লন্ডন থেকেই গেস্ট হাউসটা বুক করেছিল অরিন্দম৷ আজকাল ইন্টারনেটের দৌলতে এই একটা মস্ত সুবিধা হয়েছে৷ পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় বসে, যেখানে ইচ্ছা হোটেল বুক করা যায়, ট্রেনের টিকিট কাটা যায়, টেলিফোনের বিল দেওয়া যায় এমনকি ট্যাক্সি পর্যন্ত ভাড়া করে ফেলা যায়৷ একমাসের জন্য কলকাতায় আসতে হবে৷ ভবানীপুরের শরিকি বাড়ির ঘর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে, বছর তিনেক বন্ধই ছিল৷ এরমধ্যে অরিন্দম কলকাতায় আসেনি৷ প্রিয়া এসেছিল৷ কিন্তু কলকাতায় নয়৷ সোজা চলে গেছিল বাপেরবাড়ি শিলিগুড়িতে৷ কিন্তু এবার তো আর সেরকম চলবে না৷ কলকাতাতেই থাকতে হবে৷ অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর অবশেষে বাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে৷ সেজন্য সই-সাবুদ যা করার সেসব করতে হবে৷ প্রোমোটার বাড়িটা কিনে ফ্ল্যাট বানাবে৷ অরিন্দমের ভাই-বোনেরা কেউ ফ্ল্যাট নেবে, কেউ আবার টাকা নিতেই আগ্রহী৷ অরিন্দম অবশ্য ফ্ল্যাটই নেবে৷ কারণ প্রিয়ার খুব ইচ্ছা, কলকাতায় একটা নিজেদের থাকার জায়গা অন্তত থাকুক৷ দু-চারবছর অন্তর দেশে আসলে সেখানেই ওঠা যাবে৷ মা এখনও বেঁচে আছে বলে নিশ্চিন্তে শিলিগুড়ি যাওয়া যায়৷ ভাইদের সংসারে কী হবে তার তো কোনও নিশ্চয়তা নেই৷ তাহলে তো দেশের সঙ্গে সম্পর্কই চুকিয়ে ফেলতে হবে৷ সুতরাং হ্যাপা বেড়েছে অরিন্দমের৷ ফ্ল্যাট যারা নেবে, তাদের জন্য একটি করে ভাড়া বাড়ির ব্যবস্থা করেছেন প্রোমোটার৷ মা-বাবার যাবতীয় জিনিসপত্র সেখানে ভরে ফেলতে হবে, বাড়ি ভাঙা শুরু করার আগেই৷ এর মধ্যে আবার উত্তরপাড়ায় মামাতো বোনের বিয়ে আছে৷ সেখানেও দিন তিনেকের ধাক্কা৷ সব মিলিয়ে একমাস তো লাগবেই৷
অগত্যা ভরসা ইন্টারনেট৷ হোটেলে একমাস থাকাটা বড্ড বেশি খরচের৷ তাছাড়া খানিকটা বিরক্তিকরও৷ তাই হোম স্টে বা গেস্ট হাউস ধরনের কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখছিল অরিন্দম৷ দেখা গেল গেস্ট হাউসটাই সুবিধাজনক৷ কারণ সেখানে নিজস্ব রান্নাঘর এবং বাসনপত্রের ব্যবস্থা থাকে৷ ঘরের কাজকর্ম করে দেওয়ার জন্য লোকও পাওয়া যাবে এজেন্সি থেকে৷ বেশ খানিকটা বাছাবাছি করে শেষপর্যন্ত অরিন্দম আর প্রিয়া দুজনেরই পছন্দ হল যোধপুর পার্কের একটা গেস্ট হাউস৷ ভাড়া যদিও একটু বেশি, কিন্তু ব্যবস্থা খুব ভালো৷ বেশ বড় একটা বেডরুম৷ তার সঙ্গে মস্ত লিভিং-ডাইনিং৷ রান্নাঘর, বাথরুম, ব্যালকনি৷ পুরোপুরি ফার্নিশড৷ অপলা আর অঙ্কুর দুজনেই যাবে না৷ দুই ভাই-বোনে বাড়িতে থাকবে৷ চিন্তার কিছু অবশ্য নেই৷ কারণ দুজনেই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢুকে গেছে৷ নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা নিতে পারে৷ ছেলে-মেয়ে যাচ্ছে না বলে একটার বেশি বেডরুম দরকারও নেই অরিন্দমদের৷
গেস্ট হাউসের মালকিন শীলা মিত্র৷ ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বেশ ভালো লাগল অরিন্দমের৷ মহিলা রীতিমত সফিস্টিকেটেড৷ পরিশীলিত উচচারণে গুছিয়ে কথা বলেন৷ কথা বলার ভঙ্গিটিও চমৎকার৷ শীলা মিত্রর কাছে জানা গেল, গেস্ট হাউসটা আসলে একটা ফ্ল্যাট৷ পাঁচতলা বাড়িটিতে মোট আটটি ফ্ল্যাট আছে৷ তার মধ্যে দুটি শীলা মিত্রের৷ তিনি নিজে চারতলায় থাকেন আর দোতলার ফ্ল্যাটটা গেস্ট হাউস হিসাবে ভাড়া দেন৷ এর আগে এই গেস্ট হাউসে যাঁরা থেকেছেন তাঁদের পরিচয় এবং থাকার অভিজ্ঞতাও ইন্টারনেটে ছিল৷ সেগুলো ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে বোঝা গেল শীলা মিত্র গেস্ট হাউস হিসাবে এই ফ্ল্যাট ভাড়া দিচ্ছেন গত বছর দেড়েক৷ এরমধ্যে যাঁরা এখানে বিভিন্ন সময় এসে থেকেছেন তাঁরা প্রায় সবাই বিদেশি৷ দু-একজন বেড়াতে এসেছেন, তবে বেশিরভাগই এসেছেন কোনও কাজে৷ কানাডার এক সাহেব তো প্রায় তিনমাস ছিলেন৷ ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাপনায় সকলেই খুশি৷ কারুর কোনও বিরূপ অভিজ্ঞতা নেই৷ নিশ্চিন্ত হয়েই তাই টাকা পাঠিয়ে দিল অরিন্দম৷
নভেম্বর মাসে কলকাতায় ঠান্ডা পড়ে না৷ কিন্তু বাতাসে শীতের একটা চোরাটান থাকে৷ ইংল্যান্ডের শীতে অভ্যস্ত অরিন্দমদের কাছে সেটা নেহাতই তুচ্ছ হলেও জ্বালাপোড়া গরম নেই বলে নিশ্চিন্ত৷ এয়ারপোর্ট থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা যোধপুর পার্ক৷ রাস্তায় আসতে আসতে জানলা দিয়ে বাইরে কলকাতা শহর৷ গত তিন বছরে বদলে গেছে অনেকটাই৷ নতুন উড়ালপুল, বহুতল, পাঁচতারা হোটেলের সঙ্গে অনেকদিনের চেনা যানজট৷ অ্যাপ ক্যাবের জিপিএস-এর দৌলতে গেস্ট হাউস খুঁজে পেতে অসুবিধা হল না৷ চাবি ছিল কেয়ারটেকারের কাছে৷ দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে খুশি হল প্রিয়া৷ চমৎকার আলো-হাওয়া খেলানো ফ্ল্যাট৷ ঢোকার মুখে ছোট্ট একটু করিডর পেরিয়ে শোবার ঘর৷ সঙ্গে অ্যাটাচড বাথরুম৷ পাশেই রান্নাঘর৷ তার লাগোয়া বেশ বড় ডাইনিং স্পেস৷ ডাইনিং-এর থেকে চার-ধাপ নেমে লিভিং রুম৷ মাঝখানটা ব্যালকনির মতো রেলিং দিয়ে ঘেরা৷ লিভিং রুমটা ভারি সোফা দিয়ে সাজানো৷ দেওয়ালে একটা বেশ বড়ও টেলিভিশনও রয়েছে৷ রিমোট টিপতেই চালু হয়ে যায় টিভি৷ নিশ্চিন্ত হয় অরিন্দম৷ রাতে লিভারপুলের খেলা আছে৷ মিস করলে বেজায় বিরক্ত লাগত৷
জিনিসপত্র গুছিয়ে একটু থিতু হয়ে বসার পর সন্ধে নাগাদ শীলা মিত্র এলেন দেখা করতে৷ গলা শুনে মহিলাকে যেরকম মনে হয়েছিল, সামনে থেকে দেখেও ধারণাটা বদলাল না৷ মাঝারি উচ্চতার ছিপছিপে চেহারা৷ মাথার চুল অধিকাংশই সাদা৷ সাজ-পোশাকে মার্জিত রুচির ছাপ৷ তবে মুখ আর চোয়ালের গড়নে একধরনের কাঠিন্য আছে যার থেকে মনে হয় মহিলা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সহজে সরেন না৷ কিছুক্ষণ একথা-সেকথার পর অরিন্দম বলল, আপনার গেস্ট হাউস তো খুব পুরোন নয় দেখলাম৷ মাত্র বছর দেড়েক হল শুরু করেছেন….তার আগে কি ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিতেন? মানে আমি জানতে চাইছি এভাবে গেস্ট হাউস ভাড়া দেওয়াটা কি লাভজনক? আসলে আমার নিজেরও ভবিষ্যতে দরকার হতে পারে তো৷ যেজন্য এবার কলকাতায় আসা আর কী৷ তো ফ্ল্যাট তৈরি হলে সেটা তো ফাঁকাই পড়ে থাকবে৷
লাভ জনক কিনা হিসেব করিনি৷ তবে নির্ঝঞ্ঝাট নিঃসন্দেহে৷ ভাড়া দিয়ে দেখেছি, তার হাজারো ঝামেলা৷ আমি একলা মানুষ৷ এত কিছু সামলানো অসম্ভব৷ সেজন্যই ভেবে দেখলাম এটা সুবিধাজনক৷ তাছাড়া ভাড়াটে যদি একবার গেড়ে বসে তখন তাকে তুলতে হলে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়৷ আজকাল তাই কলকাতায় অনেকেই গেস্ট হাউস প্রেফার করছে….৷ আপনারা তো প্রায় একমাস থাকছেন৷ কাজকর্ম নিশ্চয় আছে৷ এছাড়া প্ল্যান কী? আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাবেন নিশ্চয়ই৷
আত্মীয়-স্বজন আমাদের কলকাতায় খুব বেশি নেই৷
প্রশ্নটা শীলা মিত্র প্রিয়াকে করেছিলেন৷ তাই সেই উত্তর দেয়৷
যাঁরা আছেন তাঁদের সঙ্গে তো দেখা করতেই হবে৷ আর আমার বাপের বাড়ির লোকজন সব শিলিগুড়িতে৷ কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা এবার কলকাতায় কয়েকটা ভালো নাটক দেখার৷ কলেজে পড়ার সময় আমরা দুজনেই খুব নাটকের ভক্ত ছিলাম৷ বহুরূপীর নাটকের ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শো দেখতে যেতাম৷ অথচ দেখুন কতদিন নাটক দেখা হয় না৷ তাই ঠিক করেছি এবার যখন থাকা হচ্ছেই তখন মন ভরে নাটক দেখে নেব৷
প্রিয়ার কথা শুনে দৃশ্যতই খুশি হন শীলা, তাই নাকি৷ তাহলে তো আপনাদের সঙ্গে অনেক গল্প হবে আমার৷ আমিও নাটক খুব ভালোবাসি৷ একসময় নিয়মিত করতাম৷ এখনও যোগাযোগ আছে৷ তাই নিয়ে দিদির সঙ্গে কত অশান্তি৷ যাক গে, বাদ দিন ওসব কথা৷ আপনারা চাইলে কলকাতায় এখন কী কী ভালো নাটক হচ্ছে সে খবর বরং আমি দিয়ে দেব৷
ভদ্রমহিলার কথাবার্তা বেশ না?
খাওয়া-দাওয়া শেষ৷ রাত পোশাক পরে চুলে চিরুণি চালাতে চালাতে কথাগুলো বলল প্রিয়া৷ কিন্তু উত্তর না পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে অরিন্দম নেই৷ লিভিং রুমে টিভি চলছে৷ শব্দ পাওয়া যাচ্ছে৷ শোবার ঘর থেকে উঁকি মেরে প্রিয়া দেখল বসার ঘরের সোফায় অরিন্দম বসে আছে৷ দশটা না বাজতেই টিভির সামনে বসেছে দেখে একটু বিরক্ত হয়েই চুল আঁচড়ানো শেষ করল প্রিয়া৷ মুখটা চড়চড় করছে বলে সবে ময়েশ্চারাইজারের বোতল থেকে হাতে ঢেলেছে, এমন সময় লাগোয়া বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল অরিন্দম৷ চমকে গিয়ে আর একটু হলে হাত থেকে বোতল পড়ে যাচ্ছিল প্রিয়ার৷
তুমি এখানে?
মানে? অরিন্দমও ততোধিক অবাক৷
তুমি বাথরুমে ছিলে? আমি যে দেখলাম তুমি বসার ঘরের সোফায় বসে আছো!
কী বলছো পাগলের মতো!
হ্যাঁ গো, আমি স্পষ্ট দেখেছি৷ বসার ঘরের সোফায় কেউ বসে আছে৷ আমি ভেবেছি তুমি৷
হেসে ফেলে অরিন্দম, এসো আমার সঙ্গে, দেখি কোথায় কাকে বসে থাকতে দেখেছো৷
দুজনে বেরিয়ে আসে ডাইনিং রুমে৷ সোফা ফাঁকা৷ কেউ কোত্থাও নেই৷ এবার একটু অপ্রস্তুত হয় প্রিয়া, না, মানে আমার তো চোখে চশমা ছিল না৷ তাই লোক চিনতে ভুল হতে পারে৷ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে স্পষ্ট দেখলাম সোফায় কেউ বসে আছে৷
ঘরে যখন আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নেই, তখন তৃতীয় ব্যক্তি আসবে কোথা থেকে শুনি৷ যাক গে, তুমি শুয়ে পড়ো৷ আমি এবার সত্যিই সোফায় গিয়ে বসব৷ একটু পরে খেলা শুরু হবে৷
প্রিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে. অরিন্দম মন দিয়ে খেলা দেখছে৷ খুবই টেনসড সিচুয়েশন৷ লিভারপুল রীতিমত চাপে৷ যে কোনওসময় গোলে বল ঢুকে যেতে পারে৷ অরিন্দমের চোখ-মন সবই একেবারে টেলিভিশনের পর্দায় নিবিষ্ট৷ কিন্তু তার মধ্যেও হঠাৎ মনে হল ওপরের ডাইনিং স্পেসটায় রেলিং ধরে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে৷ চমকে তাকাল অরিন্দম৷ কেউ কোত্থাও নেই৷ কিন্তু কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছে৷ মনে হচ্ছে যেন ঘরে আর একজন কেউ আছে৷ দেখতে না পাওয়া গেলেও তার অদৃশ্য উপস্থিতি অনুভব করা যাচ্ছে৷ ফ্যান চলছে না৷ জানলাও বন্ধ৷ কিন্তু হঠাৎ ডাইনিং টেবিলের ঢাকার কোণাটা সামান্য একটু নড়ে উঠল৷ যেন পাশ দিয়ে কেউ যাওয়ার সময় গায়ে লেগেছে৷ অরিন্দম বেশ সাহসী, ডাকাবুকো ছেলে৷ কিন্তু তাও কিছুতেই মন দিতে পারছে না খেলায়৷ মাঝে মাঝেই এপাশ-ওপাশ তাকিয়ে দেখছে৷ শেষ পর্যন্ত বসে থাকতে আর ইচ্ছে করল না৷ অনেকক্ষণ প্লেন জার্নি হয়েছে৷ তারপর ভালো করে বিশ্রামও হয়নি৷ তাই জেট-ল্যাগের জন্যই সম্ভবত এরকম হ্যালুশিনেশন হচ্ছে৷ মনে মনে কথাটা ভেবে খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে টিভি বন্ধ করে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল অরিন্দম৷
পরদিন সকালে অবশ্য মনে ছিল না কিছুই৷ সারা সকালটাই কাটল ভবানীপুরে৷ প্রোমোটারের সঙ্গে কথাবার্তা৷ আত্মীয়দের মধ্যে আলোচনা৷ এসব সারতে সারতেই দুপুর গড়িয়ে গেল বিকেলে৷ খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল তুতো এক দিদির বাড়িতে৷ সন্ধে নাগাদ ফ্ল্যাটে যখন ফেরা হল তখন দু-জনেই হা-ক্লান্ত৷ খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে তাই একেবারে কম্বলের তলায়৷ মাঝে অবশ্য ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে একবার৷ ঘুমিয়ে পড়েছিল অরিন্দম৷ হঠাৎ প্রিয়ার ধাক্কায় ধড়মড় করে উঠে বসল৷ খাটের পাশে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে প্রিয়া৷ অরিন্দমকে জেগে উঠতে দেখে ফ্যাসফেসে গলায় বলল, বসার ঘরের সোফায় কে যেন বসে আছে৷ আমি ঠিক দেখেছি৷ কোনও ভুল নেই….বড় সোফাটায় বসেছিল….আমার পায়ের শব্দ শুনে ঘাড় ঘোরাল….মুখ দেখতে পাইনি….
কী বলছ যা…তা
খাট থেকে নেমে ঘরের আলো জ্বালে অরিন্দম৷ করিডরে গিয়ে খাবার ঘর, বসার ঘরের আলো জ্বেলে দেয়৷ কোথাও কিছু নেই৷ সব দরজাও ভিতর থেকে বন্ধ৷ বাইরে থেকে কারুর আসারও কোনও উপায় নেই৷ ঘরে ফিরে এসে দেখে কেমন যেন গুটিসুটি হয়ে খাটের ওপর বসে আছে প্রিয়া৷ ভয়ের ছায়া এখনও চোখে-মুখে৷
ভয় পেয়ো না৷ ঘুম চোখে ভুল দেখতেই পারো….কী দেখেছো বলো তো ঠিক করে৷
ভুল আমি দেখিনি৷ ইনফ্যাক্ট কালও আমি ঠিকই দেখেছিলাম৷ একই জায়গায় বসেছিল৷ আমি ভাবলাম চশমা পরিনি বলে গণ্ডগোল হয়েছে৷ কিন্তু তা নয়…ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিন্তু৷ হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল৷ তুমি তো জানো মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আমার জল তেষ্টা পায়৷ কিন্তু কাল বোতলটা বেডসাইড টেবিলে রাখতে ভুলে গেছিলাম৷ তাই উঠেছিলাম, ডাউনিং টেবিল থেকে একটা জলের বোতল আনব বলে৷ দরজা দিয়ে বেরিয়ে দেখি, বসার ঘরটা কেমন যেন একটা নীলচে-রূপোলি আলোয় ভরে আছে৷ অন্ধকার ঘরে টিভি চললে যেরকম হয় না, ঠিক সেরকম৷ অথচ টিভিটা কিন্তু বন্ধ৷ আমি অবাক হয়ে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম৷ সোফার ওপর বসে ছিল….
ভয়ে শিউরে উঠে চুপ করে গেল প্রিয়া৷
কে বসেছিল? মহিলা না পুরুষ কিছু বুঝতে পেরেছ?
মহিলা৷ বয়স্কই মনে হল৷ মাথার চুলগুলো কাঁচাপাকা৷ আমার পায়ের শব্দ পেয়ে মুখটা ঘোরাল৷ কিন্তু মুখটা দেখতে পেলাম না৷ মুখের ওপর ছায়া-ছায়া অন্ধকার৷
বাকি রাতটা আর ঘুম এলো না দুজনেরই৷ আলো জ্বালিয়ে জেগে কাটল৷ পরদিন কথাটা শীলা মিত্রকে বলবে ভেবেছিল অরিন্দম৷ কিন্তু দিনের আলোয় ব্যাপারটা এত অবাস্তব লাগছিল যে ভাবনাটা কাজে পরিণত করা গেল না৷ প্রিয়া চাইছিল অন্য কোথাও শিফট করতে৷ কিন্তু সেটাও বেশ কঠিন ব্যাপার৷ প্রথমত এখানে টাকা দেওয়া হয়ে গেছে৷ হঠাৎ ছেড়ে দিলে নিশ্চিত টাকা ফেরত দেবে না৷ তাছাড়া এরকম হুটপাট করে পছন্দমত জায়গাই বা কী করে পাওয়া যাবে? তাই নানারকম ভাবনা-চিন্তা করতে করতেই কয়েকটা দিন কেটে গেল৷ এরমধ্যে অবশ্য আর কিছু ঘটেনি৷ প্রিয়া কিংবা অরিন্দম কেউই অবশ্য আর রাতে ঘরের বাইরে যায় না৷ তবে দিনের বেলা তো নয়ই, সন্ধের পরও আর কোনও আগন্তুককে দেখা যায়নি৷ তাই অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছিল দুজনে৷ কে জানে হয়তো চোখের ভুলই৷ এরমধ্যে বাড়ির কাজও বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মাঝখানে দুদিন উত্তরপাড়ায় বোনের বিয়েতে কাটিয়ে, শিলিগুড়ি যাওয়া হল৷ সেখানেও চার-পাঁচদিন কাটল বেশ হৈচৈ করে৷ শিলিগুড়ি থেকে ফেরা দুপুরের ফ্লাইটে৷ এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময়ই দেখা গেল আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে৷ বিকেলের পর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া শুরু হল৷ ওয়েদার রিপোর্ট বলছে নিম্নচাপ৷ সন্ধের পর ঝড়-বৃষ্টি দুই-ই বাড়বে৷
রাতে খিচুড়ি বানিয়েছিল প্রিয়া৷ ফুলকপি-কড়াইশুঁটি দিয়ে৷ সঙ্গে মাখন আর ডিমভাজা৷ রাতের খাবার খেয়ে অভ্যাসমত কফি নিয়ে বসেছিল দুজনে৷ টেলিভিশনে একটা পুরোন ইংরাজি ছবি হচ্ছে৷ অল্পবয়সী অড্রে হেপবার্ন৷ দুজনেরই আগে দেখা৷ তাই আলগাভাবে পর্দায় চোখ রেখে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে টুকটাক৷ ছেলে-মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছে একটু আগেই৷ হঠাৎ কেমন যেন একটা অস্বস্তি হল অরিন্দমের৷ মনে হল করিডরের দরজাটা খুলে কেউ যেন ভিতরে ঢুকে এল৷ চমকে পিছন ফিরে তাকাল প্রিয়াও৷ কেউ কোথাও নেই৷ কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ঘরের মধ্যে কেউ এসেছে৷ পাপোশে পা ঘষে এগিয়ে আসছে৷ প্রিয়া আঁকড়ে ধরেছে অরিন্দমকে৷ পাশ দিয়ে চলে গেল কেউ৷ গিয়ে বসল সিঙ্গল সোফাটায়৷ দেখা যাচ্ছে না কাউকে৷ কিন্তু সোফার মাঝখানটা দেবে গেল নিজে থেকেই৷ অরিন্দম বুঝতে পারছে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ সামনের টেবিলে কফির কাপটা রাখা আছে৷ কিন্তু হাত বাড়িয়ে নেওয়ার সাহস হচ্ছে না৷ হঠাৎ ঝড়াম করে বাইরের দিকের একটা জানলা খুলে গেল৷ হু হু করে ভিতরে ঢুকে এল একঝলক ঠান্ডা কনকনে হাওয়া৷ আর সেই হাওয়ার দাপটেই যেন দপ করে একসঙ্গে নিভে গেল সবগুলো আলো৷ অদ্ভূতভাবে জানলাটা আবার বন্ধ হয়ে গেল দড়াম করে৷ ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর৷ কোনওরকমে মোবাইলটা জ্বালতে যাচ্ছিল অরিন্দম কিন্তু তার আগেই হাত টেনে ধরল প্রিয়ার৷ ঘরে কোথাও কারেন্ট নেই৷ কিন্তু টিভিটা চালু হয়েছে৷ ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে কতগুলো ছবি৷ অবাক হয়ে দেখতে থাকে অরিন্দম আর প্রিয়া৷ পর্দায় দেখা যাচ্ছে তাদের এই বসার ঘরটাই৷ ঠিক একইরকম ভাবে সাজানো, শুধু পর্দাগুলো আলাদা৷ সোফায় বসে আছেন একজন বয়স্ক মহিলা৷ টিভি দেখছেন৷ হাতে রিমোট৷ মাঝে মাঝেই চ্যানেল ঘোরাচ্ছেন৷ দরজা খুলে ভিতরে এলেন শীলা মিত্র৷ একটা চকোলেট ব্রাউন রঙের ওপর হলুদ ফুল চাপের শাড়ি পরেছেন৷ কাঁধে ব্যাগ৷ ভদ্রমহিলা একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে কী যেন বললেন৷ তারপর আবার টিভির পর্দায় চোখ৷ শীলা মিত্রও কথা বলতে বলতে এসে দাঁড়ালেন মহিলার পিছনে৷ তাঁর ডান হাতে একটা কিছু রয়েছে৷ আচমকা হাতের জিনিসটা দিয়ে মহিলার মাথায় খুব জোরে আঘাত করলেন শীলা৷ ফটাস করে খুলি ফেটে যাওয়ার আওয়াজ হল৷ রক্ত ছিটকে এল চারিদিকে৷ মহিলার মাথাটা হেলে পড়ল৷ বোঝাই যাচ্ছে শরীরে আর প্রাণ নেই৷ তাও ভালো করে আর একবার দেখে নিয়ে শীলা মিত্র বেসিনের কাছে গিয়ে প্রথমে হাতের মুগুরের মতো জিনিসটা ভালো করে ধুলেন৷ শাড়িতে যেখানে রক্ত লেগেছিল সেগুলোও ধুয়ে নিলেন৷ তারপর মুগুরটা ব্যাগে ভরে, আইহোল দিয়ে একবার বাইরেটা ভালো করে দেখে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন দরজাটা টেনে দিয়ে৷
আলো জ্বলে উঠেছে ঘরের৷ টিভিতে আবার অড্রে হেপবার্ন ফিরে এসেছে৷ সোফায় হতভম্বের মতো বসে আছে প্রিয়া আর অরিন্দম৷ উল্টোদিকের সিঙ্গল সোফাটা এখন খালি৷ অদৃশ্য মানুষটি তাদের অজান্তেই উঠে চলে গেছেন৷
সারারাত ঘুমোয়নি দুজনের কেউই৷ যদিও আর কোনও অশরীরী উপস্থিতি কোথাও বোঝা যায়নি৷ কিন্তু তবু পরস্পরকে প্রায় আঁকড়ে ধরে জেগেই কাটিয়েছে৷ ভোরের আলো ফুটতে প্রিয়া উঠে চা করল দু-কাপ৷ চা নিয়ে খাবার টেবিলে বসে অরিন্দম বলল, এখন তাহলে কী করা যায়?
আগে তো আজ গিয়ে কোনও হোটেলে উঠি৷ তারপর ভাবব….
মাথা নাড়ল অরিন্দম, না, সেটা করা উচিত হবে না৷ ওই ভদ্রমহিলা, তিনি যেই হোন না কেন খুব সচেতনভাবেই আমাদের ছবিটা দেখিয়েছেন, যাতে ওনার খুনি ধরা পড়ে৷ আমাদের আগে এই গেস্ট হাউসে যারা থেকেছে, তারা প্রায় সবাই বিদেশি৷ তাই তারা কিছু দেখতে পায়নি৷ কারণ মহিলা জানতেন তাদের দেখিয়ে কোনও লাভ নেই৷
কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! শীলা মিত্রের মতো একজন সফিস্টিকেটেড মহিলা কীনা খুনি! আমার তো চোখে দেখেও বিশ্বাস হতে চাইছে না৷
এখন এ ব্যাপারে একটি কথাও বোলো না৷ আগে পুরোটা জানতে দাও৷ আমার মনে হয় বাড়ির কেয়ারটেকারের কাছ থেকেই কিছু খবর পাওয়া যাবে৷
আমেরিকান ফ্ল্যাগের ছবি দেওয়া টি-শার্ট আর একটা বিস্কুটের বাক্স৷ হাতে পেয়ে দারুণ খুশি হয়ে একগঙ্গা গল্প করল কেয়ার টেকার বনমালী৷ প্রায় বছর আষ্টেক এই বাড়িতে চাকরি করছে সে৷ তার কাছেই জানা গেল শীলা মিত্র আর ইলা বসু ছিলেন দুই বোন৷ তাঁদেরই বাবার বাড়ি ছিল এখানে৷ বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরি হয়৷ শীলা আর ইলা দোতলায় মুখোমুখি ফ্ল্যাটে থাকতেন৷ ইলা বিবাহিত ছিলেন৷ তবে ছেলেপুলে ছিল না৷ স্বামী মারা যান বছর দশেক আগে৷ ইলা নিজে ভালো চাকরি করতেন৷ থাকতেনও বেশ স্বচ্ছল ভাবেই৷ শীলা বিয়ে করেননি৷ ছোট-খাটো চাকরি করেছেন৷ তাঁর নেশা ছিল নাটক করা৷ তাই নিয়েই নাকি মেতে থাকতেন একসময়৷ বছর দুয়েক আগে ইলা বসু হঠাৎ খুন হন৷ নিজের ঘরেই মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছিল তাঁকে৷ শীলা তখন বাড়িতে ছিলেন না৷ সেদিন সকালেই দক্ষিণেশ্বরে গেছিলেন পুজো দিতে৷ ফিরে এসে দেখেন এই ঘটনা৷ পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছিল৷ পুলিশ কুকুরও এসেছিল৷ কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি৷ এরপর শীলা দিদির ফ্ল্যাটটা গেস্ট হাউস হিসাবে ভাড়া দিয়ে দেন৷ পরে ওপরতলার গুপ্তাজির ফ্ল্যাট ছেড়ে দিলে নিজে চারতলায় চলে গিয়ে দোতলার ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে দেন৷
দেখুন, আপনার কথাগুলো আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ভৌতিক ঘটনার ভিত্তিতে পুলিশ তো আর কিছু করতে পারে না৷ শীলা মিত্র যে খুনটা করেছেন এর স্বপক্ষে তো আমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই৷ আপনার কাছেও নেই৷
যাদবপুর থানার অফিসার পূর্বাচল কর-এর সঙ্গে বসে কথা বলছিল অরিন্দম৷ ভদ্রলোক বেশ মন দিয়েই সবকথা শুনেছেন৷ যদিও বিশ্বাস করেছেন কীনা সেটা মুখ দেখে বোঝার জো নেই৷ তবে গুরুত্ব যে দিয়েছেন সেটা প্রশ্নের ধরনে বোঝা গেল৷
আপনারা কি নিশ্চিত যে খুনের ঘটনার সময় শীলা মিত্র বাড়িতে ছিলেন না?
একশো শতাংশ৷ ইলা বসুর কেস আমিই হ্যান্ডেল করেছিলাম৷ আমি বলছি আপনাকে, সকালে শীলা মিত্র বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান৷ দক্ষিণেশ্বর গেছিলেন৷ সেরকম মাঝে মাঝে যেতেন৷ বাসের টিকিটও সঙ্গে ছিল৷ শীলা যখন বেরোন তখনও ইলা বসু বেঁচে৷ দুই বোনের বাড়িতে একই ঠিকে লোক কাজ করত, সে তখন ইলার বাড়িতে কাজ করছিল৷ সারাদিনে শীলা আর বাড়িতে ফেরেননি৷ বিকেলে কাজের লোকটিই আবার এসে দরজা ধাক্কায়৷ ইলা বসু না খোলায় দরজা ভাঙা হয়৷ শীলা ফিরেছিলেন তারও পরে৷ বাড়ির গেটে সিসিটিভি আছে৷ আমরা খুব ভালো করে চেক করেছি৷ কারণ শীলাই ছিলেন প্রাইম সাসপেক্ট, ইলা বসুর মৃত্যুতে তিনিই সবথেকে বেশি লাভবান হবেন৷ তাছাড়া দুই বোনের বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবি দুজনের কাছে থাকত৷ তাই সুযোগও ওনার বেশি ছিল৷ কিন্তু প্রমাণ করা যায়নি৷
আমাকে একবার ফুটেজটা দেখাতে পারেন?
হ্যাঁ নিশ্চয়…
মনিটরে মন দিয়ে ফুটেজটা দেখছে অরিন্দম৷ গেট দিয়ে বিভিন্ন লোক ঢুকছে-বেরোচ্ছে৷ কাজের মাসি, কুরিয়র সার্ভিসের লোক, দুটি বাচ্চা মেয়ে, একজন বয়স্ক ভদ্রলোক….হঠাৎ চমকে ওঠে অরিন্দম৷ হাতের ইশারায় পজ করতে বলে ছবিটাকে৷ একজন মহিলা ঢুকছেন গেট দিয়ে৷ খুব বেশি বয়স নয়৷ চুলে বড় খোঁপা করা৷ সানগ্লাস পরেছেন৷ ছিপছিপে চেহারা৷ পরনে একটা বড় বড় ফুল ছাপ শাড়ি৷
ইনিই শীলা মিত্র….
কী বলছেন আপনি! ইনি তো অনেক কমবয়সী একজন মহিলা….
পূর্বাচলবাবু ঈষৎ বিরক্ত৷ কিন্তু অরিন্দম নাছোড়বান্দা, আমি বলছি আপনাকে ইনিই শীলা মিত্র৷ খুন করার সময় উনি এই শাড়িটা পরেছিলেন আমি দেখেছি৷ আপনি ভুলে যাচ্ছেন, উনি কিন্তু দীর্ঘদিন নাটক করেন৷ মেক-আপে চেহারা বদলে ফেলা ওনার পক্ষে অসম্ভব নয়৷ আপনি খোঁজ নিন ভালো করে….
নিজের নাটকের দলের মহলাঘরেই মেক-আপ করেছিলেন শীলা৷ দলের লোকজনরা উত্তরবঙ্গে গেছে নাটক করতে৷ তাই ঘর যে ফাঁকা থাকবে তিনি জানতেন৷ শীলা যে এসেছিলেন তার সাক্ষী দিল উল্টোদিকের চা-ওলা৷ ঘটনাটা তার মনে আছে, কারণ শীলার অভ্যাস এক ভাঁড় চা খেয়ে ভিতরে ঢোকা৷ কিন্তু সেদিন তিনি চা-এর দোকানে দাঁড়াননি৷ চা-ওলা শীলাকে বেরোতে দেখেনি৷ ফুলফুল ছাপ শাড়িটাও জামা-কাপড় রাখার ট্রাঙ্কের মধ্যে পাওয়া গেল৷ খুনের মামলা তামাদি হয় না৷ তাই পূর্বাচল করের উদ্যোগেই শীলাকে আটক করে টানা জেরা করায় শেষপর্যন্ত খুনের কথা স্বীকার করলেন তিনি৷ টাকা-পয়সার বড্ড টানাটানি ছিল৷ দিদির ফ্ল্যাটটা পেলে আর্থিক স্বাচ্ছল্য আসবে জানতেন৷ তাছাড়া নাটক নিয়ে ইলা বারবার খোঁচা দিতেন বলে রাগও ছিল৷ সব মিলিয়েই খুনের পরিকল্পনা৷
আপনার প্ল্যানিং কিন্তু নিঁখুত ছিল৷ আমাদের ঘোল খাইয়েই দিয়েছিলেন….
পূর্বাচল করের দিকে একবার কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে শীলা মিত্র বললেন, তাই নাকি৷ তাহলে কোন গোয়েন্দা শেষপর্যন্ত ক্লু দিল আপনাদের?
কে দিল জানেন? আপনার দিদি, প্রয়াত শ্রীমতি ইলা বসু৷
—