০৩. মিসির আলি বারান্দায় বসে আছেন

সকাল আটটা।

মিসির আলি বারান্দায় বসে আছেন। তাঁর পায়ের কাছে মাজেদ। ঘুম ভাঙার পর থেকেই সে মিসির আলির সেবা করার নানান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো লাভ হচ্ছে না। মিসির আলি সেবা গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছেন না। মাজেদ হাল ছাড়ার পাত্র না। সে চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে।

পায়ে তেল দিয়া দিমু স্যার?

না।

শীতকালে পায়ে তেল দিতে হয়। তেল না দিলে চামড়া ফাটে।

ফাটুক।

মাথা মালিশ করব? আরাম পাইবেন।

আমার আরামের দরকার নেই।

সবের আরাম দরকার। নেড়ি কুত্তারও আরাম দরকার।

তাই নাকি?

জে। দেহেন না রইদ উঠলে কুত্তা কেমন রইদ তাপায়।

তা ঠিক।

গরুরও আরাম দরকার। গরুর গলাদে যদি আপনে হাতাহাতি করেন আরামে তার চউখ বন্ধ হয়। মাথা টিপ্যা আমি আপনেরে এমন আরাম দিব যে আপনের চউখ বন্ধ হয়ে যাবে।

মিসির আলি বললেন, আমি চোখ খোলা রাখতে চাই। বই পড়ছি তো। চোখ বন্ধ রাখলে তো বই পড়তে পারব না। তা ছাড়া আমি গরু না, মানুষ

মাজেদ বলল, কী বই পড়েন?

কবিতার বই পড়ি। দিনের শুরুটা কবিতায় করা ভালো।

কবিতার মধ্যে কী লেখা স্যার?

শুনতে ইচ্ছা করে?

জে।

মিসির আলি আবৃত্তি করলেন—

‘Two roads diverged in a yellow wood,
And sorry I could not travel both
And be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth.’

মাজেদ হাঁ করে কবিতা শুনছে। তার চোখ ভর্তি বিস্ময়। মিসির আলি বললেন, কবিতা কেমন শুনলি? ভালো লেগেছে?

জে স্যার। ভালো।

আরো শুনবি?

জে শুনব।

মাজেদকে কবিতা শুনানো হল না। চা নিয়ে আয়না আসছে। আয়নাকে দেখেই মাজেদ উঠে দাঁড়াল, ভীত গলায় বলল, আমি যাই স্যার পরে আসব। মিসির আলির মনে হল যে কোনো কারণেই হোক মাজেদ আয়না মেয়েটাকে ভয় পায়।

আয়না বলল, চা নিয়ে এসেছি।

মিসির আলি বললেন, থ্যাংক য়্যু।

আয়না বলল, আপনার নাশতা রেডি হচ্ছে। খাঁটি ঘিয়ে ভাজা চপচপে পরোটা এবং রাজহাঁসের ভুনা মাংস। এত চেষ্টা করেও রাজহাঁসের হাত থেকে রক্ষা পেলেন না।

মিসির আলি বললেন, তাই তো দেখছি।

আয়না বলল, স্যার, আপনার সামনে বসি।

মিসির আলি বললেন, আরাম করে বস। এবং কী বলতে চাও বলে ফেল।

আয়না বসতে বসতে বলল, আপনার মানসিক ক্ষমতা দেখে অবাক হয়েছি।

মিসির আলি বললেন, কোন ক্ষমতাটা দেখলে?

আয়না বলল, রাতে ক্যারাম খেলার খটাস খটাস ভৌতিক শব্দ হচ্ছে। আপনি নির্বিকার, মাথা উঁচিয়ে দেখার চেষ্টাও করলেন না। ঘুমিয়ে পড়লেন। আপনি ছাড়া অন্য যে কোনো মানুষ ভয়ে অস্থির হত। ডাকাডাকি শুরু করত। আপনি একটুও ভয় পান নি, এর কারণ কী স্যার?

মিসির আলি বললেন, বেশিরভাগ মানুষ সংশয়বাদী। তাদের ধারণা ভূত-প্ৰেত থাকলে থাকতেও পারে। আমার মধ্যে এই ধরনের কোনো সংশয় নেই।

ক্যারাম খেলার শব্দ কীভাবে হল?

মিসির আলি বললেন, শব্দটা পাশের ঘরে হয়েছে। কেউ একজন খটাস খটাস শব্দে ক্যারাম খেলেছে।

সেই কেউ-টা কে? আমি?

না তুমি না। তোমার বাবা।

কীভাবে বুঝলেন?

মিসির আলি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, তোমার বাবা আমাকে আস্তিক বানানোর চেষ্টা করছেন। পাশের ঘরে খটাস খটাস শব্দ করে আমাকে ভূতের ভয় দেখাতে চাচ্ছেন।

বাবা এই কাজটা করেছেন আপনি এত নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?

মিসির আলি বললেন, সকালে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তিনি জানতে চাইলেন, রাতে ঘুম ভালো হয়েছে কি না। তাঁর গলায় ছিল কৌতূহল এবং আগ্রহ।

আয়না বলল, এই থেকে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না। আপনি অসুস্থ ছিলেন। অতিথি মানুষ। আপনার ভালো ঘুম হয়েছে কি না সেটা কৌতূহল এবং আগ্রহ নিয়ে জানতে চাওয়াটা তো স্বাভাবিক।

মিসির আলি বললেন, যখন ক্যারাম খেলার শব্দ হচ্ছে তখন আমি মিষ্টি গন্ধ পেলাম। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ার পর খটাস খটাস শব্দ থেমে গেল। মিষ্টি গন্ধও পাওয়া গেল না। মিষ্টি গন্ধটা জর্দার। তোমার বাবা প্রচুর জর্দা দিয়ে পান খান। এখন কি তুমি আমার Deduction গ্রহণ করবে?

জি স্যার করব।

মিসির আলি বললেন, বডি ল্যাংগুয়েজের একটা ব্যাপার আছে সেটা কি জান?

না।

আমরা মুখে অনেক কথা বলি না, কিন্তু আমাদের শরীর বলে। মনের ভেতরের কথা শরীর প্রকাশ করে দেয়। সকালবেলা তোমার বাবার বডি ল্যাংগুয়েজ তাঁকে প্রকাশ করে দিয়েছে। উদাহরণ দিয়ে বুঝাব?

বুঝান।

তুমি আমার সামনের চেয়ারে বসেছ। পায়ের উপর পা তুলে বসেছ। পা কিন্তু আমার দিকে না। যেদিক থেকে এসেছ সেদিকে রাখা—এর অর্থ তুমি আমার সামনে বসে থাকতে চাচ্ছ না, চলে যেতে চাচ্ছ।

আয়না অবাক হল। ভালোই অবাক হল।

মিসির আলি বললেন, তুমি এখন তোমার বসার অবস্থা একটু বদলেছ। মাথা সামান্য নিচু করে উপরের দিকে তাকাচ্ছ। মাথা নিচু করে যখন কোনো মেয়ে উপরের দিকে তাকায়, তখন তার চোখ বড় দেখা যায় এবং তার মধ্যে সামান্য হলেও খুকি ভাব আসে। তুমি এই ভাবটা নিয়ে এসে আমাকে বলার চেষ্টা করছ যে আমি যা বলছি তা সত্যি। আরো উদাহরণ দেব?

দিন।

তোমার বাবা যখন সিগারেট খান তখন উপরের দিকে ধোঁয়া ছাড়েন। তুমি যখন সামনে থাক তখন মেঝের দিকে ধোঁয়া ছাড়েন। এর অর্থ তুমি সামনে থাকলে তাঁর Confidence level নেমে যায়। আমাদের মন অনেক কিছু বলতে চায় না। কিন্তু শরীর বলে দেয়।

আয়না বলল, আপনি বুদ্ধিমান।

মিসির আলি বললেন, আমার বুদ্ধি আর দশজন মানুষের মতোই। আমার সুবিধা হচ্ছে আমি বুদ্ধি ব্যবহার করি। অন্যরা করে না, বা করতে চায় না।

আয়না বলল, আপনি কি আপনার ছাত্রের লেখা ডায়েরিটা পড়ে শেষ করেছেন?

দশ পৃষ্ঠার মতো পড়েছি। Slow reader, কারণ কী জান? কারণ হচ্ছে লেখা থেকে আমি ধরার চেষ্টা করি লেখার বাইরের কী লেখা আছে তা। লেখার মধ্যেও বডি ল্যাংগুয়েজ আছে।

আয়না বলল, যে দশ পৃষ্ঠা পড়েছেন সেখানে লেখার বাইরে কী লেখা আছে?

মিসির আলি বললেন, লেখার বাইরে লেখা আছে যে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বাস করেছ কিন্তু তোমাদের ভেতর শারীরিক কোনো সম্পর্ক হয় নি। কীভাবে ধরলাম বলব?

না। চলুন নাশতা খেতে যাই।

.

নাশতার টেবিলে হেডমাস্টার সাহেব একটি আনন্দ সংবাদ দিলেন। রাজ্য জয় করে ফেলেছেন এমন ভঙ্গিতে বললেন, ভাই সাহেব গুড নিউজ। গজার মাছ পাওয়া গেছে। ইনশাল্লাহ আজ রাতে আপনাকে ভূত দেখাতে পারব।

মিসির আলি হাসলেন। হেডমাস্টার বললেন, আপনার অবিশ্বাস আজ পুরোপুরি দূর হবে।

মিসির আলি বললেন, অবিশ্বাসী মানুষের সবচে বড় সমস্যা হল একটা অবিশ্বাস দূর হলে অন্য অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।

আজ সব ভেঙেচুরে দেব। খড়ের আগুনে সামান্য লবণ দিয়ে গজার মাছ পড়া হবে।

মিসির আলি বললেন, সেই মাছ কি আমরা জঙ্গলে রেখে আসব?

হেডমাস্টার সাহেব বললেন, না। মাছ ঘরে রেখে দেব। তারপর দেখবেন কী হয়।

কী হবার সম্ভাবনা?

পোড়া মাছের লোভে ভূত-প্রেত বাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরি শুরু করবে।

আয়না বলল, বাবা ভূতের আলাপ থাকুক। দিনের বেলা ভূতের ইতিহাস শুনতে ভালো লাগে না। সন্ধ্যা হোক তারপর শুরু কর। নাশতা খাবার পর আমি স্যারকে নিয়ে বেড়াতে বের হব। তুমি কি যাবে আমাদের সঙ্গে?

আরে পাগল হয়েছিস? গজার মাছ পুড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে না? মাছ পুড়ানোর টেকনিক আছে। আগুনে ফেলে দিলেই হয় না।

.

আয়না মিসির আলিকে নিয়ে বটগাছের কাছে এল। সে কাঁধে ঝুলিয়ে পাটের ব্যাগ এনেছে। সেখান থেকে ক্যামেরা বের করে বলল, বটগাছের ছবি তুলতে চেয়েছিলেন ছবি তুলুন।

মিসির আলি হাতে ক্যামেরা নিলেন। একবারও জানতে চাইলেন না তিনি যে ছবি তুলতে চেয়েছেন সেটা আয়না জানল কীভাবে।

মাছরাঙার ছবি তুলুন।

মিসির আলি মাছরাঙার ছবি তুলে বললেন, তোমার একটা ছবি কি তুলে দেব? আয়না না সূচক মাথা নাড়ল। মিসির আলি বললেন, তুমি এখন মুখের ভাষায় না বল নি। শরীরের ভাষায় মাথা নেড়ে না বলেছ। শরীরের এই ভাষাটা আমরা সবাই জানি। এই ভাষার উৎপত্তি কীভাবে জান?

জানি না।

জানতে চাও?

চাই।

মিসির আলি বললেন, না বলার এই শারীরিক ভাষা তৈরি হয়েছে আমাদের শৈশবে। একটা শিশুকে মা খাওয়াচ্ছে। সে কথা বলা শেখে নি। তার পেট ভর্তি হয়ে গেছে সে এবার খাবে না। তখন তার মুখের কাছে খাবার নিলে সে মুখ সরিয়ে নেবে। যেখানে মুখ সরিয়েছে সেখানে খাবার নিলে মুখ আরেক দিকে সরাবে। না সূচক মাথা নাড়ানাড়ি চলতেই থাকবে। বুঝতে পারছ?

পারছি এবং অবাক হচ্ছি।

আমি যে তোমাকে ইচ্ছা করে অবাক করতে চাচ্ছি সেটা বুঝতে পারছ?

পারছি।

কেন তোমাকে অবাক করতে চাচ্ছি সেটা বুঝতে পারছ?

বুঝতে পারছি না। এবং বুঝতে চাচ্ছিও না। স্যার আপনি আর কতদিন থাকবেন?

পরশু চলে যাব।

যে মিশন নিয়ে এসেছিলেন সেটা কমপ্লিট হয়েছে?

মোটামুটি হয়েছে।

আয়না মেয়েটির রহস্য ধরে ফেলেছেন?

অনেকখানি ধরেছি। তুমি নিজে তোমার সম্পর্কে যা লিখেছ তা যদি পড়তে দাও তা হলে পুরোটাই বুঝতে পারব। দিবে?

আয়না স্পষ্ট গলায় বলল, না।

মিসির আলি বললেন, চল বসি।

আয়না ক্লান্ত গলায় বলল, চলুন।

দু’জন চুপচাপ বসা। মিসির আলি নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন। আয়না দুঃখী দুঃখী ভঙ্গিতে মিসির আলির দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। মিসির আলি বললেন, চুপচাপ বসে না থেকে গল্প কর।

আয়না বলল, আপনি গল্প করুন। আমি শুনি।

কী গল্প শুনতে চাও?

আয়না বলল, আপনার ছাত্রের কাছে শুনেছি আপনার একটা ফাইল আছে, সেখানে যেসব রহস্যের আপনি কোনো মীমাংসা করতে পারেন নি সেই সব অমীমাংসিত রহস্যের কথা লেখা।

ঠিকই শুনেছ।

সেসব গল্পের একটা শুনান। আপনার ব্যর্থতার গল্প শুনি। নাকি আপনার আপত্তি আছে?

কোনো আপত্তি নেই। বরং আগ্রহ আছে। আমি রহস্যভেদ করতে পারি নি, অন্য একজন পারবে। সেই অন্য একজন তুমিও হতে পার।

গল্প শুরু করুন।

মিসির আলি শুরু করলেন—

‘বছর পনের আগের কথা। আমার কাছে একটা কিশোরী মেয়ে এসেছে। চৌদ্দ পনের বছর বয়স। সে একা আসে নি, তার মা তাকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটার নাম নোশিন। তার নাকি ভয়ংকর এক সমস্যা। আমি তার সমস্যার সমাধান দেব এই মা মেয়ে দু’জনের আশা।

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করি। আমার নিজের একটা ছোট্ট কামরা আছে। ক্লাসের শেষে সেখানে বসে পড়াশোনা করি। মেয়ে এবং মেয়ের মা সেখানেই বসেছে। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, কী সমস্যা গো মা?

মেয়ে ভীত চোখে মা’র দিকে তাকাল। সে তার সমস্যা নিজের মুখে বলতে চায় না। মাকে দিয়ে বলাতে চায়। তার মা বললেন, নোশিন কী যেন দেখে।

আমি বললাম, কী দেখ?

নোশিন আবার তার মা’র দিকে তাকাল।

আমি বললাম, তোমার সমস্যা তোমাকেই বলতে হবে। খোলাখুলি বলতে হবে এবং আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে হবে। কোন ক্লাসে পড়?

ক্লাস টেন।

তুমি পড়াশোনায় কেমন?

ভালো।

সায়েন্স গ্রুপ?

জি।

এই তো কথা বলতে পারছ। এখন সমস্যা বলা শুরু কর। কোক বা পেপসি খাবে আনিয়ে দেব?

না।

শোন নোশিন! তুমি পেপসি বা কোক খেতে চাচ্ছ। তোমার বডি ল্যাংগুয়েজ তাই বলছে। কিন্তু মুখে বলছ না। আমি আনিয়ে দিচ্ছি। কী আনতে বলব কোক?

সেভেন আপ।

আমি সেভেন আপ আনতে বেয়ারাকে পাঠালাম। নোশিন অনেকখানি সহজ হল। সে হাত মুঠি করে বসেছিল। হাতের মুঠি সামান্য আলগা করল। কেউ যখন কিছু বলতে চায় না, তখন হাত মুঠিবদ্ধ করে রাখে।

সেভেন আপের গ্লাসে চুমুক দিয়ে নোশিন তার সমস্যাটা বলল, সে নাকি খুব ছোটবেলা থেকেই জন্তুর মতো একটা কিছু দেখে। জন্তুটা থাকে মানুষের পেছনে। সব মানুষের পেছনে না। যারা অল্পদিনের মধ্যে মারা যাবে তাদের পেছনে। জন্তুটা দেখতে কিছুটা মানুষের মতো। তবে মুখ গরুর মুখের মতো লম্বা। তাদের চোখ ও গরুর চোখের মতো। সেই চোখের মণি কখনো স্থির না। সব সময় ঘুরছে। জন্তুর গা থেকে কাঠপোড়ার গন্ধ আসে। তার হাত-পা মানুষের মতো। শুধু হাতের আঙুল অস্বাভাবিক লম্বা।

নোশিনের মা বললেন, মেয়ে যা বলছে সবই সত্যি। আমাদের যেসব আত্মীয়স্বজন মারা গেছেন, তাদের প্রত্যেকের পেছনে সে এই জন্তু দেখে ভয়ে অস্থির হয়ে কান্নাকাটি করেছে। যাদের পেছনে সে এই জন্তু দেখেছে তারা প্রত্যেকেই সাত থেকে দশ দিনের ভেতর মারা গেছে।

আমি বললাম, নোশিন জন্তুটার সাইজ কী? কত লম্বা?

নোশিন বলল, যার পেছনে সে দাঁড়ায় তারচেয়ে সে এক ফুটের মতো লম্বা হয়। তার মাথার উপর দিয়ে জন্তুটার মাথা দেখা যায়। জন্তুটা গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে থাকে।

জন্তুটার গায়ে কাপড় দেখেছ? সে দেখতে মানুষের মতো? মানুষ জামাকাপড় পরে। জন্তুটা কি পরেছে?

নোশিন এই প্রশ্নের জবাব দিল না। চোখ নামিয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে রইল।

আমি তাকে নিয়ে সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজে গেলাম। তাকে বললাম, তুমি আমাকে সাতজন রোগী দেখাও যাদের পেছনে ঐ জন্তু দাঁড়িয়ে আছে।

নোশিন দেখাল। আমি রোগীদের নাম-ধাম লিখে চলে এলাম। নোশিনকে বললাম, পরে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

আশ্চর্য হলেও সত্যি সাতজন রোগীই দশ দিনের মাথায় মারা গেল। নোশিনকে নিয়ে এই পরীক্ষা আরো দুইটা হাসপাতালে করলাম। তার একটি হচ্ছে আজিমপুর সরকারি মেটার্নিটি ক্লিনিক। যেখানে অনেক সময় মা এবং নবজাতক দু’জনই মারা যায়। নোশিন তাও ঠিকঠাক মতো বলতে পারল।

সে বলল যেসব রোগী বিছানায় শুয়ে থাকে জন্তুটা তার পাশে শুয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। নবজাতক শিশুর সঙ্গে যে জন্তুটা শুয়ে থাকে, সেই জন্তুটার সাইজ শিশুর চেয়ে সামান্য বড়।

আমি একটি হাইপোথিসিস দাঁড়া করালাম। জটিল কিছু না। সহজ ব্যাখ্যা। মেয়েটি কোনো বিশেষ উপায়ে মানুষের মৃত্যু Sense করতে পারে। হয়তো কোনো গন্ধ পায় বা এরকম কিছু। মৃত্যু সেন্স করার পরপরই তার ব্রেইন একটা কাল্পনিক ভয়ংকর জন্তুর মূর্তি তৈরি করে। তার ভেতর illusion তৈরি হয় যে সে জন্তু দেখছে।

পাশাপাশি আরেকটা হাইপোথিসিস দাঁড়া করালাম। এই হাইপোথিসিসে মেয়েটির ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা আছে। পুরো ভবিষ্যৎ না দশ-বারো দিনের ভবিষ্যৎ। এর মধ্যে যারা মারা যাবে সে জানে, তাদের পেছনেই জন্তু কল্পনা করে নেয়।

আমি প্রায় এক বছর এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম। প্যারানরম্যাল ভুবনে নোশিনের মতো আর কোনো উদাহরণ আছে কি না জানার চেষ্টা করলাম। অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তখন ইন্টারনেট শুরু হয় নি। অনেক চিঠিপত্র চালাচালি করতে হল। বলিভিয়ার এক বৃদ্ধের খোঁজ পাওয়া গেল যে মানুষের মৃত্যুর দিনক্ষণ বলতে পারে তবে সে কোনো জন্তু দেখে না। তার নাম সিমন ডি শান। যখন ভাবছি সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করব হঠাৎ খবর পেলাম নোশিন তার নিজের পেছনে একটা জন্তু দেখছে।

মিসির আলি বললেন, আজ এই পর্যন্ত। বাকিটা অন্য সময় বলব।

আয়না বলল, অন্য সময় বলবেন মানে? এখনই গল্প শেষ করবেন। গল্প শেষ না করে উঠতে পারবেন না।

মিসির আলি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, কেন পারব না বল? তুমি সবার উপর প্রভাব খাটাচ্ছ। আমার উপরও প্রভাব ফেলতে চাচ্ছ। আমাকে এই চক্র থেকে বের হতে হবে। তুমি ফুটবল খেলতে এসে বল রাখছ নিজের পায়ে। তা আর হবে না। বল নিয়ে আসতে হবে আমার নিজের কোর্টে।

আয়না বলল, গল্পের শেষটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে।

কোনো এক সময় অবশ্যই জানবে।

সেটা কখন? আজ?

মিসির আলি বললেন, জানি না। তিনি বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। আয়না আসছে না। সে তার জায়গাতেই বসে আছে। তাকিয়ে আছে মিসির আলির দিকে। তার চেহারা বিষণ্ন। কেঁদে ফেলার আগে কোনো তরুণীকে যেরকম দেখায়, তাকে সেরকম দেখাল। মিসির আলির মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল। তিনি বললেন, আয়না এস। গল্পের শেষটা শুনে যাও। বাড়ির দিকে যেতে যেতে গল্পটা করি। আয়না প্রায় দৌড়ে এল। মিসির আলি ছোট ছোট স্টেপ নিয়ে এগুচ্ছেন, গল্প করছেন। আয়না কান পেতে আছে।

‘বুঝতেই পারছ নোশিন মেয়েটির বাড়িতে কান্নার সীমা রইল না। তখনই তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হল। যদি কোনো রোগ ধরা পড়ে তার চিকিৎসা যেন শুরু হয়।

পুরো মেডিকেল চেক আপ। নোশিনের বাবা নিজেও একজন ডাক্তার, পিজিতে কাজ করেন।

মেডিকেল চেকাপে খারাপ ধরনের জন্ডিস ধরা পড়ল। হেপাটাইটিস সি বা ডি এই ধরনের কিছু। সুস্থ-সবল মেয়ে দেখতে দেখতে মড়ার মতো হয়ে গেল। তাকে ভর্তি করা হল পিজি হাসপাতালে। মেডিকেল বোর্ড বসল। নোশিনের অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়া শুরু করল। বেশিরভাগ সময় সে চোখ বন্ধ করে থাকে। ঘরের আলো

সহ্য করতে পারে না।

এক রাতে নোশিন তার মাকে বলল জন্তুটা তার সামনে চলে এসেছে। বসে আছে হাসপাতালের বিছানার পাশে। নোশিনকে অদ্ভুত ভাষায় কী সব বলে নোশিন বুঝতে পারে না।

আমি প্রতিদিনই নোশিনকে দেখতে যাই। তাকে সান্ত্বনা দেয়া বা প্রবোধ দেবার কিছু নেই। আমি যাই ব্যাপারটা বুঝতে। নোশিনকে নানান প্রশ্ন করি। সে প্রতিটা প্রশ্নেরই জবাব দেয়। জবাব দিয়ে কাঁদে।

নোশিন! জন্তুটা এখন কোথায়?

আমার সামনে।

কী করছে?

আঙুল নেড়ে নেড়ে কী যেন বলছে।

তুমি হাত ইশারায় তাকে চলে যেতে বল।

নোশিন হাত ইশারায় চলে যেতে বলল। মুখেও বলল, তুমি চলে যাও। তুমি চলে যাও।

আমি বললাম, নোশিন এখন জন্তুটা কী করছে?

হাসছে।

জন্তুটা হাসতে পারে?

পারে।

অষ্টম দিনে নোশিনের মা আমাকে টেলিফোন করে আসতে বললেন। বিশেষ একটা ঘটনা নাকি ঘটছে। আমি তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে উপস্থিত হলাম। নোশিন আধশোয়া হয়ে আছে। তার হাতে কী যেন আছে। সে দুই হাতে সেটা আড়াল করতে চাইছে। আঙুলের ফাঁক দিয়ে সবুজ রঙের কী যেন দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো গাছের কষ। আমি বললাম, কী ব্যাপার?

নোশিন জানাল জন্তুটা তাকে ঘণ্টাখানেক আগে এটা দিয়েছে এবং খেতে বলেছে। বারবার ইশারা করছে মুখে দিতে। সে কী করবে বুঝতে পারছে না।

আমি বললাম, কখন দিয়ে গেল?

নোশিন বলল, কখন দিয়েছে আমি জানি না। ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ জেগে দেখি জেলির মতো এই জিনিসটা আমার হাতে। জন্তুটা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে। হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে খেতে বলছে। চাচা আমি কি খাব?

আমি কী বলব বুঝতে পারছি না। জন্তুর ব্যাপারটাই নিতে পারছি না। সে খাবার এনে দিচ্ছে এটা কীভাবে নেব? বারবার মনে হচ্ছে হাসপাতালের কোনো নার্স বা অ্যাসিস্ট্যান্ট মেয়েটার হাতে এটা দিয়েছে। টুথপেস্ট হবার সম্ভাবনা। দেখতে সে রকমই।

নোশিন বলল, কেউ খেতে দিচ্ছে না। সবাই বলছে খেলেই আমি মরে যাব। জন্তুটা আমাকে তাড়াতাড়ি মরার জন্য এটা এনে দিয়েছে।

আমি বললাম, তোমার মন যা চায় তাই কর। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয়। তবে আমি তোমার জায়গায় হলে হয়তো খেয়ে ফেলতাম।

নোশিন হঠাৎ জিনিসটা মুখে দিয়ে মুখ বিকৃত করে গিলে ফেলল। এবং চোখ বড় বড় করে বলল, জন্তুটা দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছে।

নোশিনের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। সে অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তার বিয়ে হয় একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। তার নিজের জন্তুটাকে চলে যেতে দেখার পর জন্তু দেখার রোগটা তার পুরোপুরি সেরে যায়। এই হচ্ছে অমীমাংসিত রহস্যের গল্প।’

আয়না বলল, সব রহস্যের মীমাংসা না হওয়াই ভালো!

তাই বুঝি?

জি তাই। সব রহস্যের মীমাংসা হয়ে গেলে পৃথিবী সাধারণ হয়ে যাবে। আমি চাই না আপনি আমার রহস্যের মীমাংসা করেন।

তুমি নিজে কি তোমার রহস্যের মীমাংসা করেছ? যদি করে ফেল তা হলেই হবে। পোড়া গজার মাছ ভূত-প্রেতকে দিয়ে খাওয়ানো প্রকল্প বাতিল হয়ে গেল। ঘটনা এরকম—খড়ের গাদায় আগুন দিয়ে লবণ মাখানো গজার মাছ ঢুকানো হবে। প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগুন দেয়া হয়েছে। খড় ভেজা বলে আগুন ঠিকমতো জ্বলছে না। একজন গেছে কেরোসিন আনতে। হেডমাস্টার সাহেব বললেন, ‘কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরালে চলবে না। মাছে কেরোসিনের গন্ধ থাকলে ভূত সেই মাছ খাবে না। অল্প আগুনেই মাছ পুড়ানো শুরু হোক।’ দু’জন মিলে মাছটাকে আগুনে রাখতে যাচ্ছে তখন বনের ভেতর থেকে ভয়াল দর্শন এক কুকুর বের হয়ে এল। লাঠি নিয়ে একজন কুকুরটাকে তাড়া করতে গেল। কুকুরটা তার পা কামড়ে ধরল। আর তখন বনের ভেতর থেকে আরো দু’টা কুকুর বের হল। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল মাছের উপর।

কুকুরের তাড়া খেয়ে হেডমাস্টার সাহেব উল্টে পড়লেন। পা মচকালেন। মাছ ধরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনের ভেতর তিনজনই কুকুরের কামড় খেল। হেডমাস্টার সাহেব কোনোক্রমে রক্ষা পেলেন।

রাত বাড়ার পর শুরু হল আরেক উপদ্রব। কুকুর তিনটা হেডমাস্টার সাহেবের বাড়ির চারদিকে চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করল। মাঝে মাঝে তারা থামে। তখন তিনজনই একসঙ্গে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে

হেডমাস্টার সাহেব মিসির আলিকে বললেন, অবস্থা কিছু বুঝলেন? মিসির আলি বললেন, না।

তিন কুকুর হচ্ছে ঐ জিনিস।

কী জিনিস?

খারাপ জিনিস। কুকুরের বেশ ধরে এসেছে।

ভূত-প্রেত?

অবশ্যই। এদের আচার-আচরণ দেখে বুঝতে পারছেন না?

মিসির আলি বললেন, ভূত-প্রেত কুকুরের বেশ ধরে আসবে কেন?

হেডমাস্টার সাহেব বললেন, ভয় দেখানোর জন্য এসেছে।

মিসির আলি বললেন, ভয় দেখানোর জন্য আরো ভয়ংকর কিছুর বেশ ধরে আসা উচিত। যেমন ধরুন চিতাবাঘ।

এরা যে কুকুর না অন্য কিছু তা আপনি বিশ্বাস করছেন না?

মিসির আলি বললেন, না। আপনার কাছে বন্দুক থাকলে আমি বলতাম একটা কুকুর গুলি করে মারতে। তা হলে আপনি ভূত মারার দুর্লভ সম্মান পেতেন। ভাই আপনার কাছে কি বন্দুক আছে?

না বন্দুক নাই। বন্দুক থাকলেও আমি গুলি করতাম না। ভূত-প্রেতের সাথে বিবাদে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। এদের ক্ষেপিয়ে দিলে সমস্যা আছে। সমানে সমানে বিবাদ চলে। অসমানে বিবাদ চলে না।

ভূতদের ক্ষমতা কি আমদের চেয়ে বেশি?

অবশ্যই বেশি। যারা অদৃশ্য তাদের ক্ষমতা বেশি তো হবেই। মানুষ চাঁদে যাওয়া নিয়ে কত হইচই করল। খোঁজ নিয়ে জানা যাবে ভূত-প্রেত মানুষের অনেক আগেই চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ এইসব জায়গায় বসতি করেছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে তাদের রকেট লাগে না।

.

কুকুর তিনটার কারণে মিসির আলি রাতের খাবারের হাত থেকে বেঁচে গেলেন। দোতলা থেকে কেউ নামতে সাহস পেল না। পরিবারের সবাই অভুক্ত থেকে গেল।

রাত অনেক হয়েছে। বারান্দায় বসে মিসির আলি কুকুরের কর্মকাণ্ড দেখছেন। আয়না এসে তাঁর পাশে বসতে বসতে বলল, কুকুর তিনটা কী কাণ্ড করেছে দেখেছেন স্যার?

মিসির আলি বললেন, দেখছি।

আয়না বলল, এই বাড়ির চারপাশে তাদের ঘুরঘুর করার কী আছে? গজার মাছ পুড়ানোর আয়োজন এ বাড়ি থেকে করা হয়েছে এই তথ্য কুকুরদের জানার কথা না। স্যার আপনি তো অনেক বিষয় জানেন—কুকুর বিষয়ে কি জানেন?

মিসির আলি বললেন, তেমন কিছু জানি না। আমার বিষয় মানুষের সাইকোলজি। কুকুরের সাইকোলজি না। তবে একটা বিষয় জানি—কুকুর মিষ্টির স্বাদ জানে না। জিহ্বায় যে টেস্টবাড মিষ্টির স্বাদ টের পায় সেই টেস্টবাড কুকুরের নেই। তাকে রসগোল্লা দিয়ে দেখ, সে খাবে না।

আয়না বলল, স্যার আপনি তো সব বিষয়ে একটা হাইপোথিসিস দাঁড়া করিয়ে ফেলেন। কুকুর তিনটা সম্পর্কে আপনার হাইপোথিসিস কী?

মিসির আলি বললেন, সহজ হাইপোথিসিস আছে। কুকুর মানুষের ভয় টের পায়। যে কুকুরকে ভয় পায় কুকুর তাকেই তাড়া করে। তোমার বাবা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছেন। কুকুর তিনটা ভয় ধরে ধরেই এখানে এসেছে। তোমার বাবা যখন ঘুমিয়ে পড়বেন ওরা চলে যাবে।

আয়না বলল, আপনার কি একবারও মনে হয় নি কুকুর তিনটার এখানে আসার পেছনে আমার ভূমিকা আছে? মানুষকে যে প্রভাবিত করতে পারে, সে তো কুকুরকেও করতে পারবে।

মিসির আলি বললেন, তোমার সঙ্গে এ বাড়িতে কুকুর আসার কোনো সম্পর্ক নেই। কুকুর তিনটার কারণে তোমাদের বাড়ির সব মানুষ না খেয়ে আছে। ওই কাজটা তো তুমি হতে দেবে না। তুমি কুকুর এনে থাকলে তাদের বিদেয় করে দিতে। সেটা তুমি কর নি। তুমি নিজেও অভুক্ত।

আয়না বলল, স্যার রেলিং ধরে একটু দাঁড়ান। আমি এদের বিদায় করে দিচ্ছি। এরা একজন একজন করে উঠে চলে যাবে আর ফেরত আসবে না।

মিসির আলি রেলিং ধরে দাঁড়ালেন। কুকুর তিনটা এক লাইনে হিজ মাস্টার্স ভয়েসের মতো থাবা গেড়ে বসে আছে। একটা কুকুর হঠাৎ একটু নড়েচড়ে উঠল। তারপরেই ছুটে চলে গেল। বাকি দু’টা আগের মতোই বসা। এখন আরেকটা চলে গেল। তারও কিছুক্ষণ পরে গেল তৃতীয়টা।

মিসির আলি আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন, ভালো দেখিয়েছ। I am Impressed.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *