২০
রাত আড়াইটা নাগাদ শ্রীনগরে ঢোকার মুখে তাদের আর্মি চেক পোস্টে আটকে দিল।
তবরেজ গাড়ি থেকে নামল।
আর্মির দুজন জওয়ান গাড়ির ভিতর টর্চ ফেলল। আয়েষাকে দেখে তবরেজকে বলল, “কী হয়েছে? এখানে এত রাতে কী হচ্ছে?”
তবরেজ বলল, “স্যার, দিল্লির পার্টি। গুলমার্গে গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিল। আর কোন গাড়িও পেলাম না। রাত হয়ে গেল ঠিক করতে করতে। কী করব?”
জওয়ানরা বলল, “তো রাতে গুলমার্গ থাকল না কেন?”
তবরেজ বলল, “কী করবে স্যার? কাল সকালেই ফ্লাইট। রিস্ক নেওয়া গেল না”।
দুজন জওয়ান নিজেদের মধ্যে কী কথা বলল। একজন চেকপোস্টের ভিতরে গিয়ে একজন সিনিয়র অফিসারকে ডেকে নিয়ে এলেন। সিনিয়র বললেন, “সবার আই কার্ড দেখি”।
তবরেজ গাড়ির ভিতরে মুখ করে বলল, “ভোটার কার্ড”।
আয়েষা চারজনের ভোটার কার্ড নিজের কাছে রেখেছিল। সে তবরেজকে দিল।
আরিফের প্রচন্ড টেনশন হচ্ছিল। সে দরদর করে ঘামতে শুরু করল।
সে বুঝতে পারছিল না ধরা পড়ে গেলে কী করবে। হঠাৎ করে কান্না পেয়ে গেল তার। আম্মির কথা মনে পড়ে গেল। চোখ মুখ শক্ত করে বসে থাকল সে।
সিনিয়র অফিসার তবরেজকে ধমকাতে শুরু করলেন। তবরেজ মাথা নিচু করে শুনল।
আমির ফিসফিস করে বলল, “উড়িয়ে দেব?”
আয়েষা চাপা গলায় ধমকাল, “জাস্ট শাট আপ। একটা কথা না”।
গাড়ির মধ্যে কম্পিত হৃদয়ে সবাই বসে রইল।
কিছুক্ষণ পর ভোটার কার্ড সহ ছাড়া পেল তবরেজ। গাড়িতে ঢুকে স্টার্ট দিয়ে বলল, “আল্লাহর মেহেরবানী আপনাদের টেনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে নি। মিরান সাবের পাক্কা প্ল্যানিং”।
আয়েষা বলল, “মানে? কীসের পাক্কা প্ল্যানিং?”
তবরেজ পকেট থেকে একটা প্রিন্ট আউট বের করে দিয়ে বলল, “আপনাদের ছদ্ম নামে কাল দিল্লির ফ্লাইটের টিকিট। কাটাই আছে”।
আয়েষা হাঁফ ছাড়ল, “আল্লাহ কা লাখ লাখ শুক্রিয়া। মিরান সাহাব ইজ আ জেম”।
আমির বলল, “পায়ের কাছে অস্ত্র ছিল। বেশি বাড়াবাড়ি করলে উড়িয়ে দিতাম”।
তবরেজ বলল, “কেন ফালতু কথা বলছেন জনাব? অত সোজা? দুজনকে ওড়ালে দুশোজন আপনাকে উড়িয়ে দিয়ে যাবে। সব কিছু অত সোজা ভাববেন না। প্রতিটা পদক্ষেপ ভেবে চিন্তে নিতে হবে। এরকম আজে বাজে কথা বলবেন না। আমি সামলে নিলাম তো। গাড়ি খারাপ ছিল বলে গুলমার্গে দেরী হয়েছে, সেখান থেকে আজই তাড়াহুড়ো করে আসতে হল কারণ কাল ফ্লাইট আছে। মিটে গেল। আমাকে একটু ভরসা করুন জনাব। মিরান সাহাবই তো পাঠিয়েছেন”।
আমির বলল, “হ্যাঁ, হয়েছে হয়েছে। তাড়াতাড়ি নিয়ে চল তো। আর পারছি না”।
ডাল লেকে গিয়ে আরেকপ্রস্থ জেরা পার করাল তবরেজ। এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক শিকারা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তারা শিকারাতে চড়লে শিকারা রওনা দিল। তবরেজ পাড় থেকে হাত নাড়ল।
আয়েষা প্রত্যুত্তরে হাত নেড়ে শ্বাস ছেড়ে বলল, “নাও উই আর সেফ”।
ডাল লেকের চারপাশে আলো জ্বলছিল। আরিফ মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। কী অপূর্ব জায়গা! এত সুন্দর জায়গা আম্মি আব্বু দেখে গেল না?
নিজের মনকে স্থির করল সে। কথায় কথায় আব্বু আম্মি আসছে। ঠিক হচ্ছে না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা বড় হাউজবোটের কাছে এল তাদের শিকারা। ঝকঝক করছে বিরাট বড় ‘দ্য গ্র্যান্ড হাউজবোট’।
একজন পনেরো ষোল বছরের কিশোর হাউজবোটে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের আপ্যায়ন করল। আয়েষা একটা ঘরে চলে গেল। আরিফ, আমির আর রজ্জাককে একটা বড় রুম দেওয়া হল।
রজ্জাক নরম বিছানা দেখে শুয়ে পড়ে বলল, “কাল সকালে কথা হবে মিয়াঁ”।
আমিরও কম্বলের তলায় ঢুকে গেল।
আরিফ বাথরুমে ঢুকল। গীজার চালিয়ে মুখে জল দিয়ে আয়নায় তাকাল।
দাড়ি উঠেছে। চোখের তলায় কালি জমেছে।
তার হঠাৎ করে মনে হল সে কোন দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই মার কোলে ঘুম ভাঙবে।
মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে।
গরম জলের কল বন্ধ করে ঠান্ডা জল চালিয়ে চোখে মুখে দিতে লাগল সে। হীমশীতল জল যেন সাপের ছোবল মারতে শুরু করল তার মুখে।
সে অনুভূতিহীন হয়ে নিজের মুখে জলের ছিটে দিয়ে যেতে লাগল। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল তার।
কিছুক্ষণ পর রজ্জাক বাথরুমের দরজা ধাক্কিয়ে গলা তুলল, “আরিফ?”
আরিফ দরজা খুলল, “জি”।
রজ্জাক তার দিকে তাকিয়ে বলল, “কী হয়েছে?”
আরিফ বলল, “কিছু না”।
রজ্জাক বলল, “চোখ মুখ লাল লাগছে কেন?”
আরিফ বলল, “কিছু না। ঠিক আছে?”
রজ্জাক তার কাঁধে হাত দিল, “নার্ভাস ব্রেকডাউন, তাই না? এসো দেখি, কী হয়েছে”। রজ্জাক বসাল তাকে। ঘাড়ে কাঁধে ম্যাসাজ করতে শুরু করল।
আরিফ বলল, “শুক্রিয়া”।
রজ্জাক বলল, “খুনের পাশাপাশি এটাও ভাল পারি। রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান এটাই”।
হাসল আরিফ।
রজ্জাক বলল, “চিন্তা কোর না। সব ঠিক হয়ে যাবে?”
আরিফ কিছু বলল না। কী ঠিক হয়ে যাবে? তার আব্বু আম্মি কি আর কোন দিন ফিরে আসবে?
২১
কম্বলের ওমে ঘুম এল শেষ রাতে। আরিফের ঘুম যখন ভাঙল দেখল ঘরে আয়েষা থমথমে মুখে বসে আছে। আমির আর রজ্জাক চেয়ারে বসে।
আরিফ ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, “আমাকে ডাকলে না কেন?”
আয়েষা বলল, “তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাইছি। তুমি ক্লান্ত ছিলে”।
আরিফ মুখ ধুতে উঠল। আয়েষা বলল, “আরিফ”।
আরিফ থমকে দাঁড়াল, “জি”।
আয়েষা বলল, “উই হ্যাভ গট আওয়ার মিশন ডিটেইলস”।
আরিফ কৌতূহলী মুখে বলল, “সেটা কী?”
আয়েষা বলল, “বস”।
আরিফ চেয়ার টেনে বসল।
আয়েষা বলল, “মিরান সাব মিশন ডিটেলস পাঠিয়েছেন”।
আরিফ বলল, “হ্যাঁ সেটা বললেন তো”।
আয়েষা বলল, “আজ থারটিন্থ নভেম্বর। কাল ফরটিন্থ। নেহেরুজীর জন্মদিন, অলসো চিল্ড্রেন্স ডে ইন ইন্ডিয়া। কালকের দিনে কাশ্মীরের বিভিন্ন স্কুল থেকে বাচ্চারা ডাল লেক লাগোয়া রাস্তায় প্যারেড করবে”।
আরিফ বলল, “ওকে”।
আয়েষা বলল, “দ্য অর্ডার ইজ, কাল আমাদের ওখানে একটা ব্লাস্ট করতে হবে”।
আরিফ হতভম্ব হয়ে আয়েষার দিকে তাকিয়ে বলল, “বাচ্চাদের মারতে হবে?”
আয়েষা মাথা নিচু করল, “হ্যাঁ। এই প্যারেডটা অরগানাইজ করছে পাকিস্তানপন্থী নেতা আনসারউদ্দিন। আমরা ব্লাস্টটা করালে বার্তা যাবে ইন্ডিয়ান আর্মি এই কাজটা করেছে। দ্যাট উইল ফেভার পাকিস্তান”।
আমির আয়েষার দিকে তাকিয়ে বলল, “তো? দিক্কত ক্যা হে? ইজি জব। হো জায়েগা। আমাদের এক্সিট প্ল্যান?”
আয়েষা ধরা গলায় বলল, “তবরেজ কন্ট্যাক্ট করে নেবে”।
আমির বলল, “তোমার কী প্রবলেম হচ্ছে? এটা কি খুব কঠিন কাজ? কিছুদিন আগে পেশোয়ারের একটা স্কুলে ব্লাস্ট হল। তোমার কী মনে হয় পাকিস্তান সেটা করিয়েছিল? ইন্ডিয়াই করিয়েছিল। ওরা যদি করতে পারে, আমরা কেন পারব না? আমরা কোথাকার দেবদূত?”
আয়েষা বলল, “মিরান সাবের ভাবা উচিত ছিল একজন কাশ্মীরি হয়ে আমি কাশ্মীরি শিশুদের ক্ষতি করার কথা ভাবতে পারব না”।
আমির বলল, “ক্ষতি? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? নিজের ধর্মের জন্য যে কুরবানী হয়, তাকে ক্ষতি বলা হয় না। জন্নতে যাবে বাচ্চারা। স্বয়ং মিরান সাব যখন বলেছেন, তখন ভেবেই ঠিক করেছেন। এটা নিয়ে তুমি সেন্টিমেন্টাল হয়ে যাচ্ছো কেন? কতটা পলিটিকাল অ্যাডভান্টেজ পাকিস্তান পাবে, ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া অ্যাবাউট দ্যাট?”
আরিফের হঠাৎ তার আব্বু আম্মির ছবিটা মনে পড়তেই বমি পেল।
সে বাথরুমে গিয়ে হড় হড় করে বমি করে দিল। কল খুলে ঠান্ডা জল ছেড়ে মাথায় সে জল দিয়ে বসে রইল।
রাতেই ঠান্ডা লেগেছিল। তার ঘোর জ্বর এসেছে বুঝতে পারল আরিফ। মাথায় টাওয়েল দিয়ে যখন বাথরুম থেকে বেরোল তখন আয়েষা বেরিয়ে গেছে। আমির একটা কাগজে কিছু হিসেব করতে শুরু করেছে। আরিফ মাথা মুছতে মুছতে রুমের বাইরে বেরিয়ে দেখল আয়েষা ছল ছল চোখে ডাল লেকের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে আয়েষা বলল, “আই অ্যাম সরি আরিফ”।
আরিফ বলল, “কেন?”
আয়েষা বলল, “আমি জানি না কেন সরি বললাম। আমার এখন মনে হচ্ছে আমি খুব বড় কোন ভুল করে ফেলেছি। ইন্ডিয়া হোক বা পাকিস্তান, আমাদের কাশ্মীরিদের ভাল কেউ চায় না। সবাই শুধু চায় আমাদের দলে পিষে মেরে শেষ করে দিতে। এর বেশি কেউ কোন দিন কিছু ভাবে নি। কিন্তু আমার এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার পথ নেই। আই হ্যাভ অলরেডি লস্ট দ্য গেম”।
রজ্জাক এসে বলল, “আলু কা পারাঠা করেছে ব্রেক ফাস্টে, খাবে না?”
আরিফ বলল, “আমার ইচ্ছে করছে না খেতে”।
আয়েষা বলল, “হ্যাঁ। যাচ্ছি”।
আয়েষা চলে গেল রজ্জাকের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে।
আরিফ ডাল লেকের দিকে তাকাল। ঝলমলে রোদ উঠেছে। শিকারা ঘুরে বেড়াচ্ছে লেক জুড়ে।
এই সেই কাশ্মীর! এই কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশে চাপান উতোর হয়েই চলেছে।
আরিফ বুঝতে পারছিল তার জ্বর এসে গেছে। সে রুমে ফিরে গেল। আমির তার দিকে তাকিয়ে কাগজটা দেখিয়ে বলল, “ব্লাস্ট করার জন্য এই জিনিসগুলো দরকার। নোটডাউন করে ম্যাডামকে দেব”।
আরিফ আমিরের দিকে তাকাল। চোখে মুখে স্থির সংকল্পের ছাপ স্পষ্ট।
আরিফ হঠাৎ খুব ভয় পেল।
কেন পেল নিজেও বুঝতে পারল না।
২২
“দ্য ওয়ার্ড ইজ কুরবানী”।
আমির ধীর স্বরে কথাটা বলল।
তারা চারজন একসঙ্গে বসে আছে। আরিফের জ্বর এসেছে। আমির তাকে উঠে বসিয়েছে চেয়ারে।
আমিরই বলেছে, তার কিছু বলার আছে।
আয়েষাকে ডেকে নিয়ে এসেছে নিজের উদ্যোগে।
এতদিন যে আমির সব কিছুতে বিরক্তি প্রকাশ করছিল, হঠাৎ করে ভীষণ সিরিয়াস হয়ে গেছে। এতক্ষণে তাকে লেফটেনান্টের মত লাগছে।
আমির তাদের সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাদের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব কাজ করে। এক যোগে। কোথাও টুইন টাওয়ার ধ্বংস করছে বলে ওরা আমাদের ভাইদের আফগানিস্তানে মেরে ফেলে দিল। কাশ্মীরে দিনের পর দিন ওরা আমাদের মা, বোনেদের রেপ করে চলেছে। বাচ্চাদেরও ছাড়ে না। আমরা যেটা করতে চলেছি, তা আল্লাহর দেখানো পথ। আল্লাহর পথে কুরবানী চাই। সে কুরবানী আমাদের বাচ্চারা দেবে। আমরা কাশ্মীরকে আজাদ করার জন্য যে পথ নিয়েছি, তার জন্য মিরান সাহাব যে পথ আমাদের বলেছেন, এর থেকে ভাল পথ আর হয় না। আমরা যদি সাধারন মানুষের ভিড়ে কোন ব্লাস্ট করাতাম, কেউ দেখবে না। দু দিন খবর হবে, তিন দিনের দিন অন্য কোন সেনসেশনাল নিউজ এসে সেটাকে ঢেকে দেবে। ইন্ডিয়ান আর্মি কাশ্মীরি বাচ্চাদের প্রসেশনে গুলি চালিয়েছে, এটা বাইরের বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। ইট উইল ক্রিয়েট আ হিউজ প্রেশার অন ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট। আয়েষা ম্যাডাম, আমি বুঝতে পারছি তুমি খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছো, কিন্তু তুমিই বল, কাশ্মীরের আজাদির জন্য তুমু যে লড়াইটা করছো, সেখানে প্রয়োজন হলে তুমি আত্মবলিদান দেবে না”?
আয়েষা চোখের জল মুছে মাথা নাড়ল, “অফকোর্স দেব”।
আমির বলল, “তাহলে? সমস্যা কোথায়?”
আয়েষা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, “আমার কোন সমস্যা নেই। আই অ্যাম রেডি। লেটস ডু ইট”।
আমির বলল, “রজ্জাক?”
রজ্জাক কাঁধ ঝাঁকাল, “আমি অলওয়েজ রেডি”।
আরিফের জ্বর এসেছিল। সে কাশতে শুরু করল। আমির আরিফের পিঠে চাপড় মেরে বলল, “ওষুধ দিচ্ছি। তোমাকে আজকেই সুস্থ হতে হবে”।
আরিফ বলল, “আমাকে কী করতে হবে”?
আয়েষা বলল, “একটা টিম হাউজবোটে থাকবে। এটা আমাদের কন্ট্রোলরুম হবে। স্যার ওয়াজেদ আসছেন আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ওর কাছে লেক রোডে, যেখানে প্রসেসনটা হবে, তার সিসিটিভি লোকেশন আর কো অরডিনেটস থাকবে। উনি ল্যাপটপ এবং সিসিটিভি অ্যাক্সেস তোমাকে দেবেন। তোমার কাজ হবে ডিউরিং অপারেশন কো অরডিনেটসগুলো বলা। একটু পর আমরা বেরবো, রোড ডিটেলস দেখে আসতে যাব। আজকে ড্রেস রিহার্সালটা হয়ে যাবে। কাজ হয়ে গেলে তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাবে”।
আরিফ বলল, “এই জন্য আইটির লোক দরকার ছিল?”
আয়েষা হাসল, “আমি এখনও জানি না মিরান সাহাব কেন তোমাকেই চুজ করেছেন”।
আমির বলল, “আমি যে মেটিরিয়ালগুলো আনতে বলেছি, এসেছে?”
আয়েষা ঘড়ি দেখে বলল, “খুব তাড়াতাড়ি এসে যাবে। ওয়াজেদ স্যার এসে আমাদের লেক রোডে নিয়ে যাবেন। আরিফ, তুমি প্যারাসিটামল খাও”।
আয়েষা একটা ওষুধ বের করে আরিফকে দিল। আরিফের জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছিল। সে ওষুধটা খেল।
রুমের দরজায় নক হল।
সেই একই প্যাটার্নে, যেটা তবরেজ ব্যবহার করেছিল।
আয়েষা দরজা খুলল। বলল, “ওয়েলকাম অন বোর্ড স্যার”।
আরিফ লোকটার মুখ দেখা মাত্র চমকে উঠল। তাদের অফিসের বেগ স্যার। ইনিই তাহলে ওয়াজেদ?
আরিফের দিকে তাকিয়ে বেগ বলল, “হাউ ইজ হি ডুইং?”
আয়েষা বলল, “ফাইন জনাব। এখন জ্বর এসেছে”।
বেগ বলল, “সেরে যাবে। আরিফ, তোমার আম্মি আব্বুর খুনের বদলা তোমাকে নিতে হবে না?”
আরিফ মৃদু গলায় বলল, “নিতে হবে”।
বেগ কাঁধের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে তার পাশের চেয়ারে বসে ল্যাপটপটা অন করল।
সেকেন্ড তিরিশেক পরে সিসিটিভি সাইটে লগ ইন করে বলল, “নাও উই হ্যাভ সিসিটিভি অ্যাক্সেস অফ জে এন্ড কে পুলিশ। আরিফ, দেখো। কী দেখতে পারছ?”
আরিফ দেখল একটা স্ক্রিণে বারোটা সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যাচ্ছে।
সেটাই বলল বেগকে।
বেগ বলল, “কাল সকাল ন’টা থেকে প্রসেসন শুরু হবে। আমাদের ব্লাস্টের সময় তখনই। কাজ হবার পর তুমি এই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজটা ওদের সার্ভার থেকে মুছে দেবে। এই কাজের জন্যই তোমাকে এখানে এই মিশনে ইনক্লুড করা হয়েছে। পারবে না?”
আরিফের যন্ত্রণায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিল। কোন মতে বলল, “আই শ্যাল ট্রাই মাই বেস্ট”।
বেগ বলল, “আই নো ইউ আর দ্য বেস্ট আরিফ। তোমাকে পারতেই হবে। নিজের দেশের জন্য, কাশ্মীরের জন্য, প্রতিটা মুসলমান ভাইয়ের জন্য। তোমাকে পারতেই হবে। এই যে দেখো, লেকের ধারে দুশো মিটার পর পর পাঁচটা শিকারা স্ট্যান্ড আছে। আমি ইস্ট সাইড থেকে নাম দি যদি, প্রথম শিকারা স্ট্যান্ডটা এস ওয়ানে। ওরা প্রসেসন শুরু করবে ন’টায়। এস ওয়ানের কাছ থেকে। দু হাজার বাচ্চা আসবে গোটা কাশ্মীর থেকে। ন’টা পনেরো নাগাদ এস টুতে সব থেকে বেশি বাচ্চার সমাবেশ হবে”।
আমির বলল, “আমার মেটিরিয়াল লাগবে”।
বেগ বলল, “পেয়ে যাবে বিকেলের মধ্যে”।
আমির বলল, “আর এসকেপ প্ল্যান?”
বেগ বলল, “ঠিক সময়ে বলে দেব”।
আমির বলল, “সত্যিই কোন এসকেপ প্ল্যান আছে ওয়াজেদ স্যার? আমি কিন্তু এখানে সুইসাইড মিশনে আসি নি”।
বেগ কঠিন চোখে আমিরের দিকে তাকাল, “অপ্রয়োজনীয় কথা বলা বন্ধ কর। আমি যখন এখানে এসেছি, তোমরা যখন এখানে এসেছো, তখন নিশ্চয়ই কেউ ইয়ার্কি মারতে আসে নি। লেটস গো। লেক রোডের প্ল্যানিংটা করে নি। আরিফ, এই ফোনটা নাও”। বেগ পকেট থেকে একটা ফোন বের করে আরিফকে দিল।
বলল, “তুমি এখানে ল্যাপটপের সামনে বসে থাকো। আমি লেকরোডে পৌঁছে তোমাকে ফোন করে করে প্রতিটা জায়গার একটা কোড বলব। সেটা তুমি নোট করে রাখবে। কাল কাজে লাগবে। ক্লিয়ার?”
আরিফ বলল, “ক্লিয়ার”।
বেগ চেয়ার থেকে উঠে বসল, “চল। শিকারা অপেক্ষা করছে আমার জন্য”।
চারজন বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আরিফ মাথার তীব্র যন্ত্রণা সত্ত্বেও ল্যাপটপের সামনে বসে রইল।
২৩
নরম একটা রোদ জানলা দিয়ে এসে আরিফের গায়ে এসে লাগছে। প্যারাসিটামলের প্রভাবে খানিকটা সুস্থ লাগছিল আরিফের। সে বেগ সাহেবের দেওয়া ফোনটা দেখল। ফোনটা লক করা।
ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতেই সেটা বেজে উঠল।
আরিফ ধরতে ওপাশ থেকে বেগ সাহেবের গলা ভেসে এল, “আরিফ”।
আরিফ বলল, “জি জনাব”।
বেগ বলল, “ক্যাম থ্রি দেখো। আমরা সবাই আছি এখানে। দেখতে পাচ্ছো?
আরিফ দেখল। হ্যাঁ, ক্যাম থ্রিতে চারজনকেই দেখা যাচ্ছে। সেটা বেগকে জানাল।
বেগ বলল, “গুড। এবার আমরা ক্যাম সেভেনের দিকে যাচ্ছি”।
এভাবে একটার পর একটা ক্যামেরা লোকেশন বেগ বলে যেতে লাগল, আরিফ নোটপ্যাডে সব লিখে নিল। রাস্তায় বেশ কিছু ইন্ডিয়ান এবং বিদেশী ট্যুরিস্ট দেখা যাচ্ছে। বেগ ফোন রাখলে আরিফ ল্যাপটপ নামিয়ে রেখে রুমের বাইরে বেরোল। ডাল লেকের জলে সূর্যালোক পড়ে অপূর্ব সুন্দর এক ছবি তৈরী হয়েছে। হাউজবোটটাও খুব সুন্দর। আরিফ শুনেছিল কাশ্মীরিদের কাঠের কাজ নিখুঁত। এখন প্রত্যক্ষ করল। হাউজবোটের সামনে থেকে একটা শিকারা থেকে দুজন কাশ্মীরি চিৎকার করতে শুরু করল, “সাব ফটো লেনা হে?”
আরিফ মাথা নাড়ল হেসে। ওরা উৎসাহ পেয়ে তাদের হাউজবোটে শিকারা নিয়ে এসে একটা ফটো অ্যালবাম বের করে বলল, “এই দেখুন স্যার। একদম শাহজাহান লাগবে আপনাকে। ট্রাই করবেন?”
আরিফ বলল, “না না। বললাম তো”।
ফটোওয়ালারা জোরাজুরি করতে শুরু করল।
আরিফ হতোদ্যম হয়ে বলল, “দেখুন আমার জ্বর। আমি এখন কিছু করতে পারব না”।
দুজনেই বিমর্ষ হয়ে বলল, “ঠিক আছে স্যার। কী করব বলুন, ট্যুরিস্টই ভরসা আমাদের। তাই জোরাজুরি করতে হয়। আপনার জ্বর কমে গেলে কিন্তু আমাদের থেকেই ফটো তুলতে হবে। এই নিন কার্ড”।
তাকে একটা কার্ড গছিয়ে দিয়ে দুজনে শিকারায় নেমে চলে গেল। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ছিল।
আরিফের ইচ্ছা করছিল শিকারায় ঘুরতে। একটু ভেবে ইচ্ছাটা দমন করল। আব্বু আম্মির ঘটনাটা জানার পর থেকে তার আর কিছুই ইচ্ছা করে না। সে ঘরে এসে ল্যাপটপটা খুলল। জে এন্ড কে পুলিশের সাইটটা খুলে কাজ শুরু করল।
কিছুক্ষণ পর আবার মাথা ধরল। ল্যাপটপটা রেখে খাটে শুল। জ্বরটা আবার আসছে।
ঘুমিয়ে পড়েছিল সে।
ঘুম ভাঙল আমিরের ডাকে। তার কপালে হাত দিয়ে আমির বলল, “আরেকটা প্যারাসিটামল খেয়ে নাও। আরিফ। কালকের আগে সুস্থ হতে হবে। কালকে বেশিরভাগ কাজটাই তোমার”।
খাটে উঠে বসল আমির।
বেগ বলল, “সিসিটিভি ডেটা মুছে দেওয়া সম্ভব আরিফ?”
আরিফ বলল, “সম্ভব”।
আয়েষা আরেকটা প্যারাসিটামল দিল আরিফকে। রজ্জাক পকেট থেকে একটা রিভলভার বের করে সেটা পরখ করতে করতে বলল, “আই ক্যান ফিল দ্য এক্সাইটমেন্ট স্যার ওয়াজেদ। কাম হো জায়গা কাল”।
বেগ বলল, “ক্যাম নাইনে কাল থাকবে আমির। বম্ব ডেটোনেটর নিয়ে। ব্লাস্টের সঙ্গে সঙ্গে সিক্সে থাকা রজ্জাকের টার্গেট হবে আনসারউদ্দিন। ইউ হ্যাভ টু ফিনিশ হিম অ্যাট এনি কস্ট। ইন্ডিয়ান আর্মির এগেইন্সটে প্রোপাগান্ডাটা তখন পালে হাওয়া পাবে। দ্য ব্লাস্ট উইল হ্যাপেন অ্যাট ক্যাম ওয়ান। কাল আমি আর আয়েষা আরিফের সঙ্গে থাকব। আফটার দ্য অপারেশন তোমরা হাউজবোটেই ব্যাক করবে। কাশ্মীর ব্লক করে দেবে ইন্ডিয়ান আর্মি ঘটনাটা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে। বেরোতে গেলে ধরা পড়ে যাওয়ার চান্স থাকবে নাইন্টি নাইন পারসেন্ট”।
আমির রাগী গলায় বলল, “তার মানে এটাই আপনার এক্সিট প্ল্যান”?
বেগ বলল, “নইলে মরতে হবে। তৈরী তুমি মরার জন্য?”
আমির বলল, “মরার ভয় আমি পাই না। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল কাজ হয়ে গেলেই আমাদের ব্যাক করিয়ে নেওয়া হবে। কথার খেলাপ হয়ে গেল”।
বেগ বলল, “সিচুয়েশন অনুযায়ী প্ল্যান চেঞ্জ হয় এটা এতদিন আর্মিতে থেকে তোমার জানা উচিত ছিল। নতুন করে সব শিখাতে হবে তোমায়?”
বেগ স্থির চোখে আমিরের দিকে তাকাল।
আমির মাথা নিচু করল।
আরিফের অবাক লাগল। আয়েষা হলে এতক্ষণ আমির তুমুল চিৎকার শুরু করে দিত। বেগ সাহেবের এক হুমকিতে মাথা নিচু করে দিল। বেগ সাহেব কি তার মানে খুব ক্ষমতাবান কেউ?
২৪
দুপুরে প্যারাসিটামলের প্রভাবে আরিফের জ্বর নামল।
লাঞ্চের পর আমির অন্য একটা ঘরে বোম তৈরীর কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রজ্জাক চেয়েছিল তার সঙ্গে থাকতে, আমির জানাল এই কাজটা সে একা করতে পছন্দ করে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেগ নিয়ে এসেছিল। সন্ধ্যেয় তবরেজ আসবে। একটা স্কুটিতে বোমটা রাখা হবে। মিছিল শুরুর ঠিক আগে স্কুটিটা রেখে ভিড়ে মিশে যাবে তবরেজ। বাকি কাজটা আমির আর রজ্জাকের।
বেগ বলল, “কাল কাজের পর আমাদের এই বোটটা ছাড়তে হবে। এটা একেবারে সামনের দিকে। তল্লাশি হবেই। তবরেজ আমাদের জন্য আরেকটু ইন্টেরিয়র সাইটে বোট দেখে রেখেছে। আমরা ওখানে মুভ করব। তবে সবটাই পরিস্থিতি বুঝে। আয়েষা, আর ইউ ওকে?”
আয়েষা হাসল, “ইয়েস স্যার”।
বেগ বলল, “আরিফ। তুমি?”
আরিফ বলল, “বেটার”।
বেগ বলল, “মাই অ্যাডভাইজ টু ইউ পিপল, ডোন্ট গেট ইমোশনাল। এই মিশনটা আমরা তোমাদের দিয়ে করালাম একটাই কারণে। বেশ কিছুদিন আগে র’এর কাছে আই এস আইএর সব এজেন্টের ডেটাবেস চলে যায়। আমাদেরই কোন গদ্দারের কাজ ছিল বলাই বাহুল্য। বাধ্য হয়ে আমাদের নতুন রিক্রুট শুরু করতে হয়। রজ্জাক, আমির, আয়েষা আমাদের নতুন রিক্রুট। শুধু একজন আইটি পিপল দরকার ছিল। আরিফের ইন্টারভিউর ভিডিও ক্লিপ দেখেই ওকে আমি চুজ করি। আনফরচুনেটলি ওর আম্মি আব্বুর সঙ্গে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল, যেটার জন্য আমরা একবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। আল্লাহ তাদের সহি সালামাত রাখুন। তাদের ছেলে দেশের জন্য এত বড় কাজ করছে, নিশ্চয়ই তাদের জন্নত নসীব হবে”।
আরিফ বলল, “তাহলে আপনি করাচীতে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার রিক্রুটমেন্টের জন্য গেছিলেন?”
বেগ বলল, “টোল্ড ইউ অলরেডি। বাকিটা বোঝার মত বুদ্ধি তোমাদের আছে। বাই দ্য ওয়ে, টকিং অ্যাবাউট এক্সিট প্ল্যান, আয়েষা টেল মি, তোমার কী মনে হয় শ্রীনগরে আমাদের থেকে যাওয়াটা গুড আইডিয়া?”
আয়েষা বলল, “অফকোর্স। এখানে অসংখ্য হাউজবোট আছে। ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স ড্রোন পাঠাবে নিশ্চয়ই। আমাদের সারভাইভ করাটাই চ্যালেঞ্জ তারপরে”।
বেগ বলল, “চ্যালেঞ্জ কেন হবে? কাশ্মীরিরা আমাদের সঙ্গে আছে। তুমি আছো না আমাদের সঙ্গে?”
আয়েষা বলল, “নিশ্চয়ই। না থাকলে এত দূরে আসতাম কি স্যার?”
রজ্জাক আনসারউদ্দিনের ছবিটা দেখছিল। বলল, “এ মালটাকে স্নাইপার দিয়ে মারলে ভাল হত”।
বেগ বলল, “রজ্জাক এটা পাকিস্তান না। ইন্ডিয়া। বিল্ডিং অ্যাক্সেস পাওয়া অসম্ভব। প্রতিটা বিল্ডিঙে ওদের নজর আছে। চ্যালেঞ্জটা তোমাদেরই”।
আয়েষা বলল, “জনাব, আমার মনে হয় কাজ হবার পর রজ্জাক আর আমিরের হাউজবোটে ফেরাটা টিমের জন্য রিস্কি হবে”।
বেগ চিন্তিত মুখে বলল, “তুমি ঠিক বলেছো আয়েষা। জলে ওদের ট্রেস করা অনেক সহজ হবে। উই হ্যাভ টু স্প্লিট দ্য টিম”।
রজ্জাক বলল, “আর তার জন্য আমাদের কাছে একটা কমিউনিকেটিং ডিভাইসও দরকার”।
আয়েষা বলল, “এদিকে ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স আমাদের ট্র্যাক করে ফেলতে পারে কমিউনিকেট করতে গেলে। দেন?”
বেগ বলল, “লালচকে আমাদের সেফ হাউজে রজ্জাক আর আমিরকে নিয়ে চলে যাবে তবরেজ। ওরা কাউকে ফোন করবে না। ওদের সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগও করব না। পাঁচ দিন পরে, অর্থাৎ ১৯শে নভেম্বর আমরা লালচকে যাব। সেটা তবরেজের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিক করা হবে। এই পাঁচ দিন হাউজবোটে লুকিয়ে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ড্রাই ফ্রুট আজকেই কিনে এখানে দিয়ে যাবে তবরেজ”।
আয়েষা আশ্বস্ত হল, “এটা অনেক বেশি ভাল প্ল্যান”।
বেগ আরিফের দিকে তাকাল, “তোমার কাজটা কাল কী হবে বুঝে গেছো আরিফ?”
আরিফ মাথা নাড়ল, “জি জনাব”।
বেগ বলল, “আব্বু আম্মির কবরে মাটি দেওয়ার সুযোগটুকু দেয় নি যে দেশ, সে দেশের তবাহি দেখার জন্য প্রস্তুত তো তুমি?”
আরিফ বলল, “জি জনাব”।
বেগ বলল, “জ্বর ঝেড়ে ফেলো। ইন্ডিয়াকে ওদের আউকাত দেখানোর দিন এসে গেছে”।