আত্মা ভুক

আত্মা ভুক

বিকেলের শেষ ট্রেনটা চলে গেলে অপরেশের কাজের চাপ কমে যায়৷ তিনি চলে আসেন ডাক্তার শাসমলের চেম্বারে৷ বিকেলের দিকে রুগি তেমন হয় না৷ ঘণ্টাখানেক গল্পগুজবের পর অপরেশ আবার স্টেশনে ফিরে যান৷ কলকাতা থেকে অনেকদূরে বাংলা-বিহার সংলগ্ন হল্ট স্টেশনের প্রায় পাণ্ডববর্জিত জায়গাতে কথা বলার তেমন লোকজন নেই৷ ডাক্তারির বাইরে নানা বিচিত্র বিষয়ে পড়াশোনা আছে ডাক্তার শাসমলের৷ তাঁর সঙ্গে আড্ডায় সময়টা কাটে৷ বিচিত্র বিষয় জানা যায়৷ কিন্তু এদিন তাঁর চেম্বারে চুনিলালের সঙ্গে যে অপরেশের দেখা হয়ে যাবে তা অপরেশ ভাবতেও পারেননি৷

সত্যিকথা বলতে তিনি প্রথমে চিনতেও পারেননি তাকে৷ শেষ যেদিন বছর দশ আগে তিনি চুনিলালকে দেখেছিলেন তখন চুনিলালের পরনে রক্তাম্বর, গলায়-বাহুতে রুদ্রাক্ষের মালা, গালে দাঁড়ি, মাথায় জটা৷ পুরোদস্তুর কাপালিকের চেহারা৷ সে নাকি তখন তন্ত্রসাধনা করত৷ কিন্তু শাসমলের চেম্বারে যে লোকটা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে তার পরনে শার্ট-প্যান্ট, মাথায় চুল পাট পাট করে আঁচড়ানো৷ চোখে গোল ফ্রেমের চশমা৷ পায়ে কাঠের খড়মের বদলে কাবলি চপ্পল৷ তার সঙ্গে একটা বছর পাঁচেকের ছেলেও আছে৷ তার চেহারা-পোশাক অবশ্য বেশ বিবর্ণ৷

কীরে অপরেশ কেমন আছিস? আমি চুনিলাল৷ পরিচিত খোনা গলায় সে এ-কথাগুলো না বললে অপরেশ তাকে চিনতেই পারতেন না৷

বিস্মিত অপরেশ বললেন, ‘তুই এখানে?’

চুনিলাল তাঁর হাতটা ধরে বলল, ‘আমারও তো তোকে একই প্রশ্ন৷ কলকাতার বাড়িটা বেচে দিয়েছি৷ বছরখানেক ধরে এখানেই থাকি৷ তবে সংসার পাতিনি৷ একাই থাকি৷ কাছেই আমার বাড়ি৷’

অপরেশ বললেন, ‘মাস ছয়েক হল সহকারী স্টেশন মাস্টারের চাকরি নিয়ে এখানে এসেছি৷ বিকেলে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে গল্প করি৷’

ডাক্তার শাসমল তাঁদের কথাবার্তা শুনে মৃদু বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, ‘আপনার পরস্পরকে চেনেন!’

অপরেশ জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ৷ ও আমার সহপাঠী৷ কলকাতাতেও আমরা একই পাড়ায় থাকতাম৷ অনেকদিনের বন্ধু অমরা৷’

চুনিলাল তাঁর হাতটা এবার আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘তোকে কিন্তু এখন আর বাড়ি যেতে হবে৷ কতদিন পর তোর সঙ্গে দেখা! না শুনব না৷ চল, চল৷’

অপরেশ ডাক্তার শাসমলের মুখের দিকে তাকাতেই তিনি হেসে বললেন, ‘পুরোনো বন্ধুকে যখন পেয়েছেন তখন ঘুরে আসুন৷ একটা ফোন কল এল৷ আমাকেও বেরোতে হবে৷’

অপরেশের হাতে সময় আছে৷ চুনিলালের সঙ্গে তিনি বেরিয়ে পড়লেন৷ যেতে যেতে তিনি চুনিলালকে জিগ্যেস করলেন, ‘তুই যে কীসব তন্ত্রমন্ত্র সাধনা করতিস, সেসব আর করিস না? কী করিস এখন?’

চুনিলাল বলল, ‘দূর, ওসব তন্ত্র সাধনা-টাধনা ফালতু ব্যাপার৷ ওতে কোনও উপকার হয় না৷ তখন মাথায় কী যে ভূত চেপেছিল৷ কত যে ভণ্ড তান্ত্রিকের দরজাতে সেসময় ঘুরেছি তা আর কী বলব! শেষে সত্যিই এক যোগীপুরুষের দেখা পেলাম৷ বৌদ্ধ যোগীপুরুষ৷ তিনি আমাকে বললেন, ‘মোক্ষ লাভ করতে হলে জীব সেবা কর৷ মহাপুরুষরা যা করতেন৷ তাতে তুই অমর হবি৷’

কলকাতার বড়িটা বেচে যা পেয়েছিলাম তাতে আমার চলে যায়৷ তার একটা অংশ দিয়ে জীব সেবা করি৷ যেমন এই দেহাতি অনাথ বাচচাটার জ্বর হয়েছে, ডাক্তারবাবুর কাছে তাই দেখাতে নিয়ে এলাম৷’

সহপাঠী অবস্থা থেকেই চুনিলালের প্রতি কেন জানি অদ্ভুত আকর্ষণ আছে অপরেশের৷ একাধারে চুনীলাল মেধাবী ছাত্র ছিল, অন্যদিকে ছোটোবেলা থেকে একটু খ্যাপাটেও ছিল৷ চুনিলাল তন্ত্রসাধনা শুরু করার পর বন্ধুত্বে ছেদ পড়েছিল৷ নিজেকে সে বন্ধুদের থেকে গুটিয়ে নিয়েছিল৷ তার কথা শুনে অপরেশের খুব ভালো লাগল৷ তিনি বললেন, ‘সত্যি, তোর কথা শুনে ভালো লাগছে৷ কাজের মতো কাজ করছিস৷’

চুনিলাল তার প্রশংসা শুনে একটু লজ্জিত হয়ে বলল, ‘না, না, এ আর এমন কী! তবে শুধু মানুষ নয়, আমার বাড়ি গেলে আরও অন্য কিছু দেখতে পাবি৷’

চুনিলাল তার বাড়িটা কাছে বললেও বেশ কিছুটা দূরই৷ এ-জায়গাটা ফাঁকা ফাঁকা৷ একটা সময় ধনী বাঙালিরা এ-তল্লাটে হাওয়া বদলের জন্য বড়ো বড়ো বাড়ি বানাতেন৷ এরপর পুরনো দিনের নানা গল্প করতে করতে অবশেষে আধঘণ্টা পর চুনিলাল তাঁকে নিয়ে ঢুকলেন তেমনই একটা বাড়িতে৷ চুনিলালের বাড়ি৷

পুরনো দিনের বাড়ি৷ সদর দরজার ওপরে খসে পড়া পঙ্খের কাজ৷ কাঠের জাফরিওয়ালা বারান্দা, থামের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কড়িবরগার ছাদওয়ালা বড়ো বড়ো ঘর৷ বৈঠকখানায় বসলেন অপরেশ৷ চুনিলাল চা করে আনল৷ দুজনে বসে ঘণ্টাখানেক পুরোনো দিনের গল্প করার পর অপরেশ এক সময় বললেন, ‘আজ তবে উঠি৷ সন্ধ্যায় একটা মেল ট্রেন অ্যাটেন্ড করতে হবে৷’

চুনিলাল বলল, ‘আচ্ছা৷ তবে যাওযার আগে তোকে একটা জিনিস দেখাব৷ ওই যে বলছিলাম না যে শুধু মানুষ নয়…৷’

‘কী জিনিস?’

অপরেশের কথার জবাব দিতে চুনিলাল বৈঠকখানা থেকে তাঁকে নিয়ে উপস্থিত হল একটা ঘরে৷ সে-ঘরে ঢুকতেই একটা ভনভন শব্দ কানে গেল অপরেশের৷ চুনিলাল বাতি জ্বালাতেই অপরেশ দেখতে পেলেন বেশ কয়েকটা নানা আকারের খাঁচা রাখা আছে সেখানে৷ দুটো কাচের অ্যাকোরিয়ামও আছে৷ মসকিউটো নেট দিয়ে ঘেরা একটা খাঁচার সামনে অপরেশকে দাঁড় করাল চুনিলাল৷ ভনভন শব্দটা সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে৷ ভালো করে সেই খাঁচার ভিতর তাকাতেই অবাক হয়ে গেলেন অপরেশ৷ তার ভিতর সত্যিই ভনভন করছে অজস্র মশা৷ অপরেশ বিস্মিতভাবে বললেন, ‘তুই মশা পুষিস?’

চুনিলাল বলল, ‘হেঁ-হেঁ, হ্যাঁ, পুষি৷ ছোটো হলেও ওরাও তো জীব৷ ওদেরও প্রাণ আছে আমার তোর মতো৷ এ-ব্যাপারটা আমরা ভুলে যাই৷’

অপরেশ জিগ্যেস করল, ‘কী খেতে দিস?’

চুনিলাল তাঁর কথা শুনে তার দু-হাতের জামার হাতটা তুলল৷ কবজি অব্দি তার দু-হাত লাল হয়ে আছে৷ অসংখ্য মশার কামড়ের চিহ্ন জেগে আছে সে-দুটো হাতে! বিস্মিত অপরেশের উদ্দেশে সে বলল, ‘হাতদুটো খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়ে দিই৷ জীবসেবার জন্য সামান্য একটু ত্যাগ করতে পারব না?’

মশার খাঁচার পাশে দুটো অ্যাকোরিয়ামের একটাতে রাখা আছে দুটো ছোটো ব্যাং, আর অন্যটার মধ্যে একটা হেলে সাপ৷ তার গায়ে খাঁচায় রাখা আছে একটা ছোটো চিল জাতীয় পাখি৷ তাদের দেখিয়ে চুনিলাল এরপর বলল, ‘এদের সবাইকে সেবা করি আমি৷’

অপরেশ চুনিলালের হাতদুটো দেখে এতই অবাক হয়ে গেলেন যে তিনি ভেবে উঠতে পারলেন না তাকে তিনি কী বলবেন৷ অদ্ভুত প্রাণীগুলোকে দেখে শুধু বিস্ময় নয়, চুনিলালের প্রতি একটা শ্রদ্ধাও জেগে উঠল অপরেশের মনে৷ তুচ্ছ মশার প্রতি এত মমত্ব! চুনিলালের কাছ থেকে পরের রোববার অপরেশের বাড়িতে ভুরিভোজের আসার কথা আদায় করে অপরেশ শেষ পর্যন্ত তার বাড়ি ছাড়লেন৷

দুই

কথা ছিল চুনিলাল আসবে৷ সেদিন অপরেশের বাড়িতে দুপুরবেলা চুনিলালের নিমন্ত্রণ৷ সকালবেলা চুনিলালের টেলিফোন পেলেন অপরেশ৷ চুনিলাল ফোনে বলল, ‘বুঝলি ভাই, তোর বাড়িতে যাব তো ঠিকই, কিন্তু একটা অনুরোধ আছে৷ তোকে বলতে একটু সংকোচ হচ্ছে…৷’

চুনিলালের কথায় অপরেশ বললেন, ‘কী অনুরোধ বল৷’

চুনিলাল বলল, ‘সেই যে ছেলেটাকে আমার সঙ্গে দেখেছিলি, তাকে সঙ্গে নিলে আপত্তি আছে? আমি তো মাছ-মাংস খাই না৷ আমার ভাগেরটা নয় সেই খাবে৷ আসলে ওই বেওয়ারিশ বাচচাটাকে আমি দত্তক নিয়েছি বলতে পারিস৷ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত৷ আমি বাড়ি নিয়ে এসেছি…৷’

অপরেশ শুনে বললেন, ‘আরে এ তো দারুণ ব্যাপার৷ অবশ্যই সঙ্গে আন৷ তোকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি৷’

দুপুরবেলা বাচচাটাকে নিয়ে অপরেশের বাড়িতে হাজির হল চুনিলাল৷ বাচচাটার পরনে নতুন জামা, পায়ে চকচকে বুটজুতো৷ সুন্দর করে আঁচড়ানো চুল৷ প্রথমদিন দেখা বাচচাটার সঙ্গে এ-বাচচাটার যেন কোনও মিলই নেই৷ ঘণ্টাখানেক গল্পগুজবের পর খেতে বসল তিনজন৷ চুনিলাল নিরামিষাশী৷ খুব অল্পই খেল সে৷ কিন্তু বাচচাটা পরম আগ্রহে মাংস খেতে লাগল৷ আর পরম মমতায় চুনিলাল হাত বোলাতে লাগল তার পিঠে৷ অপরেশ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল তাদের দিকে৷ সত্যিই সামান্য পথশিশুর প্রতি চুনিলালের এত মমতা৷ অপরেশের নিজেকে চুনিলালের তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র মনে হল৷ কত বড়ো মাপের মানুষ চুনিলাল৷

খাওয়া শেষে বাড়ির পিছনে কলতলায় হাত ধোয়ার জন্য হাজির তিনজন৷ হঠাৎ একটা ক্ষীণ ‘মিউমিউ’ শব্দ শুনে সেদিকে ফিরে তাকাল তিনজন৷ একটা ছোট্ট বিড়ালের বাচচা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে তাদের কাছে৷ চুনিলাল তাকে দেখে বেশ উৎফুল্লভাবে বলল, ‘তুই এটাকে পুষেছিস নাকি? খুব সুন্দর দেখতে তো বাচচাটা!’

অপরেশ বললেন, ‘না, পুষি নি৷ দু-দিন ধরে কোথা থেকে যেন হাজির হয়েছে বাচচাটা৷ ক-দিন আগে একটা বেড়াল রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়েছিল৷ সম্ভবত বাচচাটা তারই৷’

চুনিলাল চুক চুক শব্দ করে আফশোসের সুরে বলল, ‘আহারে! মা-হারা বাচচা! ওর মধ্যেও তো একটা আত্মা আছে৷ তোর আপত্তি না থাকলে বাচচাটা আমাকে দিবি? আমি যত্নে রাখব বাচচাটাকে৷’

তার কথা শুনে সাগ্রহে অপরেশ বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিয়ে যা, নিয়ে যা৷ আমি তো তেমন একটা ঘরে থাকি না৷ তোর কাছেই ও ভালো থাকবে৷’

কথাটা শোনামাত্রই চুনিলালের উজ্জ্বল চোখদুটো খুশিতে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল৷ খপ করে চুনিলাল বাচচাটাকে তার কোলে তুলে নিল৷

খাওয়া শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর চুনিলালদের এগিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোলেন অপরেশ৷ গল্প করতে করতে অনেকটা পথ চলে এলেন তিনি৷ চুনিলাল এক সময় তাঁকে বলল, ‘অতটা পথই যখন এলি, তখন বিকেলের চা-টা আমার বাড়ি থেকেই খেয়ে যা৷’

এদিন তেমন কাজ ছিল না অপরেশের৷ আরও কিছুটা এগিয়ে তিনি অপরেশের বাড়ি পৌঁছোলেন তাঁর চায়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে৷ বাড়িতে ঢোকার পর চুনিলাল তার অদ্ভুত সংগ্রহশালায় ঢুকল বেড়ালের বাচচাটাকে রাখার জন্য৷ অপরেশও কৌতূহলবশত তার সঙ্গে সে-ঘরে ঢুকল৷ ভনভন শব্দটা কিন্তু কানে এল না সেদিনের মতো৷ অপরেশ দেখলেন সেই মসকিউটো নেট দিয়ে ঘেরা খাঁচাটা শূন্য আর ব্যাংগুলোও নেই৷ সাপটা অবশ্য কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়ে আছে তার নিজের জায়গাতে৷ পাখিটাও আছে৷ ঘাড় বেঁকিয়ে চুনিলাল আর বেড়ালের বাচচাটাকে দেখে একবার সে কর্কশস্বরে ডেকে উঠল৷ অপরেশ চুনিলালকে বললেন, ‘কী রে, তোর মশা আর ব্যাং গেল কোথায়?’

চুনিলাল একটু বিমর্ষভাবে প্রথমে বলল, ‘মশাগুলোকে শেষ পর্যন্ত ছেড়েই দিতে হল বুঝলি৷ তবে সে আমার কষ্টের কথা ভেবে নয়, এই ছেলেটার কথা ভেবে৷ নইলে আর ক-ফোঁটাই-বা রক্ত খেত মশাগুলো৷ কিন্তু মশার কামড়ে আমার যদি ম্যালেরিয়া হয় তবে এই বাচচাটাকে কে দেখবে বল? তারপর সে বলল, তবে ব্যাংগুলো বেশ ফূর্তিতেই আছে৷ বাড়ির পিছনের ডোবাটায় ওদের ছেড়ে দিয়েছি আমি৷’

চুনিলালের বাড়িতে চা খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে পড়লেন অপরেশ৷ রোজকার মতো তাঁর গন্তব্য ডাক্তার শাসমলের চেম্বার৷ এদিন তাঁকে অন্য রাস্তা দিয়ে আসতে দেখে শাসমল তাঁকে জিগ্যেস করলেন, ‘আজ অন্য কোথাও যাওয়া হয়েছিল নাকি?’

অপরেশ বললেন, ‘হ্যাঁ, ওই যে সেদিন আপনার এই চেম্বারে আমার যে বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সে চুনিলালের বাড়ি৷’

ডাক্তার জিগ্যেস করলেন, ‘আপনার ওই বন্ধু ভদ্রলোক কী করেন?’

অপরেশ বললেন, ‘সে অর্থে ও কোনও কিছু করে না৷ পয়সাওয়ালা ঘরের ছেলে চুনিলাল৷ এক সময় তন্ত্রসাধনা করত৷ এখন সে সব ছেড়েছুড়ে এক বৌদ্ধসাধুর পরামর্শে জীবসেবা করছে মোক্ষলাভের জন্য৷ জানেন, বড়ো অদ্ভুত মানুষ ও৷ ওকে যত দেখছি অবাক হচ্ছি৷ জীবসেবার জন্য ও মশা, ব্যাং, সাপ, চিল পোষে৷ একটা পথশিশুকেও রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নিজের বাড়িতে রেখেছে৷ আমার বাড়ি থেকে একটা বিড়ালের বাচচাও নিয়ে গেল৷ এমন মানুষ দেখা যায় না!’

ডাক্তার শাসমল হেলে বললেন, ‘তাই নাকি! মশা, ব্যাং, সাপ, চিল পোষেন? এ-প্রাণীগুলোর মধ্যে তো আবার খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক! কত বিচিত্র ধরনের মানুষ আছেন পৃথিবীতে!

তিন

স্টেশনমাস্টার অসুস্থতার কারণে ছুটিতে যাওয়ায় সপ্তাহখানেক খুব চাপ গেছিল অপরেশের৷ কাজের চাপে মাথা তোলবার সময় ছিল না৷ চুনিলালের সঙ্গে আর দেখা হয়নি তাঁর৷ ডাক্তার শাসমলের চেম্বারেও যাওয়া হয়নি৷ মাঝে অবশ্য একদিন তিনি চুনিলালকে টেলিফোন করেছিলেন৷ রিং হয়ে গেছে, ফোন তোলেনি সে৷ সেদিন সকালে স্টেনশমাস্টার আবার ফিরে এসে কাজে জয়েন করেছেন৷ তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে অপরেশ হালকা হয়ে ভাবছিলেন ডাক্তার শাসমলের চেম্বার আর চুনিলালের বাড়িতে পারলে একবার ঘুরে আসবেন৷ অনেকদিন দেখা হয়নি তাঁদের সঙ্গে৷

দুপুর নাগাদ নিজের বাড়িতে অপরেশ সবে ফিরেছেন, এমনসময় ডাক্তার শাসমলের টেলিফোন এল, ‘ও মশাই, আপনার তো কোনও পাত্তা নেই৷ এদিকে কাল রাতে আপনার সেই বন্ধু এসেছিলেন বাচচাটাকে নিয়ে৷ একটা অদ্ভুত ব্যাপার! সেটা জানাতেই ফোন করলাম৷’

‘কী ব্যাপার?’

ডাক্তার শাসমল বললেন, ‘বাচচাটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে! বমি-পায়খানা করছে৷ সেজন্যই দেখাতে এনেছিলেন আমার কাছে৷ বাচচাটা আমার সামনেই বমি করল৷ দেখলাম বমির মধ্যে বিড়ালের লোম! চুনিলালবাবু অবশ্য বললেন যে বিড়ালের বাচচাটার খুব লোম উঠছে৷ বিড়ালটাকে নিয়ে খেলার সময় সেই লোম বাচচাটার পেটে গেছে! কিন্তু আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে৷ সেটা আপনাকে পরে বলব৷ আপনি একবার ভদ্রলোকের বাড়ি ঘুরে আসুন তো৷ তারপর কথা হবে আপনার সঙ্গে৷

অপরেশ বেশ অবাক হয়ে গেলেন তাঁর কথা শুনে৷ তিনি বললেন, ‘আমার সঙ্গে বেশ কিছুদিন ওর দেখা হয়নি৷ ঠিক আছে, আমি ওর বাড়ি হয়ে আপনার চেম্বারে যাচ্ছি৷’

কোনওরকমে স্নান-খাওয়া সেরে অপরেশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন৷ এক সময় তিনি পৌঁছে গেলেন চুনিলালের দরজায়৷ এল প্যাটার্নের দোতলা বাড়িটার সদর দরজা খোলা৷ দরজা দিয়ে ঢোকার সময় অপরেশ হাঁক দিলেন, ‘চুনিলাল? চুনিলাল আছিস?’

দোতলার একটা ঘরের জানলা হঠাৎ খুলে গেল৷ চুনিলাল মুহূর্তের জন্য উঁকি দিয়ে দেখে ব্যগ্রভাবে বলল, ‘ও তুই? আমি আসছি৷’

যদিও জানালাটা মুহূর্তের জন্যই খুলল, কিন্তু সেই এক ঝলকের জন্য অপরেশের মনে হল চুনিলালের পরনে যেন রক্তাম্বর৷ বৈঠকখানায় ঢুকে অপরেশ বসলেন৷ সামনের টেবিলের ওপর লাল শালুর একটা খাতা খোলা৷ একটা কলমও রাখা৷ তা দেখে অপরেশের মনে হল, লিখতে লিখতে হঠাৎ যেন উঠে গেছিল চুনিলাল৷ সে খাতার ওপর চোখ পড়তেই তাতে একটা অদ্ভুত অঙ্ক দেখতে পেলেন অপরেশ—

‘৯৯৪ টা আত্মা (মশা)+২টো আত্মা (ব্যাং)+১টা আত্মা (সাপ)+১টা আত্মা (চিল)+১টা আত্মা (বিড়াল)+একটা আত্মা=১০০০ আত্মা (অমরত্ব)৷

খুব অদ্ভুত হিসাব তো! কিন্তু ব্যাপারটা বোঝার আগেই চুনিলাল ঝড়ের বেগে সে-ঘরে প্রবেশ করে খাতাটা ছোঁ-মেরে টেবিল থেকে উঠিয়ে নিল৷ তার পরনে একটা প্যান্ট আর বোতাম খোলা জামা৷ বোঝাই যাচ্ছে কোনওরকমে আগের পোশাক পালটে ছুটে এসেছে সে৷ অপরেশ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘কীরে, তোর কোনও খবর নেই কেন? কেমন আছিস?’

চুনিলাল জবাব দিল, ‘কাজে ব্যস্ত ছিলাম, তাই দেখা হয়নি৷’

অপরেশ এবার পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে পাশের ঘরটায় উঁকি দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘কীরে, আমার বেড়ালের বাচচাটা কই? তোর অন্য খাঁচাগুলোও তো ফাঁকা দেখছি!’

চুনিলাল তার খোনা গলায় জবাব দিল, ‘সব দূর করে দিয়েছি৷’

অপরেশ বেশ আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলেন, ‘দূর করে দিয়েছি মানে?’

চুনিলাল সে-কথার জবাব না দিয়ে বলল, ‘শোন, তুই এখন আয়৷ আমি ভীষণ ব্যস্ত আছি, পরে একদিন কথা হবে৷

এরপর আর কারো বাড়িতে থাকা চলে না৷ ফিরতে গিয়ে হঠাৎ তাঁর চোখ গেল ঘরের মেঝেতে যেন কালচে রঙের ফোঁটা ফোঁটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে৷

অপরেশ সে-বাড়ি থেকে বেরিয়ে এরপর কার্যত ছুটতে শুরু করলেন ডাক্তার শাসমলের চেম্বারের দিকে৷

ডাক্তার শাসমলও যেন ব্যাগ্র হয়ে অপরেশের প্রতীক্ষা করছিলেন৷ তাঁকে দেখেই তিনি বললেন, ‘গেছিলেন ওখানে? কী দেখলেন?’

অপরেশ খুলে বললেন তাঁর অভিজ্ঞতা৷ খাতায় সেই অদ্ভুত লেখাটার কথা বলতেই ডাক্তার শাসমল উঠে প্রথমে উত্তেজিতভাবে একটা শব্দ উচচারণ করলেন, ‘জুফাগাউস!’ তারপর বললেন, ‘বাচচাটা? সে বাচচাটা কোথায়?’

অপরেশ বললেন, ‘বাচচাটাকে আমি দেখিনি৷ কিন্তু ‘জুফাগাউস’ শব্দের মানে কী?’

ডাক্তার শাসমল বললেন, ‘শব্দের মানে পরে বোঝাব৷ আমার অনুমান ঠিক হলে ভয়ংকর কিছু ঘটতে চলেছে৷ এখনই থানায় যেতে হবে৷ তারপর সেখান থেকে চুনিলালের বাড়ি৷ দেখি যদি বাচচাটাকে বাঁচানো যায়৷ আজ আবার অমাবস্যা৷ ও কাজের জন্য তন্ত্রসাধকরা সাধারণত এসব দিনই বেছে নেয়৷

চার

অপরেশ, ডাক্তার শাসমল একজন অফিসার সহ জনা কয়েক পুলিশকর্মী যখন চুনিলালের বাড়ি পৌঁছোলেন তখন অন্ধকার নেমে গেছে৷ ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বাড়িটা৷ কোথাও কোনও আলো জ্বলছে না৷ সদর দরজা বন্ধ৷ বাড়ির পিছনে গিয়ে সেখানে একটা দরজা যন্ত্রের সাহায্যে একজন পুলিশকর্মী খুলে ফেলল৷ বাড়ির ভিতরটাও অন্ধকার৷ একতলার ঘরগুলো শূন্য৷ দোতলায় নিঃশব্দে উঠে আসার পর তাঁরা শুনতে পেল দোতলার কোনার ঘর থেকে একটা শব্দ ভেসে আসছে৷ কে যেন সুর করে কী বলছে৷ অপরেশ গলাটা চিনতে পেরে বললেন, ‘চুনিলালের গলা৷’

পায়ে পায়ে নিঃশব্দে তাঁরা গিয়ে দাঁড়ালেন সে-ঘরের সামনে৷ দরজার পাল্লাটা ফাঁক করা৷ বাতি জ্বলছে ঘরে৷ একটা খাটে শুয়ে আছে বাচচাটা৷ মাথার কাছে চুনিলাল বসে৷ তার পরনে রক্তাম্বর৷ বাচচাটার মাথায় পরম মমতায় হাত বোলাতে বোলাতে চুনিলাল খোনা গলায় সুর করে ছড়া কাটছে— ‘ছেলে ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গী এল দেশে… বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে…৷’

ব্যাপারটা দেখে পুলিশ অফিসার অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে একবার তাকালেন ডাক্তার শাসমলের দিকে৷ যেন বলতে চাইলেন এতে তো অস্বাভাবিকের ব্যাপার কিছু নেই৷ পুলিশকে এখানে আনলেন কেন? শেষে না মানহানির মামলায় পড়তে হয়৷ অসুস্থ বাচচাটা এর পরই হঠাৎ গোঙিয়ে উঠল৷ অপরেশরা এরপর একটা অদ্ভুত কথা শুনতে পেল চুনিলালের মুখ থেকে৷ ছড়া থামিয়ে বাচচাটার উদ্দেশে বলল, ‘ঘুমিয়ে পড়ো, ঘুমিয়ে পড়ো৷ আর তো কিছুক্ষণ৷ রাত বারোটা বাজলেই তোমাকে এ-পৃথিবীর সব কষ্ট, দুঃখ, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেব আমি৷ এই বলে সে আবার ছড়া কাটতে লাগল, ‘ছেলে ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গী এল দেশে…৷’

ডাক্তার শাসমলের ঠোঁটে এত উত্তেজনার মধ্যেও যেন একটা চাপা হাসি ফুটে উঠল৷ চাপা স্বরে তিনি অপরেশকে বললেন, ‘ঘরে ঢুকে আমি চুনিলালকে কবজা করছি৷ আপনি সে-সুযোগে ছেলেটাকে উঠিয়ে নেবেন৷ ওকে বাঁচাতে হবে৷’

কয়েকমুহূর্তের নিস্তব্ধতা৷ নিঃশব্দে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন দুজন৷ তারপরেই ডাক্তার শাসমল ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে গিয়ে পিছন থেকে জাপটে ধরলেন৷ দুজনের ধস্তাধস্তি শুরু হল৷ দুজনেই ছিটকে পড়ল মাটিতে৷ সেই ফাঁকে অপরেশ বাচচাটাকে কোলে তুলে নিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়াল৷ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে এরপর ডাক্তার শাসমলকে মাটিতে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল চুনিলাল৷ চুনিলালের মুখ বীভৎসরূপ ধারণ করেছে৷ তার চোখদুটো হিংস্র শ্বাপদের মতো জ্বলছে৷ ঠোঁটের দু-কষ বেয়ে ফেনা গড়াচ্ছে৷ হাঁফাতে হাঁফাতে অপরেশের উদ্দেশে সে বলল, ‘দিয়ে দে, বাচচাটা আমাকে দিয়ে দে৷ আমার সাধনা শেষ মুহূর্তে আমি ব্যর্থ হতে দেব না৷ নইলে…৷’ এই বলে সে বালিশের তলা থেকে একটা ধারালো ছুরি বার করে এগিয়ে আসতে লাগল অপরেশের দিকে৷ জিঘাংসা ফুটে উঠেছে তার মুখে৷ সে বলতে লাগল, ‘দে, দে, বাচচাটা আমাকে দিয়ে দে, ও আমাকে অমরত্ব দেবে, অমরত্ব…৷’

ঠিক এই সময় রিভলভার হাতে ঘরে ঢুকলেন পুলিশকর্মীরা৷ তাঁদের দেখে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল চুনিলাল৷ ঠিক সেই সময় লাফিয়ে উঠে চুনিলালকে আবার পিছন থেকে জাপটে ধরলেন শাসমল৷ ছুরিটা তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তাকে বেঁধে ফেলা হল৷ সে কিন্তু প্রথমে দমল না৷ বেশ ঝাঁঝিয়ে উঠে সে বলল, ‘কী অভিযোগে আমাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? আমি মামলা করব৷ আমার বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করতে পারবেন না আপনারা৷’

অফিসার বললেন, ‘খুনের চেষ্টার অভিযোগে৷ এই মাত্র ছুরি হাতে অপরেশবাবুকে আক্রমণ করতে যাচ্ছিলেন আপনি৷’

পুলিশের বুদ্ধির কাছে ফেঁসে গেছে বুঝতে পেরে এবার ভেঙে পড়ল চুনিলাল৷ সে এরপর কাকুতিমিনতি করে বলতে লাগল, ‘দোহাই, আপনাদের পায়ে ধরি, একরাতের জন্য আমাকে আর বাচচাটাকে আলাদা থাকতে দিন৷ তারপর আপনারা যা ইচ্ছে করুন আমাকে নিয়ে৷’

বারবার একই অনুনয় করতে লাগলেন৷

পাঁচ

পরদিন ভোরে থানায় অফিসারের ঘরে বসেছিলেন অপরেশবাবুরা৷ তাঁদের সামনে টেবিলের ওপর রাখা ছিল চুনিলালের অদ্ভুত হিসেবলেখা খাতা আর ছুরিটা৷ ডাক্তার শাসমল পুলিশ অফিসারের উদ্দেশে বললেন, ‘প্রথম যেদিন অপরেশবাবু আমাকে জানালেন তাঁর বন্ধু মশা, ব্যাং, সাপ, চিল আর বিড়াল পুষছেন তখনই আমার খটকা লেগেছিল৷ এদের মধ্যে তো খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক৷ তারপর যখন বাচচাটার পেট থেকে বেড়ালের লোম বেরুল তখন একটা সন্দেহ উঁকি মারল আমার মনে৷ বিড়ালটার কাঁচা মাংস তিনি বাচচাটাকে খাওয়াননি তো? নানা বিষয়ের বই পড়ি আমি৷ হঠাৎই আমার মনে পড়ে গেল তন্ত্রশাস্ত্র নিয়ে একটা বইয়ের কথা৷ তাতে বলা আছে কোনও প্রাণীকে হত্যা করে কেউ যদি তাকে খায় তবে প্রথম প্রাণীর আত্মার শক্তি ও জীবন দ্বিতীয় প্রাণীতে সঞ্চারিত হয়৷ এভাবে এক প্রাণী থেকে আর এক প্রাণীতে জীবনীশক্তি প্রবাহিত পারে৷ কীটপতঙ্গ থেকে বিভিন্ন প্রাণীর স্তর অতিক্রম করে কোনও মানুষের মধ্যে তাদের জীবনীশক্তি সঞ্চিত করে যদি সেই মানুষের রক্তপান করা যায় তবে নাকি অমরত্ব লাভ হয়৷ চুনিলাল মশা খাইয়েছিল ব্যাংকে, তাদের খেল সাপ, সাপকে চিল খাওয়ার পর তাকে খেল বিড়ালটা৷ আর বিড়ালের বাচচাটাকে খাওয়ানো হয়েছিল ছেলেটাকে৷ শেষ ভয়ংকর ব্যাপারটাই শুধু সে করতে পারল না আমাদের জন্য৷ এ-ধরনের লোককে বলে ‘জুফাগাউস’, বা ‘আত্মা ভুক আত্মা৷’

কথা হচ্ছিল৷ একটন সেন্ট্রি এসে বলল, ‘কাল রাতের কয়েদি আপনাদের ডাকছে৷’

কথাটা শুনে সবাই গারদঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল৷ গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে চুনিলাল৷ তার মুখে শান্ত ভাব৷ উত্তেজনার কোনও চিহ্ন নেই৷ সে অফিসারের উদ্দেশে বলল, ‘আমাকে একটা খাতা-কলম দেওয়া যাবে?’

অফিসার বললেন, ‘কেন, কী করবেন?’

চুনিলাল অন্ধকার গারদঘরটার ভিতরে একবার তাকিয়ে নিয়ে একটু যেন খুশি মনেই বলল, ‘এ ঘরে অনেক মশা আছে দেখছি৷ মাকড়শাও আছে৷ আজ ঘুলঘুলিতে একটা চড়াই দেখলাম৷ সেটাকে ধরা যেতে পারে৷ এদের নিয়ে একটা হিসাব কষব৷ তার জন্য খাতা-পেন চাই৷ আর কিচুদিন পরে একটা বেড়ালের বাচচা দেবেন৷ বেড়াল আমি বড়ো ভালোবাসি৷’

চুনিলালের কথা শুনে অপরেশবাবু বিস্মিতভাবে তাকিয়ে রইলেন তার দিকে৷ পাশ থেকে ডাক্তার শাসমল বললেন, ‘এদের বলে ‘জুফাগাউস ম্যানিয়াক৷’ অর্থাৎ ‘আত্মা ভুক উন্মাদ৷’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *