1 of 3

আষাঢ়ে গল্প

আষাঢ়ে গল্প

কল্পনামূলক অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য বা আজগুবি গল্পকে আষাঢ়ে গল্প বলা হয়। আষাঢ়ে গল্প কথাটির বিষয়ে পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুরের সন্তান প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬ খ্রি.) ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিচিত্র পত্রিকায় বর্ষার দিন প্রবন্ধে বলেছেন-

‘আমাদের বাঙাল দেশে লোকে আষাঢ়ে গল্প বলে না, বলে আজাড়ে গল্প। এখন এই আজাড়ে শব্দটি কি আষাঢ়ের অপভ্রংশ? আজাড় শব্দের সাক্ষাৎ সংস্কৃতকোষের ভিতর পাওয়া যায় না। এর থেকে অনুমান করছি যে, এটি হয় ফারসি, নয় আরবি শব্দ। আর ও-কথার মানে আমরা সবাই জানি, অন্য সূত্রে। আমরা যখন বলি, মাঠ উজাড় করে দিলে তখন আমরা বুঝি যে, উজাড় মানে নির্মূল। কারণ জড় মানে যে মূল তা বাংলার চাষিরাও জানে। সুতরাং আজাড়ে গল্পের অর্থ যে অমূলক গল্প এরূপ অনুমান অসঙ্গত নয়। এই আজাড় কথাটার শুদ্ধি করে নিয়ে আমরা তাকে আষাঢ় বানিয়েছি। এ কারণ আরব্য-উপন্যাসের সব গল্পই আজাড়ে গল্প, হিন্দু জবানে আষাঢ়ে গল্প; যদিও আরবদেশে আষাঢ়ও নেই, শ্রাবণও নেই।’

বাংলা একাডেমী প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধানে আজাড় শব্দে অবসর বা ফুরসতও বুঝায়। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৮৮৫-১৯৬৯ খ্রি.) সম্পাদিত বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে আজাইড়্যা, আজাড়া, আজাড়ে অর্থ অবিশ্বাস্য, অদ্ভুত, অমূলক, অহেতুক ইত্যাদি। ফারসি অভিধান অনুযায়ী আযার বা আজাড় (আলিফ + জা + আলিফ + রা) শব্দ থেকে আজুড়ে বা আজাড়ে শব্দ এসেছে যার অর্থ অত্যধিক বা বেহুদা।

আষাঢ় মাসের অলস মুহূর্তের গল্পের আসর কিংবা অবসরের অবাস্তব গল্পকথা থেকে আমাদের দেশে আষাঢ়ে গল্প প্রবাদের উৎপত্তি। তবে অধিক সঙ্গত যে, আজাড়ে বা আজাইড়্যা গল্প থেকে আষাঢ়ে গল্প এসেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *