মা

ছিলেন নিভৃত গ্রামে। সর্বক্ষণ সংসারের খুঁটিনাটি কাজে
মগ্ন, আসমানে রৌদ্র কাঁপে, মেঘের পানসি ভাসে, কখন যে ক’টা বাজে
থাকে না খেয়াল কিছু। দৃশ্য খুবই চেনাশোনা, মৃদু রঙমাখা,
নানা সূক্ষ্ম সূত্রে গাঁথা; চুলায় চাপানো হাঁড়ি পুঁইশাক-ঢাকা
মাছ পড়ে গোটা দুই শিক্ষক স্বামীর পাতে। লাউয়ের মাচায়
কখনো রাখেন চোখ, কাঁঠাল গাছের ডালে হলদে পাখি লেজটি নাচায়
ঘন ঘন, বেলা বাড়ে। ইঁদারার পানিতে গোসল সেরে কাঁচা-পাকা চুলে
চালান কাঁকই দ্রুত আর ভাবেন খোকন স্কুলে
নামতা মুখস্থ করে। বৈয়মে রাখেন নকশি পিঠা, মনে পড়ে
বড় ছেলেটির কথা, চোখ যার বড় বেশি জ্বলজ্বলে, পড়াশোনা করে যে শহরে।

এ বাড়ির গণ্ডি ছাড়া কোথায়ও পড়ে না তাঁর পায়ের পাতার
কালো ছাপ, সারাক্ষণ থাকেন আড়ালে আ খসে না মাথার
কাপড় ভুলেও কারো সমুখে কখনো। বেঁচে নেই বাপজান
আম্মাও ওপারে আজ, তবু মাঝে-মাঝে প্রাণ করে আনচান।

ক্রুদ্ধ দেবতার মতো তোলে মাথা সারা দেশ।
কত যে খবর আসে, কত আত্মদান
রাঙায় দেশের মাটি; সন্তানের রক্তমাখা জামার আহ্বান
টানে গ্রাম্য জননীকে। অনেক পেছনে রইল প’ড়ে
লাউয়ের সবুজ মাচা, নদী, মাঠ,
কলাইয়ের ক্ষেত আর পুকুরের ঘাট।
পড়ছে পায়ের ছাপ আজ তাঁর জনপথে, আনাচে-কানাচে, সবখানে
মেলালেন পুত্রহীন হৃদয়ের দীপ্ত কান্না স্লোগানে, স্লোগানে।