দ্য ম্যান হু লাফস – ৫

অ্যালারিকের আস্তানা থেকে রাসেল যেন সম্পূর্ণ নতুন এক মানুষ হয়ে ফিরে এসেছেন। তাঁর হাবভাব কারোরই ভালো ঠেকছে না। আচরণে ভদ্রতার কোনো অভাব না থাকলেও আন্তরিকতার অভাব ষোলো আনা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মানুষটা যেন অনেক দূরে সরে গেছেন।

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হাজারটা প্রশ্ন করলেন লেডি রাচেল। ডাকাতদলের আস্তানা সম্পর্কে ডেভিডের মুখে যে গল্প শুনেছেন, তার সঙ্গে রাসেলের বর্ণনা মেলে কি না দেখতে চান, এ স্রেফ তাঁর কৌতূহলই, অন্য কিছু নয়। কিন্তু তাঁর কৌতূহল মিটল না। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন রাসেল, মাঝেমধ্যে শুধু ‘হুঁ-হ্যাঁ, উঁহুঁ-না’ করলেন। লেডি রাচেল চেপে ধরতে বললেন, ‘ডেভিড আর আঁদ্রের মুখে সবই তো শুনেছ, আমি আর নতুন কী বলব।’

লেডি রাচেল বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ওরা আমাকে তেমন কিছুই বলেনি। এক শুধু আইরিনের কথাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বারবার শোনাচ্ছে। খুব নাকি সুন্দরী, খুব নাকি মিষ্টি গলা! অ্যামেলিয়া তো কানে তুলা গুঁজেছে, আইরিনের কথা শুনতে রাজি নয়। আচ্ছা, সত্যি করে বলো তো, মেয়েটি কি এতই ভালো? একটা ডাকাতনি এত ভালো হয় কী করে?

রাসেলের জবাব শুনে লেডি রাচেলের মনে হলো, উনি হেঁয়ালি করছেন। ‘মানুষের নাম ভালুক হতে পারলে, বীভৎস চেহারা নিয়ে লর্ড হতে পারলে, ডাকাতনি কেন ভালো মানুষ হতে পারবে না?’

জবাব শুনে হাঁ হয়ে গেলেন লেডি রাচেল। মাথা খাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন কথাগুলোর মানে। হতাশ হয়ে আবার যখন প্রশ্ন করতে যাবেন, দেখেন কামরা ছেড়ে কখন যেন বেরিয়ে গেছেন রাসেল।

রাসেল যখন নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন, সবাইকে নিয়ে একটা মিটিংয়ে বসলেন লেডি রাচেল। প্রথমে বক্তব্য রাখল অ্যামেলিয়া ‘বেড়ানোর খরচ হিসেবে যে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড সঙ্গে করে আনা হয়েছিল, সেটা তো বোকামির মাশুল দিতেই বেরিয়ে গেছে। দেশ থেকে আবার টাকা না আনালে তো চলে না।

নামে শিক্ষিকা হলেও ইতিমধ্যে অ্যামেলিয়ার প্রিয় সখী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিয়াঁকা। ডেভিড ডাকাতদের হাতে ধরা পড়ার পর অ্যামেলিয়াকে অভয় ও সান্ত্বনা দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় সে। দুই রমণীর সম্পর্ক তাতে আরও অন্তরঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাই এই মুহূর্তে অ্যামেলিয়া যা বলছে তা সমর্থন করা তার কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল। সে বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই। ওই একই পরিমাণ টাকা, অর্থাৎ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডই আনানো দরকার। তবে এখানে আর এক দিনও থাকা উচিত হবে না আমাদের। কারণ, দেশ থেকে টাকা আনা হয়েছে শুনলে ওই অ্যালারিক ডাকাতটা আবার না ছোঁ মারে। গেলে এবার জার্মানিতে যাওয়াই ভালো, সেখানে ফ্রান্সের মতো ডাকাতির ভয় নেই। আমি আরেকটা জায়গার কথা ভাবছি। সেটা হলো ইতালি। লোকে বলে, ইতালিতে না গেলে ইউরোপ ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবে কিনা, ওখানেও ডাকাতেরা খুব ঝামেলা করে। যাক, ইতালির কথা পরে চিন্তা করলেও চলবে। প্রথমে জার্মানি দেশটা দেখে আসি। দেখে অবাক হওয়ার মতো অনেক জিনিস আছে সেখানে। শুনেছি, প্রতিটি গ্রামে একটা করে কেল্লা আছে। বিশাল সব দৈত্যাকার দুর্গ। ওসব দেখলে বেড়াতে বেরোনোর কোনো মানেই হয় না।’

ডেভিডের লজ্জা-শরমের কোনো বালাই নেই, অথচ তার ভুলেই পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড আক্কেল সেলামি দিতে হয়েছে। সে মায়ের দিকে ফিরে দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ‘অ্যামেলিয়াকে এত করে বলছি, কিন্তু সে রাজি হচ্ছে না। ওর অনুমতি পেলে ফ্রান্স সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে চাই এই বলে যে আমাকে একদল সৈন্য দেওয়া হোক, আমি ওই ব্যাটা বজ্জাত দস্যু অ্যালারিককে তার পাতালপুরী থেকে হাত-পা বেঁধে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসি। তাতে দেশটাও নিরাপদ হয়, আমরা আমাদের টাকাও ফেরত পাই। আমি নিজের চোখে দেখেছি, একটা লোহার সিন্দুকে টাকাগুলো ভরে রেখেছে আইরিন। কি হে, আঁদ্রের দিকে তাকাল সে, ‘ঠিক বলছি না?’

‘হ্যাঁ, আমিও দেখেছি,’ গলা চড়িয়ে সায় দিল আঁদ্রে। ‘ডাকাত বলেই ওদের মনে ভয়-ডর নেই, আচরণে বেপরোয়া ভাব। তা না হলে আমাদের সামনেই টাকাগুলো সিন্দুকে রাখে! ভাবটা যেন পুলিশ বা সেনাবাহিনীকে থোড়াই কেয়ার করে!

‘এর একটাই অর্থ হতে পারে,’ বলল বিয়াঁকা। ‘তা হলো, পুলিশ বলো, সেনাবাহিনী বলো, সবাইকে ওরা কিনে রেখেছে। তা না হলে একদল অপরাধীর এত সাহস হয় কী করে? সরকারের লোকজন আদাজল খেয়ে নামলে অ্যালারিককে ঠিকই এত দিনে গ্রেপ্তার করতে পারত।’

নিজের পদমর্যাদা সম্পর্কে যথেষ্ট সজাগ ও গর্বিত অ্যামেলিয়া। বয়সে কিশোরী হলে কি হবে, আশপাশের লোকগুলো যে তার দ্বারাই প্রতিপালিত হচ্ছে, এবং সে-ই যে ওদের কর্ত্রী, এটা সে কখনোই ভোলে না। সে অনুমতি না দেওয়ায় ডেভিড সৈন্য নিয়ে অ্যালারিকের আস্তানায় হামলা করতে যেতে পারছে না, ডেভিডের এই স্বীকৃতি পেয়ে তার গর্ব আরও বাড়ল। এর অর্থ হলো, ডেভিড প্রকাশ্যে ঘোষণা করছে, সে অ্যামেলিয়ার প্রতি অনুগত। শুধু গর্বিত নয়, মনে মনে ভারি খুশিও হলো সে। লেডি রাচেলকে সহাস্যে বলল, ‘আপনার একগুঁয়ে ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারি না! চোর-ডাকাতকে

সামলানো ফ্রান্স সরকারের কাজ, আমরা কেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যাই? গুনে গুনে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড দিতে হলো ঠিকই, কিন্তু লন্ডনে ফিরে আমরা যদি পররাষ্ট্র দপ্তরকে দিয়ে এ বিষয়ে লেখালেখি করাই, ক্ষতিপূরণসহ টাকাটা ফেরত দিতে বাধ্য হবে ফ্রান্স সরকার। কাজেই আমি মনে করি না, আমাদের চিন্তা করার কিছু আছে। আপনি বরং মি. রাসেলকে গিয়ে বলুন, আমাদের লন্ডনের ব্যাংক থেকে কিছু টাকা যেন জার্মানিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। হামবুর্গ, বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট-এই তিন শহরের যেকোনো বড় ব্যাংকে পাঠাতে হবে।’

‘কত টাকার কথা বলব?’ ম্লান সুরে জিজ্ঞেস করলেন রাচেল, একটু যেন দ্বিধায় পড়ে গেছেন। ‘পুরো পঞ্চাশ হাজারই?’ রাসেলের মন-মেজাজ ভালো নেই, সেটাই সম্ভবত তাঁর সংকোচবোধ করার কারণ। তাঁকে বিরক্ত করতে সায় দিচ্ছে না মন।

‘হ্যাঁ, যদি সম্ভব হয়,’ চেহারায় গাম্ভীর্য এনে নির্দেশদানের সুরে বলল অ্যামেলিয়া। ‘গোটা ইউরোপ বেড়াতে হলে ওই পরিমাণ টাকাই দরকার হবে আমাদের। তবে কথা আছে,’ থেমে সবার ওপর পালা করে চোখ বোলাল সে, ঠোঁটের কোণে সবজান্তার রহস্যময় একটু হাসি, ‘অত টাকা লন্ডন থেকে আনাতে না পারা গেলে আমি একটুও অবাক হব না। ব্যাংকে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড নেই. এ কথা আমি বলছি না। কিন্তু টাকা থাকলেই যে ওড়াতে হবে, এটা কোনো যুক্তির কথা নয়। তা ছাড়া, নগদ দুই লাখ পাউন্ড হাতের কাছে সব সময় জমা না রাখলে আমাদের মতো জমিদারের চলে না। কখন কী খাতে প্রয়োজন হয়। মি. রাসেলকে বলুন, যে পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে তোলা নিরাপদ, তার বেশি যেন তোলা না হয়। মাথার ওপর গুরুজন যখন একজন রয়েছেন, কিছু কিছু ব্যাপারে তাঁর ওপর নির্ভর করাই ভালো।

অ্যামেলিয়ার বুদ্ধি, বিবেচনা ও সহৃদয়তার প্রশংসা করতে লাগল সবাই। একবাক্যে স্বীকার করল, হ্যাঁ, তার দূরদৃষ্টি আছে বটে। এত বুদ্ধি নাকি আধুনিক মেয়েদের মধ্যে আজকাল একেবারেই দেখা যায় না। সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করল বিয়াঁকা। সে বলল, ফ্রান্সের অতীত ইতিহাসে এমন দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা মহারানি ক্যাথারাইন দ্য মেডিচির মধ্যেই শুধু দেখা গিয়েছিল, আর এতকাল পর দেখা গেল অ্যামেলিয়ার মধ্যে। তার ভবিষ্যৎ যে খুবই উজ্জ্বল আর গৌরবময় হতে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে বিয়াঁকার মনে নাকি বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

দেখা যাচ্ছে, পেমব্রোক জমিদারবাড়িতে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করার জন্য নির্লজ্জের মতো নির্জলা তোষামোদ করতেও বিয়াকার আপত্তি নেই। বেচারির দোষ কী, নামমাত্র কাজ করতে হয় এমন একটা চাকরির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে সাতাশ বছর বয়সেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। এত দিনে তার মনের আশা পূরণ হয়েছে, চাকরির সুবাদে ভালো ভালো খেতে পাচ্ছে, দেশ- বিদেশে বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে, মনের সাধ মিটিয়ে কাপড়চোপড় তৈরি করাতে পারছে। এই চাকরিটা স্থায়ী করার বিনিময়ে ‘সম্ভাব্য সবকিছু’ করতে রাজি আছে বিয়াঁকা। তবে তার যে এত বয়স হয়েছে, সেটা ভুলেও কখনো জানতে দেয় না কাউকে। খুব বেশি হলে তেইশ বলে প্রমাণ হিসেবে জন্মতারিখও মুখস্থ করে রেখেছে।

রাসেলের খোঁজে কামরা থেকে অলস পায়ে বেরিয়ে গেলেন লেডি রাচেল। মনে তাঁর উৎসাহ নেই, তাই পা চলছে না। রাসেল যে তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে আছেন, এটা তিনি বেশ বুঝতে পারছেন। কারণটাও আন্দাজ করতে পারেন। তাঁর ছেলে ডেভিডের দোষেই তো পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড পানিতে গেল। হ্যাঁ, ডেভিডই দায়ী। একে তো বিদেশ-বিভূঁই, তার ওপর গভীর রাত, কোন সাহসে রাজপথে বেরোতে গেল সে? আইনজীবী রাসেলের বন্ধুভক্তি প্রবল, সে জন্যই তিনি ডেভিডকে ক্ষমা করতে পারছেন না। এই বন্ধুভক্তি এখনো অটুট আছে বলেই নিজে হাতে করে টাকাটা দস্যু অ্যালারিকের আস্তানায় পৌঁছে দিয়ে এসেছেন তিনি, বন্ধুকন্যার স্বামীকে যাতে মুক্ত করা যায়। তবে ক্ষতির পরিমাণ যে খুব বেশি, এ মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন, এ কথা প্রকাশ্যে বারবার বলতেও ছাড়ছেন না।

দরজা বন্ধ করে নিজের ঘরে বসে আছেন রাসেল। সামনে পড়ে আছে পোঁটলাটা, অ্যালারিকের সেই উপহার। এটা তাঁকে খুলে দেখতে হবে। ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেবেন, তা স্থির করতে হলে পরীক্ষা করে দেখা দরকার গিয়েলুমই যে পেমব্রোক জমিদারির উত্তরাধিকার, এটার সপক্ষে কী কী অকাট্য প্রমাণ আছে। গিয়েলুমের দাবি যে ন্যায়সংগত, সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত, ব্যক্তিগতভাবে তাতে রাসেলের কোনো সন্দেহই নেই। কিন্তু তাঁর কথাই শেষ কথা নয়। দেশে আইন আছে, আদালতে উত্তরাধিকার প্রমাণ করতে হবে। আদালত সে দাবি স্বীকার করে না নিলে কুৎসিতদর্শন গিয়েলুম বিশাল পেমব্রোক জমিদারির দখল নিতে পারবে না, লর্ডসভার অতি সম্মানিত আসনে বসার অধিকারও তার জন্মাবে না।

পোঁটলাটা মাত্র খুলতে যাচ্ছেন রাসেল, দরজায় নক হলো। যতই বিরক্ত হন, রাগ প্রকাশ করা তাঁর স্বভাব নয়। এ নিশ্চয়ই রাচেল এসেছে, ভাবলেন তিনি। অন্য কেউ হলে কাজের কথা শেষ করে তাড়াতাড়ি কেটে পড়ত। রাচেল একবার ঘরে ঢুকলে সহজে আর বেরোনোর নাম করবে না। মুখে বলে বটে কাজ আছে, আসলে গল্প করে সময় কাটাতে আসে। যদি কখনো কাজের কথা তোলেও, সংক্ষেপে সেটা সারতে পারে না। অনেক কাল আগে, সুদূর অতীতে, লেডি রাচেলের সঙ্গে গল্প করতে ভালোই লাগত তাঁর। মহিলার কথা কানে যেন মধু বর্ষণ করত। কিন্তু সে দিন কি আর আছে! এখন রাসেলের বয়স হয়েছে—নিজে কম কথা বলেন, আশা করেন অন্যরাও তাঁর সঙ্গে অল্প কথায় কাজ সারবে।

লেডি রাচেল হাসি হাসি মুখ করে জানতে চাইলেন, ‘খুব ব্যস্ত নাকি? ‘

‘খুব না হলেও, হ্যাঁ, ব্যস্ত। কিন্তু তুমি যখন এসেছ, তোমার কথাটাই আগে শুনতে হয়,’ বললেন রাসেল, স্বাভাবিক ভদ্রতা দেখাতে কখনোই তিনি কার্পণ্য করেন না।

‘কথাটা হলো…আসলে, অ্যামেলিয়াই আমাকে পাঠাল। সবারই একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো, তাই না? এই ঘটনার পর ওরা কেউ আর ফ্রান্সে থাকতে চাইছে না। তুমি ওদের কোথায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছ, কবে রওনা হওয়া যাবে, এসব জানতেই পাঠাল আমাকে।’

ভুরুজোড়া কুঁচকে ঝাড়া এক মিনিট চুপ করে থাকলেন রাসেল। ভাবছেন অ্যামেলিয়ার প্রতি কঠিন হওয়ার এখনই সময় কি না। নানা দিক বিচার- বিবেচনায় রেখে জটিল কয়েকটা অঙ্ক কষে ফেললেন দ্রুত। গিয়েলুমের অধিকার ও দাবি যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে তো অ্যামেলিয়ার পেছনে একটি পয়সাও খরচ করা চলে না তাঁর। এমনকি ঠিক এই মুহূর্তে গিয়েলুমের দাবি গ্রহণযোগ্য বলে মনে না হলেও অ্যামেলিয়াকে বাজে খরচ করার সুযোগ তিনি দিতে পারেন না। জানতে পাঠিয়েছে নতুন কোন দেশে বেড়াতে যাওয়া হবে। নতুন দেশ মানে নিশ্চয়ই জার্মানি, ইতালি বা স্পেন। যেখানেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত হোক, তার জন্য টাকা লাগবে। কম টাকায় বেড়ানো হয় না, বেশ মোটা টাকাই লাগবে। কিন্তু অত টাকা তিনি কোথায় পাবেন? পেমব্রোকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা আছে বটে, কিন্তু পরিমাণে তা এত বেশি নয় যে ভ্রমণ খাতে আরও বিশ বা ত্রিশ হাজার পাউন্ড খরচ করা যাবে। তা করা হলে একসময় তাঁকেই জবাবদিহি করতে হবে। অ্যামেলিয়ার শখ মেটানোর জন্য খরচ করা হলেও, হিসাব দেওয়ার দায়িত্ব পুরোটাই তাঁর ঘাড়ে। ডেভিডের মুক্তিপণ হিসেবে এই যে সাড়ে উনপঞ্চাশ হাজার পাউন্ড বেরিয়ে গেল, এটা মেনে না নিয়ে তার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারেন আদালত। প্রশ্ন উঠবে, টাকাটা তিনি কার জন্য খরচ করেছেন? অ্যামেলিয়ার জন্য হলে এ প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে ডেভিডের। কোথাকার পানি কোথায় গড়াবে, কেউ বলতে পারে না, শেষ পর্যন্ত যদি কোনো কারণে অ্যামেলিয়ার সঙ্গে ডেভিডের বিয়েটা না হয়, এই উনপঞ্চাশ হাজার পাউন্ড তাঁকে নিজের পকেট থেকে মাশুল দিতে হবে।

বিয়েটা হবে না? হবে কি না বলা সত্যি কঠিন। এই মুহূর্তে ওদের ঘনিষ্ঠতা দেখে সবাই অবশ্য বলবে যে এ বিয়ে ভাঙা কারও পক্ষেই এখন আর সম্ভব নয়। কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে রাসেল জানেন, আজ যেটাকে সম্ভব বলে মনে হয়, কাল ঠিক সেটাই অসম্ভব হয়ে দেখা দেয়।

তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, অ্যামেলিয়ার লাগাম টানার এখনই সময়। মেয়েটার ঘাড়ের ওপর তলোয়ার ধরা হয়েছে—ওই পোঁটলাটা। আগে দেখতে হবে ওই তলোয়ার তার ঘাড়ে পড়ে কি না। এই ব্যাপারটা না মিটলে নতুন কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা চিন্তা করা যাবে না।

রাসেল চুপ করে আছেন এক মিনিটও হয়নি, কিন্তু রাচেলের মনে হলো অনন্তকাল অপেক্ষা করে আছেন তিনি। রাগ হচ্ছে তাঁর। এত কী চিন্তা করার আছে? ভাব দেখে মনে হচ্ছে টাকাগুলো যেন রাসেলেরই, তাই খরচ করতে খারাপ লাগছে। আরে বাপু, তুমি তো পরের ধনে পোদ্দারি করো। পেমব্রোক জমিদারির সব টাকার মালিক তো অ্যামেলিয়া, তুমি শুধু দেখেশুনে রাখো। যার টাকা সে খরচা করবে, তাতে তোমার কী? হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে আল গুস্তাভের উইলে বলা হয়েছে রাসেলই অ্যামেলিয়ার অভিভাবক এবং জমিদারির পরিচালক। কিন্তু তারও একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। সেই মেয়াদ যতই শেষ হয়ে আসছে, ততই মাতব্বরি ফলানোর চেষ্টা করছেন রাসেল। মরার আগে বুড়ো লোকদের সংসারের প্রতি টান বাড়ে, রাসেলের বেড়েছে টাকার প্রতি। তা-ও কথা ছিল এই টাকা যদি তাঁর নিজের হতো।

অবশেষে মুখ খুললেন রাসেল। নরম সুরে, শান্ত ভঙ্গিতে বললেন, ‘বুঝলে রাচেল, সমস্যাটাকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। আমাদের বেড়ানোটা বোধ হয় এখানেই শেষ করতে হলো।’

হাত-পা ছড়িয়ে, আরামকেদারায় গা এলিয়ে দিয়েছিলেন রাচেল। আচমকা এক লাফে দাঁড়িয়ে পড়লেন। কর্কশ সুরে চিৎকার জুড়ে দিলেন তিনি। ‘কী বললে? বেড়ানো শেষ? তা কীভাবে হয়! একে একে ইউরোপের সবগুলো বড় শহর ঘুরব, এটাই তো আমাদের প্রোগ্রাম ছিল, নয় কি? আর এখন বলছ প্যারিসে এক চক্কর দিয়েই দেশে ফিরে যেতে হবে! এর মানে কী, বলো তো?’ মৃদু হেসে রাসেল বললেন, ‘কী আর করা, ওই এক চক্কর দিতেই তো সব টাকা ফুরিয়ে গেল।’

লেডি রাচেল দপ করে জ্বলে উঠলেন। ফাটা বাঁশের মতো বেসুরো গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘পেমব্রোক জমিদারির হাল কি এতই করুণ যে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডের বেশি খরচ করার সামর্থ্য নেই?’

‘রাচেল, ব্যাপারটা তুমি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখছ না। জমিদারির খরচ কি একটা? আমার পরামর্শ হলো, জমিদারির যে মালিক, সেই অ্যামেলিয়াকে জিজ্ঞেস করে এসো সে কি চায় জমা টাকার শেষ পয়সাটি পর্যন্ত খরচ করে ফেলবে? যাও, সে কী বলে শুনে এসো।’

‘অ্যামেলিয়াই তো আমাকে পাঠিয়েছে, তাকে নতুন করে তো কিছু জিজ্ঞেস করার নেই,’ বললেন রাচেল। ‘সে দেশে ফেরার জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। সবাই জানে, তার বেড়ানোর শখ এখনো মেটেনি।’

‘তবু যাও, সে কী বলে শুনে এসো,’ বললেন রাসেল। ‘প্রশ্নটা কীভাবে করতে হবে বুঝতে পারছ তো? তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, সে কি চায় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে যাক?’

‘উত্তরে যদি অ্যামেলিয়া বলে, খরচের কথা পরে ভাবা যাবে, আগে বেড়ানোর শখটা মিটুক, তখন কী হবে? তার কথা মেনে নেবে তুমি?’

তখনকার কথা তখন ভাবা যাবে। সে কী বলে শোনা যাক আগে।’ কী আর করবেন লেডি রাচেল, দুপদাপ পায়ের আওয়াজ তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, যাচ্ছেন অ্যামেলিয়ার খাস কামরার দিকে I

অ্যামেলিয়ার খাস কামরায় চার মাথা এক হয়েছে। ওরা চারজন গভীর মনোযোগের সঙ্গে একটা ম্যাপ দেখছে—অ্যামেলিয়া, ডেভিড, বিয়াঁকা ও আঁদ্রে। ম্যাপটা জার্মানির, তাতে ট্যুরিস্টদের সুবিধার জন্য দর্শনীয় স্থানগুলো চিহ্নিত করা আছে, কোথায় কোন পথে যাওয়া নিরাপদ ও সহজ, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে।

এক হওয়া চার মাথার ওপর বোমার মতো বিস্ফোরিত হলেন লেডি রাচেল। এতই রেগে গেছেন, মুখে কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। কী কথার পর কী কথা বলছেন, খেই থাকছে না। আসল কথাটা কী বলতে চান, তা বুঝতে বেশ কষ্ট হলো অ্যামেলিয়ার।

সারমর্মটুকু যখন বুঝতে পারল অ্যামেলিয়া, অভিমান আর অপমানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল বেচারি। কাউকে বলতে হলো না, কখন কী করা দরকার জানে বিয়াঁকা—সঙ্গে সঙ্গে অ্যামেলিয়ার শুশ্রূষা শুরু করে দিল সে। আর ডেভিড? সে বুক ফুলিয়ে মায়ের সামনে দাঁড়াল, স্বভাবসুলভ অনুমতি প্রার্থনাকাতর ভঙ্গিতে বলছে, ‘তুমি শুধু অনুমতি দাও, মা, তারপর দেখো বেইমান উকিলটাকে কী রকম শায়েস্তা করি আমি! তার এই অনধিকার চর্চা অবশ্যই আমি মেনে নেব না! তার বিরুদ্ধে আমি ফ্রান্সের আদালতে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ দায়ের করব। অ্যামেলিয়ার এত বড় অপমান! অপমান! মা, এ-ও তুমি আমাকে সহ্য করতে বলো?’

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আঁদ্রে তখন বাতাসে তলোয়ার চালানোর প্র্যাকটিস করছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে আয়নায় নিজের প্রতিফলনই তার টার্গেট, যদিও আসলে তা নয়। একবার ডান পাঁজরে তলোয়ার হাঁকায় তো পরের বার বাম পাঁজরে। দু-একবার গলাকেও টার্গেট করল। গোটা আয়নাটাকেই জ্যান্ত মি. রাসেল হিসেবে কল্পনা করছে সে। বেয়াড়া বৃদ্ধ রাসেলকে শায়েস্তা করার এটাই একমাত্র উপায় বলে মনে হয়েছে অসিযোদ্ধা আঁদ্রের। চারজন টগবগে তরুণ-তরুণীর বহু দিনের লালিত স্বপ্ন নতুন নতুন দেশে ঘুরে বেড়াবে, হাতের ময়লা টাকার ঘাটতির কথা তুলে তাতে যে লোক বাদ সাধে, তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।

তবে যা কিছু ঘটল, সবই বৃদ্ধ রাসেলের চোখের আড়ালে। তিনি যে খুব কঠিন একটা ভূমিকা নিয়েছেন, তাতে আর সন্দেহ কী। তাঁকে ঘাঁটাবে, এ সাহস কারও হলো না। রাচেলও অ্যামেলিয়ার জবাব নিয়ে তার কাছে ফিরে যেতে রাজি হলেন না।

সবাই ধরে নিল, রাসেলই ওদের কাছে আসবেন। কিন্তু তিনি এলেন না। ডিনারের টেবিলেও তাঁকে অনুপস্থিত দেখা গেল। পরে জানা গেল, কিচেনে আগেই খবর পাঠিয়েছিলেন তিনি, বয়-বেয়ারারা সরাসরি তাঁর ঘরেই ডিনার পরিবেশন করছে। খবরটা শুনে পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল ওরা।

পরদিন সকালে লেডি রাচেলকে একটা চিঠি দিল একজন বয়। রাসেলের চিঠি। তাতে তিনি লিখেছেন—

‘ডিয়ার লেডি রাচেল, হঠাৎ জরুরি কাজে ভোরের ট্রেন ধরে লন্ডনে ফিরে যেতে হচ্ছে আমাকে। বিদায় নেওয়ার জন্য তোমাদের ঘুম ভাঙাতে মন চাইল না। আশা করি, তুমি কিছু মনে করবে না। তোমাদের সঙ্গে লর্ড ডেভিড আছে, তার সাহায্য নিয়ে সম্ভব হলে কালই লন্ডনে ফিরে যেয়ো। কাল যদি একান্ত সম্ভব না হয়, পরশু অবশ্যই ফেরা চাই। কারণ, দেরি করলে হোটেলের বিল বাড়বে। আমার কাছে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেই, যা ছিল তা কাল তোমাকে দিয়েছি। ইতি, রাসেল।

কথাটা ঠিক, দস্যু অ্যালারিকের আস্তানার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে লেডি রাচেলকে পাঁচ শ পাউন্ড দিয়েছিলেন বটে রাসেল।

লেডি রাচেল ভাবছেন, এ কি চিঠি, নাকি বিষাক্ত তির?

দিনটা অ্যামেলিয়া আর ডেভিডের জন্য কঠিন শোক বয়ে আনল। দুজন হাত ধরাধরি করে নতুন নতুন দেশে বেড়াবে, তাদের এই স্বপ্ন-সাধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছেন রাসেল। আর বিয়াঁকা ও আঁদ্রের জন্য দিনটা হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার। এই দুই ফ্রেঞ্চ তরুণ-তরুণী দীর্ঘ দিন সংসার নামক অকূল দরিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছিল, কোনো ঘাটেই ভিড়তে পারছিল না। নাবালিকা কাউন্টেস অ্যামেলিয়ার চাকরি ওদের নাগালের মধ্যে যেন স্বর্গ এনে দিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, নিয়তি তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর এক খেলায় মেতেছে। কাউন্টেস অ্যামেলিয়ার পাষাণহৃদয় অভিভাবক যে ক্ষমতা দেখালেন, নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ওদের। অ্যামেলিয়া যে বৃদ্ধ রাসেলের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল, তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। তাহলে ওই কিশোরীর ভরসায় দেশ ছেড়ে যাওয়াটা কি তাদের উচিত হবে? রাসেল যদি তাদের পছন্দ না করেন, এককথায় শেষ করে দিতে পারেন চাকরির মেয়াদ। তখন তারা কোথায় যাবে?

নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল ওরা। তবে একমত হতে পারল না। আঁদ্রে যুক্তি দেখাল, তলোয়ার খেলা শেখার লোক ইংল্যান্ডে খুব বেশি পাওয়া যাবে না। কেন, লর্ড ডেভিডই তো প্যারিসে আসার আগে খেলাটা শেখার কোনো গরজ অনুভব করেনি! এ থেকে কী বোঝা যায়? ইংল্যান্ডের অভিজাত সমাজে শাস্ত্রচর্চায় ভাটা পড়েছে, তাই না? কাজেই কিসের আশায় ওখানে যাবে আঁদ্রে? ডেভিডকে শেখানোর চাকরিটা বড় বেশি ঠুনকো, যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে নট হয়ে যেতে পারে। কারণ, ডেভিড নয়, তাকে বেতন দেওয়ার মালিক ওই হাড়কিপটে বুড়ো রাসেল।

না, প্যারিস ছেড়ে যাবে না সে। অন্তত এখুনি তো প্রশ্নই ওঠে না। ডেভিড যখন সাবালক হবে, বিয়ে করবে অ্যামেলিয়াকে, তখন না-হয় একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে পুরোনো সম্পর্কটা নতুন করে ঝালাই করা সম্ভব কি না। সুযোগ-সুবিধা পেলে থেকে যাবে ইংল্যান্ডে, তা না হলে দেশের ছেলে দেশে ফিরে আসবে।

বিয়াঁকা তার সঙ্গে একমত হলো না। গত সাত বছরে চৌদ্দ জায়গায় কাজ পেয়েছে সে, রাখতে পারেনি একটাও। চাকরি ধরে রাখার জন্য যেসব গুণ থাকা দরকার, তা তার নেই। এ দেশে যে সে সুবিধা করতে পারবে না, এটা পরিষ্কার। তার চেয়ে অ্যামেলিয়ার সঙ্গে যেতে পারলে অনেক লাভ। হাড়কিপটে বুড়োটা যদি কোনো অজুহাতে অ্যামেলিয়ার নাচ ও গান শেখা বন্ধও করে দেন, তাহলে সখী হিসেবেও তো অ্যামেলিয়া তাকে রেখে দিতে পারে। আর নিজের চেষ্টায় যদি সফল হয় সে, অর্থাৎ খেয়ালি কোনো মানুষকে যদি পটাতে পারে, তার সাহায্য নিয়ে লন্ডনের কোনো পাড়ায় নাচ- গানের স্কুল খোলাও সম্ভব। এরকম যদি সত্যি ঘটে, বিয়াকার আর চিন্তা কী! স্কুল যদি শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রীর নিজের হয়, সেখানে মাস্টারি করতে বিদ্যার প্রয়োজন হয় না।

ওদের সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গেল। আঁদ্রে আপাতত যাবে না। বিয়াঁকা যাবে।

আরও সিদ্ধান্ত হলো—লেডি রাচেল, অ্যামেলিয়া ও বিয়াঁকাকে নিয়ে কালই লন্ডনের ট্রেন ধরবে ডেভিড।

পরদিন বিদায় নেওয়ার সময় আঁদ্রেকে ডেকে ডেভিড আশ্বাস দিল, এক বছর পর অ্যামেলিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হবে, আর বিয়েটা হওয়ামাত্র সে ডেকে পাঠাবে তাকে। ইংল্যান্ডের অভিজাত সমাজে আজকাল আর অস্ত্র চালানো শেখার আগ্রহ নেই তেমন, তা না থাকলেও কোনো ক্ষতি নেই, কারণ শিখতে ইচ্ছা না হলে ডেভিড তাকে তার জমিদারির ম্যানেজার করে হলেও নিজের কাছে রেখে দেবে।

আর বৃদ্ধ রাসেলকে নিয়ে কী করবে ডেভিড? অ্যামেলিয়ার সঙ্গে আগে বিয়েটা তার হোক, ডেভিড তাকে পেমব্রোকের ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *