১০
প্রাতরাশের টেবিলে বসে অ্যালান অন্যদিনের মতোই পরিচারককে বললেন, ‘সরকারি চিঠি নিয়ে একজনের আসার কথা৷ আমি লাইব্রেরি রুমে থাকব৷ লোকটা এলেই আমাকে ডেকে দেবে৷’
অ্যালানের কথা শুনে পরিচারক জানাল বেলার দিকে সাপ্তাহিক রেশন সংগ্রহের জন্য সে ঘণ্টাখানেকের জন্য বাজারে যাবে৷ তবে কথাটা সে গেটম্যানকে জানিয়ে যাবে৷
প্রাতরাশ শেষ করে আগের দিনের মতোই লাইব্রেরি রুমে গিয়ে ঢুকলেন অ্যালান৷ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই তামাকের মৃদু গন্ধ নাকে এল তাঁর৷ দরজা বন্ধ ঘরের বাতাসে গোলেমবাকের চুরুটের গন্ধ যেন এখনও রয়ে গেছে! গতকাল গোলেমবাকের অমনভাবে সাক্ষাৎ করতে আসা, তাঁর বলা কথাবার্তা যেমন অ্যালানের মনে আনন্দের সৃষ্টি করেছিল, তেমনই কোনো একটা প্রশ্নেরও যেন জন্ম দিয়ে গেছে৷
গতদিনের বইটা টেবিলেই ছিল৷ কিন্তু অ্যালান র্যাক থেকে অন্য একটা বই নামিয়ে টেবিলে বসলেন৷ অ্যালানের প্রিয় বিষয় অ্যালগরিদম সংক্রান্ত একটা বই৷ মনকে আনন্দ দেবার জন্যই৷ এ বইটার ভূমিকা অ্যালানই লিখে দিয়েছিলেন তাঁর সতীর্থ লেখককে৷ কারণ ‘অ্যালগো’-র ধারণা সর্বপ্রথম অ্যালানের মাথাতেই এসেছিল৷ কিংস কলেজে মাত্র বাইশ বছর বয়সে ‘ফেলো’ নির্বাচিত হন তিনি, আর সে বছরই এক কল্পিত মেশিনের প্রস্তাব দেন, যাকে তাঁর নাম অনুসারে বর্তমানে ‘টিউরিং মেশিন’ নামে ডাকা হয়৷ ‘কোনো যন্ত্রকে যদি অ্যালগরিদমের আওতাধীন করা হয়, তাহলে সেটার পক্ষে সকল গাণিতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব৷’—এই ধারণা প্রথম উপস্থিত করেন অ্যালানই৷ যে কারণে সম্ভাব্যতা থিয়োরিতে অবদানের জন্য ১৯৩৬ সালে তাঁকে ‘স্মিথ পুরস্কার’ দেওয়া হয়৷
এ বইয়ের প্রথম পাতাতেও যথারীতি সরকারি ‘পাশ’ বা অনুমোদিত সিলমোহর আঁকা আছে৷ বইটা খুলে তাতে তিনি মনোনিবেশ করলেন৷
বেশ কয়েক পাতা পড়ার পরই বইয়ের পাতার ভিতর একটা ভাঁজ করা কাগজের টুকরো চোখে পড়ল অ্যালানের৷ কাগজটা খুললেন তিনি৷ বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একটা লেটারপ্যাডের কাগজ৷ লেটারহেডে শেরবর্ন স্কুলের নাম-ঠিকানা লেখা৷ বিবর্ণ হয়ে গেলেও চিঠিটা এখনও পড়া যাচ্ছে৷ ছোট একটা চিঠি৷ তাতে লেখা—
‘‘মিসেস সারা টিউরিং,
আমরা লক্ষ করছি যে আপনার পুত্র, আমাদের ছাত্র অ্যালান টিউরিং-এর যাবতীয় আগ্রহ গণিতবিদ্যা ও বিজ্ঞানশাস্ত্রে৷ অন্য বিষয়গুলিতে সে তেমন আগ্রহী নয়৷ কিন্তু আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চ শ্রেণিতে ক্লাসিক শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে৷ অর্থাৎ, প্রাচীন রোমান ও গ্রিক ভাষা, সাহিত্যকে বিজ্ঞান অপেক্ষা বেশি গুরুত্বদান করা হয় এখানে৷ আমি আশা করি যেন সে দুটি শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে না পড়ে৷ সে যদি শেরবর্ন পাবলিক স্কুলে থাকতে চায়, তবে নতুন ক্লাসে তাকে অবশ্যই ভাষা-সাহিত্য, অর্থাৎ ‘শিক্ষিত’ হবার দিকে নজর দিতে হবে৷ সে যদি ‘বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞ’ হতে চায়, তবে পাবলিক স্কুলে অযথা সময় নষ্ট করছে৷’’
শেরবর্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর সংবলিত উপদেশমূলক এই চিঠি আর মরকমের মৃত্যুই এরপর শেরবর্ন পাবলিক স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য করে অ্যালানকে৷ এ চিঠি এ বইতে কবে গুঁজে রেখেছিলেন, তা ঠিক মনে করতে পারলেন না অ্যালান৷ হয়তো বা তাঁর মা-ই কোনো সময় এই পুরোনো চিঠিটা খুঁজে পেয়ে অ্যালানের এই নতুন বইয়ের মধ্যে যত্ন করে রেখেছিলেন৷ চিঠিটা পাঠ করার পর কিছুক্ষণের জন্য একটা কথা ভাবলেন অ্যালান—শেরবর্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মত অনুসারে তিনি যদি ‘শিক্ষিত’ হতেন, অর্থাৎ যদি তিনি ভাষা ও সাহিত্য চর্চা করতেন, তবে হয়তো আজকের এই কষ্ট সহ্য করতে হত না তাঁকে৷ হয়তো প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে তাঁর নাম পৌঁছোত না ঠিকই, তবে সাধারণ মানুষের শান্তির জীবন তিনি হয়তো কাটাতে পারতেন৷ কিন্তু কী করবেন অ্যালান! তাঁর সব পছন্দই তো সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা, অন্যরকমের৷ সাধারণ ছাত্ররা যে বিষয়কে পছন্দ করে না, সেই গণিতবিদ্যাকেই ভালোবেসেছেন তিনি৷ ভাষা, সাহিত্য, কেতাবি লেখাপড়া তাঁকে তেমনভাবে কোনোদিন টানেনি৷ এই একই কারণে কেমব্রিজের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজের বৃত্তি লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল তাঁকে৷ তিনি ভর্তি হয়েছিলেন তাঁর দ্বিতীয় পছন্দের ‘কিংস কলেজে’, এবং সেখান থেকেই তিনি স্নাতক হন৷
চিঠিটা এরপর যত্ন করে ভাঁজ করে বইয়ের মধ্যে রাখলেন অ্যালান৷ পুরোনো জিনিস, আছে যখন তা থাক৷
চিঠিটা রেখে আবার বইটা পাঠ করতে লাগলেন অ্যালান৷ সময় এগিয়ে চলল৷
ঘণ্টাখানেক বাদে দরজার পাল্লায় টোকা পড়ার শব্দ হল৷ অ্যালান বললেন, ‘কাম ইন৷’
দরজার পাল্লা ঠেলে যে লাইব্রেরি রুমে প্রবেশ করল, তাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলেন অ্যালান৷ বছর পঁচিশের এক তরুণী৷ পরনে একটা শার্ট আর মিনিস্কার্ট৷ পায়ে হাইহিল জুতো৷ কাঁধ পর্যন্ত নামা সোনালি চুল আর ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক মাখা একটা মেয়ে৷ গায়ের জামাটা তার এত আঁটোসাঁটো যে বুকের গড়নটাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে৷ অপরিচিত এই সুন্দরী মহিলাকে দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অ্যালান জানতে চাইলেন, ‘আপনি কে?’
তরুণী হেসে বলল, ‘আমি কিন্তু আপনার নাম জানি৷ আপনি অ্যালান তো? অ্যালান টিউরিং?’
অ্যালান আমতা আমতা করে বললেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক তাই৷ কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না! কোথা থেকে আসছেন?’
মেয়েটি বলল, ‘আমার নাম লুসি৷ লুসি মরগ্যান৷ আমি কাছেই একটা বাড়িতে থাকি৷ আপনার প্রতিবেশী৷ বেশ কয়েকবার আমি আপনাকে দেখেছি৷ তাই আজ আলাপ করতে এলাম৷’
মেয়েটার পরিচয় পেয়ে মৃদু বিস্মিত ভাবে অ্যালান বললেন, ‘গেটম্যান ঢুকতে দিল আপনাকে?’
প্রশ্নটা শুনে লুসি তার কাঁধে নেমে আসা সোনালি চুলে একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে বলল, ‘আমি জানি অনুমতি ছাড়া এ বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না৷ কিন্তু দিল৷ বলল, পরিচারক এখন নেই, এই ফাঁকে তুমি দেখা করে এসো৷ কেউ জানতে পারবে না৷’
কথাটা শুনে অ্যালান বললেন, ‘কিন্তু সে আপনাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিল কেন?’
লুসি নামের মেয়েটা এবার মৃদু কপট রাগ প্রকাশ করে বলল, ‘আপনি তো দেখছি প্রতিবেশিনীকে পুলিশের মতো প্রশ্ন করছেন৷ আসলে আপনার দ্বাররক্ষী আমার পরিচিত৷ বাড়ির সামনে দিয়ে রোজ যাওয়া-আসার সূত্রেই আমার ওর সঙ্গে আলাপ৷ ও একদিন আমার বাড়িতে চা পান করতেও গেছিল৷ কাজেই…৷’
যুবতির কথা শুনে অ্যালান বললেন, ‘আমাকে মার্জনা করবেন৷ আসলে ওরা তো কাউকে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতে দেয় না, তাই প্রশ্নটা করেছিলাম৷ কিছু মনে করবেন না৷’
রমণী হেসে বলল, ‘তা আমি বুঝতে পেরেছি৷ কিছু মনে করিনি৷ তা আমি আপনার সঙ্গে বসে একটু গল্প করতে পারি?’
ভদ্রমহিলা অপরিচিত হলেও অ্যালানের বর্তমান প্রতিবেশিনী৷ তাকে তো আর মুখের ওপর ‘না’ বলা যায় না৷ কাজেই অ্যালান বললেন, ‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই৷’
কিন্তু অ্যালান এ ঘরে কোথায় বসতে দেবেন তাকে? এ ঘরে একটা মাত্র চেয়ার আর একটাই টেবিল৷ এই নারীকে তো আর বেডরুমে নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ কাজেই অ্যালান তাঁর চেয়ারটাকে ঘরের মাঝখানে টেনে এনে বললেন, ‘নিন, বসুন৷’
কিন্তু মেয়েটি বলে উঠল, ‘তবে আপনি বসবেন কোথায়?’
অ্যালান জবাব দিলেন, ‘আমি অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি৷ আপনি বসুন৷ আমার দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা হবে না৷’
মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘না, তা হয় না৷ কত বড় মানুষ আপনি৷ আপনার চেয়ারে আমি বসব, তা হয় না৷ আপনি বরং আপনার চেয়ারেই বসুন, আমি ওই টেবিলের ওপর গিয়ে বসছি৷’—এই বলে সে অ্যালানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেবিলের কাছে গিয়ে খোলা বইটা টেবিলের একপাশে সরিয়ে রেখে পা ঝুলিয়ে টেবিলের ওপর বসে পড়ল৷ অ্যালান অগত্যা বাধ্য হয়ে তার মুখোমুখি ঘরের মাঝখানে নিজের চেয়ারে বসলেন৷ কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা৷ মেয়েটার সঙ্গে কী গল্প করবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি৷ মাথাটা তিনি কিছুটা ঝুঁকিয়েই বসলেন৷ তবে মুখ খুলল যুবতিই৷ চারপাশের বইয়ের র্যাকগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে লুসি বলল, ‘কত বই আপনার! সব বই আপনি পড়েছেন?’
অ্যালান প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে লুসির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, পড়েছি৷ আমার নিজের বাড়িতে এর চেয়ে পঞ্চাশগুণ বেশি বই আছে, সেগুলোও পড়েছি৷’
অ্যালানের কথা শুনে লুসি বলল, ‘ও মাই গড! ব্যাপারটা সত্যি নাকি? এসব মোটা মোটা বই কীসের?’
অ্যালানের বইগুলো সব উচ্চতর গণিতবিদ্যার বই৷ আলাদা আলাদা নামও আছে তার৷ ক্যালকুলাস, লগারিদম, অ্যাস্ট্রো ম্যাথ ইত্যাদি ইত্যাদি৷ কিন্তু এই নারী হয়তো এত সব বুঝবে না৷ তাই অ্যালান হেসে জবাব দিলেন, ‘এসব অঙ্কের বই৷’
কথাটা বলার পরই হঠাৎ কয়েক মুহূর্তের জন্য এক জায়গাতে চোখ আটকে গেল অ্যালানের৷ লুসি নামের মেয়েটা পা ঝুলিয়ে বসেছে উঁচু টেবিলটাতে৷ তার হাঁটুর ওপর পর্যন্ত মিনিস্কার্ট৷ সেই মিনিস্কার্টের মধ্যে তার দু-ঊরুর শেষ প্রান্তের মাঝখানে ত্রিভুজাকৃতির একফালি রুমালের মতো লুসির অন্তর্বাসটা দেখা যাচ্ছে! লুসি কি অ্যালানের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল যে তার দেহের গোপনতম অংশ দেখতে পেয়েছেন অ্যালান? মেয়েটার ঠোঁটের কোণে যেন একটা কৌতুকপূর্ণ হাসি ফুটে উঠল৷ লুসি লজ্জাবোধ না করে বরং তার হাঁটু দুটোকে যেন দুপাশে আরও বেশি প্রসারিত করল, যাতে তার স্কার্টের ফাঁকটা আরও বেশি উন্মুক্ত হয়, আর তার শরীরের নির্দিষ্ট জায়গাটা যাতে অ্যালানের চোখে ধরা দেয় সেজন্য!
অ্যালান অবশ্য এরপরই লজ্জাবোধ করে চোখ মাটির দিকে নামিয়ে নিলেন৷ লুসি অ্যালানের উদ্দেশে বলল, ‘তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ আমার দিকে তাকাতে?’
কী জবাব দেবেন তা বুঝে উঠতে না পেরে অ্যালান চুপ করে রইলেন৷
লুসি এবার আদুরে গলায় অ্যালানকে বলল, ‘তুমি আমাকে অঙ্ক শেখাবে?’
অ্যালান আবারও নিশ্চুপ৷ লুসি দ্বিতীয়বার অ্যালানকে প্রশ্ন করল, ‘বলো না, তুমি আমাকে অঙ্ক শেখাবে?’
অ্যালান এবার বাধ্য হয়ে জবাব দিলেন, ‘এখানে তো আপনাকে অঙ্ক শেখাবার উপযুক্ত পরিবেশ নেই৷ থাকলে শেখাতাম৷’
কথাটা শুনেই লুসি নামের সেই নারী বলে উঠল, ‘কে বলেছে পরিবেশ নেই? ফাঁকা বাড়িতে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ কোথাও নেই৷ ভালোবাসার অঙ্ক শেখার এটাই তো উপযুক্ত পরিবেশ৷ এসো আমরা ভালোবাসার অঙ্ক খেলি৷’
এই বলে অ্যালানকে চমকে দিয়ে একটা অদ্ভুত কাজ করল লুসি৷ টেবিল থেকে একলাফে নেমে এগিয়ে এসে দু-পা ফাঁক করে সটান বসে পড়ল চেয়ারে বসা অ্যালানের সামনে প্রসারিত করা হাঁটু দুটোর ওপর৷ অ্যালানকে জাপটে ধরল সে৷ অ্যালান কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না৷ লুসি বলে উঠল, ‘এসো অ্যালান, আমরা ভালোবাসার অঙ্ক খেলি৷’
কিন্তু অ্যালান জবাব দিলেন না৷ ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি আড়ষ্ট হয়ে গেছেন৷ ঠিক যেন কাঠের পুতুলে পরিণত হয়েছেন৷ অ্যালান সাড়া দিচ্ছেন না দেখে মেয়েটা এরপর আরও একটা কাজ করল৷ ইলাস্টিক দেওয়া জামাটা একটানে নিজের গলার কাছে উঠিয়ে ফেলল৷ সঙ্গে সঙ্গে দুটো মাংসের বল যেন মুক্ত হয়ে লাফিয়ে উঠল অ্যালানের মুখের সামনে! খয়েরি ঘের আর তার মাঝে লাল চেরিফলের মতো বৃন্তসম্পন্ন দুটো স্তন! মেয়েটা এক হাতে একটা স্তন ধরে তার বৃন্তটা অ্যালানের ঠোঁটের ভিতর গুঁজে দেবার চেষ্টা করতে লাগল৷ ঠোঁট চেপে বসে আছেন অ্যালান৷ আর মেয়েটা চেষ্টা করছে বোতামের মতো স্তনবৃন্তটা জোর করে তাঁর মুখের মধ্যে গুঁজে দিতে৷ বমি পাচ্ছে অ্যালানের, কিন্তু মুখ খুলতে পারছেন না তিনি৷ আর এরপর তিনি খেয়াল করলেন, লুসি নামের এই যুবতি তাঁর ট্রাউজারের চেন খুলে অন্য হাতটা তার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে৷ তার সরু সরু আঙুলগুলো যেন একটা মাকড়সার পায়ের মতো খিমচে ধরেছে অ্যালানের লিঙ্গ, অণ্ডকোষ! আর তার সঙ্গে চলছে কামার্ত নারীশরীরের ঘষটানি৷ তার আঠালো দেহরসে ভিজে যাচ্ছে অ্যালানের ঊরু৷
না, এবার থামাতেই হবে এই কামোন্মত্ত নারীকে৷ মনের সব শক্তিকে সংহত করলেন অ্যালান৷ তারপর আচমকা এক ধাক্কা মারলেন তার হাঁটুর ওপর বসে থাকা নারীকে৷ কিছুটা তফাতে মেঝের ওপর চিত হয়ে পড়ল সে৷ তার মাথাটা মেঝেতে ঠুকে গেল৷ যন্ত্রণাতে মেয়েটা একটা আর্তনাদ করে উঠে বসল৷ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন অ্যালান৷ উঠে দাঁড়াল মেয়েটাও৷ অ্যালানের দিকে ঘৃণামিশ্রিত বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে৷ হয়তো বা কিছুটা আতঙ্কও সৃষ্টি হয়েছে তার মনে৷ এর আগে কোনো পুরুষকে শরীর নিবেদন করতে গিয়ে সে এ ধরনের আঘাত, প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হয়নি৷ কয়েক মুহূর্ত সে অ্যালানের দিকে তাকিয়ে থেকে অ্যালানের উদ্দেশে তীব্র ঘৃণাভরে বলল—‘ম্যাড সোয়াইন!’ তারপর পোশাক ঠিক করতে করতে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল৷
মেয়েটা চলে যাবার পর নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলতে বেশ কিছুটা সময় লাগল অ্যালানের৷ একবার তিনি ভাবলেন যে এখনই গেটম্যানকে ডেকে ব্যাপারটা জানান, তিরস্কার করেন তাকে৷ কিন্তু পরক্ষণেই তাঁর মনে হল, তাতে তাঁর লজ্জা আরও বাড়বে৷ সারা গা ঘিনঘিন করছে অ্যালানের৷ ডানপাশের ঊরুটা কেমন ভিজে গেছে৷ বমি পাচ্ছে তাঁর৷ অ্যালান তার থেকে মুক্তি পাবার জন্য লাইব্রেরি ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে এলেন৷ পোশাক ছুঁড়ে ফেলে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে সাবান ঘষে বেশ অনেকক্ষণ ধরে স্নান করলেন ক্লেদ থেকে মুক্ত হবার জন্য৷ স্নান শেষে পাটভাঙা পোশাক পরে যখন তিনি ঘরে এলেন, তখন তিনি অনেকটাই শান্ত৷ পরিচারক ফিরে এসেছে৷ লাঞ্চ সেরে নেবার জন্য সে ডাক দিল অ্যালানকে৷ লাঞ্চ খেতে খেতে অ্যালান ভাবতে লাগলেন, ওই লুসি নামের মহিলার তাঁর কাছে আসার পিছনে শুধু কামের তাড়না ছিল, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল? কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কীই বা আজ পেতে পারে মেয়েটা? টাকাপয়সা? কিন্তু তার জন্য সে এসেছিল বলে অ্যালানের ঠিক মনে হয়নি৷ হয়তো বা সত্যি কামজ্বালাই হবে৷ কাকে দেখে কার মনে যে কামভাব জেগে ওঠে, তা বলা মুশকিল৷ এরপর মেয়েটার বলা শেষ কথাটা মনে এল অ্যালানের—‘ম্যাড সোয়াইন?’ অ্যালান কি তবে সত্যি পাগল? মানসিক রোগী?—এ প্রশ্নটা মনে হতেই অ্যালান নিজের মনেই তার জবাব দিলেন, ‘না, আমি পাগল নই৷ গবেষণার জন্য সরকারি অনুমতিপত্রটা শুধু হাতে পাই৷ তারপর আমি প্রমাণ করে দেব আমি পাগল কি না৷ আর তার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন৷ সময় নষ্ট করা যাবে না৷’ আর এই প্রস্তুতির জন্যই অ্যালান লাঞ্চ শেষ করে সোজা লাইব্রেরি রুমে গিয়ে ঢুকলেন৷ বই আর কাগজ-কলম নিয়ে অঙ্কের জটিল ধাঁধায় মনোনিবেশ করলেন৷
পরিচারকের ডাকে অ্যালানের যখন হুঁশ ফিরল, তখন রাত দশটা বাজে৷ ডিনার সাজিয়ে অ্যালানের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর সে তাঁকে ডাকতে এসেছে৷ তার সঙ্গে গিয়ে ডিনার সেরে নিলেন অ্যালান৷ ঘরে ফিরে বিছানাতে যাবার আগে জানলা বন্ধ করার জন্য জানলার কাছে গেলেন তিনি৷ বাইরে নিস্তব্ধ পৃথিবী৷ মাথার ওপর তারাঘেরা রাতের চাঁদোয়া৷ সেদিকে তাকিয়ে বেশ ভালো লাগল অ্যালানের৷ এই আকাশেরই নীচে কোথাও আছেন তাঁর মা, হয়তো বা আছে মরকমও৷ কবরের নীচে ঘুমিয়ে থাকলেও মরকম তো অ্যালানের সঙ্গে এক পৃথিবীতেই আছে, অ্যালানের মনের পৃথিবীতে তো অবশ্যই৷ অনেকদিন পর আজ অ্যালানের শরীরটা মোটামুটি ভালো ছিল৷ লুসি নামের সেই মেয়েটা এসে একটা গণ্ডগোলের সৃষ্টি করলেও অ্যালান সেটা কাটিয়ে উঠেছেন৷ পড়াশোনা অ্যালানের মনে ক্লান্তি আনে না, মনের রসদ জোগায়৷ অ্যালান আজ দীর্ঘক্ষণ তার স্বাদ গ্রহণ করেছেন৷ তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে অ্যালান মনে মনে বললেন, ‘আমাকে আবার আমার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে৷ সরকারি অনুমতিপত্রটা নিশ্চয়ই আসবে৷ না আসার কোনো কারণ নেই৷ আমি তাদের সব নির্দেশ মেনে চলেছি, তা ছাড়া এটা তাঁরা জানেন যে অ্যালানের গবেষণা মানেই দেশ-পৃথিবী নতুন কোনো যুগান্তকারী আবিষ্কার পেতে চলেছে৷ তাই তাঁরা অনুমতিপত্র অবশ্যই দেবেন৷ আর ওই অনুমতিপত্র-গবেষণা আমাকে আবার নতুন জীবন দেবে৷ অতীতের সব গ্লানি, সব অপমান মুছে আবার বেঁচে উঠবে অ্যালান টিউরিং৷ নবজন্ম হবে আমার৷’ বহুদিন বাদে এদিন শান্ত মনে বিছানাতে গেলেন অ্যালান৷