ষাট
আজ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে রানা ও বেলাকে। তার আগে দেখা করতে এল কমিশনার অ্যাল মার্লো। তার অনুরোধে প্রথম থেকে সব খুলে বলল রানা। মার্লোর প্রস্তাব ভদ্রতার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করল, বিসিআই-এর নিয়ম অনুযায়ী পুরস্কার নিতে পারবে না ও।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর অ্যাল মার্লো বলল, ‘ও, আরেকটু হলে ভুলে যেতাম। তোমার কাছ থেকে নেয়া বোতলের তরলের অ্যানালাইসিস হয়েছে। আগে কখনও কোলোইডাল সিলভারের নাম শুনেছ?’
‘না,’ বলল রানা।
‘রুপোর অসংখ্য কণা। সহজ ইলেকট্রিকাল প্রসেস খাটিয়ে মিশিয়ে দেয়া হয় পানির সঙ্গে। তোমার বন্ধু প্রধান সাধু অলিভিয়ের গুয়েরিন অভ গ্যাসপার্ড নিজেই তৈরি করতেন নয় ভোল্টের ব্যাটারির এক যন্ত্র ব্যবহার করে। আগে কখনও শুনিনি ওই জিনিস কাজে লাগে। তবে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় জানা গেছে, ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে ওই তরল।’ কাঁধ ঝাঁকাল মার্লো। ‘কে জানে, তাই হয়তো পাতাল ঘর বা সেফ হাউসে ভয়ানক ব্যাকটেরিয়ার ভেতরেও তোমার বা বেলার কিছু হয়নি।’
এটা শুনলে আঁৎকে উঠবে ওষুধ কোম্পানির বড় কর্তারা, বলল রানা। ‘বলবে, ওটা ওষুধ নয়। বিষ!’
‘মরুক শালারা,’ বিড়বিড় করল কমিশনার অ্যাল মার্লো।
.
সাগরতীরে ছোট্ট বাংলোটা বেলার। আপাতত ওখানেই উঠেছে রানা। সন্ধ্যার পর সৈকতে হাঁটতে বেরোল ওরা। কখনও কখনও বিশ্রামের জন্যে বসল চাঁদের আলোয় রুপালি বালির বুকে। অনেক কথা হলো ওদের ভেতর।
নিজ হাতে তৈরি খাবার সঙ্গে এনেছে বেলা। রাত দশটার দিকে সুস্বাদু সাপার সেরে নিল ওরা। গভীর রাতেও সাগরতীরে বসে রইল। রানার হাত নিজের হাতে নিল বেলা। নিচু গলায় বলল, ‘চাকরিটা শেষে ছেড়েই দিচ্ছি। নতুন করে গড়ব ক্যারিয়ার। তুমি কি বলো, রানা?’
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল রানা। তারপর বলল, ‘পরে ঠিক সময়ে বিয়ে করবে। স্বামী, সংসার আর বাচ্চা হবে। সেক্ষেত্রে ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবনে। সেটা ভাল।’
রানাকে দেখল বেলা। ‘আর তুমি?’
‘বিকেলে ফোন এসেছে বিসিআই থেকে,’ বলল রানা, *এবার দেশে ফিরব। মেডিকেল চেকআপ শেষে হয়তো যোগ দিতে পারব অফিসে।’
‘বিয়ে করবে না কখনও?’ জানতে চাইল বেলা।
‘আমি হয়তো চিরকালের একা, কেউ জানবে না, একদিন হঠাৎ করে হারিয়ে যাব পৃথিবীর বুক থেকে।’ মৃদু হাসল রানা। কেমন এক চাপা কষ্ট ওর কথায়।
মাথা দোলাল বেলা। ‘জানি, জড়াবে না বাঁধনে। আমিও চাইনি বাঁধতে। আমার প্রিয় দেবতা থাকুক না সত্যিকারের মুক্তবিহঙ্গ।’ রানার কাঁধে মাথা রাখল বেলা। রুপালি জ্যোৎস্নায় বহু দূরে চেয়ে রইল সাগরের ঢেউয়ের দিকে।
কেন যেন দীর্ঘশ্বাস বেরোল রানার বুক চিরে।
***