উনিশশো ঊনআশিতেও – ৩

চোখের ওপর ভাসে সামন্তগিন্নীর চেহারাটা।

মোটাসোটা দলদলে গয়লার গাইয়ের মত আকার। গলায় ইয়া মোটা কড়ি হার, হাতে মোটা গোলাপপাতা বালা, ওপর হাতে পালংপাতা অনন্ত। কোমরে রুপোর গোট—দেড়সেরের কম ওজন নয়। নাকে ফাঁদি নথ, কানে সার মাকড়ি।

ভর দুপুরে পাঁচটা পান, পাঁচটা সুপুরি নিয়ে এসে চুপি চুপি গছিয়ে আর্জি জানিয়ে রেখে গেল, বৃন্দের ঘরের ‘উদ্দানী চণ্ডির’ ঘটের ঠাঁই।

‘রুদ্রাণী চণ্ডী যে কোন দেবী, কোন মূর্তি তা জানে না বৃন্দে। সেই কোন অতীতে প্রথম পক্ষের দিদিশাশুড়ির কাছে শুনেছিল। এই তাদের ইষ্টদেবী। এনার নামে ঘট পিতিষ্টে করে রাখতে হবে, যে যা বাসনা জানাতে আসবে, পাঁচটা পান সুপুরি ঘটের সামনে ‘গছিয়ে’ রেখে চুপিচুপি মনের কথা ব্যক্ত করে যাবে।

‘এমারজেন্সির’ ক্ষেত্রে অবশ্য আলাদা পদ্ধতি।

তখন তো ডাক পেয়ে ছুটতে হয়। জ্বলন্ত উনুনে জল ঢেলেও।

তখন ওই ঘট পেন্নাম করেই ছুট। পরে সফল হলে মায়ের পূজো দেবে খদ্দের।

তা অসফল আর ক’বার হয়েছে বৃন্দে তার জীবনে?

এখনি চাকা ঘুরে গেছে।

ডাকই নেই, তা সফল আর অসফল।

সামন্ত গিন্নীর আর্জি, বেটার বৌকে জব্দ করতে হবে। বৌ নাকি জাহাবাজ চোপাবাজ। শাশুড়িকে মনিষ্যি জ্ঞান করে না, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। পাড়ার লোকের কাছে বলে বেড়ায় শাশুড়ি গিল্টির গহণা পরে বাহার দিয়ে বেড়ায়। কলকেতায় বোনের বাড়ি, সেখান থেকে কিনে আনায়।

…..’সোয়ামীর সোয়াগে’ দিন দিন আস্পদ্দা আরো বাড়ছে।

এই বৌকে যদি জব্দ করতে না পারত সামন্ত গিন্নী তো তার জীবনে ধিক।

কী ভাবে জব্দ করতে হবে।

তা জানে না সামন্ত গিন্নী। শুধু তার স্বামীপুত্তরের গায়ে আঁচড়টি না লাগে। আকাশে ধুলো ছুঁড়লে আপন গায়ে এসে লাগে। তাই ওইটি বাদে। অনিষ্ট যদি করতেই হয়, তা তার বাপ ভাইয়ের হোক গে।

বৃন্দে জিভ কেটেছিল।

না গো না। বিন্দে ও কম্মে নাই। মানষের পেরাণ হানির মধ্যে নাই। কেন? বিন্দের ভাঁড়ারে কি ওষুধের অভাব? এই শেকড়টুকু নে যাও, যেমন করে পারো বৌয়ের মাতার বালিশের তলায় একে দ্যাওগে, আতটুকু। অ্যাকটা আত।

সামন্তগিন্নী মুখ শুকিয়ে বলে, রেতে তো ছেলের সঙ্গে এক বালিশে মাথা মা! সোহাগের ছড়াতেই তো আছে—

‘এক বালিশ দুই মাথা, আস্তে আস্তে কয় কথা।’ তা ছেলের কিছু অনিষ্ট হবে না তো?

হলি আমি দিই?

বৃন্দে বলেছিল, শেকড়ে নাম বেঁধে থোবনি? বৌর নামডা বোলে যাও।

নাম মালতি।

মালুতি! ওঃ ফুলের নামে নাম? তাই বলি! হবেই তো। এই মেয়েছেলেরাই জাঁহাবাজ হয় মা। তুমি হিসেব নে দেকো।

তা যে যত জাঁহাবাজই হোক না কেন, বৃন্দের শেকড়ের কাছে সব ঠাণ্ডা।

শেকড়ের পরদিন থেকে বৌ আর মুখে ‘রা’ পাড়ে না। ঘাড় গুঁড়ে সংসারের কাজ করে, আর বাকি সময় আকাশ পানে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে।

ওদিক সামন্ত গিন্নীর ছেলের যেন মেজাজ গমগম। বৌয়ের দিকে সে আদরের চাউনি নেই, ছুতোয় নাতায় বৌয়ের ধারে কাছে ঘুরঘুর করা নেই। বুকটা ঠাণ্ডা সামন্ত গিন্নীর।

একজোড়া কানফুল হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, বিশ্বেস কর মা, গিল্টি না, খাঁটি গিনি ভেঙে গড়ানো। দিলাম তোমায়। তবে ছেলের এই ভাবটি যদি বরাবরের মতন বজায় রাখতে পারো, তা তোমায় রূপোর চুড়ি সেট গতিয়ে দেব।

বিন্দে তাতে রাজী হয়নি।

বলেছিল, বৌ তোমায় অমান্যি করেছেল, চোপা করেছেল মুখ ভোঁতা করে দিচি, ব্যস। দেকো আর কখনো গলা তুলি রা কাড়াবেনি। তবে চেরদিনের মতন সোয়ামী স্তীরির বেরহো বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিতে পারবনি। পাপ নাগবে। পাপ পুণ্য ধর্ম অধর্ম মেনে চলতে হয় বইকি।

তা নইলে মা উদ্দাণীর গোঁসা হবেনি?

তবে ক্ষেত্তোর বুঝে কম্মো।

মন্দ কাজেও মায়ের আদেশ নিতে হয়। পাওয়া যায় না তা নয়।

জমি নিয়ে মামলা মায়ে বৌয়ে। ত্রিভুবনে শুনেছে কেউ এমন কথা?

একমাত্র ছেলে, মা মরলে তো ছেলেরাই সব, তবু মামলাবাজি।

দু’পক্ষই চুপি চুপি এসেছে পান সুপুরি হাতে।

মা বলে, মামলার দিন ছেলে যেন পড়ে পা মচকায়, কোর্টে যেতে না পারে। এক তরফা ডিগ্রী হয়ে যাক।

ছেলে বলে, মামলার দিন মার যেন পক্ষাঘাত হয় কোর্টে যেতে না পারে। এক তরফা ডিগ্রী হয়ে যাক।

বিন্দে বলল, না, চেরকাল জানি, কুপুত্তুর যোদ্যাপি, হয়। কুমাতা কখনো নয়। তো মায়ের শরীরেই পক্ষাঘাত দ্যাও।

দিলো তো মা তাই।

অবিশ্যি খাটতে হয়েছে বৃন্দেকে। হোম যজ্ঞ, উপোস কবাস।

তবে মজা এই সেই মা মাগী কিন্তু পরে দূষলো না বৃন্দেকে। বলল, আমার কর্মফল। ভগবান হাতে হাতে দেখিয়ে দিল।…. আর আরো মজা, সেই ছেলেই মাকে এমন সেবাটা করলো, যে পাড়ার লোক ধন্যি ধন্যি করলো। মাকে তুলে ধরে নাওয়ালো খাওয়ালো সব। সেও আবার বলল, ‘পাপের প্রাচিত্তির করছি’। কত মানুষ, কত মুখ। কত চুপিচুপি সলা পরামর্শ। কত জনের কেঁদে পড়া। মেয়ে মানুষের জীবন যে বড় ছলনা বঞ্চনার। এই সব তুকতাক মারণ উচাটন বশীকরণ বিষকরণ না হলে তাদের চলবে কি করে?

স্বামী যদি অন্য মেয়েছেলেকে মন দেয়, বৌ বাঁজা বলে আবার বিয়ে করতে যায়, বছরে বছরে আঁতুড় ঘরে ঘুরে আসতে আসতে যদি দেহ ভেঙে যায়, বাচ্চা হয়ে হয়ে যদি না বাঁচে, তাদের গতি কি এই সব ছাড়া?

ডাক্তারকে বলতে যাবে?

ডাক্তারকে বলবার কথা?

তাছাড়া ডাক্তার ডাকতে হলে পুরুষের কানে তুলতে হবে না?

সকল কথা পুরুষের কানে তোলা যায়?

বৃন্দে যেন ভাবনার সূতোর গুলিটা হাত থেকে ফেলে দিয়েছে, যত ইচ্ছে গড়িয়ে যাচ্ছে সূতো খুলতে খুলতে। বড় বড় ঘরানাদের ঘরে গতায়াত ছিল বৃন্দের, কতোই দেখেছে। কত লোভ, কত পাপ, কত নিষ্ঠুরতা, কত ভণ্ডামী, কত নির্লজ্জতা। বৃন্দের কাছে অনেক ইতিহাস।

বাঁড়ুয্যে কর্তার দ্বিতীয় পক্ষের গিন্নী বৃন্দেকে এসে ধরে পড়ল, সতীনপো বৌটার যাতে জন্মের শোধ ছেলেপুলে না হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

ওমা। সি কি, জোয়ান মেয়ে, নতুন বে হয়েচে।

তা’ হোক। ওর ছেলেপুলে হলেই তো আমার ছেলের ভাগীদার হবে? তোমায় আমি অনেক টাকা দেব।

বৃন্দে বলেছিল, টাকাতো আপনি আমায় দেবে মা, বলি পরকালে জবাব দেবার ভারটি নেবে কি? এত বড় অধম্মো ধম্মে সইবে?

ছোট গিন্নী মুখনাড়া দিয়ে বলল, তুমি আর ধম্মকথা কইতে এসো না বাছা। কতলোকের কত করছো। হওয়া ছেলে মেরে ফেলতে তো বলছিনে? যাতে না হয় তারই প্রতিকার চাইছি।

মনের অগোচরে পাপ নেই, লোভে পড়ে এ যুক্তিটা নিয়েছিল বৃন্দে। সত্যি এ তো আর মানুষ খুন নয়?

তা এ ওষুধ তো বৃন্দের হাতের মুঠোয়।

কতজনকেই সাপ্লাই করছে হরদম।

‘কপাটবন্দী’ গাছের বাকল, আর ‘বিনষ্টি’ লতার মূল, ওতো ঘরে মজুতই থাকে বৃন্দের।

অদৃষ্টের ফের।

আবার একদা সেই বৌ—ই এসেছে চুপিচুপি।

স্বামী না কি কলকেতায় নিয়ে গিয়ে অনেক ডাক্তার বদ্যি করেছে, কাজ হয়নি। তো সে মানুষ নাকি মাদুলি কবচে বিশ্বাসী নয়, তাই বৌ তাকে না জানিয়ে চুপি চুপি এসেছে।

দেখে মায়া হয়েছিল বৃন্দের।

পয়সার লালসে কাজটা করেছিল খুব খারাপ। কিন্তু আর তার হাত নেই। খোদার ওপর খোদকারি বারবার হয় না।… কে জানে, কোন পাপে বৃন্দের আজ এমন দুর্দশা।

আহা ‘ভাল’ ‘মন্দ’ দুই—ই তো করেছে বৃন্দে। তবে? পাপ পুণ্যিতে কাটাকুটি হয়ে যায় না? পয়সার লোভে অনেক অকর্ম করেছে বটে, অনেক পাপ। কিন্তু যারা করিয়েছে? তারা পাপী নয়? পাপের ফল তাদের ছোঁয় না?

ওইতো বাঁড়ুয্যে গিন্নী রামরাজত্ব করে সংসার করে ড্যাংডেঙিয়ে মরে গেল। বরং সতীনপো বৌটাই দুঃখে কষ্টে থেকেছে। সন্তান নেই, স্বামীও রইল না। তারপর চলেই গেল দেশ ছেড়ে বোনের বাড়ি, না ভাইয়ের বাড়ি।

কি দিয়ে তবে বিচার? বারুইদের মেজ বৌটা?

আপনার ছেলের মাথার দোষ কাটাতে, ননদের ছেলেটাকে পাগল করে দেয় নি?

বৃন্দে তো নিমিত্ত। প্ররোচনাটা কার?

সেই মেজ বৌয়ের কত বোলবোলাও। ইস্টিশানের ধারে তার সেই ছেলের কতবড় সিনেমা হল আরো এক ছেলে কলকাতায় বড়বাজারে দোকান দিয়ে ‘লাল’ হয়েছে, মেজকর্তা এখনো জ্যান্ত। বৃন্দের তবে কিসের পাপে এতো খোয়ার?

স্বেচ্ছায় ভালকাজই কি করেনি বৃন্দে?

দুলোর বাপ তখনো বেঁচে, একদিন হাসতে হাসতে এসে বলল, জগা বাউরি তো তোর অন্নো মারবে রে।

বৃত্তান্ত কি?

না, জগা কোথা থেকে অনেক কিছু শিখে এসেছে।

জগার কী মদগর্ব। বললো, তুই তো ‘নিশিরডাক’ ডাকতে শিকিস নাই, জগা সেডা শিকেচে।

বৃন্দে বলল, শিকুক। ওতো মানুষ মারা কল।

মানুষ বাঁচানোরও।

তা হোক। ওটা মহাপাপের কাজ।

তা একদিন সেই মহাপাপের কাজ চোখে পড়ে গেল বৃন্দেরই। বৃন্দের তো রাতে ভিতেই চরা। গেছিল মাঝরাত্তিরে কলাগাছের গায়ে গুনছুচ বিঁধতে। কারু মন্দ করতে নয়, হিত করতেই। মুখুয্যে বাড়ির মেয়ের বিয়ে, মহা ঘটাপটার ব্যবস্থা। কিন্তু মেয়ে নাকি ‘বাদুল’। যদি বিয়ের রাত্তিরে বৃষ্টিতে ভাসায়, এত আয়োজন পণ্ড হবে। তখনো তো জমিদার বলে কথা আছে, ওনারাই ছিল জমিদার। রসুনচৌকি বসিয়েছে সাতদিন আগে থাকতে। বরযাত্রীরা আসবে বলে, ইস্টিশান থেকে আলোবাতির মালা। ইংরিজি বাজনা মজুত। আর খাওয়ান দাওয়ানের কথা তো বাদই দাও।

বৃষ্টি হলেই তো সব লণ্ডভণ্ড।

তাই ওই কলাগাছের গায়ে গুণছুঁচ পুঁতে ‘বিষ্টিবন্ধন’।

মাঝরাত্তিরে এলোচুলে ছুঁচ পুঁতে দিয়ে যাবে, যতক্ষণ না বৃন্দে নিজে এসে সে ছুঁচ টেনে তুলে ফেলে দেবে ততক্ষণ বৃষ্টির সাধ্যি নেই যে নাবে।

তবে গাছের এমন ঠাঁই পুঁততে হবে, যাতে কারো চোখে না পড়ে। মুখুয্যেদেরই কলাবাগান। সেখান থেকে চলে আসছে কাজ সেরে, দেখে জগা চলেছে হনহনিয়ে।

বৃন্দেকে দেখে বাঁশঝাড়ের গা ঘেঁসে ঘেঁসে হাঁটছে।

কিন্তু সেই এক লহমাতেই তো বৃন্দে যা দেখবার দেখে ফেলেছে। বৃন্দের শ্যেন দৃষ্টি। জগার হাতে একটা মুখকাটা ডাব। বাঁ হাতের তেলোয় বসিয়েছে, ডানহাতে কাটা মুখটা চেপে ধরেছে।

এলো চুল জড়াতে ত্বর সয়না, বৃন্দে ছুটে আসে। ‘কার সববোনাশ কত্তে যাচ্ছিস রে লক্ষীছাড়া?’

জগা শিউরে উঠে বলল, সববোনাশই বা কেন? সুবকাজেও। ছাড় বিন্দেদি, দাঁড়ানো চলবেনি!

বলি রক্কেটা হচ্চে কার?

নবীনবাবুর শালার মেয়ে। কলকেতা থেকে এয়েচে। ডাক্তার বদ্যি হার মেনেচে, নবীনবাবুর পরিবার তাই ভাই—ভাজকে আনিয়েচে রুগী মেয়েরে নে। সেই ছুঁলি বিন্দে দি? দোহাই তোর ছেড়ে দে। ছুঁড়িটা খাবি খেতেচে—

হুঁ। বড় দরোদ। অনেক ট্যাকা কবলেচে বোধ হয়?

তা ওগডা কী?

ওগ অক্তচোষা। শরীলের সব অক্ত ভস্মোকীটে শুয়ে নেচ্চে—

ও বাঁচবেনি।

বৃন্দের অমোঘ স্বর।

সেকতা তুই আমি বললি তো হবে না। বাঁচিয়েই ছাড়বে।

এক সন্তান?

বেটাছেলে আচে তিনটে চাট্টে, বেটিছেলে ওই এ্যাকটাই বটে। পয়সার অদিবদি নাই, বলে আজার আজত্বি দেবে, যদি মেয়ে বাঁচে। হাতডা ছাড় বিন্দে দি—

‘মেয়ে’ শুনে বৃন্দের মন থেকে অনেকখানি মূল্যবোধ ঝরে পড়েছিল, তায় আবার শুনল বেটা আছে তিন চাট্টে, বৃন্দে আরো শক্ত করল হাতের মুঠোটা।

বলল, পয়সার গরম। তাই মহাপাপেও ভয় নাই। বলি ডাবের খোলের মদ্যি করে পেরাণ পাকিটা পুরে নে যাচ্ছিস?

জগা বলতে রাজী নয়, বৃন্দেও ছাড়বে না।

শেষতক জগা বাউরি শাসাল, দণ্ডো পার হলি, কাজ হবেনি, একুল ওকুল দুকুল যাবে। বেশী ‘এ’ কল্লে ভাল হবে নি বলচি।

বৃন্দের চোখে আগুন জ্বলে উঠল।

কী বললি জগা? বিন্দেকাওরাণীকে তুই ভাল হবেনি দেকাতে এইনিচস? এক ফোঁট্টা ছেলে, এই সেদিন ও কাঁকালে ঘুনশি বেঁদে উদোম হয়ে আস্তায় ঘুত্তে দেকেচি। বিন্দেকে শাসানি? বল বলচি, কার সববোনাশ কল্লি? নইলি হাত মুচড়ি পটকে দিবো।

জগার অবস্থা বেপোট।

দুটো হাতই বন্দী। আবার সেই হাতেরই কব্জি বৃন্দের কবজায়। অগত্যা বলে ফেলতে বাধ্য হয়।

শুনে শিউরে ওঠে বৃন্দে।

অ্যাঁ কী বললি? হরিকুমোরের ওই হারামরা একমাত্তোর ছেলেডা?

জগা কাতর বচনে বলে, ওস্তাদ বলে থুয়েচে একমাত্তোর না হলি, এ কাজ হবেনি।

হবেনি। তাই তুই বড় মানসের ঘরের একটা পোকায়কাটা বাদুড়চোষা ছুঁড়ির জন্যি, ওর জলজীয়ন্তো ব্যাটাটাকে হত্যে করচিস? ভাল চাসতো, অ্যাকনো ভাবের মুক ছেড়ে দে জগা।

ছেড়ে দেব?

জগা হাপসে পড়ে।

কতো চেষ্টায় কতো সাদোনায় ঘটানু। অ্যাখোন তুই বলছিস—

বলচি।

বৃন্দে আবার অমোঘ স্বরে বলে, আমি বলচি ও মেয়ে বাঁচবেনি। আজ তুই বাঁচাবি, কাল আবার মত্তে পড়বে। অ্যাখনো সেময় আচে জগা, হরির ছেলেডার পেরাণডা ফিরিয়ে দে।

জগা তখন স্বীকার করতে বাধ্য হয়, ফিরিয়ে দেওয়ার পদ্ধতি সে জানে না।

জানে না অবশ্য বৃন্দেও।

একাজের শিক্ষাটা নেই তার। তবু শুনেছে ঢের।

তাই কড়া গলায় বলে। পেরাণডা শুধু নিতি জানলিই হয়নারে জগা, দিতি জানতিও হয়। ওই ডাবের জলটুকুন অ্যাখোন ওই কুমোরের বেটার মুকেই ঢালগে যা।

ওবাবা। আমায় পুলিশে দেবেনি?

দেবে, জেল খাটবি। না দিলি, তোরে আমি ফাঁসি দেওয়া করাবো, তা’ কয়ে আকচি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *