আঁধারে গোপন খেলা – ৩

ওক কাঠের তৈরি বিরাট একটা সেক্রেটারিয়েট টেবিল ঘিরে বসেছিলেন বেশ কিছু লোক৷ তাঁদের কারোরই পরনে বর্তমানে সামরিক পোশাক না থাকলেও তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ সামরিক বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্তা, বিশেষত সামরিক গুপ্তচর বিভাগের লোকজন৷ আর আছেন এমন কিছু লোকজন, যাঁরা পেশাগতভাবে কেউ বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, ক্রিপ্টোবিশেষজ্ঞ বা গণিতবিদ হলেও বর্তমানে এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে নৌসেনা বিভাগের অধীনে ব্লেচলি পার্কে ‘গভর্নমেন্ট কোড অ্যান্ড সাইফার স্কুল’-এর জন্য কাজ করছেন৷ যাঁদের কাজ হল শত্রুপক্ষের গুপ্ত সংকেত উদ্ধার করা, প্রয়োজন হলে ব্রিটিশ সরকারের খবরাখবর আদান-প্রদানের জন্য সাংকেতিক ভাষা নির্মাণ করা৷ এই শেষোক্ত দলের মধ্যে রয়েছেন অ্যালান, আলেকজান্ডার, আর ওয়েলেশম্যান৷ সদর দপ্তরে সবাই অপেক্ষা করছিলেন বিশেষ একজনের জন্য৷ তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পলিটিক্যাল এজেন্ট ও যুদ্ধের সময় দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন৷ তাঁর নাম একটা নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু তিনি তাঁর সাংকেতিক নাম ‘মিস্টার চার্লি’ হিসাবেই পরিচিত৷

গ্র্যান্ডফাদার ক্লকে ঢং করে শব্দ হল৷ আর শব্দটা হবার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের গুঞ্জন থেমে গেল৷ কাঁটায় কাঁটায় ঠিক দশটাতে আলোচনা কক্ষে প্রবেশ করলেন মিস্টার চার্লি৷ ঘরের জানলাগুলো আগে থেকেই বন্ধ ছিল৷ এবার দরজাটাও বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেল৷ অতি গুরুত্বপূর্ণ রুদ্ধদ্বার গোপন বৈঠক করতে উপস্থিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব৷ লোকটার সাংকেতিক নাম শুনলেও এর আগে তাঁকে এ ঘরে উপস্থিত কোনো লোকই দেখেননি, একমাত্র অ্যাডমিরাল ফক্স ছাড়া৷ কারণ, নিরাপত্তার কারণেই মিস্টার চার্লির ছবি কোথাও ছাপা হয় না৷ সরকারি অনুষ্ঠানেও প্রকাশ্যে তিনি যোগ দেন না নিজেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার জন্য৷ মাঝবয়সি স্থূলকায় লোক, টাক মাথা, গালে লালচে দাড়ি৷ চোখে বাইফোকাল লেন্স৷ হাতে একটা ফাইল৷ ভদ্রলোক ঘরে প্রবেশ করতেই সবাই আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন৷ অ্যাডমিরাল ফক্স তাঁর উদ্দেশে বললেন, ‘সুপ্রভাত মিস্টার চার্লি৷’

মিস্টার চার্লিও অভিবাদন গ্রহণের ঢঙে মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে বললেন, ‘আপনাদের সবাইকেও সুপ্রভাত জানাই৷’ কথাটা বলে টেবিলের কাছে এগিয়ে এসে তাঁর জন্য নির্ধারিত আসন গ্রহণ করলেন তিনি৷

চেয়ারে বসার পর তাঁর দৃষ্টি একবার ঘুরে গেল টেবিলের চারপাশে বসে থাকা লোকগুলোর প্রত্যেকের মুখের ওপর৷ শান্ত অথচ অন্তর্ভেদী সেই দৃষ্টি৷ এ কক্ষে যাঁরা বর্তমানে উপস্থিত আছেন তাঁদের নামের তালিকা আর পরিচিতি ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মিস্টার চার্লির কাছে৷ তাঁর হাতে ধরা ফাইলেই আছে সেসব তথ্য৷ উপস্থিত সবার মুখের দিকে তাকিয়ে সম্ভবত তিনি একবার বুঝে নিতে চাইলেন যে এ কক্ষে কোনো অবাঞ্ছিত ব্যক্তি আছে কি না৷ ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগ সক্রিয় থাকলেও শত্রুপক্ষের, বিশেষত জার্মানির গুপ্তচর বিভাগও যে একইরকম সক্রিয়, তা জানা আছে চার্লির৷ কাজেই সাবধানের মার নেই৷

সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মিস্টার চার্লি ফাইলটা তাঁর সামনে রেখে সেটা খুললেন৷ তারপর ফাইলে রাখা কাগজটার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে কোনো ভণিতা না করেই বললেন, ‘আমি এখানে এসেছি জার্মানদের গুপ্ত সংকেত এনিগমা কোড নিয়ে আলোচনা করার জন্য৷ যার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে, বিশেষত আটলান্টিকে রেডিয়ো সংকেতের মাধ্যমে সামরিক নির্দেশ পাঠাচ্ছে জার্মান সেনাদল৷ ইতিমধ্যেই একটা এনিগমা যন্ত্র আমাদের হাতে এসেছে৷ পোল্যান্ডের সামরিক ক্রিপ্টোগ্রাফি বিভাগ প্রথম দিকে এনিগমা যন্ত্রের সাংকেতিক কার্যপ্রণালী উদ্ধার করতে সমর্থ হলেও, বর্তমানে সেই সাংকেতিক বার্তা উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না কেন? আমি রাজনীতির লোক, প্রযুক্তিবিদ বা গণিতবিদ নই৷ ব্যাপারটা যদি আমাকে একটু সহজভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেন তবে ভালো হয়৷ তারপর আমি আমার বক্তব্য আপনাদের জানাব৷’

প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের পলিটিক্যাল এজেন্টের কথায় ফক্স বললেন, ‘মিস্টার আলেকজান্ডার, আপনি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন৷’

আলেকজান্ডার উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় জ্ঞাপন করে তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন—‘বছর দশেকের বেশি সময় ধরে জার্মান সেনাবাহিনী এবং তাদের রাজনৈতিক দপ্তর গোপন নির্দেশ পাঠাবার জন্য এনিগমা যন্ত্রের রেডিয়ো বার্তা ব্যবহার করে আসছে৷ এর সুবিধা হচ্ছে এই রেডিয়ো বার্তা অন্য কারও কাছে ধরা পড়লেও তার পাঠোদ্ধার করা সম্ভব নয়, কী কৌশলে তা পাঠ করতে হবে তা না জানার কারণে৷ যার কাছে সংবাদ পাঠানো হচ্ছে তার কাছে আগেই সংকেত ভাঙার কৌশল জানিয়ে রাখে বা রাখত জার্মানরা৷ ক্রিপ্টোগ্রাফির এনক্রিপশন অর্থাৎ সংকেত উদ্ধারের স্থলে রয়েছে তার ‘কি-ওয়ার্ড’৷ ক্রিপ্টোগ্রাফি অর্থাৎ তথ্যগুপ্তবিদ্যার রহস্য লুকিয়ে থাকে এই ‘কি-ওয়ার্ড’ বা শব্দের চাবিকাঠির মধ্যে৷ ধরা যাক একটা শব্দ ‘টর্পেডো৷’—’TORPEDO’৷ আমি প্রথমেই আপনাকে সংকেত উদ্ধারের কৌশল জানিয়ে রাখলাম৷ বললাম অক্ষরগুলো দুই ঘর করে এগিয়ে রাখা আছে৷ অর্থাৎ ‘T’-মানে V, ‘O’ মানে Q, ‘R’ মানে ‘T’—এমন ব্যাপার৷ এখন এনিগমা যন্ত্রের মাধ্যমে যে রেডিয়ো বার্তা পাঠানো হল, তাতে বলা হল VQTRGFQ৷—এ শব্দের কোনো অর্থই হয় না৷ কিন্তু আপনার কাছে রহস্য সমাধানের আগাম বার্তা যদি থাকে তবে আপনি বুঝে যাবেন এর মানে হল TORPEDO৷ বছর ছয়েক আগে পোল্যান্ডের গণিতবিদরা এনিগমা কোডের ব্যাপারটা বুঝতে পারেন৷ মারিয়ান রেজস্কি নামের এক গণিতবিদের নেতৃত্বে ১৯৩৮-এ অর্থাৎ গত বছর, পোলিশরা এক যন্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়, যা এনিগমা মেশিন প্রেরিত সংকেত শব্দের অর্থ নিরূপণে সমর্থ হয়৷ কিন্তু তারপর…৷’ এ পর্যন্ত বলে সম্ভবত মিস্টার চার্লির প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য থামলেন আলেকজান্ডার৷ মিস্টার চার্লি মৃদু হেসে বললেন, ‘আপনার কথা বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি৷ কিন্তু তারপর?’

ফক্স বললেন, ‘এনিগমার সমস্যা সমাধানের জন্য রেজস্কি যে যন্ত্র তৈরি করেন তার নাম পোল্যান্ডের এক জনপ্রিয় আইসক্রিমের নাম অনুসারে রাখা হয় ‘বোম্বা’৷ সাংকেতিক নাম৷ কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর থেকেই জার্মানরা প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় তাদের ‘কি-ওয়ার্ড’ বা সমাধান কৌশলের সূত্র পরিবর্তন করছে৷ ফলে অকার্যকর হয়ে পড়েছে বোম্বা…৷’

‘আর সম্ভবত এ কারণেই পোলিশরা এ বিষয় সংক্রান্ত তাদের সংগৃহীত তথ্য আর যন্ত্র তুলে দিয়েছে ব্রিটিশ আর ফরাসি ইন্টেলেজেন্সির হাতে৷’—বললেন মিস্টার চার্লি৷

আলেকজান্ডার বলে উঠলেন, ‘আপনার বক্তব্য সঠিক স্যার৷’

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন মিস্টার চার্লি৷ তারপর সরাসরি প্রশ্ন করলেন, ‘আপনারা কি পারবেন এনিগমা কোডের সমাধান করতে?’

কয়েক মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধতা নেমে এল সভাকক্ষে৷ অ্যাডমিরাল একটু আমতা আমতা করে বলে উঠলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব স্যার৷’

মিস্টার চার্লি বললেন, ‘চেষ্টা নয়, পারতেই হবে৷ যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ এ যুদ্ধ কত মাস বা কত বছর ধরে চলবে তা এখনও পর্যন্ত আমাদের জানা নেই৷ তবে জার্মানদের এই এনিগমা কোড যদি আমরা উদ্ধার করতে পারি তবে আমাদের মিত্রবাহিনীর জয় সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যাবে৷ এখানে যাঁরা গণিতবিশেষজ্ঞ, ক্রিপ্টোবিশারদ আছেন তাঁরা বলুন, এনিগমা বিশ্লেষণ করা কি অসম্ভব?’

আবারও নিস্তব্ধতা নেমে এল সভাকক্ষে৷ পৃথিবীতে কোনো গাণিতিক রহস্য সমাধানই হয়তো অসম্ভব নয়, কিন্তু কারও পক্ষেই তিনি সেই সমাধান করবেন তা নিশ্চিতভাবে দাবি করা কঠিন৷ তাও আবার এই যুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পলিটিক্যাল এজেন্টের সামনে৷ পরবর্তীকালে কাজে ব্যর্থ হলে কোনো বিপত্তির সম্ভাবনা থেকেই যায়৷

সভাকক্ষের নিস্তব্ধতা লক্ষ করে মিস্টার চার্লি এবার মৃদু শ্লেষের সঙ্গে বললেন, ‘আপনাদের কথাতেই তো জানলাম, এনিগমা যন্ত্রের প্রাথমিক রহস্য উৎঘাটন তো পোলিশ অঙ্কবিদরা করেই দিয়েছিলেন৷ বাকিটা আপনারা করতে পারবেন না? সাইফার স্কুলের কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে যতটা শোনা যায় তবে তা কি অতিরঞ্জিত?’

মিস্টার চার্লি পাকা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হলেও প্রযুক্তিবিদ বা গণিতবিদ নন৷ তিনি কী করে বুঝবেন যে এনিগমাতে কোনো তথ্য বিশ্লেষণ করলে তার সমাধান বেশ কয়েক কোটিও হতে পারে! তার মধ্যে থেকে আসল বক্তব্য উদ্ধার করা কি সোজা ব্যাপার?

তাই চার্লির এ বক্তব্যের জবাবে মাথা নীচু করে বসে তাঁকে কী জবাব দেবেন তা ভাবতে লাগলেন সবাই৷ আরও কয়েক মুহূর্ত নিস্তব্ধভাবে কেটে গেল৷ পলিটিক্যাল এজেন্ট এবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে একটু যেন হতাশ ভঙ্গিতেই বললেন, ‘অথচ আপনাদের সংস্থার চারজন লোক, মিলান, আলেকজান্ডার, ওয়ালেশম্যান ও টিউরিং সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন গবেষণার অর্থ বৃদ্ধির জন্য এবং তা করা হয়৷ ভাগ্য ভালো আমাদের ফ্রন্ট লাইনে কাজ করা সৈনিকরা এমন হতাশ নয়৷ হয়তো বা তাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ দেখেনি বলেই৷’

অ্যালান বসেছিলেন টেবিলের শেষ প্রান্তে৷ পলিটিক্যাল এজেন্টের শেষ কথাটা শুনে উপস্থিত অন্যদের কার কতটা লাগল তা তাঁর জানা নেই৷ কিন্তু মিস্টার চার্লির চূড়ান্ত বিদ্রুপাত্মক কথাগুলো যেন সপাটে চড় কষাল এতদিন ধরে লালিত অ্যালানের আত্মবিশ্বাসে৷ যে বিশ্বাস তাঁকে শিখিয়েছে যে চেষ্টা করলে যে-কোনো গাণিতিক রহস্যের সমাধান করতে পারেন তিনি৷ নিজের অজান্তেই যেন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন তিনি৷ সভাকক্ষে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁকেই সর্বকনিষ্ঠ বলা যায়৷ মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়স তাঁর৷ আর সেজন্যই হয়তো তাঁকে ‘ইয়ং বয়’ সম্বোধন করে মিস্টার চার্লি বললেন, ‘আপনি কিছু বলবেন ইয়ং বয়?’

অ্যালানের ছেলেবেলা থেকেই একটু তোতলামির ধাত আছে৷ বিশেষত উত্তেজিত হলে তো বটেই৷ তাই তিনি পলিটিক্যাল এজেন্টের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে কেটে কেটে বললেন, ‘আমার নাম অ্যালান টিউরিং৷ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত বছর গণিতবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণাতে পিএইচ. ডি লাভ করেছি৷ আমি পারব৷ পারতে আমাকে হবেই৷’

এই লোকটাই তবে অ্যালান টিউরিং! প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যাঁরা চিঠি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এঁর নাম আছে৷ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত টিউরিং-এর দিকে তাকিয়ে রইলেন পলিটিক্যাল এজেন্ট৷ মনে হয় তিনি এই যুবক গণিতবিদের মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করলেন, আত্মবিশ্বাস নাকি প্রগলভতা? কোনটা লুকিয়ে আছে সদ্য পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করা এই যুবকের মধ্যে৷ অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ চার্লির শেষ পর্যন্ত মনে হল, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই যেন কথাগুলো বলছেন অ্যালান নামের এই গণিতবিদ৷ উপস্থিত অন্য ব্যক্তিদের নিশ্চুপভাব দেখে একটু হতাশই হয়ে পড়েছিলেন মিস্টার চার্লি৷ বাইফোকাল লেন্সের পিছনে তাঁর চোখ জোড়া এবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল৷ তিনি অ্যালানের মুখের দিকে তাকিয়ে তাঁকে উৎসাহদানের ভঙ্গিতে বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন বলে আমার মনে হয়৷ কাজটা যদি আপনি করতে পারেন তবে অ্যাক্সিস পাওয়ারকে পরাজিত করা যে আমাদের পক্ষে শুধু সহজ হয়ে যাবে তাই নয়, সবথেকে বড় ব্যাপার, আমরা বহু মানুষের জীবনহানি রুখতে পারব৷ আমার এই শেষ কথাটা মনে রাখবেন৷’

অ্যালান সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন, ‘ইয়েস স্যার৷’

মিস্টার চার্লি এরপর অ্যাডমিরাল ফক্সের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মিস্টার টিউরিং দায়িত্ব নিতে চাইছেন, এ ব্যাপারে আপনার বা নৌবিভাগের কোনো আপত্তি নেই তো?’

অ্যাডমিরাল জবাব দিলেন, ‘না, না, আপত্তির কোনো ব্যাপারই নেই৷ আমাদের নৌসেনাবিভাগ থেকে ওঁকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে৷ এই প্রোজেক্টের মূল দায়িত্বে অর্থাৎ সর্বাধিনায়ক থাকবেন মিস্টার টিউরিং৷ আর তাঁর কাজের জন্য সহকারী হিসাবে আলেকজান্ডার, ওয়ালেশম্যান, মিলানও থাকবেন৷’

চার্লি বললেন, ‘ধন্যবাদ৷ যথাসম্ভব দ্রুত এনিগমা যন্ত্র, বোম্বা যন্ত্র সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও নথি মিস্টার টিউরিং-এর হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করুন৷ আমি কথা দিচ্ছি সরকারি তরফে এই প্রোজেক্টের জন্য, সামরিক গবেষণার জন্য অর্থের কোনো কার্পণ্য হবে না৷ আমি নিজে তো এই গবেষণার অগ্রগতি সম্বন্ধে খবর রাখবই, প্রয়োজনে মিস্টার টিউরিং যাতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থাও করব৷ মিস্টার টিউরিং-এর গবেষণার সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারটার দায়িত্ব নৌবিভাগের পাশাপাশি দেখবে ব্রিটিশ পুলিশের সিক্রেট ইন্টেলেজেন্সি সার্ভিসও৷ একশো শতাংশ সুরক্ষিত থাকবেন মিস্টার টিউরিং ও তাঁর গবেষণা৷’

এরপর একটু থেমে তিনি বললেন, ‘এনিগমা সংকেতের রহস্য উৎঘাটনের জন্য এই গবেষণার সাংকেতিক নামকরণ করা হল ‘হাট-৮’৷ অর্থাৎ আট নম্বর কুঁড়েঘর৷ কোড অ্যান্ড সাইফার স্থলের এই ‘হাট-৮’-এ মিস্টার টিউরিং-এর সফলতার প্রত্যাশায় দিন গুনবে ব্রিটিশ রাজনৈতিক এবং সামরিক বিভাগ৷ মিস্টার টিউরিং, সম্ভব হলে আজ থেকেই ‘হাট-৮’-এর কাজ শুরু করে দিন আপনি৷ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল৷’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *