ভদ্রলোক

ভদ্রলোক

আসল ভদ্রতা হল মুখ না খুলে হাই তুলতে পারা। এত দামি কথা, সবাই বুঝতে পারছেন, মোটেই আমার নয়। এক ফাজিল মনীষী এই উক্তি করেছিলেন।

কিন্তু ব্যাপারটা অসম্ভব। মুখ না খুলে হাই তোলা যায় না। কেউ পারবে না। তবু চূড়ান্ত এটিকেটের সেটাই নাকি নিদর্শন।

অবশ্য এটিকেট ঠিক ভদ্রতা নয়। সেটা একটা অন্য জিনিস, পুরোপুরি বিলিতি ব্যাপার। ভরা গ্রীষ্মের দুপুরবেলায় দুঃসহ লোডশেডিংয়ের গরমে নিজের বাসায় অন্য লোকের সামনে জামা গায়ে দিয়ে বসে থাকা, নিমন্ত্রণ বাড়িতে ভরপেট না খাওয়া, সামনে সুস্বাদু খাবার থাকা সত্ত্বেও এবং হঠাৎ কখনও ভরপেট খেয়ে ফেললে ঢেকুর না তোলা—এইসব হল এটিকেট, যে-শব্দের কোনও বাংলা প্রতিশব্দ নেই, ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে বিলিতি ভদ্রতা।

ভদ্রতার কথা পরে হবে। আগে ভদ্রলোকের কথা বলি। এটিকেটগ্রস্ত ভদ্রলোকের কথা।

ভদ্রলোকের সমস্যা অনেক। তাকে পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরতে হয়, জুতো পায়ে দিতে হয়, হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেউ খাবার দিলে তাকে টাকা দিতে হয় অন্যদের আপত্তি সত্ত্বেও। সে বাসে উঠলে চেনা লোকের মুখোমুখি হলে তার টিকিট নিজের সঙ্গে কাটে, সে সবার আগে সিট থেকে উঠে মহিলা বা বৃদ্ধ-যাত্রীকে জায়গা ছেড়ে দেয়।

প্রিয় পাঠিকা, আপনার কি এই ভদ্রলোককে বেশ চেনা-চেনা মনে হচ্ছে? তবে অনেকদিন দেখা হয়নি তার সঙ্গে—তাই নয়? এই ভদ্রলোককে আমি শেষবার দেখেছিলাম এক অগ্নিকাণ্ডের রাত্রিতে।

আমাদের পাশের গলিতে একটা পুরনো দোতলা বাড়িতে আগুন লেগেছিল। যতটা আগুন তার চেয়ে ধোঁয়া অনেক বেশি। বাড়ির পিছনে একটা খড় কাটার কল ছিল একটা খাটালের পাশে। ভেজা খড়ে আগুন লেগে ধোঁয়া বের হচ্ছিল, ফলে চরাচর অন্ধকার।

ধোঁয়ার আশে-পাশে দু’-একটি লেলিহান শিখা। আমরা দৌড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম সেই বাড়ির সামনে, নিরুপায় দর্শক। তবে একটা সান্ত্বনা ছিল যে বাড়ির সবাই অক্ষত দেহে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

কিন্তু একটু পরে শোনা গেল সান্ত্বনাটা সঠিক নয়। দোতলার উপরে একটা চিলেকোঠা ঘর আছে, সেখানে এক বৃদ্ধা মহিলা থাকেন, বাড়িওয়ালার পিসিমা তিনি, গোলমালে নেমে আসতে পারেননি। বাড়ির যে পাশটায় আগুন লেগেছে তার অন্যপাশে ছাদ থেকে একটা ঘোরানো লোহার সিঁড়ি রয়েছে। সেই সিঁড়ির দিকে আগুন এখনও যায়নি, যদিও বেশ ধোঁয়া রয়েছে। বৃদ্ধ মহিলার পক্ষে সেই ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে এই ধোঁয়ার অন্ধকারের মধ্যে নেমে আসা অসম্ভব।

কী করা যায়, দমকল কখন আসবে, এই ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখলাম আমাদের মধ্য থেকে সেই ভদ্রলোক নাক পর্যন্ত মুখ রুমালে ঢেকে দ্রুত লোহার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন এবং অল্প পরেই তিনি ভদ্রমহিলাকে টেনে নিয়ে লোহার সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলেন। সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নেমে আসতে আসতে আচমকা ভদ্রলোক একটা হোঁচট খেয়ে সিঁড়ি টপকিয়ে নীচে পড়ে গেলেন। তখন অবশ্য মাত্র চার-পাঁচ ধাপ বাকি ছিল। বৃদ্ধা মহিলা সামলে নিয়েছিলেন। তিনি সিঁড়ির পাশের একটা লোহার রেলিং আঁকড়িয়ে কোনওরকমে ধাক্কা বাঁচালেন। অন্য একজন দৌড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রমহিলাকে নামিয়ে নিয়ে এল।

আমরা ততক্ষণে ছুটে গিয়ে ভূপতিত ভদ্রলোককে তুললাম। আমাদের কিছু করতে হল না, তিনি নিজেই উঠলেন। বিশেষ চোট লাগেনি।

আমরা তখন গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে তাঁর সাহসের গুণগান করতে লাগলাম। কিন্তু তিনি একবাক্যে আমাদের থামিয়ে দিলেন। বললেন, ‘সাহসী-ফাহসি যাই বলুন এটা কি ভদ্রলোকের কাজ করলাম, ভদ্রমহিলার আগে নেমে এলাম।’ তাঁর পা হড়কিয়ে নীচে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা যাতে সহানুভূতি না দেখাই তাই তিনি ঘুরিয়ে একথাটা বললেন, সেটা আমরা বুঝলাম এবং বুঝতে পারলাম যে তিনি ভদ্রলোক।

অন্য এক ভদ্রলোকের গল্প বলি। একটা পানের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে তিনি দেখলেন দোকানের পাশে কোথাও সিগারেটে আগুন ধরানোর জন্যে জ্বলন্ত দড়ি নেই। দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, ‘না, দড়ি রাখি না।’

তখন ভদ্রলোক দোকানদারকে বললেন, ‘তা হলে দেশলাইটা দিন।’ দোকানি গম্ভীর মুখে চুপ করে রইলেন। তারপর দ্বিতীয়বার চাইতে সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন, ‘দেশলাই নেই।’

এবার ভদ্রলোক পকেট থেকে একটা সিকি বার করে বললেন, ‘আমাকে একটা নতুন দেশলাই দিন।’ সিকির বিনিময়ে দোকানদার নির্বিকারভাবে একটা দেশলাই ভদ্রলোককে দিলেন।

তখন ভদ্রলোক সেই দেশলাই খুলে একটা কাঠি বার করে জ্বালিয়ে সিগারেটটা ধরালেন। তারপর দেশলাইটা হতবাক দোকানদারকে দিয়ে বললেন, ‘এটা রেখে দিন। এরপর আমার মতো কোনও ভদ্রলোক যদি সিগারেট ধরাবার জন্যে দেশলাই চায় তাঁকে দেবেন দেশলাইটা।’

ভদ্রলোকের কাহিনী ভদ্রমহিলাকে বাদ দিয়ে হতে পারে না। এর পরের আখ্যানে দু’জন ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রলোক আছে।

এক তন্বী যুবতী ট্রামে যাচ্ছিলেন। তন্বী বললে কম বলা হয়, তিনি রীতিমতো রোগা। তখন সকাল সাতটা, সাড়ে সাতটা। ট্রামে-বাসে তেমন ভিড় শুরু হওয়ার সময় হয়নি। ডিপোয় উঠে একটা লম্বা সিটে যুবতী একাই বসেছিলেন। একটু পরে লোক উঠতে লাগল, দুই বিশালবপু ভদ্রলোক যথাসময়ে যুবতীর দুই পাশে বসলেন। তাঁদের দেহের চাপে যুবতীর বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল, একদম কুঁকড়ে গিয়েছিলেন তিনি।

হঠাৎ মুশকিল আসান হল। এক আধ-চেনা স্থূলকায়া মহিলা, শহরতলির কোনও একটা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, তিনি এই সময়ে ট্রামে উঠেছেন।

প্রধানা শিক্ষিকাকে দেখে যুবতী উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘দিদি এখানে আসুন, আমার সিটে বসুন।’ যুবতী উঠে দাঁড়াতে সামান্য যে ফাঁকটুকু তিনি কায়ক্লেশে দখল করে আসীন ছিলেন সেটুকু বুজে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।

প্রধানা শিক্ষিকা সেই অপসৃয়মাণ বসার জায়গার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বসব নিশ্চয়ই, কিন্তু তুমি এই দুই ভদ্রলোকের মধ্যে কার কোলে বসেছিলে এতক্ষণ, সেটা বলে দাও।’

অবশেষে ভদ্রতার প্রশ্নে অল্প বয়সের একটা দুঃখের কথা মনে পড়ছে।

সাল ১৯৫০। স্থান টাঙ্গাইল টাউন, সদর রাস্তা (কোনও অজ্ঞাত কারণে যার নাম ডিক্টোরিয়া রোড)। সময় খারাপ। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘুর সবচেয়ে খারাপ সময়।

আমি ইস্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়ি, কৈশোর প্রায় শেষ। সদর রাস্তা দিয়ে আপনমনে যাচ্ছি। উলটো দিক থেকে আসছে মাছের বাজারের প্রাক্তন নিকারি বর্তমানে আনসার অ্যাডজুটান্ট আসগর মিঞা। তাকে দেখেছিলাম, কিন্তু খেয়াল করিনি। খেয়াল করার বয়েস সেটা নয়।

কিন্তু আসগর নিকারি খেয়াল করেছিল। তখন তার আঙুল ফুলে কলাগাছ, তখন তার পুঁটিমাছ ফুলে রুইমাছ।

আসগর নিকারি রাস্তায় আমাকে ধরল এবং সগর্জনে জানতে চাইল তাকে আদাব না দিয়ে আমি কোন সাহসে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি, আমার মতো বেয়াদপ, বেতমিজেরা পাকিস্তানের শত্রু।

এইসব কটুবাক্য বলে আসগর নিকারি আমাকে নির্দেশ দিল তাকে দু’শোবার আদাব জানাতে। আমার বেয়াদপির সেটাই সাজা।

আমাকে রক্ষা করলেন স্থানীয় মুসলিম লিগের কর্মকর্তা সফিউল্লা সাহেব। তাঁরও তখন খুব রমরমা, কিন্তু তাঁর চক্ষুলজ্জা ছিল, এতদিন পরে মনে হয় তিনি ভদ্রলোকও ছিলেন।

সেই ডামাডোলের বাজারেও মুসলিম লিগ কর্তা সফিউল্লা সাহেবকে আসগর নিকারি রীতিমতো সমীহ করত।

সফিউল্লা সাহেব আমার দুর্গতি দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারপর আসগর যখন আমাকে দু’শোবার আদাব দেবার নির্দেশ দিল, তিনি ব্যাপারটায় মাথা গলালেন। আসগরকে বললেন, ‘ও যদি দু’শোবার তোমাকে আদাব দেয়, তোমাকেও সঙ্গে সঙ্গে দু’শোবারই আদাব ফেরত দিতে হবে, আদাবের সহবত মানতে হবে।’

এরপরে সেদিন নিকারি নিরস্ত হয়েছিল। একজন কিশোরের পক্ষে দু’শোবার কপালে হাত ঠেকিয়ে আদাব অভিবাদন জানানো তেমন দুঃসহ হয়তো নয়, কিন্তু প্রৌঢ় আসগরের সহবত মেনে সেটা ফিরিয়ে দিতে জিব বেরিয়ে যেত।

এই ‘সহবত’ শব্দটা আজকাল শুনি না। আগে শুনতাম এ লোকটা সহবত জানে না, ও বাড়ির ছেলেদের সহবত খুব ভাল। শব্দটার সঠিক মানে জানি না। তবে অনুমান করতে পারি সহবতই ইংরেজিতে এটিকেট।

মনে সন্দেহ হওয়াতে অভিধানের পাতা খুলে দেখছি সহবত শব্দের মানে হল ‘সংসর্গ হইতে প্রাপ্ত শিক্ষা।’ শব্দটি বাংলায় এসেছে নবাবি আমলে আরবি শব্দ সেহিবৎ থেকে।

অপরদিকে এটিকেট শব্দটি ইংরেজিতে এসেছে ফরাসি ভাষা থেকে। ফরাসি আর ইংরেজিতে শব্দটির একই বানান (etiquette) এবং অভিধানগত অর্থ হল সভ্যসমাজে ব্যক্তিগত আচরণবিধি।

এটিকেট ব্যাপারটা বোঝানো খুব সোজা না। বিশেষ করে আমার মতো একজন আধাবর্বর, মফস্বল চরিত্রের ব্যক্তির পক্ষে। আমার কোনও এটিকেট নেই। আমি কোনওদিন কেউ এলে উঠে দাঁড়াই না। প্রকাশ্য ভদ্র সমাজে হাই তুলতে হলে হাই তুলি, হাঁচতে হলে হাঁচি। গরমের দিনে বাসায় খালি গায়ে থাকি; কোনও ভদ্রমহিলা ভাদ্রবধূ, শালাজ বা প্রতিবেশিনী কেউ এলেই জামা বা গেঞ্জি গায়ে দিই না; মুনমুন সেন কিংবা শ্রীদেবী এলেও গায়ে দেব না। শুধু আমার যৌবনস্বপ্ন এক রমণীরতন আছেন, তিনি এই অধমের গৃহে যদি কখনও আসেন সেজন্যে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আমার একটা ড্রেসিং গাউন আছে, সেটা জীবনে প্রথম গায়ে চড়াব।

ভদ্রতাবোধের চূড়ান্ত ঘটেছিল পুরানো চৈনিক সমাজে। একটা নমুনাই যথেষ্ট।

এক লেখকের রচনা সম্পাদকের পছন্দ হয়নি। তিনি লেখককে পাণ্ডুলিপিটি ফেরত পাঠাচ্ছেন, সঙ্গে এই বিনীত পত্র: হে সুমহান লেখক, হে বাণীর বরপুত্র, চন্দ্রকিরণের মতো স্নিগ্ধ ও কোমল, সূর্যরশ্মির মতো উজ্জ্বল আপনার প্রতিভা। আপনার রচনাসমূহ আপনার প্রতিভার মতোই ভাস্বর। আমরা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে এবং অভিনিবেশ সহকারে আপনার পাণ্ডুলিপি পাঠ করেছি। পাঠ করে আনন্দিত হয়েছি, পুলকিত হয়েছি, চমকিত হয়েছি। আমরা এই বিশাল ত্রিভুবনের তেত্রিশ কোটি দেবতার নামে শপথ নিয়ে বলতে পারি যে এ রকম মহৎ রচনা আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও পাঠ করার সুযোগ পাইনি। ভবিষ্যতে আর কখনও সে রকম সুযোগ আসবে কিনা তাও জানি না।

অথচ আপনার এই অসামান্য রচনা আজ আপনাকে আমাদের ফেরত দিতে হচ্ছে। তার কারণও বড় সাংঘাতিক। আপনার এই রচনা আমাদের পত্রিকায় যদি আমরা এখন ছাপি, ভবিষ্যতে আমাদের পাঠকেরা প্রত্যেক সংখ্যায় সর্বদাই এইরকম উচ্চমানের লেখা প্রত্যাশা করবে। আমরা তাদের সে প্রত্যাশা সহস্র বৎসরেও আর পূরণ করতে পারব না।

অতএব অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে, আশাহত মনে ও ভগ্নহৃদয়ে আপনার এই অমূল্য রচনা আপনাকে প্রত্যর্পণ করছি। আপনার কাছে আমরা শতকোটি ক্ষমাপ্রার্থী। আশাকরি আপনার মহৎ হৃদয়ের গভীরতম উদারতায় আপনি আমাদের অবশ্যই মার্জনা করবেন।

ইতি

আপনার শ্রীচরণে চিরকৃপা প্রার্থী

আপনার ক্রীতদাসের দাসানুদাস

হতভাগ্য সম্পাদক

এটিকেট নিয়ে সাহেবরাও কিছু কম মাথা ঘামান না। হাঁটা-চলা, কথাবার্তা সমস্ত আচরণ সবই এটিকেটের আওতায় পড়ে। বিলিতি পত্রিকাগুলোতে এটিকেট-বিষয়ক প্রশ্নোত্তরের নিয়মিত ধারাবাহিক কলম আছে, যেখানে জাঁদরেল ভদ্রলোকেরা এবং অভিজাত সুন্দরীরা ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ বিষয়ে পাঠকদের জিজ্ঞাসার জবাব দেন।

খাওয়ার টেবিলে কাঁটা-চামচের সুষ্ঠু ব্যবহার, মাথার টুপি কখন খুলতে হবে, মহিলাদের সামনে কীভাবে হাঁচতে বা কাশতে হবে, ঘরে মহিলা প্রবেশ করলে কী করতে হবে, কতটা উঠে দাঁড়াতে হবে, কতটুকু এগিয়ে যেতে হবে, দরজা পর্যন্ত গিয়ে তাকে অভ্যর্থনা করে আবার দরজা আড়াল না করে কীভাবে সেই ভদ্রমহিলাকে পথ ছেড়ে দিতে হবে ভেতরে আসার জন্যে এবং কী করতে হবে তিনি যখন আবার যাবেন—এ সমস্তই সৌজন্য বিধির পর্যায়ে পড়ে।

এখনও আছে কিনা জানি না, আগেরকালে বিলেতে এটিকেট শিক্ষার ইস্কুল পর্যন্ত ছিল। এইরকম এক ইস্কুলে প্রাচ্যদেশীয় এক মহারাজপুত্রকে অনেকদিন আগে একসময়ে ভর্তি করা হয়েছিল।

সে ছিল বেশ কিছুটা নির্বোধ এবং ততোধিক বেয়াড়া। চার সপ্তাহের কষ্টকর পাঠক্রমে সে প্রায় কিছুই আয়ত্ত করতে পারেনি। দেশে ফিরে আসার পর তার মহামান্য বাবা তাকে প্রশ্ন করলেন, ‘কুমার কী শিখলে এটিকেট ইস্কুলে?’ কুমার অনেক চিন্তা করে, অনেক মাথা চুলকিয়ে অবশেষে বলল, ‘খুব কঠিন ব্যাপার মহারাজ, সব গুলিয়ে গেছে।’

মহারাজ নিরাশ হয়ে বললেন, ‘কিছুই মনে পড়ছে না তোমার?’ কুমার বলল, ‘শুধু একটা জিনিস মনে পড়েছে। মেমসাহেব বলেছিলেন শীর্ষাসনের সময় টুপি মাথায় না দিতে।’

ভদ্রতা সৌজন্য তথা এটিকেটের ভাল উদাহরণ হল নীচের চিঠিটি, এই উদাহরণটি দিয়ে এই নিবন্ধ শেষ করছি।

‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে শ্রীযুক্ত কমলচন্দ্র জানাচ্ছেন যে শ্রীমতী কমলেকামিনীর আমন্ত্রণ তিনি বিশেষ ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্যে গ্রহণ করতে পারছেন না এবং এই সুযোগ দেওয়ার জন্যে শ্রীযুক্ত কমলচন্দ্র শ্রীমতী কমলেকামিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।’…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *