1 of 2

রাজসিংহ – ১.৪

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : বুড়ী বড় সতর্ক

যে বুড়ী ছবি বেচিয়াছিল, সে ফিরিয়া আসিল। তাহার বাড়ী আগ্রা। সে চিত্রগুলি দেশে বিদেশে বিক্রয় করে। বুড়ী রূপনগর হইতে আগ্রা গেল। সেখানে গিয়া দেখিল, তাহার পুত্র আসিয়াছে। তাহার পুত্র দিল্লীতে দোকান করে।
কুক্ষণে বুড়ী রূপনগরে চিত্র বিক্রয় করিতে গিয়াছিল। চঞ্চলকুমারীর সাহসের কাণ্ড যাহা দেখিয়া আসিয়াছিল, তাহা কাহারও কাছে বলিতে না পাইয়া, বুড়ীর মন অস্থির হইয়া উঠিয়াছিল। যদি নির্‍মলকুমারী তাহাকে পুরস্কার দিয়া কথা প্রকাশ করিতে নিষেধ করিয়া না দিত, তবে বোধ হয়, বুড়ীর মন এত ব্যস্ত না হইলেও হইতে পারিত। কিন্তু যখন সে কথা প্রকাশ করিবার জন্য বিশেষ নিষেধ হইয়াছে, তখন বুড়ীর মন কাজে কাজেই কথাটি বলিবার জন্য বড়ই আকুল হইয়া উঠিল। বুড়ী কি করে, একে সত্য করিয়া আসিয়াছে, তাহাতে হাত পাতিয়া মোহর লইয়া নিমক খাইয়াছে, কথা প্রকাশ পাইলেও দুরন্ত বাদশাহের হস্তে চঞ্চলকুমারীর বিশেষ অনিষ্ট ঘটিবার সম্ভাবনা, তাহাও বুঝিতেছে। হঠাৎ কথা কাহারও সাক্ষাতে বলিতে পারিল না। কিন্তু বুড়ীর আর দিবসে আহার হয় না–রাত্রিতে নিদ্রা হয় না। শেষ আপনা আপনি শপথ করিল যে, এ কথা কাহারও সাক্ষাতে বলিব না। তাহার পরেই তাহার পুত্র আহার করিতে বসিল–বুড়ী ছেলের সান্‍‍‍‍কির উপর একটু রসাল কাবাব তুলিয়া দিয়া বলিল, “খা বাবাজান! খা খা লেও। য়ৈসা কাবাব রূপনগরসে আনেকে বক্‍ত এক রোজ বানা থা–ঔর কভী নেহিন বনা |”
ছেলে খাইতে খাইতে বলিল, “আম্মাজী! রূপনগরকা যো কেস্সা আপ্ ফরমায়েঙ্গে বোলী থী |”
মা বলিল, “চুপ! বহ বাত্ মুহ্‌মে মৎ লও বাপ‍জান। মেয়নে কিয়া বোলী থী? খেয়াল্‌মে বোলী থী শায়েদ্!”
বুড়ী এখন ভুলিয়া গিয়াছিল যে, পূর্‍বে এক সময়ে চঞ্চলকুমারীর কথাটা তাহার উদরমধ্যে অত্যন্ত দংশন আরম্ভ করায়, তিনি পুত্রের সাক্ষাতে একটু উ: আ: করিয়াছিলেন। এবারকার উত্তর শুনিয়া ছেলে বলিল, “চুপ রহেঙ্গে কাহে মাজী? য়ৈসা কিয়া বাত্ হোগী?”
মা। শুন্‌নেকা মাফিক বাত্ নেহিন্, বাপজান!
ছেলে। তব্ রহনে দিজিয়ে।
মা। ঔর কুছ নেহিন্, রূপনগরওয়ালী কুমারীন্‌কি বাত্।
ছেলে। বহ কুমারীন্ বড়া খুব্ সুরত? য়েহ য়ৈসা পুষিদা বাত্?
মা। সো নেহিন্–বাঁদীকি বড়া দেমাগ। ইহা আল্লা! মেয়নে কিয়া বোল্ চুকা!
ছেলে। কাঁহা রূপনগর গড়, কাঁহা ওঁহাকা রাজকুমারীন্‌কি দেমাগ–ইয়ে বাত্ আপ্‌কা বোলনাই কিয়া জরুর–হামারা শুননাই কিয়া জরুর?
মা। স্রেফ দেমাগ বাপজান! লৌণ্ডীনে বাদশাহে আলম্‌কো নেহিন মান্‌তী!
ছেলে। বাদশাহে আলম্‌কো গালি দিই হোগী?
মা। গালি–বাপজান! উস‍‍সে ভী জরুর কুছ!
ছেলে। উস্‌সে ভী জবর! কিয়া হো সক্‌তা? বাদশাহ আলম্‌কো ঔর মাব সক্‌তা নাই!
মা। উস্‌সে ভী জবর।
ছেলে। মার সে ভী জবর?
মা। বাপজান–ঔর পুছিও মৎ-মেয়নে উস্‌কী নিমক খাইন।
ছেলে। নিমক খায়ে হো! কিস্‌তরে মা?
মা। আশরফি দিন্।
ছেলে। কাহে মাজী?
মা। উস্‌‌কী গুণাহ্‌কে বাত কিসিকা পাস বোল্‍না মনাসেব নেহিন, এস লিয়ে।
ছেলে। আচ্ছা বাত হৈ। মুঝ‍‍কো একঠো আশরফি বখশিশ ফরমাইয়ে।
মা। কাহে রে বেটা?
ছেলে। নেহিন ত মুঝ্‌কো বোল্ দিজিয়ে বাত্‌ঠো কিয়া হৈ?
মা। বাত্ ঔর কিয়া, বাদশাহ তসবির–তোবা! তোবা! বাত‍‍ঠো আব‍হী নিক্‌লী থী।
ছেলে। তসবির ভাঙ্গ্‌ডালা?
মা। আরে বেটা, লাথ্‌‍‍ সে ভাঙ্গ্‌‍ডালা! তোবা! মেয়্‌নে নিমকহারামী কর্ চুকা!
ছেলে। নিমকহারামী কিয়া হৈ ইস‍‍মে তোম মা, মেয়নে বেটা! হামরা বোল্‌নেসে
নিমকহারামী কিয়া হৈ?
মা। দেখিও বাপজান, কিস্‌ইকো বলিও মৎ।
ছেলে। আপ্ খাতেরজমা রহিয়ে–কিস‍ইকো পাস নেহিন বোলেঙ্গে।
তখন বুড়ী বিলক্ষণ রসরঞ্জিত করিয়া চিত্রদলনের ব্যাপারটা সমস্ত বলিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *