কাশ্মীর সুন্দরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০২৩
পত্রভারতী বুকস প্রাইভেট লিমিটেড
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – রঞ্জন দত্ত
.
রাখী মুখোপাধ্যায়
সুজনেষু
.
ভূমিকা
নীল আকাশের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র কিরীটশোভিত পর্বতমালা যেনপরম যত্নে সৃষ্টির আদিকাল থেকে আগলে রেখেছে এই স্থানকে। কিছুটা বিচ্ছিন্নও করে রেখেছে এ-ভূখণ্ডের অন্য অংশের থেকে। অনেকটা যেন সুন্দরী নারীকে আড়াল করে রাখার মতোই। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই পর্বত বেষ্টনীর কোলে নয়নাভিরাম সবুজ উপত্যকা, তার কোল বেয়ে রুপোলি ফিতের মতো নেমে আসা স্রোতস্বিনী, বালিকার মতো উচ্ছ্বল ঝরনা, যারা সৃষ্টি করেছে দিগন্তবিসারি হৃদে ঘেরা এই দেশ। অন্যতম প্রধান হ্রদ হল দল হ্রদ।
ঋতু এখানে প্রধানত দুটো। শীত আর বসন্ত। সূর্যদেব এখানে গ্রীষ্মের খরতাপ বর্ষণ থেকে বিরত থাকেন। বরুণদেবও এখানে বিরত থাকেন ভারী বর্ষা সিঞ্চনে। প্রকৃতি এখানে যত্নবান তার যাবতীয় সৌন্দর্যকে ধরে রাখার জন্য।
বসন্ত ঋতুর সমাগমে সবুজ পাহাড়গুলিতে কেউ যেন রামধনু বিছিয়ে দেয় নানান বর্ণের ফুলের সমারোহে, বরফ মুক্ত হয়ে কাকচক্ষু দল হ্রদের বুক থেকে সূর্যের দিকে স্পর্ধিত ভঙ্গিতে মাথা তুলে দাঁড়ায় পদ্মকুঁড়ি, শিকারা নৌকা আর রাজহংসী পাশাপাশি ভেসে বেড়ায় হ্রদের বুকে। তপোবন-উপবনগুলোতে নেচে বেড়ায় কস্তুরী মৃগের দল, ভ্রমরের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। তখন যেন মনে হয়, সত্যিই একটুকরো স্বর্গ নেমে এসেছে ধরিত্রীর বুকে—ভূস্বর্গ কাশ্মীর।
স্বর্গের অপ্সরাদের মতোই এই স্থানের বয়স বাড়ে না। অনন্ত যৌবনবতী কাশ্মীর। প্রকৃতি এখানে মানবজাতিকেও তার প্রাপ্য সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করেনি। পরম যত্নে নির্মাণ করেছে তাদের অঙ্গ সৌষ্ঠব, মুখমণ্ডল।
বিশেষত এ উপত্যকার নারীদের দেখলে মনে হয় তারা বুঝি অনন্ত যৌবনা—কাশ্মীর সুন্দরী। আমার এই উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু তেমনই এক নারী। তবে সে শুধু সৌন্দর্যের আধার নয়, তার চেয়েও বেশিকিছু মিশে আছে এ নারীর চেতনায়…।
এই উপন্যাসের পটভূমি ইতিহাস আশ্রিত। কাশ্মীরের ইতিহাস বহু প্রাচীন। এমনকী পুরাণ কথাতেও এ স্থানের কথা উল্লেখ থাছে। কাশ্মীরের প্রাচীন রাজবংশের ইতিহাস যেমন বিচিত্র, তেমনই চমকপ্রদ। অনেক সময় ভীতিপ্রদও বটে। এই ইতিহাস বর্ণিত আছে পুরাণ কথায় কাশ্মীর সম্পর্কে, ইতিহাসের অন্যতম প্রামাণ্য উপকরণ, কবি কলহন প্রণীত কালানুক্রমিক কাশ্মীরের রাজবংশ নিয়ে রচিত রাজতরঙ্গিণীতে।
এই গ্রন্থের পর্ব বা তরঙ্গরা আমাদের জানায়, প্রাচীন কাশ্মীরের ইতিহাসে দু’ধরনের শাসকবর্গ আবির্ভূত হয়েছিলেন। একদল যাঁরা প্রজাবৎসল নৃপতি হয়ে সুশাসনের নজির গড়েছিলেন, সামান্য মালিন্য-কলুষ যাঁদের কোনোদিন স্পর্শ করতে পারেনি। আর দ্বিতীয় অংশের নৃপতিরা হলেন সেই সব ব্যক্তি, যাঁরা ভয়াল অভিশাপের মতো আবির্ভূত হয়েছেন কাশ্মীরের সিংহাসনে। প্রজাপীড়ক সেই সব নৃপতি যাঁরা সর্বক্ষণ নিমজ্জিত থাকতেন ভোগবিলাস, মদ্যপান আর বেশ্যা সংসর্গে। এই দুই ধরনের নৃপতিকূলের জীবন যাত্রা মূলত আবর্তিত হতো কাশ্মীরের প্রাচীন রাজধানী শ্রীনগরকে কেন্দ্র করে।
এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কাশ্মীর সুন্দরী ‘পালেবত’। এ শব্দের অর্থ হল, আপেল। যা প্রচুর পরিমাণে জন্মায় এই উপত্যকাতে। পালেবত-সহ এ উপন্যাসের চরিত্র-কুশীলবরা প্রাচীন কাশ্মীরের এমন এক সময়ের বাসিন্দা যখন এক অদ্ভুত আঁধার নেমে এসেছে সারা দেশে। সিংহাসনে যে নৃপতি অধিষ্ঠান করছেন, তিনি শঠ-হিংস্র-কামোন্মাদ। বেশ্যা সাহচর্যই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এবং এ কাজে ন্যূনতম বিঘ্ন সৃষ্টিকারীকে নির্মমভাবে হত্যা করতেও তিনি একবার ভাবেন না।
তাঁর এই নারী মাংসের প্রতি আগ্রহের সুযোগ নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ বেশ্যারা এ দেশের শাসনভার কার্যত তুলে নিয়েছে নিজেদের হাতে। বিপন্ন কাশ্মীরের প্রতিটি নারীর জীবন। বেশ্যাকুলের হাতে লাঞ্ছিত এই সুন্দর উপত্যকার ধর্ম, সমাজ, জীবনযাত্রা সব কিছু। অন্ধকার এক জগতের মধ্যে বিচরণ করে আমার এ উপন্যাসের চরিত্ররা। তবে আমার এ উপন্যাস প্রেম কাহিনি না ঐতিহাসিক থ্রিলার তা বিচার করবেন পাঠক-পাঠিকারা, অর্থাৎ আপনারা।
আমার এ উপন্যাস ইতিহাস আশ্রিত বলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময়কার ইতিহাস, মানুষের জীবনযাত্রা ইত্যাদি অন্বেষণের জন্য বেশ কিছু গ্রন্থের সাহায্য নিতে হয়েছে আমাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, হরিলাল চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক মহাকবি কলহন প্রণীত সংস্কৃত কাশ্মীর-রাজতরঙ্গিণীর বঙ্গানুবাদ, শ্রীরাজেন্দ্রমোহন বসু প্রণীত ‘কাশ্মীর কুসুম’, দেওয়ান কৃপারাম রচিত ‘গুলজারে কাশ্মীর’, ডাক্তার ইন্স রচিত ‘কাশ্মীর হ্যান্ডবুক’। এই গ্রন্থগুলি আমাকে এ উপন্যাস রচনা করতে সার্বিকভাবে সাহায্য করেছে।
‘কাশ্মীর সুন্দরী’ পত্রভারতী থেকে প্রকাশিত ইতিহাস আশ্রিত সুন্দরী উপন্যাস সিরিজের চতুর্থ গ্রন্থ। ইতিপূর্বে তাঁরা প্রকাশ করেছেন খাজুরাহ সুন্দরী, বন্দর সুন্দরী ও সোমনাথ সুন্দরী নামের তিনটি বই। প্রতিটি সুন্দরীই আপনাদের ভালোবাসা লাভ করেছে। আশা করি এই নতুন বইটিও আপনাদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না। আসুন, তবে বইয়ের পাতা উল্টে আমরা গিয়ে উপস্থিত হই সেই ভূস্বর্গে, যেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে ‘কাশ্মীর সুন্দরী’।
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
কলকাতা বইমেলা ২০২৩
19 no theke porte parchi na. Enroll krte parchi na. Plz help.
Any one please help that how to enroll
https://www.ebanglalibrary.com/my-account/