১৪. বিনু অবাক হয়ে বলল

১৪

বিনু অবাক হয়ে বলল, ‘আপনি।’

মুনির অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসল। নিচু গলায় বলল, ‘স্যার কি বাসায় নেই?’

‘বাসায় থাকবেন কেন? এখন তো ওঁর অফিসে থাকবার কথা। তাই না?’

‘ও, আচ্ছা–হ্যাঁ।’

‘আপনি অফিসে যান নি?’

‘না। আমি তাহলে যাই।’

‘বসতে চাইলে বসুন।’

মুনির বারান্দায় চেয়ারটায় বসে পড়ে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছল। টানা টানা গলায় বলল, ‘পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম· · ·।’

‘চা খাবেন, না লেবু দিয়ে সরবত বানিয়ে দেব? আপনি খুব ক্লান্ত, সেই জন্যে বলছি।’

‘না, কিছু লাগবে না।’

বিনু ভেতরে চলে গেল। আবার ফিরে এল লেবুর সরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে।

‘আমাদের তো ফ্রীজ নেই, এই জন্যে খুব ঠাণ্ডা হবে না। গরম সরবত।’ মু

নির হেসে ফেলল। বিনু বলল, ‘আমার মনে হয়, আপনি আমাকে কিছু বলতে এসেছেন। বলে ফেলুন।‘

‘না, এম্নি এসেছি।’

‘আপনি এম্নি আসেন নি। কি বলতে চান আপনি বলুন। আমি রাগ করব না।’

মুনির ক্ষীণ স্বরে বলল, ‘আমি আপনাকে চিনি।’

‘তা তো চিনবেনই। না-চেনার তো কথা না। আগে এক দিন এসেছিলেন। আমার বাবাকে এত ভালো করে চেনেন, আর আমাকে চিনবেন না?’

‘তার চেয়েও ভালোভাবে চিনি।’

‘তাই নাকি?’

‘জ্বি।’

‘কীভাবে বলুন তো?’

‘আপনি যখন খুব ছোট, তখন কী কী করতেন সব আমি বলতে পারব।’

‘বেশ তো, দু’–একটা বলুন, আমি শুনি।’

‘আমি মীনার কথা জানি। মীনা আপনার খুব বন্ধু ছিল না?’

‘কে বলেছে আপনাকে মীনার কথা?’

মুনির চুপ করে রইল।

‘বলুন, কে মীনার কথা আপনাকে বলেছে?’

মুনির একবার ভাবল বলে ফেলে–বিনু, ও সব কথা আমি তোমার কাছ থেকেই শুনেছি। এক সময় তুমিই আমাকে বলেছ। বিয়ের পর রাত জেগে তুমি কত গল্প করতে! কিন্তু এই মেয়েটিকে এ-সব বলা অর্থহীন। সে কিছুই বুঝবে না।

‘কি ব্যাপার, চুপ করে আছেন?’

মুনির নিচু স্বরে বলল, ‘আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো আমাকে দেখে কি আপনার খুব চেনা-চেনা মনে হয় নি?’

‘না। চেনা-চেনা মনে হবে কেন? চেনা মনে হবার কি কোনো কারণ আছে?’

‘জ্বি-না। আচ্ছা, আমি উঠি।’

মুনির উঠে দাঁড়াল। বিনু বলল, ‘আপনি আর এ-রকম একা-একা এ বাড়িতে আসবেন না।’

‘জ্বি আচ্ছা।’

‘যদি কখনো আসতে চান, বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন।’

‘ভয় নেই, আমি আর আসব না।’

‘আপনি আপনার এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন আমার কাছে। এ-সব করবেন না। বাবা আপনাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। আপনার কাণ্ডকারখানা শুনলে বাবা মনে খুব কষ্ট পাবেন। আমি নিজে বাবাকে এ-সব কখনো বলব না। আপনিও বলবেন না।’

মুনির হেসে ফেলল। হঠাৎ তার হাসি এসে গেল, কারণ বিনুর ভঙ্গিটা তার খুব চেনা। রাগী-রাগী গলায় অনেকক্ষণ কথা বলবার পর, হঠাৎ তার রাগ পড়ে যায়। চোখে পানি এসে যায়। এখনো বিনুর চোখে পানি আসছে। আসতেই হবে।

‘আপনি হাসছেন কেন?’

‘হাসছি, কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে এত সব কঠিন কথা বলার জন্যে আপনার খুব কষ্ট হবে। আপনি কাঁদতে শুরু করবেন।’

‘আপনি বেরিয়ে যান।

মুনির বের হয়ে এল। বিনু সত্যি-সত্যি কাঁদতে বসল। তার খুব খারাপ লাগছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *