রাধারাণী – ০৪

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

দুই এক বৎসর পরে একজন ভদ্রলোক সেই অনাথনিবাসে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার বয়স ৩৫/৩৬ বৎসর। অবস্থা দেখিয়া, অতি ধীর, গম্ভীর এবং অর্থশালী লোক বোধ হয়। তিনি সেই “রুক্মিণীকুমারের প্রাসাদের” দ্বারে আসিয়া দাঁড়াইলেন। রক্ষকগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কাহার বাড়ী?”

তাহারা বলিল, “এ কাহারও বাড়ী নহে, এখানে দু:খী অনাথ লোক থাকে। ইহাকে ‘রুক্মিণীকুমারের প্রাসাদ’ বলে |”

আগন্তুক বলিলেন, “আমি ইহার ভিতরে গিয়া দেখিতে পারি?”

রক্ষকগণ বলিল, “দীন দু:খী লোকেও ইহার ভিতর অনায়াসে যাইতেছে–আপনাকে নিষেধ কি?”

দর্শক ভিতরে গিয়া সব দেখিয়া প্রত্যাবর্তন করিলেন। বলিলেন, “বন্দোবস্ত দেখিয়া আমার বড় আহ্লাদ হইয়াছে। কে এই অন্নসত্র দিয়াছে? রুক্মিণীকুমার কি তাঁহার নাম?”

রক্ষকেরা বলিল, “একজন স্ত্রীলোক এই অন্নসত্র দিয়াছেন |”

দর্শক জিজ্ঞাসা করিলেন, “তবে ইহাকে রুক্মিণীকুমারের প্রাসাদ বলে কেন?”

রক্ষকেরা বলিল, “তাহা আমরা কেহ জানি না |”

“রুক্মিণীকুমার কার নাম?”

“কাহারও নয় |”

“যিনি অন্নসত্র দিয়াছেন, তাঁহার নিবাস কোথায়?”

রক্ষকেরা সম্মুখে অতি বৃহৎ অট্টালিকা দেখাইয়া দিল।

আগন্তুক জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “তোমরা যাঁহার বাড়ী দেখাইয়া দিলে, তিনি পুরুষ মানুষের সাক্ষাতে বাহির হইয়া থাকেন? রাগ করিও না, এখন অনেক বড় মানুষের মেয়ে মেম লোকের মত বাহিরে বাহির হইয়া থাকে, এই জন্যই জিজ্ঞাসা করিতেছি |”

রক্ষকেরা উত্তর করিল–“ইনি সেরূপ চরিত্রের নন। পুরুষের সমক্ষে বাহির হন না |”

প্রশ্নকর্তা ধীরে ধীরে রাধারাণীর অট্টালিকার অভিমুখে গিয়া, তন্মধ্যে প্রবেশ করিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *