অভিশপ্ত লাঠি

অভিশপ্ত লাঠি

বাড়িটাকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন একটা প্রাগৈতিহাসিক জন্তু থাবা গুটিয়ে

বসে আছে৷ তার পিঠটা বহু যুগ ধরে জমে থাকা শ্যাওলায় কালচে সবুজ৷ দেওয়াল বেয়ে ওঠা গাছগুলো তাদের ক্রমাগত বেড়ে ওঠা শিকড়-বাকড় দিয়ে জন্তুটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু তাতে তার কোনও বিকার নেই৷

উত্তরবঙ্গের এই মফস্সল শহরে ডাক্তার হিসাবে কাজে যোগ দেওয়ার পর দিগন্ত যাতায়াতের পথে বাড়িটাকে অনেকবারই দেখেছে৷ একতলা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি৷ সামনে-পিছনে বেশ কিছুটা বাগান৷ পিছনের বাগানটা বড় বড় গাছে ঝুপসি মতো, অন্ধকার৷ সামনের দিকের ভাঙাচোরা টালি বসানো ছাদটা দেখে অবশ্য মনে হয় একসময় বাড়িটা বেশ সুন্দরই ছিল৷ কিন্তু দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় এরকম দশা হয়েছে৷ মফঃস্বল হলেও মোতিপুর বড় শহর৷ স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, শপিং মল সবই আছে৷ রাস্তা-ঘাটও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে৷ বিশেষ করে এই গৌরীবাড়ি তো শহরের মধ্যে সবথেকে অভিজাত এলাকা৷ অবস্থাপন্ন মানুষজনের বাস৷ পরপর বড় বড় বাড়ি৷ ইদানীং ফ্ল্যাটবাড়িও উঠেছে অনেক৷ দিগন্ত নিজেও এখানেই থাকে৷ এই পাড়ার মধ্যে এরকম একটা পোড়ো বাড়ি নেহাতই বেমানান৷

দিগন্তর ধারণা ছিল বাড়িটাতে কেউ থাকে না৷ কারণ রাস্তার দিকের ঘরগুলোর জানলা সবসময় বন্ধ৷ এমনকী সন্ধের পরও ভিতর থেকে আলোর টুকরো ছিটকে আসতে দেখা যায় না৷ কিন্তু একদিন একটা আধবুড়ো লোককে ময়লা ধুতি আর ফতুয়া পরে বাজারের থলি হাতে বেরোতে দেখে বুঝল যে বাড়িটা আসলে ফাঁকা নয়৷ পরে ওর প্রতিবেশী সমীরবাবুর কাছে শুনেছে বাড়ির মালিকের নাম শঙ্কর মিত্তির৷ সমীরবাবু বলেছিলেন, অদ্ভুত লোক মশাই জানেন তো৷ মস্ত একখানা বাড়ি হাঁকিয়ে থাকত৷ আগে নাকি গাড়িও ছিল৷ ঠাট-বাটেরও কিছু কমতি ছিল না৷ পাড়ার লোকের সঙ্গে মেলামেশা করত না কখনও৷ বিয়ে-থা করেছিল নিশ্চয় কোনও কালে৷ তবে স্ত্রীকে কেউ কোনওদিন দেখেনি৷ একটা ছেলে ছিল৷ সেটাও বাইরে হস্টেলে থেকে পড়ত৷ ছুটি-ছাটায় বাড়ি এলেও ঘর থেকে বেরোত না বিশেষ৷ বাবারই বারণ ছিল মনে হয়৷ তারপর সে ছেলে বড় হয়ে পড়াশোনা করতে বিদেশ চলে গেল৷ এখন সেখানেই থাকে, গবেষণা করে৷ বাবাকেও নাকি নিয়ে যেতে চেয়েছিল, বুড়ো রাজি হয়নি৷

ভদ্রলোক কী করতেন? ভালো চাকরি-বাকরি ছিল নিশ্চয়৷ নাকি পৈতৃক সম্পত্তি, বাপ-ঠাকুদ্দার জমিদারির পয়সা?

সেসব বলতে পারব না৷ এখানে আসার পর তো আর চাকরি কিছু করত বলে মনে হয় না৷ তবে শুনেছি কোনও একটা ব্যবসা ছিল৷ বেশ জমজমাট ব্যবসা৷ সম্ভবত এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বা ওই ধরনের কিছু৷ ব্যবসার কাজে নাকি সারা দেশে ছুটোছুটি করে বেড়াতে হত৷ বিদেশেও যেতে হয়েছে অনেকবার৷ দুই বন্ধু মিলে পার্টনারশিপে ব্যবসা চলত৷ কিন্তু সেই বন্ধুটি নাকি হঠাৎ মারা যায়৷ উনিও তার একবছরের মধ্যেই ব্যবসার পাট গুটিয়ে এখানে চলে আসেন৷ জমানো টাকা নিশ্চিত যথেষ্ট আছে৷ তাই ওরকম রাজার হালে থাকেন৷

কিন্তু এখন তো দেখলে মোটেই রাজার হালে থাকেন বলে মনে হয় না৷ বাড়িটার যা অবস্থা, যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে৷ কত বছর যে সারায়নি ভগবানই জানে……

এগুলো সবই হয়েছে ছেলে বিদেশে চলে যাওয়ার পরে৷ ছেলেকে নাকি বুড়ো খুবই ভালোবাসে৷ মোটেই ইচ্ছে ছিল না যে বিদেশে যাক৷ কিন্তু সে একালের ছেলে, বাপের কথা শুনবে কেন৷ তারপর থেকেই শঙ্কর মিত্তিরের সব কিছুতে আগ্রহ চলে গেছে৷ আজকাল তো আর বাড়ি থেকেই বেরোন না৷ আগে নিয়মিত মর্নিং ওয়াক, ইভনিং ওয়াক করতেন৷ মাঝে মাঝে সন্ধের মুখে গাড়ি নিয়ে নদীর ধারে বেড়াতে যেতেন৷ অবশ্য বয়সও তো অনেকটাই হল৷ হাঁটা-চলা এখন আর ঠিকমতো করতে পারেন কি না, তাই বা কে জানে! ভরসা শুধু ওই আধবুড়ো নটবর৷ সেই বুড়ো শঙ্কর মিত্তির আর ওই ভাঙা বাড়ি আগলে রাখে৷ তবে শুনেছি মেজাজ নাকি এখনও কমেনি৷ কথায় কথায় নটবরকে ধমকা-ধমকি করেন৷ তবে সে অনেকদিনের লোক, গায়ে মাখে না৷ জানে তাকে ছাড়া বুড়োর অচল অবস্থা৷

সমীরবাবুর কাছে কথাগুলো শোনার পর শঙ্কর মিত্তির সম্পর্কে একটা হালকা কৌতূহল জেগেছিল দিগন্তর৷ তবে সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি বিশেষ৷ বর্ষাকাল পড়ে গেছে৷ এই সময়টায় হাসপাতাল আর চেম্বার দু-জায়গাতেই রোগীর চাপ এত বেশি থাকে যে অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় বিশেষ পাওয়া যায় না৷ সেদিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছে যখন, তখন সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে৷ এমনিতে অন্ধকার হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু আকাশ একেবারে ঘন কালো মেঘে ঢাকা৷ মাঝে মাঝে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টিও পড়ছে৷ তাই সূর্যের আলো একটু আগেই নিভে গেছে৷ ছাতা মাথায় দিয়ে দ্রুতপায়ে বাড়িতে ঢুকতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল দিগন্ত৷ গেটের কাছে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে৷ নিজের বাড়িতে পেশেন্ট দেখে না সে৷ তাই একটু বিরক্তও হল৷ কিন্তু কিছু বলার আগেই লোকটা এগিয়ে এসে হাতজোড় করে বলল, ডাক্তারবাবু, বড়বাবার শরীরটা বড্ড খারাপ৷ দু-দিন ধরে জ্বর কমছে না মোটেই৷ কাশি হয়েছে৷ দুপুর থেকে দেখছি শ্বাসের কষ্টও বেড়েছে৷ একবার যদি যান ডাক্তারবাবু…..

বাড়িতে গিয়ে সাধারণত পেশেন্ট দেখে না দিগন্ত৷ তা ছাড়া এরকম বৃষ্টি-বাদলায় তো প্রশ্নই ওঠে না৷ তাই একটু কড়া গলাতেই বলল, বাড়িতে রুগি দেখতে আমি যাই না৷ এখানে নিয়ে আসুন দেখে দিচ্ছি৷

আনতে তো পারব না ডাক্তারবাবু, বড়বাবার হাঁটা-চলা করতে বড় কষ্ট৷ আপনি যদি একটু চলেন….এই তো কাছেই মোড়টা ঘুরলেই….

এতক্ষণে লোকটাকে ভালো করে দেখে দিগন্ত৷ নটবর৷ শঙ্কর মিত্তিরের আধবুড়ো চাকর৷ বড়বাবা তার মানে শঙ্কর মিত্তির৷ লোকটার সম্বন্ধে খানিকটা কৌতূহল থেকেই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যায়৷

দিগন্তর হাত থেকে ডাক্তারির ব্যাগটা নিয়ে জং-ধরা গেটটা ঠেলে খুলে ভিতরে ঢোকে নটবর৷ বাড়ির সামনে একটা পোর্টিকো মতো৷ তবে সেখানে কোনও আলো নেই৷ পকেট থেকে টর্চ বার করে পথ দেখিয়ে দিগন্তকে নিয়ে যায় নটবর৷ পোর্টিকো থেকে ভিতরে যাওয়ার দরজার তালা খোলে৷ ঘরের ভিতরে একটা কম পাওয়ারের ডুম জ্বলছে৷ তার আলোয় মস্ত-ছড়ানো ঘরটার বেশির ভাগই অন্ধকার৷ তবু তার মধ্যেও এক সেট বাদামি রঙের ভারী সোফা চোখে পড়ে৷ মেঝের কার্পেটটা জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া৷ গোটা ঘর থেকে জমে থাকা ধুলোর একটা চাপা বোটকা গন্ধ৷ বসার ঘরের পর আধো-অন্ধকার খাবার ঘর পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত শঙ্কর মিত্তিরের বেডরুমের দরজায় এসে দাঁড়ায় দিগন্ত৷ এখানে ভিতরের আলোটা অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল৷ তবে এদিকটা সম্ভবত বাড়ির পিছন দিক৷ তাই এ ঘরের আলো বাইরের রাস্তা থেকে দেখা যায় না৷

ঘরের ভিতর একটা বড় খাট৷ একপাশে সিঙ্গল সোফা৷ টেবিল৷ গোটা দুয়েক আলমারি৷ দেওয়ালের মাঝখানে একটা ফায়ারপ্লেস৷ এই অঞ্চলে শীতকালে খুব ঠান্ডা পড়ে বলে, আগে অনেক বাড়িতেই ফায়ারপ্লেস থাকত৷ এখন অবশ্য রুম হিটারেরই চল বেশি৷ তবে এ ঘরটা মোটামুটি সাফ-সুতরো৷ ধুলোর গন্ধটা তেমন জোরালো নয়৷ খাটের ওপর পিঠের দিকে গোটা চারেক বালিশ ঠেসান দিয়ে বসে আছেন শঙ্কর মিত্তির৷ চোখ বন্ধ৷ মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে৷

ডাক্তারবাবু এসেছেন…..

মৃদুকণ্ঠে কথাগুলো বলে নটবর৷ খাটে বসা বৃদ্ধের চোখ খুলে যায়৷ অস্বাভাবিক উজ্জ্বল দৃষ্টি৷ কয়েক সেকেন্ড সোজা তাকিয়ে থাকেন দিগন্তের দিকে৷ তারপর বিশ্রী খ্যানখেনে গলার চিৎকার শোনা যায়, কেন এনেছিস ডাক্তার? কে বলেছিল তোকে ডাক্তার আনতে? দু-দিন জ্বর হয়েছে কি হয়নি, অমনি বাবু ডাক্তার ডাকতে গেছেন৷ ডাক্তারকে ভিজিট দিতে হবে না? টাকা কে দেবে, তোর বাপ? বলেছি না এসব চোরের ডাক্তারকে খবরদার ডাকবি না….

কথাগুলো শুনতে শুনতে দিগন্ত উল্টো দিকে প্রায় হাঁটা দিচ্ছিল৷ কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল কেলেঙ্কারি কাণ্ড৷ রাগ, উত্তেজনা এবং শ্বাসকষ্ট এই তিন উপসর্গ সমেত নটবরের দিকে ধেয়ে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে হুড়মুড় করে খাট থেকে পড়ে গেলেন শঙ্কর মিত্তির৷ হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠল নটবর৷ দুজনে মিলে ধরাধরি করে কোনওরকমে খাটে তোলা হল তাঁকে৷ রোগির অবস্থা দেখে তক্ষুনি ইঞ্জেকশন দিল দিগন্ত৷ তারপর অন্যান্য সব ব্যবস্থা সেরে, বুড়োকে মোটামুটি সামলে দিয়ে যখন বাড়ি ফিরল তখন রাত্তির নটা৷ তখনও অবশ্য কথা বলার মতো ক্ষমতা হয়নি শঙ্কর মিত্তিরের৷ কিন্তু তাঁর চোখের দৃষ্টি বুঝিয়ে দিচ্ছিল দিগন্তের ওপর তিনি আস্থা রাখছেন৷

অসুস্থ অবস্থায় প্রায় নিয়মিতই আসা এবং সুস্থ হয়ে ওঠার পরও মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেওয়া, এভাবেই শঙ্কর মিত্তিরের সঙ্গে ধীরে ধীরে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল দিগন্তর৷ ভদ্রলোক অসম্ভব রুঢ়ভাষী৷ সামান্য পান থেকে চুন খসলেও নটবরের মাথা কেটে নিয়ে আসার হুকুম দেন৷ যদিও নিজে খুব ভালো করে জানেন, ওই নটবর ছাড়া তাঁর একটি দিনও চলা কঠিন৷ নটবর অবশ্য তাঁর বকাঝকায় গুরুত্ব দেয় না মোটেই৷ মুখটি বুজে কাজ করে যায় নিজের মতো৷ কিন্তু কাছে থাকলে অস্বস্তি হয় দিগন্তরই৷ যদিও দিগন্তর সঙ্গে শঙ্কর মিত্তির তুলনায় ভদ্র ব্যবহারই করেন৷ মুখে কোনও প্রকাশ না থাকলেও দিগন্তকে দেখলে সম্ভবত মনে মনে একটু খুশিও হন৷ দিগন্তর যে ভদ্রলোককে বিশেষ ভালো লাগে, তা কিন্তু নয়৷ কিন্তু লোকটার কেমন যেন একটা অমোঘ টান আছে৷ শঙ্কর মিত্তির খুব বেশি কথা বলেন না৷ কিন্তু মাঝে মাঝেই এমন সব অদ্ভূত মন্তব্য করেন কিংবা নিজের জীবনের এমন অভিজ্ঞতার আভাস দেন যে চমকে উঠতে হয়৷ তাই ইচ্ছে না থাকলেও সপ্তাহে অন্তত দুদিন ওই পোড়ো বাড়িতে ঢুঁমারাটা ক্রমশ দিগন্তর অভ্যাস হয়ে যাচ্ছিল৷ কিন্তু যাওয়াটা বন্ধ হয়ে গেল নেহাতই তুচ্ছ একটা ঘটনায়৷

সেদিন হাসপাতাল থেকে একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়েছিল দিগন্ত৷ ভাদ্র মাসের বিকেল তখনও ঝকঝক করছে৷ ফেরার পথে ঢুকেছিল শঙ্কর মিত্তিরের বাড়িতে৷ নটবর তখন কোথায় জানি বেরোচ্ছে৷ পোর্টিকোতে দেখা৷ বলল, বাবু ঘরেই আছেন৷ আপনি যান৷ আমি দু-চারটে জিনিস কিনে এখনই ফিরছি৷ ফিরে চা বসাব…

দিগন্ত সোজা চলে এসেছিল মিত্তিরবাবুর ঘরে৷ কিন্তু এসে দেখে ঘর ফাঁকা৷ তবে লাগোয়া বাথরুম থেকে জল পড়ার আওয়াজ আসছে৷ মিত্তিরবাবু বাথরুম থেকে বেরোনোর আগে একলা বসে ঘুরে-ফিরে ঘরটাকেই দেখছিল দিগন্ত৷ একপাশে খাটে শঙ্কর মিত্তিরের বিছানা৷ পাশে টিপয়৷ তাতে ওষুধ থেকে শুরু করে হাজার রকম জিনিস রাখা৷ উল্টোদিকে সিঙ্গল সোফার পাশে একটা বেঁটে আলমারি৷ তার মাথায় নানারকম জিনিস-পত্র রাখা৷ দেখতে দেখতে হঠাৎই দিগন্তর চোখে পড়ল, আলমারিটার পাল্লাটা অর্ধেক খোলা আর ভিতরে একটা লাঠি রাখা আছে দেখা যাচ্ছে৷ লাঠিটা ভারী অদ্ভুত দেখতে৷ নীচটা সরু৷ ওপর দিকটা মোটা৷ মাথাটা এমন যে দেখলে হঠাৎ করে মনে হয় যেন একটা বুড়োর মুখ খোদাই করা আছে৷ দিগন্তর মনে হল বুড়োটা যেন জ্বলজ্বলে চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ সামান্য চমকে দুবার চোখের পাতা ফেলে তাকাতেই কিন্তু আর কিছু দেখা গেল না৷ বেশ খানিকটা অবাক হয়েই এগিয়ে গিয়ে ভালো করে দেখার জন্য আলমারির থেকে লাঠিটা বার করে নিয়ে এল দিগন্ত৷ আর সঙ্গে সঙ্গে দুটো ব্যাপার ঘটল৷ প্রথমত দিগন্তর মনে হল তার হাতের মধ্যে লাঠিটা কেমন যেন কিলবিল করে উঠল আর সে ভয় পেয়ে হাত থেকে ছুড়ে সেটাকে ফেলে দিল৷ আর ঠিক সেই মুহূর্তেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন শঙ্কর মিত্তির৷ দিগন্ত যে লাঠিটা দেখছিল সেটা বুঝতে তাঁর ঠিক এক সেকেন্ড সময় লাগল এবং তারপরেই তিনি বীভৎস চিৎকার করে দিগন্তকে যা মুখে আসে তাই বলতে লাগলেন৷ দিগন্তর কোনও ভদ্রতাবোধ নেই৷ সে অন্য লোকের বাড়িতে এসে না জিজ্ঞাসা করে জিনিসপত্রে হাত দেয়৷ সামান্যতম ম্যানার্স জানে না….ইত্যাদি, প্রভৃতি৷

সামান্য একটা লাঠিতে হাত দেওয়ার জন্য এহেন কথাবার্তা শুনে কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে দিগন্তর৷ সে আর কোনও কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে৷ তারপর গেটের সামনে হতভম্ব নটবরকে প্রায় ধাক্কা মেরে বেরিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়৷ এরপর আর দিগন্ত শঙ্কর মিত্তিরের বাড়িতে যায়নি৷ নটবরও তাকে আর কোনওদিন ডাকতে আসেনি৷

বুড়ো মানুষদের জন্য, বিশেষ করে যাদের শ্বাসের কষ্ট আছে তাদের জন্য শীতকালটা একটু বিপজ্জনক৷ ডাক্তার হিসাবে দিগন্ত এটা ভালোমতোই জানে৷ তাই মাঘমাসের এক বিকেলে শঙ্কর মিত্তিরের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সে খুব একটা বিস্মিত হয়নি৷ কিন্তু চমকে উঠল জেনে যে বাড়িতে পুলিশ এসেছে৷ কারণ মৃত্যু নাকি স্বাভাবিক নয়৷ ব্যাপারটা ঠিকঠাক জানতেই তাই বেশ কয়েকমাস পরে আবার মিত্তিরবাড়িতে ঢুকল দিগন্ত৷ খাটের ওপর শঙ্করবাবুর দেহ শোয়ানো৷ চোখ-মুখ সবই স্বাভাবিক৷ কিন্তু গলায় একটা মোটা লাল দাগ৷ পুলিশ রয়েছে৷ শুকনো মুখে নটবরও বসে আছে একপাশে৷ দিগন্তকে দেখে উঠে এসে হাতে একটা মোটা খাম দিয়ে বলল, বাবু আপনাকে একটা চিঠি দিতে বলেছিলেন৷ কাল রাতেই আমার হাতে খামটা দিয়ে বললেন, ডাক্তারকে দিয়ে দিস৷ ক’দিন ধরে কথাও বলছিলেন না, খাওয়া-দাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন৷ খবরটা আসার পর থেকেই কেমন যেন…….

কী খবর আর শোনা হল না৷ তার আগেই পুলিশের লোকজন এসে ডেকে নিয়ে গেল নটবরকে৷

আমি কোনও দোষ করিনি বাবু….আপনি তো জানেন আমিই এতকাল ধরে বাবুর যত্ন-আত্তি করে এসেছি….আপনি যদি একটু বলেন….

পুলিশের সঙ্গে কথা বলবে বলে, পিঠে হাত দিয়ে নটবরকে আশ্বস্ত করে বাড়ি ফেরে দিগন্ত৷ এককাপ কফি নিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে খোলে চিঠিটা৷ সাধারণ সাদা পাতায় লেখা চিঠি৷ হাতের লেখাও যে খুব সুন্দর তা নয়৷ তবে পড়া যায়৷ শঙ্করবাবু লিখেছেন :

ডাক্তারবাবু,

নামটা যদিও জানি কিন্তু আপনাকে নাম ধরে তো কখনও ডাকিনি, তাই এভাবেই সম্বোধন করলাম৷ নটবর আপনাকে চিঠিটা দেওয়াতে নিশ্চয় খুব আশ্চর্য হয়েছেন৷ যাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছি, তার সঙ্গে আবার কীসের কথা? কিন্তু বিশ্বাস করুন দুটো ব্যাপারেই আমার কোনও হাত ছিল না৷ প্রথমত আপনার সাহায্য নটবরের দরকার হবে৷ কারণ আমার মৃত্যুর পর পুলিশ নিশ্চিত নটবরকে সন্দেহ করবে৷ ওকে নিয়ে টানা-হ্যাঁচড়া হবে৷ চমকে উঠবেন না, আমি জানি আজ রাতে আমার মৃত্যু হবে৷ আর এই মৃত্যুতে নটবরের কোনও ভূমিকা নেই৷ নটবর যে নির্দোষ সেকথাটা দয়া করে পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন৷ বেচারা তার সারাটা জীবন আমার মতো একজন দুর্মুখ মানুষের সবরকম অত্যাচার সহ্য করেছে৷ তার জন্য কিছু অর্থ আর এই বাড়িটা রেখে যাচ্ছি৷ এটুকু যাতে সে পায় তাও দেখবেন দয়া করে৷

দ্বিতীয় যে বিষয়টির কথা বলতে চাইছিলাম, সেটি হল আপনাকে অপমান করা৷ বিশ্বাস করুন, এক্ষেত্রেও আমার কিছু করার ছিল না৷ আপনি লাঠিটি হাতে নিয়ে দেখছিলেন৷ একবার ওদিকে চোখ পড়লে যে সে টান এড়ানো কঠিন তা আমি জানি৷ তাই লাঠিটিকে আমি সর্বদা আলমারির ভিতরে রাখতাম৷ কারুর ওটাতে হাত দেওয়া বারণ৷ আমি জানি না কী করে আলমারির পাল্লা খুলে গেল আর লাঠিটা আপনার চোখে পড়ল৷ কিন্তু ও লাঠি যে কী ভয়ানক সে তো আমি জানি৷ সেদিন আমি বাড়ি থেকে বার করে না দিলে আপনাকে ওর টানেই বারবার আমার বাড়িতে আসতে হত৷ কে বলতে পারে তার পরিণতিতে আপনার জীবনও আমার মতো অভিশপ্ত হয়ে যেত কিনা৷

এতটা পড়ে আপনি নিশ্চয় ভাবছেন দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় আমার সামান্য মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দিয়েছে৷ তা যে নয় সেটা বোঝার জন্য আপনাকে ওই লাঠির ইতিহাস বলা দরকার৷ ছোটবেলায় আমি থাকতাম বীরভূমের এক গ্রামে৷ নাম বলছি না৷ কারণ আমি আমার জীবনের সঙ্গে পরিচিত কাউকে জড়াতে চাই না৷ সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার৷ বাবা ইস্কুলে পড়াতেন৷ পড়াশোনায় আমার মাথা ছিল৷ কিন্তু আমি ছিলাম ভয়ানক ডানপিটে, দুঃসাহসী আর অস্বাভাবিক রাগি৷ কোনও কিছু চাই মনে হলে পৃথিবী রসাতল করেও তা আদায়ের চেষ্টা করতাম৷ রাগ হলে হিতাহিত জ্ঞান হারাতাম৷ আমার এরকম ভয়ংকর স্বভাবের জন্য মা-বাবা খানিকটা দুশ্চিন্তাতেই থাকতেন৷

আমার বয়স যখন পনেরো-ষোলো সেই সময় আমাদের গ্রামে এক ফকির এলেন৷ অন্যদের মতোই কালো পোশাক পরা, গলায় নানা রঙের পুঁতির মালা, হাতে চামর৷ কিন্তু চোখদুটো অস্বাভাবিক উজ্জ্বল৷ ফকির ডেরা বেঁধেছিলেন গ্রামের একেবার শেষপ্রান্তে নদীর ধারে, একটা বড় বটগাছের নীচে৷ ছোট চালা৷ তার নীচে, নিজের দু-চারটে জিনিস নিয়ে আস্তানা৷ গ্রামের লোকেরা খুব বেশি ফকিরের আস্তানায় আসত না৷ কিন্তু আমার যেতে ভালো লাগত৷ সময়ে-অসময়ে প্রায়ই যেতাম৷ একদিন বিকেলের দিকে ওরকম গেছি৷ ফকির তখন পশ্চিমমুখে আসন বিছিয়ে নমাজ পড়ছে৷ আমি বসে আছি একপাশে৷ হঠাৎ দেখি ফকিরের পোঁটলার পাশে একটা লাঠি রাখা৷ সাধারণ লাঠি৷ কিন্তু তার মাথাটা ভারী অদ্ভুত৷ ঠিক যেন একটা বুড়োর মুখ৷ দুটো জ্বলজ্বলে চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি চমকে উঠে ভালো করে তাকাতেই আর কিছু দেখতে পেলাম না৷ ব্যাপারটা কী হল বোঝার জন্য উঠে গিয়ে লাঠিটা হাতে নিয়েই চমকে উঠলাম৷ আমার মনে হল হাতের মধ্যে লাঠিটা যেন কিলবিল করে উঠল৷ ঠিক সেই সময় নমাজ শেষ করে চোখ খুলে ব্যাপারটা দেখেই ফকির লাফ দিয়ে উঠে আমার হাত থেকে লাঠিটা কেড়ে নিল৷

এরকম একটা অস্বাভাবিক ঘটনায় খানিকটা চমকে গেলেও আমি কিন্তু ভয় পাইনি মোটেই৷ লাঠিটার যে কিছু একটা বিশেষত্ব আছে সেটাও বুঝে গেছি ততক্ষণে৷ তাই বারবার ফকিরকে লাঠিটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম৷ ফকির প্রথমটায় কিছুতেই বলতে রাজি হচ্ছিল না৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে বলল যে এমনিতে সাধারণ দেখতে হলেও ওটা হচ্ছে একটা অভিশপ্ত লাঠি৷ যাকে ওই লাঠি টানে সে লাঠির মাথায় বুড়োর মুখ দেখতে পায়৷ লাঠির ক্ষমতা সাংঘাতিক৷ তুমি তোমার যে কোনও শত্রুকে লাঠির সাহায্যে ধ্বংস করে ফেলতে পারো৷ লাঠি হাতে নিয়ে তার মৃত্যুকামনা করলেই লাঠি তোমার হুকুম তামিল করবে৷ কিন্তু শত্রু যেমন ধ্বংস হবে তেমনি তোমারও ক্ষতি হবে৷ সেই ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা লাঠির নেই৷ তাই এই লাঠি যার হাতে থাকবে, তার জীবনেই সর্বনাশ ঘনিয়ে আসবে৷

ফকির সেদিন আমার কাছে জানতে চেয়েছিল যে আমি লাঠির গায়ে কোনও বুড়োর মুখ দেখতে পেয়েছি কিনা৷ আমি বেমালুম সত্যি কথা চেপে গিয়ে বলেছিলাম যে সেরকম কিছুই দেখিনি৷ যদিও সেদিনই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম যেমন করে হোক ওই লাঠি আমি নেবই৷ সুযোগও এসে গেল অপ্রত্যাশিতভাবেই৷ তখন বর্ষাকাল৷ আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অজয় নদী৷ সারা বছর নদীতে জল না থাকলেও বর্ষায় একেবারে টইটুম্বুর৷ স্রোতের টানও খুব৷ দুপুরবেলা ফকির নেমেছিলেন নদীতে স্নান করতে৷ লাঠিটা তাঁর সঙ্গেই ছিল৷ সেদিনের ঘটনার পর লাঠি আর তিনি হাতছাড়া করতেন না৷ হঠাৎ কাদা মাটিতে পা পিছলে জলে পড়ে গেলেন ফকির৷ হাত থেকে লাঠি ফসকে গেল৷ আমি পাড়ে বসেছিলাম৷ লাঠি ভেসে যাচ্ছে দেখেই ঝাঁপ দিলাম জলে৷ ফকির কিন্তু সাঁতার জানতেন না৷ তাই জলে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে যাচ্ছিলেন৷ আমি অনায়াসেই তাঁকে বাঁচাতে পারতাম৷ কিন্তু সে চেষ্টাও করিনি৷ কারণ আমার নজর ছিল লাঠির দিকে৷

লাঠিটা হাতে আসার পর ফকিরের কথা ঠিক কিনা বোঝার জন্য পরীক্ষা করেছিলাম৷ সেসময় পাড়ার একটা কুকুর আমায় খুব বিরক্ত করত৷ দেখলেই তেড়ে আসত৷ একদিন রাত্তির বেলা লাঠিটা হাতে নিয়ে কুকুরটার মৃত্যুকামনা করলাম৷ আশ্চর্য ব্যাপার৷ পরদিন একটা ঝোপের মধ্যে কুকুরটার মৃতদেহ পাওয়া গেল৷ তার কয়েকদিন পরে আমার পোষা বেড়ালটাও মারা গেছিল৷ কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাইনি, কারণ তখন ওরকম একখানা অস্ত্র হাতে পেয়ে আমি রীতিমতো উল্লসিত৷

বিশ্বাস করুন ডাক্তারবাবু, তারপর কিন্তু বহুবছর আমি ওই লাঠি আর হাতে নিইনি৷ তবে ওটা আমার কাছেই থাকত৷ চট করে যাতে কারুর চোখে না পড়ে সেজন্য আগে একটা কার্ডবোর্ডের সরু বাক্সে ভরে রাখতাম৷ স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হলাম৷ কলেজেও ভালো রেজাল্ট হল৷ চাকরি করার ইচ্ছে কখনোই ছিল না৷ এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে ব্যবসা করতে শুরু করলাম৷ আধা-আধি পার্টনারশিপে ব্যবসা৷ কলকাতার অফিস বন্ধু দেখত৷ আমি দেশ-বিদেশ ঘুরে অর্ডার জোগাড় করতাম৷ ব্যবসা খুব দ্রুত ফুলে-ফেঁপে উঠল৷ বিয়ে করলাম৷ ছেলেও হল৷ সবই ঠিকঠাক চলছিল৷ হঠাৎ একদিন খবর পেলাম বন্ধু আমাকে লুকিয়ে ব্যবসা নিজের নামে করে নেওয়ার চেষ্টা করছে৷ কাজ অনেকদূর এগিয়েও গেছে৷ বহুবছর পর সেদিন আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল৷ সেই রাত্তিরে একলা নিজের ঘরে বসে লাঠির কাছে বন্ধুর মৃত্যুকামনা করলাম৷ পরদিন সে মারা গেল৷ কারণ বোঝা যায়নি৷ গলায় শুধু একটা মোটা দাগ ছিল৷ ব্যবসা নিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হলাম৷ কিন্তু বিপদ এল অন্য দিক থেকে৷ কয়েকদিনের মধ্যেই সামান্য জ্বরে আমার স্ত্রী মারা গেলেন৷ ফকির যে আমাকে সাবধান করেছিল সেকথা ভুলে গেছিলাম৷ এতদিন বাদে মনে পড়ল৷ ব্যবসা বিক্রি করে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে এখানে চলে এলাম৷ ভালোই ছিলাম৷ ছেলে বড় হয়ে বিদেশে পড়তে যাব বলায় মন খারাপ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তবু মানিয়ে নিয়েছিলাম৷ কিন্তু কিছুদিন ধরেই মনটা বড় অস্থির লাগছিল৷ ছেলে সপ্তাহে দু-দিন অন্তত আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে৷ গবেষণা করছে৷ তা নিয়ে আলোচনা৷ একটা নতুন প্রজেক্টে যোগ দেওয়ার কথা, তা নিয়ে খুব উত্তেজিতও ছিল৷ কিন্তু হঠাৎ লক্ষ করলাম, ও যেন খুব উদ্বিগ্ন, চিন্তিত৷ দুশ্চিন্তায় আছে৷ প্রথমে বলতে চাইছিল না, কিন্তু চাপাচাপি করায় শেষ পর্যন্ত বলল যে প্রজেক্টের কাজটা সম্ভবত ও পাবে না৷ ওরই এক সহকর্মী ম্যাথুস, অন্যায়ভাবে আমার ছেলেকে সরিয়ে প্রজেক্ট দখলের চেষ্টা করছে৷ কাজটা না পেলে কেরিয়ারের ক্ষতি হয়ে যাবে, তাই ও খুবই উদ্বিগ্ন৷ সেদিন রাতে লাঠি হাতে নিয়ে ম্যাথুসের মৃত্যু-কামনা করলাম৷ পরদিন ছেলে আমাকে ম্যাথুসের খুন হওয়ার খবর দিল৷ কারণ জানা যায়নি৷ গলায় শুধু একটা মোটা লাল দাগ ছিল৷ দু-দিন আগে ইউনিভার্সিটি থেকে ফোন করে আমার ছেলের অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার খবর আমাকে জানিয়েছে৷

নটবরকে বলেছি ফায়ারপ্লেসে আগুন দিয়ে, তার সামনে ইজিচেয়ার পেতে দিতে৷ ওখানে বসেই আজ রাতে লাঠির কাছে আমার শেষ ইচ্ছা জানাব, যাতে তারপরই লাঠিটাকে সরাসরি আগুনে ফেলে দিতে পারি, যাতে আর কেউ কোনওদিন ওটাকে হাতে ধরে আর কোনও ইচ্ছা জানানোর সুযোগ না পায়৷

 সম্ভব হলে আমাকে মাপ করবেন ডাক্তারবাবু আর দয়া করে দেখবেন যাতে নটবর শাস্তি না পায়৷

 ইতি,

 অভিশপ্ত শঙ্কর মিত্র

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *