১৬.দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ

ষোড়শ অধ্যায়ঃ দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ

শ্রীভগবানুবাচ ।
অভয়ম্‌ সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ জ্ঞান যোগ ব্যবস্তিতিঃ ॥
দানম্‌ দমঃ চ যজ্ঞঃ চ সাধ্যায় তপ আর্জবম্‌ ॥১॥

অহিংসা সত্যম্‌ অক্রোধঃ ত্যাগঃ শান্তি অপৈশুনম্‌ ॥
দয়া ভূতেষু অলোলুপ্তম্‌ মার্দবম্‌ হ্রীঃ অচাপলম্‌ ॥২॥

তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ সৌচম্‌ অদ্রোহঃ ন অতিমানিতা ॥
ভবন্তি সম্পদম দৈবীম্‌ অভিজাতস্য ভারত ॥৩॥
অর্থ-ভগবান বললেন হে ভারত, ভয়শুন্যতা, সত্তার, পবিত্রতা পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশিলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান,বৈদিক শাস্ত্র অধ্যায়ন,তপশ্চর্যা, সরলতা,অহিংসা,সত্যবাদিতা,ক্রোধশুন্যতা,বৈরাগ্য, শান্তি ,অন্যের দোশদর্শন না করা,দয়া,লোভহীনতা,মৃদুতা,অসত্ চিন্তা ও অসত্ কর্ম লজ্জা, অচপলতা,তেজ,ক্ষমা, ধৈর্য,শৌচ,মত্সর্য শুন্যতা, অনভিমান এই সমসত গুনগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।

দম্ভঃ দর্পঃ অভিমান চ ক্রোধঃ পারুষ্যম্‌ এব চ ॥
অজ্ঞানাম্‌ চ অভিজাতস্য পার্থ সম্পাদম্‌ আসুরীম্‌ ॥৪॥
অর্থ-হে পার্থ যারা আসুরি ভাব নিয়া জন্মগ্রহন করেছেন, দম্ভ, দর্প,অহংঙ্কার, ক্রোধ, বাক্য এবং ব্যবহরে কর্কশভাব্‌ এবং অবিবেক এই সমস্ত অসত্ ভাব তাদের মধ্যে প্রকাশিত হয়।

দৈবী সম্পত্ বিমোক্ষায় নিবন্ধায় আসুরী মতা ॥
মা শুচঃ সম্পাদম্‌ দৈবীম্‌ অভিজাত অসি পান্ডব ॥৫॥
অর্থ-দৈবী গুনাবলী মূক্তির অনুকুল আর আসুরীক গুনাবলী সংসার বন্ধনের কারন। হে পান্ডুপুত্র তুমি শোক করোনা কারন তুমি দৈবী গুনাবলীতে বিভূষিত হয়ে জন্ম গ্রহন করেছ।

দৌঃ ভূতসর্গৌ লোকে অস্মিন দৈব আসুর এব চ ॥
দৈব বিস্তরশঃ প্রোক্তঃ আসুরম্‌ পার্থ মে শৃনু ॥৬॥
অর্থ-হে পার্থ এজগতে দেব স্বভাব প্রাণীদের কথা বিস্তারিত ভাবে বর্ননা করেছি। এখন আসুরীক স্বভাব বিশিষ্ট প্রাণীদের কথা শ্রবন কর।

প্রবৃত্তিম্‌ চ নিবৃত্তিম্‌ চ জনাঃ ন বিদুঃ অসুরাঃ ॥
নশৌচম্‌ ন অপি চ আচারঃ ন সত্যম্‌ তেষু বিদ্যতে ॥৭॥
অর্থ-অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয় প্রবৃত্ত হতে জানে না এবং অধর্ম বিষয়ে থেকেও নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের শৌচ নেই সদাচার নেই এবং সত্যও নেই।

অসত্যম অপ্রতিষ্ঠম তে জগত্ আহুঃ অনীশ্বরম্‌ ॥
অপস্পর সম্ভুতম্‌ কিমন্যত্ কাম হৈতুকম্‌ ॥৮॥
অর্থ-অসুর স্বভাক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে এই জগত্ মিথ্যা অবলম্বন হীন এবং অবিনশ্বর কাম বশত স্ত্রীপুরুষের সংযোগেই এই জগত্ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছারা অন্য কেন কারন নাই।

এতাম্‌ দৃষ্টিম্‌ অবষ্টভ্য নষ্ট আত্মনঃ অল্পবুদ্ধয় ॥
প্রভবন্তি উগ্রকর্মাণ ক্ষয়ায় জগতঃ অহিত্বাঃ ॥৯॥
অর্থ-এই প্রকার সিন্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্তহীন অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন উগ্রকর্মা অসুরস্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জগত্ ধংসকারি কার্যে নিয়োজিত থাকে।

কামম্‌ আশ্রিত্য দুঃস্পুরম্‌ দম্ভ মান মদান্বিতাঃ ॥
মোহাত্ গৃহীত্বা অসত্ গ্রাহান প্রবর্তন্ত অশুচি ব্রতাঃ ॥১০॥
অর্থ-তাদের হৃদয় দুঃস্পুরনীয় বাসনায় পুর্ন। দম্ভ মান ও মদযুক্ত হয়ে তারা অশুচি কার্যে ব্রতী হয় এবং মোহ বশতঃ অসৎ বিষয় প্রবৃত্ত হয়।

চিন্তাম্‌ অপরিমেয়াম্‌ চ প্রলয়ান্তাম্‌ উপাশ্রিতাঃ
কামোপভোগ পরমাঃ এতাবত্ ইতি নিশ্চিতাঃ ॥১১॥

আশাপাশ শতৈঃ বদ্ধাঃ কাম ক্রোধ পরায়ণাঃ ॥
ঈহনতে কাম ভোগ অর্থম্‌ অন্যায়েন অর্থ সঞ্চয়ন ॥১২॥
অর্থ-মৃত্যুকাল পর্যনত ইন্দ্রিয় সুখ ভোগকেই তারা তাদের জীবনের উদ্বেশ্য বলে মনে করে। অপরিমেয় দুঃখ দুশ্চিন্তার আশ্রয় গ্রহন অসংখ্য আশাপাপে আবদ্ধ হয় এবং কাম ক্রোধের অদীন হয়ে তারা বিষয় ভোগের জন্য নানা রকম অসৎ উপাত্ অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে।

ইদম্‌ অদ্য ময়া লব্ধম্‌ ইমম্‌ প্রাপস্যে মনোরথম্‌ ॥
ইদম্‌ অস্তি ইদম্‌ অপি মে ভবিষ্যতি পুনঃ ধনম্‌ ॥১৩॥

অসৌ ময়া হতঃ শত্রুঃ হনিষ্যে চ অপরান অপি ॥
ঈশ্বর অহম্‌ অহম্‌ ভোগী সিদ্ধঃ অহম্‌ বলবান সুখী ॥১৪॥

আঢ্যঃ অভিজনবান অস্মি কঃ অন্য অস্তি সদৃশ্যঃ ময়া ॥
যক্ষ্যে দাস্যামি মোদিস্যে ইতি অজ্ঞান বিমেহিতাঃ ॥১৫॥

অনেক চিত্তবিভ্রান্তঃ মোহ জাল সমাবৃতাঃ ॥
প্রসক্তাঃ কাম ভোগেষু পতন্ত নরকে অশুচৌ ॥১৬॥
অর্থ-অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা মনেকরে আজ আমার এত লাভ হল এবং ভবিষ্যতে আমার পরি কল্পনা অনুসারে আরো লাভ হবে।এখন আমার এত ধন আছে এবং ভবিষ্যতে আর ধন হবে এবং সে আমার শত্রু এবং আমি তাকে নাশ করেছি এবং অন্যান্য শত্রুদের আমি নাশ করব। আমিই ঈশ্বর আমি ভোক্তা আমি সিদ্ধ, বলবান এবং সুখী। আমি সব চেয়ে ধনবান, এবং অভিজাত আত্মীয়-স্বজন পরিবৃত। আমার মত বলবান এবং সুখী আর কেউ নাই। আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব। আমি দান করব, এবং আনন্দ করব। এই ভাবে অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত হয়। নানা প্রকার দুঃশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজালে বিজরিত হয়ে কামভোগে আসক্ত চিত্ত অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়।

আত্মসম্ভাবিতাঃ স্তব্ধাঃ ধনমান মদান্বিতা ॥
যজন্তে নাম যজ্ঞৈঃ তে দম্ভেন অবিধিপুর্বকম্‌ ॥১৭
অর্থ-সেই আত্মাভিমানী অনম্র ও ধনবান ও মদান্বিতা ব্যক্তিরা অবিধিপুর্বক দম্ভ সহকারে নাম মাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।

অহংঙ্কারম বলম্‌ দর্পম্‌ কামম্‌ ক্রোধম্‌ চ সংশ্রিতা ॥
মাম আত্মা পরদেহেষু প্রদ্বিষ্যন্তে অভ্যসুয়কা ॥১৮॥
অর্থ-অহংঙ্কার, বল, দপর্, কাম ও ক্রোধের দ্বারা বিমোহিত হয়ে অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা স্বীয় দেহে এবং পরদেহে অবস্তিত পরমেশ্বর স্বরুপ আমাকে দ্বেষ করে এবং প্রকৃত ধর্মের নিন্দা করে।

তান অহম দ্বিষতঃ ক্রুরান সংসারেষু নরাধমান্‌ ॥
ক্ষিপামি অজস্রম্‌ অশুভান আসুরীষু এব যোনিষু ॥১৯।।
অর্থ-সেই বিদ্বেষী ক্রুর নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে পুনঃ পুনঃ নিক্ষেপ করি।

আসুরীম্‌ যোনিম্‌ আপন্নাঃ মুঢ়া জন্মানি জন্মানি ॥
মাম্‌ অপ্রাপ্য এব কৌন্তেয় ততঃ যান্তি অধমাম্‌ গতিম্‌ ॥২০॥
অর্থ-হে অর্জুন অসুর যোনি প্রাপ্ত হয়ে সেই মুঢ় ব্যক্তিরা জন্মে জন্মে আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়।

ত্রিবিধম্‌ নরকস্য ইদম্‌ দ্বারম্‌ নাশনম্‌ আত্মনঃ ॥
কামক্রোধঃ ততঅ লোভঃ তস্মাত্ এতত্ ত্রয়ম্‌ ত্যাজেত্ ২১॥
অর্থ-কাম ক্রোধ এবং লোভ এই তিনটি নরকের দ্বারস্বরুপ। অতএব উত্তম ব্যক্তিরা এই তিনটি পরিত্যাগ করেন কারন এগুলি আত্মাকে অধঃগামী করে।

এতৈঃ বিমুক্তঃ কৌন্তেয় তমোদ্বারৈঃ ত্রিভিঃ নরঃ ॥
আচরিত আত্মনঃ শ্রেয় ততঃ যাতি পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২২॥
অর্থ-হে কৌন্তেয় এই তিন প্রকার তমদ্বার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আত্মার শ্রেয় আচরন করবে,তা হলেই পরাগতি লাভ করতে পারবে।

যঃ শাস্ত্রবিধিম্‌ উত্সৃজ্য বর্ততে কামকারত ॥
ন সঃ সিদ্ধিম্‌ অবাপেনাতি ন সুখেন ন পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২৩॥
অর্থ-কিন্তু শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে যে কামাচারে বর্তমান থাকে সে সিদ্ধি বা সুখ বা পরা গতীলাভ করতে পারে না।

তস্মাত্ শাস্ত্রম্‌ প্রমানম্‌ তে কার্য অকার্য ব্যবস্থিতৌ ॥
জ্ঞাতা শাস্ত্র বিধান উত্তম্‌ কর্ম কর্তুম্‌ ইহ অর্হসি ॥২৪॥
অর্থ-অতএব কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই একমাত্র প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রিয় বিধি নিষেধের স্বরুপ জেনে কর্ম করা উচিত যাতে পারমার্থিক উন্নতি লাভ করা যায়।

ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
দৈবাসুরসংপদ্বিভাগযোগো নাম ষোডশোঽধ্যাযঃ ॥১৬॥

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *