অধ্যায় চার – যেটা শেষ হয় নারী, মদ আর গানময় এক সন্ধের মধ্য দিয়ে

অধ্যায় চার – যেটা শেষ হয় নারী, মদ আর গানময় এক সন্ধের মধ্য দিয়ে 

ঘুম ভেঙে গেল মোটকু চার্লির। 

চলচ্চিত্রের বিখ্যাত অভিনেতা, এমন এক ভাইকে নিয়ে দেখা স্বপ্নের স্মৃতির সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে প্রেসিডেন্ট ট্যাফটের হঠাৎ ওকে দেখতে আসা স্বপ্নের। ভদ্রলোক সঙ্গে করে টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের পর্দার পেছনের সবাইকে নিয়ে এসেছিলেন! 

দ্রুত গোসল ছেড়ে, টিউব[৮] ধরে কাজে চলে এলো সে। 

[৮. সাবওয়ে ট্রেন।]

কাজ করতে গিয়ে সারাদিন মনে হলো, মগজের পেছন দিকে বসে কিছু একটা গুঁতো দিচ্ছে বারবার; কী, তা সে ধরতে পারছে না। এক জায়গার জিনিস অন্য জায়গায় রাখছে, ভুলে যাচ্ছে এটা-সেটা। এমনকী এক পর্যায়ে তো ডেস্কে বসেই গান গাইতে শুরু করে দিল! নাহ, আনন্দে মন ভরে আছে সেজন্য নয়। অফিসের ডেস্কে বসে যে গান গাওয়া যায় না তা ভুলে গেছে বলে। যখন গ্রাহাম কোটস নিজে তার মাথাটা মোটকু চার্লির ক্লজেট আকৃতির অফিসে ঢুকিয়ে বাগড়া বাধাল, তখন মোটকু চার্লি ধরতে পারল যে ও গান গাইছে! ‘রেডিয়ো, ওয়াকম্যান কিংবা এমপিথ্রি প্লেয়ারের স্থান আমার অফিসে নেই,’ নেউলের মতো চোখ-মুখ করে বলল গ্রাহাম কোটস। ‘এতে অফিসের কাজের আবহ তরল হয়ে যায়, টান-টান ভাবটা থাকে না। বুঝতেই পারছ— যারা করে খায়, তাদের জন্য ব্যাপারটা ভালো না।’ 

‘রেডিয়ো বাজাইনি তো,’ আপত্তি জানাতে চাইল লজ্জায় কান পর্যন্ত লাল হয়ে যাওয়া মোটকু চার্লি। 

‘তাই নাকি? তাহলে দয়া করে বলো, কী বাজাচ্ছিলে?’ 

‘খালি গলায় গাইছিলাম,’ জানাল মোটকু চার্লি। 

‘তুমি?’ 

‘হ্যাঁ, গান গাইছিলাম। আমি দুঃখিত— 

‘শুনে তো মনে সন্দেহের অবকাশ ছিল না যে রেডিয়ো বাজছে। অথচ ভুল হয়েছে আমার। হায় খোদা! যাই হোক, তুমি নিজেই দেখছি ভালো গাও, দারুণ তোমার প্রতিভা। তোমার উচিত এখন আমাদের এখানকার ছোট্ট অফিসের একটা ডেস্কে বসে গান গেয়ে অন্যদের কাজে বাগড়া না দিয়ে, গান গেয়ে নাম কামানো আর বড়ো বড়ো শোয়ের ব্যবস্থা করা। তাই না? আমরা তো অন্য শিল্পীদের ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করি, তোমার কি আর তা পোষাবে?’ 

‘না, না।’ জানাল মোটকু চার্লি। ‘আমার অমন কোনো ইচ্ছেই নেই। আসলে বেখেয়ালে…’ 

‘তাহলে,’ ওকে কথা শেষ করতে দিল না গ্রাহাম কোটস। ‘তোমাকে বেখেয়ালেও গান গাওয়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। যদি গাইতেই হয় তো গাবে গোসল করার সময়, অথবা হয়তো পছন্দের ফুটবল টিমের সমর্থনে। আমি নিজে ক্রিস্টাল প্যালেসের সমর্থক। আর যদি তা না পারো, তাহলে চাকরির জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে তোমাকে।’ 

হাসল মোটকু চার্লি। পরক্ষণেই টের পেল, এই মুহূর্তে হাসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও ছিল না ওর। তাই চেহারায় একটা গম্ভীর ভাব আনার প্রয়াস পেল। অবশ্য ততক্ষণে গ্রাহাম কোটস চলে গেছে। তাই মোটকু চার্লি, অস্ফুট স্বরে গাল বকে, ডেস্কের ওপর হাত রেখে মাথাটা স্থাপন করল তার ওপর। 

‘তুমি গাইছিলে?’ আর্টিস্ট লিয়াজো ডিপার্টমেন্টে সদ্য যোগদান করা মেয়েদের একজন জানতে চাইল। আলাদা আলাদা ভাবে এই মেয়েদের নাম শেখার চেষ্টা করেছিল মোটকু চার্লি, কিন্তু সুযোগ তেমন একটা মেলেনি। কথা শুরু করার আগেই, ওর সামনে থেকে সরে যায় এই মেয়েরা। 

‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও স্বীকার করতেই হচ্ছে…হ্যাঁ, আমিই গাইছিলাম।’

‘কোন গান ওটা? শুনে ভালোই লেগেছে।’ 

আচমকা মোটকু চার্লি উপলব্ধি করল, কোন গানটা গাচ্ছিল তা নিজেও জানে না! ‘বলতে পারছি না, নিজেই শুনিনি।’ 

কথা শুনে হেসে ফেলল মেয়েটা, তবে নিঃশব্দ সেই হাসি। ‘ভুল বলেনি কিন্তু গ্রাহাম কোটস। তোমার রেকর্ড বানানোয় মন দেওয়া উচিত, বৃথাই এখানে সময় নষ্ট করছ।’ 

 জবাবে কী বলা উচিত, তা বুঝে পেল না মোটকু চার্লি। গাল আবারও লাল হয়ে গেছে, মন দিল নম্বর ঘাঁটায়। এটা-সেটা লিখে গেল, সেই সঙ্গে পোস্ট-ইট নোটগুলো জড়ো করে লাগাতে লাগল পর্দায়। মেয়েটা চলে গেছে, নিশ্চিত হবার আগে থামল না। 

মেইভ লিভিংস্টোন ফোন করল একবার: গ্রাহাম কোটস যেন অবশ্যই তার ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে ফোন করে, সেটা মোটকু চার্লি কি দয়া করে নিশ্চিত করতে পারবে? যেন করে। 

বিকেল চারটার দিকে মোবাইলে ফোন এলো, রোজি করেছে। ওকে জানাতে যে ফ্ল্যাটের পানি সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আরেকটা সুখবরও আছে: অবশেষে রোজির মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মেয়ের বিয়ে নিয়ে আগ্রহ দেখাবে এবং রোজিকে সন্ধ্যায় আলোচনা করার জন্য যেতেও বলেছে। 

‘হুম,’ বলল মোটকু চার্লি। ‘তোমার মা যদি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়, তাহলে অন্তত খাবার-দাবারে বহু পয়সা বেঁচে যাবে। 

‘বাজে কথা বোলো না তো। রাতে ফোন করে জানাব, কেমন হলো আলোচনা।’ 

জানতে পারলে খুশিই হবে, জবাবে বলল মোটকু চার্লি; তারপর বন্ধ করে দিল ফোন। মনে হচ্ছে, কেউ বুঝি নজর রাখছে ওর ওপর। ঝট করে ঘুরে দাঁড়াল সে। 

গ্রাহাম কোটস বলল, ‘যে কোম্পানির সময়ে ব্যক্তিগত ফোনে সময় নষ্ট করে, তাকে সারা কোম্পানি অভিশাপ করে! কথাটা কে বলেছিল, জানো?’ 

‘আপনি?’ 

‘ঠিক বলেছ, আমি।’ একমত হলো গ্রাহাম কোটস। ‘ওটা আমারই উক্তি। সত্যি বলতে কী, এর চাইতে সত্য উক্তি আর হয় না। ধরে নাও, তোমাকে সাবধান করে দেওয়া হলো।’ বলেই হাসল লোকটা, আত্মতৃপ্তির হাসি। ওই হাসি দেখে মোটকু চার্লি ভাবতে বাধ্য হলো: গ্রাহাম কোর্টসের নাদুস-নুদুস পেটে ঘুসি বসিয়ে দিলে তার ফল কী হতে পারে? সিদ্ধান্ত নিলো: হয় শুধু চাকরি যাবে, আর নয়তো তার পাশাপাশি পুলিসের কাছে অভিযোগ যাবে…যেটাই হোক না কেন, ভাবল সে, মন্দ হবে না। 

স্বভাবগত ভাবেই মোটকু চার্লি রাগী মানুষ—এ কথা বললে ঠাঁহা মিথ্যে বলা হবে। কিন্তু স্বপ্ন দেখে বটে সে, তবে সেসব ছোটোখাটো কিন্তু আরামদায়ক সব জিনিসের স্বপ্ন… যখন ইচ্ছা, ভালো রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া সারতে পারার মতো অর্থের মালিক হবার স্বপ্ন…দেখে এমন এক চাকরি করছে যেখানে কেউ ওর ওপর ছড়ি ঘোরায় না। লজ্জা না পেয়েই গাইতে চায় সে, এমন কোথাও যেখানে কখনও ওর গান শোনার জন্য কেউ থাকবে না। 

আজ বিকেলে কেন যেন ওর স্বপ্নগুলো অদ্ভুত হয়ে ধরা দিচ্ছে। স্বপ্নে ও উড়তে পারে, বুলেট ঠিকরে পড়ে ওর শক্তিশালী বুকে বাধা পেয়ে। আকাশ থেকে নেমে এসে রোজিকে একদল গুন্ডাপান্ডার হাত থেকে বাঁচায়, নইলে হয়তো তুলেই নিয়ে যেত তারা মেয়েটিকে! আবার যখন বাতাসে ভাসে মোটকু চার্লি, তখন ওর বুকের সঙ্গে লেপটে থাকে মেয়েটা। ফট্রেস অভ কুল, যা একান্তই মোটকু চার্লির, সেখানে পৌঁছাবার পর কৃতজ্ঞ রোজি এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়ে যে ভুলে যায়: বিয়ের আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নেয়, যত দ্রুত সম্ভব পয়সা দিয়ে ওই পাত্রটা ভরে ফেলবে… 

দিবাস্বপ্নটা যেন এক ধাক্কায় গ্রাহাম কোটস এজেন্সির চাপসর্বস্ব দিনটাকে অনেকটাই সহনীয় করে তুলল। 

ছয়টার দিকে কম্পিউটার বন্ধ করে দিল মোটকু চার্লি, ছয়তলা থেকে হেঁটে নেমে পা রাখল রাস্তায়। বৃষ্টি হয়নি, মাথার ওপরে উড়ছে স্টারলিং পাখির ঝাঁক, করছে কলতান: বড়ো এই শহরে এভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হয় সূর্যাস্তকে। ফুটপাথে হন্য হয়ে হাঁটছে সবাই, ব্যস্ত কোথাও যেতে। অধিকাংশই, মোটকু চার্লির মতো, যাচ্ছে কিংসওয়ে থেকে হলবর্নে যাওয়ার টিউবের দিকে। সবার মাথা নিচের দিকে, রাতের মতো বাড়ি ফিরতে চাওয়া মানুষ বলে মনে হচ্ছে প্রত্যেককেই। 

তবে ফুটপাতে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, যে কোথাও যাচ্ছে না। দাঁড়িয়ে আছে সে মোটকু চার্লির… আর অন্যান্য টিউব-যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে, চামড়ার জ্যাকেটটা পতপত করে উড়ছে বাতাসে। মুখে তার হাসি নেই। 

রাস্তার শেষ মাথায় ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল মোটকু চার্লি। লোকটার কাছে যখন গেল, তখন মনে হলো যেন চারপাশের দুনিয়া বাস্তব থেকে অবাস্তবের রূপ নিতে শুরু করেছে। গলে যাচ্ছে দিন, আর ঠিক তখনই ধরে ফেলল: সারাটা দিন কী খোঁচাচ্ছিল ওকে। 

‘হ্যালো, স্পাইডার।’ কাছে পৌঁছে বলল সে। 

স্পাইডারকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে, ওর মনের ভেতর চলছে সর্বগ্রাসী ঝড়। আরেকটু হলে কেঁদেও ফেলতে পারে, ঠিক নিশ্চিত হতে পারছে না মোটকু চার্লি। ওর ভাইয়ের চেহারায় অনেক বেশি অনুভূতির ছাপ রয়েছে। যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে, তা দেখে লজ্জা পেয়ে অন্যরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। 

‘গেছিলাম ওখানে,’ বলল যুবক, নিষ্প্রাণ শোনাল ওর কণ্ঠ। ‘মিসেস হিগলারের সঙ্গে দেখা করলাম। মহিলা আমাকে কবর দেখাতে নিয়ে গেছিল। আমার বাবা মারা গেছে…অথচ আমি জানতামই না!’ 

সান্ত্বনা দিতে চাইল মোটকু চার্লি, ‘স্পাইডার, ও আমারও বাবা ছিল।’ এদিকে মনের মাঝে চলছে চিন্তা—স্পাইডারকে কীভাবে ভুলে গেল? কীভাবে ওকে ধরে নিলো স্বপ্ন বলে? 

‘তা ঠিক।’ 

গোধূলির আকাশে এখন স্টারলিং পাখিদের রাজত্ব, এক ছাদ থেকে লাফিয়ে-বাতাসে ভেসে চলে যাচ্ছে অন্য ছাদে। 

ঝট করে সোজা হয়ে দাঁড়াল স্পাইডার, যেন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ‘ঠিক বলেছ তুমি,’ বলল সে। ‘যা করার তা আমাদের একসঙ্গেই করতে হবে।’ 

‘ঠিক,’ বলল মোটকু চার্লি। পরক্ষণেই প্রশ্ন ছুড়ে দিল, ‘যা করার…মানে?’ কিন্তু ততক্ষণে স্পাইডার একটা ক্যাব ডেকে ফেলেছে। 

‘আমরা দুজন বিপর্যস্ত মানুষ,’ মহাবিশ্বকে শোনাল যেন স্পাইডার। 

‘আমাদের বাবা মারা গেছে, বুকের ভেতর হৃদয় শোকের ভারে করছে হাহাকার। দুঃখ এমন ভাবে আমাদের ওপর আছড়ে পড়ছে, যেভাবে বসন্তকালে পরাগ রেণু ঝরে। আমাদের সামনে অন্ধকার, আমাদের সঙ্গী এখন কেবলই দুর্ভাগ্য।’ 

‘বেশ, বেশ,’ চেহারা উজ্জ্বল করে বলল ক্যাব ড্রাইভার ওরফে ক্যাবি। ‘তা তোমাদের নিয়ে যেতে হবে কোথায়?’ 

‘এমন কোথাও যেখানে আত্মার দুর্ভোগ হটাবার মতো খান তিনেক ওষুধ মিলবে,’ জানাল স্পাইডার। 

‘এবং খানিকটা তরকারিও,’ যোগ করল মোটকু চার্লি। 

‘মাত্র তিনটা এমন ওষুধ আছে… মাত্র তিনটা, যা মৃত্যুর শোক হটাতে আর জীবনের অত্যাচার হালকা করতে সক্ষম,’ জানাল স্পাইডার। ‘ওই তিন ওষুধ হলো: মদ, নারী আর গান।’ 

‘খাওয়ার মতো স্বাদু তরকারিও মন্দ না,’ আবার যোগ করল মোটকু চার্লি। কিন্তু কেউ ওর কথায় কান দিচ্ছে বলে মনে হলো না। 

‘কোনটার পর কোনটা চাও, তার কোনো বাধ্য-বাধকতা আছে?’ জিজ্ঞেস করল ক্যাবি। 

‘প্রথমে মদ,’ ঘোষণা করল যেন স্পাইডার। ‘এমন কোথাও যেখানে মদের নদী-হ্রদ-সমুদ্র মিলবে।’ 

‘বেশ তাহলে,’ বলল ক্যাবি, তারপর শুরু করল গাড়ি চালনা। 

‘কেন যেন মনে হচ্ছে, কাজটা ঠিক হচ্ছে না,’ জানাল মোটকু চার্লি। মাথা নেড়ে সায় জানাল স্পাইডার। ‘খারাপ কিছু আশঙ্কা করছ? আমারও তাই মনে হচ্ছে। আজ রাতে সেসব আশঙ্কা আমরা অন্তর থেকে বের করে আনব, একে-অন্যকে দেখাবো; তারপর একত্রে মুখোমুখি হবো তাদের। আমরা শোক করব, আমরা মরণশীলতার তিক্ত পেয়ালা পান করে খালি করে দেব। যে কষ্ট ভাগাভাগি করা হয়, ভাই আমার, তা দ্বিগুণ হয় না… বরং অর্ধেক হয়ে যায়! মানুষ, সে যে-ই হোক না কেন, একাকী দ্বীপের মতো বাঁচতে পারে না!’ 

‘জানতে চেয়ো না, ঘণ্টি কার জন্য বাজছে,’ ক্যাবি জানাল। ‘হতে পারে, ওটা তোমার…ডাকছে তোমাকেই!’ 

‘আয় হায়,’ বলল স্পাইডার। ‘বড়ো ভারী কথা বলে ফেললে।’ 

‘ধন্যবাদ,’ বলল ক্যাবি। 

‘অবশ্য কথা ভুল বলোনি, তুমি দেখছি দার্শনিক মানুষ! আমি স্পাইডার; আর এ আমার ভাই, মোটকু চার্লি।’ 

‘চার্লস,’ শুধরে দিতে চাইল মোটকু চার্লি। 

‘স্টিভ,’ নিজের নাম জানাল ক্যাবি। ‘স্টিভ ব্যারিজ।’ 

‘মি. ব্যারিজ,’ বলল স্পাইডার, ‘আজ সন্ধ্যার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত ড্রাইভার হতে কেমন লাগবে?’ 

স্টিভ ব্যারিজ জানালো, ওর শিফট শেষ হতে বেশি বাকি নেই। ওদেরকে নামিয়েই ফিরে যাবে বাড়িতে, মিসেস ব্যারিজ আর ছোট্ট ব্যারিজ শিশুরা ওর সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার অপেক্ষায় আছে। 

‘শুনলে?’ স্পাইডার বলল। ‘পরিবারঅলা মানুষ। শোনো ভাই, পরিবার বলতে আমার ও আমার ভাইয়ের এখন শুধু আমরাই অবশিষ্ট আছি। অথচ আমাদের দেখা হচ্ছে এই প্রথম।’ 

‘দারুণ গল্প মনে হচ্ছে,’ ক্যাবি জানাল। ‘ঝগড়া-টগড়া করছিলে নাকি?’

‘একদম না, বেচারা আসলে জানতই না যে ওর একটা ভাই আছে, জানাল স্পাইডার। 

‘তুমি জানতে?’ প্রশ্ন ছুড়ে দিল মোটকু চার্লি। ‘আমার ব্যাপারে?’ 

‘হয়তো জানতাম,’ জবাব দিল স্পাইডার। ‘কিন্তু এই ধরনের ব্যাপার- স্যাপার কেউ ভুলে যেতেই পারে।’ 

ফুটপাতের পাশে গাড়ি থামাল ক্যাবি। ‘আমরা কোথায়?’ জানতে চাইল মোটকু চার্লি। খুব একটা সময় অতিবাহিত হয়নি এর মাঝে। সম্ভবত ফ্লিট স্ট্রিটেরই কোথাও আছে। 

‘যেখানে তোমার ভাই যেতে চেয়েছিল,’ জানাল ক্যাবি। ‘মদের উৎসে।’ 

ক্যাব থেকে বেরোল স্পাইডার, ঘোলাটে কাচ আর পুরাতন ওকের তৈরি প্রাচীন বারের বাইরের দিকটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ‘অসাধারণ, ‘ বলল সে। ‘লোকটাকে ভাড়া চুকিয়ে দাও, ভাই আমার।’ 

তাই করল মোটকু চার্লি। ভেতরে পা রাখল দুই ভাই: কাঠের সিঁড়ির ধাপ বেয়ে নেমে এলো সেলারে। সেখানে পাশাপাশি মদ্যপান করছে লালাভ মুখের ব্যারিস্টার আর পাণ্ডুর চেহারার মার্কেট ম্যানেজার। মেঝেতে দেখা যাচ্ছে কাঠের গুঁড়ো, বারের পেছনের ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে কেউ লিখে রেখেছে মদের তালিকা; যদিও তা পড়া দুষ্কর। 

‘তুমি কী নেবে?’ জানতে চাইল স্পাইডার। 

‘হাউজ রেডের[৯] এক গ্লাস হলেই হবে,’ জানাল মোটকু চার্লি। 

[৯. দোকান কিংবা বারের জন্য কম দামে প্রচুর পরিমাণে কেনা লাল ওয়াইন।]

ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল স্পাইডার। ‘আমরা আনানসি বংশের শেষ দুই সন্তান, হাউজ রেড গলায় ঢেলে বাবার মৃত্যুর শোক আমরা পালন করবো না!’ 

‘উম, তাও ঠিক। বেশ, তুমি যা নেবে আমার জন্যও তাই বলো।’ 

বারের কাছে গেল স্পাইডার, এমনভাবে ভিড় ঠেলল যেন ওরা সেখানে নেই-ই! কয়েক মিনিট পর ফিরেও এলো, হাতে দুটো পানপাত্র, একটা কর্ক-স্ক্রু আর একটা ধুলোপড়া মদের বোতল। আরামসে বোতলটা খুলে ফেলল স্পাইডার, এতই সাবলীল ভাবে যে মুগ্ধ না হয়ে পারল না মোটকু চার্লি; নিজে যখন কাজটা করতে যায়, তখন কর্কের টুকরো ওয়াইনের ভেতর থেকে তোলায় মন দিতে হয়। বোতলের মদ এতটাই ঘন যে তাকে কালোই বলা চলে। দুই পানপাত্রের উভয়টা ভরল সে, তারপর একটা রাখল মোটকু চার্লির সামনে। 

‘টোস্ট করা যাক,’ বলল সে। ‘বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে।’ 

‘বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে,’ বলল মোটকু চার্লি, স্পাইডারের গ্লাসের সঙ্গে টোকা দিল নিজের গ্লাস – অলৌকিক ভাবে দেখা গেল, নিজের গ্লাসের এক বিন্দু মদও ছলকে পড়ল না—তারপর চুমুক দিল নিজের পাত্রে। খানিকটা তিক্ত, লবণাক্ত আর ভেষজ স্বাদ। ‘এটা কী?’ 

‘শেষকৃত্যানুষ্ঠানে পরিবেশিত মদ…যে শেষকৃত্যানুষ্ঠান আবার দেবতার। বহুদিন হলো এসব বানানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রোজমেরি আর তিতা অ্যালো মেশানো, সঙ্গে আছে হৃদয়-ভাঙার কষ্টে ব্যথিত কুমারীদের অশ্রু।’ 

‘এসব জিনিস ফ্লিট স্ট্রিটের মদের বারে বিক্রি হয়?’ বোতল তুলে নিলো মোটকু চার্লি, কিন্তু লেবেলটা ধুলোমাখা; নাম পড়া যাচ্ছে না। ‘আগে কখনও এই জিনিসের নামও শুনিনি।’ 

‘পুরনো এসব জায়গাতেই সবচাইতে ভালো জিনিসগুলো বিক্রি হয়। তবে চাইতে জানতে হয়,’ জানাল স্পাইডার। ‘অবশ্য সেটা কেবল আমার ধারণাও হতে পারে।’ 

মদের পাত্রে আরেকটা চুমু দিল মোটকু চার্লি। বেশ কড়া, আর খানিকটা ঝাঁঝালোও। 

‘এই মদ হালকা চুমুকে পান করার জিনিস না,’ জানাল স্পাইডার। ‘এ এমন মদ, যাকে এভাবে শেষ করতে হবে,’ বলেই লম্বা চুমুক দিল ওতে, পরক্ষণেই বিকৃত করে ফেলল চোখ-মুখ। ‘এভাবে গিললেই না আসল মজাটা পাবে!’ 

ইতস্তত করল মোটকু চার্লি, তারপর অদ্ভুত মদ খেল মুখ ভরে। মনে হলো যেন অ্যালো আর রোজমেরির স্বাদও পাচ্ছে। ভাবল, লবণাক্ত স্বাদটা আসলেও অশ্রুর কারণে কি না। 

‘রোজমেরি মেশায় স্মৃতিচারণার অংশ হিসেবে,’ জানাল স্পাইডার, আবার ভরতে শুরু করল ওদের পানপাত্র। মোটকু চার্লি বলতে চাইল—আজ রাতে খুব একটা মদ গিলতে পারবে না, কেননা আগামীকাল কাজে যেতে হবে। কিন্তু স্পাইডার ওকে তা বলার সুযোগ দিল না। ‘এবার তোমার টোস্ট করার পালা।’ 

‘উম, আচ্ছা,’ বলল মোটকু চার্লি। ‘মায়ের উদ্দেশ্যে।’ 

মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পান করল ওরা। টের পেল মোটকু চার্লি, তিক্ত মদের স্বাদটা ভালো লাগতে শুরু করেছে ওর; চোখ টাটাচ্ছে, মনের ভেতর দানা ভাবছে কিছু একটা হারানোর তীব্র কষ্ট। মায়ের অভাব খুব করে অনুভব করছে সে। মনে পড়ে যাচ্ছে শৈশবের কথা, এমনকী ওর বাবাকেও মনে পড়ছে খুব করে। টেবিলের ওপাশে বসা স্পাইডার মাথা দোলাচ্ছে, গাল বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু পড়ল মদের গ্লাসে। বোতলের দিকে হাত বাড়িয়ে আবার দুজনের পানপাত্র ভরিয়ে দিল যুবক। 

সেটা হাতে নিয়ে গলায় ঢালল মোটকু চার্লি। 

মদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল শোক; মগজ এবং দেহের প্রতিটা কোনায় কোনায় অনুভব করতে পারছে মাকে হারানোর ব্যথা, সাগরের ঢেউয়ের মতো বারংবার ফিরে ফিরে আসছে সেই কষ্ট। 

মোটকু চার্লির চোখ থেকে বইছে অশ্রু, গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে; আছড়ে পড়ছে নিজের ড্রিঙ্কে। টিস্যুর জন্য পকেট হাতড়াল বেচারা। কালো মদের শেষটুকু ওদের দুজনের পানপাত্রে ঢালল স্পাইডার। 

‘আসলেই এখানে এই মদটা বিক্রি হয়?’ 

‘একটা বোতল ছিল ওদের কাছে, তবে সেটার কথা ওরা নিজেরাই ভুলে গেছিল। মনে করিয়ে দিতে হয়েছে, এই যা।’ 

নাক ঝাড়ল মোটকু চার্লি। ‘আমি জানতামই না যে আমার একটা ভাই আছে।’ 

‘আমি জানতাম,’ বলল স্পাইডার। ‘তোমার হাল-হকিকত জানার ইচ্ছা সবসময়ই ছিল। কিন্তু এটা-সেটা সামনে এসে ভুলিয়ে দিয়েছে। জানোই তো, এসব কেন হয়…’ 

‘নাহ, জানি না।’ 

‘জরুরি কাজের অভাব আছে?’ 

‘কেমন ধরনের কাজ?’ 

এই কাজ, সেই কাজ। এই জিনিস, সেই জিনিস। সবসময় মাথাচাড়া দেয়। কাজের-জিনিসের স্বভাবই তা, সামনে এসে খাড়া হওয়া। সব কিছু কি 

আর মনে রাখা সম্ভব?’ 

‘উ-উদাহরণ ত-তো দ-দিতে প-পারো।’ 

আরেকটু মদ গলায় ঢালল স্পাইডার। ‘বেশ তাহলে, শোনো: শেষবার যখন তোমার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন বেশ কিছুদিন কাটিয়েছি পরিকল্পনা করে। চেয়েছিলাম, সব যেন নিখুঁত ভাবে যায়। কোন পোশাকটা পরব, সেটা ঠিক করা নিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে। তারপর ভাবতে হলো- আমাদের দেখা হলে কী বলব তোমাকে। জানতাম, দুই ভাইয়ের প্রথম দেখা নিঃসন্দেহে অসাধারণ কিছু হবে। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে কাব্যের সাহায্য নিতে হবে। কিন্তু কোন ধরনের কাব্য? র‍্যাপ গাইব? নাকি সোজা-সাপটা কবিতা? গীতিকাব্য যে গাইব না, সেটা তো জানিই। তাই এমন কিছু বেছে নিতে হলো যা গভীর, শক্তিশালী, ছন্দময়…মহাকাব্যিক। তখন মাথায় চলে এলো প্রথম লাইনটা: রক্ত ডাকে রক্তকে, রাতের আঁধারে মোহিনীর গানের সুরে… দারুণ না পঙতিটা? কয়েক শব্দের মাঝে লুকিয়ে আছে কত কিছু—অলিগলিতে মানুষের মৃত্যু, ঘাম, দুঃস্বপ্নকে চোখ রাঙানি দিয়ে স্বাধীন সত্তার উড়ে বেড়ানো। কিন্তু ঝামেলা হলো, মেলাবার জন্য আরেকটা লাইন তো লাগবে, নাকি? সেটাই আর পারলাম না। কোনোভাবেই আগের লাইনের মতো গম্ভীর আরেকটা লাইন এলো না মাথায়। কেবল এলো: টাম-টাম্পটি -টাম্পটি -টাম্পটি প্রবল ভয়ে কেঁপে মরে।’ 

চোখ পিটপিট করল মোটকু চার্লি। ‘কে এই টাম-টাম্পর্টি-টাম্পটি- টাম্পটি?’ 

‘কেউ না। ওটা বলে বুঝিয়েছি; সেখানে বসার উপযুক্ত শব্দগুলো আর খুঁজে পাইনি। দ্বিতীয় লাইন মাথায় এলো না। এদিকে কেবল এই লাইন নিয়ে তো আর তোমার সামনে উপস্থিত হওয়া যায় না! মহাকাব্য কি আর এই পঙতিতে হয়? সেটা তো তোমার জন্য অপমানজনক হতো।’ 

‘আসলে…’ 

‘আমিও সেটাই ভেবেছিলাম। তাই এক হপ্তার জন্য চলে গেলাম হাওয়াই বেড়াতে। যা বললাম, জরুরি কাজ কেবলই মাথাচাড়া দিতে ব্যস্ত থাকে।’ 

নিজের পাত্রে চুমুক দিল মোটকু চার্লি, স্বাদটা পছন্দ হতে শুরু করেছে। কখনও কখনও, অনুভূতি যখন তুঙ্গে থাকে, তখন জোরাল স্বাদ ভালো লাগে। নিঃসন্দেহে এখন তেমন একটা মুহূর্ত। ‘সব সময় নিশ্চয়ই কবিতার দ্বিতীয় পঙতি তোমাকে আটকে রাখেনি?’ 

মোটকু চার্লির বড়োসড়ো হাতে নিজের হাত রাখল স্পাইডার। ‘আমার ব্যাপারে অনেক শুনেছ,’ বলল সে। ‘এবার তোমার কথা বলো।’ 

‘বলার তেমন কিছু নেই,’ জানাল মোটকু চার্লি। নিজের জীবনের ব্যাপারে ভাইকে জানাল সব। বলল রোজি আর রোজির মায়ের কথা; বাদ গেল না গ্রাহাম কোটস এজেন্সির মালিক গ্রাহাম কোটসও। শুনে মাথা নাড়ল ওর ভাই। নিজের জীবনকে শব্দে রূপ দেওয়ার পর মোটকু চার্লির নিজের কাছে মনে হচ্ছে—ওর জীবনটাকে আসলে ঠিক জীবন বলা চলে না! 

‘তারপরও,’ দার্শনিকের ভঙ্গিমায় বলল মোটকু চার্লি। ‘অনেকের ব্যাপারেই খবরের কাগজের গসিপ অংশে আমরা পড়ি। তারা সবসময় বলে: তাদের জীবন একঘেয়ে, নিঃস্ব আর অর্থহীন।’ পানপাত্রের ওপর উপুড় করে ধরল মদের বোতল, যদি ছিটেফোঁটা বাকি থাকে তো। কিন্তু একটা ফোঁটাও মিলল না, বোতলটা খালি। অবশ্য যতক্ষণ বোতলটা সেবা দিয়ে গেছে, ততক্ষণও সেবা দেওয়ার কথা না। 

উঠে দাঁড়াল স্পাইডার। ‘যাদের কথা বলছ, তেমন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার।’ জানাল সে। ‘গ্লসি ম্যাগাজিনে তাদের ব্যাপারে খবর ছাপে ওদের সঙ্গে মিশেওছি, নিজের চোখেই দেখেছি তাদের অর্থহীন ও নিঃস্ব জীবন। আবার আড়াল থেকেও দেখেছি ওদের আচরণ, তারা ভাবত—আর কেউ উপস্থিত ছিল না ওখানে। তবে একটা কথা সাফ জানিয়ে দিই: ভাই আমার, ওদের কেউই…এমনকী বন্দুকের নলের সামনে খাড়া হয়েও… তোমার সঙ্গে নিজের জীবন পালটাতে রাজি হবে না। যাক গে, চলো যাই।’ 

‘হাহ? কই যাবে?’ 

‘আমি না, আমরা যাবো। আজকের রাতের তিন লক্ষ্যের একটা তো অর্জিত হলো। মদ পান করা শেষ… রইল বাকি আর দুটো। 

‘উম…’ 

স্পাইডারের পিছু নিয়ে মোটকু চার্লি বেরিয়ে এলো বাইরে, রাতের ঠান্ডা বাতাসে যদি মাথাটা একটু পরিষ্কার হয়। কিন্তু লাভ হলো না। মোটকু চার্লির মনে হচ্ছিল, ধড়ের সঙ্গে শক্ত করে লাগিয়ে রাখা না হলে মাথাটা বাতাসে ভেসে দূরে কোথাও চলে যেত। 

‘এরপর নারী,’ জানাল স্পাইডার। ‘সব শেষে গান।’ 

.

একটা কথা বোধহয় আপনাদেরকে এই সুযোগে জানিয়ে দেওয়া উচিত– মোটকু চার্লির দুনিয়ায়, মেয়ে মানুষের আধিক্য নেই। আর তাই দুম করে তারা সামনে এসেও পড়ে না, তাদেরকে মোটকু চার্লির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়। ওকে সাহস যুগিয়ে কথা বলতে হয়, আবার কথা বলার সময় এমন একটা বিষয় বেছে নিতে হয় যাতে সে দক্ষ; এত ঝামেলা শেষ করার পরেও, বাকি থাকে অনেকটা পথ। তাদেরকে দুঃসাহসীর মতো জিজ্ঞেস করতে হয়— শনিবার রাতে কী করছে? সাধারণত এই প্রশ্নের জবাবে শুনতে হয়: চুল ধোয়াতে যাবে, কিংবা হিসেব-নিকেশ সামলাবে, অথবা পোষা কাকতাড়ুয়ার যত্ন নিতে হবে…কিংবা সরাসরি জানিয়ে দেবে, অপেক্ষা করবে সে অন্য কোনো পুরুষের ফোনের; যে ফোনটা হয়তো কোনোদিন আসবেই না। 

কিন্তু স্পাইডারের দুনিয়ার নারীরা পুরোপুরি আলাদা। 

ওয়েস্ট এন্ডের দিকে হাঁটতে শুরু করল ওরা, থামল একটা জনাকীর্ণ পাবের সামনে এসে। খদ্দেররা ফুটপাতে ভিড় জমিয়েছে। থমকে দাঁড়াল স্পাইডার, হ্যালো বলার জন্য। জানা গেল, সিবিলা নামের এক যুবতীর জন্মদিন উদযাপনের জন্য সবাই জড়ো হয়েছে। মেয়েটার ও তার বান্ধবীদের জন্য যখন জন্মদিনের উপহার হিসেবে এক দফা মদ কেনার প্রস্তাব দিল স্পাইডার, তখন দৃশ্যতই দারুণ খুশি হলো মেয়েটা। ভেতরে গিয়েই ঠাট্টা-কৌতুক শুরু করল সে (‘… এরপর হাঁসটা বলল, আমার বিলে ঢুকিয়ে দেবে? আমাকে তুমি কী মনে করো? আমি পারভার্ট?’)। নিজের ঠাট্টায় নিজেই হাসল স্পাইডার; প্রাণখোলা, গমগমে হাসি। চারপাশে যারা আছে, তাদের সবার নাম মনে রেখেছে যুবক। কথা বলল তাদের সঙ্গে, শুনল তাদের কথা। স্পাইডার যখন বলল, আরেকটা পাব খুঁজতে বেরোবে, তখন পুরো দলটাই একমত হলো, ওদেরও সঙ্গে যেতে হবে… 

তৃতীয় পাবে যখন পৌঁছল ওরা, তখন স্পাইডারকে দেখে মনে হলো যেন রক ভিডিয়োর কোনো অভিনেতা। ওকে ঘিরে ধরেছে মেয়ের দঙ্গল, একদম গাঁ-ঘেঁষে রয়েছে তারা; কয়েকজন তো চুমুও খেয়েছে… কিছুটা ঠান্ডা করে, কিছুটা সত্যি-সত্যি। ঈর্ষা এবং ভয়ের সঙ্গে সব দেখল মোটকু চার্লি। 

‘তুমি কে? ওর বডিগার্ড?’ জিজ্ঞেস করল মেয়েদের একজন। 

‘কী?’ 

‘বডিগার্ড? দেহরক্ষী?’

‘না,’ জানাল মোটকু চার্লি। ‘আমি ওর ভাই।’ 

‘ওয়াও,’ বলল মেয়েটা। ‘জানতামই না যে ওর ভাই-ও আছে। দারুণ মানুষ, তাই না?’ 

‘আমি তাই মনে করি,’ বলল আরেক মেয়ে। স্পাইডারকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিল সে, কিন্তু একই কাজ করার জন্য উদগ্রীব আরও কিছু মেয়ের ধাক্কায় সরে যেতে বাধ্য হলো। মোটকু চার্লিকে যেন এই প্রথমবারের মতো দেখল সে। ‘তুমি কে? ওর ম্যানেজার?’ 

‘নাহ, ভাই।’ প্রথম মেয়েটা জানাল। ‘এইমাত্র বলল আমাকে,’ যোগ করল সে। 

দ্বিতীয়জন অগ্রাহ্য করল ওকে। ‘তুমিও স্টেটসের নাকি?’ জানতে চাইল মেয়েটা। ‘কথায় টান আছে।’ 

‘যখন ছোটো ছিলাম,’ জানাল মোটকু চার্লি। ‘তখন ফ্লোরিডায় থাকতাম। আমার বাবা আমেরিকান। আর মা, জন্মেছিল সেন্ট অ্যান্ড্রুজে, কিন্তু বেড়ে উঠেছে…’ 

ওর কথায় মন নেই কারও। 

সেই পাব থেকেও যখন বেরোল, তখন জন্মদিনের উৎসবের অতিথিরা সঙ্গে এলো ওদের। মেয়েরা ঘিরে ধরল স্পাইডারকে, এবার কই যাবে তা জানতে চাচ্ছে। নানা রেস্তোরাঁর নাম প্রস্তাব করা হলো, সেই সঙ্গে বেশ কিছু নাইটক্লাবও। স্পাইডার শুধু হাসল জবাবে, হাঁটতে লাগল সামনে। 

মোটকু চার্লি অনুসরণ করল দলটাকে, নিজেকে অন্য সব সময়ের চাইতে বেশি সামাজিক মনে হচ্ছে। 

নিয়ন আর স্ট্রিপলাইটের দুনিয়ায় পা রাখল দলটা। কয়েকটা মেয়েকে বগলদাবা করে আছে স্পাইডার। হাঁটতে হাঁটতেই চুমু খাচ্ছে তাদের, যখন যাকে ইচ্ছা। ভাবখানা এমন যেন সামনে গ্রীষ্মের ফল নিয়ে বসে থাকা মানুষ সে, একটা ফলে এই কামড় দিচ্ছে তো ওই হাতে তুলে নিচ্ছে আরেকটা। 

তবে ফলগুলোর তাতে আপত্তি আছে বলে মনে হচ্ছে না। 

ব্যাপারটা স্বাভাবিক না। মোটকু চার্লি ভাবল। একদম না। এখন আর বলতে গেলে দলটাকে ধরার চেষ্টা করছে না ও, পাছে একা পড়ে যায়—এই ভয়ে পা চালাচ্ছে আরকী। 

জিভের ডগায় এখনও যেন লেগে আছে মদটার তিক্ত স্বাদ। 

বুঝতে পারছে, ঠিক ওর পাশেই হাঁটছে আরেকটা মেয়ে। ছোটোখাটো হলেও সুন্দর, অনেকটা পুতুলের মতো আরকী। মোটকু চার্লির শার্টের হাতা ধরে টান দিল সে। ‘আমরা আসলে করছিটা কী?’ জানতে চাইল মেয়েটা। ‘যাচ্ছি কই?’ 

‘আমাদের বাবার মৃত্যুর শোক পালন করছি,’ জবাব দিল সে। ‘অন্তত আমার তাই ধারণা।’ 

‘রিয়েলিটি টিভি শো নাকি?’ 

‘আশা করি—না।’ 

আচমকা থেমে ঘুরে তাকাল স্পাইডার। ওর চোখের তারায় জ্বলজ্বল করতে থাকা আভাটাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যায় না। ‘এসে পড়েছি, ঘোষণা করল সে। ‘পৌঁছে গেছি লক্ষ্যে। সে-ও এটাই চাইত।’ 

যে পাবের সামনে ওরা দাঁড়িয়েছে, তার দরজায় একটা উজ্জ্বল কমলা কাগজ সাঁটানো। তাতে লেখা: 

আজ রাতে, ওপর তলায়, ক্যারিয়োকি। 

‘গান,’ বলল স্পাইডার। তারপর যোগ করল, ‘শুরু করা যাক!’

‘না,’ মোটকু চার্লি বলল, যেখানে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল।

‘এই কাজটাকেই পছন্দ করত সে, ‘ জানাল স্পাইডার। 

‘আমি গান গাই না, অন্তত জনসম্মুখে না। তাছাড়া মাতাল হয়ে আছি। এমনিতেও মনে হয় না এভাবে গান গাওয়ার বুদ্ধিটা ভালো।’ 

‘ঠিক, ভালো না… অসাধারণ বুদ্ধি,’ হাসি দিয়েই যেন দুনিয়াকে পটিয়ে ফেলবে স্পাইডার। ঠিক জায়গায় দেখাতে পারলে, ওই হাসি দিয়েই ধর্মযুদ্ধ শুরু করা যাবে! কিন্তু মোটকু চার্লির ভাবান্তর হলো না। 

‘দেখো, বলল সে, কণ্ঠ থেকে আতঙ্ক দাবিয়ে রাখল। ‘এমন অনেক কিছু আছে যা মানুষ সাধারণত করে না, ঠিক বললাম? কেউ কেউ আকাশে উড়তে পারে না। কেউ কেউ জনসম্মুখে সম্ভোগ শুরু করে দেয় না। অনেকে ধোঁয়ায় পরিণত হয়ে উড়ে যায় না। আমিও ওইসব কাজ করতে পারি না, এবং পারি না গান গাইতেও।’ 

‘বাবার জন্য হলেও না?’ 

‘বাবার জন্য হলে তো আরও না। কবরে যাওয়ার পরেও তার জন্য আমি লোকসম্মুখে বিব্রত হতে পারব না। যতটুকু করে গেছে, যথেষ্ট।’ 

‘এক্সকিউজ মি,’ যুবতীদের একজন বলল। ‘এক্সকিউজ মি, আমরা ভেতরে যাবো না? বাইরে দাঁড়িয়ে তো ঠান্ডা লেগে গেল! সিবিলেরও বাথরুমে যেতে হবে।’ 

‘যাবো, যাচ্ছি,’ বলে মিষ্টি করে হাসল স্পাইডার। 

আপত্তি জানাতে চাইল মোটকু চার্লি, চাইল কঠোরভাবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে। কিন্তু আবিষ্কার করল ওকে প্রায় ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভেতরে, নিজেকে ঘৃণা করছে এখন। সিঁড়িতে এসে স্পাইডারকে ধরে ফেলল সে। ‘আমি ভেতরে যাবো,’ জানাল সে। ‘কিন্তু গান গাইবো না।’ 

‘ভেতরে তো চলেই এসেছ।’ 

‘তা জানি, কিন্তু গান গাইবো না।’ 

‘ভেতরে ঢোকার পর, যাবো না যাবো না করে লাভ আছে?’ 

‘আমি গাইতে পারি না।’ 

‘তারমানে, বাবার কাছ থেকে গান গাওয়ার সব দক্ষতাও আমিই পেয়েছি?’ 

‘উঁহু, তার মানে: মানুষজনের সামনে গান গাইতে হলে বমি করে ফেলব।’ 

ওকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাতে চাপ দিল স্পাইডার। ‘আমি কীভাবে গাই, সেইটা আগে দেখো। তারপর নাহয়…’ বলল সে। 

বার্থডে গার্ল আর তার দুই বান্ধবী গিয়ে দাঁড়াল মঞ্চে। খিলখিলিয়ে হাসির ফাঁকে গাইল ‘ড্যান্সিং কুইন’। জিন আর টনিক পান করল মোটকু চার্লি, কেউ একজন ওর হাতে ধরিয়ে দিয়েছে পানপাত্রটা। বেসুরো গান শুনতে গিয়ে মুখ বিকৃত হয়ে গেল ওর, পরিষ্কার ধরতে পারল ভুলের জায়গাগুলো। দলের বাকিরা অবশ্য হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিল তাদেরকে। 

আরেক নারী এবার উঠল মঞ্চে। এই সেই পুতুলের মতো সুন্দর মেয়ে, যে মোটকু চার্লিকে জিজ্ঞেস করেছিল যে ওরা কোথায় যাচ্ছে। শুরুর দিকের সুর শুনে মনে হচ্ছিল ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ বাজছে। চরম দরদ দিয়ে গানটা গাইতে শুরু করল মেয়েটা, তবে প্রতিটা সুরসঙ্কেত ধরতে ভুল করল বেচারি; তেমনি লাইন শুরু করল হয় একটু আগে নইলে একটু পড়ে। পঙতিতেও ভুল হলো। 

তার জন্য মায়াই হলো মোটকু চার্লির। 

মঞ্চ থেকে নেমে বারের দিকে আসতে লাগল মেয়েটা। সান্ত্বনা দেবার ভঙ্গিতে কিছু একটা বলতে চাইল মোটকু চার্লি, কিন্তু আনন্দে পুতুল-রূপী মেয়েটার চেহারা জ্বলজ্বল করছে। ‘দারুণ না?’ বলল মেয়েটি। ‘মানে, অসাধারণ লেগেছে।’ ওকে একটা ড্রিঙ্ক কিনে দিল মোটকু চার্লি, বড়োসড়ো পাত্র ভরতি কমলার রস মেশানো ভদকা। ‘মজা পেয়েছি অনেক,’ ওকে বলল মেয়েটা। ‘তুমিও গাইবে? যাও না, পারবে। অন্তত আমার চাইতে জঘন্য তো আর হবে না।’ 

শ্রাগ করল মোটকু চার্লি। এমনভাবে যেন বোঝাতে চাইল, ওর যে অদক্ষতা-তা আসলে এখন পর্যন্ত বাইরেই আসেনি! 

ছোট্ট মঞ্চটার দিকে এমন ভঙ্গিতে এগোল স্পাইডার যে মনে হলো, পাদপ্রদীপের আলো ওকে অনুসরণ করছে! 

‘বাজি ধরে বলতে পারি, ভালোই গাইবে,’ ভদকা আর কমলার রস খেতে ব্যস্ত মেয়েটা বলল। ‘কে যেন বলল, তুমি নাকি ওর ভাই?’ 

‘না,’ বিড়বিড় করে বলল মোটকু চার্লি, আচরণে দ্বেষ ঝরে পড়ছে। ‘বলেছি যে ও আমার ভাই।’ 

গাইতে শুরু করল স্পাইডার। গানের নাম: আন্ডার দ্য ব্রডওয়াক 

গানটা যদি মোটকু চার্লির মারাত্মক পছন্দ না হতো, তাহলে ঘটনাটা কখনওই ঘটত না। ওর বয়েস যখন ছিল তেরো, তখন বিশ্বাস করত যে ‘আন্ডার দ্য ব্রডওয়াক’-ই দুনিয়ার সর্বসেরা গান (চোদ্দো বছর বয়সে যখন দুনিয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা হয়ে গেল, তখন সেই জায়গা দখল করল বব মার্লির ‘নো ওম্যান নো ক্রাই’)। স্পাইডার এখন ওর গানটাই গাইছে, এবং গাইছে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে। সুর-তাল কাটছে না, শব্দগুলো দরদ দিয়েই উচ্চারণ করছে। মদ খাওয়া বন্ধ করে দিল সবাই, কথা বলাও বন্ধ। হাঁ করে তাকিয়ে তাকিয়ে শুনল কেবল। 

গান গাওয়া শেষ হলে, সবাই হাততালি দিয়ে উঠল। যদি কারও মাথায় টুপি থাকত, তাহলে নিঃসন্দেহে তা বাতাসে ছুড়ে মারত। 

‘বুঝতে পারছি, কেন ওর পরে গাওয়ার ইচ্ছে নেই তোমার।’ কমলা- ভদকা মেয়েটা বলল মোটকু চার্লিকে। ‘মানে, এমন ভাবে গাওয়া তো আর তোমার পক্ষে সম্ভব না, তাই না?’ 

‘আসলে…’ মোটকু চার্লি বলল। 

‘বলতে চাচ্ছিলাম,’ হেসে জানাল মেয়েটা। ‘পরিবারের মাঝে কে প্রতিভাবান, সেটা তো আমরা দেখতেই পারছি।’ মাথা কাত করে বলল কথাটা, সেই সঙ্গে দোলাল চিবুক। 

পরের কাজটাই বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়াল। 

মঞ্চের দিকে এগোল মোটকু চার্লি, ইচ্ছে করেই এক পায়ের ঠিক সামনে ফেলল আরেক পা। বোঝাতে চাইল, শারীরিক সক্ষমতা আছে ওর। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঘামছে। 

পরের কয়েকটা মুহূর্তের স্মৃতি পরিষ্কার মনে নেই ওর। ডিজেকে বলে তালিকা থেকে বেছে নিলো: আনফরগেটেবল। ছোটোখাটো একটা অনন্তকালের জন্য অপেক্ষা করল যেন, তারপর হাতে পেল মাইক্রোফোন। 

মুখ শুকিয়ে গেছে বেচারার, হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছে দুরন্ত গতিতে। 

পর্দায় দেখতে পেল প্রথম শব্দটা: আনফরগেটেবল… 

কথা হলো, মোটকু চার্লি আসলেও গান গাইতে জানে। গলায় সুর-তাল দুটোই আছে, আছে শরীরী ভঙ্গিমা। যখন সে গান গায়, তখন পুরো দেহটা পরিণত হয় বাদ্যযন্ত্রে। 

শুরু হয়ে গেল সুর। 

মোটকু চার্লি প্রস্তুত, ওর মনে হচ্ছে- মুখটা খুলে যাবে এখনই, শুরু করবে গান গাওয়া। ‘আনফরগেটেবল’ গাইবে সে। গাইবে তার মৃত বাবা আর ভাইয়ের উদ্দেশ্যে। গাইবে রাতটা স্মরণীয় করে রাখতে। সবাইকে জানিয়ে দেবে, এমন কিছু ব্যাপার আছে যা কখনও ভোলা যায় না! 

কিন্তু পারল না…ওর দিকে তাকিয়ে আছে একদল মানুষ। সংখ্যায় টেনে- টুনে দুই ডজন হবে। রয়েছে ওরা এই মুহূর্তে একটা পাবের ওপরের তলার কামরায়। অধিকাংশই মেয়ে। আর দর্শকের সামনে, মোটকু চার্লি মুখ পর্যন্ত খুলতে পারল না। 

শুনতে পাচ্ছে বাজনা, কিন্তু তারপরও দাঁড়িয়ে রইল ওভাবেই। সেই সঙ্গে ঠান্ডা বোধ করছে, পাজোড়া আছে যেন অনেক-অনেক দূরে। 

মুখ খুলল মোটকু চার্লি। 

‘আমি মনে হয়—’ পরিষ্কার উচ্চারণে বলল সে মাইক্রোফোনে। বাজনা ছাপিয়ে শোনা গেল ওর শব্দগুলো, রুমের প্রতিটা কোনায় পড়ল ছড়িয়ে। অসুস্থ হয়ে যাবো।’ 

মঞ্চ থেকে আত্মসম্মান নিয়ে সটকে পড়ার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না বেচারা। 

আর তারপর, সারা দুনিয়াটা যেন কেঁপে উঠল। 

.

কিংবদন্তির জায়গা বলতে কিছু স্থান আসলেই আছে, আছে যার যার মতো করে। কিছু পৃথিবীরই কোনো-না-কোনো স্থান দখল করে থাকে। আবার কিছু থাকে তার ঠিক নিচেই, অনেকটা আন্ডার পেইন্টিঙের মতো। 

যেমন আছে পাহাড়। এমন অনেক অংশঅলা পাহাড় আছে, যে পর্যন্ত পৌঁছুবার আগেই আপনি পৌঁছে যাবেন বিশ্বের শেষ মাথায়। এমন অনেক গুহা আছে পাহাড়ে, গভীর গুহা… পৃথিবীতে মানুষের পা পড়ার আগেই কেউ-না- কেউ বাস করত ওখানে। 

এখনও করে… 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *