মেয়েটির নাম লাবণ্য। পুরোনো কালের চেয়ারে বসে নাম শুনে চমকে গেল দীপা। দশ বছরের মিষ্টি চেহারার মেয়েটি বলল, আমার নাম লাবণ্য মিত্ৰ।
মেয়েটির পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন তার দিদিমা। মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি খুব খুশি, নাতনির জন্যে মাস্টারনি যোগাড় করতে পেরে নিশ্চিন্ত হয়েছেন। দীপা তাঁকেই জিজ্ঞাসা করল, ওর নাম কে রেখেছিল?
আমি। বৃদ্ধা খুব গর্বিত ভঙ্গীতে জবাব দিলেন।
কিছু মনে করবেন না, ওর মায়ের নাম কি ছিল?
ওমা, মনে করা কেন? ওর মাকে আমি দুলু বলে ডাকতাম, ভাল নাম ছিল গোলাপ, গোলাপবালা। একেবারে গোলাপের মত রঙ ছিল তো!
হঠাৎ লাবণ্য ঘাড় শক্ত করে বলে উঠল, মায়ের কথা আমার সামনে বলবে না।
দীপা আবার অবাক, কেন?
না। যে আমার জন্ম দিয়ে চলে গেছে ভগবানের কাছে তার নাম করবে না।
দীপা কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারল না। সেই ভদ্রমহিলা যিনি তাকেও জন্ম দিয়ে মাঝা গিয়েছিলেন তাঁর নাম জেনেছে সে অনেক বড় হয়ে, বিয়ের আগে। কিন্তু সেটা জানার পবি তার তো এমন প্রতিক্রিয়া হয়নি। সে বুদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করল, লাবণ্য নামটা আপনি কোথায় পেলেন? কেউ তো চট করে রাখে না।
কোথায় আর পাব মা! আগে চাইতাম মেয়ে সুন্দরী হোক, কািপসী হোক, দেখে পাঁচজনের চোখ পুড়ে যাক। কিন্তু সব ছেড়েছুঁড়ে দেবার পর মনে হত সুন্দাবাঁ কাপসী মানে তো। হাজার সমস্যা। তার চেয়ে হাত পা চোখ মুখ নিখুঁত হোক আর মুখে লাবণ্য থাক। যত বড় সুন্দরী হোক যদি লাবণ্য না থাকে তাহলে সব রূপ মাঠে-মারা যাবে। তা ওর মা যখন মারা গেল তখন কোলে নিয়ে ভাবছি। এ মেয়ের কি নাম দেওয়া যায়। একটু আলাদা রকম, মানে আমাদের থেকে আলাদা। রেখে দিলাম লাবণ্য। বুদ্ধা হাসলেন, প্ৰথমে অবশ্য লাবণ্যপ্ৰভা রেখেছিলাম। তা এখানে একটা সিঁড়িঙ্গে লোক আছে, আমাকে দিদির মত দেখৈ, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গায়, মেয়েদের ববিঠাকুরেব গান শেখায্য যে শিখতে চায়, সে শুনে বলল, ওসব প্রভা-ট্রভা ছোট দাও। তুমি একেবারে রবি ঠাকুরের বুকেব খাঁচায় হাত ঢুকিয়ে দিয়েছ!
খুব ভাল বলেছেন উনি। আপনি রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছেন তাহলে?
ওমা, শুনব না কেন? এই তো, ওই গলি দিয়ে সোজা গেলে চিৎপুর-গণেশ টিকি আর তারপরেই রবিঠাকুরের বাড়ি। ওর কত গান কঞ্চি ভাই-এর কাছে শিখেছিলাম!
কঞ্চি ভাই?
ওই যে সিঁড়িঙ্গে, যে হরমোনিয়ম বাজায়। বৃদ্ধ ভেতরে চলে গেলেন।
প্রথম দিন লাবণ্যকে জানতেই চলে গেল। ও কি পড়তে ভালবাসে, বইপত্তরগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে সময় নিল দীপা। সেই সঙ্গে লাবণ্যের সঙ্গে আলাপ। মেয়েটাকে প্রথমে একটু জেদী ধরনের মনে হয়েছিল। কিন্তু কথা বলে ধারণা পাল্টাল। জানার আগ্রহ আছে খুব। একমাত্র লাবণ্য বলল, জানো, দিদিমা যখন এসে বলল মাস্টারনি ঠিক হয়েছে তখন আমি খুব ভযে ভযে ছিলাম। আমার ক্লাসের অঙ্কদিদির মত যদি তুমি হও!
কেন? অঙ্কদিদি কেমন?
পাহাড়ের মত। বাগলে আগ্নেয়গিরি হয়ে যান।
গুরুজনদের সম্পর্কে এভাবে কথা বলতে নেই।
বাঃ, উনি নিজেই বলেন। রাগলে আমি আগ্নেয়গিরি!
ভঙ্গীটা নকল করে দেখাল লাবণ্য। হেসে ফেলল দীপা, তা হোক, তুমি বলবে না। শোন লাবণ্য, আমি তোমাকে যা পডোব তা যদি তুমি বুঝতে না পার তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। কক্ষনো লজ্জা করবে না। তুমি স্কুল থেকে ফেরো চারটের সময়?
হ্যাঁ। দশটার সমস্যা যাই।
দীপা জিজ্ঞাসা করল, কে নিয়ে যায়?
দিদিমা।
কাল কি পড়া আছে?
কালকের পড়া হয়ে গিয়েছে।
বাঃ, তুমি দেখছি খুব ভাল মেয়ে। আমি আসব সোম বুধ আর শনি।
তুমি যদি রোজ আমাদের বাড়িতে আসো তাহলে খুব ভাল হয়।
কেন?
তোমাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। এখানে যেসব মেয়ে থাকে তারা কেউ স্কুলে যায় না, বই পড়ে না। ওদের কথা শুনতে আমার একটুও ভাল লাগে না।
শুনো না।
শুনি না তো। আমি কারো সঙ্গে মিশি না।
ঠিক আছে, যদি দেখি তোমার প্ৰযোজন হচ্ছে তাহলে অন্য দিন আসব।
তুমি কলেজে পড়, না?
হ্যাঁ।
আমি যে করে কলেজে পড়ব ।
দীপা হাসতে গিয়ে থেমে গেল। সত্যসাধন মাস্টারের মুখ হঠাৎ মনে পড়ে গেল তাঁর। একদিন সে সত্যসাধন মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করেছিল একই কথা। তিনি বলেছিলেন, কাজ কইর্যা যাও মন দিয, সময় হইলেই ফল পাইবা।
মনটা কেমন ভিজে উঠল। সে ঠিক করল। সত্যসাধনবাবু যে পদ্ধতিতে তাকে পড়াতেন সেই একই পদ্ধতিতে সে লাবণ্যকে পড়াবে। এইসময় দুহাতে দুটি থালা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন বৃদ্ধা। সেদিকে নজর যেতে চমকে উঠল দীপা, একি!
এ সামান্য। একটু জলখাবার।
এক থালা লুচি বেগুনভাজা আর অন্যটিতে তিন-চার রকমের মিষ্টি। দীপা তীব্ৰ প্ৰতিবাদ করল, অসম্ভব। আমি এ সময়ে এত খাই না।
বৃদ্ধা মাথা নাড়লেন, না মা, খেতে তোমাকে হবেই, আজ প্রথম দিন এ-বাড়িতে তুমি এলে। না খেয়ে চলে গেলে লাবণ্যর ঘোর অকল্যাণ হবে।
আপনি এসব একদম বিশ্বাস করবেন না। আমার খাওয়ার ওপর ওর কল্যাণ নির্ভর করবে না। ও যা কাজ করবে। সেই মত ফল পারে। দীপা ওঠার জন্যে তৈরী হল।
মা, একটা কথা বলব। বৃদ্ধ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন।
তুমি যা বললে তা যদি সত্যি হয় তাহলে কাজের জন্যে ফল ভোগ করছি আমি। তুমি কি সেই কারণেই এই বাড়িতে খেতে চাইছ না? বৃদ্ধা মাথা নাড়লেন, তাহলে আমি তোমাকে জোর করব না।
কয়েক সেকেণ্ড সময় লাগল বুঝতে। এবং বোঝামাত্র দীপা প্ৰতিবাদ করে উঠল, এসব আপনি কি বলছেন? আমার মাথায় অমন ভাবনা একবারও আসেনি। তাছাডা আপনার অতীতের পরিচয় আমার জানার দরকার নেই। আপনি আমার ছাত্রীর দিদিমা, এইটুকুই যথেষ্ট।
এইসময় লাবণ্য বলল, তুমি একটুও খাবে না?
দীপা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল, আচ্ছা, দাও। তবে এতগুলো নয়। আমি খুব অল্প খাই। তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধর মুখে হাসি ফুটল।
তিনি একটি দাসীকে নির্দেশ দিতে খালি থালা এল। দীপা লক্ষ্য করল থালার চেহারা আয়নার মত পরিষ্কার। এর গঠনও অভিনব। বৃদ্ধ সেটা বুঝতে পেরে বললেন, এগুলো অনেক যুগ ধরে তোলা ছিল। আমরা ব্যবহার করিনি কখনও। তুমি আসবে বলে নামিয়ে মাজিয়ে রেখেছিলাম।
এরকম আর করবেন না। আমাকে আলাদা না ভাবলেই ভাল হত।
ওমা! তুমি আলাদা না?
নিশ্চয়ই না। আমার সঙ্গে লাবণ্যর তফাত কোথায়?
কথাটা শুনে বৃদ্ধা খুব খুশি হলেন। লাবণ্যকে একটা কাজের অছিলায় অন্য ঘরে পাঠিয়ে বললেন, সবসময় খুব ভয়ে ভয়ে থাকি মা। স্কুলে যদি জানতে পারে কোন বাড়ি থেকে এসেছে তাহলে তো ছাড়িয়েও দিতে পারে। কোন বন্ধুর বাড়িতে যেতে দিই না, কাউকে আসতেও বলে না। এরই মধ্যে ওইটুকুনি মেয়ে সব বুঝে গিয়েছে।
আপনারা কি মিত্ৰ?
না গো। যে মানুষটির সঙ্গে ওর মা শেষ এক বছর ছিল সে হল মিত্র। তা সত্যি কথা বলব মা, মেয়ের মৃত্যুর পর মিত্তির এসে বলে গিয়েছিল। লাবণ্যর জন্যে যখন যা প্রয়োজন হবে তাকে বলতে। লোক তো খারাপ নয়। স্কুলে ভর্তির সময় সঙ্গে গিয়ে বাপ বলে নিজের পরিচয় দিয়েছে। তাই বা কে দেয়?
তিনি এখানে এখন আসেন?
না। সে বিয়ে থা করেছে, ছেলেমেয়ে হয়েছে। তবে খবর দিলে বাইরে দেখা করে। লাবণ্য তাকে দেখেছে স্কুলে ভর্তির দিন।
কিছু বলেনি?
কি বলবে। তখন ও এত বাচ্চা ছিল ব্যাপারটা বুঝতেই পারেনি। বৃদ্ধ হাসলেন।
কিছু মনে করবেন না, আপনার এখন চলে কি করে? প্রশ্নটা করা উচিত না। তবু না করে পারল না দীপা। তার কৌতূহল বাড়ছিল।
কুঁজো গড়িয়ে। যা আছে তাতে এ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে। তারপর তো সব ফক্কা। আমি যখন থাকব না। তখন কুঁজো শুকিয়ে গেলে ক্ষতি কি। আচ্ছা মা, তুমি তো নাতনির সঙ্গে কথা বললে, কি মনে হল?
কি ব্যাপারে?
বি এ এম এ চাই না, ম্যাট্রিকটা পাশ করতে পারবে তো?
আপনি যেভাবে সামলে রাখছেন তাতে ও এম এ পাশ করে যাবে, দেখবেন।
না মা! অত আশা করি না। অতি বড় বিদ্যোধরীও না পায় বর। ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে দের যে ওকে হেনস্থা করবে না। পেটে যদি সামান্য বিদ্যে থাকে তাহলে সমাজে চলতে ফিরতে পারবে। আমরা যা পাইনি ও তা পেলেই আমি খুশি।
যে বুড়ে চাকরীটি দরজা খুলেছিল তাকে বৃদ্ধ বললেন বাস স্ট্যাণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। দীপা আপত্তি করল, এখান থেকে সবাসরি কোন বাস নেই। আমার হোস্টেলে মাওয়ার। ওকে পাঠাতে হবে না, আমি একাই যেতে পারব।
বৃদ্ধা মাথা নাড়ালেন, না মা। সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে। তোমাকে কেউ যদি অসম্মান করে তাহলে আমি শান্তি পাবো না! হরি সঙ্গে যাক। ও তোমাকে ছাতুবাবুর বাজারেব কাছে পৌঁছে দিয়ে আসবে। হবি, সাবধানে যাবি।
হরি বলল, তুমি তো আমাকে চল্লিশ বছর ধরে দেখছি কোন ভয় নেই চলুন।
আজ বিকেলে যখন সেন্ট্রাল অ্যাভিনূ্য দিয়ে এই এলাকায এসে বাড়ি খুঁজছিল তখন অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিল। লোকগুলো জ্বলজ্বল করে দেখছিল তাকে। পানেব দোকান, বাড়ির বোযিাকে বসা মানুষগুলোর। একজন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কি চাই বলুন তো?
দীপার বক্তব্য শুনে লাবণ্যদের বাড়িব দকুজায পৌঁছে দিয়ে বারে বারে ঘুরে দেখছিল। লাবণ্যদের বাড়িতে ওঠার সিঁড়ি আলাদা। সিঁড়ির মুখে লেখা রয়েছে গৃহস্থদের বাড়ি। অর্থাৎ এ পাড়ায় নোটিস খুলিয়ে বলতে হয়, আমি গৃহস্থ। কিন্তু এখানে আসার সময় খান্না সিনেমাব সামনে দাঁড়ানো মেয়েগুলোর মত কাউকে নজরে পড়েনি।
হরিব সঙ্গে রাস্তায় নেমে দীপার চোখে তেমন কিছু পড়ল না। শুধু উল্টো দিকের। রকে বসা একটা লোক চেঁচিয়ে উঠল, ও হরিদা, যাচ্ছ কোথায়?
দিদিমণিকে পৌঁছে দিতে।
বাড়িউলির নাতনিকে পড়াবে বুঝি?
তোর এত খাবাবে কি দরকার?
না, না। অনেক উটকো মেয়ে তো রোজ আসছে। তা তোমাদের ঝি—এর কাছে শুনলাম বাড়িউলি মাস্টারনি রেখেছে। এ পাড়ায় তো কোনদিন দেখিনি।
দেখে রাখ। পাঁচজনকেও বলে দিবি। অন্যবিকম কিছু হলে চোখ গেলে দেব।
কথাগুলো বলে হরি সসম্রামে বলল, চলুন দিদিমণি। দাঁড়াবেন না।
হাঁটতে হাঁটতে দীপা জিজ্ঞাসা করল, লোকটা কে?
দালাল। আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। ওই বলে দেবে সবাইকে। আসুন রাস্তা পার হই। বাস গাড়ি সামলে পার্কের ফুটপাতে পৌঁছে হরি বলল, এই ফুটপাত দিয়ে ভদ্রলোকের মেয়েরা হাঁটে। বিকেলে আপনি এই ফুটপাত দিয়ে এসে এখান থেকে রাস্তা পার হবেন। কেউ কিছু বলবে না, তবু যদি বলে ফেলে আমার নাম করবেন। আমার কিন্তু জায়গাটা দেখে কলকাতার অন্য রাস্তার মতনই মনে হচ্ছে!
আমাদের বাড়িটা তো মুখে তাই অমন মনে হচ্ছে। ভেতরে চিৎপুর পর্যন্ত এখন মচ্ছব বসে গিয়েছে। মা খুব চেষ্টা করেছিল বাড়ি বিক্রি করে ভদ্রপাড়ায় উঠে যেতে। কিন্তু যারা কিনবে তারা দামই দিতে চায়। না। হরি মাথা নেড়ে কথা বলছিল।
ছাতুবাবুর বাজারের সামনে এসে দীপা বলল, এবার তুমি চলে যাও।
হরির বোধ হয়। ইচ্ছে ছিল আর একটু যাওয়ার কিন্তু দীপা আমল দিল না। বাঁ দিকের ফুটপাত ধরে সে হনহানিয়ে হেঁটে এল হেদোর সামনে। এসে স্বস্তি হল। কিন্তু তখনই কানে এল একটা গলা, নিশ্চয়ই হোস্টেলের মেয়ে। দ্বিতীয় গলা বলল, বাঙালীও হতে পারে।
সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল কয়েকজন লোক ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল, গলা দুটো শোনা গেছে তাদের মধ্যে থেকেই। খামোক গায়ে পড়ে। ঝগড়া করে কোন লাভ নেই। এরা নিশ্চয়ই উত্তব কলকাতার মেয়েদের সন্ধের পাব একা দেখতে অভ্যস্ত নয়। ফুটপাত পার হলো ওপারে যাওয়ার জন্যে রাস্তায় নামতে দীপার সমস্ত শরীরে যেন বিদ্যুৎ বয়ে গেল। সে কি করবে বুঝতে পারছিল না। ধীরে ধীরে ট্রামবাস দেখে রাস্তাটা পার হয়ে এল।
বাস স্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে ছিল অসীম। দীপা যখন রাস্তা পার হচ্ছে তখন সে দেখতে পেয়েছিল তাকে। কি করবে বুঝে ওঠাব আগেই দীপা সামনে এসে দাঁড়াল।
অসীম জিজ্ঞাসা করল, তুমি? এত রাত্ৰে?
পড়াতে গিয়েছিলাম। দীপা আবিষ্কাব করল তার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেক দিন পরে অসীমকে দেখল সে। এখন মনে হচ্ছে অনেক-অনেক দিন।
পড়াতে? তুমি টিউশনি করছ নাকি?
হ্যাঁ।
কোথায়?
সোনাগাছিতে। সেন্ট্রাল অ্যাভিন্যুর ওপরে সবল গলায় বলল দীপা।
অসীম হাঁ হয়ে গেল। সে অবাক চোখে দোপাকে দেখল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? কি করে এই টিউশনিটা পেলে?
পেয়ে গেলাম। দীপা হাসার চেষ্টা করল, তখন জিজ্ঞাসা করলে এত রাতে? রাত তো সরে শুরু হয়েছে। আরব মাথা যে খারাপ হয়েছে তা কেউ বলেনি। তুমি এখানে?
তোমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
আমার সঙ্গে?
গিয়ে শুনলাম তুমি হোস্টেলে নেই।
তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছ?
আমি কি তোমার জন্যে এব। আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকিনি?
থেকেছ। তখন সময়টা অন্যবিকম ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা কি?
তোমার সঙ্গে কয়েকটা জরুরি কথা আছে।
কিন্তু আমি এখন খুব ক্লান্ত। কথাটা বলার আগে দীপা বিন্দুমাত্র ভাবেনি। বলে ফেলে মনে হল ঠিক বলেছে। এতদিন যে স্বেচ্ছায় দূরে থেকেছে তার খেয়ালখুশি মত সে কথা বলবে কেন? দীপা ঘুরে দাঁড়াল, তোমার দরকারটা যদি খুব জরুরি হয় তাহলে পারে দেখা করতে পার। আগামীকাল আমি কলেজে থাকব।
অসীম তাড়া তাড়ি চলে এল সামনে, দীপা, প্লিজ। এত নিষ্ঠুর হয়ে না।
নিষ্ঠুর আমি! চমৎকার!
তুমি আজ আমাকে একটু সময় দাও।
বাঃ, একটু আগে বললে এত রাত্রে ফিরছি কেন? এত রাত্রে সময় দের কি করে?
কিন্তু আমার যে আজই বলা দরকার।
তোমার ইচেছমত সবসময় কাজ হবে এমন ভাবছ কেন?
বুঝতে পারছি আমি তোমার ওপর জোর করছি!
জোর করতে যে অধিকার-বোধ প্রয়োজন হয় তা তোমার নেই। তুমি নিজেই তা হারিয়েছ। যেদিন আমার মামা হোস্টেলে এসেছিলেন সেইদিন তুমি উধাও হয়ে গিয়েছিলে। আমার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। তারপর আমার ওপর দিয়ে যে ঝড় রয়ে গিয়েছে তার কোন খবর নেবার ইচ্ছে ও হয়নি তোমার। আবার আজ বলছ আমি নিষ্ঠুর।
আমি কেন উধাও হয়েছিলাম তুমি জানো না?
অমর আর জানাব দরকার নেই। আমাকে হোস্টেলে যেতে দাও।
দাঁড়াও। সেদিন তুমি যখন দারোয়ানের সঙ্গে ভেতরে চলে গেলে তখন তোমার মামা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি কে? আমার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কি? উনি নিজের পরিচয় দিতে আমি বলেছিলাম আমরা বন্ধু। উনি ঠাট্টা করে বলেছিলেন এদেশে ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় না। এটা বিলেত আমেরিকা নয়। আমি বলেছিলাম, সময় পাল্টাচ্ছে, আপনাদের ধারণাটাও বদলে নেওয়া দরকার। উনি খুব ক্ষেপে গেলেন। বললেন তিনি তোমার গার্জেন। তোমার সঙ্গে যদি আমি মিশি। তাহলে তিনি স্টেপ নেবেন। কারণ এতে তোমার ক্ষতি হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কিসের ক্ষতি? উনি বললেন, তুমি বিবাহিতা। তোমার স্বামী কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে। তোমার শ্বশুরবাড়ির সমস্ত সম্পত্তি দখল পেতে যাচ্ছ। কিন্তু এসময়, যদি একজন হিন্দু বিধবার চরিত্রে কলঙ্কেব ছাপ পড়ে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমি যদি সত্যি তোমাকে বন্ধু বলে মনে করি তাহলে তোমার উপকাবের জন্যে আর কখনও যেন দেখা না করি। সেদিন তুমি নিজেকে বিধবা বলেছিলে। বলেছিলে বিধো রাত্রে তোমার স্বামী মারা গিয়েছিলেন। আমি বিশ্বাস করতে চাইনি; ভেবেছিলাম, তুমি আমাকে পরীক্ষা করার জন্যে একটা গল্প বানিয়ে বলছি। পরে একা দাঁড়িয়ে ভেবেছিলাম যদি সত্যি হয় তাহলে আমার কি? আমি তো তোমাকে ভালবাসি, তোমার অতীত নিয়ে মার কি হবে। কিন্তু তোমার মামা যখন বললেন, কিছুদিন আগে তোমার স্বামী মারা গিয়েছেন তখন সব এলোমেলো হয়ে গেল। বুঝলাম তুমি মিথ্যে বলেছ আমাকে। আমি সহ্য করতে না পেরে চলে গিয়েছিলাম।
পাথরের মত দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিল দীপা। তার সমস্ত শরীর যেন ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছিল। কোনরকমে সে জিজ্ঞাসা করতে পারল, তাহলে আজ এলে কেন?
না এসে উপায় ছিল না।
আমি একটু বসব। দাঁড়াতে পারছি না।
তোমার হোস্টেল অবধি যেতে পারবো না? দীপার বলার ভঙ্গীতে ব্যস্ত হয়ে উঠল অসীম।
এখন আর তোমাকে ঢুকতে দেবে না। অত্যন্ত ক্লান্ত দেখাচ্ছিল দীপাকে।
এইসময় একটা ট্রাম আসছিল শ্যামবাজারের ডিপো থেকে। অসীম দীপাকে বলল, এটায় ওঠো।
কেন?
বসতে পাবাবে।
অসীমকে উঠতে দেখে দীপা অনুসরণ করল। ট্রামে যাত্রী ছিল হাতে গোনা। ওরা একেবারে সামনে এগিয়ে গিয়ে ড্রাইভারের পেছনে বসল। দীপার মনে হল সে বেঁচে গেল। হঠাৎ সমস্ত শরীর থেকে ঘাম বেরুচ্ছিল, ভিজে যাচ্ছিল এবং সেইসঙ্গে মাথা ঘোরা। বসতে পেরে তাই আরাম হল। ট্রাম চলতে শুরু করলে বাতাস লাগল মুখে। সে চোখ বন্ধ করল, হঠাৎ এভাবে শরীর খারাপ করছে কেন?
রুমালে ঘাম মুছে নাও। নিচু গলায় বলল অসীম যদিও তার কোন দরকার ছিল না। পেছনের সিটগুলো একদম খালি। ট্রাম চলার সময় যে শব্দ হয় তাতে কথা বেশী দূরে যেতেও পারে না। দীপা খুব দুর্বল হাতে ঘাম মুছল। একটা গা গুলানি ভাব পাক খাচ্ছে পেটে। শিরাগুলো ঝিমঝিম করছে। আচমকা সে আবিষ্কার করল। যদি সে অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে তাকে দেখার কেউ নেই। হোস্টেল থেকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়িতে চিঠি দেবে। কিন্তু কেউ আসবে না। দায়িত্ব নিতে। এই পৃথিবীতে যতক্ষণ শরীর ঠিক থাকে ততক্ষণ সব সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচা যায়। কাউকে তোয়াক্কা না করে একা থাকা সম্ভব যতক্ষণ শরীর তাজা থাকে। কিন্তু অসুস্থ হলেই একজন সঙ্গী দরকার হয় যে খুব কাছের মানুষ। অসীম জিজ্ঞাসা করল, কেমন লাগছে এখন?
একটু সময় নিয়ে দীপা বলল, ভাল।
ডাক্তারের কাছে যাবে?
ডাক্তার? দীপা মাথা নাড়ল, না, না। আমি ঠিক আছি।
সারাটা পথ অসীম কোন কথা বলল না। কি করে যে ট্রামটা ধর্মতলায় পৌঁছে গেল তা টের পায়নি দীপা। চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে থাকতে একটু আচ্ছন্নের মত হয়ে গিয়েছিল। কাছে কেউ চিৎকার করতেই তার চোখ খুলে গেল। দেখল ট্রামটা দাঁড়িয়ে আছে কার্জন পার্কে। কামরায় তার পাশে অসীম ছাড়া কেউ নেই। শরীরের ক্লাস্তি অনেক কমে গেছে, গা-গুলানি ভাব আর নেই। সে কথা বলল, ট্রাম যাবে না?
সামনের ট্রাম ছাড়লে এটার চান্স। আমরা ডিপোতে বসে আছি। শরীর কেমন?
ভাল লাগছে।
কি হয়েছিল বল তো?
জানি না।
অনেকক্ষণ খাওয়া দাওয়া করোনি?
না তো। সন্ধে নাগাদ একথালা খেয়েছি।
অম্বল হয়ে গিয়েছে?
না।
তুমি তো বললে টিউশনি থেকে আসছ?
হ্যাঁ। ওখানেই খেয়েছি।
কিরকম বাড়ি?
সে তোমার শুনে দরকার নেই। এখন একটু চা খেলে ভাল হত।
ভাঁড়ে চা বিক্রি করছে। খাবে?
আমি কখনও খাইনি।
গঙ্গাজলে গুড় আদা দিয়ে চা করে।
গঙ্গাজলে? যাঃ।
পাশের ছাউনির নিচে একটু লোক জ্বলন্ত উনুনে কেটলি বসিয়ে চা বিক্রি করছে। অসীম? তাকে ডেকে দুটো ভাঁড় দিতে বলল। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে আদার গন্ধ পেল দীপা। কিন্তু ভাল লাগল। শরীরটা একটু একটু করে তাজা হয়ে যাচ্ছে।
চায়ের ভাঁড় জানলা ঘেঁষে ফেলে দিয়ে অসীম বলল, এত অল্প পয়সায় বসার জায়গা, চা খাওয়া পৃথিবীর কোন রেস্টুরেন্টে পেতে না। সেই সঙ্গে বেড়ানোটা উপরি।
দেখছি তাই।
তোমার কি এরকম হঠাৎ হঠাৎ শরীর খারাপ হয়?
কখনও হয়নি।
আজ হল কেন?
জানি না। তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে—।
আই অ্যাম সরি।
কেন?
আমি না দাঁড়িয়ে থাকলে শরীর খারাপ হত না।
দীপা চুপ করে গেল। সামনের ট্রামটা এখন ডিপো ছেড়ে যাত্রা শুরু করেছে। সে লক্ষ্য করল। অসীম বসেছে তার সঙ্গে স্পর্শ বাঁচিযে। এটা ভাল লাগল। দীপা কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করল। অসীমের মুখে টানা ঘটনাগুলো শুনতে শুনতে তার অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। মামা যে ওভাবে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলতে পারে-শোনামাত্র যে উত্তেজনা মনে জন্ম নিয়েছিল। তাই তার শরীর খারাপ করে দিল। শুধু মামা নয়, একই সঙ্গে অসীমের ওপর রাগ জন্মেছিল তার। মামার মুখে যা শুনেছে তাই বিশ্বাস করে দূরে সরে গিয়েছিল অসীম। মামাকে সে সেইদিন প্ৰথম দেখল। তার উচিত ছিল দীপাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করা এই দায়িত্বটুকু পালন করার কথা ওর একবারও মনে এল না। পুরুষ জাতটা কি সন্দেহ আঁকড়ে থাকতে এত ভালবাসে? দীপা ভেবে পাচ্ছিল না।
ট্রাম আবার শ্যামবাজারের দিকে ফিরছে। সন্ধে পেরিয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ। এবার বেশ কিছু যাত্রী উঠেছেন। হোস্টেলের গেট বন্ধ হবার আগে না পৌঁছালে ঝামেলা হবেই। গ্লোরিয়ার ঘটনাটা ঘটার পর থেকে কড়াকড়ি খুব বেড়ে গিয়েছে। অসীম বসে আছে চুপচাপ। মুখ ফিরিয়ে কথা বলল দীপা, কি বলতে এসেছিলে?
না, থাক?
কেন?
তুমি অসুস্থ–।
এখন ঠিক হয়ে গিয়েছি।
অসীম নিঃশ্বাস ফেলল, আমি একটা চাকরি পেয়েছি।
বাঃ, খুব ভাল খবর সব কিছু ভুলে গিয়ে উচ্ছল হল দীপা।
তুমি খুশি?
নিশ্চয়ই। দীপা অসীমের হাতে হাত রাখল, কোথায়?
দিল্লীতে। বাবার এক বন্ধুব সোর্সে। ভাল চাকরি। এখনই তিন শো টাকা পাওয়া যাবে।
তিন শো বাপস! অনেক টাকা।
হ্যাঁ, অনেক।
আরে, এভাবে বলছি কেন?
তুমি কি চাও আমি এই চাকরি করি?
আমার চাওয়ার সঙ্গে তোমার চাকরি করার কি সম্পর্ক?
অসীম মুখ ফিরিয়ে নিল। দীপা ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। ট্রামটা খালি রাস্তা পেয়ে বেশ জোরে ছুটছে। দোকানপাট বন্ধ হতে আরম্ভ করেছে। শেষপর্যন্ত অসীম বলল, তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না?
কেন?
আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।
কি ব্যাপারে?
আমি তোমাকে সন্দেহ করেছিলাম।
সেটা যে সত্যি নয়। তার প্রমাণ কি তুমি পেয়েছ? মামার কথা সত্যি নয়। তাই বা ভাবলে কি করে? আর এসবের সঙ্গে তোমার চাকরি করারই বা কি সম্পর্ক?
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই দীপা!
নড়ে উঠল দীপা। একরাশ ভাল লাগার ঢেউ যেন তাকে নিয়ে লোফালুফি করছে।
ট্রাম ততক্ষণে মাঝপথ পার হয়ে গিয়েছে। দীপা অসীমের দিকে না তাকিয়ে বলল। কিন্তু আমি তো তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম।
আমি সব ভুলে যেতে চাই দীপা। তোমার সঙ্গে দেখা না করে আমি একটুও ভাল ছিলাম না। আমি জানি না তোমার কষ্ট হয়েছে কিনা?
হয়েছে।
তাহলে?
কি তাহলে?
ওসব কথা তুলছ কেন?
তুমি এখনই বিয়ের কথা তুলছ কেন?
আমি এক দিল্লীতে যাব না।
কেন?
না। তোমাকে কলকাতায় ফেলে রেখে আমি দিল্লীতে গিয়ে ভাল থাকব না।
কিন্তু তোমাকে তো অপেক্ষা করতে হবেই অসীম।
ও, তোমার সেই আই এ এস? ওটা এখনও মাথায় ঢুকে আছে?
আছে। সহায় সম্বলহীন বাঙালি মেয়ের ওপরে ওঠার একমাত্র পথ হল এইসব কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেওয়া অন্তত মামা কাকাবা বেফাবোন্স এখনও লাগে না।
তুমি আমাকে ব্যঙ্গ করছ?
আমি, তোমাকে, কিভাবে?
ওই যে দিল্লীর চাকরি বাবার বন্ধুর মারফত পেয়েছি বলে। আমি জানি আমার অনেক বন্ধুর কথাটা শোনামাত্ৰ বুক টাটাচ্ছে। এই বাজারে তিন শো টাকা মাইনে কজন পায়?
তুমি কি আমাকে তোমার ওইসব বন্ধুর দলে ফেলিছ?
না, না। কিন্তু তোমার কথা বলার ধরন এমন–!
অসীম, তুমি আমার একটা কথা শুনবে? ওর হাত আবার স্পর্শ করল দীপা।
নিশ্চয়ই!
তুমি দিল্লীতে চলে যাও। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাস। কিন্তু আমার সঙ্গে তোমার মিলছে না। যে কোন বিষয়ে কথা বললে মনে হয় আমাদের ঝগড়া বেধে যাবে এই অবস্থায় বেশীদিন আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব না। ভালবাসা এক জিনিস আর পরস্পরকে বুঝতে পারা আর এক জিনিস!
তুমি আবার আমার সঙ্গে খেলা করছি।
খেলা! তুমি খেলা বললে?
অসীম চট করে উঠে দাঁড়াল, শোন, আমি শুনেছি আই এ এসে ম্যারেড মেয়েরা চান্স পায় না। অতএর তোমার কোন চান্স নেই। বলে কোন জবারের অপেক্ষায় না থেকে হন হন করে গেটেব। কাছে চলে গেল। ট্রামটা বিবেকানন্দ রোডে থামতে অসীম নেমে পড়ল। তারপর একবারও না তাকিয়ে অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়ল। দীপার মাথায় তখন কিছুই ঢুকছিল না। অসীমের শেষ কথাটা তাকে যেন অসাড় করে দিয়েছে। ট্রাম ছাড়ল।