অগ্রদূত

           হে পথিক, তুমি একা।
আপনার মনে জানি না কেমনে
           অদেখার পেলে দেখা।
যে-পথে পড়ে নি পায়ের চিহ্ন
           সে পথে চলিলে রাতে,
আকাশে দেখেছ কোন্‌ সংকেত,
           কারেও নিলে না সাথে।
তুঙ্গগিরির উঠিছ শিখরে
           যেখানে ভোরের তারা
অসীম আলোকে করিছে আপন
           আলোর যাত্রা সারা।
প্রথম যেদিন ফাল্গুনতাপে
           নবনির্ঝর জাগে,
মহাসুদূরের অপরূপ রূপ
           দেখিতে সে পায় আগে।
আছে আছে আছে, এই বাণী তার
           এক নিমেষেই ফুটে,
অচেনা পথের আহ্বান শুনে
           অজানার পানে ছুটে।
সেইমতো এক অকথিত ভাষা
           ধ্বনিল তোমার মাঝে,
আছে আছে আছে, এ মহামন্ত্র
           প্রতি নিশ্বাসে বাজে।
রোধিয়াছে পথ বন্ধুর করি
           অচল শিলার স্তূপ।
নহে নহে নহে, এ নিষেধবাণী
           পাষাণে ধরেছে রূপ।
জড়ের সে নীতি করে গর্জন
           ভীরুজন মরে দুলে,
জনহীন পথে সংশয়মোহ
           রহে তর্জনী তুলে।
অলস মনের আপনারি ছায়া
           শঙ্কিল কায়া ধরে,
অতি নিরাপদ বিনাশের তলে
           বাঁচিতে চেয়ে সে মরে।
নবজীবনের সংকটপথে
           হে তুমি অগ্রগামী,
তোমার যাত্রা সীমা মানিবে না
           কোথাও যাবে না থামি।
শিখরে শিখরে কেতন তোমার
           রেখে যাবে নব নব,
দুর্গম-মাঝে পথ করি দিবে,–
           জীবনের ব্রত তব।
যত আগে যাবে দ্বিধা সন্দেহ
           ঘুচে যাবে পাছে পাছে,
পায়ে পায়ে তব ধ্বনিয়া উঠিবে
           মহাবাণী — “আছে আছে।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *