1 of 2

রাজসিংহ – ৩.০৮

অষ্টম পরিচ্ছেদ : মেহেরজান

যে কয় দিন, মোগল সৈনিকেরা রূপনগরে শিবির সংস্থাপন করিয়া রহিলেন, সে কয় দিন বড় আমোদ প্রমোদে কাটিল। মোগল সৈন্যের সঙ্গে সঙ্গে নর্তপকীর দল ছুটিত; যখন যুদ্ধ না হইত, তখন তাম্বুর ভিতর নাচ-গানের ধুম পড়িত। সৈনিকদিগের রূপনগরে আসা কেবল আনন্দ করিতে আসা। সুতরাং রাত্রিতে তাম্বুতে নৃত্য-গীতের বড় ধুম।
নর্ততকীদিগের মধ্যে সহসা একজনের নাম অত্যন্ত খ্যাতি লাভ করিল, দিল্লীতে কেহ কখন মেহেরজানের নাম শুনে নাই–কিন্তু যাহাদের নাম প্রসিদ্ধ, তাহারাও রূপনগরে আসিয়া মেহেরজানের তুল্য যশস্বিনী হইতে পারিল না। মেহেরজান আবার নর্তঅকী হইয়াও সচ্চরিত্রা, এজন্য সে আরও যশস্বিনী হইল।
মোগল সেনাপতি সৈয়দ হাসান আলি তাহার সঙ্গীত শুনিতে ইচ্ছা করিলেন। কিন্তু মেহেরজান প্রথমে স্বীকৃত হইল না। বলিল, “আমি অনেক লোকের সাক্ষাতে নৃত্যগীত করিতে পারি না |” সৈয়দ হাসান আলি স্বীকার করিলেন যে, বন্ধুবর্গ কেহ উপস্থিত থাকিবে না। নর্তেকী আসিয়া তাঁহাকে নৃত্যগীত শুনাইল। তিনি অতিশয় প্রীত হইয়া নর্ত কীকে অর্থ দিয়া পুরস্কৃত করিলেন। কিন্তু নর্তগকী তাহা লইল না। বলিল, “আমি অর্থ চাহি না। যদি সন্তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে আমি যে পুরস্কার চাই, তাহাই দিবেন। নহিলে কোন পুরস্কার চাহি না |”
সৈয়দ হাসান আলি জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কি পুরস্কার চাও?”
মেহেরজান বলিল, “আমি আপনার অশ্বারোহিসৈন্যভুক্ত হইবার ইচ্ছা করি |”
হাসান আলি অবাক–হতবুদ্ধি হইয়া মেহেরজানের সুন্দর সুহাস্য মুখখানির প্রতি চাহিয়া রহিলেন। মেহেরজান নিরুত্তর দেখিয়া বলিল, “আমি ঘোড়া, হাতিয়ার, পোষাকের দাম দিব |”
হাসান আলি বলিল, “স্ত্রীলোক অশ্বারোহী সৈনিক?”
মেহেরজান বলিল, “ক্ষতি কি? যুদ্ধ ত হইবে না। যুদ্ধ হইলেও পলাইব না |”
হাসান আলি। লোকে কি বলিবে?
মেহেরজান। আপনি আর আমি জানিলাম, আর কেহ জানিবে না।
হাসান আলি। তুমি এ কামনা কেন কর?
মেহেরজান। যে জন্যই হৌক–বাদশাহের ইহাতে ক্ষতি নাই।
হাসান আলি প্রথমে কিছুতেই স্বীকৃত হইলেন না। কিন্তু মেহেরজানও কিছুতেই ছাড়িল না। শেষে হাসান আলি স্বীকৃত হইল। মেহেরজানের প্রার্থনা মঞ্জুর হইল।
মেহেরজান, সেই দরিয়া বিবি।

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *