করা এবং রান্নাঘর ও আতুর ঘরের অবমাননাকর কাজ ও অধীনতা থেকে মুক্ত করা।
- সত্যিকারের মনুষ্যত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত না হলে মানুষের কোন শিক্ষাই কাজে লাগে না। বরং তা মানুষকে অধ:পতনের পথেই দ্রুত টেনে নামায়। সামাজিক উদ্দেশ্য, সামাজিক দায়িত্ববোধকে অস্বীকার করে অন্যায় অসত্যের কাছে নতিস্বীকার করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হীন স্বার্থপর মনোভাবকে লালন করে কোন মানুষের মধ্যেই প্রকৃত স্বাধীনতা ও মর্যাদাবোধ গড়ে উঠতে পারে না।
- স্বাধীনতা কারো দয়ার সামগ্রী নয়, অনুদানের বিষয় নয়। এটা মানুষের মানবিক সত্তার অর্জিত অধিকার। এ অধিকার অর্জন করতে হয় ছিনিয়ে আনতে হয়।
- কোন নীতি বা আদর্শ আজকের সমাজ বিকাশের পরিপূরক এবং সমাজের বৈপ্লবিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, তা নির্ধারণ করার ভিত্তিতে তাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সামাজিক ও সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করাই হচ্ছে সঠিক রাজনীতি।
- সমালোচনা ও স্বাধীন চিন্তাধারা এই দুটি গুণ যে কোন বিপ্লবীর জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়।
- মা-ও-সেতুং যুদ্ধকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন। যথা- রণনৈতিক আত্মরক্ষা, রণনৈতিক ভারসাম্য ও রণনৈতিক আক্রমণ।
.
বৈসাবি উৎসব’৯৬ উপলক্ষে
স্থান: শিল্পকলা একাডেমী, রাঙামাটি
তারিখ: ১২ই এপ্রিল ৯৬ ইং
আয়োজনে: তিন পাহাড়ী সংগঠন
সময়ের চাকাটা ঘুরতে ঘুরতে ঠিক আজকে যে সময়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি নতুন বার্তা নিয়ে নবমন্ত্রে উজ্জীবিত করে আমাদের সামনে উপস্থিত হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ঐতিহ্যবাহী মহান জাতীয় উৎসব বৈসাবি।
শত শত দুঃখ বেদনা ও গ্লানি নিয়ে মহান জাতীয় উৎসব বৈসাবি’৯৬ উপলক্ষে আয়োজিত র্যালীতে উপস্থিত সবাইকে আমার ভালোবাসা শুভেচছা এবং সংগ্রামী অভিবাদন।
পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ এই তাৎপর্য ঘিরেই ত্রিপুরাদের বৈসুক মারমাদের সাংগ্রাই এবং চাকমারে বিঝু সংক্ষেপে বৈসাবি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সামাজিক সাংস্কৃতিক আনন্দমুখর উৎসব হচ্ছে এই বৈসাবি অনুষ্ঠান। এই মহান জাতীয় উৎসবের দিনে যুগ যুগ ধরে নিপীড়িত নির্যাতিত দশ ভাষাভাষি তেরটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে সংহতি প্রকাশ করে শেষ করছি।
.
অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগ্রামী জীবনের সহযোদ্ধা
আনন্দ প্রকাশের স্বরচিত দু’টি গান:
১
যারা রক্ত নিলো আর মৃত্যু নিলো
আর জানিয়ে গেলো ঘোষণা (২)
মোরা কথা দিলাম আর শপথ নিলাম।।
মোরা মৃত্যু দিবো জয় দিবো না।। ঐ
শোন আজ মিছিলে ঐ রণ হুংকার
শোন এদেশ আমার আর এদেশ তোমার
মোরা সেই আলোকে আলোর পথ (২)
মোরা জীবনমান দেবো না। ঐ দেখাবো ॥
জ্বালো স্বাধীনতা ঐ দীপ্ত মশাল
থাকুক ছিন্ন হয়ে যত কুয়াশার জানাইবার
যারা সেই আলোকে আলোর পথ দেখাবো
মোরা জীবন দিবো মান। (২)
২
চাকমা ভাষায় গান
মা আমার যা পরিব রাজ পদত ঐ
বুগোত থা্ক্যা গুলি মুজুঙোত … মিশিলোত্
মা তুই মানা ন গরিস
এই মাদানত পিচ্চ্যে না দাগিস ॥
ঐ মিছিল শ্লোল গানে
সংসমাজ্যা। জিদোর বানে।।
গুজুরি উদোগ রাজপথ …
বেক্কুনোত্তুন লরাপরিবো। ঐ
মা তুই সিদে ন গরিস
মন মুখে দিন কাদা
মরি যদি যেই আমি তুই অবে সেই
শহীদর মা।।
অজিৎ কদা কবং আমি
সং সমারে জগার পারি।।
নথেবং আর মু ছিলেই
উদিবং আমি বেগছোদে
দেজর মানুষ যাগে তুলিবং
‘হামান’ গরাপুরিব। ঐ
.
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম হিল উইমেন্স ফেডারেশন
গঠিত: ১৯৮৮ইং ৮ই মার্চ। মূলনীতি: শান্তি (Peace), সাম্য (Equality) প্রগতি (Progress)
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ক. বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের অবহেলিত পাহাড়ি নারী সমাজের জাগরণ ঘটানো এবং চেতনা সঞ্চার করা। সকল প্রকার নির্যাতন শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা।
খ. সমাজে সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে নারী সমাজের সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।
গ. পাহাড়ি জাতিসত্তা সমূহের গৌরবদীপ্ত ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ধারণ ও বিকাশ সাধন।
ঘ. বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু পাহাড়ী জাতিসত্তা সমূহের মাঝে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্প্রীতি ও সংহতি জোরদার করা এবং জাতীয় অস্তিত্ব নিশ্চিতকরণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নারী সমাজের সম্পৃক্তি ঘটানো।
ঙ. অবহেলিত ও অসহায় নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে যথাসাধ্য ভূমিকা রাখা।
দাবীনামা
প্রথম কেন্দ্রীয় জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন’৯৫ উপলক্ষে ঘোষণাকৃত কর্মসূচী:
২১, ২২, ২৩ শে মে ১৯৯৫ ইং
স্থান: পাওনিয়ার ক্লাব, খাগড়াছড়ি।
১. প্রত্যেক নারীর, নারী মুক্তির প্রশ্নে নিজ মত প্রকাশ করা, সংগঠিত হওয়া, রাজনীতি করা ও অর্থনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল কাজে অংশগ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২. সম্পত্তির উপর নারীর অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।
৩. সকল কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তাদের পুরুষের সমবেতন ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪. ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, শ্লীলতাহানী, এ জাতীয় নারী নির্যাতনের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নারী নির্যাতনের আশংকা দূর করতে হবে।
৬. পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবৎ নারী নির্যাতনের অপরাধীদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি প্ৰদান করতে হবে এবং সকল নারী স্বাধীনতা বিরোধী কালা কানুন বাতিল করতে হবে।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে চাকুরীরত ৩য় শ্রেণীর মহিলা কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ জেলায় বদলীর সুযোগ দিতে হবে।
৮. পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংবিধানিক গ্যারান্টিসহ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে নারীদের সমানাধিকার ঘোষণা দিতে হবে।
.
সবার স্মরণযোগ্য-
‘কোনদিন একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি
শক্তি দিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে- বিজয় লক্ষী নারী।’
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের অঙ্গীকার
আদায় করবো অধিকার।
কল্পনা চাকমা
সাংগঠনিক সম্পাদক
হিল উইমেন্স ফেডারেশন
কেন্দ্রীয় কমিটি।