কালিন্দী – ১৪

১৪

রংলাল মনের ক্ষোভে রক্তচক্ষু হইয়াই শ্রীবাসের বাড়িতে হাজির হইল। শ্রীবাস তখন পাশের গ্রামের জন কয়েক মুসলমানের সঙ্গে কথা বলিতেছিল। ইহারা এ অঞ্চলের দুর্দান্ত লোক, কিন্তু শ্রীবাসের খাতক। বর্ষায় ধান, হঠাৎ প্রয়োজনে দুই-চারিটা টাকা শ্রীবাস ইহাদের ধার দেয়, সুদ অবশ্য লয় না, কারণ মুসলমানদের ধর্মশাস্ত্রে সুদ লওয়া মহাপাতক।

কেহ কেহ হাসিয়া শ্রীবাসকে বলে, ঘরে তো টিন দিয়েছেন পাল মশায়, আর ও বেটাদের সুদ ছাড়েন কেন?

শ্রীবাস উত্তর দেয়, কিন্তু দরজা যে কাঠের রে ভাই, রাত্রে ভেঙে ঢুকলে রক্ষা করবে কে? তা ছাড়া ও-রকম দু-দশটা লোক অনুগত থাকা ভাল। ডাকতে-হাঁকতে অনেক উপকার মেলে হে।

রংলালের মূর্তি দেখিয়া শ্রীবাস হাসিল, কিন্তু এতটুকু অবজ্ঞা বা বিরক্তি প্রকাশ করিল না। মিষ্টি হাসিমুখে আহ্বান জানাইয়া বলিল, আসুন আসুন। কই দরকার ছিল তো ওখানে কই কোন কথা বললেন না? ওরে তামাক সাজ, তামাক সাজ, দেখি।

বিনা ভনিতায় রংলাল কথা প্রকাশ করিয়া প্রশ্ন করিল, এর মানে কি পাল মশায়?

শ্রীবাস একেবারে যেন আকাশ হইতে পড়িল, বলিল, সে কি, ওই জমিটাই আপনারা নেবার জন্যে কোপ মেরে রেখেছেন নাকি? কিন্তু আমার বন্দোবস্ত যে আপনাদের অনেক আগে পাল মশায়! আপনারাই তা হলে আমার জমি নিতে গিয়েছিলেন বলুন?

রংলাল সবিস্ময়ে বলিল, মানে? আমরা ছোট দাদাবাবুর সামনে সেদিন-

বাঁধা দিয়া শ্রীবাস বলিল, আমার বন্দোবস্ত বড় দাদাবাবুর কাছে পাল মশায়। ননী যেদিন বিকেলে খুন হল, সেই দিন সকালে আমি বন্দোবস্ত নিয়েছি। কেবল, বুঝলেন কিনা- এই ঝগড়া-মারামারির জন্যেই ওতে আমি হাত দিই নাই।

রংলাল উত্তেজিত হইয়া উঠিল, এ কি ছেলে ভোলাচ্ছেন পাল, না পাগল বোঝাচ্ছেন? আমি ছেলেমানুষ, না পাগল? বড় দাদাবাবু আপনাকে জমি বন্দোবস্ত করে গিয়েছেন?

শ্রীবাস শান্তভাবে বলিল, বসুন। বলি, পড়তে শুনতে তো জানেন আপনি। কই, দেখুন দেখি এই চেকরসিদ খানা। তারিখ দেখুন, সন সাল দেখুন, তার উলটো পিঠে জমির চৌহদ্দি দেখুন; সে সময়ের লায়েব আমাদের মজুমদার মশায়ের সই দেখুন। তারপর, তিনিও আপনার বেঁচে রয়েছেন, তাঁর কাছে চলুন। তিনি কি বলেন শুনুন-, বলিয়া শ্রীবাস একখানি জমিদারী সেরেস্তার রসিদ বাহির করিয়া রংলালের সম্মুখে ধরিল।

শ্রীবাসের কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য, অন্তত রসিদখানা সেই প্রমাণই দিল। কিন্তু রংলাল বলিল, আমরাও ধানচালের ভাত খাই পাল, এ আপনি মজুমদারের সঙ্গে ষড় করে করেছেন। এ আপনার জাল রসিদ। আমরা ও-জমি ছাড়ব না, এ আপনাকে আমরা বলে দিলাম।

শ্রীবাস হাসিয়া বলিল, বলে না দিলেও সে আমি জানি পাল মশাই। বেশ, তা হলে কালই যাবেন চরের ওপর, কাল ঘাস কেটে জমি সাফ করতে আমার লোক লাগবে, পারেন উঠিয়ে দেবেন! তারপর তাহার অনুগত মুসলমান কয়েকজনকে সম্বোধন করিয়া বলিল, এই শুনলে তো মাসুদ, তা হলে খুব ভোরেই কিন্তু তোমরা এস। বুঝেছ তো, তোমরাই আমার ভরসা।

মাসুদ শ্রীবাসকে কোন উত্তর না দিয়া রংলালকে বলিল, তা হলে তাই আসব পাল। ভয় নাই, পুরু ঘাসের ওপর পড়লে পরে দরদ লাগবে না গায়ে।–বলিয়া সে খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল।

রংলাল নির্বাক হইয়া রহিল, কিন্তু নবীন এবার হাসিল।

* * *

নবীন সমস্তক্ষণ নির্বাক হইয়া রংলালের অনুসরণ করিতেছিল। শ্রীবাসের বাড়ি হইতে বাহির হইয়া সে বলিল, পাল, আমি তোমার এই সবের মধ্যে নাই কিন্তু।

রংলালের বুকের ভিতরে অবরুদ্ধ ক্রোধ হুহু করিতেছিল, শ্রীবাস ও মজুমদারের প্রবঞ্চনার ক্ষোভ, সঙ্গে সঙ্গে চরের উর্বর মৃত্তিকার প্রতি অপরিমেয় লোভ, এই দুইয়ের তাড়নায় সে যেন দিগ্বিদিক-জ্ঞানশূন্য হইয়া উঠিয়াছিল। সে মুখ বিকৃতি করিয়া ভেঙাইয়া বলিয়া উঠিল, হ্যাঁ-হ্যাঁ, সে জানি। যা যা, বেটা বাগদী, ঘরে পরিবারের আঁচল ধরে বসে থাকগে যা।

নবীন জাতে বাগদী, আজ তিন পুরুষ তাহারা জমিদারের নগ্‌দীগিরিতে লাঠি হাতেই কাল কাটাইয়া আসিয়াছে, কথাটা তাহার গায়ে যেন তীরের মত গিয়া বিঁধিল। সে রূঢ় দৃষ্টিতে রংলালের মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, আমি পরিবারের আঁচল ধরে বসে থাকি আর যাই করি, তুমি যেন যেও। চরের ওপরেই আমার সঙ্গে দেখা হবে, বুঝলে? শুধু আমি লয়, গোটা বাগদীপাড়াকেই ওই চরের ওপর পাবে। বলিয়া সে হনহন করিয়া চলিতে আরম্ভ করিল।

কথাটা রংলাল রাগের মুখে বলিয়া ফেলিয়াই নিজের অন্যায়টা বুঝিয়াছিল। এ-ক্ষেত্রে বাহুবলের একমাত্র ভরসাস্থল নবীন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইতে হইলে বাগদীদের দলে না লইলে উপায়ন্তর নাই। নবীন সমস্ত বাগদীপাড়াটার মাথা। তাহার কথায় তাহারা সব করিতে পারে। মুহূর্তে রংলাল আপনা হতেই যেন পাল্টাইয়া গেল, একেবারে সুর পাল্‌টাইয়া সে ডাকিল, নবীন! নবীন! শোন হে, শোন।

ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া নবীন ফিরিয়া দাঁড়াইল বলিল, বল।

রসিকতা করিয়া অবস্থাটাকে সহজ করিয়া লইবার অভিপ্রায়েই রংলাল বলিল, ওই, রাগের চোটে যে পথই ভুলে গেলে হে! ও দিকে কোথা যাবে?

যাব আমার মনিব-বাড়ি। অনেক নুন আমি খেয়েছি, তাদের অপমান লোকসান আমি দেখতে পারব না। আমি হুকুম আনতে চললাম, তোমাদিগেও জমি চষতে দোব না, ও শ্রীবাসকেও না, গোটা বাগদীপাড়া আমরা কাল মনিবের হয়ে যাব। এ তোমরা জেনে রাখ।

রংলাল একটু চিন্তা করিয়া বলিল, চল, আমিও যাব। টাকা দিয়েই বন্দোবস্ত আমরা করে নেব। তা হলে তো হবে?

নবীন খুশি হইয়া বলিল, সে আমি কতদিন থেকে বলছি বল দেখি?

নবীন চক্রবর্তী বাড়ির পুরানো চাকর। শুধু সে নিজেই নয়, তাহার ঠাকুরদাদা হইতে তিন পুরুষ চক্রবর্তী-বাড়ির কাজ করিয়া আসিয়াছে। এ জমির বন্দোবস্তের গোড়া হইতেই মনে মনে সে একটা দ্বিধা অনুভব করিয়া আসিতেছিল। সেলামী না দিয়া জমি বন্দোবস্ত পাইবার আবেদনের মধ্যে তাহার একটা দাবি ছিল, কিন্তু অহীন্দ্র তাহাতে অসম্মতি জানাইলে রংলাল যখন আইনের ফাঁকে ফাঁকি দিবার সঙ্কল্প করিল, তখন মনে মনে একটা অপরাধ সে অনুভব করিয়াছিল। কিন্তু সে কথাটা জোর করিয়া সে প্রকাশ করিতে পারে নাই দলের ভয়ে। রংলাল এবং অন্য চাষী কয়জন যখন এই সঙ্কল্প করিয়া বসিল, তখন সে একা অন্য অভিমত প্রকাশ করিতে কেমন সঙ্কোচ অনুভব করিয়াছিল। তাহার সঙ্গে সঙ্গে ছিল খানিকটা লোভ। অন্যকে ফাঁকি দেওয়ার আনন্দ না হইলেও, তাহাদিগকে খাতির বা স্নেহ করিয়া এমনি দিয়াছেন, ইহার মধ্যে একটা আত্মপ্রসাদ আছে, তাহার প্রতি একটা আসক্তি তাহার অপরাধবোধকে আরও খানিকটা সঙ্কুচিত করিয়া

দিয়াছিল। সর্বশেষ রংলাল যখন বলিল, ওই সাঁওতালদের চেয়েও কি আমরা চক্রবর্তী-বাড়ির পর?–তখন মনে মনে সে একটা ক্রুদ্ধ অভিমান অনুভব করিল, যাহার চাপে ওই সঙ্কোচ বা দ্বিধাবোধ একেবারেই যেন বিলুপ্ত হইয়া গেল। যাহার জন্য অসঙ্কোচে রংলালদের দলে মিশিয়া সে, উচ্চকণ্ঠে না হইলেও প্রকাশ্যভাবেই, বিদ্রোহ ঘোষণা করিয়া উঠিয়া আসিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আবার সেই দ্বিধা তাহার মনে জাগিয়া উঠিয়াছে। সেইজন্য মামলা-মোকদ্দমায় সম্মতি সে দিতে পারে নাই। তারপর শ্রীবাসের এই ষড়যন্ত্রের কথা অকস্মাৎ প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে স্পষ্ট দেখিতে পাইল, চারিদিক হইতে চক্রবর্তী বাড়িকেই ফাঁকি দিবার আয়োজন চলিতেছে। তাহারা, শ্রীবাস, মজুমদার, সকলেই ফাঁকি দিতে চায় ঐ সহায়হীন চক্রবর্তী-বাড়িকে, তাহারই পুরানো মনিবকে। এক মুহূর্তে তাহার মনের দ্বন্দ্বের মীমাংসা হইয়া গেল, তিন পুরুষের মনিবের পক্ষ হইয়া সমগ্র বাগদীবাহিনী লইয়া লড়াই দিবার জন্য তাহার লাঠিয়াল-জীবন মাথা চাড়া দিয়া উঠিল।

চক্রবর্তী-বাড়ির পুরাতন চাকর হিসাবে অন্দরে যাতায়াতের বাধা তাহার ছিল না, সে একেবারে সুনীতির কাছে আসিয়া অকপটেই সমস্ত বৃত্তান্ত নিবেদন করিয়া মাথা নীচু করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। হৃদয়াবেগের প্রাবল্যে তাহার ঠোঁট দুইটি থরথর করিয়া কাঁপিতেছিল। রংলাল দাঁড়াইয়া ছিল দরজার বাহিরে রাস্তাঘরে।

সমস্ত শুনিয়া সুনীতি কাঠের পুতুলের মত দাঁড়াইয়া রহিলেন, একটি কথাও বলিতে পারিলেন না। কথা বলিল মানদা, সে তীক্ষ্ণস্বরে বলিয়া উঠিল, ছি লগদী, ছি! গলায় একগাছা দড়ি দাও গিয়ে।

সুনীতি এবার বলিল, না না, মানদা, দোষ একা নবীনের নয়, দোষ অহিরও। সাঁওতালদের যখন বিনা-সেলামীতে জমি দিয়েছে, তখন নবীনকেও দেওয়া উচিত ছিল। সত্যিই তো, নবীন কি আমাদের কাছে সাঁওতালদের চেয়েও পর?

নবীন এবার ছোট্ট ছেলের মত কাঁদিয়া ফেলিল। দুয়ারের ওপাশ হইতে রংলাল বেশ আবেগভরেই বলিল,বলুন মা, আপনিই বলুন। আমাদের অভিমান হয় কি না হয়, আপনিই বলুন। মনে করে দেখুন, আমিই বলেছিলাম সর্বপ্রথম যে, এ-চর আপনাদের ষোল-আনা। তবে ধম্মের কথা যদি ধরেন, তবে আমরা পেতে পারি। আপুনি বলেছিলেন, ধম্মকে বাদ দিয়ে কি কিছু করা যায় বাবা, তোমরা নিশ্চিন্ত থাক। তাতেই মা, সেই দাবিতে আমরা আবদার করে বলেছিলাম, আমরা দিতে পারব না সেলামী।

সুনীতি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, সবই বুঝলাম বাবা, কিন্তু এখন আমি কি করব, বল?

নবীন বলিল, আমাকে হুকুম দেন মা আমি কাউকেই জমি চষতে দেব না। গোটা বাগদীপাড়া লাঠি হাতে গিয়ে দাঁড়াব। থাকুক জমিই এখন খাসদখলে।

রংলাল বাহির হইতে গভীর ব্যাগ্রতা-ব্যাকুল স্বরে বলিয়া উঠিল, এখুনি আমি আড়াই শ টাকা এনে হাজির করছি নবীন, জমি আমাদিগে বন্দোবস্ত করে দেন রাণীমা।

নবীন বলিল, সেই ভাল মা, ঝঞ্ঝাট পোয়াতে হয় আমরাই পোয়াব, আপনাদের কিছু ভাবতে হবে না।

সুনীতি অনেক কিছু ভাবিতেছিলেন। তাহার মধ্যে যে কথাটা তাঁহাকে সর্বাপেক্ষা পীড়িত করিতেছিল, সেটা নবীন ও রংলালের কথা। নিজের স্বার্থের জন্য কেমন করিয়া এই গরীব চাষীদের এমন রক্তাক্ত বিরোধের মুখে ঠেলিয়া দিবেন? তাহার মনের বিচারে-স্বার্থটা ষোল-আনা যে একা তাঁহারই।

মানদা কিন্তু হাসিয়া বলিল, সস্তায় কিস্তি মেরে ঝঞ্ঝাট পোয়াতে গায়ে লাগে না, না কি গো লগদী? আমিও কিন্তু বিঘে পাঁচেক জমি নেব মা। আমারও তো শেষকাল আছে। আমিও টাকা দেব। লগদী যা দেবে তাই দেব। লগদীর চেয়ে তো আমি পর নই মা।

মানদার কথার ধরনটা শুধু ধারালোই নয়, বাঁকাও খানিকটা বটে। নবীন অসহিষ্ণু হইয়া পড়িল, দুয়ারের ও-পাশে রংলাল দাঁতে দাঁতে টিপিয়া নিরালা অন্ধকারের মধ্যেই নীরব ভঙ্গিতে তাহাকে শাসাইয়া উঠিল। সুনীতি কি বলিতে গেলেন কিন্তু তাহার পূর্বেই বাহিরের সদর দরজার ওপাশে কে গলার সাড়া দিয়া আপনার আগমনবার্তা জানাইয়া দিল। গলার সাড়া সকলেরই অত্যন্ত পরিচিত। সুনীতি চঞ্চল হইয়া উঠিলেন, মানদা সবিস্ময়ে বলিল, ওমা লায়েববাবু যে।

পরমুহূর্তেই শান্ত বিনীত কণ্ঠস্বরে মজুমদার বাহির হইতে ডাকিলেন, বউঠাকরুন আছেন নাকি?

নবীন খানিকটা দুর্বলতা অনুভব করিয়া চঞ্চল হইয়া পড়িল, দরজার আড়ালে রংলালের মুখ শুকাইয়া গেল। মানদা মৃদুস্বরে সুনীতিকে প্রশ্ন করিল, মা?

সুনীতি মৃদুস্বরেই বলিলেন, আসতে বল।

মানদা ডাকিল, আসুন, ভেতরে আসুন।

সুনীতি বলিলেন, একখানা আসন পেতে দে মানদা।

প্রশান্ত হাসিমুখে যোগেশ মজুমদার ভিতরে আসিয়া সবিনয়ে বলিল, ভাল আছেন বউঠাকরুন? কর্তা ভাল আছেন?

অবগুণ্ঠন অল্প বাড়াইয়া দিয়া সুনীতি বলিলেন, উনি আছেন সেই রকমই। মাথার গোলমাল দিন দিন যেন বাড়ছে ঠাকুরপো।

মজুমদার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিল, আহা-হা। কণ্ঠস্বরে, ভঙ্গিতে যতখানি সমবেদনার আভাস প্রকাশ পাইতে পারে, ততখানিই প্রকাশ পাইল। তারপর মজুমদার বলিল, একবার বৈদ্যপারুলিয়ার কবিরাজদের দেখালে হত না? চর্মরোগে, বিশেষত কুষ্ঠ ইত্যাদিতে ওরা ধন্বন্তরি।

সুনীতির মুখ মুহূর্তে বিবর্ণ হইয়া গেল। সমস্ত শরীর যেন ঝিমঝিম করিয়া উঠিল, মজুমদারের কথায় তিনি মর্মান্তিক আঘাত অনুভব করিলেন। তিনি কোনরূপে আত্মসম্বরণ করিয়া বলিলেন, না না ঠাকুরপো, সে তো সত্যি নয়। সে কেবল ওর মাথার ভুল।

উত্তরে মজুমদার কিছু বলিবার পূর্বেই মানদা ঠক করিয়া একটা প্রণাম করিয়া বলিল, তবু ভাল, লায়েববাবুকে দেখতে পেলাম। আমি বলি-মথুরাতে রাজা হয়ে নন্দের বাদার কথা বুঝি ভুলেই গেলেন। তা লয় বাপু, পুরনো মনিবের ওপর টান খুব।

মজুমদারের মুখ চোখ রাঙা হইয়া উঠিল, সে বার দুই অস্বাভাবিক গম্ভীরভাবে গলা ঝাড়িয়া লইল ; মানদা বলিয়াই গেল, লায়েববাবু আমাদের ভোলেন নি বাপু। কত্তাবাবুর খবর-টবর রাখেন।

সুনীতি লজ্জায় যেন মরিয়া গেলেন, মুখরা মানদা এ বলিতেছে কি? কিন্তু তাহাকেই বা কেমন করিয়া তিনি নিরস্ত করিবেন? মুখের দিকেও একবার চাহে না যে, ইঙ্গিত করিয়া বারণ করেন। মজুমদার নিজেই ব্যাপারটাকে ঘুরাইয়া লইল, আরও একবার গলা পরিষ্কার করিয়া লইয়া বলিল, বিশেষ একটা জরুরী কথা বলতে এসেছিলাম বউঠাকরুন! সুনীতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া হাসিমুখে বলিলেন, বলুন।

বলছিলাম ওই চরটার কথা। ওই চরের ওপর এক শ বিঘে জায়গা মহীবাবু শ্রীবাস পালকে বন্দোবস্ত করেছেন। আমিই চেক কেটে দিয়েছি মহীবাবুর হকুম মত। টাকা অবিশ্যি তিনিই নিয়েছিলেন। ছ শ টাকা। পাঁচ শ টাকা সেলামী, এক শ টাকা খাজনা।

সুনীতি মৃদুস্বরে কুণ্ঠিতভাবে বলিলেন, আমি তো সে কথা জানি নে ঠাকুরপো।

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া মজুমদার বলিল, জানবেন কি করে বলুন, এ কি আপনার জানবার কথা? তা ছাড়া, সেই দিনই বেলা তিনটের সময় ননী পাল খুন হয়ে গেল। বলবার আর অবসর হল কই, বলুন? এখন শ্রীবাসের সেই জমি থেকে পঞ্চাশ বিঘে জমি রংলাল নবীন–এরা দখল করতে চাচ্ছে। ওদের অবশ্যি জবরদস্তি। সেলামীর টাকা পর্যন্ত দেয় নি।

সুনীতি বলিলেন, না না ঠাকুরপো, ওদের আমি জমি দেব বলেছিলাম।

বেশ তো। চরে তো আরও জমি রয়েছে, তার থেকে ওরা নিতে পারে।

অকস্মাৎ মানদা আক্ষেপ করিয়া বলিয়া উঠিল, আঃ হায় হায় গো! ছ-ছ শ টাকা চিলে ছোঁ দিয়ে নিয়ে গেল গো! আমার মনে পড়ছে লায়েববাবু, দাদাবাবু হাতটা পর্যন্ত ছ’ড়ে গিয়েছিল নখে। সেই টাকাই তো?

মুহূর্তের জন্য মজুমদার স্তব্ধ হইয়া গেল, কিন্তু পরমুহূর্তেই হাসিয়া বলিল, টাকাটা আমাকেই দিয়েছিলেন মহী; সেটা মামলাতেই খরচ হয়েছে। বুঝলেন বউঠাকরুণ, জমাখরচের খাতায়–খসড়া রোকড় খেতিয়ান তিন জায়গাতেই তার জমা আছে। দেখলেই দেখতে পাবেন। তা ছাড়া চেক-রসিদও তাকে দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে হাতে লিখে দিয়েছি। শ্রীবাস এসেছে, সেই চেক নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ-বছরের খাজনাও সে দিতে চায়।

সঙ্গে সঙ্গে বাহির হইতে শ্রীবাসের সাড়া পাওয়া গেল, খাজনার টাকা আমি নিয়ে এসেছি মজুমদার মশায়, এক শ টাকা আমি এক্ষুণি দিয়ে যাব। -বলিয়া সে ভিতর-দরজা পার হইয়া একেবারে অন্দরে আসিয়া দেখা দিয়া দাঁড়াইল।

মাথার ঘোমটা আরও খানিকটা বাড়াইয়া দিয়াও সুনীতি নিজেকে বিব্রত বোধ করিলেন; শুধু তাই নয়, হঠাৎ তাঁহার চোখে জল আসিয়া গেল। এমন ভাবে কেহ যে স্বেচ্ছায় আসিয়া এই অন্দরে প্রবেশ করিতে পারে, এ ধারণা মুহূর্ত-পূর্বেও তিনি কল্পনাতে আনিতে পারেন নাই। শ্রীবাসের এমন অন্দর-প্রবেশ যেমন অতর্কিত, তেমন ওই এক শ টাকার উষ্ণতায় উত্তপ্ত। তিনি আর সহ্য করিতে পারিলেন না, একমাত্র আশ্রয়স্থলের কথা তাঁহার মনে পড়িয়া গেল, অতি দ্রুতপদে উপরে স্বামীর ঘরের উদ্দেশ্যে চলিয়া গেলেন।

কিছুক্ষণের জন্য সকলেই ঘটনাবর্তের এমন আকস্মিক জটিলতায় হতবাক্‌ হইয়া গেল। মানদা ফুলিয়া উঠিল ক্রুদ্ধ ক্রুর সাপিনীর মত। তাহার পূর্বেই মজুমদার নীরবতা ভঙ্গ করিয়া বলিল, বউঠাকরুন চলে গেলেন যে!

মানদা দংশনের সুযোগ পাইয়া উল্লসিত হইয়া উঠিল, বলিল, আমি তো রয়েছি, বলুন না কি বলছেন?

হাসিয়া মজুমদার বলিল, তুমি আর শুনে কি করবে বল?

কেন হুকুম যা দেবার আমিই দেব। অন্দরই যখন কাছারি হয়ে উঠল, তখন আমার লায়েব ম্যানেজার হতে ক্ষেতিটা কি বলুন?

মজুমদারের মুখের হাসি তবু মিলাইয়া গেল না, সে বলিল, মানদার দাঁতগুলি যেমন চকচকে, তেমনি কি পাতলা ধারালো! তুমি শিলে শান দিয়ে দাঁত পরিষ্কার কর বুঝি?

মানদা হাসিয়া বলিল, এই দেখুন লায়েববাবু কি বলছেন দেখুন! বেঁজির দাঁতের কি শিল লাগে না শান লাগে? সাপ কাটবার মত ধার ভগবানই যে তার বজায় রাখেন গো। সে আরও কি বলিতে যাইতেছিল কিন্তু ঠিক এই সময়েই উপরের বারান্দা হইতে সুনীতি ডাকিলেন, মানদা।

মানদার রূপ পাল্টাইয়া গেল, সম্ভ্রমভরা মমতাসিক্ত স্বরে বলিল, কি মা?

সুনীতি বলিলেন, মজুমদার-ঠাকুরপোকে কালকের দিনটা অপেক্ষা করতে বল। কাল ছোটবাড়ির দাদার কাছে এর বিচার হবে; যা হয় তিনিই করে দেবেন।

মজুমদার উঠিয়া পড়িল। মানদা বলিল, শুনলেন তো? এখন কি বলছেন, বলুন?

মজুমদার বলিল, তোমাদের প্রজা শ্রীবাসকে বল মানদা। যা হয় সে-ই উত্তর দেবে।

মানদা বলিল, উকিলের বুদ্ধি নিয়েই তো মক্কেল উত্তর দেবে লায়েববাবু। তাতেই একবারে খোদ উকিলকেই জিজ্ঞেসা করছি।

শ্রীবাস কিন্তু বিনা পরামর্শেই উত্তর দিল, বলিল, অপেক্ষা আমি করতে পারব না, সে তুমি গিন্নীমাকে বল। তাতে খুনখারাপি হয়, হবে।

বারান্দার রেলিঙে মাথা রাখিয়া সুনীতি দাঁড়াইয়া রহিলেন। একটা গভীর অবসন্নতা তিনি অনুভব করিতেছিলেন, আর যেন সহ্য করিতে পারিতেছেন না। আগামী প্রভাতের চরের ছবি তাঁহার চোখের উপর যেন নাচিতেছে। চরটা রক্তে ভাসিয়া গিয়াছে, তাহারই উপর পড়িয়া আছে রংলাল, নবীন, শ্রীবাস আরও কত মানুষ। ঝরঝর করিয়া তিনি কাঁদিয়া ফেলিলেন, তাঁহার মনে হইল, সমস্ত কিছুর জন্য অদৃশ্য লোকের হিসাব-নিকাশ দায়িত্ব পড়িতেছে তাঁহারই স্বামীর উপর, সন্তানদের উপর। অস্থির হইয়া গিয়া তিনি স্বামীর ঘরে গিয়া প্রবেশ করিলেন।

স্তব্ধ রামেশ্বর খাটের উপর বসিয়া আছেন পাথরের মূর্তির মত, খোলা জানালার মধ্য দিয়া রাত্রির আকাশের দিকে তাঁহার দৃষ্টি নিবদ্ধ। সুনীতি কঠিন চেষ্টায় আত্মসম্বরণ করিয়া নিরুচ্ছ্বসিতভাবেই বলিলেন, দেখ, একটা কথা বলছিলাম, না বলে যে আমি আর পারছি না।

রামেশ্বর ধীরে ধীরে দৃষ্টি ফিরাইয়া সুনীতির মুখের দিকে চাহিলেন, যেন কোন অজ্ঞাতলোক হইতে তিনি এই বাস্তব পরিবেষ্টনীর মধ্যে ফিরিয়া আসিলেন। তারপর অতি মিষ্ট স্বরে বলিলেন, বল, কি বলছ, বল?

খুব ভাল করিয়া গুছাইয়া, একটি একটি করিয়া সমস্ত কথা বলিয়া সুনীতি বলিলেন, তুমি একবার মজুমদারকে ডেকে একটু বল। তোমার অনুরোধ তিনি কখনই ঠেলতে পারবেন না।

কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া রামেশ্বর ধীরে ধীরে ঘাড় নাড়িয়া অস্বীকার করিয়া বলিলেন, না।

সুনীতি আর অনুরোধ করিতে পারিলেন না, শুধু একটা গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিলেন। রামেশ্বর অভ্যাসমত মৃদুস্বরে বলিলেন, ‘যাচ্ঞা মোঘা বরমধিগুণে, -নাধমে লব্ধকামা।’ সুনীতি, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির কাছে প্রার্থনা করিয়া যদি ব্যর্থ হও সেও ভাল, তবু অধমের কাছে ভিক্ষে করে লব্ধকাম হওয়া উচিত নয়।

তিনি নীরব হইলেন; প্রদীপের আলোকে মৃদু আলোকিত ঘরখানা অস্বাভাবিকরূপে স্তব্ধ হইয়া রহিল। তাহারই মধ্যে স্বামী ও স্ত্রী -মাটির পুতুলের মত একজন বসিয়া, অপর জন দাঁড়াইয়া রহিল। আবার কিছুক্ষণ পরে রামেশ্বর বলিলেন, সুনীতি, আমার মাথায় একটু বাতাস করবে? আর একটু জল।

সুনীতি ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন, তাড়াতাড়ি জল আনিয়া গ্লাসটি রামেশ্বরের হাতে দিয়া বলিলেন, শরীর কি কিছু খারাপ বোধ হচ্ছে?

চোখ বুজিয়া শুইয়া পড়িয়া রামেশ্বর বলিলেন, মাথায় যেন আগুন জ্বলছে সুনীতি!

জল দিয়ে মাথা ধুয়ে দেব?

দাও

সুনীতি সযত্নে মাথায় জল দিয়া ধুইয়া আপনার আঁচল দিয়া মুছিয়া দিলেন, তারপর জোরে জোরে বাতাস দিতে আরম্ভ করিলেন। উৎকণ্ঠার আর তাঁহার সীমা ছিল না। উন্মাদ পাগল হইয়া গেলে তিনি কি করিবেন।

সহসা রামেশ্বর বলিয়া উঠিল, শ্রীবাস পাল অন্দরের মধ্যে চলে এল সুনীতি!

তিনি আবার উঠিয়া বসিলেন।

না না, দরজার মুখে এসে দাঁড়িয়েছিল।

দরজার মুখে?

আবার কিছুক্ষণ পর তিনি বলিলেন, সন্ধ্যের পর আমি একটু করে বাইরে বেরুব। দিনে পারব না। আলো চোখে সহ্য করতে পারি না। তা ছাড়া হাতে এই কদর্য ব্যাধি, লোক দেখবে। সন্ধ্যার পর আমি বরং একটু করে কাজকর্ম দেখব-হ্যাঁ দেখব।

সুনীতির চোখ দিয়া জল পড়িতেছিল, অতি সন্তর্পণে বাঁ হাতে আঁচল তুলিয়া সে জল তিনি মুছিয়া ফেলিলেন।

* * *

সমস্ত রাত্রি কিন্তু সুনীতির ঘুম হইল না। তাঁহার চিত্তলোকের কোমলতা অথবা দুর্বলতা এতই ব্যাপক এবং সূক্ষ্ম যে, নিতান্ত নিঃসম্পর্কীয় দূরান্তরের বহু মানুষের দুঃখের তরঙ্গ আসিয়া তাহাতে কম্পন তোলে, তাহাদের জন্য উদ্বেগে তিনি আকুল হইয়া উঠেন। আপনার দুঃখে তিনি পাথরের মত নিস্পন্দ, কিন্তু পরের জন্য না কাঁদিয়া তিনি পারেন না। আজ আগামী কালের ভয়াবহ দাঙ্গার কথা ভাবিয়া তাঁহার উদ্বেগের আর অবধি ছিল না। ভোর হইতেই তিনি ছাদে গিয়া উঠিলেন। ছাদ হইতে চরটা বেশ দেখা যায়। তিনি চাহিয়া দেখিলেন; কিন্তু ঘন ঘাসের জঙ্গলের একটানা গাঢ় সবুজ বেশ, আর তাহারই মধ্যে সাঁওতালপল্লীর ঘরের ছাউনির নূতন খড়ের হলুদ রঙের চালাগুলি ছাড়া আর কিছু দেখা গেল না। উদ্বিগ্ন হৃদয়ে তিনি দৃষ্টি যথাসম্ভব তীক্ষ্ণ করিয়া চাহিয়া রহিলেন। পূর্বদিগন্ত হইতে সোনালী আলো ছড়াইয়া পড়িয়া চরখানাকে মুহূর্তে মুহূর্তে অপরূপ করিয়া তুলিতেছে। মৃদু বাতাসে ঘাসের মাথা নাচিয়া নাচিয়া উঠিতেছে।

সহসা মনে হইল, একটা ক্রুদ্ধ বাদানুবাদের উচ্চধ্বনি তিনি শুনিতে পাইতেছেন। সামান্য ক্ষণের মধ্যেই একটা কলরব ধ্বনিত হইয়া উঠিল। তাঁহার বুক কাঁপিয়া উঠিল, চোখে জল আসিল। চোখের জল মুছিয়া আবার তিনি চাহিলেন, এবার দেখিলেন, কাশের বন যেন একটা দুরন্ত ঘূর্ণিতে আলোড়িত হইতেছে। চরের ভিতর হইতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী ত্রস্ত কলরব করিয়া আকাশে উড়িয়া গেল।কতকগুলি চতুস্পদ…কয়েকটা শিয়াল, আরও কতকগুলো অজানা জানোয়ার ঘাসের বন হইতে বাহির হইয়া নদীর বালিতে ছুটিয়া পলাইতেছে। সুনীতি বাড়ির ভিতর দিকের আলিসার উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া মানদাকে ডাকিয়া বলিলেন, একটু খবর নে না মানদা, চরের ওপর বোধ হয় ভীষণ দাঙ্গা বেঁধেছে!

মানদাও ছুটিয়া বাহির হইল। কিন্তু সংবাদ কিছু পাইল না, লোকে ছুটিয়া চলিয়াছে নদীর দিকে, চরে দাঙ্গা বাঁধিয়াছে। তাহার অধিক কেহ কিছু জানে না। দুয়ারের উপর মানদা উৎকণ্ঠিত ঔৎসুক্য লইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। আরও কিছুক্ষণ পর একটি শীর্ণকায় মানুষকে তারস্বরে চীৎকার করিতে করিতে ফিরিয়া আসিতে দেখিয়া মানদা আরও একটু আগাইয়া পথের ধারে আসিয়া দাঁড়াইল।

লোকটি অচিন্ত্যবাবু। প্রাণপণে দ্রুত বেগে পালাইয়া বাড়ি চলিয়াছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে ভদ্রলোক ভীষণভাবেই হাঁপাইতেছেন, আর মুখ বলিতেছে, উঃ! বাপ রে! বাপ রে! ভীষণ কাণ্ড!

মানদাকে দেখিয়া তাঁহার কথার মাত্রা বাড়িয়া গেল, তিনি এবার বলিলেন, ভীষণ কাণ্ড! ভয়ঙ্কর দাঙ্গা! রক্তাক্ত ব্যাপার! খুন, খুন! একজন মুসলমান খুন হয়ে গেল। নবীন লোহার দুর্দান্ত লাঠিয়াল, মাথাটা দু টুকরো করে দিয়াছে। তাঁহার কথা শেষ হইতে না হইতেই তিনি মানদাকে পিছনে ফেলিয়া অনেকটা চলিয়া গেলেন।

উপর হইতে সুনীতি নিজেই সব শুনিলেন, হু হু করিয়া চোখের জল ঝরিয়া তাঁহার মুখ-বুক ভাসিয়া গেল। ওই অজানা হতভাগ্যের জন্য তাঁহার বেদনার আর সীমা ছিল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *