ঝগড়া

ঝগড়া

সন্ধ্যার সময় কেশব গাঙ্গুলীর ভীষণ ঝগড়া হয়ে গেল দুই কন্যা ও স্ত্রীর সঙ্গে। কন্যা দুটিও মায়ের দিকে চিরকাল। এদের কাছ থেকে কখনো শ্রদ্ধা ভালোবাসা পাননি কেশব।

শুধু এনে দাও বাজার থেকে, এই আক্রা চাল মাথায় করে আনো দেড়কোশ দূরের বাজার থেকে। তেল আনো, নুন আনো, কাঠ আনো—এই শুধু ওদের মুখের বুলি। কখনো একটা ভালো কথা শুনেছেন ওদের মুখ থেকে?

ব্যাপারটা সেদিন দাঁড়াল এইরকম।

সন্ধ্যার আগে কেশব গাঙ্গুলী হাট করে আনলেন। তাঁর বয়েস বাহাত্তর বছর, চলতে আজকাল যেন পা কাঁপে—আগের মতো শক্তি নেই আর শরীরে। আড়াই টাকা করে চালের কাঠা। দু-কাঠা চাল কিনে, আর তা ছাড়া তরিতরকারি কিনে ভীষণ কর্দমময় পিছল পথে কোনোরকমে পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়ে কেশব গাঙ্গুলী তো হাটের বোঝা বাড়ি নিয়ে এলেন।

স্ত্রী মুক্তকেশী বললে—দেখি কীরকম বাজার করলে? পটলগুলো এত ছোছাটো কেন? কত করে সের?

—দশ আনা।

—ও বাড়ির পন্টু এনেচে ন-আনা সের। তুমি বেশি দর দিয়ে নিয়ে এলে, তাও ছোটো পটল। ও কখনো দশ আনা সের না।

—বাঃ, আমি মিথ্যে বলছি?

—তুমি বড্ড সত্যবাদী যুধিষ্ঠির—তা আমার ভালো জানা আছে। আচ্ছা রও, ও পটল আমি ওজন করে দেখব।

—কেন আমার কথা বিশ্বাস হল না?

—না, তোমার কথা আমার বিশ্বাস তো হয়ই না—সত্যি কথা বলব তার আবার ঢাক-ঢাক গুড়গুড় কী?

এই হল সূত্রপাত। তারপর কেশব গাঙ্গুলী হাত-পা ধুয়ে রোজকার মতো বললেন—ও ময়না, চালভাজা নিয়ে আয়—

ময়না কথা বলে না, চালভাজার বাটিও আনে না। তাতে বুঝি কেশব বলেছিলেন—কৈ, কানে কী তুলো দিয়ে বসে আছ নাকি, ও ময়না?

ছোটো মেয়ে ময়না নীরস সুরে বললে—চাল ভাজিনি।

-কেন?

 

–রোজ রোজ চালভাজা খাওয়ার চাল জুটছে কোথা থেকে? তা ছাড়া আমার শরীরও ভালো ছিল না।

—কেন, তোর দিদি?

—দিদি সেলাই করছিল।

এটা খুবই স্বাভাবিক যে বাহাত্তর-তিয়াত্তর বছরের বৃদ্ধ কেশব গাঙ্গুলী দশ সের ভারী মোট বয়ে এনে মেয়েদের এ উদাসীনতায় বিরক্ত হবেন, বা প্রতিবাদে দু-কথা শোনাবেন। কিন্তু তার ফল দাঁড়াল খুবই খারাপ।

পাঁচজনের সামনে বলবার কথা নয়, বলতেও সংকোচ হয়। ছোটো মেয়ে ময়না তাঁকে একটা ভাঙা ছাতির বাঁট তুলে মারতে এল। মেজো মেয়ে লীলা বললে— তুমি মরো না কেন? মলে তো সংসারের আপদ চোকে—

স্ত্রী মুক্তকেশী বললে—অমন আপদ থাকলেও যা, না-থাকলেও তা কেশব গাঙ্গুলী রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বললেন, আমি তোদের ভাত আর খাব না—চললাম।

মুক্তকেশী ও ছোটো মেয়ে ময়না একসঙ্গে বলে উঠল—যাও না—যাও।

ময়না বললে—আর বাড়ি ঢুকো না। মনে থাকে যেন।

শুনে বিশ্বাস হবে না জানি, কিন্তু একেবারে নির্জলা সত্যি। আপন মেয়ে বুড়ো বাবাকে ছাতি তুলে মারতে যায়!

কেশব গাঙ্গুলী রাত্রে বাইরের ভাঙা চণ্ডীমণ্ডপে শুয়ে রইলেন। কেউ এসে খেতে ডাকলে না—মাও না, মেয়েরাও না। সত্যিই কেউ ডাকতে আসবে না, এটা কেশব বুঝতে পারেননি, ধারণা করতে পারেননি। তাই ঘটে গেল অবশেষে। না খেয়ে সমস্ত রাত কাটল কেশব গাঙ্গুলীর—নিজের পৈতৃক ভিটেতে, স্ত্রী ও দুই কন্যা বর্তমানে। উঃ, এ কথা ভাবতে পারা যায়?

কেশব গাঙ্গুলী সত্যি কখনো ভাবেননি যে, এতটা তিনি হেনস্থার পাত্র তাঁর সংসারে। মেয়েরা বা স্ত্রী তাঁকে কেউ ভালোবাসে না, এ তিনি অনেকদিন থেকেই জানেন। কিন্তু তার বহর যে এতটা, তা তিনি ধারণা করবেন কীভাবে?

ক্ষুধায় ও মশার কামড়ের যন্ত্রণায় সারারাত কেটে গেল ছটফট করে। সকালে উঠে আগে কেশব নদী থেকে স্নান করে এসে সন্ধ্যাহ্নিক ও জপ করে নিয়ে প্রতিবেশী যদুনন্দন মজুমদারের বাড়ি চা খেতে গেলেন।

যদুনন্দন বললেন—কী কাকা, আজ এত সকালে কী মনে করে?

এ কথার উত্তরে কেশব গাঙ্গুলী বললেন কাল রাত্রের কথা। পরিবার ও মেয়ে দুটির দুর্ব্যবহারের কাহিনি। যদুনন্দনের কাছে এ কথা নতুন নয়, পাড়ার মেয়েদের কানাকানির মধ্যে দিয়ে কেশব গাঙ্গুলীর দুরবস্থার কথা অনেকদিন শুনেছেন তিনি।

তবুও বিস্ময়ের ভান করে বললেন—সে কী কাকা, বলেন কী? কাল রাত্রে খাননি? এ বড় অন্যায় কাকিমার। ছিঃ ছিঃ—এ বেলা আপনি আমার বাড়ি খাবেন। বসুন।

কেশব গাঙ্গুলী আর বাড়ি এলেন না। সেখানেই দুপুর পর্যন্ত থেকে আহারের পর যখন বাড়ি এলেন, তখন এক ভীষণ কাণ্ড বেধে গেল। মুক্তকেশী বললে— আবার বাড়িতে কেন? যাও দূর হও, যে বাড়িতে গিয়ে নিন্দে রটনা করে এক পাথর ভাত মেরে এলে, সেখানেই যাও না, কতদিন খেতে দ্যায় দেখি একবার।

মেয়েরাও বললে—বেশ তো, পরের বাড়ি টোকলা সেধে কদ্দিন চলে, দেখি না? এখানে আবার কেন? যাও না—

—কাকে কি বলেছি আমি?

—আহা! ন্যাকা! আমরা আর জানিনে! এই তো যদুদার মেয়ে ঘাটে আজ ব্যাখ্যান করেছে সবার কাছে। ওই বুড়ো মানুষ ওঁকে খেতে দ্যায়নি, দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে, মেরেছে—সে কত কথা! আমরা শুনিনি কিছু?

—তা তো মিথ্যে কিছু বলিনি।

—মেরেছিলাম তোমাকে আমরা? খেতে দিইনি আমরা? তুমিই না তেজ করে চণ্ডীমণ্ডপে গিয়ে শুয়ে রইলে! আবার লাগানি-ভাঙানি পাড়ায় পাড়ায়। বেশ লাগাও, লাগিয়ে করবে কী? যাও না, যেখানে খুশি—আমরা তো বলেছি, বেরোও না–

ছোটো মেয়ে বললে—মরে যাও না, মলেই তো বাঁচি—

কেশব গাঙ্গুলী ঘরের মধ্যে ঢুকে কাপড়জামা পরে এবং একটা থলের মধ্যে কাপড়-গামছা পুরে নিয়ে তেড়েফুঁড়ে বাড়ি থেকে বেরুলেন!

বলে গেলেন—বেশ তাই যাচ্ছি—আর তোদের বাড়ি আসব না—চললাম।

মুক্তকেশী চেঁচিয়ে বললে–তেজ করে যেমন বেরুনো হল তেমনি আর ঢুকো বাড়িতে কালামুখ নিয়ে—দেখব তেজ—কে জ্বর হলে দেখে, তা দেখব।

কেশব গাঙ্গুলী হনহন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন। হোক জ্বর। নৈহাটী থেকে এখানে এসে পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় ভুগছেন। দুর্বল করে ফেলে দিয়েছে বড়ো। তা হোক। যা হয় হবে।

 

কেশব গাঙ্গুলী রেলে চাকুরি করতেন। চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে নৈহাটিতে বাড়ি করেছিলেন, কিন্তু বারো-চোদ্দো বছর বসে খেয়ে প্রভিডেন্ট ফন্ডের সামান্য টাকা যা বাড়ি তৈরির পর অবশিষ্ট ছিল, ক্রমে ক্রমে ফুরিয়ে যেতে লাগল— এখনো ছোটো মেয়ের বিয়ে বাকি। টাকা ফুরিয়ে গেলে কী খাবেন?

অগত্যা নৈহাটির বাড়ি বিক্রি করে পৈতৃক গ্রামে এসে এই দু-বছর বাস করছেন। শরিকদের সঙ্গে ঝগড়া করে দু-ঝাড় বাঁশ ও বিঘে-দুই ধানের জমির ভাগ পেয়ে যা-হোক একরকম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু মেয়ে দুটি আর পরিবারের জন্যে সত্যি তাঁর সংসারে বিতৃষ্ণা হয়ে গিয়েছে। মেজে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু স্বামীর চরিত্র ভালো নয়, সে মেয়ে তাঁর কাছেই আছে বিয়ের দু-বছর পর থেকেই। সব দিক থেকেই তাঁর গোলমাল।

ভেবেছিলেন ছোটো মেয়েটার বিয়ে দিয়ে একরকম নিঝঞ্জাট হবেন, কিন্তু আর সংসারে তাঁর দরকার নেই। যাদের জন্য চুরি করেন, তারাই বলে চোর। সে সংসার আর ধরতে আছে?

কেশব গাঙ্গুলী রেলের বোতাম বসানো সাদা কোট একটা নিয়ে বেরিয়েছেন, রেলের ভাড়া লাগবে না। রেলের বোতামওয়ালা কোট দেখলে ছেলেছোকরা টিকিট-চেকাররা একবার চেয়ে দেখে চলে যায়, কিছু জিগ্যেস করে না।

একটি পয়সা তাঁর নিজের হাতে নেই। হাজার চারেক টাকা আছে স্ত্রীর নামে আর হাজার তিনেক আছে অবিবাহিত ছোটো মেয়ের নামে। যদি তিনি মারা যান মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আগেই, কারণ বয়স তাঁর যথেষ্ট হয়েছে, তাই বন্ধুবান্ধবদের পরামর্শে নৈহাটিতে থাকতে বাড়ি বিক্রির টাকা থেকে ছোটো মেয়ের নামে টাকাটা রেখেছিলেন। আজ চাইলে কেউ একটা পয়সা তাঁকে দেবে? না-স্ত্রী, না-মেয়ে।

তাই হাটের পয়সা থেকে দু-চার আনা এদিক-ওদিক করতেন কেশব গাঙ্গুলী।–করলে চলে না। তাঁর নিজের একটু নস্যি, একটু তামাক, হয়তো বা ইচ্ছে হল দু-পেয়ালা চা কিনে খেলেন—এ পয়সা আসে কোথা থেকে।

মুক্তকেশী এ সন্দেহ করেছিল আগে থেকেই। তাই স্বামী হাট থেকে ফিরলে জিনিসপত্রের ওজন, দরদস্তুর সম্বন্ধে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিগ্যেস করে, দাঁড়ি ধরে আলু, পটল, চাল, ডাল ওজন করে নেয়। পাড়ার ছেলেদের জিগ্যেস করে—হ্যাঁরে, আজ হাটে পটল কত করে সের?

—ও নিতাই, আজ হাটে মাছ কত করে সের?

তবুও কেশব গাঙ্গুলীকে সামলানো অত সহজ নয়। চল্লিশ বছর তিনি রেলে কাজ করে এসেছেন। মুক্তকেশী যতই কৌশল করুক, যতই সতর্ক হোক, কেশব গাঙ্গুলীর ফাঁক ধরতে পারা অত সহজ কাজ বুঝি?

পটলের মধ্যে বাসি তাজা নেই?

দেখলে হয়তো ঠিক ধরা যায় না, কিন্তু দর বিভিন্ন। মাছের মধ্যেও দরের তারতম্য নেই? কত ধরবে মুক্তকেশী? না-করলেই বা কেশব গাঙ্গুলীর বাজে খরচ চলে কোথা থেকে? চাইলে স্ত্রীর হাত থেকে পয়সা বার করা শক্ত। ওই নিয়েই তো যত ঝগড়া।

কেশব গাঙ্গুলী বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছালেন বেলা তিনটের সময়। কাল হাট থেকে ফিরবার সময় ছ-আনা পয়সার হেরফের করেছিলেন, সেই পয়সা পকেটে খুচরো আছে—আর আছে গুপ্তস্থান থেকে সন্তর্পণে বার করা তিন টাকা সাত আনা। এই তিন টাকা তেরো আনা ছাড়া জগতে তাঁর বলতে আর কোথাও কিছু নেই। হ্যাঁ, অবিশ্যি পকেট ঘড়িটা আছে। সেটাও রেলের জামার বুকপকেটে এনেছেন। বিক্রি করলে ত্রিশ-চল্লিশ টাকা হবে! সেকালের কুরুভাইজার ফ্রেরিসের ঘড়ি। এখনকার মতো ফঙ্গবেনে জিনিস নয়।

স্টেশনের কাছে একটা জামগাছের তলায় পাকিস্তানের উদবাস্তুদের পানবিড়ির দোকান। পান কিনলেন দু-পয়সার। বিড়িও দু-পয়সার। দেশলাই একটা কত? চার পয়সা? দাও একটা।

পান খেয়ে বিড়ির ধোঁয়া টেনে কেশব গাঙ্গুলীর শরীরের কষ্ট খানিকটা দূর হল। এতক্ষণ চিন্তা করবার মতো অবস্থা তাঁর ছিল না।

তিনি আপাতত যাবেন কোথায়?

সেটা কিছু ঠিক করেননি, না-করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন অবিশ্যি। এখনো ট্রেনের ঘণ্টাখানেক বিলম্ব আছে। যাবেন কোথায়? যেখানে যান, যেতে তো হবে? তিন টাকা তেরো আনায় স্বাধীনভাবে খাওয়া কতদিন চলবে?

মেয়ের বাড়ি যাবেন? জামাই কাজ করে টিটাগড়ের কাগজের কলে। টিটাগড়েই বাসা। সেখানে যেতে লজ্জা করে। এই গত জ্যৈষ্ঠ মাসে সেখানে গিয়ে দু-দিন ছিলেন। অবিশ্যি জামাইষষ্ঠীর তত্বস্বরূপ নিয়ে গিয়েছিলেন কিছু আম ও দুটো কাঁঠাল। বার বার জামাইবাড়ি যেতে আছে?

বিশেষ করে আজকাল রেশনের চালের দিনে কারো বাড়িতেই একবেলার বেশি দু-বেলা থাকতে নেই। কী মনে করবে। যে কাল পড়েছে।

ট্রেন এসে পড়ল। উঠে বসলেন এক কোণে। রেলের জামা আছে, টিকিট লাগবে না।

হু হু করে ট্রেন চলল। কাশফুলের খেতে কাশফুল ফুটতে শুরু করেছে। খুব বৃষ্টি হওয়ায় ধানের খেত জলে ডুবুডুবু। অনেক জায়গায় এখনো ধান বুনছে। আমন ধান এবার নাবি।

খুব ভালো করেছেন কেশব। যখন কাজ থেকে অবসর নিলেন, তখন প্রভিডেন্ট ফন্ডের দরুন ন-হাজার টাকা পেয়েই যদি তা থেকে কিছু ধানের জমি কিনতেন নিজের নামে, তবে আজ স্ত্রী আর মেয়েরা এমন হেনস্থা করতে পারত?

স্ত্রী আর মেয়েদের দুর্ব্যবহারের কথা মনে আসায় চোখ দিয়ে জল পড়ল, কোঁচার খুঁটে মুছলেন। কী না করেছেন ওদের জন্যে? ওই ছোটো মেয়েটার নৈহাটিতে থাকতে একবার টাইফয়েড হয়েছিল, কেশব গাঙ্গুলী রাত জেগে ঘণ্টায় ঘণ্টায় থার্মোমিটার দেখেছেন, ওষুধ খাইয়েছেন, কই অবহেলা করতে পেরেছিলেন? একশো ষাট টাকা খরচ হয়ে যায় সেই অসুখে।…

ওই স্ত্রী মুক্তকেশীর সে-বার হাঁপানির মতো হল। চুচুড়ায় নিয়ে গিয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে কবিরাজ দেখানো, অনুপানের ব্যবস্থা করা, পাছে আগুনের তাতে কষ্ট হয় বলে রাঁধতে দিতেন না, রান্নাঘরের কাছে যেতে দিতেন না। রাত্রে শুয়ে ভাবতেন, এই বয়সে হাঁপানি হল, মুক্তকেশী বড়ো কষ্ট পাবে, কী করা যায়? রঘুনাথপুরের পীতাম্বর দাসের কাছে হাঁপানির মাদুলি পাওয়া যায়, তাই কি আনবেন? কত ভেবেছেন। কত ব্যস্ত হয়েছিলেন।

সেই মুক্তকেশী তাঁকে আজ বললে—বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও, আর এসো না–

ছোটো মেয়ে বললে—মরো না তুমি, মলেই বাঁচি। তুমি মলেই বা কী?

কেন তিনি কি ওদের জন্যে কিছু করেননি? চিরকাল রেলে টরেটক্কা করেছেন তবে কাদের জন্যে? খাইয়ে মাখিয়ে বড়ো না-করলে ওরা অত বড়ো হল কী করে? আজ কিনা তিনি মরে গেলে ওরা বাঁচে! তিনি আজ সংসারের আপদ, এই তিয়াত্তর বছর বয়সে!

এই তিয়াত্তর বছর বয়সেও গত আষাঢ় মাসে যখন কাঠের ভয়ানক অভাব হল, নিজে বাঁশঝাড় খুঁজে খুঁজে শুকনো বাঁশ আর কঞ্চি কেটে গোয়ালে ডাং করেননি, পাছে স্ত্রীর বা মেয়েদের রান্নার এতটুকু অসুবিধে হয় সেজন্যে? এই ভীষণ জলকাদার পথে মোট বয়ে নিয়ে যাননি?

যাক, এসব কথা তিনি বলতে চান না। তবে মনে কষ্ট হয় এই ভেবে যে, সংসার কীরকম অকৃতজ্ঞ! যাদের জন্যে সারাজীবন খেটে খেটে গায়ের রক্ত জল করেছেন, তারাই আজ বলে কিনা তিনি মলেই তারা বাঁচে, তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।

কেশব গাঙ্গুলীর মনের মধ্যেটা হা হা করে উঠল দুঃখে। চোখে আবার হু হু করে জল এল, কোঁচার খুঁটে মুছলেন। আজ যদি

—টিকিট?

—কেশব গাঙ্গুলী মুখ তুলে চমকে চাইলেন। একটি ছোকরা টিকেট-চেকার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কেবশ গাঙ্গুলী বললেন—রেলওয়ে সার্ভেন্ট—

ছোকরা চলে গেল।

বেশ ছেলেটি। ওই রকম একটি ছেলে যদি আজ তাঁর থাকত! তা হলে ওরা এমন কথা বলতে সাহস পেত না। সবই অদৃষ্ট। ছেলে তাঁর হয়নি? হয়েছিল। তখন তিনি তিনপাহাড় স্টেশনের তারবাবু। ছেলের নাম ছিল সান্টু! প্ল্যাটফর্মে হেলেদুলে চলে বেড়াত। আজও বেশ মনে আছে, তাঁকে বলত—বাবা, আমাকে পুরোনো টিকিট দেবে? পুরোনো টিকিট হাতে পেলেই সে হঠাৎ মুখে ‘পু-উ উ-উ’ শব্দ করে ট্রেন ছেড়ে দিত…তারপর ঝক ঝক ঝক ঝক শব্দ করতে করতে প্ল্যাটফর্মের ধারে ধারে খানিকদ্দূর মাথা নাড়তে নাড়তে কেমন যেত।

টরেটক্কার টেবিলে কাজ করতে করতে তিনি বসে দেখতেন আর হাসতেন। মাল-কুলি রামদেওকে বলতেন—শিশুকে ধরে বাসায় দিয়ে আসতে। শিশু বুঝতে পারত, রামদেও তাকে ধরে নিয়ে যেতে আসছে, সে ছোটো পায়ে ছুট দিত আর রামদেও পেছনে পেছনে ‘এ খোঁকাবাবু, এ খোঁকাবাবু’ বলে ছুটত—এ দৃশ্য আজও এই এখুনি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন কেশব।

দেড় বছর বয়সে সান্টু মারা যায়।…আজ ছত্রিশ বছর আগেকার কথা। তবুও যেন মনে হয়, সেই সাহেবগঞ্জ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বড়ো ঘোড়ানিম গাছটার ছায়ায় আজও সান্টু সেই রকম ছুটে ছুটে খেলা করে বেড়াচ্ছে।…সান্টু থাকলে আজ বোধ হয় এমন কষ্ট কেশব গাঙ্গুলীর হত না। চোখ দিয়ে এবার ঝরঝর করে জল পড়ল, মনের মধ্যে—বুকের মধ্যে কী একটা যেন ঠেলে ফুলে ফেঁপে উত্তাল হয়ে উঠল। কেশব জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। একটা রাখাল বালক একটা গোরুকে কী নির্দয়ভাবেই না প্রহার করছে। খুব বৃষ্টির জল বেধেছে ডোবায়, পুকুরে। এক জায়গায় ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরা গামছা দিয়ে হেঁকে কুঁচোমাছ ধরছে। টেলিগ্রাফের তারে একটা কি পাখি বসে রয়েছে।

 

নৈ-হা-টি!

কেশব গাঙ্গুলীর চিন্তাসূত্র ছিন্ন হয়ে গেল। তিনি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন।

সন্ধ্যার আর বিলম্ব নেই। এখানে সাবেক বাসা ছিল। দু-চারজন বন্ধুর সঙ্গে আলাপ আছে। তাদের কারো বাড়ি যাবার ইচ্ছে নেই, তবুও না-গেলে রাত্রে থাকবেন কোথায় এই অভদ্রা বর্ষাকালে, খাবেনই বা কী? রমাপতির বাড়ি যাবেন?

রমাপতি কুণ্ডুর বড়ো গোলদারি দোকান ও রেস্টুরেন্ট। নাম, দি কমলাপতি মডার্ন রেস্টোরান্ট। রমাপতির বড়ো ছেলের নাম কমলাপতি। তার ছেলে শান্তি ওই রেস্টোরেন্টে বসে! খুব বিক্রি। চার-পাঁচটা ছোকরা চা-খাবার দিতে দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।

শান্তি তাঁকে দেখে বললে—এই যে দাদু, আসুন! দেশ থেকে? ভালো সব? ওরে, ভালো করে গরম জলে ধুয়ে এক কাপ চা দে দাদুকে। আর কী খাবেন? একটা চপ দেবে? ভালো চপ আছে। না? টোস্ট দিক? তবে থাক।

কেশব গাঙ্গুলী জানেন, এখানে যা খাবেন তার নগদ দাম দিতে হবে এখুনি। আর একবার এ রকম হয়েছিল, তাঁকে খাতির করছে ভেবে চপ, কাটলেট, ডিম যা নিয়ে আসে তাই খান। শেষে হাসিমুখে আপ্যায়িত করে বিদায় নেবার জন্যে টেবিলের কাছে যেতেই শান্তি হাসিমুখে বললে—এক টাকা সাড়ে তেরো আনা—

আজ আর সে ভুল করবেন না। হাতে পয়সা কম। চায়ের ছ-পয়সা দাম দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। শান্তিকে বললেন, তোমার বাবা ভালো? তোমার দাদু বাড়িতে আছেন?

–আজ্ঞে হ্যাঁ।

—একবার যাব দেখা করতে?

—যান না। এখন বৈঠকখানাতেই বসে আছেন, আর শশী কাকা আছেন।

—আচ্ছা আসি। কেশব গাঙ্গুলীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। ব্যাবসাদারের চক্ষুলজ্জা নেই। সংসার বড়ো কঠিন জায়গা।

তবুও রমাপতির বাড়িতেই গেলেন। রমাপতি কুণ্ডু তাঁর সমবয়সি। তাঁকে দেখে খুশি হল। যত্ন করলে খুব। রাত্রে লুচি, তরকারী, মিষ্টি খাওয়ালে। ভালো গদিপাতা নেটের মশারি খাটানো বিছানায় শুয়ে কেশব মশারির চালের দিকে চেয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। পরের এমন সুন্দর বিছানাতে ক-দিন তিনি শোবেন? তাঁর আশ্রয়স্থল তো বৃক্ষতল। এরা না-হয় আজ রাত্রেই খাতির করে আশ্রয় দিয়েছে।

কেন অপরের অদৃষ্টে এত সুখ থাকে, আর তাঁর অদৃষ্টে এমন ধারা?

এই তো রমাপতিকে দেখলেন, তার নাতনিরা কত যত্নে বাতাস করতে লাগল খাওয়ার সময়ে। খাওয়ার পর এক বড়ো নাতনি আমলা নাকি রোজ তেল মালিশ করে দাদুর পায়ে। পুত্রবধূরা ‘বাবা’ বলতে অজ্ঞান।

সেটা হয়তো পয়সাওয়ালা বলে, রমাপতির নামেই ব্যাবসা, লক্ষপতি লোক। আজ তাঁর হাতে যদি পয়সা থাকত, তবে কী আর মেয়েটা তাঁকে অমন কথা বলতে সাহস করত? তিনি নিঃস্ব, কাজেই তাঁকে হেনস্থা করে। পয়সা এমন জিনিস।

কত কী ভাবতে ভাবতে কেশবের ঘুম এল। একটা বড় ব্যথার জায়গা খচ খচ করে। যখন তিনি চলে যাচ্ছেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে, তখন মেয়েরা কেন দৌড়ে এসে পথ আটকালে না? স্ত্রী কেন ছুটে এল না?

সব মিথ্যে। সব ভুয়ো। সব স্বার্থের দাস। দয়া, মায়া, স্নেহ, মমতা পৃথিবীতে নেই। রমাপতি কুণ্ডু লক্ষপতি, তাই আজ নাতি-নাতনি তার পায়ে তেল মালিশ করে, পুত্রবধূরা দুধের বাটি মুখে ধরে। যদি তাঁর টাকা থাকত, তাঁর আদরও ওই রকমই হত।

সকালে উঠে রমাপতি কুণ্ডু বললেন–গঙ্গাস্নান করবেন না গাঙ্গুলীমশায়? গঙ্গাহীন দেশে থাকেন, গঙ্গাস্নানটা করলে ভালো হত!

দুজনে গঙ্গাস্নান করে এলেন। তারপর রমাপতির ছোটো নাতনি তাঁদের দুজনের জন্যে শ্বেতপাথরের রেকাবিতে কাটা পেঁপে, কলা, নাশপাতির টুকরো আর সন্দেশ, রসগোল্লা ও চমচম নিয়ে এল। কেশব গাঙ্গুলীকে বললে—দাদু, আপনার রান্নার জোগাড় কী এক্ষুনি করে দেব? না একটু দেরি হবে?

অর্থাৎ এরা গন্ধবণিক। ভাত বেঁধে দেবে না ব্রাহ্মণের পাতে। রাত্রে লুচি খাওয়াতে পারে, কিন্তু দিনে ভাত বেঁধে খেতে হবে।

কেশব বললেন—আমি চলে যাব আজ দিদি–

রমাপতি কুণ্ডু বললে—সে কী কথা গাঙ্গুলীমশায়? আজ ওবেলা আপনাকে নিয়ে হরিসভায় ভাগবতপাঠ শুনতে যাব ঠিক করে রেখেছি–

রমাপতির নাতনি টুনিও বললে—আজ যাবেন কী দাদু? আজ আমরা ওবেলা তালের ফুলুরি, তালের ক্ষীর করব, আপনি আজ চলে যাবেন—যেতে তো দিলাম?

কেমন সুখের সংসার! কেমন মিষ্টি কথাবার্তা, মিষ্টি ব্যবহার! লক্ষ্মী যেখানে বিরাজ করেন, সেখানে কি কোনো জিনিসের ত্রুটি থাকে?

সারাদিন বড়ো আনন্দে কাটল। খাওয়া-দাওয়ার প্রচুর ব্যবস্থা। সন্ধ্যার দিকে গঙ্গার ধারের হরিসভায় ‘অজামিলের উপাখ্যান’ শুনতে গেলেন দুজনে। ব্যাখ্যাকারী নবদ্বীপের গোস্বামী বংশের লোক, বড়ো সুন্দর বোঝাবার ও বর্ণনা করবার ক্ষমতা।

ভগবান অমন মহাপাপী অজামিলকে কৃপা করেছিলেন, শুধু বিপন্ন হয়ে সে কাতরে তাঁকে মৃত্যুকালে ডেকেছিল বলে।

তিনি কি এতই পাপ করেছেন?

ভগবান নিশ্চয় তাঁকে ঠেলে ফেলে দেবেন না দূরে।

কিন্তু কোথায় কীভাবে স্থান দেবেন ভেবে পাওয়া যাচ্ছে না। আহা, জগতে এত সুখ, এত আনন্দ চারিদিকে, অথচ তাঁরই ভাগ্যে সব এমন হল কেন?

আসবার সময় রমাপতি কুণ্ডুকে বললেন—বেশ আছেন কুণ্ডুমশাই, না?

—আপনার আশীর্বাদে

—আমায় একটা চাকরি করে দিন না?

—কী রকম চাকরি?

—এই ধরুন, কারো বাড়িতে থেকে ছেলে পড়ানো, কী হাটবাজার করা।

—পাগল! আমাদের এই বয়সে কি পরের চাকরি করা চলে দাদা? কেন, চিরকাল চাকরি করে এসে বুঝি বাড়ি থাকতে ভালো লাগছে না? তা হোক। বাড়ি বসে ভগবানের নাম করুন গে।

না, বোঝাতে পারলেন না। সব কথা বলা যায় না। কাল এখান থেকে চলে যেতে হবেই।

রাত্রে আবার সেই লুচি, মাছ, মিষ্টি, দুধ। কী খাওয়া-দাওয়া এ বাড়ির! কী সব আটপৌঁরে শাড়ি পরেছে মেয়েরা! বিদ্যুতের আলো, পাখা। কত সুখে এরা আছে, কেমন খাওয়া-দাওয়া!

মুক্তকেশীকে, মেয়েদের কি যত্নে তিনি রেখেছেন? চিরকাল রেলের ঘুপচি বাসায় বাস করে এসেছে, এখন দেশে গিয়ে দু-বেলা ধান সেদ্ধ করতে হয়, ক্ষারে কেচে কাপড় পরতে হয়, থোড় আর আঁচড়ের তরকারি ছাড়া মাছ-মাংস হয় মাসে ক-দিন? হাতে পয়সা কোথায়?…কোনো ভালো জিনিস দিতে পারেন ওদের মুখে আজকালকার বাজারে?

লুচি ছিড়তে গিয়ে কেশব গাঙ্গুলীর চোখে জল এল। মাছের মুড়ো…কতকাল মাছের মুড়ো খাননি, ওদের খেতে দিতে পারেননি! কী সুখে রেখেছেন ওদের?

টুনি বলল—চমচম দুটোই খেয়ে ফেলুন দাদু, গরম লুচি নিয়ে আসি।

পরদিন সকালে রমাপতি কুণ্ডুর বাড়ি থেকে চলে গেলেন কেশব। ওঁরা বলেছিলেন সেদিনটাও থাকতে। কেশব থাকতে চাইলেন না। তাতে দুঃখ ঘুচবে না। একটা চাকরি পেলেও হত। এখানে সেজন্যেই আসা। ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গঙ্গার ধারের দিকে চললেন। একটা নির্জন স্থানে বসে কতক্ষণ ভাবলেন। জগতে কেউ কাউকে ক্ষমা করে না। মুক্তকেশীর ওপর হয়তো কোনো সময় অন্যায় কিছু করে থাকবেন, তা ওরা কখনো ভুলবে না, প্রতিশোধ নেবার সময় এলেই প্রতিশোধ নেবে।

এই কি জগতের নিয়ম?

এ জগতে কেউ কি ভালোবাসার নেই? বিচার করবার, দণ্ড দেবার সকলেই আছে?

বেলা দুপুর হল। একটা হোটেল থেকে কিছু খেলেন হুগলিতে। হুগলি থেকে গেলেন ব্যাণ্ডেলে। উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণ। রাত হয়ে আসছে। এই বর্ষায় থাকবেন কোথায়?

রাত্রে ভীষণ বৃষ্টির মধ্যে স্টেশনের একটা বেঞ্চির ওপর শুয়ে রইলেন। শীত করতে লাগল ঠাণ্ডা বাতাসে। গায়ে দেবার কিছু আনা উচিত ছিল, আনা হয়নি। ভুল হয়ে গিয়েছে।

ভুল! ভুল! সব ভুল জীবনে। চাকরি করা ভুল, বিয়ে করা ভুল, সংসার করা ভুল। সন্তান-উৎপাদন ভুল, কারো কাছে স্নেহ-মমতা আশা করা ভুল, সব ভুল।

জীবনটা একটা মস্ত ভুল। একটা মস্ত ফাঁকা—একটা মস্ত ফাঁকি। না, ও সব আর তিনি ভাববেন না।

 

চারদিন পরে।

কেশব গাঙ্গুলীর হাতের সব টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। ব্যাণ্ডেল স্টেশনের বেঞ্চিতে শুয়ে এ ক-দিন কাটল। কাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। খুব খিদে পেয়েছে। চলবেন কী করে তাঁর? শরীর ঝিমঝিম করছে খিদেতে। তিয়াত্তর বছর বয়সে খিদে সহ্য করবার মতো শক্তি নেই তাঁর।

সত্যি। বড়ো খিদে পেয়েছে। কী করবেন এখন? ঘড়িটা বেচবেন?

মনে পড়ে, তাঁর প্রথম যৌবনে তিনি ব্যাণ্ডেল স্টেশনের সিগন্যাল ক্লার্ক ছিলেন। ওই তো তাঁর সেই ঘর সেই টেবিল—সব সেই রকমই আছে। তাঁর কোয়ার্টাস এখানে ছিল না, গঙ্গার ধারে একটা ছোটো বাড়ি ভাড়া করে পিসিমাকে নিয়ে থাকতেন। বাসার কাছে একটা ঘোড়ানিমগাছ ছিল। পঞ্চাশ বছর আগেকার কথা, অর্ধ শতাব্দী! আশ্চর্য, সেই টেলিগ্রাফের টেবিলটা আজও আছে!

মুক্তকেশীর সঙ্গে তখন সবে বিয়ে হয়েছে। ঘোড়ানিমগাছের তলাকার সেই বাসায় মুক্তকেশী ঠিক সন্ধ্যা সাতটার সময় জানলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। তিনি ফিরবেন, তাঁকে দেখবে বলে।

ষোড়শী বালিকা মুক্তকেশী। কী হাসি ছিল মুখের! চোখ হাসত তাঁকে দূরে পথের উপর দেখতে পেয়ে।

আছে সেই বাড়িটা আজও? তাঁদের দুজনের অতীত যৌবনের সুখের প্রহরগুলিতে সাক্ষী সেই বাড়িটা।

একদিন বললেন—আচ্ছা মুক্ত, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো কেন জানলায়? মুক্ত বলেছিল—তুমি আসো, তাই।

-কেন?

—পথের ওপর দেখতে পেয়ে খুশি লাগে। কতক্ষণ দেখিনে।

—মন কেমন করে?

—তা করে না? একদিন মনে আছে, তাঁকে জানলা থেকে বললে—আজ কী করেছি বলো তো তোমারঃজন্যে?

—কী গো?

—ডালপুরি।

—সত্যি?

—হ্যাঁ, এসে দ্যাখো।

তারপর তিনি বাড়িতে ঢুকলে তাঁকে পাখার বাতাস দিয়ে সুস্থ করে মুক্ত পিঁড়ি পেতে বসিয়ে ১৬/১৭ খানা গরম ডালপুরি খাইয়েছিল কত যত্ন করে।

আর সেই মুক্তকেশী আজ পঞ্চাশ বছর পরে তাঁকে ‘দূর দূর’ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল। আজ যখন মুক্তকেশীর সেবা সবচেয়ে তাঁর দরকার হয়েছে, তখন!

চোখ দিয়ে জল বেয়ে পড়ল হু হু করে কেশব গাঙ্গুলীর। কেমন যেন মনে হল সব শূন্য। ওই আকাশের নিরালা মেঘগুলির মতোই তাঁর মন শূন্য, জীবন শূন্য, নিরালা, নিরবলম্বন। পৃথিবীতে কেউ তাঁর কোথাও নেই—পঞ্চাশ বছর আগের সেই ষোড়শী রূপসী মুক্তকেশীকে আজ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোন অজানা দিগন্তে সে মিলিয়ে গিয়েছে বহুকাল আগে!

জীবনটা কেন এত বড়ো ফাঁকি, এত বড়ো মিথ্যে, এত বড়ো জুয়োচুরি?

—আরে গাঙ্গুলীবাবু যে! কোথায় ছিলেন এতদিন?

কেশব চমকে পিছন ফিরে চেয়ে দেখলেন। একজন মধ্যবয়স্ক টিকিটচেকার, ত্রু–দলের মোড়ল। ওর নামটা তিনি জানতেন, এইমাত্র তিনি হঠাৎ ভুলে গেলেন। বুড়ো হয়েছেন, মুখ দেখে এখন আর ভালো বলতে পারেন না।

—বাড়ি ছিলাম ভাই।

–তারপর এখানে কী মনে করে? বউদির সঙ্গে ঝগড়া করে নাকি?

কেশবের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। কাষ্ঠহাসি হেসে বললেন—হ্যাঁ ভাই—সে-সব –তাই বটে।

—চলুন, সাহেবগঞ্জ পর্যন্ত বেড়িয়ে আসা যাক। চেক করতে বেরিয়েছি। চলুন আমার সঙ্গে। সেকেন্ড ক্লাসে তুলে দিচ্ছি। আসুন—

–খাব কোথায়?

—আপনি খাননি এখনো? বর্ধমানে খাওয়াব চলুন! জিনিসপত্র কিছু আছে?

—কিছু না।

—তবে চলুন। এক্সপ্রেস এসে পড়ল। বর্ধমানের ক্রু দের ঘর থেকে সঙ্গী লোকটির জন্যে ভাত-তরকারি এল। রাত তখন সাড়ে সাতটা। দুজনে ভাগ করে খেলেন।

সঙ্গী ব্রাহ্মণ, নাম পঞ্চানন বাঁড়য্যে, বাড়ি জয়নগর মজিলপুর। পেটভরে ভাত খেয়ে কেশব গাঙ্গুলীর যেন ধড়ে প্রাণ এল। উঃ, সোজা খিদেটা পেয়েছিল?

কী সুন্দর বর্ষা-সজল বাতাস দু-দিকের মাঠে-বনে বইছে! কুরচি ফুলের সুবাস মাঝে মাঝে আসে বাতাসে। এইসব বন, এই অন্ধকার আকাশ, নক্ষত্রের দল কেমন যেন তাঁকে বহুদূরের সঙ্গীহীন একক জীবনের বাণী এনে দিচ্ছে! নিঃসঙ্গ জীবনে কতদূরে কোথায় যেন যাচ্ছেন তিনি। আর বাড়ি ফিরবেন না। আর মুক্তকেশীর হাতে হাটের থলে তুলে দেবেন না। তাঁর সংসার করা ফুরিয়ে গিয়েছে। অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রা শুরু করলেন আজ তিনি।

সেকেন্ড ক্লাস গাড়ি তে তিনি একা। বেশ লাগছে অনেক দিন পরে। গত এক বছর শুধু মাথায় মোট করে হাট ঘুরেছেন, বাজার করেছেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রেশনের আটা, চিনি, কেরোসিন তেল এনেছেন—যাদের জন্যে, তারা আজ এই তিয়াত্তর বছর বয়সে তাঁকে পারলে ঘরের বার করে দিতে! পয়সার তাঁর দরকার নেই। পয়সা সব মুক্তকেশীর হাতে থাকুক। তাঁর পয়সাকেই ওদের দরকার, তাঁকে নয় তো! বেশ, পয়সাই রইল, চললেন তিনি।

…সাঁইথিয়া।

অনেক রাত হয়েছে। এবার একটু ঘুমুলে হত না। সারাদিন টো টো করে বেড়িয়েছেন ব্যাণ্ডেলে। এই সাঁইথিয়াতে একবার তিনি রিলিফে এসেছিলেন মনে আছে, বহুকাল আগে। তখন মুক্ত বলে দিয়েছিল, রোজ একখানা করে চিঠি দিয়ো। আটখানা পোস্টকার্ড সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ মনে পড়ে গেল কথাটা।

সাঁইথিয়াতে তখন বিধুভূষণ রায় ছিলেন স্টেশনমাস্টার। তাঁর বাড়িতেই খাওয়া দাওয়া হত। বিধুবাবুর ছেলে সদানন্দ তাঁর চেয়ে কিছু ছোটো, সদানন্দ ও তিনি একসঙ্গে তাস খেলতেন কাছাকাছি একজন ভদ্রলোকের বাইরের ঘরে বসে।

একবার একটা পাকা কাঁঠাল বিধুবাবু নামিয়ে নিলেন গার্ডের গাড়ি থেকে। কাঁঠালটা আধপচা। সদানন্দ বললে—দাদা, মা বলেছেন, ক্ষীর-কাঁঠাল খাবেন ওবেলা।

কেশব বললেন,—দূর! ওর বিচি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না—

—আমি বলছি পাওয়া যাবে।

—কখখনো না।

—বাজি?

—কি, বলো?

-বউদিদিকে তিনদিন চিঠি দিতে পারবেন না দাদা। অত কি টেবিলে বসে লেখেন? খুদে খুদে লেখাতে একখানা পোস্টকার্ডে একখানা খামের কাজ করে নেন। ফেলবেন বাজি?

রাজি হননি কেশব। মুক্তকে চিঠি না-দিয়ে থাকা? অসম্ভব। সে একা সেই ব্যাণ্ডেলের সেই ছোট্ট বাসাতে বসে তাঁর জন্যে দিন গুনছে, রোজ ঘোড়ানিমগাছটার তলায় পিয়োনের আবির্ভাবের অপেক্ষায় বসে থাকে খাওয়া দাওয়ার পর জানলাটিতে। তাকে তিনদিন চিঠি না-দিয়ে বঞ্চিত করতে পারবেন না। তা কখনই হয় না।

সে-সব দিন কী খুব দূরে চলে গিয়েছে? বড্ড পেছনে ফেলে এসেছেন কি? স্বপ্নের মতো মনে হল—আবছায়া আবছায়া, সব মিলে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মুক্তকেশী…সান্ট…ব্যাণ্ডেল… তিনপাহাড়। প্রথম যৌবন…তিয়াত্তর বছরের বার্ধক্য! স্বপ্ন।

কাঁদছেন নাকি আবার তিনি?…হুঁ, তাই তো, কোটের গলার কাছটায় ভিজে!, না, কাঁদবার কী আছে? বুড়ো বয়সে চোখ পানসে হয়ে যায়। কাঁদবেন কেন তিনি?

—গাঙ্গুলীবাবু, ঘুমোলেন? অমনভাবে শুয়ে কেন? শরীর খারাপ হয়নি তো?

পঞ্চানন চক্রবর্তী। চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে ঢুকল। সাঁইথিয়া থেকে এইমাত্র ট্রেন ছেড়েছে।

কেশব যেন চমকে উঠলেন। বললেন—না তো!

—একটু চা খেয়ে নিন আগের স্টেশনে।

—এত রাত্রে চা? পাগল হয়েছ ভায়া? আমি চা খাইনে এত রাত্তিরে। তুমি খাও। ঘুমুবে না?

—আরও গোটাকতক স্টেশন পার হয়ে যাক। এখন না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।

পঞ্চানন চক্রবর্তী ত্রু চলে গেল। গাড়ি ঝড়ের বেগে চলেছে। বাইরে একপশলা বৃষ্টি হচ্ছে বেশ জোরে। ঠাণ্ডা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির ছাট আসছে জানলা দিয়ে কামরার মধ্যে। কী একটা ফুলের সুগন্ধ এল একঝলক।

আঃ, কী সুন্দর আরাম!… ঘুমিয়ে আরাম আছে এমন জায়গায়। বুকের মধ্যে কেমন করছে কেন, কে জানে? নির্জন গাড়ি। তিনপাহাড়ে কত রাত্রে গাড়ি পোঁছুবে? বিয়ের দু-তিন বছর পরে তিনপাহাড়ে ছিলেন তিনি মুক্তকে নিয়ে, সান্টুকে নিয়ে। সেই সময়ের কথা কখনো ভুলবেন না তিনি।

ব্যাণ্ডেল আর তিনপাহাড়। জীবনে এই দুই স্বর্গ। দুটি স্বর্গের দুটি অমর কাহিনি তাঁর বুকে লেখা রয়েছে। পঞ্চানন ঘুমিয়ে পড়লে তিনপাহাড়ে তিনি নেমে পড়বেন।

তিনপাহাড়ে এই বর্ষাকাল কাটে সেবার। একটা কী পাহাড়ের ওপর কী ঠাকুর ছিলেন। মুক্ত ও তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। মুক্ত বললে—খাবে কি? পাহাড়ের নীচে চড়ইভাতি করব?

রান্না করতে করতে বৃষ্টি এল। একটা পাকুড়গাছের তলায় রান্না হচ্ছিল। স্টেশনমাস্টার ছিলেন শশিপদ সামন্ত, মেদিনীপুরে বাড়ি।

তাঁর দুই ছেলে ননী ও হাবু ছিল সঙ্গে।

হাবু কাঠ ভেঙে নিয়ে এল পাহাড়ের ওপর থেকে। মুক্ত খিচুড়ি রাঁধতে গিয়ে ধরিয়ে ফেললে। তাই নিয়ে কী হাসাহাসি!

পাকুড়গাছের গুড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে মুক্ত চোখ পাকিয়ে বললে,–তুমি খাবে না?

—কে বলেছে?

—ননী হাবু বলেছে।

—বাজে কথা।

চমৎকার চড়ুইভাতি।

—খেয়ে বলতে পারবে না যে, খিচুড়ি এঁটে গিয়েছে।

—না গো, বলব না। দিয়েই দ্যাখো।

মুক্ত হি হি করে হেসে উঠে বললে–ও পেটুকের পাল্লায় পড়লে খিচুড়ির হাঁড়িই কাবার হবে, তা বুঝতে পারছি—বসো। বসে যাও। ভালো সরের ঘি এনেছি, খিচুড়ি দিয়ে খাবে বলে। কিন্তু সত্যি, ধরে গেল বলে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।

—পাগল! দিয়েই দ্যাখো না। মন খারাপ করতে হবে সেজন্যে নয়, আও বেশি করে রাঁধ-নি কেন সেইজন্যে।

—বেশ, খাও না। আবার না-হয় চড়িয়ে দেব।

মনে আছে সেই পাহাড়ের ওধারে কোথায় ছিল কদমফুলের গাছ। ননী প্রথমে নিয়ে এল এক গুচ্ছ।

মুক্ত বললে—বাঃ, চমৎকার! খোঁপায় গুঁজব।

তারপর চুপি চুপি বললে—কিন্তু সে ফুল তোমায় নিজের হাতে তুলে এনে দিতে হবে।

—ঠিক এনে দেব। খাওয়া হয়ে যাক। যাবার সময়ে নিয়ে আসব—

পঞ্চাশ বছরের পর থেকে সেই প্রথম যৌবনের ফুটন্ত কদমফুলের সুবাস আজকার এই বর্ষা-সজল বাতাসে বৃষ্টির ছাটের সঙ্গে যেন ভেসে আসে।

সে বর্ষাদিনের সুন্দর অপরাহুটি, পাহাড়ের নীচের সেই পাকুড়গাছটি আজ স্বপ্ন হয়ে গিয়েছে। সে মুক্তকেশীও…

কখন যেন মুক্ত এসে ওর শিয়রে দাঁড়াল। সপ্তদশী তরুণী সুন্দরী মুক্তকেশী। হাসিতে মুক্তোর মতো দাঁতগুলি ঝকঝক করছে যেন। স্নেহভরে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললে—তুমি কদমফুল এনে দেবে তো? তুমি এনে দিলে আমি খোঁপায় পরব—ভুলো না যেন, ভুলো না।

তারপর আবার চোখ নীচু করে বলছে—রোজ একখানা করে চিঠি দিতে হবে কিন্তু। আমি থাকতে পারব না—সত্যি, বলো আমাকে ছুঁয়ে দেবে তো?

পরক্ষণেই বিরলদন্তী পক্ককেশী বৃদ্ধা মুক্তকেশী হাঁটুর ওপর গামছা পরে তাঁকে ঝাঁটা উঁচিয়ে মারমুখী হয়ে বলছে—বেরো, বেরো, আপদ দূর হও বাড়ি থেকে। মলেই বাঁচি-মরণ হবে কবে তোমার? যম নেয় না কেন?

ঘুমের মধ্যেও চমকে উঠলেন কেশব। মস্ত একটা ঝাঁকুনি লাগল গাড়ি টায়।

অনেক রাতে তিনপাহাড় স্টেশনে এসে গাড়ি দাঁড়ালে তিনি নেমে পড়লেন। দৌড়ে ছুটে গেলেন প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম প্রান্তের সেই বুড়ো ঘোড়ানিমগাছটার দিকে। আধো-অন্ধকারে গাছের তলায় খুঁজে দেখলেন।

—সান্টু—বাবা সান্টু!

আজ কোথায় গেল খোকা?

পঞ্চাশ বছর আগে সে এই ঘোড়ানিমগাছটার তলায় যে খেলা করত!

যেন শান্তি পেলেন কেশব গাঙ্গুলী যৌবনের হারানো দিনগুলোর মধ্যে আবার ফিরে এসে, তিনপাহাড়ের নির্জন প্রান্তরে, প্ল্যাটফর্মে, অন্ধকার আকাশের তলায় এসে। তিনি আবার ছাব্বিশ বছরের যুবক কেশব গাঙ্গুলী, এই ইস্টিশনের তার-বাবু —বুকে কত আশা, কত বল, কত উৎসাহ, চোখে কত স্বপ্ন! তাঁর খোকা সন্টু আছে কাছে, তার তরুণী মা মুক্তকেশী আছে।

সব তিনি ফিরে পেয়েছেন।

—সান্টু, আয় আমার কোলে আয়। রামদেও এখন তোকে বাসায় নিয়ে যাবে। খেলা করে বেড়া প্ল্যাটফর্মে।

প্ল্যাটফর্মের ঘোড়ানিমগাছটার তলায় দু-দিন কেশব গাঙ্গুলী শুয়ে রইলেন।

নির্জন স্টেশন, বিশেষ কেউ লক্ষ করত না। সত্যি, কি অপূর্ব আনন্দে কাটল এই দুটো দিন। সব ফিরে পেয়েছিলেন আবার।

পঞ্চাশ বছর আগেকার হারানো সব দিনগুলি।

 

তিনপাহাড়ের বিহারি স্টেশনমাস্টার একদিন কুলিদের কাছে খবর পেলেন, কে এক বুড়ো বাঙালিবাবু জ্বরে বেহুশ অবস্থায় নিমগাছটার তলায় শুয়ে আছে। কোনো পরিচয় পাওয়া গেল না তখন রোগীর কাছে। আরও দু-দিন পরে স্টেশনের মুসাফিরখানায় লোকটি মারা গেল জ্বরের তাড়নায় এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।

তখন মৃত ব্যক্তির শিয়রের তলা থেকে রেলের বোতামযুক্ত কোট বের হওয়াতে চারধারে জানাজানি হল এবং ত্রু-ম্যান পঞ্চানন চক্রবর্তী এসে পড়ে সব পরিচয় দিলে, কিন্তু সে দেশের ঠিকানা কিছুই জানে না, দিতেও পারলে না কোনো খবর। ব্যাণ্ডেল স্টেশনে দেখা হয়েছিল এই পর্যন্ত, কোথায় থাকতেন সে তখন বলতে পারলে না।

আরও কয়েকদিন পরে মুক্তকেশী ও মেয়েরা টেলিগ্রাম পেয়ে এসে পড়লেন যেদিন তিনপাহাড়ে, তার কয়েকদিন আগে কেশব গাঙ্গুলীর অস্থি ক-খানা সক্রিগলি ঘাটের গঙ্গায় স্থান পেয়ে গিয়েছে রেলের বাবুদের সহযোগিতায়। মুক্তকেশী শুধু ফিরে পেলেন কুরুভাইজার ফ্রেরিসের সেই ঘড়িটা।

2 Comments
Collapse Comments
মশিউর রহমান May 18, 2020 at 9:15 pm

কেন যেন মনে হয় বিভূতিভূষণের জীবনটা খুবই দুঃখ কষ্টে গিয়েচে।কারণ তাঁর প্রায় প্রত্যেকটি লেখাতেই মর্মবেদনা,দুঃখের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।এই রচনাটি যেমন খুবই কষ্টদায়ক।কান্না না এসে পারে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *