অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
এক রাজার ছিল এক গাই গরু। দুধ দোহানোর সময় প্রায়ই দুরন্তপনা করতো গরুটি। একদিন রাজা ঐ অবস্থা দেখে রেগেমেগে চেঁচিয়ে বললেন, ‘কাল সকালে ওঠার পর যাকে প্রথমে রাস্তার ধারে দেখবো তাকেই গাইটি দিয়ে দেবো।’ এক তাঁতি রাজপ্রাসাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় রাজার কথা শুনতে পেল।
তাঁতি মনে মনে স্থির করলো যে, সে পরদিন খুব ভোরে উঠে রাজার বাড়ির সামনের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকবে যাতে রাজা রাস্তার দিকে তাকালে প্রথমেই তাকে দেখতে পান। গরুটি পাবার লোভে তাঁতি মনে মনে নানা ভাবনা ভাবতে লাগলো।
তাঁতি ভাবলো, গরু আনতে গেলে তো দড়ি দরকার হবে। রাত্রে দড়ি কোথায় পায়? অবশেষে ভেবেচিন্তে ঘরে রাখা কাপড় বোনার সুতা পাকাতে পাকাতে মোটা দড়ি তৈরি করলো। দড়ি বেশ শক্ত করে তৈরি করতে অনেক দামের সুতা ব্যবহার করতে হলো।
তাঁতির ঘরে ছিল বুড়ো মা। বুড়ি যাতে গরুর দুধ বেঁচে পয়সা নিতে না পারে সেজন্য তাঁতি মায়ের চোখ নষ্ট করে দিল। সারারাত তাঁতি নানা রকম পরিকল্পনা করলো। রাজার গাই বিনে পয়সায় লাভ হবে বলে তার লোভমিশ্রিত আনন্দ আর ধরে না। সেই আনন্দে রাতে সে আর ঘুমাতে পারেনি।
পরদিন খুব ভোরে উঠে তাঁতি রাজপ্রাসাদের প্রধান দরজার পাশে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালো। চোখেমুখে তার চকচকে লোভ। গরুটি হাতে পাওয়া যেন শুধু সময়ের ব্যাপার। দড়ি নিয়ে সে অপেক্ষা করছে—কখন সদর দরজা খুলবে আর রাজা বের হবেন রাস্তায়।
অতঃপর রাজার বের হবার সময় হলো। বিশাল গেইট খুলে গেল। রাজা তাঁতিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তাঁতিও অসঙ্কোচে তার কথা নিবেদন করে গরুটি প্রার্থনা করলো। শুনে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে দারোয়ান দিয়ে পিটিয়ে তাড়িয়ে দিলেন তাঁতিকে।
লোভে পড়ে তাঁতি পিটুনি খেলো, মায়ের চোখ নষ্ট করলো এবং তার মূল সম্বল কাপড় বোনার দামি সুতা নষ্ট করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মাত্রাতিরিক্ত লোভ কিংবা বেশি লাভ করার দুরাশা ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য বাংলা প্রবাদে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট—প্রবাদের ব্যবহার হয়ে থাকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে।