সেলুন কারে বাতি জ্বলে উঠেছে। এক সঙ্গে সবাই হৈ হৈ করে উঠল। যমুনা হাত তালি দিচ্ছে। যমুনার দেখাদেখি অন্যরাও হাত তালি দিচ্ছে। ব্যান্ডের একজন অতি দ্রুত ড্রামে কয়েকটা বাড়ি দিল। বিপুল হাত তালির ভেতর বদরুল ঢুকল। সেলুন কারে হঠাৎ যেন বজ্রপাত হল।
আশহাব মার পাশে বসে আছে। সাজেদা শান্ত। দেখে বুঝার উপায় নেই যে কিছুক্ষণ আগেও কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। তিনি হট পট খুলে খাবার বের করেছেন। পেপার প্লেট, নেপকিন বের হয়েছে। আচারের কৌটা, কাচামরিচ। আয়োজনে কোনো খুঁত নেই। একটা কাসুন্দির শিশিও দেখা যাচ্ছে।
সাজেদা বললেন, বৌমা আবার কোথায় গেল। ঘরের বউ হুট হাট করে বেড়াতে বের হওয়া আমার পছন্দ নয়। বৌমাকে ডেকে আন।
আশহাব বলল, মা তুমি বৌমা পেলে কোথায়? চিত্রা এই ট্রেনের একজন যাত্রী। কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে।
আমার সঙ্গে ফাজলামী করবি না। তোকে যা বলেছি কর। বৌমাকে ডেকে নিয়ে আয়।
মা তুমি কি সত্যি ভাবছ সে তোমার বৌমা? না-কি ইচ্ছা করে একটা নাটক করছ?
সাজেদা বললেন, তোর এতবড় সাহস? তুই এইভাবে আমার সঙ্গে কথা বলছিস? আমি আমার বৌমাকে চিনব না।
মা তোমাকে দুটা ট্যাবলেট দিচ্ছি। ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়। তোমার ঘুম দরকার।
আমার সঙ্গে ডাক্তারী ফলাচ্ছিস? ফেল করা ডাক্তার।
ফেল করা ডাক্তার মানে?
নকল করে ধরা পড়লি মনে নাই। প্রিন্সিপ্যাল তোকে বের করে দিল।
মা তুমি এসব কি বলছ?
তুই আমাকে দিয়ে প্রিন্সিপ্যালের পায়ে ধরালি। একজন মানুষের সামনে কতটা নিচু তুই আমাকে করলি। বদমাশ ছেলে।
মা তোমার অবস্থাতো খুবই কাহিল। কি গল্প ফাঁদছ। এরকম গল্প তোমার মাথায় আসছে কেন? আমি দুটা সাবজেক্টে হাইয়েস্ট পাওয়া। গোল্ড মেডেল তোমার গলায় পরিয়ে দিয়েছিলাম। মনে নাই?
মনে আছে।
তাহলে এইসব কি বলছ?
আর বলব না।
মাথা কি ঠিক হয়েছে?
হুঁ। হা কর মুখে ভাত দিয়ে দেই।
আশহাব হা করল। সাজেদা ছেলের মুখে ভাত তুলে দিতে দিতে বললেন, আজ তুই আমার হাতে খাবি। তোর হাত নোংরা করার দরকার নেই।
আশহাব কিছু বলল না। সাজেদা বললেন, তুই মাঝে মাঝে এমন গাধার মতো কাজ করিস।
গাধার মতো কাজ কি করলাম?
বৌমাকে নিয়ে প্রথম যাচ্ছিস তোরা দুজন যাবি এক কামরায় আমি যাব আলাদা। তা-না তিনজন এক সঙ্গে যাচ্ছি। বেচারী মনটাতো এই জন্যেই খারাপ করেছে। একটু পর পর তোর খুঁজে যাচ্ছে। ওর মনের ভাব আমি পরিস্কার বুঝতে পারছি।
বুঝতে পারলে তো ভালো। মা আমাকে আর খাইয়ে দিতে হবে না। যথেষ্ট হয়েছে। এখন তুমি খাও।
তোর কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেল। বৌমাকে রেখে আমি খেয়ে ফেললে সে কি মনে করবে। বাপ নেই, মা নেই একটা মেয়ে। স্নেহের কাঙ্গাল।
আশহাব বিড় বিড় করে বলল, মহা বিপদ।
সাজেদা বললেন, খাওয়া শেষ করে তুই বৌমাকে খুঁজে আনবি। আমি কামরা ছেড়ে দেব তোরা দুই জন এখানে ঘুমাবি। আদর ভালবাসা করতে চাইলে করবি। হুট করে আমি তোদের কামরায় ঢুকব এরকম ভুলেও মনে করবি না। এই বুদ্ধি আমার আছে।
অবশ্যই সেই বুদ্ধি তোমার আছে।
ভাত চাবাচ্ছিস না কেন? মুখে দিচ্ছি আর কোৎ করে গিলে ফেলছিস। ভাল করে চাবাতে হবে না। আচার খাবি? একটু আচার দেই?
আশহাব বিড় বিড় করে বলল, Oh God, oh God.
চিত্রা রশীদ সাহেবের পাশে বসে আছে। তার চোখ উজ্জ্বল। সে আগ্রহ নিয়ে কথা শুনছে। বিজ্ঞানের অতি জটিল সব বিষয় এই মানুষ এত সহজে কিভাবে বলছে সে বুঝতে পারছে না। তার কাছে এখন মনে হচ্ছে পৃথিবীতে জটিল বলে কিছু নেই।
রশীদ সাহেব বললেন, মা আমাকে তুমি বল একটা আপেল থ্রি ডাইমেনশনাল বডি না? এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং উচ্চতা আছে না?
চিত্রা বলল, জি। অবশ্যই।
রশীদ সাহেব বললেন, আপেলের খোসাটা কিন্তু টু ডাইমেনশনাল। আপেলের খোসার আছে শুধু দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ।
চিত্রা বলল, জি চাচা।
রশীদ সাহেব বললেন, তুমি কি এখন বুঝতে পারছ একটি থ্রি ডাইমেনশনাল বস্তুকে একটি টু ডাইমেনশনাল বস্তু ঘিরে রেখেছে।
জি।
এটা যে সম্ভব তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ।
পারছি।
রশীদ সাহেব সামান্য ঝুঁকে এসে বললেন, একই লজিকে আমি যদি বলি থ্রিডাইমেনশনাল কোনো বস্তু দিয়ে ফোর ডাইমেনশনাল জগৎ আটকে রাখা সম্ভব তাহলে কি বিশ্বাস করবে?
চিত্রা চিন্তিত গলায় বলল, বিশ্বাস করাইতো উচিত।
রশীদ সাহেব বললেন, তোমার কাছে কোনো কিছু যদি অস্পষ্ট মনে হয় আমাকে বলবে। বিজ্ঞান অস্পষ্টতা পছন্দ করে না যদিও হায়ার সায়েন্স পুরোটাই অস্পষ্ট।
কেন?
হায়ার সায়েন্স Big Bang আগে কি হচ্ছে বলতে পারছে না। সময় কি সুষ্ঠু ভাবে বলতে পারছে না, অতীত এবং ভবিষ্যত কি বলতে পারছে না। হায়ার সায়েন্স হঠাৎ বলছে হলগ্রাফিক ইউনিভার্সের কথা। হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সের কথা শুনেছ?
না।
বলব?
অবশ্যই বলবেন।
মূল ডিসকাশান থেকে আমি কিন্তু সরে যাব।
মূল ডিসকাশনে পরে যাবেন—হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সটা কি আগে বলুন।
রশীদ সাহেব বললেন, এই হাইপোথিসিসে বিশ্ব ভ্ৰহ্মাণ্ড একটা হলোগ্রাম ছাড়া আর কিছুই না…
খোলা দরজায় বসির মাথা বের করে বলল, বিরাট এক সমস্যা হয়েছে। আপা আপনি কি ডাক্তার?
চিত্রা বলল, না তো। আশহাব সাহেব ডাক্তার।
বসির বলল, একজন মহিলা ডাক্তার দরকার। পাঁচ নম্বর কেবিনে এক মহিলার ডেলিভারী পেইন শুরু হয়েছে। উনার হাসবেন্ড মাওলানা। উনি লেডি ডাক্তার ছাড়া তাঁর স্ত্রীকে দেখাবেন না। আমি পুরো ট্রেইন খুঁজে এসেছি। কোনো লেডি ডাক্তার নেই।
রশীদ সাহেব বললেন, ডাক্তারের আবার পুরুষ মহিলা কি? ডাক্তার হল ডাক্তার। আমি মাওলানার সঙ্গে কথা বলি। উনাকে বুঝিয়ে বলি।
বসির বলল, উনি বুঝ মানার লোক না স্যার। কঠিন মাওলানা।
রশীদ সাহেব বললেন, নিশ্চয়ই কেউ তাকে ঠিকমতো লজিক দিতে পারে নি। মানুষ এমন ভাবে তৈরি যে তাকে লজিকের কাছে সারেন্ডার করতেই হয়। উনি যেমন কঠিন মাওলানা, আমিও কঠিন তার্কিক।
বসির বলল, আপনার কথা উনাকে বলে দেখি উনি কথা শুনতে রাজি হন কি-না।
রশীদ সাহেব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, ইন্টারমিডিয়েট কারোর প্রয়োজন দেখছি না। আমি সরাসরি কথা বলব। তুমি আমাকে নিয়ে চল।
চিত্রা বলল, চাচা আমিও আসি। আমি আপনার লজিক শুনব।
রশীদ সাহেব বললেন, এসো।
মাওলানা কামরার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর কপালে ঘাম তবে চোখ মুখ কঠিন। তার একটা হাত পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকানো। মনে হচ্ছে ওই হাতে তসবি। কেবিনের দরজা বন্ধ। নারী কণ্ঠের চাপা কাতরানি শোনা যাচ্ছে।
রশীদ উদ্দিন এগিয়ে গেলেন। চিত্রা গেল তার পিছু পিছু। মাওলানা ভুরু কুঁচকে তাকালেন। রশীদ সাহেব বললেন, আসসালামু আলায়কুম।
মাওলানা শীতল গলায় বললেন, ওয়ালাইকুম সালাম।
রশীদ উদ্দিন বললেন, আপনার স্ত্রীর লেবার পেইন শুরু হয়েছে বলে শুনেছি। এইটাই কি আপনাদের প্রথম সন্তান?
জি।
ছেলে না মেয়ে?
কি করে বলব। সন্তানতো এখনো হয় নাই।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আগে ভাগে জানার ব্যবস্থা আছে।
মাওলানা বললেন, আল্লাহপাক যদি চাইতেন আমরা আগে ভাগে জানি তাহলে মেয়েদের পেটের চামড়া পাতলা কাঁচের মতো বানাতেন আমরা পেটের ভেতরের সন্তান দেখতে পেতাম।
রশীদ উদ্দিন বললেন, আল্লাহ পাক মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছেন যেন সে অজানাকে জানতে পারে। সূরা আল ইমরানে আছে…
মাওলানা বললেন, জনাব আমি আপনার সঙ্গে তর্কে যাব না। আমি বুঝতে পারছি আপনি তর্কে আমাকে পরাস্ত করার আনন্দ পেতে চান। আনন্দ আপনাকে দিলাম—-আগেই পরাজয় মানলাম।
রশীদ উদ্দিন বললেন, একজন পুরুষ ডাক্তার আমাদের সঙ্গে আছেন।
আমি আমার স্ত্রীর পর্দা নষ্ট করব না। কোনো পুরুষ ডাক্তার তাকে দেখাব না।
আপনার সিদ্ধান্তের কারণে আপনার স্ত্রী বা সন্তানের সমূহ ক্ষতি কিন্তু হতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটে তারাতো মারাও যেতে পারে।
যদি মারা যায় তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহপাক তাদের আয়ু দেন নাই। জনাব আপনার সঙ্গে আর বাক্যালাপ করব না। গোস্তাকি নিবেন না। আমার মন অস্থির। তর্ক করার মতো অবস্থায় আমি নাই।
মাওলানা কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
চিত্রা বলল, চাচাজি উনি কোনো লজিকই শুনবেন না।
রশীদ উদ্দিন বললেন, এ রকম হয়। এই মাওলানা নিশ্চয়ই লজিকের কারণে অনেক বার আহত হয়েছেন যে কারণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বড় বড় বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এই জিনিস দেখা যায়। অন্য বিজ্ঞানীদের লজিক যাতে শুনতে না হয় তার জন্যে নিজে লজিক থেকে সরে যান।
চিত্রা বলল, আমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব?
রশীদ উদ্দিন বললেন, আমি দাঁড়িয়ে থাকব। মাওলানা আবার যখন বের হবেন তাকে আবার ধরব। ভাল কথা তোমার কাছে কি কোনো কয়েন আছে।
কেন বলুন তো!
তোমাকে একটা ম্যাজিক দেখাব।
এখন দেখাবেন। এইখানে?
Why not.
চিত্রা হ্যান্ডব্যাগ খুঁজে কোনো কয়েন পেল না। রশীদ উদ্দিন বললেন, কারো কাছ থেকে খুঁজে একটা কয়েন নিয়ে এসো তো।
বিস্মিত চিত্রা কয়েনের খোঁজে বের হল। মানুষটা কি পাগল? এই অবস্থায় কেউ ম্যাজিক দেখানোর কয়েন খোঁজে? বেশির ভাগ বিখ্যাত মানুষ একসেনট্রিক। এই একসিনট্রিসিটির কতটা সত্যি আর কতটা ভান? আমি আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো না। আমি আলাদা আমি অন্য রকম এই ধারণা বিখ্যাত মানুষরাই দিতে চেষ্টা করেন। সাধারণ মানুষদের এই সব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। আমি যা আমি তাই। Take me or leave me.
চিত্রা!
চিত্রা থমকে দাঁড়াল। ডাক্তার আশহাব। তাঁর মুখ চিন্তিত। চিত্রা বিস্মিত। এই ভদ্রলোক এত সহজে তাকে চিত্রা ডাকছে যেন সে তার ঘরের কেউ।
আশহাব বলল, আমার মায়ের মাথা পুরোপুরি গেছে। ব্রেইনের নিউরেনোল কানেকশনের চল্লিশ পার্সেন্ট মনে হয় অফ হয়ে গেছে। পরিচিত জগত সম্পর্কে যেখানে information থাকে সেখানে মনে হয় একটা havoc হয়ে গেছে।
আপনাকে চিনতে পারছেন না?
আমাকে এখনো চিনতে পারছেন তবে কিছুক্ষণ পরে মনে হয় চিনতে পারবেন না।
চিত্রা বলল, কিছু মনে করবেন না। আপনাকে কিন্তু খুশি খুশি লাগছে।
আশহাব বলল, ঠিক ধরেছেন বিচিত্র কারণে আমি ফান পাচ্ছি। কেন পাচ্ছি নিজেও জানি না।
চিত্রা বলল, আমি জানি।
আশহাব বিস্মিত হয়ে বলল, আপনি কিভাবে জানবেন?
চিত্রা কঠিন গলায় বলল, আপনার মা আমাকে বৌমা বৌমা ডাকছেন এই বিষয়টাতে আপনি ফান পাচ্ছেন। যে কোনো মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করতে ছেলেরা ভালোবাসে এবং ফান পায়।
আশহাব বলল, আর মেয়েরা কিসে Fun পায়?
মেয়েরা বিয়ের আগে কোনো পুরুষকেই স্বামী ভেবে fun পায় না। তার প্রেমিককেও সে বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বামী ভাবে না। আপনার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি আপনি যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন। আপনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি খেলার শখ এই মুহূর্তে হচ্ছে না। আপনার কাছে যদি কয়েন থাকে আমাকে একটা কয়েন দিন।
কয়েন দিয়ে কি করবেন?
ম্যাজিক দেখব। রশীদ সাহেব ম্যাজিক দেখাবেন।
আশহাব কয়েন বের করতে করতে ক্ষীণ স্বরে বলল, আমার মা আপনাকে ছাড়া ডিনার করবেন না।
চিত্রা বলল, না করলে নাই।
একজন অসুস্থ মানুষ। তার দিকটা দেখবেন না?
আমিও অসুস্থ।
রশীদ সাহেব কয়েন হাতে নিতে নিতে বললেন, চিত্রা মন দিয়ে দেখ কি করছি কয়েনটা কোন হাতে?
ডান হাতে।
এখন কোন হাতে নিয়েছি?
বাম হাতে।
রশীদ সাহেব বাম হাত খুলে দেখালেন যে বাম হাত শূন্য। চিত্রা বলল, কয়েনটা ডান হাতেই আছে। আপনি ভঙ্গি করছেন কয়েনটা বাম হাতে নিয়েছেন আসলে নেন নি।
তোমার ধারণা কয়েনটা ডান হাতে?
জি।
রশীদ সাহেব ডান হাত খুলে দেখালেন। সেখানে কয়েন নেই। দুই হাতের কোথাও নেই। দুটা হাতই খালি। চিত্রা বলল, কয়েন গেল
কোথায়?
রশীদ সাহেব বললেন, আমারোতো একই প্রশ্ন। কয়েন গেল কোথায়। এ রকম জলজ্যান্ত একটা বস্তুতো উধাও হয়ে যেতে পারে না তাই না?
চিত্রা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। কয়েন অদৃশ্য করার খেলা সে আগে অনেকবার দেখেছে এ রকম কখনো দেখে নি।
রশীদ সাহেব বললেন, কয়েন ভ্যানিশের ম্যাজিকটা শেখায় আমার একটা বড় লাভ হয়েছে। পদার্থবিদ বন্ধুদের খেলাটা দেখাতে পারব। তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে মজা পাবে। ভিন্ন কারণটা শুনবে?
শুনব।
আগ্রহ নিয়ে শুনবে না-কি শুনতে হয় বলে শুনবে?
আগ্রহ নিয়ে শুনব। চাচা আমি নিজেও Physics-এর ছাত্রী।
রশীদ সাহেব বললেন, পদার্থবিদরা জগত সম্পর্কে হাইপোথিসিস, জগতের নিয়ম সম্পর্কে হাইপোথিসিস দাঁড়া করান। বিপুল উৎসাহে তারা অগ্রসর হন। ম্যাথমেটিকেল মডেল তৈরি হয়। তখন আমাদেরও ডাক পড়ে। কারণ বেশির ভাগ পদার্থবিদ অংকে দুর্বল। তোমাদের আইনস্টাইনের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। যাই হোক মূল কথায় ফিরে যাই। মনে করো পদার্থবিদ একটি সূত্র দাঁড় করালেন—
Y = BC + M + N^2
Y হল B, C, M এবং N–এর ফাংশান।
সব ঠিক মত চলছে হঠাৎ এক সময় নজরে আসবে M অদৃশ্য। শুরুতে M ছাড়া সূত্র কাজ করছে না, মাঝখানে M থাকলে সূত্র কাজ করছে না।
বুঝতে পারছ কি বলছি?
বুঝতে পারছি।
রশীদ সাহেব বললেন, তোমার কাছে কি মনে হচ্ছে না God পদার্থবিদদের সামান্য ম্যাজিক দেখালেন? হঠাৎ M অদৃশ্য করে দিলেন?
মনে হচ্ছে।
আরেকটা জিনিস কি মনে হচ্ছে—God M-কে অদৃশ্য করে দেন নি লুকিয়ে রেখেছেন। এমন এক সাধারণ জায়গায় লুকিয়েছেন যে আমাদের চোখে পড়ছে না।
চিত্রা বলল, আপনি শিক্ষক হিসেবে নিশ্চয়ই খুব ভাল।
রশীদ সাহেব বললেন, খুব ভাল না। মোটামুটি ভাল। তুমি কি মাওলানা সাহেবের স্ত্রীর কাত্রানী শুনতে পাচ্ছ।
পাচ্ছি।
খুব খারাপ লাগছে না?
লাগছে।
অংক হচ্ছে যুক্তি। আমি অংকের Giant. সেই আমি যদি মাওলানা সাহেবকে যুক্তিতে পরাস্ত করতে না পারি তাহলে শিক্ষক হিসেবে আমি দুর্বল শিক্ষক।
চিত্রা বলল, উনাকে তো যুক্তি শুনতে হবে। যুক্তি না শুনলে আপনি তাঁকে পরাস্ত করবেন কিভাবে?
রশীদ সাহেব বললেন, ছাত্র আমার কথাই শুনতে চাচ্ছে না এটাও কি শিক্ষক হিসেবে আমার ব্যর্থতা না?
চিত্রা বলল, উনি তো আপনার ছাত্র না।
রশীদ সাহেব বললেন, একজন শিক্ষকের কাছে সবাই ছাত্র।
Leave a Reply