1 of 3

০২৮. বেলুন দিয়ে সাজানো একটা জিপগাড়ি

একদিন সকালবেলা বেলুন দিয়ে সাজানো একটা জিপগাড়ি ঘ্যাঁস করে এসে থামল রেমির বাপের বাড়ির সামনে। হুডখোলা জিপ। চারদিকে কয়েক ডজন গ্যাসবেলুন মাথা ভোলা দিয়ে আছে। গাড়িতে জনা কয়েক লোক ঠাসাঠাসি করে বসা। প্রত্যেকের চেহারাই খুনির মতো। চোখ লাল, মুখ গম্ভীর। তবে তারা সব চুপচাপ বসে সিগারেট টেনে যেতে লাগল।

জিপ থেকে নামল খাটো মজবুত চেহারার একটা ছেলে। পা কিছু টলটলায়মান। নেমেই টাল্লা খেয়ে পড়তে গিয়েও জিপের কান ধরে সামলে গেল। জামার বুকের চারটে বোতাম খোলা। কালো কারে বাঁধা একটা ধুকধুকি ঝুলছে গলায়।

নেমেই ছেলেটা চেঁচিয়ে বলল, এই স্‌সালা শুয়োরের বাচ্চা জয়ন্ত, বেরিয়ে আয় স্‌সালা! বেরিয়ে আয়! বাপের বিয়ে দেখাব আজ। বেরিয়ে আয় বাপ!

গোটা পাড়াটা এই চেঁচানিতে হতভম্ব হয়ে গেল। জানালা দরজা খুলে কয়েকটা মুখ উঁকি মেরেছিল। সভয়ে সরে গেল আবার। বাজারের যাত্রীরা সিটিয়ে রাস্তার ধার ঘেঁষে জোর কদমে পেরিয়ে যেতে লাগল জায়গাটা।

আব্বে জয়ন্ত! এই সালা হারামির বাচ্চা! বেরিয়ে আয় বাপের ছেলে হয়ে থাকিস তো!–ছেলেটা তার ভরাট গমগমে গলায় চেঁচাতে থাকে।

রেমির বাবা সদর খুলে চৌকাটে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দৃশ্যটা দেখে বললেন, কী হয়েছে? চেঁচাচ্ছেন কেন?

ছেলেটা বুক চিতিয়ে বলল, বেশ করব চেঁচাব। আপনার ছেলেকে বের করে দিন।

কেন, ও কী করেছে?

বহুত খারাপ কাজ করেছে। সেসব আমরা বুঝব। আগে বের করে দিন।

রেমির বাবার কেমন যেন ছেলেটাকে চেনা-চেনা লাগছিল। ধরতে পারছিলেন না। চেঁচামেচি এবং ঘটনার আকস্মিকতায় তার শরীরে বশও নেই। হাঁ করে ঘটনাটার অর্থ ধরার চেষ্টা করে বললেন, জয়ন্ত বাড়ি নেই।

জয়ন্ত বাড়িতেই ছিল এবং সামনের ঘরে। ঘুমোচ্ছিল। সে রোজই দেরিতে ওঠে। ঘুম খুবই গাঢ়। চেঁচামেচি শুনে উঠল এবং ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় নিল। তারপর দরজার দিকে এগোতে যেতেই কোথা থেকে তার মা এসে পথ আটকাল, সর্বনাশ! কোথায় যাচ্ছিস? ভিতরের ঘরে যা! যা শিগগির? ওরা খুনে।

কে কিছু লোক সকালে তাকে খুন করবে তা বুঝতে পারছিল না জয়ন্ত। মাথা এখনও ঘুমের ধোঁয়াটে ভাবটা কাটিয়ে ওঠেনি। তার বাবা দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

মা তাকে প্রায় হাত ধরে টেনে ভিতরের ঘরে নিয়ে এল, যা করার উনি করছেন। তোকে যেতে হবে না।

বাইরের ছেলেটা তখন মুখ ভেঙিয়ে বলছে, বাড়ি নেই, না? বাড়ি নেই তোত কোথায় রাত কাটাতে গেছে? হাড়কাটা না সোনাগাছি? বেরোতে বলুন হারামিকে। ওর সঙ্গে আমাদের হিসেব নিকেশ আছে।

রেমির বাবা তার প্রেশারের ঊর্ধ্বগতি টের পাচ্ছেন। হাত পা কাঁপছে। মাথাটা ঘুরতেও লেগেছে হঠাৎ। বললেন, ও তো কোনও অন্যায় করেনি। কেন ওকে খুঁজছেন আপনারা?

অন্যায় করেনি মানে? আমাদের দোস্তের নামে ওর দিদির কাছে গিয়ে চুকলি খায়নি স্‌সালা? ক্যারেকটারলেস বলেনি? স্‌সালাকে এমনি যদি বের না করেন তবে বহুত খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু! আমরা ঘরে ঢুকে টেনে বের করব। কোনও শুয়োরের বাচ্চা আটকাতে পারবে না।

রেমির বাবা এত মুখোমুখি এরকম ঝঝ কখনও সহ্য করেননি। দরজাটা চেপে ধরে নিজেকে। দাড় করিয়ে রেখে কাতর স্বরে বললেন, ঠিক আছে যদি কিছু বলে থাকে, তবে আমি ওকে শাসন করব।

কীসের শাসন, মশাই? আপনি বাপ না ভেড়া? আপনার মতো ধ্বজভঙ্গ বাপ পারবে ওসব ছেলেকে শাসন করতে? ওসব বড়কা বড়কা বাত ছাড়ুন, জয়ন্তকে ছেড়ে দিন আমাদের হাতে। টাইট দিয়ে দিচ্ছি।

পাড়াটা প্রথমে ভড়কে গেলেও একেবারে নাকের ডগায় এরকম ঘটনা বেশিক্ষণ চললে মাতব্বররা হস্তক্ষেপ করেই থাকেন। জয়ন্তর বন্ধুবান্ধবও আছে। তবে এদের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো কেউ নয়। তবু দু-চারজন লোক এগিয়ে এল।

কী হয়েছে ভাই? জয়ন্ত কী করেছে ভাই? আরে অত চটছেন কেন, আমরাও তো পাড়ার পাঁচজন আছি।

রেমির বাবা হঠাৎ ছেলেটাকে চিনতে পেরেছেন। তাঁর গুণধর জামাই ধ্রুবর বন্ধু। এইসব বন্ধুই এখন ধ্রুবকে চালায়, আর ধ্রুবও বোধহয় এই স্তরেই নেমে গেছে। বিয়ের দিন এই ছেলেটা দশটা ডেভিল চপ চেয়ে নিয়ে পাতে চটকে ফেলে গিয়েছিল, সব মনে পড়ছে তার।

পাড়ার লোকেদের উদ্দেশে ছোকরা একটা ছোট বক্তৃতা ঝাড়ল। সারমর্ম হল, তার দোস্ত অর্থাৎ এ বাড়ির জামাই একজন অত্যন্ত কারেক্টারগুলা লোক। সবাই তাকে চেনে। আর তারই আপন শালা সেই ভগ্নীপতিকে ক্যারেক্টারলেস বলেছে এবং ঘর ভাঙার জন্য চুকলি খেয়েছে। বলুন মশাইরা এটা কী ধরনের ভদ্রতা!

রেমির বাবা দরজাটা খোলা রেখেই ঘরের সোফায় এসে বসে পড়লেন। কান-টান বড্ড গরম। বুকে একটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ঘাম দিচ্ছে শরীরে।

ভিতরের ঘরে জয়ন্ত রুখে রুখে উঠছে, আ! ছাড়ো না মা, এটা আমাদের পাড়া। মাস্তানি করে চলে যাবে কাজটা অত সহজ নয়। আমাকে বেরোতে দাও।

মা অবশ্য তা দিল না। দড়াম করে একটা দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

বাইরে ছোকরাটা তখনও বক্তৃতা চালিয়ে যাচ্ছে। জিপের অন্য লোকগুলো একদম পাথরের মতো চুপ। তারা বাকতাল্লা জানে না। কাজে নেমে পড়ার দরকার হলেই নেমে পড়বে।

পাড়ার মুরুব্বিরা বিস্তর বিনয়-টিনয় দেখালেন, জয়ন্তর হয়ে ক্ষমা চাইলেন।

ছেলেটা বলল, স্‌সালার মুরগির কলজে। বেরোল না। কিন্তু মশাই, আমরা শেষ ওয়ার্নিং দিয়ে যাচ্ছি, এরপর এরকম হলে লাশ ফেলে দিয়ে যাব।

রেমির বাবা মাথায় হাত চেপে বসে রইলেন। জামাই যেমন ছিল ছিল, কিন্তু কেলেঙ্কারির পর পাড়ার কারও জানতে আর বাকি রইল না তার জামাইটি সত্যিই কেমন। মন্ত্রীর ছেলে বলে তো আর লোকের মুখ চাপা থাকবে না।

জিপটা অবশেষে আবার স্টার্ট নিল এবং চলে গেল।

রেমির বাবা উঠে সদর দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।

রেমি খবরটা পেল দুপুর নাগাদ। টেলিফোনে। বাপের বাড়ির পাড়ার একটা চেনা ছেলে টেলিফোনে বলল, রেমিদি, যদি পারেন তো একবার চলে আসুন। মেলোমশাই খুব অসুস্থ।

অসুখ! কী হয়েছে? —রেমির বুক কেঁপে ওঠে।

মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক।

কখন হয়েছে?

আজ সকালে একটা দারুণ হাঙ্গামা হয়ে গেছে বাড়িতে। তারপর থেকেই শরীর খারাপ। দুপুরে খাওয়ার সময় বুকে ব্যথা উঠে যায়।

এখন? এখন কেমন?

ব্যথা হচ্ছে খুব। ডাক্তার এসেছে। আপনাকে খুঁজছেন কেবল।

এক্ষুনি যাচ্ছি। সকালে কীসের হাঙ্গামা হয়েছে?

ওঃ! সে এসে শুনবেন।

মারামারি নাকি?

না। জামাইবাবুর একদল বন্ধু এসেছিল জয়ন্তদাকে খুন করতে।

কী বলছিস যা তা?

বিশ্বাস করুন। জিপগাড়িতে জনা দশ-বারো গুন্ডা। সে কী চেঁচামেচি আর গালাগাল।

জয়ন্তকে মেরেছে?

না, মাসিমা আটকে রেখেছিলেন ঘরে।

কেন মারতে এসেছিল?

তা জানি না। আপনি পারলে চলে আসুন।

যাব তো ঠিকই। কিন্তু ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারছি না।

এলেই সব শুনতে পাবেন।

রেমি ফোন রাখল। তারপর আবার ফোন তুলে ধ্রুবর অফিসে ডায়াল করল।

শোনো, বাবার হার্ট অ্যাটাক!

হার্ট অ্যাটাক! কখন হল?

দুপুরে। তুমি একবার যাবে না?

খুব সিরিয়াস কেস নাকি?

তা জানি না। এইমাত্র পাড়ার একটা ছেলে ফোন করেছিল। তোমার কয়েকজন বন্ধু নাকি আজ আমাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা করেছে। জয়ন্তকে নাকি খুন করতে গিয়েছিল।

আমার বন্ধু?–ধ্রুবর গলায় রাজ্যের বিস্ময়।

বলল তে।

যাঃ, আবোল-তাবোল যে কী বলে!

সেই থেকেই নাকি বাবার হার্ট অ্যাটাক।

আমার যাওয়া দরকার বলছ? যাওয়া উচিত। ঠিক আছে। তুমি চলে যাও। আমি জরুরি একটা কাজ সেরে যাচ্ছি। জয়ন্তকে কি তুমি পছন্দ করো না?

সে কী? কুটুম মানুষ, অপছন্দের কী আছে? অ্যাকচুয়্যালি ওকে তো আমি এক-আধবারের বেশি দেখিওনি। পছন্দ বা অপছন্দ কোনওটাই করার প্রশ্ন ওঠে না।

তবে ছেলেটা ওকথা বলল কেন? তোমার বন্ধুরা—

আরে দূর! তুমিও যেমন। আমার বন্ধুরা তোমার বাড়ি গিয়ে হাঙ্গামা করবে কেন? তারা কি জানে না যে ওটা আমার শ্বশুরবাড়ি?

রেমির তবু সন্দেহ থেকে যায়। বলে, তুমিই ওদের পাঠাওনি তো?

কী যে বলো রেমি!

রেমি ফোন রেখে উদ্‌ভ্রান্তের মতো বাইরের পোশাক পরে নিল। ট্যাকসি ডেকে আনল চাকর। বাপের বাড়িতে ঢুকেই অল্পক্ষণের মধ্যে রেমি টের পেল, বাবার অসুস্থতা যতটা নয় তার চেয়ে। ঢের বেশি আর-একটা জিনিস এ বাড়ির আবহাওয়াকে ভারী করে রেখেছে। তা হল ভয়। সকলের চোখে মুখেই একটা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। এবং আরও যেটা চিন্তার কথা, সবাই তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।

বাবাকে সেডেটিভ দেওয়া হয়েছে। ঘুমোচ্ছন। ডাক্তার বলে গেছে অ্যাটাক মাইলড বটে, তবে হার্ট অ্যাটাক যে তাতে সন্দেহ নেই। খুব সাবধানে রাখা দরকার।

রেমি বোকার মতো কিছুক্ষণ তার বাবার বিছানার পাশে বসে রইল। কী করবে ভেবে পেল না।

জয়ন্ত বেরিয়েছিল ওষুধ আনতে। ফিরল। ওষুধগুলো বাবার বিছানার পাশে টেবিলে রাখল। রেমির দিকে তাকালও না। বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

পিছুপিছু এসে রেমি ডাল, জয়, শোন।

জয়ন্ত বিরক্ত মুখে বলল, বল।

কী হয়েছে রে? তোকে নাকি কারা মারতে এসেছিল সকালে।

সে আর শুনে কী করবি? কিছু করতে পারবি?

আগে তো শুনি।

জামাইবাবুর কীর্তিমান বন্ধুরা এসেছিল। জিপে করে। পাড়ায় ঢি ঢি পড়ে গেছে।

ওরা এসেছিল কেন?

আমার লাশ ফেলবে বলে।

তুই ওদের কী করেছিস?

জয়ন্ত তেতো মুখে বলল, তোকে একটা কথা বলব? তুই আমাদের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখিস। তাতে তোর ভাল হবে কি না জানি না, কিন্তু আমরা স্বস্তি পাব।

ও কথা বলছিস কেন? আমার কী দোষ?

তোর দোষ তুই বোকা। ভীষণ বোকা। ওই স্কাউড্রেল ধ্রুব চৌধুরীকে তুই অগাধ বিশ্বাস করিস। একটা ট্রেচারাস হামবাগ, লুজ ক্যারেক্টার লোক। সেদিন তোকে ছোট ভাই হিসেবে কয়েকটা কথা বলেছিলাম, সেগুলো তুই ওর শনে তুলেছিস।

তাতে কী? তুলব না?

তোল ক্ষতি নেই, কিন্তু ব্যাপারটাকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিস।

তুই তো বললি ওকে তোর ভয় নেই।

জয়ন্ত মাথা নেড়ে বলে, ভয় নেই, কিন্তু ৫ ঘন্না আছে। আই হেট হিম।

রেমির চোখে জল আসার উপক্রম। সে ধরা গলায় বলল, সব দোষই আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছিস কেন? আমি তো ওকে পছন্দ করে বিয়ে করিনি। বাবা নিজে দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছে। ও ভাল না খারাপ তা কি জানতাম?

এখন তো জানিস!

রেমি চোখের জল ফেলতে ফেলতেই মাথা নেড়ে বলল, না, এখনও জানি না। তবে মেয়েটাকে নিয়ে ও পালায়নি, একজনের কাছে পৌঁছে দিতে গিয়েছিল।

হ্যাঁ, দারুণ মহৎ লোক তো। তোকে ও যা বোঝায় তাই জলের মতো বিশ্বাস করিস। তাই না? ওইটেই তোর দোষ। ধ্রুব চৌধুরী আজ যে কাণ্ড করেছে তাতে ওর ফাঁসি হওয়া উচিত।

আমি ওকে এমন কিছু বলিনি যাতে তোকে ওর বন্ধুরা মারতে আসবে।

এল তো! আর বন্ধুদের সব স্ট্যান্ডার্ড কী! সাতসকালেও ভকভক করে মদের গন্ধ বেরোচ্ছে মুখ থেকে। প্রত্যেকটার স্ট্যাম্পমারা খুনির চেহারা। জিপগাড়িতে আবার বেলুন লাগানো ছিল।

কাউকে চিনতে পেরেছিস?

না, আমি চিনব কী করে? ধ্রুব চৌধুরী যে সার্কেলে ঘোরে, কোনও ভদ্রলোক সেই সার্কেলে ঘুরতে পারে না।

রেমি চোখের জল মুছে থমথমে মুখে ভিতরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। জয়ন্ত ঘর থেকে জামাটা ছেড়ে এসে বলল, আমাদের অপমানে তোর আর কিছু যায় আসে না, জানি। মা বাবাও চাইছে তোর সঙ্গে সম্পর্ক আর না রাখতে। কথাটা শুনতে জুয়েল, কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল টুথ।

তোকে কি ওরা মেরেছে?

না, মা আমাকে আটকে রেখেছিল ঘরে। ওদের ফেস করেছিল বাবা। যা বলাব বাবাকেই বলেছে। সেসব কথা আমার মুখে আসবে না। বস্তির চেয়েও খারাপ ল্যাংগুয়েজ। পাড়ার লোকেরা এসে না পড়লে ওরা ঘরেও ঢুকত।

রেমি তেজি চোখে চেয়ে বলল, তুই কি ভাবিস এর পরেও আমি তোর জামাইবাবুর পক্ষ নেব?

নিবি কি না সেটা তোর পার্সোনাল অ্যাফেয়ার। না নিলেই বা কী করবি? হি ইজ এ হার্ড নাট টু ক্র্যাক। আর-একটা কথা, ও লোকটাকে জামাইবাবু-টাবু বলা আর পোষাবে না। আমি সব সম্পর্ক অস্বীকার করছি।

কর না। আমিও করছি।

জয়ন্ত একথায় একটু হাসল। বলল, অত সোজা নয় রে। তুই মুখে যাই বলিস ওই ধ্রুব চৌধুরী বা তার মিনিস্টার বাবা এসে সামনে দাঁড়ালেই তোর সব প্রতিরোধ ভেসে যাবে। তোর কাছে এখন ওদের ফলস গ্ল্যামারটাই বড়।

আমাকে তুই কী করতে বলিস?

কিছুই না। তুই ও বাড়িতে ফিরে যা। ধ্রুব চৌধুরীর ঘরই কর। আমাদের ভুলে যা।

রেমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

জয়ন্ত বেরিয়ে গেলে সে গেল মার কাছে। তার মা খুব সাধারণ মানুষ, তবে রাগী। এক সময়ে মায়ের কড়া শাসনে তারা মানুষ হয়েছে। আজও মাকে একটু ভয় পায় রেমি।

মা, আমি কী করব বলো তো?

রেমির মা ভিতরের ঘরে মুসুম্বি রস করছিলেন। স্বামী জাগলে খাওয়াবেন। রেমির দিকে চেয়ে বললেন, তোকে ধ্রুব কিছু বলেনি?

না, কী বলবে?

জয়ের ওপর ওর অত রাগ কেন তা কিছু বলেনি?

রাগ যে আছে তাও তো জানি না।

মা মুখ নামিয়ে বলে, বড় ঘরের শখ মিটে গেছে বাবা। কী ছোটনোক! এসব বন্ধু ও কোথা থেকে জোটাল? ওরা তোর বাড়িতেও তো যায়!

না, ওর কোনও বন্ধু বাড়িতে আসে না। আমি কি শ্বশুরমশাইকে ঘটনাটা বলব?

বলে কী লাভ? এক ঝাড়েরই তো বাঁশ।

রেমি মাথা নাড়ল, না মা, শ্বশুরমশাই অন্যরকম।

তা হলে যা ভাল বুঝিস কর। আমি কিছু জানি না। পাড়ার লোকের কাছে মুখ দেখানোর জো নেই। তার ওপর তোর বাবার বুকের দোষ হয়ে গেল।

রেমির চোখ-মুখ রাগে অপমানে অস্বাভাবিক জ্বলজ্বল করতে লাগল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *