| ১২ | কুমুদিনী
বাঁশিকে আজ বন্ধুবান্ধদের মধ্যে দেখে খুব ভালো লাগছে। ওকে সব সময়ে কর্মব্যস্ত দেখি, ঘরে ও বাইরেও। এখনও অবশ্য অবকাশ নেই তার, রান্নাকঘরে ব্যস্ত। আমি বসে আছি সবুজ ঘাসের বাগানে, সামনে প্রশান্ত মহাসাগর। কাগজ পড়তে ভালো লাগে না। কেবলই রক্তপাতের সংবাদ। হয় খুনখারাপি, আর ধর্ষণ-অপহরণ, নয়তো যুদ্ধ-বোমাবাজি, হিংস্রতা—চারিদিকেই কেবল অত্যাচারের শব্দ। মানুষ আর মানুষকে বাঁচতে দেবে না। কি ঘরে, কি বাইরে সর্বত্রই মানুষের হিংস্রতার ছবি। ডাক্তার বলেছেন আমার মনের অসুখ সেরে গিয়েছে। ভালো কথা কিন্তু সারা পৃথিবীর কি মনের অসুখ করেছে? সারা পৃথিবীরই তো দেখছি মনের চিকিৎসা দরকার। শুশ্রূষা প্রয়োজন। কে কাকে নেতৃত্ব দেবে? এ দেশের সরকার অন্য দেশে গিয়ে মানুষ খুন করছে—এরা সর্বশক্তিমান দেশ—তাই কোনও শাস্তির ভয় নেই। এ-দেশের মেয়েরা সাধারণভাবে আমাদের দেশের মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত, স্বাধীন—কিন্তু হলে কি হবে, এ-দেশের কাগজে যা দেখি তাতে তো মনে হয় না এ-দেশের মেয়েদের অবস্থা আমাদের দেশের মেয়েদের চেয়ে একটুও উন্নত। হ্যাঁ, পণের জন্যে পুড়িয়ে মারে না বউগুলোকে, তা ঠিক। কিন্তু অন্য নানাভাবে মারে। অকারণে মারে।
কাগজ পড়তে ভালো লাগে না।
শুধু দু:সংবাদ। শুধু অশুভ সংবাদ।
প্রথম প্রথম ইংরিজি কাগজ পড়তে ভালো লাগত না কেবল ইংরেজি বলেই।
সকালে উঠেই কারুর বিদেশি ভাষার মুখ দেখতে ইচ্ছে করে? বাংলা কাগজ না হলে পড়ে সুখ? কলকাতাতে আমার তো সকালে কাগজ পড়া হত না। দুপুরবেলাটা ছিল কাগজ পড়বার সময়। তখন গুছিয়ে শুয়ে পড়তুম কাগজটা নিয়ে—সংসারের বাইরের খবরগুলো নেবার সময় সেটা। ভবানীপুরের সেই অটল এঁদো গলির চকমেলানো উঠোনের বাইরে যে জগৎটা দিন-কে-দিন বদলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে মোলাকাতের সময় ছিল দুপুরটা। বড়ি দিয়ে, আচার তৈরি করে জীবনের গোড়ার দিকটা কেটেছিল। যেই সুযোগ এল, আর নয়। জীবনটা তো সুখের ছিল না। ইন্দ্রর বাবার দিন কে দিন অবনতিই হয়ে চলেছিল—সংসারে সুখশান্তি কাকে বলে আমি জেনেছিলুম বাঁশির কাছে এসে। তারপর এখানেও যখন হঠাৎ দেখলুম ইন্দ্রর মধ্যে ইন্দ্রর বাবার ছায়া এসে পড়ছে, আমার মনটা ভেঙে গেল। যে অশুভ থেকে মুক্তি পেয়েছি ভেবেছি, আবার সেই অশুভেরই বাতাস লাগল সংসারে। তবে কি আমি যেখানে যাব অশুভ বাতাস বয়ে নিয়ে যাব সঙ্গে? তবে কি এসব আমার কারণেই? নিশ্চয়ই ইন্দ্রর অধ:পাতের জন্যে আমিই দায়ী! কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে বুঝেছি, যে আমার সঙ্গে ওটার কোনও যোগ নেই। ইন্দ্রর নিজস্ব সমস্যা ছিল। বুঝতে পেরেছি, যে ইন্দ্রর রাজনৈতিক আদর্শ, ইন্দ্রর শিল্পীমন, ইন্দ্রর কর্মভীরু অলস স্বভাব—তিনটেকে একসঙ্গে বাগ মানাতে পারছিল না সে, সহজ উপায় খুঁজে নিয়েছিল নেশার মধ্যে পালিয়ে। এখন ইন্দ্র—আবার ছবি আঁকছে। আর ছোঁয় না ওসব। এখানে এসেও, ওই তো, বারান্দায় বসে বসে আপনমনে স্কেচ করছে। ভেতরের হট্টগোলে ও যোগ দিতে পারেনি, কোনওকালেই পারত না—একলষেঁড়ে স্বভাব ছেলেবেলা থেকেই। এখান থেকে সমুদ্র, আকাশ, দূরের পাহাড়ের সীমারেখা দেখতে দেখতে আমারই ইচ্ছে করছে ছবি আঁকি। স্কেচখাতাটা আনলে আমিও আঁকতুম। বাঁশি আমাকে স্কেচখাতা, রঙিন পেনসিল, কাঠকয়লার পেন্সিল, সব কিনে দিয়েছে। হাসপাতালেই আবার আমি ছবি আঁকতে শুরু করেছিলুম। হাসপাতাল-বাস আমার পরে খুব উপকারী হয়েছে। সারাজীবনে যত শিখেছি, তার চেয়ে হাসপাতালে যতদিন ছিলুম, অনেক বেশি দেখেছি। অনেক বেশি শিখেছি। অনেকের দু:খ দেখেছি কিনা। নিজের দু:খ তখন আর বড় বলে মনে হয় না।
ছোট দু:খুকে বড় করে দেখলেই মানুষের মন অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আর বড় বড় দু:খকে ছোট করে দেখলে, একটা দেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। গরিব দেশ থেকে বড়লোক দেশে এসে, প্রথমে ভেবেছিলুম বুঝি সব পেয়েছির দেশে এলুম। অল্প সময়েই টের পেলুম, আমার ভাবনা ঠিক নয়। এ-দেশেরও গরিবিয়ানা প্রচুর। যেমন গরিব মানুষও প্রচুর আছে, তেমনিই মানসিক দৈন্যের প্রাচুর্য আছে এ-দেশের জীবন যাপনে। সুখী দেশ নয়। কিন্তু আমার ছেলে-বউ-নাতনি যে দেশে, আমিও তো সেখানেই ঘর পাতব। আমার যে-বয়েস হয়েছে তাতে কয়েকটা মাত্র মানুষই আমার গোটা পৃথিবী। আমাকে এখানেই মানিয়ে থাকতে হবে। ইন্দ্র বাঁশি যেমন মানিয়ে নিয়েছে। রঙিন তো জন্মে ইস্তক এখানেই বেড়ে উঠেছে। আশ্চর্য কিন্তু, একটুও বিদেশি ঝোঁক নেই ওর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে। ওর মনের মধ্যেও না। এও বাঁশির গুণে—যথেষ্ট অল্পবয়েস থেকেই তো বাঁশি এখানে। এখানেই অনেক দূর পড়াশুনো করেছে, দেশ থেকেই তো স্কলারশিপ নিয়ে এসেছিল। ইন্দ্রকে এ-দেশে এনেছে সে-ই। সাধারণত বউকে নিয়ে আসে স্বামীরা, ইন্দ্রর বেলাতে উলটো হল। বউ আগে আমেরিকাতে এসে পড়াশুনো, চাকরি-বাকরি করল। বরকে নিয়ে এল তার পরে। ইন্দ্রর তা নিয়ে অবশ্য গর্বের শেষ নেই।
বাঁশির বাবা মাত্র একবারই এসে ঘুরে গেছেন। ওঁর ভালো লাগেনি। কিন্তু ওর দাদা মাঝে মাঝে আসা-যাওয়া করে, ওর সরকারি চাকরিতে ওকে এদিক-সেদিক পাঠায়। ইন্দ্র একমাত্র ওকেই মান্যি করে। ওকে খুব ভালোবাসে ইন্দ্র। জেলে থাকার সময়ে ইন্দ্রকে খুব স্নেহ করত বাঁশির দাদা—সেই থেকেই তো বাঁশির সঙ্গে চেনাশুনো, সেই থেকেই বিয়ে।
বাঁশির বাবা যদিও খুবই ধনী মানুষ কিন্তু ওই আর কি—ব্যবসায়ী হলে যেমন হয়, একটু গোলমেলে চরিত্র। বাঁশি আর তার দাদা হয়েছে ঠিক বাপের বিপরীত। দাদা তো বিয়ে-থা করেনি, শুনেছি একটি মেয়েকে ভালোবাসত, সে অন্য লোককে বিয়ে করেছে বলে সারাজীবন আর বিয়েই করেনি ছেলেটা। গল্পের বইতেই এরকম পড়ে থাকি, জীবনে এরকম কিন্তু দেখিনি কখনও। এ গল্পটা যদি সত্যি হয়, তবে এই প্রথম এমনটি দেখলুম।
ইন্দ্রর নানা দোষের মধ্যে, সে একবার বাঁশিকে ফেলে এক মেমের পিছনে ধাওয়াও করেছিল। মেমসাহেবটি ওদের সঙ্গেই কাজ করত, ইন্দ্র তখন ওই বিজ্ঞাপনের কোম্পানিটায় চাকরি করে। মেয়েটা এসেছিল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে, ইন্দ্র তাকে দেখে পাগল হয়েছিল হঠাৎ কিছুদিনের জন্য। বাঁশি ঝগড়া করেনি। শুধু আমাকে ডেকে সামনে ইন্দ্রকে বসিয়ে বলেছিল, হয় ইন্দ্র চলে যাক, নইলে বাঁশি চলে যাবে। রঙিনকে নিয়ে যাবে। তখনও রঙিন স্কুলের নীচু ক্লাসে। ইন্দ্র সমঝে গিয়েছিল। নিজেই সরে এসেছিল। আর তো বেচাল দেখিনি। তবে চাকরি-বদলের বদ খেয়ালটাও ইন্দ্রর সর্বনাশ করেছে। এখন ওকে কোনও ভালো কোম্পানি কাজ দেবে কেন, ওরা তো সবাই জেনে যায় যে এ-লোক বেশিদিন এক জায়গায় থাকতে পারে না। অবশ্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলেই হয়তো অত ঘনঘন চাকরি বদল করছিল তখন। কী জানি, এখন সুস্থ সবল মন নিয়ে ইন্দ্র হয়তো কোনও একটা চাকরিতে ধীরস্থির হয়ে মন বসিয়ে টিঁকে থাকতে পারবে। অবশ্য বাঁশি বলে, এদেশে একটা চাকরিতে কেউই থেমে থাকে না, চাকরি বদলানোটা নাকি এ-দেশের চালু ব্যাপার। উন্নতির শেষ ধাপে পৌঁছোতে চাইলে চাকরি বদলাতেই হয়, নইলে আরও উন্নতি হবে কেমন করে? ইন্দ্রর ব্যাপারটা তো তা ছিল না। ও কোনও কাজই ধরে রাখতে পারত না, কোথাও লেগে থাকতে পারত না। কারুর না কারুর সঙ্গে মতবিরোধ, মনোমালিন্য তৈরি করে চাকরি ছেড়ে দিত। কিন্তু এখন, এই মাঝবয়েসে সেসব করলে তো চলবে না। মেয়ে কলেজে পড়ছে। তার বিশাল খরচের দায়িত্ব আছে না? ইন্দ্রকে বড় হয়ে উঠতেই হবে এবারে। কী, জানি, হয়তো মানুষ করার দোষেই ইন্দ্রর ঠিকমতো পরিণত বুদ্ধি তৈরি হয়নি। কিন্তু ভবানীপুরের বাড়িতে আমার কতটুকুই বা ক্ষমতা ছিল? ছেলেকে কি আমি মানুষ করবার সুযোগ পেয়েছি? ইন্দ্র ছিল ওর বাপ জ্যাঠার সম্পত্তি? ছেলেদের বেলায় ও বাড়ির ওইটেই নিয়ম। মেয়েরা এলেবেলে।
বাঁশির কল্যাণে আমি এত বড় বিশ্বসংসারটা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করতে পেলুম। ঘরের কোণের অন্ধকারে চোখ-কান বুজেই কেটে গেছে এতগুলো বছর—বাকি জীবনটাও কাটত সেভাবেই, যদি না বাঁশি আমাকে টেনে আনত বাইরে। খবরের কাগজই ছিল আমার জীবনে একমাত্র খোলা হাওয়া।
আমি বাড়ি ফিরেছি বলে আজ এই উৎসব। ভবানীপুরের কুমু কখনও ভাবতে পেরেছে তার সুখ-অসুখ, তার থাকা, না-থাকা, তার ঘরে ফেরা কারুর কাছে এত জরুরি হয়ে উঠবে কোনওদিন?
ঠাকুমাকে নিয়ে রঙিন আহ্লাদে কী কাণ্ডটাই না করছে—তার পেছনে রঙিনের মায়েরই প্রশ্রয়ের হাসিটি আমি দেখতে পাই। মায়ের সৎশিক্ষা না থাকলে, এদেশের কালচারে এটা করত না ও। এ-দেশে বুড়ো-বুড়িদের সমাজ করুণা করে, শ্রদ্ধা করে না। ডাক্তারবদ্যির ভার নেয়, বৃদ্ধাশ্রমে ভরতি করে দেয়—সম্মান করে না। এরা ওদের বুকে জড়িয়ে ধরে না। পা ছুঁয়ে প্রণাম করে না। এ-দেশে বুড়োদের কাছে পরামর্শ নেয় না কেউ, তাদের বুদ্ধিশুদ্ধি আছে বলেই মনে করে না। যৌবনই এ-দেশে রাজা। অভিজ্ঞতার মূল্য কেবল দেয় ওরা চাকরি দেবার সময়ে, জীবনযাপনের প্রাত্যহিকতায় বেশিদিন বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতার কোনও মূল্য নেই। বৃথা বেঁচে আছে পথের কাঁটা হয়ে, সমাজের অন্নধ্বংস করছে তারা। চিকিৎসার উন্নতি হয়ে বুড়োরা আর মরছে না।
বাঁশি এজন্যেই এত আলাদা। ওর কাছে প্রতিপদে অনুভব করি, আমাকে ও সম্মান করছে, শ্রদ্ধা করছে, ভালোবাসছে। ও আমাকে যাই করে, ভালোবেসে করে, অনুগ্রহ করে নয়। শ্রদ্ধয়া দেয়ম—যা-ই দেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেবে—এমনকি ভিক্ষাও—আমাদের দেশের এই জরুরি শিক্ষাটি এদের দেশের অল্পবয়সিদের তো কেউ দেয়নি? প্রণামের অভ্যেসটা কিন্তু ভালো। বিনয়ের অভ্যেস। নম্রতার অভ্যেস। বয়স্কদের কাছে বিনম্র হতে শেখানো ভালো। এই যে মাথা খাড়া করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড়দের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছে ছোটরা, সে তোমার রাজাই হোক আর তোমার গুরুমশাই হোক—এ শিক্ষা ভালো নয়। টিভিতে দেখেছি, যে চার্চে পুরোহিতদের কাছে নীচু হয় এরা, অনেকে পোপের জামার কিনারাটাতে চুমুও খায়। ওটাও বাড়াবাড়ি লাগে। তোমরা বাড়িতে বাবা-মাকে প্রণাম করো না, সেখানে নীচু হও না, হঠাৎ চার্চের পুরোহিতকে প্রণাম কেন? শ্রদ্ধার ঠাঁই কি শুধু চার্চের মধ্যেই? সমাজে শ্রদ্ধেয় হতে হলে কি ধর্মযাজকই হতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বুঝি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি নন?
এইসব ভাবনা আমার মনে ভিড় করে—এদেশের সঙ্গে সব সময়ে স্বদেশের তুলনা মনে আসে। আসাটাই স্বাভাবিক। সব সময়ে যে নিজের দেশটা ভালো এবং এরা মন্দ, তাও বলব না। সাধারণভাবে পথে-ঘাটে অনেক বেশি সততা দেখি এদের দেশে। চুরিচামারি, মিছে কথা বলা, এসব কমই হয় এখানে। অচেনা মানুষ মানুষকে সাহায্য করে। জীবনে অনেক বেশি আইনকানুন মেনে চলে এরা। আর সাধারণভাবে দরিদ্র মানুষও অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধে পায় আমাদের দেশের চেয়ে। এসবই তো সত্যি কথা। সরকারিভাবে বুড়োমানুষদের জন্যে, হুইল চেয়ারে-বসা বেচারি মানুষদের জন্যে এদের অনেক ভাবনাচিন্তা আছে—সর্বত্র এরা সুবিধে পায়। এটা মস্ত বড় কথা। আমাদের দেশে এ সব হয়নি এখনও।
আর মনের রোগের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত এ-দেশে যেরকম আছে, আমাদের দেশে তেমনটি হতে এখনও অনেক দেরি। মানুষের মনের বদল আগে চাই। মনের রোগটাও যে রোগই, শরীরে রোগের মতোই, তাই সেটাও চিকিৎসায় সারে, সেটুকু বুঝতেই ঢের দেরি আমাদের। পাগলা-গারদগুলো ভয়াবহ জায়গা ওখানে। আর এই বিদেশি পাগলা-গারদে যাবার আগে নানান চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে, যাতে সেখানে অবধি পৌঁছোতে না হয়। আমি যে মানসিক হাসপাতালে ছিলাম, সেটা অংশত পাগলা-গারদই বলব। সবাই তো সমান অসুস্থ নই, তাই বিভিন্ন ধরনের রুগিদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যবস্থা। সর্বত্রই যত্ন আছে, ধৈর্য আছে, সহ্য আছে। দুর্ব্যবহারও কি নেই? সবাই তো মানুষ সমান না। কিন্তু আমি দেখেছি মূলত শুশ্রূষাকারিণীরা স্নেহপ্রবণ, মমতাশীল মেয়ে ছিল। নতুবা তারা এই সেবার কাজে সেধে আসত না।
এ-দেশে মেয়েদের কেরিয়ারের অভাব নেই। ও-দেশে যেমন নার্স আর টিচার হওয়া ছাড়া মধ্যবিত্ত বা শিক্ষিত দরিদ্র ঘরের মেয়েদের আর কোনও চাকরি ছিল না এতকাল—এ-দেশে তো তা নয়। আমাদের দেশেও আর তেমনটি নেই। ট্রাম কনডাকটর থেকে এরোপ্লেনের পাইলট হওয়া, বাড়িবাড়ি ফেরিওলাগিরি থেকে বড়বাজারে গদি পেতে নিয়ে ব্যাবসা করা, সবই করছে বাঙালি মেয়েরা। বাঁশিরা যে ক’জন মেয়ে এসেছে আজ পিকনিক করতে, একটি মেয়ে চাকরি করে মস্ত পদে, একটা এরোপ্লেন কোম্পানিতে সেটাই বাঁশি। আরেকটি মেয়ে চাকরি করে আই. টি.-তে, ঘরে বসেই তার চাকরি, সারাদিন ধরে ফোনে আর কমপিউটারে বিচিত্র কাজ। সে হল নন্দিনী। আর আরেকজন মেয়ে মধুলিকা, তার চাকরি সরকারি, মেডিক্যাল সার্ভিসেসে উচ্চপদস্থ অফিসার সে। এটা কি কম গর্বের কথা আমাদের?
এদিকটায় রোদ চড়া হয়ে উঠেছে। এবারে ভিতরে যাই, দেখি ওরা রান্নাঘরে কদ্দুর এগোল। যদিও বাঁশি বলেছে আজ আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতেই দেবে না।