কনফার্মড ব্যাচেলার

কনফার্মড ব্যাচেলার

চোখ দুটো দিয়ে আগুন ছুটছে নিলয়ের৷ মায়ের কাছে ডাইনিং টেবিলে টিফিন খেতে খেতে কথাটা শুনেই বাইকে স্টার্ট দিয়েছে ও৷ গন্তব্য সোজা শ্রেয়ার বাড়ি৷ কোন রাস্তায় গেলে শর্টকার্ট হবে সেটাই ভাবছে ও৷ শ্রেয়ার বাড়ি ওর বাড়ি থেকে খুব ধীর গতিতে হেঁটে গেলেও বারো মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়৷ সেখানে ও বাইক নিয়ে ভাবছে কি করে একসেকেন্ডে শ্রেয়ার সামনে দাঁড়াতে পারবে! মুখোমুখি জানতে চায়, সত্যিই কি শ্রেয়া এই ধরণের কথা বলতে পারে? নিলয়কে এতটা ভালো করে চিনেও কিভাবে করলো এই কাজটা? নীলচে গেটের সামনে বাইকটা স্ট্যান্ড করালো ও৷ অশোক কাকু নিশ্চয়ই এখন অফিসে বেরিয়ে গেছে৷ রুমা আন্টি বোধহয় বুটিকে আছে৷ শ্রেয়া কি ইউনিভার্সিটি বেরিয়ে গেছে না আছে… ভাবতে ভাবতেই কলিংবেল প্রেস করলো নিলয়৷ কমলা মাসি দরজাটা খুলতেই ঝড়ের বেগে জুতো না খুলেই শ্রেয়ার ঘরের দিকে দৌড়ালো ও৷ ঘরে নেই, দেখেই মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যাচ্ছিলো নিলয়ের৷ সেই সময় ভেজা চুলে বাথরুম থেকে টাওয়েল জড়িয়ে ঘরের দিকে আসছে শ্রেয়া৷ এভাবে দাঁড়িয়ে এইমুহূর্তে ওর দিকে তাকিয়ে থাকাটা নিতান্তই অসভ্যতামি, কিন্তু ওসব কিছুই মাথায় কাজ করছে না নিলয়ের৷ শ্রেয়া খুব শান্ত ভাবেই ওর দিকে তাকিয়ে বললো, আমি চেঞ্জ করে নিই, তুই ড্রয়িংয়ে বস৷

অনুরোধের সুরে কথা বলাটা শ্রেয়ার কুষ্টিতে নেই৷ জন্মলগ্ন থেকেই ও নিজেকে কুইন ভিক্টোরিয়া ভেবে নিয়ে পাবলিককে নির্দেশের ভঙ্গিতেই কথা বলে থাকে৷ নিলয়ের কাছে ওর এই আদেশের সুর নতুন কিছু নয়৷

বিরক্ত হয়ে নিলয় বললো, আমার এখুনি দুটো কথার উত্তর চাই, ব্যস৷

শ্রেয়া মুচকি হেসে বললো, ধ্যাৎ! তুই না কি একটা… বিয়ের আগে কেউ এভাবে উডবির সামনে চেঞ্জ করে বল?

রাগে নাকেব পাটা লাল হয়ে গেছে নিলয়ের৷ কিন্তু ও জানে শ্রেয়ার সামনে রাগ দেখিয়েও কোনো লাভ নেই৷ তাই বাইরের সোফায় বসেই কমলা মাসিকে বললো, এককাপ চা খাওয়াও৷ নিলয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই কমলা মাসি বললো, বউদিমনিকে খবর দেব কি? শ্রেয়া দিদি কি আবার কিছু গন্ডগোল করেছে? বউদিমনি বলতে শ্রেয়ার মা রুমা আন্টিকে ডাকার কথা বলছে কমলা মাসি৷ ইচ্ছে তো করছে রুমা আন্টিকে ডেকে আসল ব্যাপারটা বলতে, কিন্তু মেয়েটা যেহেতু ফুলনদেবীর বোন আর ঝাঁসির রানির ভাইজি… তাই রাগটা একটু প্রশমিত করেই নিলয় বললো, না থাক, আমি শ্রেয়ার সাথে কথা বলতে এসেছি৷

রানি কালারের লং স্কার্ট আর সাদা টপ পরে, ভিজে চুল না আঁচড়েই নিলয়ের কোচের হাতলে এসে বসলো শ্রেয়া৷ চুলটা ইচ্ছে করেই বোধহয় ঝাপটা দিলো, বেশ কিছু জলবিন্দু এসে পড়লো নিলয়ের সদ্য সেভ করা গালে৷ শ্রেয়ার গা থেকে সুগন্ধি সাবান আর শ্যাম্পুর গন্ধ এসে উতলা করে দিচ্ছে নিলয়ের দৃঢ়, চেষ্টাকৃত আবেগহীন মনটাকে৷ তবুও বস দয়াময় গাঙ্গুলীর কথা মতোই উতলা মনকে শান্ত করার জন্য শ্রেয়ার দিক থেকে চোখটা সরিয়ে নিয়ে দেওয়ালে ঝোলানো বিশ্বকর্মার ছবির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করলো নিলয়৷ শ্রেয়া বললো, তুই না… সত্যি পাগলরে… ওরে পাগলা আমি তোকে বিয়ে করবো বলেছি বলে কি আজ সকালেই শপিংয়ে যাবো বলেছি! যে ডেবিট কার্ড নিয়ে সাতসক্কাল আমাদের বাড়িতে চলে এলি? একদম পেসেন্স নেই তোর৷

রাগে গোটা শরীর জ্বলে যাচ্ছে নিলয়ের৷

প্রায় চিৎকার করে বললো, এসবের মানে কি শ্রেয়া? তুই জানিস না আমি মিস্টার দয়াময় গাঙ্গুলীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ৷ আমিও ব্যাচেলার থাকতে চাই ওনার মতো৷ আমিও বিয়ে না করে গোটা মহিলা সমাজকে দেখাতে চাই, তাদের ছাড়াও আমাদের চলে৷ কামনা বাসনা মুক্ত একটা জীবন কাটাতে চাই৷ আমাদের বসকে তো চিনিস, প্রায়ই উনি টিভিতে আসেন সাক্ষাৎকার দিতে৷ পুরুষ মানুষের অমন সৌন্দর্য কখনো দেখেছিস? যাকে বলে হ্যান্ডসাম৷ কম মেয়ে প্রোপোজ করেছে দয়াময় স্যারকে৷ না, উনি ওনার লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন৷ সুন্দরীদের প্রলোভনে কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি তিনি৷ আমিও ওনার উত্তরসূরী হতে চাই৷ তুই সবটা জানার পরও কি করে কাল মা-কে বলে এসেছিস, যে তোর সাথে আমার বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে, মা যেন শপিং শুরু করে? এই রসিকতার অর্থ কি?

শ্রেয়া নিলয়ের চেয়ার থেকে সরে গিয়ে সোফার সামনের চেয়ারে বসেছে৷ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে৷ কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে নিলয়ের৷ এমন দুর্বল চিত্ত হলে কি করে চলবে? এক সামান্য নারীর দৃষ্টিতেই যদি বুকের ভিতর এমন কালবৈশাখী ওঠে তাহলে আর দয়াময় স্যারের শিষ্য কি করে হবে?

অশোক কাকু আর নিলয়ের বাবা সেই ছোটোবেলার বন্ধু৷ তাই দুই পরিবারের মধ্যে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বহুদিন ধরেই৷ নিলয়ের বাবা রবিন ঘোষ আর মা সুদীপা দেবী তো নিলয়ের থেকে বেশি ভালো শ্রেয়াকেই বাসেন৷ কথায় কথায় সুদীপা দেবী নিলয়কে শোনান, শ্রেয়ার মতো মেয়ে নাকি লাখে একটা পাওয়া যায়৷ রবিন বাবুও রেগুলার মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরে চিরতা ভেজানো জলটা খেয়েই তেঁতো মুখে বলেন, আমাদের কুম্ভকর্ণ বুঝি এখনো ঘুমাচ্ছে? ওদিকে আমার সোনা মেয়েটাকে দেখো গে যাও, আমি যখন পার্কে পৌঁছালাম তখন তার ওয়াক কমপ্লিট হয়ে গেছে৷ রোজ শ্রেয়ার নামে প্রশংসা শুনে শুনে ভিতরে ভিতরে একটু রাগই হয় নিলয়ের৷ কিন্তু এবাড়িতে মহারানির নামে একটা নিন্দে করেছো তো তুমি ভিলেন হয়ে যাবেই৷

শ্রেয়া নিলয়ের থেকে তিনবছরের ছোট হবে৷

বয়েসের সার্টিফিকেটে ছোটো হলে কি হবে… হাবে ভাবে এমন একটা ভাব করে, যেন নিলয় নেহাতই বাচচা৷ আজও সেই একই ভাবে মুচকি হেসে শ্রেয়া বললো, তোর মনে আছে, বাড়ি শুদ্ধু সবাই বলছিলো তোকে ভাইফোঁটা দিতে, তুইও পাঞ্জাবি পরে সামনে মিষ্টির থালা নিয়ে বসেছিলিস৷ আমি তখন বছর সাতেকের, ঘরে দরজা বন্ধ করে বসেছিলাম সারা বেলা৷ শেষে কাকু এসে বলেছিল, তুই বেরিয়ে আয় শ্রেয়া, তোকে নিলয়কে ভাইফোঁটা দিতে হবে না৷

আমি দরজা খুলে বেরিয়ে বলেছিলাম, নীল আমার দাদা নয়, আমার বর৷

তারপর থেকে স্কুল, কলেজ সব জায়গায় যে কেউ প্রোপোজ করলে আমি বলেছি, আমি এনগেজড৷

য়োর এক তরফা কথাগুলো শোনার পর নিলয় বললো, সে তোর একপেশে প্রেম নিয়ে তুই থাকতেই পারিস৷ আমি তোকে ভালোবাসি না, তাই বিয়ের কথাও উঠছে না বুঝলি?

শ্রেয়া নিলয়ের চুলটা ঘেঁটে দিয়ে বললো, কেন রে… ব্যাচেলার থাকলে বুঝি তোকে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার দেবে?

শ্রেয়ার এই এক দোষ, কোনোমতেই নিলয়ের কথাকে সিরিয়াসলি নেবে না৷

তবুও নিজের মাথা থেকে শ্রেয়ার হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো নিলয়৷ দেখ শ্রেয়া, তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ঠিক আছে, কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরানোর জন্য তুই যদি আমার মায়ের সাথে হাত মেলাস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷

নিলয় বেরিয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই৷ শ্রেয়া পুরোনো অ্যালবামের পাতায় চোখ রেখেছে৷ যদিও রঙিন ছবিগুলো একটু একটু করে বেরঙিন হতে বসেছে৷ তবুও নিলয়ের সাথে কাটানো সব মুহূর্তগুলোই শ্রেয়ার কাছে আজও সমান ভাবে উজ্জ্বল৷ এই ছবিটাতে নিলয়ের বার্থ ডে পার্টি চলছে৷ শ্রেয়ার হাতে ছুরি৷ নিলয়ের জন্মদিনের কেক সবসময় শ্রেয়া আর নিলয় দুজনে মিলে কাটতো৷ একবার নিলয় বলেছিলো, কেন ও আমার বার্থ ডে কেক কাটবে? আমি কি ওর জন্মদিনের কেক কাটি? শ্রেয়া প্রথমে ঠোঁট ফুলিয়েছিলো তারপর বলেছিল, বেশ আমি কাটাবো না৷

টেবিলে কেক সাজানোর পর দেখা গিয়েছিলো, কেকটা আগে থেকেই কেটে পিস পিস করা আছে৷ সেই থেকেই নিলয় শ্রেয়াকে ভয়ে ভক্তি করে৷ ও খুব ভালো করে জানে, নিলয়ের সব কিছুতে জোর খাটানোটা শ্রেয়ার একটা চূড়ান্ত বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷ নিলয় যেন ওর একান্ত নিজের সম্পত্তি৷ আবার নিলয়ের এই ভীতু ভীতু স্বভাবের জন্য রাস্তায় বেরোলে রাস্তার কুকুর তাড়িয়ে নিলয়ের উপকারও করেছে বহুবার৷ দুর্গাপুজোর সময় নিলয়ের হাত থেকে ফুলঝড়ি নিয়ে চকলেট বোম ফাটিয়ে ওকে চমকেও দিয়েছে শ্রেয়া৷ পারতপক্ষে শ্রেয়াকে একটু এড়িয়েই চলে ও৷ তবুও ওই মেয়ে কিছুতেই ওর ঘাড় থেকে নামবে না৷

ছবিতে ছোট্ট নিলয়ের গালটাতে হাত বুলিয়ে শ্রেয়া বললো, মিস্টার ব্যাচেলার! তোমার উইকেট যদি আমি ডাউন করতে না পারি তাহলে আমার শ্রেয়া নামটা পাল্টে আমি হেরোমনি রেখে দেব৷

 মিস্টার দয়াময় গাঙ্গুলীর একটা ফ্যান ক্লাবও আছে৷ সেখানে নিলয়ের মতো আরো গোটা ছয়েক ছেলে জড়ো হয়েছে৷ যারা ওনার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কনফার্মড ব্যাচেলার মুকুট পরতে চায়৷ শ্রেয়া অনেক বুঝিয়েছে, সময়ে বিয়ে না করলে পরে আফসোস হবে৷ কিন্তু নিলয়টা এমনই গামবাট যে কিছুতেই বুঝবে না৷ ও যে শ্রেয়াকে ভালোবাসে সেটাও স্বীকার করতে নারাজ৷

শ্রেয়ার জ্বর হলে বা শরীর খারাপের খবর পেলেই অফিস থেকে বাড়ি না ফিরে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেও শ্রেয়ার পছন্দের মোমো হাতে এসে হাজির হয় ওর বাড়িতে৷ এগুলো শুধু বন্ধুত্ব নয়, তার থেকেও আরেকটু বেশি… এটাই বা কে বোঝাবে ওই মাথামোটাটাকে! সরস্বতী পুজোর দিনে শ্রেয়ার দিকে পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা খারাপ নজরে তাকিয়েছিলো বলে ওদের সাথে মারামারি করে নিলয় নিজের নাক ফাটিয়েছিলো, সেটাও কাইন্ড অফ পোজেসিভনেস৷ ইউনিভার্সিটি থেকে কাঠফাটা দুপুরে বাড়ি ফেরার বাস নেই দেখে, পরীক্ষা করার জন্যই নিলয়ের অফিসে ফোন করেছিল শ্রেয়া৷ প্রথমে নিলয় বলেছিলো, বাস নেই তো ট্যাক্সি ডেকে নে…

শ্রেয়া বলেছিলো, টাকা নেই রে৷

থাক তোকে আসতে হবে না নীল৷ আমি ছাতা ছাড়া হেঁটে চলে যাবো মাত্র আট কিলোমিটার রাস্তা৷ নিলয় বলেছিলো, তাহলে হাঁটা শুরু করে দে৷

আধঘণ্টা পরে ইউনিভার্সিটির গেটে নিলয়ের গ্রে কালারের বাইকটাকে দেখতে পেয়েছিলো শ্রেয়া৷

বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে বলেছিলো, বসকে না বলে অফিস থেকে বেরিয়েছি, যদি কিছু সমস্যা হয় তার দায় তোর শাকচুন্নী৷

শ্রেয়া খুব ভালো করেই বোঝে নিলয় ওকে ঠিক কতটা ভালোবাসে৷ প্রথম বুঝেছিলো তখন নিলয় পড়তো ক্লাস টেনে৷ শ্রেয়ার তখন ক্লাস সেভেন৷ শ্রেয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো রাহুল৷

টিফিন টাইমে রাহুলের সাথে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিলো শ্রেয়া৷ কোথাও কিছু নেই, হনহন করে এগিয়ে এসেছিলো নিলয়, শ্রেয়ার হাত থেকে আইসক্রীমটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো৷ স্বাদের আইসক্রিম মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে দেখে শ্রেয়া রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলো৷ নিলয় পালিয়ে যেতে যেতে বলেছিলো, বিকালে তোকে আমি দামি আইসক্রিম খাওয়াবো৷ রাহুল তোকে ড্রেনের জলের আইসক্রিম খাওয়াচ্ছে৷ হঠাৎই নিলয়ের ওপর থেকে রাগটা ছুটে গিয়েছিলো রাহুলের ওপর৷ প্রায় মারমুখী হয়ে শ্রেয়া বলেছিলো, এগুলো ড্রেনের জল দিয়ে তৈরি? ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রাহুল বলেছিলো, কই আমাদের ক্রিকেট খেলার সময় বল পড়ে গেলে ড্রেন থেকে তুলতে যাওয়ার সময় তো আশেপাশে কোনো আইসক্রিম কাকুকে কখনো দেখিনি যে তারা বালতি করে জল তুলছে৷

বেশ কিছুটা বড়ো হয়ে শ্রেয়া বুঝেছিলো, ওটা নিলয়ের পোজেসিভনেস৷ এরকম ঝুড়ি ঝুড়ি ঘটনা প্রবাহ আছে যেগুলোকে দেখে একজন অন্ধ ব্যক্তিও বলে দিতে পারবে, যে নিলয় শ্রেয়াকে শুধু ভালোবাসে না, ভীষন ভালোবাসে৷ ধুত্তোর! বলে অ্যালবামটা ছুঁড়ে রেখে দিলো শ্রেয়া৷ অপমানের একটা লিমিট আছে৷ দিনের পর দিন এভাবে ওর ভালোবাসাকে কিছুতেই অপমান করতে পারে না নিলয়৷ শ্রেয়ার মা-ও বলেছেন, দেখ শ্রেয়া নিলয় যখন তোকে বিয়ে করতে চায় না তখন এভাবে ওকে প্রেসার দেওয়াটা বড্ড অসম্মানের৷ আমরা তোর অন্যত্র বিয়ে ঠিক করবো৷

আজকের নিলয়ের মুডটা দেখে শ্রেয়াও ডিসিশন নিয়েই ফেললো, এবার নিলয়কে শিক্ষা দেবার মতোই কিছু করা দরকার৷

স্কুল কলেজে ওকে সবাই দেবী চৌধুরানী, ফুলনদেবী এসব নামে ভূষিত করেছে৷ সেই শ্রেয়া কিনা ওর প্রাপ্ত নামের গায়ে কলঙ্ক ছেটাচ্ছে ওই গামবাট নিলয়ের জন্য! ভালোবাসার অর্থ বোঝে না যে ছেলে সে আর যাইহোক শ্রেয়ার যোগ্য নয়৷

দিনসাতেক হয়ে গেলো, নিলয়ের ফোন রিসিভ করেনি শ্রেয়া৷ রবিন কাকুর কাছ থেকে সকালে ওদের বাড়ির খবর পেলেও নিলয়ের সাথে কোনো কথাই বলে নি ও৷ এমনকী হোয়াটস আপে মজার জোকস পাঠিয়েছিল নিলয়, তার উত্তরেও স্মাইলি খরচ করেনি শ্রেয়া৷

অল্প অল্প করে মন থেকে সরানো নয়, একেবারে ঝেড়ে মুছে দেওয়ার নীতিতে ও বিশ্বাসী৷ সেই মতোই রাত একটাতেও নিলয়কে অনলাইন দেখেও মেসেজ পাঠায়নি যে, ঘুমিয়ে পর পাগল, কাল অফিসে লেট হয়ে যাবে৷ এভাবে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করেও বারবার কেন যে নিলয়ের সাথে কাটানো পুরোনো স্মৃতিগুলো দৃষ্টিপথে এসে হাজির হচ্ছে সেটাই রহস্য৷ তবুও ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার জন্যই মন দিয়ে পড়াশোনা করছে শ্রেয়া৷

সন্ধ্যেবেলা নিজের ঘরে পড়ছিলো ও… বাইরের পরিচিত গলার স্বরে মনে উথাল পাথাল হলেও জোর করে শাসন করেছে অবাধ্য মনকে৷ শুনতে পেয়েছে অতি পরিচিত কন্ঠ জিজ্ঞেস করছে, শ্রেয়া বাড়িতে নেই আন্টি? ওর স্কুটিটা দেখতে পেলাম না তো বাগানে?

মা উত্তর দিয়েছে, স্কুটিটা গ্যারেজে৷

উদগ্রীব গলায় নিলয় জানতে চেয়েছে, কেন গ্যারেজে কেন? অ্যাকসিডেন্ট?

শ্রেয়া মনে মনে বলেছে, হ্যাঁ অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে রে জানোয়ার, আমি মরে গেলেই তো তোর হাড় জুড়ায়৷

মা বলেছে, না রে নীল… কি একটা খারাপ হয়েছে৷

গলায় হাসি নিয়ে নীলের উত্তর, স্কুটির আর দোষ কি আন্টি, যা ডাকাতের পাল্লায় পড়েছে, এতদিন যে ঠিক ছিল সেটাই আমাদের ভাগ্য৷

রাগে হাত মুঠো হয়ে এসেছে শ্রেয়ার৷ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, তুই যে এতদিন আমার হাতে খুন হয়ে যাসনি সে জন্য কাকু কাকিমাকে ধন্যবাদ দিয়ে আয়৷ নেহাত ওই দেবতার মতো মানুষ দুটো তোর বাবা মা, তাই এখনও ওই পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি হাইটের শরীরটা নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে পারছিস!

মনে মনে চল্লিশ অবধি গুনে রাগকে কন্ট্রোলে এনেছে শ্রেয়া৷

তারপরেই দেখেছে পরিচিত ছায়ামূর্তি আস্তে আস্তে এগিয়ে এসেছে ওর ঘরের দরজার সামনে৷ তোলপাড় করা মনের ছায়া যেন কোনোভাবেই নিজের মুখে না পড়ে সেটা খেয়াল রেখেছে শ্রেয়া৷

ওর একেবারে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে নিলয়৷ তারপর ফিসফিস করে বলেছে, বলেছিলাম লিটারেচার নিয়ে পড়িস না, সারাজীবন দুলে দুলে পড়েই যাবি৷ আমাকে দেখ, এম. বি. এ. পড়ে আমি চাকরি পেয়ে গেলাম৷ আর তুই এখনো, সহজপাঠ শেষ করতে পারলি না৷

খুব ইচ্ছে করছিল শ্রেয়ার, সেই ছোটোবেলার মতো নিলয়ের পশ্চাৎদেশের বিশেষ জায়গায় একটা জোরে লাথি কষিয়ে দেয়, কিন্তু লোকে বলে স্বামী নাকি দেবতা, তাকে পেন্নাম না করুক, লাথি মারাটা উচিত নয়…

সেই ভেবেই নিজের উগ্র ইচ্ছাটাকে দমন করলো শ্রেয়া৷ যদিও নিলয়কে এখন আর পতিদেবতা ভাবার কোনো যৌক্তিকতা নেই৷ কারণ ও যে হারে বিয়ে করবে না বলে গোঁ ধরেছে তাতে কেউ কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না৷ নিলয়ের মা পর্যন্ত হতাশ হয়ে গেছেন৷ শ্রেয়া যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে তখন বুঝতে হবে সেটা একেবারে লস্ট কেস৷ না হলে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতাটা শ্রেয়ার ছিল৷

নিলয় সাধারণত কোনো বিপদে না পড়লে শ্রেয়ার দ্বারস্থ হয় না৷ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে৷

শ্রেয়া অপেক্ষা করছিলো, কখন নিলয় বলবে, এই শ্রেয়া বলতো এর থেকে কি করে রেহাই পাই৷ সাধারণত আই. পি. এল.-এর ম্যাচ না দেখে মায়ের সাথে মাসির বাড়ি অথবা পিসির বাড়ি যাওয়াটা কাটানোর জন্য সঠিক বুদ্ধি পেতে ও শ্রেয়ার কাছেই আসে৷ প্রতিবারই শ্রেয়ার বুদ্ধিতে কার্য সিদ্ধিও হয়েছে৷ আজও বোধহয় সেরকম কিছুই হবে, এই ভেবে কৌতূহল দমন করেই শ্রেয়া নিজের খাতায় মন দিলো৷ নিলয় অসহায় ভাবে বলে উঠলো, জানিস শ্রেয়া! আমাদের কনফার্মড ব্যাচেলারের দলটা বোধহয় ভেঙে যেতে বসেছে৷

নিজের মনের মধ্যে ফিনিক্স পাখির দাপাদাপি হচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে শ্রেয়া৷

তাও চোখ বড়ো বড়ো করে বললো, সে কি রে, কেন?

নিলয় মাথা নিচু করে বললো, আসলে মনে হচ্ছে আমাদের দলের আদর্শ, আমাদের নেতা দয়াময় গাঙ্গুলী বোধহয় প্রেমে পড়েছেন৷ সন্ধ্যের দিকে আলোচনা সভায় আর আসতে চাইছেন না৷ অফিস থেকে বেরিয়েই সোজা বাড়ি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাচ্ছেন৷ আমাদের টিমের সৌনকের ধারণা, দয়াময় বাবু এই ছেচল্লিশে এসে প্রেমে পড়েছেন৷ দিনরাত ফোনে ফিসফাস করে যাচ্ছেন৷ সৌনক নাকি দেখেছে উনি কাকে একটা প্রেমের কবিতা লিখে পাঠাচ্ছিলেন ফোনে৷

মহিলাও নাকি কবিতার মাধ্যমেই উত্তর দিচ্ছেন৷ যদিও ভার্চুয়াল প্রেম তবুও স্যারের কাছ থেকে এই ব্যবহার পেয়ে আমরা শোকস্তব্ধ হয়ে আছি৷

শ্রেয়া দরাজ গলায় বললো, তো আমার কাছে এসব বলছিস কেন? তুই কি আমার প্রস্তাবে রাজি? কিন্তু নিলয়, এখন তো আর আমি তোকে দ্বিতীয় সুযোগ দেব না রে!

নিলয় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো, কি ভাবিস নিজেকে? মোনালিসা?

আমি তোকে বিয়ে করবো বলে তোর কাছে আসিনি৷ আমি এসেছি একটু বুদ্ধি ধার করতে৷

শ্রেয়াও রেগে গিয়ে বললো, লিটারেচারের মেয়ের কাছ থেকে বুদ্ধি নিবি? ছি… এটা তো তোদের সাইন্স পড়ুয়াদের সামগ্রিক লজ্জা রে…

দপদপ পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিলয়৷

নিজের ঘরে ঢুকতেই একটা বিষণ্ণতা এসে ঘিরে ধরলো নিলয়কে৷ শ্রেয়া যেন কেমন বদলে যাচ্ছে৷ নিলয়ের প্রতি ওর ব্যবহার বদলে যাচ্ছে ক্রমশ৷ আগে রেগুলার অফিস থেকে ফেরার পর একজনের ফোন নিশ্চিত পাবে জানতো নিলয়৷ ফোনটা করেই শ্রেয়া বলতো, কি রে তোদের অফিসের রেবতী আজ কি রঙের ড্রেস পরে এসেছিল?

শ্রেয়া জিজ্ঞেস করবে বলেই, লাঞ্চ টাইমে নিলয় ভালো করে দেখে নিতো দয়াময় গাঙ্গুলীর পি. এ. কি রঙের পোশাক পরে এসেছে৷ যেদিন আমতা আমতা করে শ্রেয়াকে বলেছে, আমি দেখিনি ও কি পরে এসেছে! সেদিনই মুখ বেঁকিয়ে শ্রেয়ার উত্তর, এই তোর ব্রিলিয়েন্সি? এই তোর অবজারভেশন ক্ষমতা? কি করে যে অতবড়ো গার্মেন্টস কোম্পানির সেলসে তোকে রেখেছে?

শ্রেয়ার এই টিপ্পনি সহ্য করবে না বলেই, রেবতীর ড্রেস এবং ড্রেসের কালার ভালো করে লক্ষ্য করে নিলয়৷

যেদিন বলে, আজ তো রেবতী পিককগ্রিন কালারের একটা কুর্তি পরে এসেছিল… ব্যস অমনি শ্রেয়া মুখ গোমড়া করে বলে, তুই অফিসে কাজ করতে যাস নাকি মেয়েদের ড্রেস দেখতে? নিলয় কনফিউসড হয়ে যায়, কি বলা উচিত আর উচিত নয়৷ শ্রেয়ার জেরার সামনে পড়লে পঞ্চাশটা মার্ডার কেসের আসামিও সত্যি কথা কবুল করে ফেলবে৷ আর নিলয় তো নেহাতই ছাপোষা মানুষ৷ মাঝে মাঝে বাইক দাঁড় করিয়ে রাস্তার মাঝে নেমে পড়ে শ্রেয়া বলেছে, যা পিককগ্রিন পরা রেবতীকে নিয়ে যা তোর ছোটোপিসির বাড়িতে, আমি যাবো না৷

এই ধরনের ছোটো খাটো চাপ সামলালেও নিলয় জানতো ছোটোপিসির বাড়িতে মায়ের দেওয়া নাড়ু, বড়ি, মিষ্টির বিশাল ব্যাগটা একা নিলয়ের ওপরে ফেলে দিয়ে কিছুতেই বাড়ি ফিরে যাবে না শ্রেয়া৷

তাই চার পা এগিয়ে গিয়েও পিছন ফিরে বলতো, কি রে আগে বল, শ্রেয়া ছাড়া তুই এক ব্যাটারির টর্চও নোস, তাহলেই আমি তোর বাইকে উঠবো, নাহলে নয়৷ নিলয়কে বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে, তুইই সব, আমার চালনা শক্তি… আবার শ্রেয়া এসে বাইকের পিছনে বসেছে৷ সাময়িক রাগ কমে গেলে ওর নরম অথচ ভরসার হাতটা রেখেছে নিলয়ের কাঁধে৷ সেই ছোট্ট থেকে শ্রেয়ার প্রতিটা কথা, প্রতিটা রাগ অভিমানের কারণ নিলয়ের কাছে এতটাই পরিষ্কার যে শ্রেয়াকে ও যেন নিজের হাতের তেলোর মতোই চেনে৷ তাই কখনো শ্রেয়া রাগ করলে বিশেষ ভাবিত হয়নি৷ ও জানতো কোন রাগ ঘন্টা ছাড়িয়ে দিনে গিয়ে পৌঁছে তারপরই কমবে৷

সবই তো ঠিক ছিলো, নিলয় আর শ্রেয়ার সম্পর্কটা তো সকলেই জানতো৷ শ্রেয়াকে ছাড়া নিলয় অসম্পূর্ণ জেনেও ও যে কি করে সব ব্যাপারে এতটা নিশ্চুপ থাকতে পারছে সেটাই আশ্চর্য৷ শ্রেয়ার মতো সুন্দরী মেয়ের কি কম ভালো ছেলে জুটবে? তা না, ফালতু জেদ ধরে বসে আছে, নিলয়কে বিয়ে করবে!

মনমরা হয়েই মায়ের ডাকে খেতে বসলো ও৷

বসার পরেই বাবা বললো, সামনের সপ্তাহে দু-দিন ছুটি নিতে পারবি?

ঝড় জল যাই হোক, বাবা একাই সামলে নেয় সংসারের ঝামেলা৷ তাহলে হঠাৎ হলো কি?

নিলয় বললো, সে ছুটি নেওয়াই যায়৷ এমনিতেই আমার চারটে ছুটি জমে রয়েছে৷ কিন্তু কেন?

মা একমুখ হেসে বললো, ওরে পাগলা তোর বান্ধবীর ওই দিন আশীর্বাদ রে৷

বান্ধবী! নিলয়ের আবার কবে থেকে বান্ধবী হলো? সুজিত, কল্লোল, ধীমান এরা ছাড়া আর তো কোনো বন্ধুই নেই নিলয়ের৷ তাহলে বান্ধবী জুটলো কোথা থেকে!

নিলয়ের অবাক দৃষ্টিকে অনুসরণ করেই বাবা বললো, তুই কি কিছু জানিস না? মানে… ওহ মেয়েটা বোধহয় লজ্জা পেয়েছে৷

ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়ে নিলয় প্রায় চেঁচিয়ে বললো, এটা কি কোনো থ্রিলারের ট্রেলার চলছে নাকি? এত সাসপেন্স-এর কি আছে?

মা ঘাবড়ে গিয়ে বললো, রেগে যাচ্ছিস কেন৷ সামনের বুধবার আমাদের শ্রেয়ার আশীর্বাদ রে৷

তোর অশোক কাকু একা মানুষ, আমরা না থাকলে কে সব করবে?

প্রিয় মটর পনিরটা বিস্বাদ ঠেকছিল নিলয়ের জিভে৷ অথচ এ বাড়িতে একমাত্র ওর ফেবারিট বলেই রুটির সাথে মটর পনির বানানো হয়৷

নাড়াঘাঁটা করেই অর্ধেক খাবার ফেলে উঠে গেলো ও৷ ঘরে যেতে যেতেই শুনতে পেল, মা বাবাকে বলছে, বুধবারই যাহোক কিছু একটা করো৷ শ্রেয়ার সাথে কথা বলে ওই বুড়োর চক্কর থেকে…

শ্রেয়া কি তবে কোনো বয়স্ক মানুষকে বিয়ে করেছে? ধুত্তোর, কি সব এলোমেলো ভাবছে নিলয়৷

এতক্ষনে শ্রেয়ার ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তনটার অর্থ বুঝতে পারলো নিলয়৷ ওইজন্যই ইদানীং ওর ফোন রিসিভ করছে না, হোয়াটস অ্যাপে অ্যানসার নেই… নতুন সম্পর্কে জড়ালে বোধহয় এভাবেই পুরোনোকে ভুলে যেতে হয়৷ মা যখন বললো, বান্ধবী… সত্যি বলতে কি নিলয়ের একবারও শ্রেয়ার নাম মাথায় আসেনি৷ তার বোধহয় একটাই কারণ, নিলয় শ্রেয়াকে কোনোদিন শুধু মাত্র বান্ধবী ভাবেই নি৷

নিজের মনকে বারবার প্রশ্ন করেছে নিলয়, শ্রেয়া তাহলে ওর কে?

বারংবার একটাই উত্তর পেয়েছে… ওর বেঁচে থাকার শক্তি৷ ওর অনাবিল হাসির উৎস৷ ওর সব দুষ্কর্মের সাক্ষী৷ ওর সব আনন্দের একমাত্র ভাগীদার শ্রেয়া৷ শ্রেয়া যে শুধু ওর বান্ধবী নয় সেটা আরও পরিষ্কার হলো, শ্রেয়া অন্য কারোর হয়ে যাচ্ছে শুনে নিলয়ের হূদপিণ্ডের রক্তক্ষরণ-এর মাত্রা বেড়ে গেছে দেখে৷

করবো কি করবো না ভেবে ফোনটা করেই ফেললো শ্রেয়াকে৷ ফোনটা রিসিভ করেও নিশ্চুপ ওপ্রান্ত৷ এটা ওর চিরপরিচিত শ্রেয়া নয়৷ যে ফোন ধরেই বলবে, যাক তুই তাহলে এখনও যমের অরুচিই আছিস৷ জানতাম, আমার এ জীবনের সমাপ্তি তোর কাছেই ঘটবে রে নীল৷ বল… এই ছিল শ্রেয়ার অ্যাটিটিউড৷ আজ মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ রয়েছে ফোনের অন্যপ্রান্তে৷

শুধুই পরিচিত নিঃশ্বাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে৷

শুরুটা আজ নিলয়কেই করতে হবে৷

কি রে তোর কি খুব তাড়াতাড়ি ছিল বিয়ে করার?

প্রশ্নটা করেই কেমন একটা বিসদৃশ ঠেকলো নিজের কানেই৷

শ্রেয়া বললো, বাপি মা চাইছে, তাই আর অমত করি নি৷ তাছাড়া তুই সেদিন বাড়ি বয়ে যেভাবে অপমান করে গেলি তারপর…

অভিমান চুঁইয়ে পড়ছে নিলয়ের গলায়৷ ওহ, আজকাল তাহলে আমার কথাতেও তোর মান-অপমান হচ্ছে কি বল?

এতদিন তো শুনতাম, আমার মতো গামবাটের কথাকে তুই জাস্ট ইগনোর করিস৷

দীর্ঘশ্বাসটা গোপন করার ব্যর্থ চেষ্টা করেই শ্রেয়া বললো, না রে ভেবে দেখলাম, আর তাছাড়া রবিন কাকুও বললো, নিলয় যখন চিরকুমার থাকতে চাইছে তখন তুই কেন ওর সেই ব্রতটাকে ভাঙতে চাইছিস!

দেখ নীল, যতই মারামারি ঝগড়া করি না তোর সাথে, আসলে কিন্তু আমি সারাজীবন তোর ভালোই চেয়েছি রে৷

তুই যেদিন এম. বি. এ.-তে দারুন রেজাল্ট করেছিলি, সেদিন আমি আমার সব বন্ধুদের ট্রিট দিয়েছিলাম রে৷ বিশ্বাস কর, আমি আজও তোর ভালোই চাই৷

কি মনে করে শ্রেয়া! নিলয় জানে না যে শ্রেয়া ওর ঠিক কতটা ভালো চায়! এটাও কি এখন ওকে এক্সপ্লেইন করে বোঝাতে হবে নাকি!

ফোনটা রেখে দিয়েছে শ্রেয়া৷ বুধবার ওদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করতেও ভোলেনি নিলয়কে৷

মনের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ওর৷ নিজের বাবা যে কি করে এমন শত্রুতা করতে পারে সেটাই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল নিলয়৷ বাবার ওই ‘নিলয়ের ব্রত ভাঙছিস কেন শ্রেয়া?’ কথার জন্যই বোধহয় শ্রেয়া এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো৷

অফিসে ঢুকতেই সৌনক ইশারায় ডাকলো ওর টেবিলে৷

ওদের কনফার্মড ব্যাচেলার সমিতির সকলেই প্রায় উপস্থিত৷ একমাত্র ওদের বস আর এই সমিতির নেতা মিস্টার দয়াময় গাঙ্গুলী ছাড়া৷

সৌনক বললো, স্যার নাকি গতকাল বলেছে, বুধবার ওনার জীবনে একটা ভাইটাল ডে৷ হয়তো এই ছেচল্লিশ বছর বয়সে ওনার জীবনে বসন্ত এসে করাঘাত করছে৷ তাই এই চিরকুমার সমিতির সভাপতির পদটা উনি নির্দ্ধিধায় নিলয়কে দিয়ে গেলেন৷ রাগে জ্বলে উঠলো নিলয়… গালাগাল দিয়ে বললো, এই বসের জন্যই আজ ওর শ্রেয়া অন্যের হয়ে যেতে বসেছে৷ দয়াময় গাঙ্গুলী নিজে প্রেমে মশগুল হয়েছে নিলয়ের ছোটোবেলার প্রেমটাকে ঘেঁটে দিয়ে৷

শ্রেয়া যখন বলছিলো, জানিস নীল, ছেলেপক্ষ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, আমি কাউকে ভালোটালো বাসি না তো?

তখন ভালোবাসি না এই কথাটা বলতে আমার মতো মোস্ট টকেটিভ মেয়ের সময় লেগেছিলো পাক্কা আধঘণ্টা৷ তাও আমি খুব কম সময়েই উত্তর দিয়েছি কি বল?

আমাদের গতো পনেরো বছরের সম্পর্ককে অস্বীকার করতে এটুকু সময় তো লাগবেই, কি বল!

প্রশ্নটা শুনেই নিজের অজান্তেই দু-চোখ জলে ভরে গিয়েছিলো নীলের৷ ফোনের অন্যপ্রান্তে সেটা কি বুঝতে পেরেছিলো শ্রেয়া!

পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হয়েছে ওর শ্রেয়াকে, উত্তর দিতে হয়েছে কিছু নিতান্ত অবান্তর প্রশ্নের৷ সত্যিই বাবা ঠিকই বলে নিলয় একটা ওয়ার্থলেস!

এই দয়াময় গাঙ্গুলীর ব্যাচেলার ক্লাবে কেন যে জয়েন করতে গিয়েছিল! এই লোকটার জন্যই সব হলো৷

নিজের টেবিলে বসেই খেয়াল করলো, স্যার অফিসে ঢুকলেন৷ কোনোদিকে না তাকিয়েই মিস্টার গাঙ্গুলীর কিউবে ঢুকে পড়লো নিলয়৷

সোজাসুজি তাকিয়ে প্রশ্ন করলো এসবের মানে কি?

আপনি নাকি প্রেমে পড়েছেন৷ ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ির ফাঁক দিয়ে হালকা হেসে উনি বললেন, প্রেমে নয় বলো কবিতার প্রেমে পড়েছি৷ আসলে কি জানো নিলয়, এই ভদ্রমহিলা অসাধারণ কবিতা লেখেন, এবং বলেন৷ উনিও আমার মতোই আধা বাঙালি, আধা সাউথ ইন্ডিয়ান৷

ফেসবুকে পরিচয়৷ আমি সাধারণত কোনো মহিলার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট নিই না৷ কিন্তু এই মহিলা লিখলেন, বন্ধুত্ব শব্দের ব্যাপ্তি কি শুধুই পুরুষে পুরুষে…

লিঙ্গভেদে বন্ধুত্ব শব্দের কোনো গুরুত্ব নেই?

বিশ্বাস করো নিলয়, আমাকে আমূল নাড়িয়ে দিয়েছিল কথাটা৷ তারপর ওনার প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলাম, কবিতার লাইন৷

দাঁড়াও তোমায় একটা কবিতা পড়ে শোনাই…

‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ৷’

‘আমরা দুজনা স্বর্গ খেলনা গড়িবো না ধরনীতে, মুগ্ধ ললিত অশ্রু গলিত গীতে৷’

‘আমারই চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ, চুনী উঠলো রাঙা হয়ে…’

নিলয় বললো, বুঝেছি স্যার, উনি দারুণ কবিতা লেখেন৷

স্যার এক মুখ হেসে বললেন, আসলে কি জানো নিলয়, আমার মা সাউথ ইন্ডিয়ান হলে কি হবে, বাবা তো গাঙ্গুলী৷ তাই বাংলাটা আমি ভালো পড়তে পারি৷ যদিও আমি এতদিন কোনো কবিতার বই খুলে পড়িনি, তার একটাই কারণ কবিতা মানেই মারাত্মক আবেগ৷

আর আবেগই তোমার চরিত্রের স্খলন ঘটাবে৷

এমনকী তোমাদের বিখ্যাত পোয়েট টেগরের কবিতাও আমি পড়ি না কখনো৷

নিলয় বললো, স্যার এই মহিলা কি বলেছে যে এগুলো ওনার লেখা?

গাঙ্গুলী বেশ জোরেই বললেন, আলবাত ওনার লেখা৷ উনি ভীষণ সৎ৷

মাথা নিচু করে বললেন, যদিও আমি এখনো তাকে দেখিনি৷ তবে ফোনে গলা শুনেছি৷

নিলয় অফিস থেকে বেরোতে বেরোতেই ভাবছিল, গোটা দেশটা চোর জোচচরে ভরে গেল৷ যেহেতু শুনেছে, মিস্টার গাঙ্গুলী সাউথইন্ডিয়ায় বড়ো হয়েছে, বাংলা পড়েনি বললেই চলে, অমনি কবিগুরুর লাইন ঝেঁপে প্রেম করছে৷

এত কিছুর মধ্যেও বারবার আগামী বুধবার শ্রেয়ার লালচে শাড়ি পরা মুখটা মনের মধ্যে ভাসছে৷

শ্রেয়া নিশ্চয় লাল শাড়ি পরবে ওইদিন, খোঁপায় ফুল দেবে হয়তো৷ ওর প্রিয় জুঁইয়ের মালা৷

মনের সব দ্বিধা ঝেড়ে আরেকবার কি বলা যায়, ক্ষমা করে দে শ্রেয়া৷

আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো না৷

বড়োজোর দুটো গালাগাল দেবে, কিন্তু নিলয়কে বোধহয় অস্বীকার করতে পারবে না ও৷

মায়ের কোলের কাছে বসে আছে নিলয়৷ আচমকাই বলে বসলো মা… খুব ইচ্ছে ছিল রে, শ্রেয়া আমার বউমা হয়ে এ বাড়িতে আসুক… সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল রে!

নিলয় খুব আস্তে আস্তে বললো, মা শ্রেয়াকে ফিরে পাবার আর কি কোনো উপায়ই নেই?

আগামী কাল আশীর্বাদ, রেজিস্ট্রি… তাও চেষ্টা করে দেখ৷

কীভাবে চেষ্টা করা উচিত?

একবার কি শ্রেয়ার কাছ থেকে বুদ্ধি নেবে?

ধুর! কি সব ভাবছে নিলয়!

শ্রেয়াকে ফিরে পেতে ওর কাছ থেকে কি করে বুদ্ধি নেওয়া সম্ভব?

ওকেই যাহোক কিছু করতে হবে৷

বাবার ঘরে ঢুকলো নিলয়, বাবা ফোন নিয়ে খুঁটখাট করছে৷ নিলয়কে দেখেই বললো, কি হলো আজ পথ ভুলে আমার ঘরে?

বাবার এই চিমটি কেটে কেটে বলা কথায় অন্যদিন হলে জ্বলে যায় নিলয়৷ কিন্তু এখন ও পাঁকে পড়েছে, তাই চুপচাপ সহ্য করলো৷ নরম গলায় বললো,বাবা আমি শ্রেয়াকে বিয়ে করতে চাই৷

রবিন বাবু বিদ্রুপের সুরে বললেন, মামদো বাজি নাকি?

আগামীকাল মেয়েটার আশীর্বাদ আছে, এখন উনি এলেন বর বেশে!

কেন তোমার কনফার্মড ব্যাচেলার থাকার সিদ্ধান্তে ফাটল ধরলো কি করে?

তোমার আদর্শ মিস্টার গাঙ্গুলীরই বা কি হলো?

নিলয় বললো, তুমি বাবা না কসাই?

ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেলো নিলয়৷

শ্রেয়া ফেসবুকে আপডেট দিয়েছে, ফিলিং এক্সসাইটেড… দিয়ে নিচে একটা এনগেজমেন্ট রিংয়ের ছবি৷

নিলয়ের এই মুহূর্তে জোড়া খুন করতে ইচ্ছে করছে, এক দয়ারাম গাঙ্গুলীকে, দুই নিজেকে৷

সক্কাল সক্কাল অশোক কাকু ফোন করেছে৷ দুটো ফুলের মালা নিয়ে যেতে বললো নিলয়কে৷ এটাই বোধহয় বাকি ছিলো ওর৷ প্রেমিকার রেজিস্ট্রির মালায় গোলাপের সংখ্যা গুণে গুণে নিয়ে যাওয়া৷ অসহ্য লাগছে৷ তার মধ্যে মা আবার পাঞ্জাবি বের করে রেখেছে নিলয়ের জন্য৷ ওটা পরে যেতে হবে শ্রেয়াদের বাড়ি৷ ধুর! এসব কিছু পরবে না ও৷

গতবছর এক্সপো থেকে শ্রেয়া ওকে যে স্কাই ব্লু সস্তার টিশার্ট টা কিনে দিয়েছিল ওটাই পরে যাবে আজ৷

শ্রেয়া হয়তো বিয়ের আনন্দে সব ভুলে গেছে, কিন্তু ও যে ভোলেনি সেটাই দেখাবে ওকে৷

শ্রেয়াদের বাড়ির গেটে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে৷ ঢোকার আগেই কমলা মাসি বললো, একি নীল দাদা, তুমি আজ এই পোশাকে? পাঞ্জাবি পরো নি?

কমলা মাসিকে বলতে ইচ্ছে করছিল, কেন এই পোশাকে থাকলে তোমার দিদিমনি কি আমাকে দিয়ে তার বিয়ের লুচি পরিবেশন করাতে পারবে না?

কিছু না বলেই বাড়িতে ঢুকে পড়ল ও৷

লাল আর হলুদের কম্বিনেশনের একটা বেশ গর্জিয়াস শাড়ি পরেছে শ্রেয়া৷ কপালে লাল টিপে সম্পূর্ণ অন্য রকম লাগছে ওকে৷ চোখ ফেরাতে পারছে না নিলয়৷ আগেও তো বহুবার শ্রেয়াকে শাড়ি পরে দেখেছে নিলয়, কই এমন তো লাগেনি কখনো৷ তবে কি তখন শ্রেয়া একান্ত ওর ছিল বলেই ভালো করে লক্ষ্য করেনি, অবহেলা করেছিলো!

একবার চোখ তুলে তাকিয়েই মুখটা নিচু করলো শ্রেয়া৷ নিলয় ভাবতেই পারছে না ওকে দেখে শ্রেয়া লজ্জা পেতে পারে৷

আশেপাশে কে আছে না আছে দেখেই নিলয় বললো, শ্রেয়া আরেকবার ক্ষমা করতে পারবি না? আরেকবার সেই আগের মতো বলতে পারবি না, নীল তোকে তো আমি বিয়ে করেই ছাড়বো৷

শ্রেয়া বললো, আসলে কি বলতো, আর বলে লাভ নেই রে, এবার কাজে করতে বাধ্য হলাম৷ না বুঝেই ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে নিলয়৷

সেই সময় রুমা আন্টি এক সেট পাঞ্জাবি এনে বললো, তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নে৷ ঠাকুর মশাই এসে যাবে….

নিলয়ের মাথা আর কাজ করছে না৷ শ্রেয়ার ভাষায় অবশ্য, মাথা থাকলে তো কাজ করবে, নিলয়ের ঘাড়ের ওপরে ওটা নাকি মাথা নয়, মুন্ডু৷

যন্ত্রচালিতের মতো রুমা আন্টির কথা মতো পাঞ্জাবি পরে নিলো নিলয়৷

ঠিক সেই সময়েই রবিন বাবু বললেন, এই মামনি… এবার এই কবিতার চক্কর থেকে আমাকে রেহাই দে৷ এই দেখ গাঙ্গুলী মেসেজ করছে, ওর নাকি এখন কবিতা শুনতে ইচ্ছে করছে৷

এই কাজের বাড়িতে কোথায় এখন সঞ্চয়িতা খুঁজবো? তারপর এখন কি বসে বসে টোকার সময় আছে রে?

শ্রেয়া বললো, কাকু তুমি বলো, সঞ্চয়িতা খুলে পড়ে নিতে৷

নিলয়ের মা সুদীপা দেবীও বললেন, আমাকেও রেহাই দে… আমিও আর কথায় কথায় ওই ইল্লা, পিল্লা, হোয়াট রা… বলা লোকের সাথে এই বুড়ো বয়েসে প্রেম করতে পারবো না৷ আজ তোদের আশীর্বাদটা হয়ে গেলে ওই মিনা আম্মার অ্যাকাউন্টটা ক্লোজ করে দিস বাপু৷

নিলয় হাসছিলো, অমলিন হাসি… এসব তার মানে শ্রেয়ার বুদ্ধি! দয়াময় গাঙ্গুলী তার মানে নিলয়ের বাবা মায়ের যৌথ অ্যাকাউন্টের সাথে প্রেম করছে! বাবা সঞ্চয়িতা থেকে কবিতা টুকলি করে, মা সেগুলোকে পাঠ করে৷ আর এর মূল বুদ্ধিদাতা হলো, শ্রেয়া৷

কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি রেজিস্টারে সইটা করতে পারলেই হয়৷ যা এক খানা মেয়ের পাল্লায় পড়েছে, একে বিয়ে না করলে হয়তো ঘুমাবে নিজের বাড়িতে, ঘুম ভাঙবে দুবাইয়ে গিয়ে৷ একমাত্র বিয়ে করে নিলেই ল্যাটা চুকে যাবে, এর লিটারেচার বুদ্ধি নিয়ে আজীবন নিশ্চিন্তে চলা যাবে৷ যদিও রেজিস্ট্রিটা আজ হলো না, মাস খানেক পরে হবে৷

আশীর্বাদ, মালা বদলের পর শ্রেয়া বললো, এ যাত্রা বেঁচে গেলি৷ আসলে কি বলতো নীল, নিজের জিনিসের ওপর থেকে বিনাযুদ্ধে অধিকার সরিয়ে নেবার মতো মেয়ে আমি নই৷ ভালোবাসা চিরকালই খুব হিংসুটে, তাই আজ আমার বিয়ে অন্য কারোর সাথে হচ্ছে জেনে তুই পাগলের মতো করছিলি৷

নিলয় বললো, তোর জ্ঞান দেওয়া শেষ হলে বলিস, আমারও নির্জনে কয়েকটা কাজ করা বাকি আছে৷ এতক্ষণে দস্যি মেয়েটা লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করলো৷

পরেরদিন অফিসে ঢুকতেই, দয়াময় বাবু বললেন, বুঝলে নিলয়… দুনিয়াটা জোচচরে ভরে গেছে৷ আর ওই মিনা আম্মার অ্যাকাউন্টটা খুঁজে পাচ্ছি না৷ এমনকী ফোন নাম্বারটারও কোনো অস্তিত্ব নেই বলছে৷ মনে হচ্ছে আমার কোনো শত্রুই এভাবে আমার মনসংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলো৷

একটু মুচড়ে পড়া গলায় বললেন, আজ সন্ধ্যেতে বালিগঞ্জের চিরকুমার সভার সভাপতিত্ব করার জন্য নাকি আমন্ত্রণ পেয়েছেন দয়াময় গাঙ্গুলী৷

বাইকটা ফুল স্পিডে ছুটছে… দুদিকের সবুজ গাছপালাকে পিছনে ফেলে৷

নিলয়ের কোমরটা জড়িয়ে ধরে আছে শ্রেয়া…

হ্যাঁরে, তোদের অফিসের রেবতী আজ কি ড্রেস পরে অফিসে এসেছে রে…

নিলয় বললো, আমি শুধু আমার বউয়ের পোশাকের রংই মনে রাখি, অন্য কারোর নয়৷

শ্রেয়ার হাত দুটো আরেকটু জোরে চেপে ধরলো নিলয়ের কোমরটা৷ সত্যিই ভালোবাসা বড়ো হিংসুটে৷

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *