রাজার ফ্ল্যাট যেমন ফাঁকা হবে বলে ভেবেছিল রেমি, তা নয়। আসলে রাজাদের বাসায় এর আগে কখনওই আসেনি রেমি। আসার প্রয়োজনও দেখা দেয়নি। সে শুনেছে, রাজার বাবা-মা দিল্লিতে থাকে। এখানে সে একা। কিন্তু একদম একা যে নয় তা রেমি জানত না।
রাজার ফ্ল্যাটে তার এক বিধবা দিদি এবং তার মেয়ে থাকে। দিদির বয়স চল্লিশের ওপর। তার মেয়েটি যুবতী এবং দুর্দান্ত সুন্দরী। দরজা খুলে সে যখন চৌকাঠের ফ্রেমে দেখা দিল তখন বড় ম্লান হয়ে গেল রেমি।
মেয়েটিকে দেখে এমন একটা ধাক্কা লাগল রেমির মনে যে, তার এতক্ষণের দুঃসাহস ও নিয়ম ভাঙার আগ্রহ উবে গেল। মেয়েটিকে দেখামাত্র সে নিজের সঙ্গে মেয়েটির একটা চটজলদি তুলনা সেরে নিল মনে মনে। না, সে সুন্দরী হলেও এ মেয়েটির কাছে দাঁড়াতেই পারবে না।
রাজাকে দেখে মেয়েটি একটু অবাক হয়ে বলল, তুমি এই দুপুরে ফিরলে যে!
এমনি।–বলে রেমির দিকে চেয়ে রাজা বলে, আমার ভাগনি। জয়িতা।
জয়িতা রেমির পরিচয় পেয়ে চোখ বড় বড় করে বলে, ধ্রুবমামার বউ! উঃ, কী দারুণ!
রেমি মৃদু একটু হেসে বলে, দারুণ কেন?
জয়িতা দরজা ছেড়ে ভিতরের দিকে সরে গিয়ে বলল, আসলে দারুণ হল ধ্রুবমামা। আমরা সবাই কমামার ভক্ত।
এ সময়ে ধ্রুবর প্রসঙ্গ ভাল না লাগারই কথা রেমির। কিন্তু আশ্চর্য–লাগল। জয়িতা তার হাত ধরে ড্রয়িংরুমের একধারে দেয়ালে একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট মুরালের নীচে চমৎকার নরম ডিভানে নিয়ে গিয়ে টেনে বসাল। বলল, তোমার কথাও ভীষণ শুনি। তুমি তো দারুণ সুন্দরী।
তোমার কাছেও?
আমি! আমার রংটাই যা ফরসা। চুল নেই, দেখো না!–বলে নিজের চুল সামনে টেনে এনে দেখায় জয়িতা। বলে, তুমি হচ্ছ সত্যিকারের সুন্দরী। আমি দেখন সুন্দরী।
রেমি রাজার সঙ্গে কুলের মুখে কালি দিতে এসেছিল এখানে। মনটা ছিল উত্তেজনা ও রাগে টানটান। ধ্রুব তাকে বলেছে, গো আহেড। ভিতরটা পাগল-পাগল ছিল সেই থেকে। হঠাৎ সব ভুলে গিয়ে খুব হাসল রেমি, বলল, তুমি তো বেশ কথা বলো!
জয়িতা আচমকা রেমিকে দু’হাতে ধরে বলল, জানো আমরা সবাই তোমাকে হিংসে করি?
আমাকে? আমাকে হিংসে করার কী আছে?
অনেক কিছু আছে। ওরকম জঁদরেল শ্বশুর, অত টাকা, ক্ষমতা। কিন্তু আমরা তোমাকে হিংসে করি তোমার স্বামী-ভাগ্যে। ধ্রুবমামার মতো একজন প্লেবয়কে কী করে বাগালে বলো তো!
প্লে-বয় কী?
ওঃ, তুমি তো আবার সেকেলে।
মোটেই সেকেলে নই। ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী। তবে যাকে প্লে-বয় বলে, ও তো ঠিক তা নয়।
নয় বুঝি!
মোটেই নয়। বাইরে থেকে মনে হয়। আমরা তো বাইরে থেকেই মনে করি। তুমি মামি এবার ভিতরের খবর একটু আধটু বলো। রাজা ঘরে ঢোকবার পরই ভিতরের দিকে কোথায় যেন গেছে। এখনও দেখা নেই। তাতে বেঁচে গেছে রেমি। বাজার সঙ্গে নিভৃত হওয়ার চিন্তাটাই যেন তার কাছে অস্পৃশ্য মনে হচ্ছে। কেন যে এরকম হল তা বুঝল না রেমি। কিন্তু জয়িতাকে ধ্রুবর কথা বলার মধ্যে যে শিহরিত আনন্দ পেতে লাগল সে তা বলার নয়।
একদম পাগল। বুঝলে, একদম পাগল! যখন ভাল তখন ওর মতো ভাল নেই, আবার যখন বিগড়ে যায় তখন সেই বাঁকা বাঁশকে সোজা করার সাধ্যি কারও নেই।
জয়িতা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে শুনতে বলে, খুব পার্সোনালিটি ওর, না?
খুব।
আমরা জানি। নইলে কৃষ্ণকান্ত চৌধুরীকে ঘোল খাওয়ানো তো সোজা নয়। তুমি একটা কথা জানো, বউদি?
কী কথা?
বললে আমাকে ঘেন্না করবে না তো?
ওমা! তোমাকে ঘেন্না করার কী আছে?
আছে। বললে হয়তো ভাববে, মেয়েটা কী রে।
বলোই না।
আমি কিন্তু একরত্তি বয়েস থেকে ধ্রুবমামাকে বিয়ে করার জন্য পাগল।
খুব হেসে উঠে রেমি বলে, যাঃ।
সত্যি। বিশ্বাস করো। আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্কটা ফিলমজি। লতায়-পাতায় মামা ভাগনি। আসলে বিয়ে-টিয়ে অনায়াসেই হতে পারে। তাই আমি বরাবর ভেবে রেখেছিলাম বড় হয়ে ধ্রুবমামাকেই বিয়ে করব।
ওমা, করলে না কেন?
করব কী করে? লোকটা আমাকে পাত্তা দিল নাকি?
দেয়নি! তোমার মতো সুন্দরীকে যে পাত্তা না দেয় সে বোকা।
জয়িতা চোখ বড় বড় করে বলে, আর কী ডাঁটিয়াল জানো! আমি চিঠি দিতাম, ও জবাব পর্যন্ত দিত না।
চিঠি দিতে? কেন, দেখা হত না?
দেখা হলে কী হবে? এমন গম্ভীর হয়ে ডাঁট নিয়ে থাকত যে কাছে ঘেঁষতেই পারতাম না। তাই একদিন চিঠি দিলাম।
প্রেমপত্র?
তাছাড়া কী আর। তবে খুব ভিতু প্রেমপত্র। পরপর দু’বার চিঠি দিয়ে একটাও জবাব পেলাম না।
খোঁজ নিয়েছিলে চিঠি পেয়েছে কি না।
নিইনি আবার! চিঠি পেয়ে নাকি একটু ভ্রু কুঁচকেছিল। তারপর মুচকি একটু হেসেছিল দয়া করে। কেন? তোমাকে বলেনি সেসব কথা?
না, কোনওদিন বলেনি।
আসলে ধ্রুবমামার দোষ নেই। বিয়ের আগে ও অনেক প্রেমপত্র পেত। একতরফা। যতদূর জানি, নিজে কোনও মেয়েকে পাত্তা দিত না কোনওদিন? কারা প্রেমপত্র দিত জানো? আমার মতো অনেক মেয়ে।বলেই জয়িতা হঠাৎ মুখটা কানের কাছে এনে বলল, তাদের মধ্যে বউদি টউদিও আছে, কাজিনও আছে। তোমার বরকে পারলে মেয়েরা ছিঁড়ে খায়।
রেমি একটু অবাক হয়ে বলে, একজনের জন্য এতজন পাগল!
পাগল মানে দারুণ পাগল। লোকটা যে দারুণ অ্যাট্রাকটিভও সেটা তো মানবে। শুধু চেহারাটাই নয়। আরও কিছু আছে। কখনও টের পাও না।
আমি!–রেমি খুব অসহায়ের মতো বলে, আমি ঠিক ওকে বুঝতে পারি না।
কিন্তু তোমার মনে হয় না ও তোমাকে হিপনোটাইজ করে রেখেছে।
তা বোধহয় হয়।–রেমি একটু ভেবে বলে।
ওর ওই হিপনোটিজমটাই সাংঘাতিক। কী একটা আছে, বোঝা যায় না। মাঝে মাঝে মনে হয় আনফ্যাদমেবল।
ও কোনও মেয়ের সঙ্গে কখনও মিশত না?
জয়িতা একটু ভেবে বলে, আমি তত তেমন কিছু জানি না। ধ্রুবমামা একটু অহংকারী মানুষ। এ ধরনের লোকেরা কখনও মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে না, মেয়েদের কখনও কমপ্লিমেন্ট দেয় না। মেয়েদের সঙ্গ বেশিক্ষণ সহ্যও করতে পারে না। ভাবে, বেশিক্ষণ মেয়েদের সঙ্গ করলে পুরুষের পৌরুষ কমে যায়।
রেমি খুব হাসতে থাকে। বলে, বোধহয় তাই আমারও সঙ্গ করে না।
তুমি কিন্তু ভীষণ লাকি। অনেকের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিয়েছ। কত মেয়ে যে তোমাকে হিংসে করে!
তুমি করো?
করতাম। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে হিংসে করাই যায় না।
কেন?
কী যে মিষ্টি না তুমি! ধ্রুবমামাও কম লাকি নয়।
পতিগর্বে এখন রেমি রমরম করছে ভিতরে-ভিতরে। সে তো জানত না, ধ্রুব নামক এক পাথরের বিগ্রহে এত কিশোরী ও যুবতী পুজো দিতে চেয়েছে। সেই দুর্লভ পুরুষ তার। রেমির বুকে হঠাৎ খামচে ধরল এক ভয়। তার?
মনের ভাব অনুযায়ী রেমির মুখের ভাব এত সহজেই পালটায় যে, লোকের চোখে ধরা পড়ে। জয়িতা তার হাত ধরে বলল, তোমার মনে দুঃখ দিলাম না তো!
না।–ক্ষীণ স্বরে রেমি বলে, দুঃখ দেওয়ার মতো কিছু তো বলোনি।
কথা অনেক হয়েছে, এবার চা খাবে? দাঁড়াও মাকে ডাকি। মা বোধহয় ঘুমোচ্ছে।
রেমি হঠাৎ জয়িতার দিকে চেয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, আমি বাড়ি যাব।
বাড়ি যাবে! এই তো এলে।
না, শোনো। আমার বাড়ি যাওয়া ভীষণ দরকার। আমি একটা জরুরি কাজ ভুলে গিয়েছিলাম।
মিথ্যে কথাটা খুব ভাল বলতে পারে না রেমি। কিন্তু তার মুখের করুণ ভাবটায় কোনও ফাঁকি ছিল না। জয়িতা তার মুখটার দিকে কয়েক পলক চেয়ে থেকে হঠাৎ হেসে ফেলে বলে, কী যে পাগলি না একটা তুমি! খুব ভাল মিলেছে বোধহয় তোমাদের দুটিতে। কী কাজ ভুলে এসেছ বলল
তো!
সে আছে একটা।
একটুও বসবে না?
না গো, বড় জরুরি ব্যাপার।
রাজামামা যে নিয়ে এল তোমাকে, দাঁড়াও মামাকে তা হলে ডাকি।
রাজা কী করছে?
নিজের ঘরে গেছে। বোধহয় জামাকাপড় পালটাতে। ডেকে আনছি, বোসো।
রেমি প্রমাদ গুনল। রাজা কি রেগে যাবে তার ওপর? খুব রেগে যাবে? যাক। রেমি পারবে না। সে ধ্রুবর বউ। ধ্রুবর বউ। আর কারও হতে পারবে না সে। তাকে ছাড়ুক, মারুক, ভাঙুক ধ্রুব।
রেমি উঠে দাড়িয়ে বলল, তুমি রাগ কোরো না, জয়িতা। একটা কথা বলব?
বলোই না।
তুমি আমার সঙ্গে চলো।
ও বাবা, বাঘের ঘরে ঘোগকে ঢোকাবে?
কেন নয়? বাঘ তো পাথরের। চলল।
খুব হাসল জয়িতা। তারপর বলল, সত্যি কথা বলতে কী মামি, ইস তোমাকে মামি-ফামি ডাকতে ইচ্ছেই করে না— আচ্ছা, বউদি ডাকব? ডাকলে ক্ষতি কী? ধ্রুবমামা তো আর সত্যিকারের মামা নয়। ডাকব?
ওমা! অত ফর্মালিটির কী আছে? তুমি আমাকে রেমি বলে ডেকো, আমি খুব খুশি হব।
বাবাঃ বাঁচলাম। তোমার মতো একটা বাচ্চা মেয়েকে নাম ধরেই ডাকা সবচেয়ে ভাল।
চলো তো এখন। শাড়িটা পালটে নাও।
সত্যি যাব?
যাবে। না নিয়ে আমি নড়ছি না।
তা হলে পনেরোটা মিনিট সময় দাও। এই প্রথম ধ্রুবমামার সঙ্গে সত্যিকারের আলাপ হয়ে যেতে পারে। একটু সাজি আজ? অবশ্য যদি তুমি পারমিশন দাও।
দিচ্ছি। কিন্তু তোমার মায়ের ঘর কোনটা?
কেন, যাবে?
একটু আলাপ করে যাই।
আসলে এইভাবে নিজের পাহারার ব্যবস্থা করছিল রেমি। কারণ অস্থির ও পাগল রাজা আড়ালে কোথাও অপেক্ষা করছে অধৈর্য হয়ে।
এসো।–বলে ডাইনিং কাম ড্রয়িং পেরিয়ে একটা ঘরে তাকে নিয়ে গেল জয়িতা।
তার মা ঘুমোচ্ছিল ঠিকই। রাজার এই দিদি মোটেই প্রবীণা নন। বয়স সম্ভবত চল্লিশের ধার ঘেঁষে। চমৎকাব বাঁধুনি শরীরের। মেয়ের মতোই সুন্দর চেহারা। হঠাৎ মা আর মেয়েকে দুই বোন মনে হবে।
পরিচয় পেয়ে দিদি তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে একেবারে কাছটিতে বসিয়ে বললেন, তুমি ধ্রুবর বউ! ও বাবা!
এই অবাক হওয়া এবং চমকে যাওয়ার মধ্যে একটা সমীহ এবং ভয়ের ভাব আছে। রেমি অনেক আগে থেকেই এটা টের পেয়ে আসছে। ধ্রুবর বউ যেন কী সাংঘাতিক একটা ব্যাপার।
দিদি বললেন, আমরা তোমাদের বাড়িতে খুব একটা যাইনি। আত্মীয়তা তো তেমন কাছের নয়। তবে সব খবর রাখি।
রেমি বিনীতভাবে একটু হাসে।
দিদি বলেন, তোমরা হলে ভি আই পি। তবে আমার স্বামী যখন মারা যান তার আগে কৃষ্ণকান্ত চৌধুরী অনেক সাহায্য করেছিলেন। সে কথা কোনওদিন ভুলব না।
রেমি এসব কথায় আবার আত্মস্থ হয়ে যায় পুরোপুরি। তার শ্বশুর কৃষ্ণকান্ত চৌধুরী, যাকে এক ডাকে সবাই চেনে, যার ক্ষমতার হাত বহু দুর প্রসারিত, তার স্বামী ধ্রুব চৌধুরী, যে বহু যুবতীর কামনার লক্ষ্যস্থল ছিল। তা হলে সে তো কম কিছু পায়নি জীবনে।
কিছুক্ষণ কথা বলতে না বলতেই আচমকা রাজা এসে ঘরে ঢুকল।
বউদি, একটু শুনে যাও।
দিদি শশব্যস্তে বলে, যাও। কথা বলো।
রেমি ধীরে ধীরে ওঠে। রাজা তাকে নিয়ে আসে দক্ষিণের একটা ফাঁকা ঘরে। সেখানে খাটে বিছানা পাতা। জানালা একটু ভেজানো।
কী, বলো!
গল্প করার জন্যই আজ এসেছিলে বুঝি!
রেমি অবাক হয়ে বলে, তুমি তো বললানি যে বাসায় দিদি আছেন, জয়িতা আছে।
ওরা থাকলেই বা কী?
ছিঃ রাজা, তোমার মাথার ঠিক নেই।
ঠিক নেই তা জানি। কিন্তু পাগলামি ছাড়া বাঁচাও তো যায় না। এত রেক্ট্রিকশন কি মানা যায়?
আচ্ছা, মানছি। কিন্তু আজ নয়। আজ আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
তোমাকে আমি চিনি, রেমি।
মোটেই নয়। তোমার উচিত ছিল বাড়ির সিচুয়েশনটা আমাকে জানানো।
জানালে কী হত? তুমি আসতে না?
আসতাম। তবে অন্যরকম মন নিয়ে।
তোমার মনটা সবসময়েই সেই অন্যরকম। তুমি কখনও কুট্টিদাকে ভুলতে পারবে না।
কী করে বুঝলে?
জয়িতার সঙ্গে তোমার কথাবার্তা আমার কানে আসছিল।
তাতে কী প্রমাণ হল?
রাজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তোমার সহমরণ কে ঠেকাবে বলল তো!
সহমরণ! কী যে বলো!
ঠিকই বলছি। কুট্টিদাকে পেয়েছে মৃত্যুপ্রেম। তোমারও পরিণতি তাই।
মত্যুপ্রেম! সেটা আবার কী?
কুট্টিদাকে যে মরণে ধরেছে তা কি তুমি টের পাও না? নইলে কেউ ওরকম বেপরোয়া আর বেহেড হতে পারে! না কি ওরকম যা খুশি তাই করে বেড়ায়?
রেমি রাজার দিকে অপলক চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ক্লান্ত স্বরে বলল, তোমরা পুরুষরা মেয়েদের কাছে যে কী চাও তা সঠিক জানো না। মাঝে মাঝে চাওয়াটা আকাশে উঠে যায়।
তাই নাকি?
রেমি হাতের পিঠ দিয়ে চোখদুটো মুছে নিয়ে বলল, এরপর একদিন দেখবে আমাকে পাগলা গারদে পাঠানো হয়েছে।
রাজা একটু হেসে আচমকা রেমিকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে, না। তোমাকে পাগল হতে দেবই না আমি।
ছাড়ো ছাড়ো! ছিঃ। —বলে এক ঝটকায় সরে যায় রেমি। তারপর চাপা হিংস্র গলায় বলে, খবরদার আমাকে নিয়ে খেলা করতে চেয়ো না কোনওদিন।
কী বলছ, রেমি?
ওরকম করছ কেন? আমি কি দেহসর্বস্ব? শরীর ছাড়া আমার কিছু নেই? —রেমি রাগে গড়গড় করতে করতে বলে।
শরীর! শরীরের কথা উঠছে কেন? ভালবাসা–
ওটা মোটেই ভালবাসা নয়। শালীনতাবোধ বাদ দিয়ে ভদ্রতার ধার না ধেরে ও কী রকম ভালবাসা?
আমরা তো ভারচুয়ালি স্বামী-স্ত্রী, রেমি।
মোটেই নয়।
নয়?
না, আমি এখনও ওরকম করে ভাবতে পারি না।
তবে কী ভাবে?
রেমি একটা চেয়ার সামনে পেয়ে বসে পড়ল। তারপর একটু দম নিয়ে বলল, আমি খুব টায়ার্ড। এখন কোনওরকম জেদ বা জোর খাটিয়ো না। আমার ভাল লাগবে না।
বেশ। আর কী?
আর কিছু নয়। শুধু বলি, পুরুষের খেলার পুতুল হয়ে থাকার জন্য রেমি নয়। তোমার কুট্টিদা ক’দিন আগে আমাকে বলেছিল ডিভোর্স করে আবার আমাকে নিয়ে থাকবে। তবে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নয়। ও নাকি বিয়েতে বিশ্বাসী নয়।
বলেছিল?
হ্যাঁ, ওটা ওর পাগলামি কিন্তু আমাকে তাতে সায় দিতে হবে। আবার তুমি আমাকে একঘর আত্মীয়স্বজনের ভিতর বাড়িতে নিয়ে এসেছ একটা চূড়ান্ত কিছু করতে। আমি এসব বুঝতে পারছি না। ভালও লাগছে না।
আচ্ছা রেমি, ক্ষমা চাইছি। তোমার মনের অবস্থাটা ঠিক জানতাম না।
রেমির যে মন আছে সেটা জানো তো! তা হলেই হবে।
যাচ্ছ তা হলে?
যাচ্ছি।–বলে রেমি উঠল।
একটা কথা শোনো, রেমি। রাগ পুষে রেখো না। যদি তোমার শরীর আর-কোনওদিন ছুঁতে না-ও দাও, মেনে নেব। কিন্তু ভুল বুঝাে না। আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি।
জানি। বার বার ওকথা বলো কেন? ভালবাসার কথা অত বলতে নেই। তোমার কুট্টিদা আজ অবধি কখনও বলেনি।
কুট্টিদা তোমাকে ভালবাসেও না তো, রেমি।
কে বলল বাসে না? বাইরের লোক কি টের পায় কখনও? আমি পাই।