পূর্বখণ্ড- সংশয়
মধ্যখণ্ড— সংযোগ
উত্তরখণ্ড— সংকাশ

অন্তিম পর্ব— অপরাহ্ণে রোদের ঝিলিক

অন্তিম পর্ব— অপরাহ্ণে রোদের ঝিলিক

অফিসার চলে যাবার পরেও আমি বসে রইলাম চুঁচুড়া কবরখানায়। সন্ধে হয়ে আসছে। পাখিরা ঘরে ফিরছে একে একে। সামনের জামরুল গাছে তাদের সবাই বাসা বেঁধেছে। গার্ড আর বেশিক্ষণ থাকতে দেবে না আমায়। প্রিয়নাথের কথামতো তারিণীর কাছে নাকি সেই ভূতের মুন্ডু ছিল। কোথায় রাখতে পারে তারিণী সেই মুন্ডু? কোন গোপন স্থানে? ডিরেক্টরের মধ্যে তো এই বই আর সেই ছবি বাদে একটা সুতলি অবধি নেই। আর ভূতটার রকম ঠিক বুঝতে না পারলে মুন্ডু খোঁজাও তো মুশকিল।

কোলে বইটা রেখে একটা সিগারেট ধরালাম। এমনিতে সিগারেট খাওয়া প্রায় ছেড়েছি বললেই চলে। কিন্তু আজ আর নিতে পারছি না জাস্ট। সারারাত জাগা। প্রচণ্ড হতাশ লাগছে। আমার প্রতিটা পদক্ষেপ আগে থেকেই যেন জেনে বসে আছে কেউ। কোনও দিকে কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছি না। নো ব্লু। তবে আমি নিশ্চিত শৈলর লেখা এই নাটকের বিজ্ঞাপন শুধু না, গোটা নাটকটাই একটা জ্বলন্ত কয়লায় মত। এতে এমন কিছু লেখা আছে, যা আমাদের চিন্তার বাইরে। চোখের সামনেই আছে, কিন্তু ডিকোড করতে পারছি না। শৈল এই নাটক লিখে কাউকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। কিংবা যেটা আরও খারাপ, চেয়েছিল ব্ল্যাকমেল করতে। কিন্তু ভাবে? এই নাটকের রহস্যভেদ না করলে কেসের সমাধান অসম্ভব।

এইসব ভাবছি আর বইটা খুলে টেমারলেনের মলাটের দিকেই চেয়ে আছি। কী কপাল আমার! শুধু মলাটটা রয়ে গেছে আমার কাছে। গোটা বই থাকলে আজ আমি কোটিপতি। এটা এত যত্নে রাখারই বা কী দরকার ছিল তারিণীর?

রাগ গিয়ে পড়ল টেমারলেনের উপরে।

পুড়িয়ে ফেলি? যে বই নেই, তার মলাট দিয়ে কী লাভ? মলাটটা আলাদা করে খুলে নিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে পিছনে ধরলাম। আগুনের শিখা মলাটকে স্পর্শ করেনি, কিন্তু তাতে তাপ লাগছে। আর… আর সেই তাপে আপাতশূন্য সেই মলাটের পিছনের খালি জায়গা জুড়ে এসব কী ফুটে উঠছে? এই চিহ্ন, এই অক্ষরের কিছু আমার চেনা। তবে অনেকটাই অচেনা। এ যে একের পর এক ফর্মুলা লেখা! ঠিক কোন বইয়ের মতো। কী এগুলো? কে লিখেছে এসব?

বুঝেছি। ভ্যানিশিং ইঙ্ক। উনিশ শতকে নানা গোপন বার্তা এই কালিতে লিখে পাঠানো হত। ফলে সাদা চোখে কিছু দেখা যেত না। কিন্তু একটু তাপ দিলেই…

লাইটারটা খুব ধীরে ধীরে মলাটের উপরের দিকে নিয়ে গেলাম। প্রচণ্ড জড়ানো প্যাঁচানো অক্ষরে কী যেন লেখা। তবে এ ভাষা আমি চিনি। বিশুদ্ধ ইংরাজি। আর তাতে লেখা আছে—

The Detailed Procedure to make B.H.U.T.

“সেই মহাশ্মশানের গর্ভাঙ্কে ধূপের মত জ্বলে
জাগে নাকি হে জীবন— হে সাগর—
শকুন্ত-ক্রান্তির কলরোলে।”

(আগামী খণ্ডে সমাপ্য)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *