বাংলা লাইব্রেরি » নীহাররঞ্জন গুপ্ত » কিরীটী অমনিবাস (কিরীটী রায়) » সামনে সমুদ্র নীল
সামনে সমুদ্র নীল
সামনে সমুদ্র নীল - কিরীটী অমনিবাস - নীহাররঞ্জন গুপ্ত
সরিৎশেখর কল্পনাও করতে পারে নি, পুরীতে এসে হঠাৎ ঐ অবস্থায় তার আবার অনুরাধার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। অবিশ্যি আবার অনুরাধার সঙ্গে দেখা হবার একটা প্রত্যাশা সরিশেখরের অবচেতন মনের মধ্যে কোথাও যেন ছিল। এবং দেখা যে হবেই সে বিশ্বাসও ছিল সরিশেখরের। পথে চলতে চলতে কতদিন...
হোটেলের ম্যানেজার-প্রোপ্রাইটার দেবেশ অধিকারীর সঙ্গে তার ঘরে বসে কিরীটীর কথা হচ্ছিল। কিরীটীর বয়স হয়েছে, মাথার চুলে পাক ধরেছে। দেবেশ বলছিলেন, সত্যি বলতে কি এবারে কিন্তু আপনাকে দেখে প্রথমটায় ভাল চিনতে পারিনি। কিরীটী হেসে বললে, কেন, বয়েস হলেও আমার চেহারাটা তো খুব একটা...
কলকাতা শহরে তখন প্রচণ্ড তাপদাহ চলেছে কয়েক দিন ধরে একটানা। জুনের সেটা গোড়ার দিক। আটত্রিশ থেকে চল্লিশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। সকাল যেন দেখতে দেখতে গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। দুপুরের দিকে যেন পশ্চিমের মত লু চলে, রাস্তায় বেরুলে হাত পা মুখ ঝলসে যায়। কিরীটীর বাড়ির কলিং বেলটা ডিং ডিং...
দিন দুই বাদে মালতী দেবী আবার এলেন কিরীটীর গৃহে। কিরীটী বললে, আসুন মিসেস চ্যাটার্জী, বসুন। আপনার কথাই ভাবছিলাম এ দুদিন। মালতী আসন গ্রহণ করলেন। কিরীটী বললে, মিসেস চ্যাটার্জী, আমরা যদি ধরে নিই যে আপনার স্বামী ক্ষিতীন্দ্রবাবু তিন বছর আগে পুরীর হোটেলে আত্মহত্যা করেননি, আজও...
এক সময় থমকে দাঁড়াল অনুরাধা। সমুদ্রের নির্জন তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে ইতিমধ্যে কখন যেন সে হোটেল থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে, এখন বাঁয়ে অশান্ত কল্লোলিত সমুদ্র একটানা গর্জন করে চলেছে, অন্যদিকে ধু ধু বালিয়াড়ি, কোন লোকালয়ের চিহ্নমাত্রও নেই। ভিজে বালির উপর দিয়ে হাঁটছিল অনুরাধা।...
অনুরাধা খোলা জানলাটার সামনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে ছিল। কালো মেঘ ক্রমশ আকাশে স্থূপীকৃত ও ঘনীভূত হচ্ছে, মনে হয় এবারে হয়তো বৃষ্টি নামবে। একটা ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা ভাবও পাওয়া যাচ্ছিল সমুদ্রের বাতাসে। একটা বিশ্রী তিক্ততায় অনুরাধার মনটা যেন ভরে গিয়েছে। একটা কথাই তার কেবলই মনে হচ্ছিল,...
সারাটা রাত্রি বর্ষণ ও ঝড়ের বিরাম ছিল না। শেষরাত্রির দিকে ঝড় ও বৃষ্টির প্রকোপ কমে এল ধীরে ধীরে। কিন্তু বাতাস তখনও বেগে বইছে। শেষরাতের দিকে বোধ করি সামান্য সময়ের জন্য চোখে একটু তন্দ্রামত এসেছিল কিরীটীর, তাটা ভেঙে গেল দরজায় করাঘাত শুনে– রায়মশাই, রায়মশাই দরজাটা...
১৫নং ঘরের দরজা বন্ধ তখনও। সাহুই বন্ধ দরজার গায়ে কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে চেঁচালেন, দরজাটা খুলুন, শুনছেন মশাই, দরজাটা খুলুন! কিন্তু সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। সাহু আবার ধাক্কা দিলেন আরও জোরে। প্রায় মিনিট তিনেক ধাক্কাধাক্তির পর ঘরের দরজা খুলে গেল। কে? কি চাই? কিন্তু ঐ...
১৭নং ঘরে দুটো চেয়ারে কিরীটী আর সরিৎশেখর মুখখামুখি বসে। অনুরাধার সঙ্গে তার পূর্ব পরিচয় ও এক সময়ের ঘনিষ্ঠতার কথা সবিস্তারে বলছিল সরিৎশেখর, আমি এখানে আসবার আগে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি মিঃ রায়, এইভাবে হঠাৎ এতদিন পরে অনুরাধার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যাবে। সত্যি, অনুরাধার কথা যেন...
পরের দিনই রাত আটটা নাগাদ মালতী দেবী স্বর্গদ্বার হোটেলে এসে পৌঁছলেন। কলকাতা থেকে প্লেনে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন পুলিসের লোকই। কিরীটী তার ঘরেই ছিল। বোধ করি মালতীর আগমনের প্রতীক্ষাতেই ছিল। মালতী দেবী একজন সাধারণ পোশাকের পুলিস অফিসারের সঙ্গে অফিসে এসে কিরীটীর খোঁজ করতেই ভবেশ...
ক্ষিতীন্দ্রর সুটকেসের মধ্যেই একটা দীর্ঘ চিঠি পাওয়া গেল। চিঠিটা দিনদশেক আগে তার স্ত্রী মালতী দেবীকেই লেখা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পোস্ট করা হয়নি। মালতী, আমি বেঁচে আছি। তিন বৎসর পূর্বে পুরীর হোটেলে যে মৃতদেহকে তুমি তোমার স্বামী বলে সনাক্ত করেছিলে পুলিসের সামনে, সে আমি নই।...
সাম্প্রতিক মন্তব্য