চিত্র পরিচিতি

চিত্র পরিচিতি

পথের পাঁচালী—১৯৫৫। প্রযোজনা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কাহিনি: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। চিত্রগ্রহণ: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সংগীত: রবিশঙ্কর। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান: ভূমিকায়: কানু বন্দ্যোপাধ্যায় (হরিহর), করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় (সর্বজয়া), চুণীবালা দেবী (ইন্দিরা ঠাকরুন), উমা দাশগুপ্তা (দুর্গা), সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় (অপু)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির সুবর্ণপদক, ১৯৫৫

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, কান, ১৯৫৬, মানবিকবোধের শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য পুরস্কার; এডিনবারা চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৫৬, ডিপ্লোমা অফ মেরিট; ম্যানিলা ফিলম ফেস্টিভ্যাল, ১৯৫৬, গোল্ডেন কার্বাও (carbao) অ্যাওয়ার্ড; আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও প্রদর্শনী, সানফ্রান্সিসকো, ১৯৫৭, প্রথম পুরস্কার; বার্লিন, ১৯৫৭, সেলজনিক গোল্ডেন লরেল অ্যাওয়ার্ড; আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ভ্যাঙ্কুভার (কানাডা), ১৯৫৮, প্রথম পুরস্কার; দ্বিতীয় স্ট্যাফোর্ড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, কানাডা, ১৯৫৮, চিত্রসমালোচকদের বিচারে বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি; অ্যাফ্রো আর্টস থিয়েটার, নিউ ইয়র্ক, ১৯৫৯ সালে প্রদর্শিত শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবি, সাংস্কৃতিক পুরস্কার, Prix De La Nouvelle Crittique, Paris, ১৯৫৯, ২য় পুরস্কার; রোম, ভ্যাটিকান অ্যাওয়ার্ড; টোকিও, ১৯৬৬, শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবির পুরস্কার; ডেনমার্ক, ১৯৬৬, বছরের শ্রেষ্ঠ অইউরোপীয় ছবি (বদিল পুরস্কার)।

.

অপরাজিত—১৯৫৬। প্রযোজনা এপিক ফিল্মস, কলকাতা। মূল কাহিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা সত্যজিৎ রায়। চিত্রগ্রহণ সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সংগীত রবিশঙ্কর। সম্পাদনা দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায় কানু বন্দ্যোপাধ্যায় (হরিহর), করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় (সর্বজয়া), পিনাকী সেনগুপ্ত (ছোটো অপু), স্মরণকুমার ঘোষাল (তরুণ অপু), চারুপ্রকাশ ঘোষ (নন্দবাবু), সুবোধ গঙ্গোপাধ্যায় (হেডমাস্টার), সুদীপ্তা রায় (নিরুপমা), কালিচরণ রায় (প্রেসের মালিক)।

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ভেনিস ১৯৫৭, গোল্ডেন লায়ন অফ সেন্ট মার্ক (শ্রেষ্ঠ পুরস্কার); আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, সানফ্রান্সিসকো, ১৯৫৮, সিনেমা নুয়োভো (Nuovo) অ্যাওয়ার্ড এবং ক্রিটিক্স অ্যাওয়ার্ড; শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য শ্রী সত্যজিৎ রায় আন্তর্জাতিক সমালোচকদের পুরস্কারে পুরস্কৃত; ১৯৫৮—৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রেষ্ঠ অ-আমেরিকান ছবির জন্য গোল্ডেন লরেল পুরস্কার। পরিচালক ডেভিড সেলজনিক প্রদত্ত গোল্ডেন লরেল ট্রফি পুরস্কৃত। ডেনমার্ক, ১৯৬৭, বছরের শ্রেষ্ঠ অ-ইউরোপীয় ছবির জন্য বদিল (Bodil) পুরস্কার।

.

পরশ পাথর—১৯৫৭। প্রযোজনা: এল. বি. ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল। মূল কাহিনি: পরশুরাম। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। চিত্রগ্রহণ: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশক: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সংগীত: রবিশঙ্কর। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান: ভূমিকায় তুলসী চক্রবর্তী (পরেশ দত্ত), রানীবালা দেবী (গিরিবালা), কালী ব্যানার্জ (প্রিয়তোষ), গঙ্গাপদ বসু (ব্যবসায়ী), মণি শ্রীমানি (পুলিশ ডাক্তার)।

.

জলসাঘর—১৯৫৮। প্রযোজনা: সত্যজিৎ রায় প্রোডাকসন্স। মূল কাহিনি: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা সত্যজিৎ রায়। চিত্রগ্রহণ: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সংগীত: ওস্তাদ বিলায়েৎ খান। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। বাদ্যযন্ত্রী ও নর্তকী: বেগম আখতার, রোশন কুমারী, ওস্তাদ ওয়াহিদ খান ও বিসমিল্লা খান। প্রধান চরিত্র ছবি বিশ্বাস (বিশ্বম্ভর রায়), পদ্মা দেবী (বিশ্বম্ভরের স্ত্রী), গঙ্গাপদ বসু (মহিম), কালী সরকার (অনন্ত), তুলসী লাহিড়ী (তারাপ্রসন্ন)।

.

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির পুরস্কার, ১৯৫৮ (রৌপ্য পদক)

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৫৯ সঙ্গীতের জন্য রৌপ্য পদক

.

অপুর সংসার২৪—১৯৫৯। প্রযোজনা: সত্যজিৎ রায় প্রোডাকসন্স। মূল কাহিনি: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। চিত্রগ্রহণ: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সংগীত: রবিশঙ্কর। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (অপু), শর্মিলা ঠাকুর (অপর্ণা), স্বপন মুখার্জি (প্রণব), অলোক চক্রবর্তী (কাজল)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির সুবর্ণ পদক, ১৯৫৯

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

লন্ডন ফিলম ফেস্টিভ্যাল, ১৯৬০, শ্রেষ্ঠ মৌলিক এবং কল্পনাপ্রবণ চিত্র হিসাবে সাদারল্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ট্রফি। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, এডিনবারা, ১৯৬০, ডিপ্লোমা অফ মেরিট। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬০ সালে ন্যাশনাল বোর্ড অফ রিভিউ অফ মোশন পিকচার কর্তৃক শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবি বিবেচিত।

.

দেবী—১৯৬০। প্রযোজনা সত্যজিৎ রায় প্রোডাকসন্স। কাহিনি: প্রভাত মুখোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। চিত্রগ্রহণ: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সংগীত: আলি আকবর খান। সম্পাদনা দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায়: ছবি বিশ্বাস (কালীকিঙ্কর), সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (উমাপ্রসাদ), শর্মিলা ঠাকুর (দয়াময়ী)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির সুবর্ণ পদক, ১৯৬০

.

তিন কন্যা—১৯৬১। প্রযোজনা: সত্যজিৎ রায় প্রোডাকসন্স। মূল কাহিনি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। মণিহারা— কালী বন্দ্যোপাধ্যায় (ফণিভূষণ), কণিকা মজুমদার (মণিমালিকা); পোস্টমাষ্টার— অনিল চট্টোপাধ্যায় (নন্দলাল), চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় (রতন); সমাপ্তি— সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (অমূল্য), অপর্ণা দাশগুপ্তা (মৃন্ময়ী), সীতা দেবী (অমূল্যর মা), গীতা দে (মৃন্ময়ীর মা)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক, ১৯৬১

আন্তর্জাতিক পুরস্কার (দুই কন্যা)

মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৬২ মেলবোর্ন ট্রফি (গ্রাঁ প্রি) গোল্ডেন ব্যুমেরাং। বার্লিন, ১৯৬৩, সেলজনিক গোল্ডেন লরেল পুরস্কার।

.

রবীন্দ্রনাথ—১৯৬১। প্রযোজনা: ফিল্মস ডিভিশন। [রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারত সরকারের উদ্যোগে নির্মিত তথ্যচিত্র।] পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও নেপথ্য ভাষণ: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সংগীত: জ্যেতিরিন্দ্র মৈত্র। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। শিশু রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায়: সমীরণ ঘোষাল।

.

কাঞ্চনজঙ্ঘা—১৯৬২। প্রযোজনা: এন. সি. এ. প্রোডাকসন্স। কাহিনি: সত্যজিৎ রায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায়: ছবি বিশ্বাস (রায় বাহাদুর ইন্দ্রনাথ), অলকানন্দা রায় (মনীষা), অনিল চট্টোপাধ্যায় (অনিল), করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় (লাবণ্য), অরুণ মুখোপাধ্যায় (অশোক)। পাহাড়ি সান্যাল (জগদীশ)। ইস্টম্যান কালার।

.

অভিযান—১৯৬২। প্রযোজনা: অভিযাত্রিক। কাহিনি: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা :সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (নর সিং), ওয়াহিদা রেহমান (গুলাবী), রুমা গুহঠাকুরতা (নীলিমা), জ্ঞানেশ মুখার্জি (যোশেফ)। রবি ঘোষ (হেল্পার)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক, ১৯৬২

.

মহানগর—১৯৬৩। প্রযোজক: আর. ডি. বনশাল। মূল কাহিনি: নরেন্দ্রনাথ মিত্র।। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: অনিল চট্টোপাধ্যায় (সুব্রত মজুমদার), মাধবী মুখোপাধ্যায় (আরতি), ভিকি রেডউড (এডিথ)।

জাতীয় পুরস্কার

অল ইন্ডিয়া সার্টিফিকেট অফ মেরিট, ১৯৬৩

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৬৪, শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য শ্রী সত্যজিৎ রায় পুরস্কৃত (রৌপ্য-ভল্লুক)।

.

চারুলতা—১৯৬৪। প্রযোজনা: আর. ডি. বনশাল। মূল কাহিনি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (অমল), মাধবী মুখোপাধ্যায় (চারুলতা), শৈলেন মুখোপাধ্যায় (ভূপতি), গীতালি রায় (মানদা)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির সুবর্ণ পদক, ১৯৬৪

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৬৫, শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য সত্যজিৎ রায় পুরস্কৃত (রৌপ্য-ভল্লুক)। আকুপুলাকো (Acupulaco) ফিলম ফেস্টিভ্যাল ১৯৬৫, শ্রেষ্ঠ ছবি।

.

কাপুরুষ ও মহাপুরুষ—১৯৬৫। প্রযোজনা: আর. ডি. বনশাল। মূল কাহিনি: প্রেমেন্দ্র মিত্র ও পরশুরাম (রাজশেখর বসু)। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায় (কাপুরুষ): সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (অমিতাভ), মাধবী মুখোপাধ্যায় (করুণা), হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় (করুণার স্বামী)।

মহাপুরুষ চারুপ্রকাশ ঘোষ (বিরিঞ্চিবাবা), রবি ঘোষ (সহকারী)।

.

নায়ক—১৯৬৬। প্রযোজনা: আর. ডি. বনশাল। কাহিনি: সত্যজিৎ রায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সুব্রত মিত্র। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায় উত্তমকুমার (অরিন্দম), শর্মিলা ঠাকুর (অদিতি)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক, ১৯৬৬

শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও কাহিনিকার ১৯৬৬

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৬৬, চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায়ের শৈল্পিক উৎকর্ষতার স্বীকৃতি হিসাবে বিশেষ সম্মান— আন্তর্জাতিক সমালোচকদের পুরস্কার। বিশেষ ‘জুরি’ পুরস্কার।

.

চিড়িয়াখানা২৫—১৯৬৭। প্রযোজনা: স্টার প্রোডাকসন্স। মূল কাহিনি: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: উত্তমকুমার, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, সুশীল মজুমদার, কণিকা মজুমদার, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, জহর গাঙ্গুলি, গীতালি রায়। শ্রেষ্ঠ পরিচালনা।

.

গুপী গাইন বাঘা বাইন—১৯৬৮—১৯৬৯। প্রযোজনা পূর্ণিমা পিকচার্স। মূল কাহিনি উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরি। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা দুলাল দত্ত। প্রধান চরিত্রে তপেন চট্টোপাধ্যায় (গুপী), রবি ঘোষ (বাঘা), সন্তোষ দত্ত (শুণ্ডীর রাজা), হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (যাদুকর), জহর রায় (মন্ত্রী)।

.

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির সুবর্ণ পদক

উৎকৃষ্ট পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক ১৯৬৮

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৬৯ সিলভার রুশ অ্যাওয়ার্ড এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালনা

অ্যাডিলেড এবং অকল্যান্ড ও মৌলিকত্বের জন্য পরস্কার।

টোকিও চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৭০ মেরিট অ্যাওয়ার্ড

মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৭০ শ্রেষ্ঠ ছবি

.

অরণ্যের দিনরাত্রি—১৯৬৯—১৯৭০। প্রযোজনা: নেপাল দত্ত ও অসীম দত্ত। মূল কাহিনি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (অসীম), শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় (সঞ্জয়), শমিত ভঞ্জ (হরি), রবি ঘোষ (শেখর), পাহাড়ী সান্যাল (সদাশিব), শর্মিলা ঠাকুর (অপর্ণা), কাবেরী বোস (জয়া)।

.

প্রতিদ্বন্দ্বী—১৯৭০। প্রযোজনা: প্রিয়া ফিল্মস (শ্রীবিষ্ণু পিকচার্স)। মূল কাহিনি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায়: ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় (সিদ্ধার্থ), জয়শ্রী রায়, কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চৌধুরি।

জাতীয় পুরস্কার

দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চিত্র: বিশেষ পুরস্কার: এবং উৎকৃষ্ট

পরিচালনার জন্য পুরস্কার।

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

ভেনিস ফিলম ফেস্টিভ্যাল, ১৯৭২ এগজিবিশন প্রাইজ।

.

সীমাবদ্ধ—১৯৭১। প্রযোজনা: চিত্রাঞ্জলি। মূল কাহিনি: শংকর। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: বরুণ চন্দ (শ্যামলেন্দু), পারমিতা চৌধুরি (তার স্ত্রী), শর্মিলা ঠাকুর (শ্যালিকা)।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির সুবর্ণ পদক, ১৯৭১

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৭২ FIPRESCI Award

.

অশনি সংকেত—১৯৭৩। প্রযোজনা: বলাকা মুভিজ। মূল কাহিনি: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (গঙ্গাচরণ), ববিতা (তার স্ত্রী), সন্ধ্যা রায় (ছুটকি)। ইস্টম্যান কালার।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির সুবর্ণ পদক, ১৯৭৩

রাষ্ট্রপতির পুরস্কার (সংগীত ও পরিচালনার জন্য), ১৯৭৩

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৭৪ শ্রেষ্ঠ চিত্রের জন্য পুরস্কার (সুবর্ণ ভল্লুক)। শিকাগো চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৭৩ গোল্ডেন হুগো পুরস্কার।

.

সোনার কেল্লা—১৯৭৪। প্রযোজনা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কাহিনি: সত্যজিৎ রায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (ফেলুদা), সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় (তপেশ), সন্তোষ দত্ত (রহস্য কাহিনিকার)। ইস্টম্যান কালার।

জাতীয় পুরস্কার

রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক এবং

শ্রেষ্ঠ পরিচালনা, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক

ছবি এবং শ্রেষ্ঠ রঙিন ছবির জন্য পুরস্কার, ১৯৭৪।

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

তেহরান আন্তর্জাতিক শিশু : শ্রেষ্ঠ ছবি (ক্ষুদ্র স্বর্ণ শিলা)।

চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৭৫

.

জনঅরণ্য—১৯৭৫। প্রযোজনা: ইন্দাস ফিল্মস। মূল কাহিনি: শংকর। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়, পূর্ণেন্দু বসু। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: প্রদীপ মুখোপাধ্যায় (সোমনাথ), সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় (বাবা), দীপঙ্কর দে (দাদা), লিলি চক্রবর্তী (বউদি), রবি ঘোষ (মি. মিত্র), আরতি ভট্টাচার্য (কল গার্ল), পদ্মা দেবী (ম্যাডাম)।

জাতীয় পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতির পুরস্কার ১৯৭৫

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

Karlovyvary Film Festival

বিশেষ পুরস্কার

শতরঞ্জ কে খিলাড়ি—১৯৭৭। প্রযোজনা: সুরেশ জিন্দল। মূল কাহিনি: মুন্সী প্রেমচাঁদ। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: আমজাদ খান (নবাব ওয়াজেদ আলী খান), সঞ্জীব কুমার (মীর), শাবানা আজমি (মীরের বেগম), সৈয়দ জাফরি (মীর্জা), রিচার্ড অ্যাটেনবরো (জে আউট্রাম)। ইস্টম্যান কালার।

জাতীয় পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ হিন্দি ছবি, রাষ্ট্রপতির পুরস্কার, ১৯৭৭

.

জয় বাবা ফেলুনাথ—১৯৭৮। প্রযোজক: আর. ডি. বনশাল। মূল কাহিনি: সত্যজিৎ রায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: অশোক বসু। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (ফেলুদা), উৎপল দত্ত (মগনলাল মেঘরাজ), সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় (তপেশ), সন্তোষ দত্ত (রহস্য কাহিনিকার)। ইস্টম্যান কালার।

জাতীয় পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ শিশুচিত্র, রাষ্ট্রপতির পুরস্কার, ১৯৭৮

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

শিকাগো চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৭৯: গোল্ডেন হুগো অ্যাওয়ার্ড

সাইপ্রাস চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৮০: বিশেষ পুরস্কার

.

হীরক রাজা দেশে—১৯৮০। প্রযোজনা: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগ। কাহিনি: সত্যজিৎ রায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: অশোক বসু। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নেপথ্য গায়ক: অনুপ ঘোষাল। নাম ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (উদয়ন), উৎপল দত্ত (হীরক দেশের রাজা), রবি ঘোষ (বাঘা), তপেন চট্টোপাধ্যায় (গুপী)। ইস্টম্যান কালার।

জাতীয় পুরস্কার

১৯৮০ সালে শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক ছবি, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালনা এবং শ্রেষ্ঠ নেপথ্য সংগীতের জন্য রাষ্ট্রপতির পুরস্কার।

.

পিকু—১৯৮০—৮১। প্রযোজনা: ফরাসি টেলিভিশন। কাহিনি: সত্যজিৎ রায়। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান: ভূমিকায় অপর্ণা সেন, ভিক্টর ব্যানার্জি। ইস্টম্যান কালার।

.

সদগতি—১৯৮১। প্রযোজনা: ভারতীয় দূরদর্শন। মূল কাহিনি: মুন্সী প্রেমচাঁদ। ভাষা হিন্দি। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: অশোক বসু। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায়: ওমপুরী, স্মিতা পাতিল, মোহন আগাশে, গীতা সিদ্ধার্থ। ইস্টম্যান কালার।

.

ঘরে বাইরে—১৯৮৪। প্রযোজনা ন্যাশানাল ফিলম ডেভালপমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া। মূল কাহিনি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: সৌমেন্দু রায়। শিল্প নির্দেশনা: অশোক বসু। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। প্রধান ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (সন্দীপ), ভিক্টর ব্যানার্জি (নিখিলেশ), স্বাতীলেখা চট্টোপাধ্যায় (বিমলা), গোপা আইচ, জেনিফার কাপুর, মনোজ মিত্র, ইন্দ্রপ্রতিম রায়, বিমল চট্টোপাধ্যায়। ইস্টম্যান কালার।

জাতীয় পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেতা, ভিক্টর ব্যানার্জি, ১৯৮৪।

আন্তর্জাতিক পুরস্কার

দামাস্কাস চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৮৫ সুবর্ণ পদক (বিশেষ পুরস্কার)

.

কুমার রায়—তথ্যচিত্র, ১৯৮৭। প্রযোজনা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার; চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা সত্যজিৎ রায়; আলোকচিত্র বরুণ রাহা; শিল্প নির্দেশনা অশোক বসু; নেপথ্য সংগীত— অনুপ ঘোষাল; সম্পাদনা দুলাল দত্ত; ভূমিকায়: উৎপল দত্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত, তপেন চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি।

.

তিন বছর বিশ্রামের পর২৭ মঙ্গলবার ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ সত্যজিৎ রায় আবার লুক-থ্রু করলেন ক্যামেরার ‘আই পিস’ দিয়ে, চালালেন ক্যামেরা। আবোল তাবোলের টুকরো টুকরো স্কেচ দেয়ালে আটকে দেওয়া হয়েছিল। আলোয় ঝলমল করে উঠেছিল বকচ্ছপ, ট্যাঁশ গোরু, কুমড়োপটাশ আর রামগড়ুরের ছানারা। রাজ্য সরকার প্রযোজিত সুকুমার রায়ের ওপর তথ্যচিত্র, তাই নিয়েই শুরু হল সত্যজিতের দ্বিতীয় পর্ব, প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালে ‘পথের পাঁচালী’ ছবি দিয়ে। সত্যজিৎকে তখন বীমা কোম্পানি থেকে টাকা ধার করতে হয়েছিল।

বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে সত্যজিৎ তাঁর দ্বিতীয় পর্বের তথ্যচিত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তাঁর ইউনিট নিয়ে। সন্দীপ রায় সাহায্য করছিলেন তাঁকে।

.

[সত্যজিৎ প্রোডাকসন্স-গণশত্রু২৮। বৃহস্পতিবার ১ ডিসেম্বর, ১৯৮৮। প্রায় ৫ বছর ধরে ছাব্বিশতম কাহিনি চিত্র ‘গণশত্রু’র আউটডোরের কাজ শুরু করেছিলেন সত্যজিৎ রায় টালিগঞ্জের ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে। তিন নম্বর ফ্লোরে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, শুভার্থী এবং অ্যান্ড্রু রবিনসন২৬। তিনি সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার ওপর একটা বই লিখেছেন। ছেলে সন্দীপ শুটিং-এর পুরো দায়িত্বে ছিলেন। ইবসেনের কাহিনি অবলম্বনে বর্তমান পরিস্থিতিতে চিত্রনাট্য করেছেন সত্যজিৎ রায়।]

.

গণশত্রু—১৯৮৯। প্রযোজনা: এন. এফ. ডি. সি.। মূল কাহিনি: হেনরিখ জোহান ইবসেনের ১৮৮২ সালের রচনা ‘অ্যান এনিমি অফ দ্য পিপল’। চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। আলোকচিত্র: বরুণ রাহা। শিল্প নির্দেশনা: অশোক বসু। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। নাম ভূমিকায়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মনোজ মিত্র, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, ভীষ্ম গুহ ঠাকুরতা, সত্য ব্যানার্জি, মমতাশঙ্কর, রুমা গুহঠাকুরতা। ডাক্তার-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মেয়ে-মমতাশঙ্কর; ডাক্তারের স্ত্রী রুমা গুহঠাকুরতা; জনবার্তা পত্রিকার সম্পাদক দীপঙ্কর দে; মেয়র-ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়; ডাক্তারের মেয়ের প্রেমিক-ভীষ্ম গুহঠাকুরতা ইত্যাদি। ইস্টম্যান কালার। শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি ‘৮৯।

.

শাখাপ্রশাখা—২ জানুয়ারি ১৯৯০, মঙ্গলবার সকালে সত্যজিৎ রায় তাঁর নতুন ছবি ‘শাখাপ্রশাখা’র কাজ শুরু করলেন। প্রথম দিন ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে শুটিংয়ে অংশ নিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

ফ্রান্সের বিখ্যাত অভিনেতা জেরার্ড দেপার্দিউ এবং দ্যু প্লঁতিয়ের যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন। বিদেশের প্রযোজনায় সত্যজিৎ রায়ের এই প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাহিনি চিত্র।

মঙ্গলবার স্টুডিয়ো প্রাঙ্গণে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের জিপ রাখা ছিল।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, প্রমোদ গঙ্গোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, মমতাশঙ্কর, লিলি চক্রবর্তী প্রমুখ অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা ছাড়াও সত্যজিৎ রায় এই ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন।

সুখনার জঙ্গলে শুটিং২৯

শিলিগুড়ি, ২ মার্চ ১৯৯০— ‘এখানে এসে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুটিং করেছি তা সত্যিই অতুলনীয়। আমার কাজে এখানকার মানুষজন যেভাবে সহযোগিতা করেছে তাতেই আমি অভিভূত।’ এখানে একথা বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। চার দিন ধরে ‘শাখাপ্রশাখা’র শুটিং করে এখান থেকে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যাওয়ার পথে একথা বলেন তিনি। সত্যজিৎ রায় মূলত শুটিং করেন সুখনা লেকে এবং লেকসংলগ্ন জঙ্গলে। জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই তিনি একটানা ইনডোর শুটিং করেছিলেন ‘শাখাপ্রশাখা’র। ২৫ ফেব্রুয়ারি এসে পৌঁছান শিলিগুড়িতে। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুটিং শুরু করে দেন সুখনা লেকসংলগ্ন জঙ্গলের একটি বিশেষ অঞ্চলে। অভিনেতা অভিনেত্রী এবং ইউনিটের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে শুটিং করার সময় কোনোরকম অসুবিধের সম্মুখীন হতে হয়নি তাঁকে। শারীরিক দিক থেকেও শুটিং চলাকালীন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন সত্যজিৎ রায়। প্রসঙ্গত প্রায় ৬ বছর ধরে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে দীর্ঘ আউটডোর শুটিং করলেন তিনি। শুটিং-এর উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল এই প্রথম ‘ডাবিং’ ছাড়াই শাখাপ্রশাখা-র জন্য শব্দগ্রহণ করলেন দুই ফরাসি সাউন্ড রেকর্ডিস্ট।৩০

‘শাখাপ্রশাখা’৩১

সত্যজিৎ রায়ের আগের দুটো ছবি ‘ঘরে বাইরে’ ও ‘গণশত্রু’র চেয়ে ‘শাখাপ্রশাখা’ সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ছবি। বর্তমান সমাজের বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে একটা পরিবারের চার পুরুষকে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার ফলটা হয়ে ওঠে এই সমাজের একটা দলিল।

কলকাতা থেকে দু-শো কিলোমিটার দূরে এক অভ্রখনি এলাকার ঘটনা। সেই এলাকার একজন খাঁটি মানুষ, সততা আর বিশ্বাসের প্রতীক আনন্দ মজুমদার। তাঁর সত্তরতম জন্মদিনে নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতে তাঁর ৯৩ বছরের অথর্ব বাবা ও অসুস্থ মস্তিষ্কের মেজো ছেলে প্রশান্ত। অসুস্থতার খবর পেয়ে বাকি তিন ছেলে প্রবোধ, প্রবীর ও প্রতাপ আসে। সঙ্গে বড়ো বউ উমা, সেজো বউ তপতী ও তপতীর ছেলে ডিঙ্গো। আনন্দবাবুর আদর্শকে প্রশান্ত-প্রতাপ বিশ্বাস করে। প্রবোধ ও প্রবীর সম্পূর্ণ বিপরীত। রেস খেলা, মদ খাওয়া, কালো টাকা, দুনম্বরী এসব ওঁদের গা-সওয়া। বাবাকে দেখতে আসার পর সকলের চরিত্রটা ধরা পড়ে। ওদিকে আনন্দবাবু সেরে ওঠেন। তাঁর অনুরোধে সবাই পিকনিকে যায়। কলকাতা ফেরার আগে ডিঙ্গো একা দাদুর ঘরে গেলে ছবি চরমমাত্রা পায়। আশাহত আনন্দবাবু প্রশান্তর হাত দুটো ধরে মনে জোর আনার চেষ্টা করেন।

আনন্দমোহন হয়েছেন অজিত ব্যানার্জি, ওঁর বাবা প্রমোদ গাঙ্গুলি। চার ছেলে যথাক্রমে হারাধন ব্যানার্জি, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, দীপঙ্কর দে ও রঞ্জিত মল্লিক। হারাধনের স্ত্রী লিলি চক্রবর্তী। দীপঙ্করের স্ত্রী মমতাশঙ্কর। তাদের ছেলে সোহম চক্রবর্তী। মমতা ও লিলি খুব ভালো কাজ করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে আগে অনেক শিশুশিল্পী অভিনয় জীবন শুরু করেছে। সোহমের (বিট্টু) মুখেই রয়েছে ছবির শেষ কথা, ‘জানো দাদু আমি এক নম্বরী, দু-নম্বরী জানি।… তুমি তিন নম্বরী না চার নম্বরী?’ এই নির্মম কথাটা ভেঙে দিয়েছে আনন্দবাবুর মন। সত্যজিৎবাবু সোহমকে দিয়ে চমৎকার অভিনয় আদায় করে নিয়েছেন। সৌমিত্র অসাধারণ।

image43.jpg

 আগন্তুক (১৯৯১)-এর একটি দৃশ্যগ্রহণের আগে অভিনেতা উৎপল দত্তকে নির্দেশ পরিচালকের।

.

আগন্তুক৩২

‘আগন্তুক’ হল সত্যজিৎ রায়ের আঠাশতম ছবি। শাখাপ্রশাখা ছবির বিশ্বমুক্তির মধ্যেই ‘আগন্তুক’-এর কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল। কাহিনি সত্যজিতের, আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। মুখ্য ভূমিকায় আছেন উৎপল দত্ত, দীপঙ্কর দে, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, প্রমোদ গাঙ্গুলি, মমতাশঙ্কর, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রতা চট্টোপাধ্যায় এবং বিক্রম ভট্টাচার্য। প্রযোজনা: এন. এফ. ডি. সি। সংগীত: সত্যজিৎ।

এক সুখী সংসারে এক বৃদ্ধ অতিথি বা আগন্তুকের আবির্ভাব সংসারে কেমন করে অশান্তির সৃষ্টি করল তাই নিয়ে কাহিনি। আগন্তুক হলেন গৃহকর্ত্রী অনিলার (মমতাশঙ্কর) মামা। তাঁর দীর্ঘদিনের উপস্থিতি গৃহকর্তা সুধীন্দ্র (দীপঙ্কর) মেনে নিতে পারেন না। তিনি মামা মনোমোহনকে (উৎপল দত্ত) বাড়ি ছেড়ে যেতে বলার জন্য বন্ধু পৃথ্বীশকে (ধৃতিমান) খবর দেন। পৃথ্বীশ কাটখোট্টা মানুষ, রেখে ঢেকে কথা বলতে জানে না। অনিলার এটা পছন্দ নয়। এই নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তিক্ততা। এদিকে মনোমোহনের সঙ্গে সুধীন্দ্র আর অনিলার সন্তান সাত্যকির (বিক্রম ভট্টাচার্য) একটা সুন্দর দাদু-নাতি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একটা গভীর টেনশনের মধ্য দিয়ে কাহিনির পরিসমাপ্তি। যথারীতি এই কাহিনির সংগীত পরিচালকও সত্যজিৎ রায়।

নিজেরই লেখা চিত্রনাট্য অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় ছবির শুটিং শুরু করেন ২২ নভেম্বর ১৯৯০। চিত্রনাট্যটি আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। ছবির জন্যই চিত্রনাট্যটি লিখেছেন সত্যজিৎ। তবে জানা গেছে, এই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে সত্যজিৎ রায় এর আগে ছবি করেননি।

আউটডোরে ‘আগন্তুক’৩৩

বৃহস্পতিবার (২২.১১.৯০) শুরু হল সত্যজিৎ রায়ের নতুন ছবির শুটিং। একেবারে প্রথম দিনেই আউটডোর। খোলা আকাশের নিচে ময়দানে ঘাসের উপর ক্যামেরা বসল। সত্যজিৎ রায়কে কলকাতাবাসী দীর্ঘদিন এভাবে প্রকাশ্যে শুটিং করতে দেখেনি। গণশত্রু-তে আউটডোর ছিল না। শাখাপ্রশাখা-য় আউটডোর হয়েছে উত্তরবঙ্গে। নতুন ছবি ‘আগন্তুক’-এও বড়ো আউটডোর আছে। তা হবে বীরভূমে।

দুপুর বারোটার মধ্যেই ময়দানে পৌঁছে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ। ততক্ষণে এসে গেছেন ছবির প্রধান অভিনেতা উৎপল দত্ত ও কয়েকজন শিশুশিল্পী। উৎপল দত্ত ছোটোদের নিয়ে ঘাসের উপর বসে গল্প করছেন— এ নিয়েই ছিল এদিনের শুটিং। শুটিং চলল বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। চারপাশে একটু ভিড় হয়ে গেলেও নিরুপদ্রবে শুটিং চলেছে। কেউ কোনো বিরক্ত করেনি। এদিকে এদিনই রায়পরিবারে এসেছে এক নতুন অতিথি। দাদু হলেন সত্যজিৎ রায়। এদিন সকালে সন্দীপ-ললিতার একটি পুত্রসন্তান হয়। সকালে নার্সিংহোমে নবজাতককে দেখতে যান পরিবারের সকলে। তারপর গোটা দুপুর শুটিং-এ বাবাকে সহযোগিতা করেন সন্দীপ।

‘আগন্তুক’ ছবির গল্প সত্যজিৎবাবুর নিজের লেখা। চিত্রনাট্য, সংলাপ ও সংগীত পরিচালনার দায়িত্বও তাঁর ওপর। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রভাব ছবিতে থাকছে। এই জাতীয় বিষয় নিয়ে সত্যজিৎবাবু আগে কখনো ছবি করেননি।

আগন্তুক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ১৯৯১— ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপ্রেসি পুরস্কার।

জাতীয় পুরস্কার: ১৯৯২— শ্রেষ্ঠ কাহিনি চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার— স্বর্ণকমল।

***

২৪. অপুর সংসার— ‘অপু ত্রয়ী (অপু ট্রিলজি)’ লন্ডন, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৬০ এই তিনটি ছবির প্রতিটি লাভ করে উইংটন পুরস্কার।

২৫. চিড়িয়াখানা— ১৯৬২— উত্তমকুমার এই ছবিতে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই বছর অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় এবং সেই ভরত পুরস্কারের প্রথম প্রাপক হন উত্তমকুমার। যৌথভাবে ‘চিড়িয়াখানা’ এবং ‘অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি’ ছবিতে তাঁর অভিনয়ের জন্য।

২৬. অ্যান্ড্রু রবিনসন (১৯৫৭— ) অক্সফোর্ডের স্নাতক এই গবেষক ছিলেন প্রথমে রসায়ন এবং পরবর্তীতে স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর ছাত্র। পদার্থবিদ নেভিল রবিনসনের পুত্র অ্যান্ড্রু ভারতবর্ষে প্রথম আসেন ১৯৭৫-এ এবং ভারতের সাংস্কৃতিক, সামাজিক আবহে মুগ্ধ হন। ১৯৮৯-এ সত্যজিৎ রায়ের জীবনী ‘সত্যজিৎ রায় দ্য ইনার আই’ লিখে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ২০১৯ সালেও সদ্য প্রয়াত আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষের সঙ্গে যৌথভাবে লেখেন ‘সত্যজিৎ রায় ইন কালার’ বইটি।

২৭. ‘তিন বছর বিশ্রামের পর…’ ‘ঘরে বাইরে’-র শুটিং তখন পুরোদমে চলছে, ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সত্যজিৎ রায়কে ফোন করেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত; প্রয়োজন সত্যজিতের একটি সাক্ষাৎকার। সত্যজিৎ তাঁকে ১ অক্টোবর পনেরো মিনিট সময় দিলেন। দলবল, লাইট, ক্যামেরা, সাজসরঞ্জাম নিয়ে বুদ্ধদেব বাবু এলেন যথাসময়ে। কিন্তু বন্ধ ঘরে জোরালো আলোয় শুটিং চলল পনেরো মিনিটের বদলে তিন ঘণ্টা! ঘর্মাক্ত অবস্থায় সত্যজিৎ যখন বেরোলেন, তখন তিনি কার্যত অসুস্থ। এরপর সেদিন স্নান খাওয়া সেরে দুপুরে নিজের কাজের উদ্দেশ্যে বেরোনোর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হন সত্যজিৎ। বেলভিউ নাসিং হোমের আই সি ইউ-তে কাটে দুটি মাস। ডিসেম্বর মাসে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ‘ঘরে বাইরে’র বাকি কাজ পুত্র সন্দীপ রায়ের সহায়তায় শেষ করেন। ডাক্তারদের নির্দেশমতো তখন তার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা বন্ধ। যথেষ্ট সাবধানে থাকা সত্ত্বেও ১৯৮৪-এর ১১ মার্চ সকালে নিজের বাড়িতেই হার্ট অ্যাটাক হয় সত্যজিতের। আবার একমাস নার্সিং হোমে। ১৯ মে থেকে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট। ডাক্তাররা আর ভরসা পেলেন না সেভাবে, বিদেশে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিলেন তারা। ১২ জুন ১৯৮৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন সত্যজিৎ। ১৮ জুন হিউস্টনে ডা. ডেন্টন কুলি-র তত্ত্বাবধানে বাইপাস সার্জারি হয় সত্যজিৎ রায়ের। সফল অস্ত্রোপচার। হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরলেন ২৮ জুন। কিন্তু দুর্ভোগের বাকি ছিল তখনও, ১৭ জুলাই মধ্যরাতে শরীরে অসহ্য কাঁপুনি নিয়ে ফের হাসপাতালে ভরতি হতে হল সত্যজিতকে। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানালেন প্রস্টেটে সমস্যা এবং অপারেশন ছাড়া গত্যন্তর নেই। ২০ জুলাই আবার শল্যোপচার। ২৫ তারিখ ছাড়া পেলেন। ৪ আগস্ট লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন সত্যজিৎ রায়। দশদিন পর ১৪ আগস্ট কলকাতায় প্রত্যাবর্তন। সত্যজিতের ফিরে আসাকে কেন্দ্র করেও একটি প্রচ্ছদ কাহিনি প্রকাশিত হয় আনন্দলোক পত্রিকায়। ‘সুস্থ সত্যজিৎ স্বদেশে’ এই শীর্ষক নিয়ে। ৪ জানুয়ারি ১৯৮৫-তে কলকাতায় মুক্তি পায় ‘ঘরে বাইরে’।

১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত সত্যজিৎ মূলত লেখালেখি, সম্পাদনা, চিত্রাঙ্কন এবং অনুবাদের কাজ নিয়ে মগ্ন ছিলেন। ডাক্তারি নির্দেশ মেনে ওই সময়ে কোনো ছবির কাজে হাত দিতে পারেননি তিনি। সারাজীবন কর্মব্যস্ত থাকা মানুষটি এহেন বাঁধা নিয়মের মধ্যে পড়ে স্বভাবতই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু সেই নির্দেশ না মেনে ওঁর উপায়ও ছিল না। তাঁর শরীর তখন মনের গতিবেগের সাথে পাল্লা দিতে অসমর্থ হচ্ছিল। ১৯৮৭-তে পিতা সুকুমার রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে হাত দিলেন সত্যজিৎ। মূলত স্থিরচিত্র এবং ধারাভাষ্য দ্বারা চালিত হলেও, কলকাতার কিছু জায়গার বহির্দৃশ্য এবং সুকুমার রায় রচিত ‘লক্ষণের শক্তিশেল’, ‘ঝালাপালা’ এবং ‘হ য ব র ল’র নির্বাচিত দৃশ্যের অভিনয় গৃহীত হয় ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে। পাঠভবন স্কুলে আয়োজিত ‘সুকুমার মেলা’য় ছবিটি প্রদর্শিত হয়।

২৮. গণশত্রু— ১ ডিসেম্বর ১৯৮৮, পাঁচ বছর পর ফের সত্যজিৎ রায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজের ছাব্বিশতম কাহিনিচিত্রে কাজ নিয়ে। বহুদিন পর কাজে ফেরায় প্রথমদিন ঈষৎ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন সত্যজিৎ। স্ত্রী বিজয়া রায়ের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায় যে সেদিন খুবই মুষড়ে পড়েন সত্যজিৎ রায়। সৌভাগ্যের বিষয় পরের দিন নিজস্ব ছন্দে ফিরে যখন শটের শেষে ‘কাট’ বলেন; তখন সেই জলদগম্ভীর স্বরে গমগম করে উঠেছিল ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর ফ্লোর। ‘গণশত্রু’-কে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা যে কোন স্তরে উঠেছিল তা খানিকটা টের পাওয়া যায় সেই সময়ে প্রকাশিত বাংলা ইংরেজি ভাষার প্রচ্ছদকাহিনিতে এর উপস্থিতি দেখে। Cinema India, The Telegraph এবং আনন্দলোক, এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আনন্দলোক-এর দুটি সংখ্যায় ‘গণশত্রু’র শুটিং চলাকালীন এবং শুটিং শেষ হওয়ার পরের ঘটনার প্রতিবেদন রচনা করেন অভিনেতা সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, যিনি সবার কাছে ‘তোপসে’ হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়। ছবির শুটিং চলাকালীনই সত্যজিৎ সম্মানিত হন ফরাসি সরকার প্রদত্ত লিজ দঁ নর সম্মানে এবং সেই অনুষ্ঠানেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট মিতেরঁ সত্যজিতের আগামী ছবি ‘গণশত্রু’-কে ফ্রান্সে প্রদর্শনের আমন্ত্রণ জানান। কার্যত ঘটেওছিল তাই, ১৯ জানুয়ারি ১৯৯০, কলকাতায় ‘গণশত্রু’-র মুক্তির আগেই ২৮ জুন ১৯৮৯-এ ছবিটি প্যারিসে মুক্তিলাভ করে। সত্যজিতের সঙ্গে ফরাসি সংযোগ আরও নিবিড় হয় এই ছবিকে কেন্দ্র করে।

২৯. সুখনার জঙ্গলে শুটিং— ‘৬ বছর পরে চিকিৎসকের অনুমতি… দীর্ঘ আউটডোর শুটিং করলেন তিনি।’ উল্লিখিত বাক্যাংশে সত্যজিৎ রায়ের চিকিৎসক ড. কান্তিভূষণ বক্সীর কথা বলা হয়েছে। ওঁর তত্ত্বাবধানে সত্যজিৎ রায় কাটিয়েছিলেন শেষ আটটি বছর। ৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৪-তে বর্ধমানের চকদিঘী রাজবাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় ‘ঘরে বাইরে’র আউটডোরে শুটিং করেছিলেন সত্যজিৎ। তারপর সুদীর্ঘ বিরতি। স্বাস্থ্যোন্নতির পর ১৯৮৯-তে সম্পূর্ণ স্টুডিয়োর মধ্যে শুটিং করেন ‘গণশত্রু’ ছবির। তার পরের বছর ‘শাখাপ্রশাখা’ ছবির হাত ধরে শিলিগুড়ির সুখনা লেক ও সংলগ্ন জঙ্গলে ছবির চড়ুইভাতির দৃশ্যগ্রহণ করেন পরিচালক।

৩০. ‘দুই ফরাসি সাউন্ড রেকর্ডিস্ট’ (সুখনার জঙ্গলে শুটিং)— পিয়ের ল্যানোয়া এবং দানী কারক্যাঁ। দ্বিতীয় ব্যক্তি ছবির শব্দগ্রহণের জন্য বুম-ম্যান হিসেবেও কাজ করেন এই ছবিতে।

.

৩১. ‘শাখাপ্রশাখা’ ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯) ছবির জন্য ‘চিরিমিরি’-তে অভ্র খনির কাছে আউটডোর শুটিং করেন সত্যজিৎ। সেই সময় ওই প্রেক্ষাপটকে ঘিরে তিনি একটি চিত্রনাট্য রচনা করতে শুরু করেন, যার নাম ‘শাখাপ্রশাখা’। অসমাপ্ত সেই চিত্রনাট্য প্রথম প্রকাশিত হয় এক্ষণ পত্রিকায়। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায়ের লেখা তিনরকম (প্রকাশনা কথামালা) এবং ‘পিকুর ডায়রি ও অন্যান্য’ (প্রকাশনা আনন্দ পাবলিশার্স) বইতে এটি স্থান পায়। ‘গণশত্রু’ (১৯৮৯) ছবি তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় সত্যজিৎ তাঁর এই অসম্পূর্ণ চিত্রনাট্যটি নিয়ে ঘষামাজা করে নতুন এক চেহারা দেন এবং চলচ্চিত্রায়ন শুরু করেন। এই প্রথম সত্যজিৎ রায়ের ছবির প্রযোজনা করেন দুটি বিদেশি সংস্থা। বিখ্যাত ফরাসি অভিনেতা জেরাউ দেপার্দ্যু এবং টোসকাঁ দ্য প্ল্যাঁতিয়ে-র ডি ডি ফিল্মস ও এরাটো ফিল্মস এবং সত্যজিৎ রায় প্রোডাকশনস-এর সম্মিলিত প্রযোজনায় নির্মিত হয় ‘শাখাপ্রশাখা’। ছবির ব্যবসায়িক প্রাপ্তি এবং বিদেশে প্রদর্শনের থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ পাওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কিছু প্রতারণা ও অন্যান্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল সত্যজিৎ রায়কে। সত্যজিৎ প্রয়াণের পরবর্তী সময়ে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হলেও, ভারতে প্রথম দূরদর্শনে এর সম্প্রচার হয়েছিল ৫ মে ১৯৯১। প্যারিসে ছবির মুক্তিলাভ এর কয়েক মাস পরে, ২১ আগস্ট ১৯৯১।

৩২. ‘আগন্তুক’ ‘কাহিনি সত্যজিতের, আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি।’ এই উক্তিটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়, ১৯৮১-তে প্রকাশিত ‘আরও বারো’ বইতে সত্যজিৎ রায় সরাসরি লেখেন ‘অতিথি’ গল্পটি। ‘আগন্তুক’ ছবির মূল কাঠামো সত্যজিতের স্বরচিত এই গল্পের উপর আধারিত।

৩৩. আউটডোরে ‘আগন্তুক’ ‘আগন্তুক’-এর শুটিং শুরু হয় ২২ নভেম্বর ১৯৯০ সালে, ওই দিনই সত্যজিৎ রায়ের পৌত্র সৌরদীপ রায় জন্মগ্রহণ করে। সকালে নার্সিং হোমে নবজাতককে দেখে এসে বেলা বারোটা নাগাদ ময়দানে শুরু হয় শুটিং। প্রোডাকশন ম্যানেজার ও দীর্ঘদিনের সঙ্গী শ্রী অনিল চৌধুরি রসিকতার সুরে সত্যজিতকে বলেন, ‘যাক আপনার তাহলে শাখাপ্রশাখা হল।’ অভিনেতা উৎপল দত্ত সেই রসিকতার রেশ ধরে বললেন, ‘এ যে ঘরে বাইরে আগন্তুক!’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ‘আগন্তুক’ ছবির আউটডোর শুটিং হয়েছিল শান্তিনিকেতনের ‘বনের পুকুর’ গ্রামে, শিয়ালদহ ফ্লাইওভার এবং গড়ের মাঠ-এ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *