উড়াল – ৯

নয় – বিমল

অসম যুদ্ধ, মানুষের কোনো হাতিয়ার নেই এই পড়ন্ত বেলায়।

ফুল ফোটানো নাকি প্রকৃতির একটা গোপন কর্ম। যতই তুমি কুঁড়ির দিকে চোখ মেলে গালে হাত দিয়ে একদিকে চেয়ে বসে থাকো না কেন, কুঁড়ি লজ্জায় কিছুতেই পাপড়ি মেলবে না। একবার একটুখানি চোখটা ফিরিয়ে নাও অন্যদিকে অন্যমনস্ক হয়ে, তারপর যেই আবার তাকাবে, দেখবে, আরে। এই ফাঁকে ফুল পাপড়ি মেলে ফেলেছে খানিকটা। ঘোমটা তুলেছে। আবার হাঁ করে চেয়ে থাকো। কখন ফুল বাকিটা পেখম মেলবে বলে। আবার চুপ। ফুলও তেমনি টেটিয়া। ফুটবে না। মানুষের চোখের সামনে সে কখনোই প্রস্ফুটিত হবে না। যেই অন্যদিকে তাকাবে, তক্ষুনি ঝলমল করে ফুটে উঠবে। রানীর মতন ভঙ্গিতে হাওয়ায় মাথা দোলাবে।

মৃত্যুও তেমনি। যতক্ষণ তার পথ চেয়ে জেগে বসে থাকবে, যতক্ষণ সচেতনভাবে মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত করে রাখবে নিজেকে, ততক্ষণ তার দেখা পাবে না। যেই একটু আলগা দিয়েছো, ভেবেছো বুঝি হাতে একটু সময় আছে, ব্যাস! যতক্ষণ কেতকীর পাশে পাশে রইলাম, যতক্ষণ মেয়েটাকে আগলে আগলে ছিলাম, মৃত্যু ঘেঁষতে পারেনি। সেই একটি বেলা। আমার ইমিগ্রেশন পেপারস তৈরি করবার জন্যে উকিলের অফিসে যেতেই হলো, আর ঠিক ঐ সুযোগেই কেতকী পালিয়ে গেল।

আমাদের পাহারা ছিল না, ঐ সময়টা মালবিকা টুবলুকে খাওয়াতে, ঘুম পাড়াতে গিয়েছিল। ঘুমের মধ্যেই চলে গেল কেতকী। কোনো খবর দেয়নি, কোনো উদ্বেগ করায়নি। আগের দিনও গল্প করেছিল আমার সঙ্গে ছোটবেলার সেই ভয়ের গল্পটা। জানলায় পূর্ণিমার চাঁদ, ঘরের মধ্যে পাখা থেকে মা’র শরীর ঝুলছে। আর ও মা’র পা ধরে টানছে আর খুব কাঁদছে। মা’র মুখে আঁচল ঢাকা।

মুখটা দেখা যাচ্ছে না। দুঃস্বপ্নটা এখনও দ্যাখে, মাঝে মাঝে আঁচল—খোলা মুখটা দেখতে পায়; সেটা মা’র মুখ না, ওর নিজেরই মুখ। গতকাল রাত্রেও পূর্ণিমা ছিল, জানলার বাইরে পূর্ণ চাঁদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *