1 of 2

রাজসিংহ – ১.৫

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : দরিয়া বিবি

বুড়ীর পুত্রের নাম খিজির সেখ। সে তসবির আঁকিত। দিল্লীতে তাহার দোকান। মার কাছে দুই দিন থাকিয়া, সে দিল্লী গেল। দিল্লীতে তাহার এক বিবি ছিল। সেই দোকানেই থাকিত। বিবির নাম ফতেমা। খিজির, মার কাছে রূপনগরের কথা যাহা শুনিয়াছিল, তাহা সমস্তই ফতেমার কাছে বলিল। সমস্ত কথা বলিয়া, খিজির ফতেমাকে বলিল যে, “তুমি এখনই দরিয়া বিবির কাছে যাও। এই সংবাদ বেগম সাহেবাকে বেচিয়া আসিতে বলিও। কিছু পাওয়া যাইবে |”
দরিয়া বিবি পাশের বাড়ীতেই বাস করে। ঘরের পিছন দিয়া যাওয়া যায়। অতএব ফতেমা বিবি, বেপরদা না হইয়াও, দরিয়া বিবির গৃহে গিয়া উপস্থিত হইলেন।
খিজির বা ফতেমার বিশেষ পরিচয় দিবার প্রয়োজন হয় নাই। কিন্তু দরিয়া বিবির বিশেষ পরিচয় চাহি। দরিয়া বিবির আসল নাম, দরীর-উন্নিসা কি এমনই একটা কিছু, কিন্তু সে নাম ধরিয়া কেহ ডাকিত না–দরিয়া বিবি বলিয়াই ডাকিত। তার বাপ মা ছিল না, কেবল জ্যেষ্ঠা ভগিনী আর একটা বুড়ী ফুফু, কি খালা, কি এমনই একটা কি ছিল। বাড়ীতে পুরুষমানুষ কেহ বাস করিত না। দরিয়া বিবির বয়েস সতের বৎসরের বেশী নহে–তাহাতে আবার কিছু খর্ব্বাকার, পনের বছরের বেশী দেখাইত না। দরিয়া বিবি বড় সুন্দরী, ফুটন্ত ফুলের মত, সর্‍বদা প্রফুল্ল।
দরিয়া বিবির ভগিনী অতি উত্তম সুর‍মা ও আতর প্রস্তুত করিতে পারিত। তাহাই বিক্রয় করিয়া তাহাদের দিনপাত হইত। আপনারা এক্কা বা দোলা করিয়া বড়মানুষের বাড়ী গিয়া বেচিয়া আসিত। দু:খী মানুষ, রাত্রি হইলে পদব্রজেও যাইত। বাদশাহের অন্ত:পুরে কাহারও যাইবার অধিকার ছিল না–বাহিরের স্ত্রীলোকেরও না–কিন্তু দরিয়া বিবির সেখানে যাইবারও উপায় ছিল। তাহা পরে বলিতেছি।
ফতেমা আসিয়া দরিয়া বিবিকে চঞ্চলকুমারীর সংবাদ বলিল, এবং বলিয়া দিল, ঐ সংবাদ বিক্রয় করিয়া অর্থ আনিতে হইবে।
দরিয়া বিবি বলিল, “রঙ‍মহালের ভিতর প্রবেশ করিতে হইবে–পরওয়ানাখানা কোথায়?”
ফতেমা বলিল, “তোমারই কাছে আছে |” দরিয়া বিবি তখন পেটারা খুলিয়া একখানা কাগজ বাহির করিল। তাহা উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিয়া বলিল, “এইখানা বটে!”
দরিয়া বিবি তখন কিছু সুর‍মা লইয়া ও পরওয়ানা লইয়া বাহির হইল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *