টিকটিকি – নাশমান শরীফ

টিকটিকি

এক

এক টিক্-টিক্-টিক্, ডেকে উঠল টিকটিকি। ‘স্বর্ণা, চলো নিচে যাই,’ শোয়া থেকে এক ঝটকায় উঠে বসে বলল তানি।

ভয় পেয়ে বলল স্বর্ণা, ‘এই, কী দেখেছ তুমি? আমার কিন্তু ভয় করছে।’

তানি তর্জনীটা বাড়িয়ে দেখাল, ‘ওই যে দেখো, শুটিংস্টার।’

দেখতে পেল না স্বর্ণা। তার আগেই পড়ে গেছে ওটা।

‘ছাদটা এখন কিন্তু ভুতুড়ে লাগছে আমার,’ বলল স্বর্ণা।

‘চলো যাই, রাতও হয়ে গেছে অনেক।

পাটি, বালিশ গুছিয়ে নিচে নেমে এল দুই বন্ধু।

একই তলায় মুখোমুখি ফ্ল্যাটে বাস, প্রায় সমবয়সী দু’জন। ওদের বন্ধুত্বের বয়স চলছে দুই বছর। স্বর্ণা এখানে আসার আগে কেউ কাউকে চিনত না। শুরুতে প্রতিবেশী হিসেবে সৌজন্য সম্পর্ক ছিল। এরপর দেখল বহুদিকে ভাললাগা মিলে যায় দু’জনের। যেমন, দু’জনই কবিতা লেখে, গান শুনতে ভালবাসে, একই রকম প্রকৃতিপ্রেমী। আরও অনেক মিল…। আর কী বাধা, ব্যস, হয়ে গেল আপনি থেকে তুমি। সারাক্ষণ দু’দরজা হাট করে খোলা। এক ঘরের মতই বসবাস ওদের। ঘরের দুয়ার খোলা মানে আসলে ওদের মনের দুয়ারটাই খোলা।

‘স্বর্ণা, তুমি কি ছাদে টিকটিকির ডাকটা শুনেছিলে?’ তানি জিজ্ঞেস করল।

স্বর্ণা বলল, ‘আচ্ছা, টিকটিকির সাথে তোমার কী বলো তো? এর আগেও একদিন ছাদে টিকটিকির ডাকে অমন ভয় পেয়েছিলে। মনে হয় কোন রহস্য আছে। তোমার তো আবার মেলা অলৌকিক ব্যাপার-স্যাপার ঘটে।’

‘জানতে পারবা, বন্ধু, আমার কিছুই অজানা থাকবে না তোমার।’ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল তানি।

রুপোর থালার মত বড় চাঁদ উঠেছে আকাশে। রাত প্রায় দশটা বাজে। মোবাইলে সময় দেখল তানি। ঠিক তখনই টিক্-টিক্-টিক্-টবের পাশ থেকে ডেকে উঠল টিকটিকিটা।

‘স্বর্ণা, চলো নেমে যাই, একটা পোড়া গন্ধ নাকে আসছে,’ নাক টেনে বলল ও।

‘হায় সর্বনাশ,’ লাফ দিয়ে উঠল স্বর্ণা। ‘আমি তো চুলায় ভাত দিয়ে এসেছিলাম।’

.

দুই বন্ধু বসে আছে তানির ডাইনিং টেবিলে। ছাদ আর ঘরের টেবিলটাই ওদের আড্ডার স্থান। শফিক জানিয়েছে ফিরতে রাত একটাও বেজে যেতে পারে। স্বর্ণা আরাম করে দুই চেয়ার নিয়ে বসল।

ও বলল, ‘তানি, তোমার টিকটিকি রহস্যটা শুনতে চাই। আজ আমি খেয়াল করেছি তুমি টিকটিকির ডাক শুনেই নিচে নামতে চাইলে, ভাত পোড়ার গন্ধটা পেলে। যে হারে আমরা গল্পে মজে ছিলাম ছাদে, এতক্ষণে কী হত ভাবতেই শিউরে উঠছি। আচ্ছা, বলো তো, তুমি কি কোন বিপদের সিগন্যাল পেয়েছিলে?’

তানি বলল, ‘তোমার মতই আরেকটা দোস্ত আছে আমার। কোন কিছুই তার অজানা নয়।’

‘প্লিজ, তানি, এত রং ঢং না করে বলোই না ঘটনাটা।’

দুই

দশ বছর আগের কথা।

টিক্-টিক্-টিক্!

ট্রিকটিকির এই ডাকটা যেন ওর মনে মুহূর্তেই একটা প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে গেল। যাক, কাজটা তাহলে হচ্ছে, তানি আশ্বস্ত হলো। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে জায়নামাজ থেকে উঠল ও। টুবুনের কাশিটা মনে হলো কমে আসছে।

বিছানায় এসে মেয়ের মাথাটা বুকের মধ্যে নিয়ে তানি বলল, ‘মাগো, ইনশাল্লাহ্ আর কখনও তোমার ওরকম কাশিটা হবে না। আল্লাহ্ আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।’

মায়ের কথা পাঁচ বছরের টুবুন কিছু বুঝল বলে মনে হলো না। তবে সত্যিই কিছুক্ষণ আগে যেভাবে কাশছিল, সেটা কমে গেল।

ছোটবেলা থেকেই এরকম সাংঘাতিক কাশি বাচ্চাটার। কোনভাবে ঠাণ্ডা লাগলে আর রক্ষে নেই। কাশতে কাশতে লাল টকটকে হয়ে যায় চোখ দুটো। যেন ফুটে বেরিয়ে আসবে। মুখ দিয়ে লালা ঝরে অনবরত। খাওয়া-দাওয়া একেবারে বন্ধ। টোটকা, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি কিছুতেই কাজ হয় না। দেশের নাম করা শিশু বিশেষজ্ঞ, অগুনতি অর্থ ব্যয়, সব বেকার। বড় মেয়ে বুবুনের অসুখ হলে আরও আজব ঘটনা ঘটে তানির। ওর যে অসুখ হবে দেখা যায় তানিরও ঠিক সেটা শুরু হয়। যেমন, বুবুন বমি করলে তার মায়েরও বমি শুরু হবে, জ্বর হলে জ্বর…! সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল যখন বুবুনের চোখে ‘আই ড্রপ’ দেয়া হলো। তানি কাশতে-কাশতে বলল, ‘আমার গলা তেতো হয়ে গেছে, হায়, খোদা, বুবুনের চোখে ওষুধ দিলে আমার গলা তেতো হচ্ছে কেন?’

প্রতি এক-দেড় মাস পরপরই মেয়েদের এত কষ্ট তানিকে সহ্য করতে হয়। যতবারই এমন হয়, ও জায়নামাজে বসে যায়। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের জীবন থেকে শুরু করে সব সম্পদ বিনিময় করেও দুই সন্তানের সুস্থতা চায়।

তবে বাইরের কেউ তানির মোনাজাত দেখলে পাগল ভাববে নিশ্চিত। ওর দোয়াটা এরকম হয়—’হে, আল্লাহ্, আমার জানটা তুমি নিয়ে নাও, আমার সব গয়নাগাটি তুমি নিয়ে নাও, আমার জমা-জমি, ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য সব তুমি নিয়ে নাও, আমাকে পথের ফকির করে দাও। আমি আমার সুস্থ মেয়ে দুটোকে নিয়ে গাছতলায় বাস করব। তবু রোগ চাইনে, আল্লাহ্।’ এরপর চলে অঝোরে কান্না।

আর কেনইবা এমন পাগলামি করবে না ও? মাত্র বাইশ বছরেই দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছে। দুটো বাচ্চা নিয়ে ধরতে গেলে একেবারে একা। কাছে তো সাহস দেয়ার মত আপনজন, বন্ধু বা ওরকম কেউ থাকে না। আর যদিওবা আপনজন কেউ আসে, তো বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ওর কাণ্ডকারখানা দেখে বিরক্ত হয়ে দ্রুত কেটে পড়ে।

শফিক খুবই ব্যস্ত মানুষ। গার্মেন্টস্ ব্যবসা। রাত নেই, দিন নেই শুধু কাজ আর কাজ। মেয়েরা অসুস্থ হলে সব রাগ গিয়ে পড়ে তানির ওপর। বলে, ‘তোমার নির্বুদ্ধিতার, কারণেই ওদের রোগ হয়। এমনি কি নেপোলিয়ন বলেছেন, ‘আমাকে একটা যোগ্য মা দাও’’…ইত্যাদি, ইত্যাদি। অকারণেই বকা শুনতে হয় বেচারি তানিকে। একে সন্তানের অসুস্থতা তার উপর স্বামীর ভয়ানক আচরণ। বাচ্চাদের সব রকম অসুখের দায় ওদের বাবা নির্দ্বিধায় তানির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। অসুখ-বিসুখ তাই ওর নিজের মৃত্যুর চাইতেও ভয়ঙ্কর মনে হয়।

আজও ঠিক ওভাবেই মোনাজাত শেষ করেছিল ও। ব্যতিক্রম ঘটল, হাতটা নামাতেই যখন টিকটিকিটা ডেকে উঠল, টিক্-টিক্ করে। টিকটিকি সে তো ডাকতেই পারে। এর মাঝে সন্তানের সুস্থ হবার কী ইঙ্গিত রয়েছে, সেটা তানি ছাড়া কেউ জানে না।

তিন

‘আপু, মশারিটা একটু খুলে দে না,’ পায়ের উপর পা উঠিয়ে বলল তানি।

তাসমি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘পারব না, সেই কখন থেকে উঠতে বলছি তোকে। কাল না অঙ্ক পরীক্ষা তোর?’

বোনের কথায় কান দিল না তানি। বরং জোরে-জোরে গাইতে লাগল, ‘সাত ভাই চম্পা জাগোরে জাগোরে, ঘুম ঘুম থাকে না ঘুমেরই ঘো…আপুরে-কী গেল আমার মুখে,’ বলে চেঁচিয়ে উঠল ও।

তাসমি মশারিটা খাটের আড়ায় ভাঁজ করে রেখে বলল, ‘চুপ কর, ফাজিল, তোর মুখে রসগোল্লা গেছে।’

‘না রে, আপু, আমি ফাজলামো করছি না, সত্যি বলছি, আমার মুখে ডিম-ডিম স্বাদ লাগছে।’

‘এই, তোর মুখে টিকটিকির ডিমের খোসা, ও, মা, দেখে যাও, তানি টিকটিকির ডিম খেয়েছে,’ চেঁচিয়ে উঠল তাসমি।

গোসলখানায় কল ছেড়ে দিয়ে মা তানিকে বহুবার কুলকুচি করালেন। সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে দিতে-দিতে বললেন, ‘টিকটিকি বিষাক্ত প্রাণী, এর ডিম তোমার মুখে গেল কী করে?’

‘মনে হয় খাটের আড়ায় ছিল, মশারি খুলতে গিয়ে তানির মুখে পড়েছে,’ বলল তাসমি।

খাটের আড়ার ফাটলে আরও তিনটা ডিম খুঁজে পাওয়া গেল। তানি এর আগে কখনও টিকটিকির ডিম দেখেনি। মা ওগুলো ফেলে দিতে গেলে তানি চেঁচিয়ে বলল, ‘সত্যি বলছি, মা, জীবনেও আমি টিকটিকির ডিম খাব না, আমার মুখে পড়লে থুহ-থুহ করে ফেলে দেব। তুমি ওগুলো কালকে ফেলো, আজকে একটু আমার কাছে রাখি?’

ক্লাস সেভেনে পড়লেও তানিটা একেবারে শিশুদের মত। সারাদিন ডিমগুলো সাবধানে নিয়ে বেড়াল। অঙ্ক করতে গিয়ে বইয়ের উপর রেখেই অঙ্ক করল। আগামীকাল ওর অঙ্ক পরীক্ষা। অনেক খাটল এর পেছনে। অঙ্কটা ওর কাছে যমের মত। ছোটবেলা থেকেই, যে ওকে অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন করবে, ও মনে-মনে তাকে অভিশাপ দেবে, ‘ধ্বংস হোক, তার চোদ্দ গুষ্টি নিপাত যাক।’

এই হলো অবস্থা। প্রথম সাময়িক পরীক্ষাতে চৌত্রিশ পেয়েছিল। মানে টেনেটুনে পাশ। এবার মোটামুটি ভাল না করতে পারলে আর মান-ইজ্জত কিছু থাকবে না। বাদশা স্যর সপ্তাহে চারদিন বাসায় এসে অঙ্ক করিয়ে যান। স্যরের কাছে আজ প্রায় ঘণ্টা তিনেক অঙ্ক করছে। মনে-মনে বলল তানি, ‘এবার মনে হচ্ছে অঙ্ক পরীক্ষাটা ভালই দেব। অনেক খেটেছি…

‘টিক্-টিক্-টিক্,’ সাথে-সাথে একটা টিকটিকি ডেকে উঠল। সেটা অবশ্য তানির খেয়াল করার কথা নয়। এমন কোন ঘর আছে, যেখানে টিকটিকি নেই? সারাদিন কতই তো ডাকছে ঘরময়। আশ্চর্য! এই ডাকটা কিন্তু ওর কানে লাগল। মনে হলো টিকটিকিটা ওকে বিদ্রূপ করল। অবচেতন মনেই দেয়ালের এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগল। যেন টিকটিকির হাসি মুখের চেহারাটা দেখতে পাবে ও।

চার

প্রশ্নপত্র হাতে পেল তানি। মুহূর্তে পুরোটাতে চোখ বুলিয়ে খুশিতে আটখান হয়ে গেল।

সব অঙ্ক কমন পড়েছে! খাতা নিয়ে অস্থির হলো দ্রুত লেখার জন্য। ফিসফিস করে পাশের বেঞ্চে বসা বিউটিকে বলল, ‘বুঝলি? স-অ-ব কমন পড়েছে, হেল্প লাগলে বলিস।’ গর্বে বুকটা ভরে গেল ওর। এমনটাই তো কল্পনা করেছিল। পাজি বিউটিটা গত পরীক্ষায় ওর

ওর দিকে ফিরেও তাকায়নি-হেল্প তো দূরের কথা। সাহায্য না করার অবশ্য অন্য কারণ আছে। ক্লাসের সবচেয়ে চটপটে মেয়ে তানি। তার উপরে, গান, নাচ, ছবি আঁকা, কবিতা লেখা সব কিছুতেই সে ওস্তাদ। তাই অঙ্কে ডাব্বা মারাতে মনে-মনে ও খুশি।

যাই হোক, শান্ত মাথায় লেখা শুরু করল তানি। ক’সেটের সব অঙ্কই দেখল পারে। এক নম্বরটা কোনভাবেই মিলল না ওর। এবার একটু ঘাবড়ে গেল। কেন মিলছে না? এবার অন্যগুলোর দিকে নজর দিল। হায়, খোদা! সব গুলিয়ে গেছে। নিজেকে বোঝাতে লাগল, ‘সব পারি, তবে কেন মিলছে না?’ বাদশা স্যরকে ডেকে বলল, ‘স্যর, আমি একটা অঙ্কও পারছি না।’

স্যর বললেন, ‘তোর মানসিক রোগ আছে। অঙ্কের সিলেবাস তো সব গুলিয়ে খাইয়েছি।’ বলে স্যর চলে গেলেন। তানি প্রাণপণ চেষ্টা করে চলল। কিন্তু একটা অঙ্কও মেলাতে পারল না। প্রায় সাদা খাতা জমা দিয়ে কাঁদতে- কাঁদতে বাড়ি ফিরল বেচারি।

কেবলই ওর মনে হতে লাগল এই লটখটের জন্য ওই টিকটিকির ডিম আর টিকটিকিই দায়ী।

ওর কান্না দেখে বাসার কেউ কিছুই বলল না। বরং আব্বা ওকে সান্ত্বনা দিলেন-’যাক, আর কাঁদিসনে, ভাল করে চেষ্টা কর যেন ফাইনালে গিয়ে ফেল না করিস।’

তানি বলল, ‘আমি কি কখনও ফেল করেছি? আমি তো টি-টি-পি, মানে, টেনেটুনে পাশ। ওই শয়তান টিকটিকিটাই এবার আমাকে ফেল করাল।

পাঁচ

ক’দিন বাদে তাসমির এস. এস. সি. পরীক্ষা। সারাদিন দুই বোন খুনসুটি করে। অতিষ্ঠ হয়ে মা একদিন বললেন, ‘ফাজলামো করে বহু সময় নষ্ট করেছ দুই বোন। এখন থেকে দু’জন আলাদা ঘরে পড়বা।’

তানি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল বাইরের ঘরে। কোথাও একটা টিকটিকি ডেকে উঠল।

‘আপু, এই ঘরে আয়, এক্ষুণি কারেন্ট চলে যাবে, ‘ চেঁচিয়ে উঠল তানি। মুহূর্তে সব অন্ধকার।

দু’বোন জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে ওদের রুমে। টেবিলের ওপর টিপটিপ করে মোমের আলো জ্বলছে। তাসমি বলল, ‘তুই তো দেখি অলৌকিক শক্তিওয়ালা হয়ে গেছিস। কী করে বুঝলি যে কারেন্ট চলে যাবে?’

‘আমাকে সিগন্যাল দিয়েছে টিকটিকি। জানিস, আপু, তুই বিশ্বাস কর, আমার পরীক্ষাটা খারাপ হলো ওই পাজি টিকটিকির জন্যে। সেদিন ডিম মুখে যাওয়ার পর থেকে দেখছি, টিকটিকির পাল আমার পিছু নিয়েছে। ভালমন্দ যা- ই ঘটছে, উজবুকগুলো আমাকে টিক্-টিক্ করে জানান, দিচ্ছে!’

‘দূর, বোকা, আমাদের ঘরে তো সারাক্ষণই টিকটিকি…..’

টিক্-টিক্-টিক্।

‘এই দেখ, এখনই ডাকল,’ বলে ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে হাসল তাসমি।

তানি কান খাড়া করে বলল, ‘দেখিস কিছু একটা ঘটবে এখন…’ দপ করে আলোগুলো জ্বলে উঠল। ভয়ে তাসমি জড়িয়ে ধরল তানিকে।

তানিদের বাড়িটা শহরতলীতে। দিনরাত এখানে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার খেলা চলে। ওদের বাড়ির কয়েক গজ দূরেই রাস্তা। সন্ধ্যা লাগার কিছুক্ষণ পরেই জায়গাটা কেমন সুনসান নীরব হয়ে যায়। একটু এগিয়ে রাস্তাটা বামে মোড় নিয়েছে। ওই মোড়ের কাছেই আছে একটা উইয়ের ঢিবি।

বিদ্যুৎ গেলে যখন পুরো এলাকাটা অন্ধকারে ঢেকে যায়, তখন আশপাশের বাড়ি থেকে লোকজন বেরিয়ে ঢিবিটার কাছে এসে দাঁড়ায়। কিছু বুনো ফুলের গাছ আর বিশাল একটা খেজুর গাছ জায়গাটাকে মোহময় করে রেখেছে। তানিদের বাড়ির সবার পছন্দের জায়গা ওটা।

কিন্তু তানির বাবা মুহিব সাহেব, সন্ধ্যার পর ও জায়গাটায় যাওয়া একদম পছন্দ করেন না। বলেন, ‘ওখানে কেউ অন্ধকারে যাবে না। সাপ-পোকা থাকতে পারে।’

যদিও এ এলাকায় কখনও সাপ-টাপ দেখা যায়নি।

তানিদের চার ভাই-বোনের প্রিয় জায়গা ওটা। বিদ্যুৎ যাওয়ার সাথে-সাথেই বড় ভাইয়া বাঁশি নিয়ে চলে যায় ঢিবির উপর খেজুর গাছটার তলে। ওরা কয় ভাই-বোনও যায় ভাইয়ার পিছু-পিছু। বাবার নিষেধ অমান্য করে প্রায় প্রতিদিনই।

সেদিনও যথারীতি বিদ্যুৎ চলে গেল। আবছা আলোতে বড় ভাইয়া বাঁশি নিয়ে চলল ঢিবির দিকে। পিছু-পিছু তানি। কাছাকাছি যেতেই লম্বা খেজুর গাছটার মাথায় টিক্-টিক্ করে ডেকে উঠল টিকটিকি।

‘ভাইয়া, সামনে দেখো,’ চেঁচিয়ে উঠল তানি।

‘এই-সাপ-সাপ, তানি, বাড়ি থেকে শিগির একটা লাঠি নিয়ে আয়,’ বলল বড় ভাইয়া।

জীবনে প্রথম জ্যান্ত সাপ দেখল তানি। বিশাল কালো কুচকুচে সাপ।

পরে ভাইয়া সবাইকে বলল, ‘ওটা জাত সাপ ছিল। ভাগ্যিস তানি দেখেছিল। না হলে আমি তো ওটার গায়ে পাড়া দিয়েই ফেলেছিলাম প্রায়।’

সাপ-দুর্ঘটনা হতে বাঁচানোর পুরো কৃতিত্বটা সবাই তানিকেই দিল। শুধু তানি জানে, কৃতিত্বটা ওর নয়, টিকটিকির।

রাতে শুয়ে তানি তাসমিকে বলল, ‘জানিস, আপু, অদ্ভুত ব্যাপার, আমার না ভয় অনেক কমে গেছে। টিকটিকি এখন আমার বন্ধু আবার শত্রুও।’

‘তুই দেখছি ইদানীং টিকটিকি নিয়ে বেশি গবেষণা করছিস!’ তাসমি কৌতুকের স্বরে বলল। ‘জানো, মা, তানিকে না টিকটিকিতে পেয়েছে, সত্যি বলছি, আমি ব্যাপারটা খেয়াল করেছি,’ বলে হাসতে লাগল।

মা কিন্তু মোটেও হাসলেন না। গম্ভীর হয়ে তানিকে বললেন, ‘তোমাকে আয়াতুল কুরসিটা শেখাতে হবে।’

তানি ভয়ঙ্কর ভীতু। এ জগতে তার ভয় পাওয়ার অগণিত উপকরণ রয়েছে। জিন-ভূত, পোকামাকড়, মানুষ, গরু, কুকুর সব কিছুকেই তার ভয়। অদ্ভুত ব্যাপার, শুধু টিকটিকি নামের প্রাণীটিকে তার কখনওই ভয় লাগেনি। শুধু ওর ডাকটা এখন…

মনে-মনে মেলাতে চেষ্টা করে তানি, টিকটিকি কি ওর বন্ধু না শত্রু? কারণ ভাল-মন্দ যা-ই ঘটছে তারই সঙ্কেত দিচ্ছে।

অবশ্য দুই বোনই এখন আয়াতুল কুরসি শিখে নিয়েছে। মায়ের কথামত তিনবার দোয়াটা পড়ে বুকে ফুঁ নেয় ওরা। তবুও তানির ঘটেই চলেছে অদ্ভুত কিছু। যেমন, কাল যখন ও গোসল করছিল, কোথাও একটা টিকটিকি ডেকে উঠল। সাথে-সাথে সতর্ক হলো। যা সন্দেহ করেছিল, গোসলখানার এক কোনায় নাদুস নুদুস একটা কেঁচো। আর যায় কোথায়, এক চিৎকার দিয়ে দরজা খুলে ভোঁ-দৌড়। টিকটিকির সাথে তানির যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বাড়ির সবাই তা জেনে গেছে। ওটা নিয়ে বড় ভাইয়া খুব মজা করে বলে, ‘চোখে তিল তানি, গজ দাঁত তানি, খেংরা কাঠি তানি, টিকটিকির দোস্ত তানি।’ আর তানি কেঁদেকেটে অস্থির।

মা বললেন, ‘তুমি এখন থেকে আর টিকটিকি বিষয়ক কোন কথা কাউকে বলবে না। এটা মনে রেখো, তোমার যা ঘটছে তা শুধু হাসি-ঠাট্টার ব্যাপার না। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।’

তানি বুঝতে পারল, মা এটাকে মোটেও স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। আর বিষয়টাকে গুরুত্বও দিচ্ছেন যথেষ্ট।

ছয়

শফিকের ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। এটা ওর প্রতিদিনের রুটিন। তবু তানি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে সেই সন্ধে থেকেই। বাচ্চাদের দায়িত্ব সেরে যেটুকু সময় পায়, ওর পছন্দের কাজগুলো করে। তবে আজ আর অপেক্ষা করে বসে নেই ও। ভীষণ ক্লান্ত। গত কয়েক রাত টুবুনের কাশিতে একটুও ঘুম হয়নি। শফিক এসে দেখল, দুই মেয়েকে দু’পাশে নিয়ে তানি বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। এমনিতে সব সময়ই কোন অসুস্থতার পর বুবুন-টুবুন যখন সুস্থ হয়, তানি তখন পরম শান্তি অনুভব করে।

ফোনে শফিক জেনেছিল, টুবুনের কাশিটা কমে গেছে। বাসায় সে-ও এল খুব ফুরফুরে মেজাজে। খাওয়া সেরে বিছানায় যেতে ওদের রাত দুটো বেজে গেল। যদিও শফিক কখনওই বউয়ের বন্ধু নয়, কিন্তু ঘুমের সময় বউকে তার চাই। তানির গায়ের উপরে হাত না দিলে তার ঘুম হয় না।

শফিক বউকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘জানো, মজিদ ভাই না খুব বিপদে পড়েছে। আজ ফ্যাক্টরিতে এসে আমার কাছে খুব কান্নাকাটি করছিল। সামান্য কিছু টাকার জন্য তার বিশাল একটা পেমেণ্ট আটকে গেছে। আমার কাছে টাকা চায়। কত করে বললাম, আরে, আমি অত টাকা কই পাব এখন!’

‘আহা রে, বেচারা! সত্যি যদি সেরকম টাকা থাকত তাহলে তো দেয়াই যেত। তুমি তাকে বলেছ না, ক’দিন আগে এক কোটি টাকার মেশিন নগদ টাকায় এনেছ। এখন কোন টাকাই তোমার নেই। এই জন্য ব্যবসা জিনিসটাই ভাল্লাগে না আমার। এত বড় গার্মেন্টসের মালিক, তাকেও টাকার জন্য হাত পাততে হয় অন্যের কাছে।’

তানি মজিদ সাহেবকে চিনেছে কিছুদিন হলো। ক’দিন আগে তার পরিবারের সাথে বেড়িয়ে এসেছে ওরা কক্সবাজার, রাঙামাটি। তখনই ভাল করে পরিচয় হয়েছিল ওদের সঙ্গে। এর আগে শফিকের কাছে শুধু ব্যবসায়ী হিসেবে নাম শুনেছিল মজিদ সাহেবের। এই ভদ্রলোকের সাথে বেশ ভাল ব্যবসায়িক সম্পর্ক তার। ব্যবসার শুরু থেকেই দু’জনের বেশ অন্তরঙ্গতা।

.

ফোন বাজছে। শফিক ফোন করেছে। ‘শুনেছ? এই মজিদ ভাইয়ের জ্বালায় তো মরে গেলাম।’ খুব বিরক্ত হয়েই শফিক বলল। ‘তুমি কি কিছু করতে পারবা?’

‘সে আবার কী? আমার কোন টাকা আছে নাকি?’ তানির জবাব শুনে শফিক ফোনটা রেখে দিল।

রাতে শফিক আবার বলল, ‘তুমি কি মজিদ ভাইকে কোন সাহায্য করতে পার? আটাশ কোটি টাকা আটকে দিয়েছে ব্যাংক। তার ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। মহা ফাঁপরে পড়ে গেছে লোকটা। মাত্র সপ্তাহ খানেকের জন্য বিশ লাখ টাকা লাগবে।’

‘বুঝতে পারছিনে আমি কী করতে পারি, আমাকেই বারবার বলছ কেন?’ একটু ঝাঁঝাল স্বরে বলল তানি।

‘তোমার গয়নাগুলো তো লকারেই পড়ে আছে,’ দ্বিধা করে বলল শফিক। ‘মাত্র সাত দিনের জন্য দিলে তো এমন কোন ক্ষতি হবে না। পঁয়তাল্লিশ ভরি মত দিলেই হবে।’

এতক্ষণে বুঝল তানি শফিকের মনোভাব। গয়নার বিষয়টা ওর মাথাতেই ছিল না। কারণ ছোটখাট ব্যবসায়িক বিপদে শফিক অনেকই পড়ে। কিন্তু কখনও সে গয়নার কথা বলেনি। এই প্রথম, তাও অন্যের বিপদে স্ত্রীকে ওগুলো দিতে বলল।

তানি বুঝল, সত্যি খুব কঠিন অবস্থা মজিদ সাহেবের। আর শফিক যে লোকটার প্রতি দরদী হয়ে উঠেছে, সেটা তানির কাছে খারাপ লাগল না। অনুভূতিশীল মানুষ ওর ভীষণ পছন্দ। তানি সবসময় মানুষকে সাহায্য করতে পছন্দ করে। সম্পদ জমিয়ে রাখা ওর সবচেয়ে অপছন্দ।

একটু ভেবে বলল ও, ‘ঠিক আছে, দেব, কিন্তু আমি যে সাত দিনের মধ্যে ওগুলো ফেরত পাব, তার গ্যারান্টি কত পার্সেন্ট?’

‘একশো পার্সেন্ট,’ শফিক বলল।

তানি উঠে গিয়ে একটা কলম আনল, তারপর দরজায় লিখল, সাত দিনের মধ্যে মজিদ ভাইকে দেয়া আমার পঁয়তাল্লিশ ভরি গয়না ফেরত পাব, একশো পার্সেন্ট গ্যারান্টি।

সকাল বেলা কলিং বেল শুনে দরজা খুলল তানি। অবাক হয়ে বলল, ‘মজিদ ভাই, আপনি?’

অনেকগুলো প্যাকেট তানির হাতে দিয়ে সে বলল, ‘আপনি আমার ছোট বোনের মত, রাতে শফিক ভাই জানাল আপনি বিপদ থেকে আমাকে বাঁচাচ্ছেন। জীবন দিয়ে আপনার এ উপকারের সম্মান রাখব আমি ইনশাল্লাহ্!’

তানি কিছুই না বলে তৈরি হয়ে এল লকার থেকে গয়নাগুলো তুলে আনার জন্য।

‘মজিদ ভাইয়ের গাড়িতেই চলো,’ শফিক বলল।

ফলগুলো টেবিলে রাখতেই টিকটিকি ডেকে উঠল: টিক্- টিক্-টিক্। তানি একটা অদ্ভুত ম্লান হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল।

সাত

টুবুনের বয়স এখন পনেরো বছর। পড়ে ক্লাস নাইনে, বুবুন বিশ। পড়ে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে। সেই পাঁচ থেকে পনেরো। মাঝে দশটি বছর চলে গেছে। অদ্ভুত ব্যাপার, এ দশ বছরে, একটিবারও দু’মেয়ের অসুস্থতার জন্য চোখের পানি ফেলতে হয়নি তানির। আর কখনও শ্বাসকষ্ট হয়নি টুবুনের।

শফিকের ব্যবসাতেও এখন আর অমন জাঁকজমক নেই। যে শফিক এক সময় বউকে দশ ভরি গয়না একসাথে কিনে সারপ্রাইজ দিয়েছে, এখন কেনা সম্ভব নয় আর। এটা শুধু ওর একার অবস্থা নয়, সমগ্র গার্মেন্টস শিল্পেই নেমেছে এই ধস। ওর সমসাময়িক যে প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। অসম্ভব পরিশ্রমী আর আত্মবিশ্বাসী শফিক আজও ধরে আছে তার ধসে যাওয়া ব্যবসার হাল। তবুও তানির কোন আক্ষেপ নেই খুইয়ে ফেলা গয়না নিয়ে। যদিও বড় হয়ে উঠছে দু’মেয়ে। দেখতে-দেখতেই ওরা হয়ে উঠবে বিয়ের যোগ্য। তানির বিশ্বাস ওর মন্দ কিছু ঘটবে না। হয়তো অত গয়নাগাটি মেয়েদের দিতে পারবে না, তবু ওদের অমঙ্গল হবে না।

আট

দুই মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষণ। কিছুক্ষণ আগে স্বর্ণা গেল। ওর স্বামী জহির সাহেব ব্যাঙ্কার। পোস্টিং হয়েছে ঢাকার বাইরে। ছেলে সাদ, ঘুমিয়ে পড়ে সকাল-সকাল। দুই বন্ধু এখন অনেকটা সময় নির্ভেজাল কাটাতে পারে। তানির টিকটিকি বিষয়ক গল্পটা শুনে স্বর্ণা বিনা মন্তব্যে উঠে চলে গেল। তানি বুঝল, স্বর্ণাও হয়তো মনে-মনে ওকে বলল, ‘হুম, ভারি দিলদরিয়ার কাজ করেছ তুমি!’

.

তানি বই পড়ছিল। মাঝরাত্রি পর্যন্ত স্বামীর জন্য অপেক্ষা আগের মতই। শফিক ফিরল রাত একটায়। খেতে-খেতে সব সময়ের মতই বলল ও, ‘বুঝলে, বউ, গয়নাগুলো তুমি একদিন না একদিন ফেরত পাবেই। শুনেছি যাকাত না দিলে ওসব মানুষের থাকে না। আমি সব সময় হিসাবের টাকার চেয়েও বেশি যাকাত মানুষকে দিইনি, বলো? ওগুলো আমার রক্ত পানি করা পরিশ্রমে কেনা জিনিস। মজিদ ব্যাটা একদিন না একদিন দেখবে ঠিকই আমার হাতে ধরা খাবে। কতদিন আর ও চোরের মত লুকিয়ে চলবে? আর তুমিও কেমন মেয়েলোক, সারাজীবন শুনলাম মেয়েরা স্বামীকে ছেড়ে দিলেও গয়না ছাড়তে চায় না। সবাই তো দেখি আমার চাইতে তোমাকেই বেশি দোষ দেয়। ও, ভুলেই গেছি তুমি তো আবার মহিলা হাতেম তাই, মহিলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহা দার্শনিক!’,

দশটি বছর এই কথাগুলোই বলে চলেছে শফিক। তানির খুব খারাপ লাগে। ও একটা অপরাধবোধ নিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে। সাথে-সাথে একটা টিকটিকি ডেকে ওঠে, ‘টিক্-টিক্-টিক্।’

শফিক বলল, ‘নাহ্, তোমার দোস্ত টিকটিকিগুলোর জ্বালায় দেখি কথা বলেও শান্তি নেই। আর অদ্ভুত ঘটনা! সারা ঢাকা শহর খুঁজলেও মনে হয় এরকম গুইসাপ সাইজের টিকটিকি দেখা যাবে না কোথাও। ওরা কেমনে তোমাকে খুঁজে পেল? –

তানি হাসতে থাকে জোরে-জোরে। রাতে হাসির শব্দে ঘুম থেকে উঠে আসে টুবুন আর বুবুন। বলে, ‘কী হয়েছে, মা? এত জোরে-জোরে হাসছ কেন?’

এবার তানি মেয়েদেরকে জড়িয়ে ধরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

টিক্-টিক্-টিক্-টিকটিকি ডাকছে। তানি হেসেই চলেছে। শফিক বলল, ‘তোদের মা খেপেছে রে, এত রাতে মান-ইজ্জত আর থাকল না। দরজা-জানালা বন্ধ কর।’

তানি কী করে বলবে শফিককে, মজিদ মিয়া আর। জীবনেও তোমার হাতে ধরা পড়বে না। গয়নাগুলোর সাথে যে বিনিময় করা হয়েছে সন্তানদের সুস্থতা। তানি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, এ গয়না তার এমনিতেই যেত। মজিদ মিয়া উছিলা হয়ে এসেছিল মাত্র। টিকটিকির সাথে তানির সম্পর্ক সত্যি এক ব্যাখ্যাহীন বাস্তবতা-যা ঘটেই চলেছে…!

নাশমান শরীফ

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *