০৪. অফিস পাঁচটায় ছুটি হয়

অফিস পাঁচটায় ছুটি হয়। চারটা বাজতেই চেয়ার খালি হতে শুরু করে। যারা চক্ষুলজ্জার কারণে বসে থাকে তারা ঘন ঘন হাই তুলতে থাকে। ফাইলপত্র সব তালাবদ্ধ। টেবিল খালি। খালি টেবিলে সত্যি সত্যি মাছি ওড়ে। মাছি মারার ব্যাপারে কাউকে তেমন উৎসাহী মনে হয় না।

আজ অফিস খালি হওয়া শুরু হয়েছে তিনটা থেকে, কারণ আগামীকাল বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটি। তা ছাড়া আকাশে ঘনকালো মেঘ। ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বাসায় চলে যাওয়া ভালো।

জোয়ার্দার সাহেব গভীর মনোযোগে ফাইলে চোখ বোলাচ্ছেন। আকাশ মেঘে অন্ধকার বলে বাতি জ্বালিয়েছেন। খালেক ঘরে ঢুকে বলল, স্যার, যাবেন না?

জোয়ার্দার অবাক হয়ে বললেন, কোথায় যাব?

বাসায় যাবেন। আর কোথায় যাবেন?

পাঁচটা তো এখনো বাজে নাই।

খালেক টেবিলের সামনে বসতে বসতে বলল, আকাশের অবস্থা দেখেছেন? বিরাট তুফান হবে। আগে আগে চলে যাওয়া ভালো।

জোয়ার্দার কিছু বললেন না। খালেক বলল, স্যার, একটা রিকোয়েস্ট করব। যদি অনুমতি দেন।

জোয়ার্দার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।

খালেক বলল, আজ আমার সঙ্গে আমার বাসায় চলুন। রাতে খাওয়াদাওয়া করবেন, তারপর আমি নিজে পৌঁছে দিব।

খালেককে অবাক করে দিয়ে জোয়ার্দার বললেন, আচ্ছা।

স্যার, তা হলে দেরি করে লাভ নেই। উঠে পড়ুন।

জোয়ার্দার বললেন, পাঁচটা বাজুক। অফিস ছুটি হোক।

ঠিক আছে, বাজুক পাঁচটা। আমি ক্যান্টিনে আছি। আপনার জন্য চা নাশতা কিছু পাঠাব?

না।

প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জোয়ার্দার লাল রঙের প্রাইভেট কারে উঠলেন। খালেক বলল, পেছনের সিটে আরাম করে বসুন। আমি ড্রাইভারের সঙ্গে বসছি।

জোয়ার্দার বললেন, কার গাড়ি?

খালেক লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, আমার। মেয়ের স্কুল ডিউটি করতে হয়, এজন্য ধারদেনা করে কিনে ফেলেছি। আমার স্ত্রী অবিশ্যি এ গাড়িতে ওঠে না। তার ধারণা, এটা ঘুষের টাকায় কেনা। ইচ্ছা করলে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আর্গুমেন্টে যেতে পারতাম। বলতে পারতাম, স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর ভরণপোষণ। আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। কীভাবে সেটা আমার ব্যাপার। তুমি আমার বিচারক না। আর্গুমেন্ট ঠিক আছে না স্যার?

জোয়ার্দার জবাব দিলেন না। জানালা দিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখতে লাগলেন। ভালো বৃষ্টি নেমেছে। জানালার কাচে ধুমধাম শব্দ থেকে মনে হয়, শিলও পড়ছে।

.

খালেকের ফ্ল্যাটবাড়ি ছবির মতো সুন্দর। বসার ঘরের টেবিলে লাল টকটকে ফুলদানিতে ধবধবে সাদা গোলাপ। গোলাপের গন্ধে ঘর গন্ধময় হয়ে আছে। জোয়ার্দার বললেন, বাহ।

খালেক বলল, ঘর সাজানো আমার স্ত্রীর ডিপার্টমেন্ট। নিজের বাড়িতে যখন ঢুকি তখন মনে হয় নাটকের সেটে ঢুকে পড়েছি। বিশ্রী লাগে। নিজের ঘরে ঢুকব, জুতা খুলে একদিকে ফেলব, শার্ট আরেক দিকে ফেলব তখনই না মজা।

খালেকের স্ত্রী শামা ঘরে ঢুকে জোয়ার্দারকে অস্বস্তিতে ফেলে বলল, আপনার মতো পুণ্যবান মানুষ আমার বাড়িতে, আজ আমার ঈদ। বলেই কদমবুসি করল। মেয়েটি শ্যামলা, অপরূপ মুখশ্রী। চোখ মায়ায় টলমল করছে।

জোয়ার্দার থতমত খেয়ে গেলেন। কী বলবেন ভেবে পেলেন না। কথার পিঠে কথা তিনি বলতে পারেন না।

খালেক বলল, স্যার রাতে খাবেন। ফ্রিজে কিছু আছে? না থাকলে ড্রাইভার পাঠিয়ে আনাও। বৃষ্টি বাদলার দিনে ইলিশ ফ্রাই জমবে। মোরগ পোলাও ইলিশ ফ্রাই।

শামা বলল, তোমার স্যারকে আমি আমার খাবার খাওয়াব। তোমার কিছু না।

জোয়ার্দার অবাক হয়ে বললেন, দুজনের খাবার আলাদা নাকি?

শামা বলল, জি। ওর রোজগারের খাবার আমি খাই না। বাবার কাছ থেকে আমি কিছু টাকা পেয়েছি। আমি ওই টাকায় বাজার করি। ওর ফ্রিজ আলাদা। আমারটা আলাদা। আমি নিজের খাবার নিজে খাই। আমার বাবাও ছিলেন আপনার মতো সন্ন্যাসী টাইপ মানুষ। সেই অর্থে আমি সন্ন্যাসীর মেয়ে। আমি রান্নার জোগাড় দেখছি। তুমি তোমার স্যারের সঙ্গে গল্প কর। আধঘণ্টার মধ্যে নাশতার ব্যবস্থা করছি। স্যার, আপনি গোসল করবেন না?

জোয়ার্দার অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। অফিস থেকে ফিরে দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করা তার অনেক দিনের অভ্যাস। অন্যের বাড়িতে নিশ্চয়ই এটা করা যায় না।

শামা বলল, স্যার, আমার বাবাকে দেখেছি অফিস থেকে ফিরেই অনেক সময় নিয়ে গোসল করতেন। আমার ধারণা, আপনিও তা-ই করেন।

জোয়ার্দার বললেন, হুঁ

বাথরুমে সবকিছু আছে। আমি পরিষ্কার লুঙ্গি দিচ্ছি। আমার বাবার লুঙ্গি।

জোয়ার্দার বললেন, দরকার নাই।

শামা বলল, অবশ্যই দরকার আছে। আপনি বাথরুমে ঢুকুন, আমি নাশতার জোগাড় দেখি।

শামা চলে যেতেই খালেক বিরক্ত গলায় বলল, কথায় কথায় সন্ন্যাসী বাবা। সন্ন্যাসী বাবা। অস্থির হয়ে গেছি। কয়েকবার বলেছি তুমিও সন্ন্যাসী হয়ে যাও। পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো গুহা খুঁজে বের করি, গুহায় দাখিল হয়ে যাও। গুহার ভেতর হাগা মুতা কর। জংলি মশার কামড় খাও। সন্ন্যাসী বাবার কাণ্ডটা শুনুন স্যার। ঢাকা শহরে দু’টা বাড়ি, দু’টাই দান করে দিয়েছে। একটা মাত্র মেয়ে সে কিছু পায় নাই। নগদ কিছু টাকা দিয়ে খালাস। সেই টাকার পরিমাণ কত তাও জানি না। আমি তো সন্ন্যাসী না। আমাকে বলবে কেন?

জোয়ার্দার কথা ঘোরাবার জন্য বললেন, আপনার মেয়ে কোথায়?

সে তার ছোট চাচার বাড়িতে। মেয়ের মধ্যেও সন্ন্যাসী ভাব দেখা দিয়েছে। আমি দুষ্ট লোক, আমার সঙ্গে কথা বলে না বললেই চলে। তার মা আমার গাড়িতে ওঠে না বলে মেয়েও ওঠে না। লোন করে গাড়ি কিনেছি, লোনের কাগজপত্র দেখিয়েছি, তাতেও লাভ হয় নাই। স্যার, যান গোসল করে আসুন। আমার স্ত্রী একবার যখন মুখ দিয়ে গোসলের কথা বের করেছে তখন গোসল করতেই হবে। বাথরুমে যদি না যান, বালতিতে করে পানি এনে মাথায় ঢেলে দেবে। সন্ন্যাসী বাবার মেয়ের নাড়িনক্ষত্র আমি চিনি।

.

রাত ন’টার মধ্যে খাওয়াদাওয়া শেষ হল। শামা বলল, স্যার, আপনার কি পান খাওয়ার অভ্যাস আছে?

জোয়ার্দার বললেন, না।

শামা বলল, আপনার তো খালি বাসা। একা বাসায় থেকে কী করবেন? এখানে থেকে যান।

জোয়ার্দার মনে করতে পারলেন না তাঁর বাসা যে খালি এই খবর এদের দিয়েছেন কি না। দেবার তো কথা না।

শামা বলল, বাইরে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে স্যার, থেকে যান। গেস্টরুম রেডি করে দিই?

খালেক বলল, স্যারের বাড়িতে কেউ নাই?

জোয়ার্দার বললেন, না। ওরা কক্সবাজার বেড়াতে গেছে। সেখান থেকে গেছে সেন্টমার্টিন। কাল পরশু চলে আসবে।

খালেক স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, স্যারের বাড়ি যে খালি এই খবর তুমি কীভাবে

জানলে? স্যার তোমাকে বলেছেন? কখন বললেন?

শামা জবাব না দিয়ে উঠে গেল।

খালেক বিরক্ত গলায় বলল, বাড়িতে মহিলা পীর নিয়ে বাস করি। না বলতেই ঘটনা জানে। বাড়ি তো না, হুজরাখানা। স্যার বুঝলেন, মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে বনে জঙ্গলে চলে যাই।

শামা অনেক চেষ্টা করেও জোয়ার্দারকে থেকে যাবার জন্য রাজি করাতে পারল না। খালেকের ড্রাইভার তাকে নামিয়ে দিতে গেল। বৃষ্টি তখনো পড়ছে। রাস্তাঘাটে পানি উঠে গেছে। গাড়ি কিছুদূর যাবার পরই ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বলল, স্যার, একটা কথা বলি? যদি মনে কিছু না নেন।

বল।

অপরাধ নিবেন না স্যার।

না অপরাধ নিব’ না।

রাস্তায় পানি উঠে গেছে। পানির ভিতর দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেল ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাবে। আমার চাকরি চলে যাবে।

আমি কি এখানে নেমে যাব?

নামলে ভালো হয় স্যার।

গাড়িতে কি ছাতা আছে?

জি না।

জোয়ার্দার বৃষ্টির মধ্যেই নেমে গেলেন। গাড়ি হুস করে তাকে পুরোপুরি ভিজিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেল। জোয়ার্দার মহা ঝামেলায় পড়লেন। চারদিক অন্ধকার। তিনি কোথায় আছেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। বৃষ্টিও নেমেছে আকাশ ভেঙে। তিনি ফুটপাত ধরে এগোচ্ছেন। কিছু দূর যেতেই রাস্তা দুই ভাগ হয়ে গেল। এখন তিনি কোন দিকে যাবেন? খালেকের ড্রাইভার তাঁকে নিতে কেন রাজি হল না তিনি বুঝতে পারছেন না। প্রচুর গাড়ি চলাচল করছে। একটা গাড়ি তো তাঁর গা ঘেঁষে গেল। রাস্তার নোংরা পানিতে তিনি দ্বিতীয়বার মাখামাখি হয়ে গেলেন। রাস্তায় কোনো রিকশা নেই। রিকশা থাকলে জিজ্ঞেস করে জানা যেত তিনি কোথায়, তাঁকে কত দূর যেতে হবে?

মিঁয়াও।

জোয়ার্দার চমকে তাকালেন। তার ডান দিকে পুফি। কুকুর যেমন লেজ উঁচু করে রাখে সেও লেজ উঁচু করে রেখেছে। মনে হয় দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। বিড়াল হাঁটতে শুরু করেছে। তিনি বিড়ালের পেছনে পেছনে যাচ্ছেন। জোয়ার্দার নিশ্চিত এই বিড়াল তাঁকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। বিড়াল পানি পছন্দ করে না। কিন্তু এর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ছেন, বিড়ালও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে কারো সঙ্গে আলাপ করতে পারলে ভালো হতো। কার সঙ্গে আলাপ করবেন? সবার সঙ্গে সবকিছু নিয়ে আলাপ করা যায় না। ডাক্তার শায়লা তো পাত্তাই দিল না। আজ রাত ন’টায় তার সঙ্গে দেখা করার কথা। লাভ কী? তা ছাড়া যাবেনও বা কীভাবে?

.

রাত এগারটার দিকে জোয়ার্দার নিজ বাসার সামনে উপস্থিত হলেন। বিড়ালটা তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। তিনি ক্ষীণ গলায় বললেন, থ্যাংক য়্যু। বলেই নিজের ওপর খানিকটা রাগ লাগল। বিড়াল থ্যাংক য়্যুর মর্ম বুঝবে না।

জোয়ার্দারের সারা শরীর কাদায় পানিতে মাখামাখি হয়ে ছিল। তাঁকে দ্বিতীয়বার গোসল করতে হল। এখন শুয়ে পড়ার সময়; কিন্তু তিনি অভ্যাসবশে টিভির সামনে বসলেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে মহিষের মতো দেখতে কোনো এক প্রাণীর জীবনবৃত্তান্ত দেখাচ্ছে। তিনি আগ্রহ নিয়ে দেখছেন, বিড়ালটাও আগ্রহ নিয়ে দেখছে।

অনেকক্ষণ হল টেলিফোন বাজছে। তাঁর চেয়ার ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। সারা শরীরে আলস্য। মনে হচ্ছে চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়বেন। নিতান্ত অনিচ্ছায় টেলিফোন ধরলেন। সুলতানা টেলিফোন করেছেন।

এই, টেলিফোন ধরছ না কেন? তিনবার কল করলাম।

জোয়ার্দার বললেন, হুঁ।

কী প্রশ্ন করেছি আর কী উত্তর। হুঁ আবার কী? রাতে খাওয়াদাওয়া করেছ?

হুঁ।

হোটেলে খেয়েছ?

জোয়ার্দার আবারো বললেন, হুঁ। ঝামেলা এড়ানোর জন্য ‘হুঁ’ বলা।

কী দিয়ে খেয়েছ?

কৈ মাছ, মুরগির মাংস, ছোট মাছ, ঘি।

ঘি?

হুঁ। গরম ভাতে এক চামচ ঘি নিয়েছি।

হোটেলে ঘি দেয়? ঠিক করে বল তো কোথায় খেয়েছ? তুমি আমার সঙ্গে লুকোছাপা কর, এটা আমি জানি। বল কোথায় খেয়েছ?

জোয়ার্দার প্রশ্নের জবাব দেবার আগেই পাশের ঘরে খিলখিল হাসির শব্দ হল।

সুলতানা বললেন, হাসছে কে?

জোয়ার্দার জানেন কে হাসছে। খালি বাড়ি পেয়ে জামাল চলে এসেছে। বিষয়টা সুলতানাকে বলা অর্থহীন। কী বুঝতে কী বুঝবে।

এই, কথা বলছ না কেন? কে হাসে?

কেউ না।

কেউ না মানে। আমি পরিষ্কার শুনছি। খালি বাড়ি পেয়ে কাকে তুমি নিয়ে এসেছ? মেয়েটার নাম কী? রাস্তা থেকে এনেছ? বেশ্যা মেয়ে? কত টাকা দিয়ে এনেছ?

জোয়ার্দার টেলিফোন লাইন কেটে দিলেন। সুলতানার কথা শুনার চেয়ে জন্তুর কাণ্ডকারখানা দেখা যাক। এর মধ্যেও নিশ্চয়ই শিক্ষণীয় কিছু আছে। মহিষের মতো জানোয়ারটার নাম জানতে পারলে ভালো হতো। অনিকা বলতে পারত।

টেলিফোন আবার বাজছে। বাজুক। ওই দিকে কান না দিলেই হল।

জোয়ার্দার ঠিক করলেন, আজ আর বিছানায় যাবেন না। সোফাতেই ঘুমাবেন। জামালের লাফালাফিটা বাড়াবাড়ি রকমের। মাঝে মাঝে বিড়ালের মিঁয়াও শব্দও কানে আসছে। সেও যুক্ত হয়েছে জামালের সঙ্গে।

জোয়ার্দার সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়লেন। টিভি চ্যানেলের শব্দ, জামালের হইচই, একটু পরপর টেলিফোন বেজে ওঠা কিছুই তাঁর ঘুমের সমস্যা করল না। তবে অনেক দিন পর দুঃস্বপ্নটা দেখলেন।

কালো রঙের মাঝারি সাইজের চেয়েও ছোট একটা কুকুর তাকে কামড়ে ধরেছে। জামাল কুকুরটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। একসময় কুকুরটা তাকে ছেড়ে জামালকে কামড়ে ধরল। জামাল বুকফাটা আর্তনাদ করল, বাজান, বাজানগো।

জোয়ার্দারের স্বপ্ন এ পর্যন্ত হয়। বাজান বাজান শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। আজ ঘুম ভাঙল না। স্বপ্নটা চলতে থাকল। তিনি দেখলেন জামাল চার পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার পেট ফুলে আছে। পেট ভর্তি কুকুরের বাচ্চা। পেটের চামড়া ভেদ করে বাচ্চাগুলো দেখা যাচ্ছে। কী ভয়ংকর দৃশ্য!

বাচ্চাগুলো কাঁদছে। কান্নার আওয়াজ টেলিফোনের রিং টোনের মতো। জোয়ার্দার জাগলেন। কুকুরের বাচ্চা কাঁদছে না। টেলিফোন বাজছে। পুফি মোবাইল ফোন কামড়ে ধরে তার বিছানার কাছে বসা। জামালকেও দেখা যাচ্ছে। সে জোয়ার্দারের পায়ের কাছে বসেছে। নিতান্ত অনিচ্ছায় জোয়ার্দার টেলিফোন ধরলেন। নিশ্চয়ই সুলতানা চিৎকার চেঁচামেচি করে রাতের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেবে। জোয়ার্দার বললেন, সুলতানা বল কী বলবে।

অপরিচিত তরুণী কণ্ঠ বলল, আপনার স্ত্রীর নাম সুলতানা।

জোয়ার্দার বললেন, আপনি কে?

আমার নাম শায়লা। ডাক্তার শায়লা।

ও আচ্ছা।

আজ আপনার আসার কথা ছিল।

জোয়ার্দার বললেন, ঝড়বৃষ্টিতে আটকা পড়েছিলাম।

বুঝতে পারছি। আমি অপেক্ষা করেছিলাম। ভালো কথা আপনার মামা কি বেঁচে আছেন?

কোন মামা?

শায়লা বললেন, যে মামার কারণে আমাদের বিয়েটা হয় নি।

ও বড় মামা। হ্যাঁ বেঁচে আছেন। প্যারালাইসিস হয়েছে। বিছানা থেকে নামতে পারেন না।

সরি টু হিয়ার দ্যাট। আপনি আপনার বড় মামার ঠিকানাটা আমাকে দেবেন। আমি তাকে একটা থ্যাংক য়্যু লেটার পাঠাব।

কেন?

উনার কারণে আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে হয় নি। নিজের মধ্যে প্রচণ্ড জেদ তৈরি হয়েছিল। পড়াশোনা করেছি। রেজাল্ট ভালো করেছি। একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয় নি। আপনার স্ত্রী কি হাউস ওয়াইফ?

জি।

আপনার বড় মামা বাগড়া না দিলে আমাকেও বাকি জীবন হাউস ওয়াইফ হয়ে থাকতে হত। বৎসর বৎসর বাচ্চা পয়দা করতাম। আমার কথা শুনে রাগ করছেন?

না।

আমার ধারণা আমি উল্টাপাল্টা কথা বলছি। নিজের উপর কনট্রোল নেই বলেই বলছি। আমি রাতে নিয়ম করে দু’গ্লাস রেড ওয়াইন খাই। এই অভ্যাস বিদেশ থেকে Ph.D ডিগ্রির সঙ্গে নিয়ে এসেছি। আজ আপনি না আসায় খানিকটা মেজাজ খারাপ ছিল বলে হুইস্কি খেয়েছি। চার পেগ।

জোয়ার্দার বললেন, ও আচ্ছা।

শায়লা বললেন, নিজের উপর কনট্রোল নেই বলেই এত রাতে টেলিফোন করে উল্টাপাল্টা কথা বলছি। শেম অন মি। টেলিফোন রাখছি। আপনি ঘুমুতে যান। সরি ফর এভরিথিং।

জোয়ার্দার টেলিফোন পাশে রেখে ঘুমুতে গেলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *