০৭. প্রফেসর সরদার আমিন হোসেন

স্কটল্যান্ডের এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির ফুল প্রফেসর সরদার আমির হোসেন মিসির আলিকে একটি চিঠি কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়েছেন। চিঠিটা এরকম।

শ্রদ্ধেয় স্যার,

আমার সালাম নিন। আপনার চিঠির জবাব দিতে কিছু দেরি করে ফেললাম। তার জন্য শুরুতেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মনোবিদ্যার একটি কনফারেন্স চলছিল। আমি ছিলাম প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরদের একজন।

স্যার আপনার চিঠি পড়ে মন সামান্য খারাপ হয়েছে। আপনি আবারো কোনো রহস্য সমাধানে নেমেছেন বলে মনে হয়েছে। আপনি আপনার ক্ষমতার কোনো ব্যবহারই করলেন না। ক্ষমতা নষ্ট করলেন তৃতীয় শ্রেণীর সব রহস্য সমাধান করতে গিয়ে। রহস্য সমাধান করবে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ। আপনি না। আপনি আপনার মূল কাজটা করবেন। আমরা যারা আপনার ছাত্র তারা সবাই আপনার কথা ভেবে দুঃখ পাই। মানসিক চিন্তার ক্ষমতা ঈশ্বর প্রদত্ত। এই ক্ষমতার হাস্যকর ব্যবহার অপরাধের মধ্যে পড়ে।

স্যার আমার কঠিন কথাগুলি ক্ষমা করবেন। এখন আপনি যা জানতে চাচ্ছেন জানাচ্ছি।

সায়রা বানু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই রসায়নশাস্ত্রে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি নিয়েছে। তার থিসিসের বিষয় ছিল–কলয়েড সায়েন্স। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে ছাত্রী হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। ডিগ্রি প্রাপ্তির পরপরই তাকে এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারারশিপের অফার দেওয়া হয়েছিল। সে সেই অফার গ্রহণ করে নি।

আপনি মেয়েটির মানসিক অবস্থা কেমন ছিল জানতে চেয়েছেন। আমি তার সুপারভাইজার ড. জন গ্রিনের সঙ্গে কথা বলেছি। ড. জন গ্রিন জানিয়েছেন তাঁর এই ছাত্রীর মধ্যে তিনি কখনো মানসিক কোনো সমস্যা দেখেন নি।

সায়রা বানু ক্যাম্পাসে থাকত না। সে ক্যাম্পাসের বাইরে একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে একা থাকত। পড়াশোনার শেষের দিকে সে তার বাবাকে নিয়ে আসে। তার বাবার নাম হাবিবুর রহমান। তিনিও একসময় রসায়নশাস্ত্রে অধ্যাপনা করতেন। তারা যে অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে থাকত তার বাড়িওয়ালী মিসেস স্টোনের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি। ইউরোপ আমেরিকার বৃদ্ধা বাড়িওয়ালীদের কোনো কথাই গুরুত্বের সঙ্গে ধরা ঠিক না। এরা কর্মহীন জীবনযাপন করে এবং তাদের টেনেন্টদের সম্পর্কে নানাবিধ গল্পগাথা তৈরি করতে পছন্দ করে। এ বিষয়ে আমার নিজেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।

যাই হোক বুড়ি মিসেস স্টোন আমাকে জানিয়েছে সায়রা বানু এবং তার বাবা দুজনের কেউই রাতে ঘুমাত না। সারা রাত গুনগুন করে গান করত। হাবিবুর রহমান ধর্মভীরু মানুষ ছিলেন। আমার ধারণা তিনি কোরান পাঠ করতেন। বুড়ি এটাকেই ‘গান’ বলছে। এরা দুজন রাতে ঘুমাত না কথাটাও হাস্যকর। এই ধরনের বৃদ্ধারা সন্ধ্যারাতেই মদটদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যরা জেগে আছে না ঘুমাচ্ছে তা তাদের জানার কথা না। যে মেয়ে রসায়নশাস্ত্রের মতো একটি জটিল বিষয়ে Ph. D. থিসিস তৈরি করতে গিয়ে সারা দিন অমানুষিক পরিশ্রম করছে সে সারা রাত জেগে থাকবে কীভাবে।

সায়রা বানু সম্পর্কে আপনাকে আরেকটি তথ্য দিতে পারি। এই তথ্য আপনার কাজে লাগতে পারে। নাট্যকলা বিষয়ে এই মেয়ের প্রবল আগ্রহ ছিল। সে পিএইচ. ডি. করার ফাঁকে-ফাঁকে অভিনয়ের ওপর দুটি কোর্স করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা ক্লাব শেক্সপিয়ারের টেম্পেস্ট নাটকটি মঞ্চায়ন করেছিল। টেম্পেস্টের মূল চরিত্র মিরান্ডার ভূমিকা তার করার কথা ছিল। দীর্ঘদিন সে মিরান্ডা চরিত্রের জন্য রিহার্সেল করেছে। শেষ মুহূর্তে শারীরিক অসুস্থতার জন্য নাটকটি করতে পারে নি। তবে ব্রিটিশ ফিল্ম মেকার সিবেস্টিন জুনিয়ারের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি The Ornet-এ ভারতীর মেয়ের একটি ছোট্ট ভূমিকায় সে অভিনয় করেছে। ছবিটি আমি দেখি নি। আমি ছবিটির একটি ডিভিডি কপি আপনার জন্য পাঠালাম। আমি জানি এই ডিভিডি দেখার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভিডি প্লেয়ার আপনার নেই। একটি ডিভিডি প্লেয়ারও পাঠালাম। প্রাক্তন ছাত্রের এই উপহার আপনি গ্রহণ করবেন এই আশা অবশ্যই করতে পারি।

আপনি বিশেষভাবে জানতে চেয়েছিলেন সায়রা বানু কোনো মানসিক রোগের ডাক্তারের চিকিৎসাধীন ছিল কি না। এই বিষয়ে আমি কোনো তথ্য বের করতে পারি নি। মানসিক রোগের ডাক্তাররা রোগীদের কোনো তথ্য বাইরে প্রকাশ করেন না। তার জন্য কোর্টের নির্দেশ প্রয়োজন হয়।

স্যার আপনি যদি আরো কিছু জানতে চান আমি আমার ই-মেইল নাম্বার দিচ্ছি। চিঠি চালাচালির চেয়ে ই-মেইলে যোগাযোগ সহজ হবে।

বিনীত
সরদার আমির হোসেন

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *