আঁধার রাতের বন্ধু

আঁধার রাতের বন্ধু

পুজোর আগের দুটো মাস খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটে ‘দৈনিক হইচই’ পত্রিকার সম্পাদক হলধর সামন্তর৷ লিটিল ম্যাগাজিন দিয়ে জীবন শুরু করে ছিলেন একসময়, তারপর আস্তে আস্তে বড়ো কাগজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, তারপর একসময় সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়া৷ বিগত চল্লিশ বছরের এই দীর্ঘপথ পরিক্রমায় লেখক-পাঠক মহলে তার পরিচিতি সর্বত্র৷ আর এই সুবাদেই পুজো সংখ্যা প্রকাশের আগে নানা ঝঞ্ঝাটের মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে৷ এক-এক সময় অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, দপ্তরে বসে কাজ করা পর্যন্ত মুশকিল হয়ে ওঠে৷ নানা অনুরোধ-উপরোধের ঠেলায় জেরবার হয়ে যান তিনি৷

পুজো সংখ্যার লেখা নির্বাচনের কাজটা বরাবরই নিজেই করে থাকেন হলধরবাবু৷ কিন্তু দপ্তরে থাকলে পাণ্ডুলিপি দেখার কাজ হয়ে ওঠে না৷ তাই অফিসের নিত্যদিনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে গত সাত দিন ধরে কলকাতা থেকে কিছু দূরের এক শহরতলিতে আত্মগোপন করে বসে আছেন হলধরবাবু৷ এখানে এসে পাণ্ডুলিপি দেখার কাজ প্রায় নব্বই শতাংশ শেষ করে ফেলেছেন৷ কালই কলকাতায় ফিরে যাবেন৷ রাত প্রায় দশটা বাজে৷ এখানে রাত দশটা মানে অনেক রাত৷ এখনও বিদ্যুৎ এসে পৌঁছোয়নি৷ সন্ধ্যে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ দু-কামরার এই ছোট্ট বাড়িতে একলা বসে হ্যারিকেনের আলোতে পাণ্ডুলিপির খাতা উলটাচ্ছেন হলধর৷ একটা সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা ইতস্তত করছেন৷ তাঁর সামনে এখন মাত্র দুটো পাণ্ডুলিপি৷ তার মধ্যে একটা হল কল্পবিজ্ঞানের বিখ্যাত লেখক কাশীনাথ সাঁতরার গল্প ‘স্ফটিক গ্রহের যাত্রী’, আর একটা হল ‘আঁধার রাতের বন্ধু’ নামে একটা ভূতের গল্প৷ লেখকের নাম নিশিকান্ত হাজরা৷

নিশিকান্ত হাজরার নাম কোনোদিন লেখক হিসাবে শুনেছেন বলে মনে করতে পারলেন না হলধরবাবু৷ তবে ভদ্রলোক লিখেছেন বেশ জব্বর৷ সত্যিকথা বলতে কী, কাশীনাথ সাঁতরার চেয়ে নিশিকান্তর লেখাটাই অনেক বেশি মনে ধরেছে৷ নিরপেক্ষভাবে ছাপতে গেলে নিশিকান্তর লেখাই ছাপতে হয় তাকে৷ কিন্তু মুশকিল হল পত্রিকা চালাতে হলে শুধু লেখা নয় আরও অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়৷ কাশীনাথ সাঁতরা নামী লেখক, তার নামে পত্রিকার পাবলিসিটির দিকটা ভালো হবে৷ অপরদিকে নিশিকান্ত অজ্ঞাতকুলশীল৷ তার লেখাটা ভালো হলেও একটা রিস্ক থেকে যায়৷

হলধরবাবু সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে একমনে চিন্তা করতে লাগলেন৷ এমনসময় হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ৷ নিশ্চয়ই শঙ্কর বলে ছেলেটা রাতের খাবার এনেছে৷ টেবিল থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন হলধর৷ কিন্তু দরজা খুলতেই ভয়ংকর চমক৷ না শঙ্কর নয়, বছর ষাটেকের এক ক্ষীণকায় ভদ্রলোক৷ বৃষ্টিতে একেবারে ভিজে গেছেন৷ লন্ঠনের আলোয় যতটুকু দেখলেন তাতে তাঁকে খারাপ লোক বলে মনে হল না হলধরের৷ তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘কাকে চাই?’

ভদ্রলোক কিছুটা ইতস্তত করে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না৷ আমি অনেক দূর থেকে এখানে এসেছিলাম একটা কাজে৷ ফিরতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল৷ ভেবেছিলাম দশটার বাসটা ধরতে পারব৷ কিন্তু বাস চলে গেল সামনে দিয়ে৷ শেষ বাস রাত বারোটায়৷ এখনও প্রায় দু-ঘণ্টা বাকি৷ দোকানপাটের আলোও সব নিভে গেছে৷ ভেবেছিলাম বাস স্ট্যান্ডেই সময়টা কাটিয়ে দেব৷ কিন্তু এত জোরে বৃষ্টি শুরু হল যে, ওখানে আর দাঁড়ানো যাচ্ছে না৷ তাই আশেপাশে কোথায় আশ্রয় পাওয়া যায় কি না খুঁজতে খুঁজতে . . .৷’

ভদ্রলোক আর কথাটা শেষ করলেন না৷ হলধরবাবু বললেন, ‘ভিতরে আসুন৷’

ভেতরে ঘরের কোনায় একটা চেয়ার রাখা আছে৷ ভদ্রলোক তার ওপরে বসে বললেন, ‘ধন্যবাদ, আজকালকার বাসগুলো যা হয়েছে মশাই, হাত দেখালাম তবু থামল না৷’

হলধরবাবু বললেন, ‘বাসস্ট্যান্ড তো এখান থেকে অনেকদূর৷ এতটা পথ বৃষ্টির মধ্যে এলেন কী করে?’

ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, ‘আসলে অচেনা জায়গা৷ হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ড থেকে এতটা দূর চলে এসেছি, বুঝতে পারিনি৷’

একটু থেমে বললেন, ‘আপনি কাজ করছিলেন দেখছি৷ আপনার অসুবিধা করলাম৷ বৃষ্টি একটু কমলেই আমি চলে যাব৷’

‘ঠিক আছে, ব্যস্ত হবার কিছু নেই৷’ এই বলে টেবিলের সামনে বসে হলধরবাবু ডুবে গেলেন নিজের কাজে৷ যেকোনো একটা লেখাকে নির্বাচন করতে হবে৷ দুটো লেখা ছাপাবার মতন জায়গা নেই৷

বাইরে বৃষ্টি আরও জোরে শুরু হয়েছে৷ হলধরবাবু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন কাশীনাথ সাঁতরার লেখাটাই ছাপবেন৷ কাশীনাথবাবুকে চটিয়ে লাভ নেই৷ সামনের ডিসেম্বরে কাশীনাথবাবুর লেখক জীবনের পঁচিশ বছর পূর্ণ হচ্ছে৷ হলধরবাবু ভেবে রেখেছেন ‘হইচই’ প্রকাশনা সংস্থা থেকে কাশীনাথের একটা গল্প সংকলন বার করবেন৷ বইয়ের নামটাও মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন৷ ‘পঁচিশ বছরের শ্রেষ্ঠ কল্পবিজ্ঞানের গল্প’৷

পাণ্ডুলিপির ওপর মনোনীত কথাটা লিখতে যাবেন, এমন সময় চেয়ারে বসা ভদ্রলোক হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি৷’

হলধরবাবু গলার শব্দ পেয়ে প্রথমে চমকে গেছিলেন৷ অনেকক্ষণ কেটে গেছে এরমধ্যে৷ চিন্তাভাবনায় থাকার জন্য ভদ্রলোকের উপস্থিতি ভুলতে বসেছিলেন৷ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, বলুন৷’

ভদ্রলোক বললেন, ‘ভূতের গল্প বলেই কি লেখাটা বাদ হল?’

হলধর একটু আশ্চর্য হলেন৷ ভদ্রলোক জানলেন কী করে যে নিশিকান্তর লেখাটা তিনি মনোনীত করেননি! তারপর ভাবলেন ভদ্রলোক হয়তো কোনো সময় তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন৷ তিনি খেয়াল করেননি৷ অনেকের এমন স্বভাব থাকে৷ টেবিলের ওপর পত্রিকার ঠিকানা লেখা অনেক পাণ্ডুলিপির প্যাকেট আছে৷ ভদ্রলোক হয়তো বুঝতে পেরেছেন তিনি লেখা নির্বাচন করতে বসেছেন৷ হলধরবাবু কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও জবাব না দেওয়াটা নিতান্তই অভদ্রতা হবে মনে করে বললেন, ‘বিজ্ঞানের যুগ, গাঁজাখুরি ভূতের গল্পর বদলে কল্পবিজ্ঞানের গল্প ছাপানোই ভালো৷’

ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললেন, ‘আপনার কাশীনাথ সাঁতরার গল্পের নায়ক দু-হাজার আলোকবর্ষ দূরের স্ফটিক গ্রহে বসে বেগুনি দিয়ে মুড়ি খাচ্ছে-সেটা গাঁজাখুরি হল না, শুধু ভূতের গল্প বলেই গাঁজাখুরি হল!’

হলধরবাবু হতভম্ব হয়ে গেলেন ভদ্রলোকের কথা শুনে৷ সত্যিই তো কাশীনাথ সাঁতরার গল্পের নায়ক ‘রোবট দত্ত’ স্ফটিক গ্রহে বসে বেগুনি-মুড়ি খাচ্ছে গল্পের মধ্যে৷ কিন্তু এটা তো ভদ্রলোকের জানার কথা নয়৷ ভদ্রলোকের মুখের দিকে এবার সোজাসুজি তাকালেন হলধর৷ কী আশ্চর্য! ভদ্রলোকের বয়স যে হঠাৎ বছর কুড়ি নীচে নেমে গেছে! হলধরবাবুর মাথার ভেতরে কেমন জানি সবকিছু জট পাকিয়ে যেতে লাগল৷ বুকের ভেতর যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে কে৷ হলধরবাবু মনের সব জোর একত্রিত করে বললেন, ‘আপনি কে? এত কিছু জানলেন কী করে?’

ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি জানি৷ কিন্তু আমার প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা এখনও পেলাম না৷’

হলধরের সমস্ত চিন্তা আস্তে আস্তে যেন লোকটার নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে৷ আপ্রাণ চেষ্টা করেও যেন নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না৷ অসহায় হলধর এবার জবাবদিহির সুরে বলতে আরম্ভ করলেন, ‘মানছি, ভূতের গল্পটা কাশীনাথবাবুর গল্পের চেয়ে ভালো৷ কিন্তু ভূতের গল্প যিনি লিখে পাঠিয়েছেন তার নাম আগে কোনোদিন শুনিনি, লেখাও কোনো কাগজে পড়িনি৷ একেবারে অজ্ঞাতকূলশীল! হয়তো তিনি বড়ো কোনো লেখকের প্রকাশিত গল্প কপি করেছেন৷ এমন ঘটনা অনেক সময় হয়৷ এই নিয়ে পরে যদি বিপত্তি হয় তাহলে কী কৈফিয়ত দেব আমি? আমিও তো চাকরি করি৷’

লোকটা শুনে বলল, ‘কপির কথা যখন বললেন তাহলে বলি, আজ দুপুরে নামী লেখক হরিদাস গায়েনের ‘হাকিমপুরের হত্যা রহস্য’ বলে যে লেখাটা পুজো সংখ্যার জন্য নির্বাচন করলেন তার প্লট তো চল্লিশ বছর আগে রহস্য-রোমাঞ্চ পত্রিকায় প্রকাশিত বেণীমাধব সরখেলের নরপিশাচ গল্প থেকে হুবহু কপি করা৷ শুধু পাত্র-পাত্রীর নামটা পরিবর্তন করা হয়েছে৷’

হলধরবাবু বিস্মিত হলেন লোকটার কথাগুলো শুনে৷ কিশোর বয়সে তিনি রহস্য-রোমাঞ্চ পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন৷ এখনও বাড়িতে তাঁর বাঁধানো খণ্ডগুলো রাখা আছে৷ নরপিশাচ গল্পটা তিনিও পড়েছিলেন৷ তাই দুপুরে পাণ্ডুলিপি দেখার সময় বারবারই মনে হচ্ছিল হরিদাস গায়েনের লেখাটা আগে যেন কোথাও দেখেছেন৷ নামী লেখক বলে মনের সন্দেহ দূরে রেখে ছাড়পত্র দিয়েছেন৷ দু-হাত দিয়ে মাথাটা জোরে চেপে ধরে টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়লেন হলধর৷ প্রতিটা মুহূর্ত যেন এক-একটা ঘণ্টা৷

‘এবার তাহলে আসি হলধরবাবু৷’

নিজের নামটা শুনে হলধরবাবু আস্তে আস্তে তাকালেন লোকটার দিকে৷ তার সামনে এখন দাঁড়িয়ে হাসছে বছর কুড়ি বয়সের এক যুবক৷

‘আর তো বয়স কমানো যাবে না হলধরবাবু৷ ভালো থাকবেন৷ নমস্কার৷’

হলধরবাবুকে নমস্কার করে ধীর পায়ে সে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে৷ বেরোবার সময় লন্ঠনের মৃদু আলোয় হলধর লক্ষ করলেন তার বাঁ-গালে বড়ো একটা আঁচিল৷

খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে হতভম্বের মতন বসে ছিলেন হলধরবাবু৷ সংবিৎ ফিরল খাবার নিয়ে আসে যে ছোকরা, সেই শঙ্করের ডাকে৷ রাত এখন বারোটা৷ বৃষ্টির জন্য আসতে তার অনেকটা দেরি হয়েছে৷ তাকে কিছু বললেন না হলধরবাবু৷ এতক্ষণ হয়তো তিনি একটা স্বপ্ন দেখছিলেন৷ খেয়ে-দেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন হলধরবাবু৷

সারারাত ভালো করে ঘুম হল না তাঁর৷ বারবারই কেন জানি স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলেন সেই আঁচিলওলা গালটা৷

ভোর বেলা উঠেই হলধর গাড়ি নিয়ে সোজা রওনা দিলেন কলকাতায়৷ মনের মধ্যে ক্রমশ একটা সন্দেহ দানা বাঁধছে তাঁর৷ বাড়ি পৌঁছে তিনি আলমারির তাক থেকে অনেকদিন পরে নামিয়ে আনলেন একটা পুরোনো ছবির অ্যালবাম৷ অ্যালবামের অধিকাংশ ছবিই তাঁর কৈশোর-যৌবনের৷ পাতা উলটে দেখতে দেখতে খুঁজে বার করলেন বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একটা ছবি৷ কিশোর বয়সে যখন তিনি মফস্বল শহরে থাকতেন সেই সময়কার স্টুডিয়োতে তোলা একটা গ্রুপ ছবি৷ চশমার কাঁচটা ধুতির খুট দিয়ে ভালো করে মুছে ছবিটাকে চোখের সামনে তুলে ধরলেন৷ ছবিতে জনা দশেক ছেলের মধ্যে তিনিও আছেন৷ সে আজকের মেদবহুল-পক্ককেশ-মোটা চশমাধারী হলধর নয়, চল্লিশ বছর আগের ছিপছিপে কিশোর হলধর৷ আর তার একপাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হলধরের সমবয়সি৷ ভালো করে লক্ষ করে হলধর দেখতে পেলেন তার বাঁ-গালে একটা বড়ো আঁচিল৷ হাজু-হাজরা-নিশিকান্ত-নিশিকান্ত হাজরা৷ জলের মতন সবকিছু মনে পড়ে গেল হলধরবাবুর৷ নিশিকান্ত চল্লিশ বছর আগের মানদাসুন্দরী স্কুলের ফার্স্ট বয়, হলধরের সহপাঠী ‘হাজু’৷ যে অনেক অনেক বছর আগে নিজের জলপানির টাকা তুলে দিয়েছিল হলধরের হাতে৷ সেই টাকা দিয়ে মফস্বল শহরে একটা ক্ষুদ্র পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন হলধর৷ বলা বাহুল্য জীবনের প্রথম সম্পাদনার কাজ সেই পত্রিকায়৷ পত্রিকার একটা সংখ্যা প্রকাশের পরই বাবার কলকাতায় বদলি হওয়ার সূত্রে কলকাতায় আসা৷ আস্তে আস্তে বড়ো হয়ে ওঠা৷ সেই ফেলে আসা জীবনের আর কারোর সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতে পারেননি হলধর৷

দপ্তরে এসে চুপচাপ বসেছিলেন হলধরবাবু৷ কেউ যেন আজ তাঁকে ডিস্টার্ব না করে, সবাইকে বলে দিয়েছেন৷ বারবার মনে আসছে নিশিকান্তর কথা৷ অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর, বেয়ারাকে গত সাত দিনের দৈনিক ‘হইচই’ আনতে বললেন৷ কলকাতায় থাকলে প্রত্যেক দিনের পত্রিকায় কোনো ত্রুটি আছে কি না খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হয় তাঁকে৷

বেয়ারা এসে কাগজগুলো দিয়ে গেল৷ দেখতে শুরু করলেন তিনি৷ পত্রিকা দেখতে দেখতে ছোট্ট একটা সংবাদে চোখ আটকে গেল তার৷ সংবাদের শিরোনাম ‘বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু’৷ তাতে লেখা হয়েছে-নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসাত : গতকাল রাত দশটা নাগাদ নীলগঞ্জের কাছে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়৷ মৃতের আনুমানিক বয়স ষাট বছর৷ মৃতের কাছ থেকে একটা কাগজ পাওয়া গেছে৷ তার থেকে পুলিশের ধারণা মৃতের নাম সম্ভবত নিশিকান্ত হাজরা৷ মৃতের ঠিকানা পুলিশ অনুসন্ধান করছে৷ সনাক্তকরণ চিহ্ন হিসাবে তার বাঁ-গালে একটা বড়ো আঁচিল আছে৷ ধৃত বাস ড্রাইভারের বয়ান অনুযায়ী বৃষ্টির মধ্যে বাস থামানোর জন্য হঠাৎই চলন্ত বাসের সামনে চলে আসেন তিনি৷ তার থেকে এই দুর্ঘটনা৷ হলধরবাবুর সামনে সব কিছু যেন টলে উঠল৷ টেবিলের ওপর ঢলে পড়লেন তিনি৷

প্রায় এক মাস পর হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেন হলধরবাবু৷ তাঁর অসুস্থতার কারণে সেবার পুজোর সংখ্যা ছাপতে একটু দেরি হল৷ তবে তার সূচিপত্রে যে গল্পটির নাম প্রথম ছাপা হয়েছিল তা হল ‘আঁধার রাতের বন্ধু’ লেখকের নাম-নিশিকান্ত হাজরা৷

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *