মাসুদ রানা ০১০ – রানা! সাবধান!!
কাজী আনোয়ার হোসেন
প্রথম প্রকাশ: মে, ১৯৬৮
ভূমিকা
চট্ করে সরে গেল রানা লাস-কাটা ঘরের একটা মোটা খামের আড়ালে।
আবার সেই অস্ফুট গোঙানির শব্দটা কানে এল ওর। ব্যাপার কি? অন্ধকারে কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছে না ভালমত। কিন্তু আওয়াজটা যে ব্যারাকের মধ্যে থেকেই এসেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
লাস-কাটা ঘরের ঠিক পিছনেই অফিসারস্ ব্যারাক। আজই সন্ধ্যায় ব্যারাকটা খালি করে বারোজন ভারতীয় সামরিক অফিসার চলে গেছে হাসপাতাল ছেড়ে নয়াদিল্লী- রানা নিজের চোখে দেখেছে। সেই ফাঁকা ব্যারাকের মধ্যে মানুষের গলার আওয়াজ কেন? কে কাতরাচ্ছে ওখানে? কোনও ট্র্যাপ? ধরা পড়ে গেল সে?
সন্তর্পণে চাইল রানা চারপাশে। সময়টা উনিশশো পঁয়ষট্টি সালের চৌঠা অক্টোবর। যুদ্ধ-বিরতি ঘোষণার পর থেকেই ধীরে ধীরে তুলে ফেলছে ওরা আম্বালা হাসপাতাল-ঘেরা অস্থায়ী সৈন্য-শিবির। কিন্তু প্রহরার ব্যবস্থায় ঢিলেমি নেই একবিন্দু। দূরে সাব-মেশিনগান হাতে কয়েকজন সেন্ট্রি দাঁড়িয়ে আছে পাথরের মূর্তির মত। শিবিরের চারদিকে উঁচু তারের বেড়া। দশ হাত অন্তর অন্তর বেড়ার গায়ে পাঁচশো পাওয়ারের বালব ঝুলিয়ে দিয়ে দুর্ভেদ্য করা হয়েছে। তার ওপর আটজন সশস্ত্র সেন্ট্রি সর্বক্ষণ টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো এলাকা।
আবার এল শব্দটা। সেইসাথে অস্পষ্ট একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ।
অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে নিঃশব্দ পায়ে এগোল রানা ব্যারাকের দিকে। ব্যারাকের ভিতরে আলো নেই। কিন্তু সামনের খানিকটা অংশে আলো পড়েছে একপাশ থেকে। বুকে হেঁটে পার হয়ে এল রানা জায়গাটুকু। এইবার স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সে ধস্তাধস্তির আওয়াজ। একটা খোলা জানালার সামনে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল রানা। ঘরের ভিতর চেয়েই চক্ষুস্থির হয়ে গেল ওর।
ওপাশের খোলা দরজা দিয়ে আলো এসে পড়েছে ঘরের ভিতর। অনায়াসে চিনতে পারল রানা। সেই মুসলমান নার্সটা। ভয়ে বিস্ফারিত মেয়েটির চোখ। ছটফট করছে সে। মুখ বাঁধা। টুকরো টুকরো ছেঁড়া জামা- কাপড় পড়ে আছে সারা মেঝেতে। দুই হাতে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আছে প্রকাণ্ড চেহারার একজন সামরিক অফিসার। ইণ্ডিয়ান আর্মির ক্যাপ্টেন। এক নিমেষে বুঝল রানা ব্যাপারটা। ল্যাঙ মেরে মাটিতে শুইয়ে ফেলল লোকটা মেয়েটিকে, তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর ওপর ক্ষুধার্ত বাঘের মত। বিচিত্র একরকমের গোঙানি বেরোচ্ছে মেয়েটির গলা দিয়ে। প্রাণপণে আরক্ষা করবার চেষ্টা করছে সে লোকটির জঘন্য লালসার হাত থেকে। দুর্বল হাতে কিল মারছে শক্তিশালী লোকটির পেশীবহুল পিঠে
নিঃশব্দে জানালা টপকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল রানা।
চুলের মুঠি ধরে টেনে তোলার আগে কিছুই টের পেল না ক্যাপ্টেন। পরমুহূর্তেই দড়াম করে প্রচণ্ড একটা ঘুসি পড়ল ওর নাকের ওপর। চোখে সর্ষে ফুল দেখছে লোকটা। তারপরই ঢুঁ শব্দ না করে জ্ঞান হারাল সে তলপেটে রানার হাঁটুর মাকে এক গুঁতো খেয়ে। সেই সাথে ঘাড়ের ওপর পড়ল রানার হাতের তীব্র একখানা জুডো চপ।
পড়ন্ত দেহটা ধরে আস্তে করে মাটিতে নামিয়ে মেয়েটির দিকে ফিরে চাইল রানা।
উঠে বসেছে মেয়েটি। মুখের বাঁধন খুলে ছেঁড়া এক টুকরো কাপড় দিয়ে লজ্জা ঢাকবার চেষ্টা করছে সে, আর বিস্ফারিত নেত্রে চেয়ে আছে রানার দিকে। জ্ঞানহীন দেহটা টেনে নিয়ে গিয়ে একটা আলমারির পিছনে লুকিয়ে রেখে ফিরে এল রানা মেয়েটির কাছে।
‘কি হয়েছিল?’ জিজ্ঞেস করল রানা অনুচ্চ কণ্ঠে উর্দুতে।
‘কে তুমি?’ পাল্টা প্রশ্ন করল মেয়েটি। কণ্ঠস্বরে বোঝা গেল আতঙ্ক কাটেনি ওর।
‘আমার প্রশ্নের জবাব দাও। তুমি এখানে এলে কি করে?’
‘সিস্টার ললিতা আমাকে এইখানে দেখা করতে বলেছিলেন ওঁর সঙ্গে। ঘরে ঢুকতেই হঠাৎ আক্রমণ করে বসেছে ওই জানোয়ারটা। লোকটা অনেক দিন ধরেই পেছনে লেগে ছিল আমার।’
‘সেই সিস্টার কোথায়?’ সচকিত হয়ে উঠল রানা। ‘আসেনি?’
‘না। এখন বুঝতে পারছি আসবেও না। ওই হারামীটার সাথে সাট করেই ফাইনাল সিকিউরিটি চেকাপের দোহাই দিয়ে আমাকে এখানে পাঠিয়েছে সিস্টার ললিতা। নইলে স্টেশনের পথে রওনা হয়ে যেতাম আমি এতক্ষণে। কিন্তু তুমি কে?’
দ্রুত চিন্তা চলছে রানার মাথার মধ্যে। ক্যাপ্টেনের খোঁজ পড়বে অল্পক্ষণ পরেই। সিস্টার ললিতা জানে কোথায় তাকে পাওয়া যাবে। কাজেই সব ব্যাপারই প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে। তাই এখন দ্রুত কেটে পড়া দরকার। কিন্তু মেয়েটিকে ছেড়ে যাওয়া চলবে না। কুটি কুটি করে ছেঁড়া জামা- কাপড়ের টুকরো অংশগুলো কুড়িয়ে তুলল রানা মাটি থেকে। ক্যাপ্টেনের খুলে রাখা প্যান্টটা ছুঁড়ে ফেলল আলমারির পিছনে। মেয়েটির দিকে ফিরে বলল, ‘জলদি চলে এসো আমার সঙ্গে। যে-কোন মুহূর্তে কেউ এসে পড়তে পারে এই জায়গায়।’
একমুহূর্ত ইতস্তত করল মেয়েটি। কিন্তু রানা ততক্ষণে কয়েক পা এগিয়ে গেছে জানালার দিকে। রানার পিছন পিছন বেরিয়ে এল মেয়েটি জানালা গলে। লাস-কাটা ঘরের পিছনে চলে এল ওরা।
‘তুমি মুসলমান?’ জিজ্ঞেস করল রানা।
‘হ্যাঁ।’
‘কি নাম?’
‘শায়লা ফৈয়াজ।’
‘এই হাসপাতালের নার্স?’
‘আসলে আমি মেডিক্যাল কলেজে থার্ড ইয়ারের ছাত্রী। যুদ্ধ বাধার সঙ্গে সঙ্গে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে এই হাসপাতাল নিয়ে নিয়েছে মিলিটারি। ছাত্রীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে নার্সের কাজ করতে হয়েছে এতদিন। আজ আমি ছুটি পেয়েছি। দিল্লীতে আব্বাজীর কাছে ফিরে যাচ্ছিলাম, এমনি সময় টেলিফোনে খালি ব্যারাকের মধ্যে দেখা করবার আদেশ দিলেন সিস্টার ললিতা।
‘সিস্টার ললিতা…মানে ওই অপূর্ব সুন্দরী নার্সটা তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘খুব ক্ষমতা ওর, তাই না?’
‘হ্যাঁ। নার্সের ছদ্মবেশে আছেন, আসলে আমার যতদূর বিশ্বাস, ইণ্ডিয়ান সিক্রেট সার্ভিসের লোক উনি।
দ্রুত চিন্তা চলল রানার মাথার মধ্যে। রানার ধারণাও তাই। সিস্টার ললিতা আসলে ইণ্ডিয়ান সিক্রেট সার্ভিসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। অল্পক্ষণেই খোঁজ পড়বে ক্যাপ্টেনের। ব্যারাকের মধ্যে খুঁজতে লোক পাঠাবে ললিতা। ওখানে শায়লা বা ক্যাপ্টেনকে পাওয়া না গেলে অবাক হবে। নিজে খোঁজ করবে। জ্ঞানহীন বা মৃত যাই হোক, দেহটা পেলেই এলার্ম সাইরেন বাজিয়ে গেট বন্ধ করে সার্চ আরম্ভ হবে। কিন্তু সেটা কতক্ষণ পর? হাতে কতক্ষণ সময় আছে আর?
‘তুমি কে তা তো বললে না?’ আবার প্রশ্ন করল শায়লা রানার চিন্তার সূত্র ছিন্ন করে দিয়ে। রানার সহানুভূতিশীল সস্হে কথাবার্তায় অনেকখানি আশ্বাস পেয়েছে সে। অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে সে এখন। অন্ধকারে ওর প্রায়-নগ্ন দেহ দেখতে পাচ্ছে না রানা- এটাও ওর স্বস্তিবোধের একটি কারণ।
‘আমার নাম রানা। মাসুদ রানা। আমি একজন পাকিস্তানী স্পাই। বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে গেল শায়লার চোখ। পাকিস্তানী স্পাই সে জীবনে দেখেনি কোনদিন। দুই চোখে ওর অবিশ্বাস। যদি তাই হবে, তাহলে এত সহজে নিজের পরিচয় দেবে কেন লোকটা?’
‘এই শিবিরের মধ্যে ঢুকলে কি করে? আর কেনই বা…’
‘গত দু’দিন ধরে আছি আমি এই হাসপাতালে। আমি এসেছি তিনজন আহত বন্দী পাকিস্তানী অফিসারকে এদের হাত থেকে মুক্ত করে পাকিস্তানে ফেরত নিয়ে যেতে।’
‘আমরা তো শুনলাম শিগগিরই বন্দী বিনিময় হচ্ছে।’
‘হচ্ছে। কিন্তু এরা যে লিস্ট পাঠিয়েছে তার মধ্যে এই তিনজনের নাম নেই।’
‘অথচ তারা জীবিত অবস্থায় বন্দী হয়ে আছে এখানে?’
‘হ্যাঁ। ভারত এদেরকে ফেরত দিতে চায় না, কারণ এদের ওপর নির্যাতন করলে পাকিস্তানের বহু মূল্যবান সামরিক তথ্য ওদের জানা হয়ে যাবে। এবং একই কারণে ছলে-বলে-কৌশলে ওদের উদ্ধার করা পাকিস্তানের এত দরকার। আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক। আজই রাতে আমরা পালিয়ে যাচ্ছি এখান থেকে।’
‘এসব কথা আমাকে বলছেন কেন? কি করে ভাবলেন আমি বিশ্বাসযোগ্য, আপনাদের পালিয়ে যাবার কথা প্রকাশ করে দেব না? অজানা- অচেনা একটা মানুষকে কি এতসব কথা বলে ফেলা উচিত হলো আপনার? যদি ধরিয়ে দিই?’
মৃদু হাসল রানা মেয়েটির সরলতা দেখে। বলল, ‘তোমাকে বললে আমাদের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
‘কেন?’ রানার সহজ যুক্তিটা বুঝতে পারল না শায়লা।
‘কারণ তুমিও যাচ্ছ আমাদের সঙ্গে। অন্তত এই শিবির থেকে না বেরোনো পর্যন্ত তোমাকে কাছ-ছাড়া করছি না আমি,’ নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল রানা।
‘আমি যদি না যাই আপনাদের সঙ্গে? যদি চিৎকার আরম্ভ করি? গায়ের জোরে নিয়ে যাবেন আমাকে?’ হঠাৎ ফুঁসে উঠল শায়লা।
‘না। ওষুধের জোরে।’ পকেট থেকে একটা শিশি বের করে দেখাল রানা শায়লাকে। ‘নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাকি সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। তোমাকে সব কথা খোলাখুলি বললাম যাতে ওষুধ প্রয়োগের সময় অনর্থক বাধা সৃষ্টি না করো। প্রয়োজন হলে বল প্রয়োগ করব। কিন্তু তার কি দরকার হবে?’
এ প্রশ্নের উত্তর দিল না শায়লা। তিক্তকণ্ঠে বলল, ‘তাই বলুন। একতিলও বিশ্বাস করেননি আপনি আমাকে। আমি শত্রু হই বা মিত্র হই কিছুই এসে যায় না আপনার। বন্দী আমি। তাই সবকথা গড়গড় করে বলে গেছেন। অথচ আমি ভেবেছিলাম…’ শেষের দিকে স্পষ্ট অভিমান প্রকাশ পেল শায়লার কণ্ঠে।
‘এই দ্যাখো। পাগলী একটা। ব্যস, রাগ হয়ে গেল? একটু আগে না তুমিই আমাকে বকছিলে সবকথা বলার জন্যে? বোঝাবার চেষ্টা করছিলে, আরও সাবধান হওয়া উচিত আমার? আসলে এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নই ওঠে না। শত্রু শিবিরে ধরা পড়লে কেবল আমি নই, আরও তিনজন অফিসারের প্রাণ যাবে। তাই কোন রকম ঝুঁকি নেয়ার কথাই উঠতে পারে না। তোমাকে ফেলে রেখে যেতে পারি না আমরা। তুমিই একটু ভেবে দেখো…’
‘আমি কিচ্ছু ভাবতে চাই না। আপাতত একটা কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন? উলঙ্গ হয়ে শীতে কাঁপব আর কতক্ষণ?’
‘ছি, ছি। আমার আগেই লক্ষ করা উচিত ছিল। এক্ষুণি বেড-শীট জোগাড় করে দিচ্ছি একটা।’
শায়লাকে নিয়ে মর্গের মধ্যে ঢুকে পড়ল রানা। ওপাশের দরজা খুললেই নয় নম্বর ওয়ার্ড। আসলে ওটা ছিল ডিস্পেন্সারি, দেয়ালের তাকে নানান সাইজের ওষুধ-পত্র আর কেমিক্যালসের বোতল সাজানো আছে এখনও। স্থানাভাবে এখানেও বেড পাততে হয়েছে, ডিসপেন্সারি সরিয়ে নেয়া হয়েছে অন্যত্র।
শায়লাকে একটা মড়ার খাটিয়ার ওপর চুপচাপ বসে থাকতে বলে সাবধানে দরজা খুলে ঢুকে পড়ল রানা ওয়ার্ডের ভিতর। আটজন ভারতীয় সেনা অকাতরে ঘুমাচ্ছে। তিনজন পাকিস্তানী অফিসার চোখ মেলে চাইল।
‘বিশ মিনিটের মধ্যে এসে যাবে ট্রাক। সবকিছু ঠিকঠাক, কোন চিন্তা নেই,’ বলল রানা মৃদুকণ্ঠে বয়োজ্যেষ্ঠ অফিসারের বেডের পাশে গিয়ে।
‘শব্দটা কিসের হচ্ছিল?’ জিজ্ঞেস করলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ। ‘ও কিছু নয়। একটা মুসলমান নার্সের ইজ্জত নষ্ট করবার চেষ্টা করছিল একজন ক্যাপ্টেন মুখ বেঁধে নিয়ে। বস্তা বানিয়ে রেখে দিয়েছি ব্যাটাকে আলমারির পিছনে।’
‘ঠিক করেছেন। মেয়েটা কোথায়?’
‘মর্গে বসিয়ে রেখে এসেছি। ওকে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। গোলমাল করবে বলে মনে হয় না। তবু অজ্ঞান করে নিয়ে যাব।
‘কিন্তু খাটিয়া তো মাত্র চারটে। নেবেন কি করে?’
‘আমাদের একজনের সঙ্গে ভরে নেব। অসুবিধে হবে না। কিন্তু বেচারী প্রায় সম্পূর্ণ উলঙ্গ- শীতে কষ্ট পাচ্ছে। বিছানার চাদর দরকার।
বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে আহত কর্নেল নিজের বিছানার চাদরটা দিয়ে দিলেন। চাদরটা বগলদাবা করে তিন পা অগ্রসর হয়েছে রানা, ঠিক এমনি সময়ে ঝটাং করে খুলে গেল ওয়ার্ডের সামনের দিকের দরজা। পাঁই করে ঘুরে দাঁড়াল রানা। দরজার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব সুন্দরী সেই নার্স। সিস্টার ললিতা। একা। ডান হাতে পয়েন্ট টু-ফাইভ ক্যালিবারের ছোট্ট একটা অ্যাসট্রা পিস্তল। লোলুপ দৃষ্টিতে সোজা চেয়ে আছে পিস্তলটা রানার বুকের দিকে
‘মাথার ওপর হাত তুলে দাঁড়াও, মিস্টার। চাদরটা ফেলে দাও মাটিতে।’
নীরবে আদেশ পালন করল রানা। কয়েক পা এগিয়ে এল ললিতা ঘরের মধ্যে।
‘এইবার সোজা বেরিয়ে এসো বাইরে। গুলি করতে একটুও দ্বিধা করব না। কাজেই সাবধান।’
নড়ে উঠল লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ। ক্লিক করে পিস্তলের সেফটি ক্যাচটা নেমে গেল। ডানহাতের ইঙ্গিতে নড়তে মানা করল রানা লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে। বলল, স্পরাজয়টা স্বীকার করে নেয়াই ভাল, স্যার। এখন কিছু করতে গেলে অনর্থক গুলি খেয়ে মরতে হবে। চলুন, সিস্টার, কোথায় নিয়ে যাবেন চলুন। আরও লোকজন নিয়ে এলেই পারতেন, একা কি আমাকে সামলাতে পারবেন?’
কোনও জবাব দিল না ললিতা বটব্যাল। এক পা এগিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে হোঁচট খেলো রানা মাটিতে ফেলা বিছানার চাদরে। দেখল একচুলও কাঁপল না ললিতার হাতের পিস্তল- তেমনি স্থির অবিচল চেয়ে আছে সেটা রানার দিকে। ললিতার মুখে বিচিত্র এক টুকরো হাসি। কাছে এসে দাঁড়াতেই পিছন থেকে রানার শিরদাঁড়ার ওপর পিস্তলটা ঠেসে ধরে দক্ষ হাতে পরীক্ষা করে দেখল সে রানার কাছে কোন অস্ত্র আছে কিনা। নেই।
রানা বুঝল আগামী কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই করতে হবে যা করার। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছে ললিতা। ঘুরে দাঁড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে সে? কিন্তু ততক্ষণে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে সে গোটা তিনেক গুলি খেয়ে। কিন্তু তবু চেষ্টা করে দেখতে হবে। কয়েক পা এগিয়ে দেহের সমস্ত পেশীগুলো শক্ত করে যেই ঝাঁপ দিতে যাবে, ঠিক সেই সময় ঘটল ঘটনাটা।
ঝন ঝন করে ভেঙে গেল লাস-কাটা ঘরের দরজার কাঁচ।
ঝট করে ফিরল রানা। এক পলকের জন্যে শায়লার অর্ধ নগ্ন দেহটা চোখে পড়ল ওর। বেরিয়ে এসেছে সে। ললিতাও পিছন ফিরে চেয়েছে। কিন্তু পিস্তলটা ধরা আছে রানার দিকেই। ঝাঁপিয়ে পড়ল রানা এক মুহূর্ত দেরি না করে।
গুলি করল ললিতা।
এত কাছ থেকে গুলি খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই রানার। কণ্ঠার হাড়ের ঠিক নিচ দিয়ে ঢুকল গুলি। মনে হলো যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে জায়গাটায়। মাথাটা ঘুরে উঠল ওর। দেহটাও ঘুরে গেল আধপাক। আবার গুলি করল ললিতা। ছিটকে গিয়ে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেল রানা। মাথাটা বাড়ি খেল জোরে দেয়ালে বসানো তাকের সঙ্গে–ঠুন ঠুন করে ঠোকাঠুকি খেলো কয়েকটা বোতল।
ততক্ষণে অদৃশ্য হয়ে গেছে শায়লা মর্গের ভিতর। এগিয়ে এল ললিতা রানার দিকে। দুই চোখে ওর গোক্ষুরের বিষ। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে রানার মুখ। বুক আর হাত ভেসে যাচ্ছে তাজা খুনে। আসমর্পণের ভঙ্গিতে দুই হাত ওপরে তুলে রাখল সে বহু কষ্টে।
‘আর কে কে আছে তোমার সঙ্গে? বলো! নইলে…’ এক বিজাতীয় ঘৃণায় কুঁচকে গেল ললিতার মুখ। গায়ের সাথে সেঁটে এসেছে সে। পিস্তল ধরা হাতটা কাঁপছে উত্তেজনায়।
রানা বুঝল যে কোন অজুহাতে হোক না কেন, খুন করবে ললিতা ওকে। দেখল, ট্রিগারের ওপর ফর্সা একটা আঙুলের চাপ বাড়ছে, সাদা হয়ে গেছে নখটা। বুকে অসহ্য ব্যথা। জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে সে এক্ষুণি।
‘বলো, আর কে আছে?’
রানার হাতে ঠেকল একটা কাঁচের জার। ঝিমিয়ে আসছে ওর সর্বাঙ্গ। কিন্তু শেষ চেষ্টা করবে না সে একবার? বিনা বাধায় মৃত্যুবরণ করবে? দেহমনের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে বোতলটা তুলেই মারল রানা মেয়েটির মাথায়।
ভেঙে চুর হয়ে গেল পাতলা কাঁচের বোতল। একরাশ তরল পদার্থ নেমে এল কপাল বেয়ে চোখে-মুখে নাকে। সঙ্গে সঙ্গে বীভৎস ফোস্কায় ভরে গেল ললিতার অপরূপ সুন্দর মুখটা।
তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার বেরিয়ে এল ললিতার মুখ থেকে। পিস্তল ফেলে দিয়ে দুইহাতে চোখ ঢাকল সে। এমনি সময় পিছন থেকে দ্রুত এগিয়ে এসে একখানা মড়ার খাটের পায়া ভাঙল শায়লা ওর মাথার ওপর।
পড়ে গেল ললিতা। রানাও পড়ল ওর ওপর। ডান হাতটা জ্বালা করছে। অসহ্য হয়ে উঠেছে বুকের ব্যথাটা। হাঁ করে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছে রানা এখন। চোখে আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না সে, একটা কালো পর্দা ঝুলছে যেন চোখের সামনে। মাথা ঝাড়া দিয়ে পর্দাটা সরিয়ে ফেলবার চেষ্টা করল রানা। কয়েক সেকেণ্ডের জন্যে জ্ঞান হারাল।
কারা যেন কথা বলছে ওর চারপাশে। জোর করে চোখ খুলল সে। তিন ফুট দূরে একটা মুখের ওপর নজর পড়ল ওর। কিছুক্ষণ আগেই অপূর্ব সুন্দর ছিল সে মুখ। এখন বিচ্ছিরি ঘায়ে ভরে গেছে মুখটা, ছোট ছোট বুদ্বুদ উঠছে এখনও। কনসেনট্রেটেড সালফিউরিক এসিড ছিল বোতলের মধ্যে।
বিছানার চাদর দিয়ে লজ্জা নিবারণ করেছে শায়লা। তিনজন পাকিস্তানী অফিসার ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে রানাকে।
‘এঁকে মর্গের মধ্যে নিয়ে চলুন, ব্যাণ্ডেজ করতে হবে। আর একজন এই মেয়েলোকটাকে ওই খাটের তলায় লুকিয়ে ফেলুন,’ হুকুম দিল শায়লা।
‘আহা! সাবধানে তুলবেন যাতে জখমে চাপ না পড়ে।’
মাথাটা উঁচু করায় শরীরটা বাঁকা হলো একটু। জ্ঞান হারাল রানা আবার।
জ্ঞান ফিরল রানার লাস-কাটা ঘরে। বুকে অসহ্য ব্যথা। ডান হাতের আঙুলের মাথাগুলো পর্যন্ত টনটন করছে। কোমর থেকে উপরের অংশটুকু যেন অবশ হয়ে গেছে।
‘নড়ো না। এগিয়ে এল শায়লা একটা সিরিঞ্জ হাতে। ‘দুটো গুলিই শরীরের মধ্যে রয়েছে। এই জখমে অবশ্য মরবে না তুমি। ব্যাণ্ডেজ করে দিয়েছি জখমগুলো। এখন এই ইঞ্জেকশনটা দিলেই ব্যথা কমে যাবে।’
রানার বাম হাতের আস্তিন গুটিয়ে সুচ ফুটাল শায়লা।
‘ট্রাক এসে গেছে?’ জিজ্ঞেস করল রানা। জিভটা নড়তে চাইছে না মুখের মধ্যে, ভারি হয়ে গেছে। নিজের কাছেই কর্কশ ঠেকল নিজের কণ্ঠস্বর।
‘এসেছে। ওরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়,’ জবাব দিলেন উইং কমাণ্ডার রশিদ।
‘গুলির শব্দ শুনে কেউ আসেনি? কোনও গার্ড…’ আবার প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল রানা, বাধা দিল শায়লা।
‘এত কথা বলা ঠিক হচ্ছে না তোমার। এসেছিল। ক্যাপ্টেন সুখলালের ইউনিফর্ম খুলে এনেছিলাম ব্যারাক থেকে, ওটা গায়ে চড়িয়ে ওদের ফিরিয়ে দিয়েছেন কর্নেল আজাদ।’
মর্গের পিছন-দরজা দিয়ে ঢুকল ড্রাইভারের ছদ্মবেশে পি. সি. আই. এজেণ্ট সলীল সেন। দীর্ঘ পদক্ষেপে রানার পাশে এসে দাঁড়াল, ঝুঁকে পড়ে পরীক্ষা করল জখমগুলো।
‘কেমন বোধ করছ, রানা?’ জিজ্ঞেস করল সে।
‘খুব খারাপ। জলদি করতে হবে, সলীল। ঝট্পট্ বেঁধে ফেলো সবাইকে।’
দুই মিনিটের মধ্যে তিনজন অফিসারকে সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ে খাটিয়ায় শুইয়ে ফেলা হলো। দু’জন অ্যাসিসট্যান্ট নিয়ে গেল খাটিয়াগুলো এক এক করে।
‘এবার তোমার পালা, রানা। টহলদার সেনট্রি এসে পড়তে পারে যে- কোন মুহূর্তে। কিন্তু খাট তো আর মাত্র একটা- মানুষ দেখতে পাচ্ছি দু’জন…’
‘আমাকে মাসুদ রানার সঙ্গে জড়িয়ে বেঁধে নিন,’ বলল শায়লা।
অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে রানার দিকে চেয়ে চোখ টিপল সলীল। রানা মাথা নাড়তেই শায়লার দিকে চেয়ে বলল, ‘নিন শুয়ে পড়ন ওই চাদরের ওপর। তুমি দাঁড়াও রানা, আমি ধরছি।’
রানাকে ধরে নামিয়ে আনল সলীল যত্নের সঙ্গে। লাস-কাটা ঘরটা দুলে উঠল রানার চোখের সামনে। দাঁতে দাঁত চেপে রাখল সে। শুয়ে পড়ল শায়লার পাশে।
‘আমাকে অজ্ঞান করে নিলে ভাল হত না?’ জিজ্ঞেস করল শায়লা মৃদু কণ্ঠে।
‘না!’ জবাব দিল রানা।
.
মাথা এবং পায়ের দিকটা গিঁট দিয়ে বেঁধে ট্রাকে তোলা হলো রানা আর শায়লাকে। অন্যরা আগেই উঠে পড়েছে। সগর্জনে স্টার্ট হয়ে গেল এঞ্জিন। ছুটে চলল রাস্তা ধরে। কিছুদূর গিয়ে থামল একবার। প্রথম চেকপোস্ট। সলীলের কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেল। আবার এগোল ট্রাকটা। দ্বিতীয় চেকপোস্টেও থামল, আবার চলল। এবার আধমাইল দূরে মেইন গেট। ব্যস।
হঠাৎ জোরে ব্রেক কষল ট্রাকটা। খটাখট্ বাড়ি খেলো খাটিয়াগুলো পরস্পরের সঙ্গে। রাস্তার ওপর টায়ার ঘষার তীক্ষ্ণ শব্দ হলো কয়েক সেকেণ্ড, তারপর মাঝপথে থেমে দাঁড়াল ট্রাক।
ভারি বুটের শব্দ শুনেই বুঝতে পারল রানা কি ব্যাপার। সলীলের উঁচু গলা শোনা গেল।
‘লাস, স্যার। মড়া।’
‘কাদের লাস?’ মোটা কর্কশ গলায় প্রশ্ন করল কেউ। ‘অনেকগুলো দেখা যাচ্ছে?’
‘হিন্দুর লাস। চারটে। এই যে, স্যার, নাম ধাম পিতৃপরিচয় সব লেখা আছে এই কাগজে।’
‘এত রাতে লাস সরানো হচ্ছে কেন এখান থেকে?’
‘আমরা, স্যার, হুকুমের চাকর। হুকুম পালন করছি। তবে মনে হয় একজন ব্রিগেডিয়ারের লাস আছে বলেই এত স্পেশাল ব্যবস্থা। পাতিয়ালা হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই লাস।’
‘তোমাদের কাগজ-পত্র আর আইডেন্টিটি কার্ড দেখাও দেখি আরেকবার।’
‘নিশ্চয়ই, স্যার।’
অল্পক্ষণ নীরবতা। তারপর আবার কথা বলে উঠল অফিসার।
‘আশ্চর্য! কেন? এত রাতে এগুলো এখান থেকে সরাবার কি মানে? কি আছে এর মধ্যে?’
‘লাস, স্যার। মড়া,’ অম্লান বদনে বলল সলীল।
‘বেশ। আমরা দেখব। রামু আর ভাগোয়ান- তোমরা দু’জন উঠে পড়ো ট্রাকে। মাথার দিকের বাঁধন খুলবে প্রত্যেকটা লাসের। আমি নিজে চেক করব।’
রানার খাটিয়াটাই প্রথম। দু’জন লোক উঠে এসেছে ট্রাকের ওপর। সাদা কাপড়ের ওপর থেকে রানার পা নেড়ে বুঝল ওরা যে, মাথাটা অন্যদিকে। এগিয়ে আসছে ওরা মাথার দিকে। ত্রস্ত হাতে গিঁট খুলে ফেলল একজন। রানা বুঝল মরার মত পড়ে থেকেও কোন লাভ নেই- দু’জনকে একখাটে দেখতে পেলেই ধরা পড়ে যাবে ওরা। আর কোন নিস্তার নেই। দম বন্ধ করে রেখেছে সে এতক্ষণ! বুকের ভিতর হাতুড়ির ঘা পড়ছে। বাঁধন আল্গা হয়ে যেতেই বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস লাগছে ওর চাঁদিতে, এক্ষুণি সরিয়ে ফেলা হবে কাপড়টা।
‘একটু দাঁড়ান, স্যার!’ সলীলের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল আবার। ‘মড়া যদি দেখতে চান, তাহলে ওদেরকে এগুলো পরে নিতে বলুন, স্যার।’
‘অ্যাঁ? মাস্ক আর গ্লাভ্স কেন?’
‘আমি হুকুমের চাকর, স্যার। আমাদেরকে এগুলো পরে তারপর লাস ছোঁবার আদেশ দেয়া হয়েছে। কর্নেল রাজগুরুর এটা স্ট্রিক্ট অর্ডার, স্যার। আর কাজ শেষ হয়ে গেলে আমাদের ইউনিফর্মগুলো খুলে দিতে হবে পুড়িয়ে ফেলার জন্যে।
‘অ্যাঁ?’ এবার কর্কশ গলার আওয়াজটা কয়েক হাত তফাৎ থেকে আসছে বলে মনে হলো। ‘কত নম্বর ওয়ার্ড থেকে তুলেছ মড়াগুলো। কি রোগে মারা গেছে?’
‘গুটি, স্যার। বসন্ত। ওই যাকে বলে স্মল পক্স। মা শীতলার দয়া। তেত্রিশ নম্বর ওয়ার্ডের মড়া, স্যার।’
‘রাম, রাম! রাম রাম! ওরে শালা, হারামজাদা। এতক্ষণ বলিনি কেন, জানোয়ার?’…আরও কয়েক হাত দূরে সরে গেছে কণ্ঠস্বর। ‘রামু, ভাগোয়ান! শিগগির লাফিয়ে নামো। আমার দিকে এসো না। তোমাদের ডিউটি অফ- সোজা ব্যারাকে গিয়ে আগে চান করবে। জানোয়ার কোথাকার! পক্সের মড়া তা আগে বলিসনি কেন?’
‘আপনি তো জিজ্ঞেস করেননি, স্যার। তা ছাড়া আমি মনে করেছিলাম আপনি জানেন, স্যার। মাফ করবেন, স্যার…’ ততক্ষণে তড়াক করে লাফিয়ে নিচে নেমে গেছে গার্ড দু’জন।
‘আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্যার-স্যার হচ্ছে! গেট আউট! দূর হয়ে যাও ট্রাক নিয়ে। এক্ষুণি! বদমাশ কাঁহিকে!’
যাচ্ছি, স্যার, মাফ করবেন, স্যার,’ বলতে বলতে ড্রাইভিং সীটে উঠে বসল সলীল সেন।
গাড়িটা চলতে আরম্ভ করতেই খুক খুক করে হেসে ফেলল শায়লা।
‘চুপ! আরেকটা চেকপোস্ট বাকি আছে,’ বলল রানা।
তিন মিনিট পর কোনও রকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই পাস দেখিয়ে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল ট্রাক। ছুটল সোজা দিল্লীর পথে।
মাথার দিকটা খোলাই ছিল। একটানে সরিয়ে দিল শায়লা সাদা কাপড়টা। অসংখ্য তারা মিট মিট করে জ্বলছে পাঞ্জাবের নির্মেঘ আকাশে। ট্রাকের শক্তিশালী এঞ্জিনের একটানা গর্জন। হু-হু করে হাওয়া কেটে দুর্নিবার বেগে সামনে এগিয়ে যাওয়া। মুক্তি!
আলতো করে চুম্বন করল শায়লা রানার কপালে। তারপর উঠে গিয়ে খুলে দিল সবার বাঁধন।
Leave a Reply