উড়াল – ৮

আট – বিমল

কেতকীকে যখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনাই স্থির করলুম সকলে মিলে, কেতকী দেশে যাবার জন্য খেপে উঠলো।—”আমি তো মরেই যাচ্ছি, আমাকে তো আর তোমাদের কোনো চিকিৎসাই রক্ষা করতে পারবে না, শুধু যাওয়াটা দীর্ঘায়িত করবে, টেনে টেনে লম্বা করবে যন্ত্রণার পালাটা—মৃত্যু যখন আসবার তখনই তাকে আসতে দাও। প্লীজ! আমি এখনও শাকসব্জী হয়ে যাইনি; এখনও সুখ—দুঃখের তফাৎ বুঝি, আমি নিজের দেশে গিয়ে মরতে চাই। আমার যন্ত্রণা কমাতে এখানেও যা ওষুধ দেবে, দেশেও তাই, তবে কেন দেশে নয়? আর সেকেন্ডারি ইনফেকশনের ভয় করে কী হবে—আমি প্রস্তুত!” কষ্ট করেও একগাল হেসে দু’আঙুলে তুড়ি বাজানোর চেষ্টা করে কেতকী বলেছিল—”রেডি, স্টেডি, গো—”

.

কেতকীর বাবা আছেন জামশেদপুরে। কেতকী যেতে চাইলো দার্জিলিং। আমি বাধা দিলাম—”দার্জিলিং চলবে না। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি করে উঠতে হবে পাহাড়ে, অত স্ট্রেইন তোমার শরীরে সহ্য হবে না। ধরো যদি শরীর আরো খারাপ হলো—ওখানে কোনো বড় হাসপাতাল নেই—অসুখ করলে কলকাতায় নিয়ে আসে—না না দার্জিলিং সহ্য হবে না—অন্য জায়গা ভাবো।”

—”সহ্য হবে না মানে? মরে যাবো তো? সে তো এমনিতেই যাবো। মরবার জন্যেই তো দেশে যেতে চাচ্ছি। গঙ্গাযাত্রা না কী যেন করত না আগের দিনের মানুষেরা? এও তেমনি। কাঞ্চনজঙ্ঘাযাত্রা—কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আরেকবার দেখে যাই, আমার ছোটবেলার বন্ধু—দ্য মোস্ট বিউটিফুল সাইট অন আর্থ। কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়—টাইগার হিলে গিয়ে দেখবো। ছোটবেলায় একবার দেখেছিলাম।” বলেই গেয়ে ওঠে। ”সানরাইজ অন টাইগারহিল…” ওর নিজের তৈরি গান।

—”পাগল নাকি! এই শরীর তোমার। হুইল চেয়ারে করে না হয় দেশে গেলে। হুইল চেয়ারে করে টাইগার হিল? রাত তিনটেয় উঠতে হয়। জানো?”

—”জানি। তো কী হয়েছে? সকলেই তো ওঠে।”

—ভীষণ ঠাণ্ডা। একবার নিমোনিয়া হয়ে গেলে—জানোই তো ডাক্তার কী বলে দিয়েছে।”

—”হোক না নিমোনিয়া, আটকানোর দরকার কী? উই আর বর্ন টু ডাই। ডাক্তার বুঝি সেটা বলেনি তোমাকে?”

কেতকী গোঁ ধরে রইলো। দেশে যাবেই।

—”ফাঁসির আসামীকেও শেষ ইচ্ছে জিগ্যেস করে। কিছু খেতে ইচ্ছা করে কিনা, কাউকে দেখতে ইচ্ছে করে কিনা। ব্রিটিশ পুলিশ ফ্রীডম ফাইটারদের পর্যন্ত শেষ ইচ্ছেটা সাধ্যমতো পূরণ করে দিত। আর তুমি কী গো? বলছি, দেশে ফেরা আমার শেষ ইচ্ছে। তোমরা সেটা শুনবে তো?”

কিন্তু দার্জিলিং হলো না।

ছোটমাসির স্মৃতি জড়ানো ভবানীপুরও হলো না।

কলকাতাতে এইডস—ভীতির প্রচুর দুঃস্বপ্নের কাহিনী কানে এলো। অসুস্থ এক রোগীকে সভয়ে পরিত্যাগ করে কীভাবে পালিয়েছে পরিবারসুদ্ধ সক্কলে। এমনকি মা—বাবা—স্ত্রী—পুত্র। আরেকজনের গল্প শুনলুম ছোঁয়াচের ভয়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত এইডস রোগীকে বিনা শুশ্রূষায় একঘরে করে ফেলে রেখেছেন সরকারী হাসপাতালের প্রত্যেক কর্মচারী—জমাদার থেকে আরম্ভ করে ডাক্তারেরা, নার্সেরা সকলেই। ট্রু লাইফ হরর স্টোরিজ। নিষ্ঠুর, অসামাজিক, হৃদয়হীন, অজ্ঞ কলকাতায় যাওয়া হবে না কেতকীর।

আমি বলতে চেষ্টা করেছিলাম, ”জামশেদপুরেই যাই চলো না কেন?” প্রথমত, কেতকীর বাবা ওখানে আছেন, বাবার যথেষ্ট ক্ষমতা, প্রতিপত্তি সেখানে। দ্বিতীয়ত, জামশেদপুরে টাটার কল্যাণে ডাক্তার—বদ্যি—হাসপাতাল, চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই আধুনিক। সম্ভবত ওখানকার ডাক্তারেরা, নার্সেরা, কলকাতা আর বর্ধমানের হাসপাতালের মতো রক্ষণশীল, অল্পশিক্ষিত ভীতসন্ত্রস্ত বুড়বকের মতো আচরণ করবেন না।

কেতকী বলল, ”আরও বেশি ভালো, আরও অনেক সফিসটিকেটেড চিকিৎসা তো নিউইয়র্ক সিটিতেই হয়। তাহলে আমি এখানেই থাকি না কেন? আই হেট জামশেদপুর। মাই মাদার ডায়েড দেয়ার। অ্যান্ড আই অলমোস্ট ডিড! জামশেদপুর আমি যাব না।”

—”তাহলে আর কি—বম্বে চলো। বম্বেতে এই ছোঁয়াছুঁয়ির ভয় ব্যাপারটা নেই। বম্বে অনেক বেশি আধুনিকমনস্ক শহর। এই মহাব্যাধির চিকিৎসাও সবচেয়ে বেশি বম্বেতেই হয়।”

কিন্তু শুনছে কে? কেতকীর শরীরে বল নেই, কিন্তু মনের জোর তো অসীম। বম্বে সে যাবে না। কেননা ওই শহরের সঙ্গে তার দেশের স্মৃতির সংযোগ নেই। তার চেয়ে নিউ ইয়র্ক ঢের ভালো, ঢের আপন।

শেষ পর্যন্ত মালবিকার উপদেশটাই মানলো। আমরা সপরিবারে চললাম দিল্লি। সত্যি বলতে কি কলকাতার চেয়ে দিল্লিতেই থেকেছে বেশি কেতকী, মিরান্ডা হাউস কলেজে পড়েছে। তবু কিছুটা হৃদয়ের যোগ আছে। তার বেড়ে ওঠার দিনগুলোর সঙ্গে দিল্লির আলো—বাতাসের চেনাশোনা ছিল। বেশিদিন আগের কথাও নয়। এখনও কিছু বন্ধু—বান্ধব দিল্লিতে রয়ে গেছে ওর। খুশি হয়ে কেতকী বলল, ”গোয়িং হোম অ্যাট লাস্ট।” হাসপাতাল থেকে স্পেশাল ছুটি নিয়ে মালবিকাও চলল আমাদের সঙ্গে দিল্লি। দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল ইনস্টিট্যুট—এ ভালোই ব্যবস্থা আছে।

ব্যবস্থা মানে আর কি। ওই এজিটি আর ব্যাকট্রাম। টি—সেলস যাতে কমে না যায় সেইটে দেখা। কিন্তু কেতকীর আর উন্নতি ঘটছে না। ওর টি—সেলস কবেই একশোর নিচে নেমে গেছে, আর তোলা যাচ্ছে না। শুনেছি একটা কম্বিনেশন ড্রাগ বেরুচ্ছে শিগগিরই—ইউ এস এ—তে। এখনও চালু হয়নি সে দেশেও। আর কত দেরি হবে? আর কতগুলো প্রাণ যাবার পরে?

.

কেতকীকে রাখা যাবে না জানতাম। ওর বাবাকে খবর দিয়েছিলাম। এসেছিলেন। এ. আই. আই. এম. এস.—এর কেবিনে মেয়েকে শেষবার দেখে গেলেন। দশ বছর পরে দুজনের দেখা। নাতনীকে দেখে একটু বিগলিত হলেন কি? টুবলুর অসুখের কথা তাঁকে বলিনি। টুবলুকে নিজের কাছে নিয়ে যাবার প্রস্তাব একবার তুললেন ভদ্রলোক। আমি সবিনয়ে উড়িয়ে দিলুম প্রসঙ্গটা। বাবা জামশেদপুরে ফিরে যাবার দু’দিন পরেই কেতকী চলে গেল। খুব কষ্ট পায়নি। বাবা ও মেয়ের পুনর্মিলনের মুহূর্তে আমি সেখানে ছিলাম না।

বাবাকে কেতকী কী বলেছিল আমি জানি না। কিন্তু তিনি পরের দিনেই ফিরে গেলেন। দুটো দিন থেকে গেলে ভালো করতেন।

তোমার দেহাবশেষ আমি তোমার প্রিয় হিমালয়ের পবিত্র বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছি কেতকী, হিমালয়ের ধূলিকণার সঙ্গে মিশে গিয়েছ তুমি টাইগার হিলে সূর্যোদয়ের শুদ্ধ মুহূর্তে। সেই যে তুমি গানটা বেঁধেছিলে, টাইগার হিলে সূর্যোদয়ের গান, সেই সুরই আমি শুনতে পেয়েছিলাম ব্রাহ্মমুহূর্তের আলোয়।

বাতাস হয়ে ঘিরে থাকো যদি, তোমার পরী মেয়ের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে এসব তুমিও এতদিনে জেনে গিয়েছো। টাইগার হিলে প্রত্যেকদিনের সূর্যোদয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে তুমিও ঝলসে উঠছো—সোনালি, গোলাপী, ম্যাজেন্টা আকাশে। পরীর দ্যুতিময় ডানায় এই বর্ণচ্ছটা তো যৎসামান্য। কেতকীর ইচ্ছে ছিল টুবলুকে ভারতবর্ষেই মানুষ করা হোক। সে ইচ্ছে আমি পূর্ণ করতে পারিনি। আমার জীবনযাত্রা তাতে ওলটপালট হয়ে যেত—রুণার অসুবিধে হতো এবং টুবলুর পক্ষে এতদিন বেঁচে থাকাও সম্ভব হতো না। ওকে তো বলা হয়নি, যে শুধু কেতকী একাই নয়—টুবলুর বড়ো হওয়া আমরাও দেখতে পাবো না। টুবলুর বড়ো হওয়াই হবে না!

কেতকী চলে যাবার পর ইন্ডিয়া ছেড়েছি, টুবলুকে নিয়ে ফিরে এসেছি আমার ছোট্ট শান্ত শহরে।

আমার বাড়িতে। যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি বেশি। যেখানে এই রোগের জন্য হাসপাতাল, ওষুধপত্র, চিকিৎসার সুযোগ প্রচুর। এ—মেয়েকে বেশিদিন ঘরে রাখা যাবে কিনা জানি না। যেই মহাব্যাধি তার পূর্ণ অবয়ব নিয়ে আবির্ভূত হবে টুবলুর ছোট্ট শরীরে, তখন থেকে ওকে হয় তো হাসপাতালে রাখাটাই ওর পক্ষে ভালো হবে। বাড়িতে অতটা সাবধানী হওয়া কি সম্ভব? যার শরীরে কোনোরকম রোগকেই প্রতিরোধ করবার শক্তি নেই, তাকে কোন সাহসে বাড়িতে ধরে রাখবো? আর যে—বাড়িতে মা নেই, এমন সংসার?

শেষ পর্যন্ত টুবলুকে হাসপাতালেই রাখতে হলো। এবং ঈশ্বরের অসীম করুণায় সেই হাসপাতালেই মালবিকা তখনও ইনটারনাল মেডিসিনের ডাক্তার। এখানেই টুবলুর মা ভর্তি ছিল—যতদিন না ডাক্তাররা ওকে ছুটি দিয়ে দিলেন, বাংলায় যাকে বলে ”জবাব দিয়ে দেওয়া”। তখন ওকে দেশে নিয়ে গেলাম। টুবলুকে ওঁরা আপ্রাণ চেষ্টায়, যত্নে, সেবায় ভরে রেখেছেন, মালবিকা তো আছেই। কেতকীর পরে আরও অনেক অগ্রগতি হয়েছে এইডসের চিকিৎসার। টুবলু ইদানীং বাড়িতেই থাকে। মাঝে মাঝে হাসপাতালে ফিরে আসে শরীর বেশি খারাপ করলে। যাওয়া—আসার মধ্যেই আছে। এ অসুখ তো এমনিই। আজ ভালো। কালই এখন—তখন। এই হাসপাতালটাতে শুধুই বাচ্চা এইচ. আই. ভি. পেশেন্টদের জন্য রঙিন আসবাবপত্র দিয়ে আলাদা পুরো একটা উইং সাজানো। বই, খেলনাপাতি, টিভি, কম্পুটার, সিনেমা রয়েছে। টুবলু ওখানে একা নয়। ওর খেলার সাথী আছে।

চোখে দেখেও আমার বিশ্বাস হতো না মাত্র বিশ বছরের মধ্যে একটা কালব্যাধি এমন দ্রুতগতিতে এত বীভৎসভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। অসংখ্য নিষ্পাপ, অবোধ শিশুর আয়ু অকালে ফুরিয়ে যাচ্ছে, অপরিসীম শারীরিক মানসিক পীড়ায় যন্ত্রণা পেয়ে, একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে তারা। ইংলন্ডে, আমেরিকায়, আফ্রিকায়, ভারতবর্ষে। কোথাও চিকিৎসা পেয়ে, কোথাও বিনা চিকিৎসায়।

টুবলুর কষ্ট দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে কেতকীর প্রতি সব ভালোবাসা অভিমানের বাষ্প হয়ে উবে যায়। অথচ সত্যিই তো কেতকী বেচারী জানত না। যখন জানলো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে—টুবলু এসেই পড়েছে। সেটা আমার জন্যেই হোক বা কার্লোসের জন্যই হোক। ডি. এন. এ. টেস্ট আমি করাতে চাই না। টুবলু আমারই থাকুক।

.

ইন্ট্রাভিনাস ড্রাগের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা চলেছিল মাস আষ্টেক—ওই গানবাজনার দলের বন্ধুদের পাল্লায় পড়বার পরে।

কলেজে থাকতে গাঁজা খেয়েছে, মারিজুয়ানা ফুঁকেছে, ম্যানড্র্যাক্স খেয়েছে, এল.এস.ডি.—র অলটারনেটিভ পিলও খেয়েছে, নেশা করে দেখেছে সবরকমই—মদ, গাঁজা, হাশিস—নেশা করেছে ঠিকই, কিন্তু এই সর্বনেশে রক্তখেকো ড্রাগের নেশায় ওকে খায়নি। সেটা হয়েছিল মাত্র আটটা মাস। এবং সেটাই মারণ—উচাটনের মন্ত্র—তন্ত্র জানতো। শেষ করে দিয়েছে কেতকীকে। তার অজাত সন্তানকে। অথচ আমি এইচ.আই.ভি. ফ্রী। কোনো জাদুতে আমার দেহকে স্পর্শ করেনি ঐ মারণ রোগ। কিন্তু আমার জীবনটাও ছারখার হয়ে যায়নি কি? শিশুসন্তানের মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে?

কেতকী চলে যাবার সময় টুবলু চোদ্দমাসের গোব্দা—গাব্দা মেয়ে। খুব হাসে, টলে টলে দৌড়ায়। আপেলের মতো গাল, আঙুরের মতো চুল।

পাঁচ বছর পরে, কংকালসার টুবলুর হাড় থেকে যেন চামড়াগুলো ঝুলছে, ওর কচি চামড়ার রং ফ্যাকাশে, স্বচ্ছ, ছাই, তার নিচে নীল নীল শিরার মানচিত্র। মাথার ঝাঁকড়া কোঁকড়া চুলগুলো সমস্ত প্রবলভাবে ঝরে যাচ্ছে। রোজই মাথার বালিশ চুলে ভর্তি হয়ে থাকে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গেছে। চোখে ভারী কাচের চশমা। ঠোঁটে তবুও একটা মিষ্টি হাসি লেগেই থাকে। আমার এক বাচ্চা রোগীর ক্যানসার হয়েছিল। ওকে দেখেছিলাম, শিশুদেহে ক্লান্ত বৃদ্ধ মুখ। মাথায় টাক পড়েছিল কেমোথেরাপির ফলে। সর্বাঙ্গে পরিশ্রান্তি। ভিতরে, বাইরে। মৃত্যুর প্রতীক্ষায় মুমূর্ষু। টুবলুর কিন্তু তেমন না। মুখে—চোখে ক্লান্তি থাকলেও এখনও শৈশবের মাধুর্য চলে যায়নি, ইনোসেন্স—এর জ্যোতি মুছে যায়নি চোখ থেকে।

‘ইনোসেন্স’ কথাটার ঠিকঠাক বাংলা নেই। যেমন ‘কল্যাণ’ কথাটার ইংরিজি নেই। অথবা ‘পবিত্র’ শব্দটার।

টুবলুর চেহারায় ‘ইনোসেন্স’ আর ‘পবিত্রতা’ দুটোই পুরোমাত্রায় বর্তমান। আর এখন ওর খুদে পাখনাদুটোর জন্যে ওকে দেবদূত—দেবদূত দেখাচ্ছে। ”পরী হয়ে যাবো,/বাতাস হয়ে যাবো।”—এইসব ঘোষণা ওকেই মানায়।

ওর পরী—মাকেও অবশ্য দিব্যি মানিয়ে যেত, যদি কখনো অমন কথা বলতো কেতকী। এটা তো ঠিক যে, কেতকী যখন গান গাইতো, তখন ও সত্যি সত্যিই পরী হয়ে যেত। আমি তো দেখেছি। একদিন গভীর রাত্রে, ওর পিঠের ওপরে ভাঁজকরা রুপোলি ডানাদুটো থির থির করে কাঁপছিল। সে রাতে আকাশ ছিল চন্দ্রহারা, ডানাদুটো চাঁদের আলো ছড়াচ্ছিল লিলিপুলের চারধারে। পরী গান গাইছিল। সেই রাত্রে তার গায়ে ছিল রেণু রেণু জ্যোছনার পোশাক। সে গানের ভাষা বুঝিনি, কিন্তু সুরটা বুকের গভীরে ঝনঝন করে উঠেছিল—ভাষা জানি না, আকূতিটা জানি। পরীকেই ডেকে তুলে আদর করে ফিরিয়ে এনেছিলাম সেই রাত্রে, কেতকীর শূন্য বিছানায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *