অ্যালবাট্রস – ৫

পাঁচ

পুলিশের কাছে আপনার সেদিনকার সব গতিবিধির রিপোর্ট রয়েছে মিস ব্যানার্জি, আপনি যে ইনভলভড নন, সেটা ক্লিয়ার। এটা পুলিশও জানে, আমরা সকলেই জানি। ঘুমের ওষুধের খালি শিশিও ওই ঘরে পাওয়া গেছে—সুইসাইড নোটও। আপনার হোটেলে যাবার ঘটনাটা মনে মনে বানানো—ওটা আপনার কল্পনা, মিস ব্যানার্জি, ওটা বাস্তবে ঘটেনি। শুনুন, ইউ নীড রেস্ট। প্লেন্টি অফ ইট! আপনি কিছুদিন লম্বা ছুটি নিন। হপ্তা দুয়েক বাইরে কোথাও ঘুরে আসুন, তারপর আবার আমরা বসব। ততদিন ওষুধগুলো চলুক। এই দু’হপ্তা কোথায় গেলে আপনার বেশি ভালো লাগবে? পাহাড়ে? না সমুদ্রে? নাকি মরুভূমিতে? নাকি আপনাদের চন্দননগরের বাড়িতে? সেই গঙ্গার ধারে? মায়ের কাছে যাবেন? মানে কাকার বাড়িতে?

—”পাগল? আমাদের গঙ্গার ধারের সে বাড়িটা আর নেই। পদ্মিনীমাসি আমার বাবাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার পর বেচারি মা আমাদের তিনজনকে নিয়ে যখন একবারে হিমশিম, হেল্পলেস এবং পেনিলেস, তখন ওই কাকাই আমাদের দেখাশুনো করতে এগিয়ে এসেছিলেন। তারপর কী করে কী হয়েছিল জানি না—এক সময়ে দেখলাম কাকার সঙ্গেই মা সংসার করতে শুরু করেছেন আমাদের নিয়ে। বড় হয়ে একে একে আমরা পড়ার নাম করে বাড়ি ছাড়লাম। বাইরে বেরিয়ে এলাম। তিন ভাইবোনেই কলকাতায় চলে এলাম।”

—এক্সকিউজ মি। মিস ব্যানার্জি, আপনি কিন্তু বললেন, পদ্মিনীমাসি আপনার বাবাকে নিয়ে পালিয়ে গেলেন। তার মানে?

—হ্যাঁ, পদ্মিনীমাসিই। আমরা তখন স্কুলে পড়ি। একদিন পুজোর মধ্যে বাবা আমাদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়ে বাজার করে দিয়ে, মাকে মাংস রান্না করতে বলে, বেরিয়ে গেলেন। আর ফিরলেন না। পরে জানলাম, বাবার অফিসের রিসেপশনিস্ট অ্যাংলো মেয়েটার সঙ্গে বাবা সংসার পেতেছেন কলকাতায়। মেয়েটা খুব চালু। ওই মেয়েটা আর কেউ নয়, পদ্মিনীমাসিই। আমি ঠিকই খবর পেয়েছি। ওই পদ্মিনীমাসিই আমার কাছ থেকে বাবাকে সরিয়ে নিয়েছিল। বাবা তো খুব হ্যান্ডসাম ছিলেন? ওই একই কারণে আবার আমার কাছ থেকে ঋত্বিককেও সরিয়ে নিল। আমি তাই ওকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলাম। জগতের সবচেয়ে সোজা কাজ। ওর ব্যাগে তো একটা কাগজে লেখাই ছিল, ”আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়”। আর ওই ব্যাগেই থাকত ওর জমিয়ে রাখা কড়া ঘুমের বড়ি। তীব্র বিষ, ওই নীলপাথর বসানো রাজস্থানী কৌটোটার মধ্যে। দুটোই অনেকবার দেখিয়েছে আমাকে। সেই জহরব্রতের বিষের মতো। জহর মানে বিষ। ওর নামও পদ্মিনী। তাই পুরো ব্যাপারটা ওকে খুব অ্যাপিল করত। ভীষণ রোমান্টিক তো আবার একদিক থেকে? মানে ড্রিমার আর কি। খুব লাক্সারিও ভালোবাসে। দামি দামি বিলিতি বেডশিট—যদিও মিসেস মিত্রের দেওয়া বেডশিটগুলো যথেষ্টই ভালো, তবু নিজের অতি পুরনো বিলিতি চাদরগুলোই লাগাবে, মিসেস মিত্রেরটা ব্যবহার করবে না—শ্যাম্পু, সাবান, ক্রিম, কনডিশনার সব এক্সপেনসিভ—কোনও চিপ জিনিস ইউজ করত না।

—সো। সি হ্যাড আ ফিটিং এনড টু হার লাইফ—আ লাকজুরিয়াস এনড।

—হ্যাঁ, ওর নিজের মনের মতো ফাইভস্টারের ঘরে ঘুমিয়ে পড়া। ইভন মোর এনজয়েড বিকজ ইট ওয়াজ আ প্রেজেন্ট, ওই ‘আ উইকএন্ড অ্যাট দ্য চ্যারিয়ট’। গিফট প্যাকেজটা আসলে আমিই উইন করেছিলাম। একটা টিভি কনটেস্টে আমার বদলে ওকেই আমি যেতে বললাম, বিকজ ইউ কুড টেক আ কম্প্যানিয়ন। আমি কাকে নেব—ওইসব হোটেল—ফোটেল আমার ভালোও লাগে না, পদ্মিনীমাসিকে বললাম, ”এটা তোমার জন্মদিনের উপহার, তুমিই একটা হলিডে উইকএন্ড কাটিয়ে এসো, সো আই সেন্ট হার টু হার ডেথ অন হার বার্থডে”—

—তা কেন হবে? বার্থডে তো ছিল ফ্রাইডে—তে। উনি তখন পার্টি দিয়েছিলেন। সেদিন আপনারা সবাই গিয়েছিলেন। আর এটা তো ঘটেছে রবিবার রাত্রে। লং আফটার দ্য বার্থডে পার্টি। আপনি এজন্যে এত গিলটি ফিল করবেন না মিস ব্যানার্জি—ইটস নট ইওর ফলট—ইউ হ্যাড নাথিং টু ডু উইথ ইট—’অ্যাবসল্যুটলি নাথিং।’

—আই সেন্ট হার টু হার ডেথ।

—মিস ব্যানার্জি, আপনি ভালো মনেই ওঁকে ওটা অফার করেছিলেন। শিওরলি। অল ইউ ওয়ান্টেড ওয়াজ টু মেক দ্য পুয়ার লেডি হ্যাপি—ভেরি জেনারাস অফ ইউ ইনডিড—গেস্ট হাউসের প্রত্যেকেই বলেছেন হাউ থ্রিলড সি ওয়াজ—পদ্মিনী সিং ওয়াজ অ্যাবসল্যুটলি ওভারজয়েড…অ্যান্ড শি ডিড হ্যাভ ফান ফ্রাইডে নাইট। শি হ্যাড হার বার্থডে পার্টি স্যাটারডে নাইট, শি ওয়েন্ট টু দ্য নাইটক্লাব ‘দ্য গোলডেন ওয়েব’ অ্যান্ড ডান্সড টিল ফোর এ.এম.। রবিবার বেলা বারোটা অবধি ঘুমিয়েছেন—সি ওয়াজ এনজয়িং হারসেলফ বিকজ শি নিউ শি ওয়াজ গোয়িং টু এনড হার লাইফ—

—না, না, ডক্টর মজুমদার—ব্যাপারটা একেবারেই তা নয়—

—মিস ব্যানার্জি, ইউ গেভ হার দ্য মোস্ট বিউটিফুল গিফট, জীবনের শেষ কটি দিন। শেষ কটি মুহূর্তে আনন্দে ভরে দিয়েছিলেন, প্লীজ ট্রাই টু সী ইট দিস ওয়ে, ইওর গিফট ওয়াজ আ পজিটিভ থিং ইন হার লাইফ…

—ভুল, ভুল, সবাই ভুল করছেন আপনারা—কেন যে কেউ বুঝতে চাইছেন না…

—আপনিও একটু বুঝতে চেষ্টা করুন মিস ব্যানার্জি, এতটুকুও সন্দেহের অবকাশ থাকলে কি পুলিশ খুনের কেন না করে সুইসাইডের কেস বলত? যথেষ্ট প্রমাণ, যথেষ্ট সাক্ষী সাবুদ না থাকলে? আপনি মাথাটা ঠাণ্ডা করুন। যা ঘটেছে তার জন্য আপনার কোনও দায়িত্ব ছিল না, নেই। এখন যান, দু’হপ্তা একটু খোলা হাওয়ায় বেড়িয়ে আসুন।

—আমি বলছি, ইফ ইউ কোঅপারেট উইথ আস, পদ্মিনী সিং আর ফিরে আসবেন না আপনাকে বিরক্ত করতে। তার জন্যে ইউ মাস্ট রিল্যাক্স, অ্যান্ড ইউ মাস্ট নট ফরগেট টু টেক ইওর মেডিসিনস—ওষুধগুলো কিন্তু খেয়ে যেতে হবে মনে করে, প্রত্যেকটি, প্রত্যেকদিন, একটিও মিস করে গেলে হবে না, দ্যাটস সিরিয়াস, এইজন্যে আপনার নেক্সট—অফ—কিন কারুর সঙ্গে আমার কথা বলা দরকার—যিনি আপনাকে মনে করে ওষুধগুলো খাওয়ানোর দায়িত্বটা নেবেন—সামওয়ান হু ক্যান লুক আফটার ইউ। আমাদের অ্যাডভাইস মতো চললে ইউ উইল বি ফাইন—দুটো জিনিসই জরুরি। ইউ নীড আ চেঞ্জ অব প্লেস—আ চেঞ্জ অব সিনারি এবং রেগুলার মেডিসিন। একটু ভাবুন না, মিস ব্যানার্জি—বাইরে কোথায় কোথায় আপনার আত্মীয়—স্বজন বন্ধুবান্ধব আছেন? দিল্লি, বম্বে, বেনারস, জয়পুর, দীঘা, দার্জিলিং, পুরী। কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ নিশ্চয়ই…

—নেই। কেউ নেই।

—কেউ না? আর একটু ভেবে দেখুন। আছেন নিশ্চয়। যাদের কাছে আপনি ক’দিন…

—নেই, কেউ নেই।

—ভেবে দেখুন। আরেকটু কাছাকাছি? দুর্গাপুর, আসানসোল, মালদা, জলপাইগুড়ি, বর্ধমান? কেউ চেনা নেই? শান্তিনিকেতনেও না?

—শান্তিনিকেতনে? হ্যাঁ। আমার বোনই তো ওখানে পড়ায়। পাঠভবনে।

—গ্রে—ট! এই তো আছে—চলে যান, দিন পনেরো। বৃষ্টিতে শান্তিনিকেতন দারুণ—

—অত ছুটি নেই আমার।

—এটা তো মেডিক্যাল লিভ। আমি প্রেস্ক্রাইব করেছি। সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেতে হবে অবশ্য। আনঅ্যাকম্প্যানিড গেলে চলবে না। পনেরো দিন বাদে আবার আপনাকে দেখব। তারপরেও আর কিছুদিন রেস্ট নিতে হবে এখন আপনাকে। ইউ নিড ইট। মাসখানেক তো ধরেই রাখুন। বেশিও লাগতে পারে। অ্যান্ড ফাইন্ড আ নিউ গেস্ট হাউস অন ইওর রিটার্ন। মিসেস মিত্রের ওইখানে থাকাটা চলবে না আপাতত কিছুদিন। আপনার কোনও আত্মীয়—স্বজন, নেক্সট অফ কিন, এখানে নেই? আমি যাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি? আপনার বোনকেই আসতে বলুন না শান্তিনিকেতন থেকে? ইটস আর্জেন্ট। বাড়ির কারুর সঙ্গে কথা বলা দরকার।

—বোনেরই বা ছুটি কই, বুধবার ছাড়া?

—এই বুধবারেই আসতে বলুন। আজ তো মোটে ফ্রাইডে। আই নিড টু টক টু সামবডি, হু ক্যান টেক কেয়ার অফ ইউ। আর্জেন্টলি।

—বোন তো ছোট। টেক কেয়ার করবে কেমন করে।

—কত ছোট? চাকরি করছে তো! উইল ডু। আপনাকে জানে, বোঝে, এমন একজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ফ্যামিলি। অর এ ক্লোজ ফ্রেন্ড।

—বোন আমাকে জানে। ঠিকই। কিন্তু বোঝে কিনা আমি কেমন করে বলব বলুন। আমি তো মোচিওর, গ্রোওন আপ পেশেন্ট। আমাকেই খুলে বলুন না যা বলার।

—আপনাকেই তো বলছি। কিন্তু অসুখটা কি এটা বলতে হবে একজন তৃতীয় ব্যক্তিকে। শুশ্রূষার ব্যাপারটা সামওয়ান নিডস টু টেক কেয়ার অফ ইউ। নইলে আপনাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আই ক্যান গট লিভ ইউ টু ইওরসেলফ অ্যাট দ্য মোমেন্ট। আরে, আপনাকে সারিয়ে তুলতে হবে তো চটপট? না কী? বোনকে খবর দিন। বোনের নাম কী? কত ছোট?

—মৌ আমার চেয়ে দু’বছরের ছোট…

—বাঃ। পিউ, মউ। মিষ্টি নাম। কে রেখেছেন?

—বাবা। মার সঙ্গে মিলিয়ে। যার নাম শিউলি, আমরা পিউলি, আর মউলি। আমরা লি—কারটা বাদ দিয়েছি। দাদার নাম কুরুবক— সে বেচারি নাম শর্ট করতে পারেনি তাই ডাকনামে চলে। টিংকু ব্যানার্জি। ওর নামটা মায়ের দেওয়া—মা খুব কবিতা পড়তে ভালোবাসতেন—ইন ফ্যাক্ট পদ্মিনীমাসি যদি বাবাকে নিয়ে না পালাতো তাহলে হয়তো আমি ওকে খুন করতাম না—বাট শি স্টোল মাই ফাদার ফ্রম আস—তার আগে আমাদের মা—টা বড় ভালো মা ছিল—এখন…

—এখন খারাপ? কেন?

—খারাপ নয়। মানে মা এখন কাকার কাছে থাকেন, মানে এখন আমাদের নিজস্ব কোনও…সংসারটা তো ওঁদের দু’জনেরই।

—তাতে আপনার আপত্তি কেন? লেট হার হ্যাভ হার ওন লাইফ—

—পদ্মিনীমাসির মতো? ওই মহিলা ভীষণ বিপজ্জনক—শি হ্যাজ করাপটেড এভরি ওয়ান ইন মাই ফ্যামিলি। ইনক্লুডিং মাই মাদার—মা, লার্নট ইট অল ফ্রম হার—ভীষণ হার্মফুল মহিলা—হার্মফুল অ্যান্ড ডেঞ্জারাস—আমাদের গোটা পরিবারটাকে তছনছ করে দিয়েছে— শি হ্যাড নো রাইট টু লিভ, শি হ্যাড টু গো—

—আই সী… হুম… হোয়্যার ইজ ইওর মাদার নাউ?

ব্যাঙ্গালোরে। কাকার কাছে। বোন শান্তিনিকেতনে। আমি কলকাতায়। দাদা হায়দ্রাবাদে। সকলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

—বাঃ ব্যাঙ্গালোর তো দারুণ জায়গা। হোয়াই ডোন্ট ইউ ভিজিট হার দেয়ার? টেক ইওর সিস্টার উইথ ইউ।

—কাকার কাছে দু সপ্তাহ? না।

—তাহলে হায়দ্রাবাদ? আপনার দাদার কাছে ছুটি কাটিয়ে আসুন না—

—দাদা একা মানুষ। মেসে থাকে। আমাদের নিয়ে কোথায় রাখবে? শুনুন, ডক্টর মজুমদার। আমাদের কারুরই কোথাও ‘বাড়ি’ নেই। বোন বিশ্বভারতীতে হোস্টেলে থাকে। আমি গেস্ট হাউসে। আমাদের কারুর কোথাও ঘর নেই, সংসার নেই। সব—সব ওই পদ্মিনীমাসির জন্যে—বাবাকে কেড়ে নিয়ে গেল, আর আমাদের সক্কলের সব ঘর—সংসার গুঁড়িয়ে দিয়ে গেল, জন্মের মতো।

—নো, নো, মাস্ট নট থিংক লাইক দ্যাট—থিংক পজিটিভ—থিংস উইল চেঞ্জ—বাবার সঙ্গে আপনাদের কনট্যাক্ট আছে? এখন তো আপনিও কলকাতায়।

—না। বাবা কনট্যাক্ট রাখেননি।

—কোন অফিসে কাজ করেন?

—এখনও কাজ করেন, না রিটায়ার্ড, কিছুই জানি না। সেই কোম্পানি আছে না উঠে গেছে, তাও জানি না। কত বিলিতি কোম্পানি তো উঠে গেল। পদ্মিনীমাসি—

—শুনুন মিস ব্যানার্জি, এখানে একটা মস্ত ভুল হয়ে যাচ্ছে। আপনি মনটাকে স্বচ্ছ করুন, পদ্মিনী সিং ওয়াজ নট পার্ট অফ ইওর চাইল্ডহুড—উনি আপনার বাবাকে চিনতেন না—

—খুব চিনত। জগতের সব পুরুষকে চেনে ও। ঘরটর ভেঙে দিয়ে বাবাকে নিয়ে পালিয়ে এলো, সাতদিন ধরে, শখ মিটে যেতে, ক্যানাডায় নিজের বরের কাছে ফিরে গেল। লজ্জায় বাবার আর ঘরে ফেরাই হল না—অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে সংসার পাতলেন কলকাতায়—শুধু কি বাবা? ও ঋত্বিকের সঙ্গে যেটা করল? শেমলেস…

—কী আবার করেছিলেন উনি? ঋত্বিক তো আপনার বয়ফ্রেন্ড—

—ঋত্বিককে ডেকে সোজাসুজি বলল, ”একটা ফেভার চাই। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সাহেব—বর ভাববে আমি বোধ হয় খুবই আন—অ্যাট্রাকটিভ। যদি দেখে এই এত বয়সেও আমি ভার্জিন রয়ে গিয়েছি—সে খুবই অপমানের কথা হবে—তুমি প্লিজ এসে আমার মান বাঁচিয়ে দাও—আমার কৌমার্যটা নষ্ট করে দাও”—পদ্মিনীমাসিকে তো চেনেন না—কোনও পুরুষ ওকে ‘না’ বলতে পারে না। পুরুষের মতো ওর ভার্জিনিটি নষ্ট করে দিয়ে এসেছে। আর আমি জীবনে ছোঁব না ঋত্বিককে— নেভার—পদ্মিনীমাসির ভার্জিনিটি ভাঙতে গিয়ে তুই যে তোর নিজেরও ভার্জিনিটি হারিয়ে এলি? পুরুষের কৌমার্যের বুঝি দাম নেই?

—এক্সকিউজ মি মিস ব্যানার্জি—পদ্মিনীমাসির কৌমার্য? হার ভার্জিনিটি? ডিড ইউ স্যে—?

অ্যান্ড ঋত্বিক…

—হ্যাঁ হ্যাঁ, পদ্মিনীমাসি। আর ঋত্বিক। ওর সঙ্গে ব্যাপারটা জেনে যাবার পর ঋত্বিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কি আমার পক্ষে সম্ভব? আপনিই বলুন? কী বলে তুমি পদ্মিনীমাসির কথা শুনলে? শি ইজ করাপটিং এভরি ওয়ান ইন মাই লাইফ—টেকিং এ্যাওয়ে এভরি ওয়ান ফ্রম মাই লাইফ—পদ্মিনীমাসিকে খুন না করে উপায় ছিল না। আমার, আমার শৈশব, আমার যৌবন, সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল ওর উদ্দাম অসংযত জীবনযাপনের জন্য। আমার বাবাকে, আমার মাকেও ও নষ্ট করেছে। ঋত্বিককেও ওর লোভ—ওকে আমি বাঁচতে দেব কেমন করে? হয় আমাকে মরতে হয় নইলে ওকে। আর ওকে মার্ডার করা তো সবচেয়ে সহজ। কেউ ধরা পড়বে না। কারুর শাস্তি হবে না, সবাই জানে ও সর্বক্ষণ সুইসাইডের কথা বলে, ব্যাগে সুইসাউড নোট লিখে রেখেছে, ও তো পারফেক্ট টার্গেট। আমি কনফেস করছি, অথচ আপনারা বিশ্বাস করছেন না। ইভন পদ্মিনীমাসি ইজ বিহেভিং অ্যাজ ইফ নাথিং হ্যাজ হ্যাপেনড! রোজ রাত্তিরে এসে আমাকে কমপ্যানি দিচ্ছে, ঠিক আগের মতোই গল্প শোনাচ্ছে, রাগ করছে না। ভয় দেখাচ্ছে না। প্রতিহিংসার ব্যাপারই নেই—যেন আমি ওকে খুন করিনি, যেন ও সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করেছে, আপনি বিশ্বাস করুন ডক্টর মজুমদার—আমি সত্যি কথা বলছি…

—সব বিশ্বাস করছি, সব বিশ্বাস করছি, অনেক ভাবনা—চিন্তায় মাথার মধ্যে জট পাকিয়ে গিয়েছে তো? ইট উইল টেক টাইম, ওষুধপত্তর খেতে খেতে আস্তে আস্তে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে—সব জট খুলে যাবে—পদ্মিনী সিং ওন্ট কাম ব্যাক আফটার দ্যাট—আপাতত শুধু একটা ভুলভাবনা আপনার মাথা থেকে একেবারে বাইরে বের করে দিতে হবে মিস ব্যানার্জি—ইউ কিলড নোবডি।…ইটস অ—ল ইন ইওর মাইনড। জাস্ট গেট দিস ওয়ান ফ্যাক্ট গ্রেট এন্ড এভরিথিং উইল ফল ইন্টু প্লেস—কেউ পদ্মিনী সিং—কে খুন করেনি—আপনি না, কেউই না। ইটস আ প্লেন কেস অব সুইসাইড।

—দ্যাটস হোয়াট এভরিবডি থিংকস।…বাট দ্যাট ইজ নট দ্য ট্রুথ।… দ্য ট্রুথ ইজ…

—ইউ মাস্ট স্টপ টরচারিং ইওরসেলফ মিস ব্যানার্জি—বারবার নিজেকে ওই কথাটা বলবেন না, প্লিজ—নাউ লিসন টু মি—দ্য ট্রুথ ইজ দ্যাট ইউ আর ইনোসেন্ট…দ্য ট্রুথ ইজ দ্যাট ইউ কিলড নো ওয়ান…দ্য ট্রুথ ইজ দ্যাট ইউ আর টু—উ ডিসেন্ট অ্যান্ড টু—উ সেনসিটিভ আ পার্সন টু স্ট্যান্ড অল দিস ভারবাল অ্যাবিউজ—ইউ ওয়্যার বিইং ভারবালি অ্যাবিউজ ডে আফটার ডে নাইট আফটার নাইট। অল দ্যাট ক্রুড গ্রোটেস্ক, টেলস অফ হার সেকসুয়াল ফ্যানটাসিজ আপনার নার্ভে সহ্য হয়নি, রুচিতে সহ্য হয়নি। শিক্ষাদীক্ষায় মূল্যবোধে সহ্য হয়নি, ইউ ওয়্যার হেডিং ফর আ ব্রেকডাউন, রুমমেটের অপঘাত মৃত্যুতে অনেকেরই নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে থাকে, কোয়াইট কমন—তার ওপরে আপনিই ওই হোটেলে ওঁকে হলিডে প্যাকেজ প্রেজেন্ট করেছিলেন।

—এতগুলো ব্যাপার মিলিয়ে একটা নার্ভাস ব্রেকডাউন তো হতেই পারে। আপনার কিন্তু সত্যি সত্যি এতটা গিলট অনুভব করার কোনও যুক্তিই নেই, থিংক লজিকালি।

—আসুন, বরং আমরা উল্টোদিক থেকে ভাবতে শুরু করি—ওঁর শেষ দিনগুলিতে আপনি ওঁকে কত সুখ, কত তৃপ্তি দিতে পেরেছেন। উনি লাক্সারি ভালোবাসতেন, অথচ ইদানীং ক্ষমতা ছিল না। ইউ গেভ হার ব্যাক হার লস্ট ডেজ অফ লাক্সজুরিয়াস লিভিং…শি হ্যাজ ফাউন্ড হার পিস…

—না না, ডক্টর মজুমদার। ইউ ডু নট আন্ডারস্ট্যান্ড।

—থিংক পজিটিভ মিস ব্যানার্জি। উই মাস্ট থিংক পজিটিভ, নেগেটিভ থিংকিং নিজেই একটা বড় অসুখ—এই কথাটা শুধু বিশ্বাস করুন, ইউ কিলড নোবডি—বিকজ নোবডি ওয়াজ কিলড হিয়ার—অ্যান্ড দ্যাট ইজ আ ফ্যাক্ট—দ্যাটস ট্রুথ—মিস ব্যানার্জি, প্লিজ বি লজিক্যাল, ইউ কুড নট হ্যাভ ডান ইট—ইটস জাস্ট আ ডিলিউশন…বিভ্রান্তি, আপনি প্রচণ্ড স্ট্রেনে ছিলেন, তাই এরকম মনে হচ্ছে। এই ভাবনাটাকে প্রশ্রয় দেবেন না—অ্যাকসেপ্ট দ্য ট্রুথ…

.

—নমস্কার ডক্টর মজুমদার।

—আসুন আসুন মিস ব্যানার্জি। কেমন আছেন এখন। এভরিথিং ইজ ফাইন? ইউ আর লুকিং গ্রেট।

—থ্যাংকস। আমি দিব্যি আছি, থ্যাংকস টু ইউ।

—ওষুধ চলছে তো?

—চলছে। ঋত্বিক আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছে।

—সত্যিই ডক্টর মজুমদার। আপনারই যত্নে পিউ এখন সুস্থ। কী যে দুঃসময় পড়েছিল—তখন আপনার সাহায্য না পেলে পিউ যে কী করে বসতো সত্যি, আপনি…

আরে? আই ওয়াজ ওনলি ডুইং মাই জব—

—পদ্মিনী সিং আর আসছেন না তো? শি ফাউন্ড হার পীস, অ্যান্ড ইউ ইওরস?

—হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেসব উৎপাত সেরে গিয়েছে—যেভাবে আপনি তখন পিউকে রক্ষা করেছিলেন—আর ক্রমশ সুস্থ করে তুলেছেন এজন্য উই আর ফর এভার গ্রেটফুল টু ইউ।

—না, না, অ্যাজ আই স্যেড। আই ওয়াজ ওনলি ডুইং মাই জব, দ্যাটস অল। প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকলে ওরকম অবসেশন তো হতেই পারে—শি ওয়াজ বিইং কন্টিনুয়ালি অ্যাবিউজড ভারবালি—ইউ ওয়াজ আগেইনস্ট হার মরালস। আগেইনস্ট হার টেস্ট। আগেইনস্ট হার হিউমান ভ্যালুজ। ঋত্বিকবাবু, ইট ওয়াজ জাস্ট টু মাচ ফর হার নার্ভস—তারপর মিসেস সিং কিলড হারসেলফ—একজন রুমমেট সুইসাইড করলে অনেক সময়েই দেখা যায় অন্য রুমমেটের নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছে।

—অ্যান্ড ওয়াজ বিইং ভিকটিমাইজড বাই মিস ব্যানার্জি। নিজের সেকসুয়াল অবসেশনগুলো উনি ট্রান্সফার করতে চেষ্টা করতেন মিস ব্যানার্জির মধ্যে। শি মেড লাইফ হার্ড ফর মিস ব্যানার্জি—তাই ওর একটা ব্রেকডাউন হয়েছিল। এখন সেরে গেছে।

—কিন্তু আবার হবে না তো? যদি রিল্যাপস করে? রেকার করে যদি?

—না না। মিস ব্যানার্জি। ডোন্ট ইভন থিংক অ্যাবাউট ইট। ওকথা মনেও আনবেন না, ইট উইল নট রেকার। ওটা সেরে গেছে, ইউ আর কিওরড—আপনি কেবল ওষুধগুলো নিয়মিত খেয়ে যাবেন—জাস্ট টু কীপ ইওর নার্ভস সুদড—খাচ্ছেন তো? ইউ নীড দ্য সার্পোটিভ ড্রাগস টু কীপ ইউ ফিট।

—হ্যাঁ, ডক্টর মজুমদার। লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছে পিউ। আজকে আমরা আপনাকে একটা বিশেষ কথা বলতে এসেছি। আগামী শনিবার আমাদের বিয়ে। প্যারিশ হলে রিসেপশন। আপনাকে যেতেই হবে।

—বা বাঃ। গ্রেট নিউজ। নিশ্চয়ই যাব, একটু রাত হবে, কিন্তু যাব নিশ্চয়ই। কনগ্র্যাচুলেশনস। উইশ ইউ অল দ্য বেস্ট।

—মেনি থ্যাংকস ডক্টর মজুমদার। কেবল একটাই ভাবনা হচ্ছে, পিউ যেন আবার জ্বরে—টরে না পড়ে যায়, ওর যা কাশি হয়েছে—

—দূর ও কিছু না, সক্কলেরই ফ্লু হচ্ছে এখন, ঋত্বিকটা শুধু শুধু ভাবে—ভিটামিন সি আর ক্রোসিন খাচ্ছি আর কাশলেই লবঙ্গ।

বলতে বলতে পিউ ব্যাগ খুলে একটা রাজস্থানী কারুকাজ করা ছোট্ট রূপোর মশলার কৌটো বের করে একটা লবঙ্গ মুখে দিল। তারপরে ডক্টর মজুমদারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

—’লবঙ্গ?’

থ্যাংকস—বলে লবঙ্গ তুলে নিতে গিয়ে কৌটোটার ওপরের মস্ত নীল পাথরটায় ডক্টর মজুমদারের চোখ আটকে গেল হঠাৎ। কী যেন একটা কথা, কী যেন একটা খুব খুব জরুরি ব্যাপার, কেন যেন খুব চেনা চেনা।

কী যেন,—মনে পড়ি পড়ি করেও কিছুতেই মনে পড়ল না তাঁর।

-সমাপ্ত-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *