১১. কখনও হতাশ হতে নেই

ফিলিয়াস ফগের কুড়ি ঘণ্টা দেরি হয়ে গেলো। পাসপার্তু খুব দুঃখিত হয়ে পড়লো। ভাবতে লাগলো, আমার জন্যেই সর্বনাশ ঘটলো ফিলিয়াস ফগের।

ফিক্স ফগকে বললেন : সত্যিই কি আপনার তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার? বিলেতের ডাক-জাহাজ ধরতে চান বুঝি? তাহলে এগারো তারিখের আগেই আপনার নিউইয়র্ক পৌঁছুনো দরকার।

হ্যাঁ। ডাক-জাহাজের ওপরই আমার সর্বস্ব নির্ভর করছে।

যদি এ-সব বাধা-বিপত্তি না-ঘটতো তাহলে তো এগারো তারিখ ভোরেই নিউইয়র্ক যেতে পারতেন।

হ্যাঁ, তাহলে আমার হাতেই বরং আরো বাবোঘণ্টা সময় বেশি থাকতো।

আপনার তো সাকুল্যে কুড়ি ঘন্টা মাত্র দেরি হয়েছে-তার থেকে বারো ঘণ্টা বাদ দিলে থাকে আট ঘণ্টা। এই আট ঘণ্টার বিলম্বে যাতে আপনার কোনো ক্ষতি না-হয়, তা কি আপনি করতে রাজি আছেন?

নিশ্চয়ই। কিন্তু কী করে সে আট ঘণ্টা পুষিয়ে নেবো?

যখন বরফ পড়েছে, তখন স্লেজ গাড়ি বেশ চলবে। হাওয়াও আছে, পাল তুলে দিলে রেলের মতোই দ্রুতগতিতে যাবে। একটা লোক তার স্লেজ ভাড়া দিতে পারে

বলছিলো।

স্টেশনের কাছেই স্লেজ-ওলার বাড়ি। ফগ স্লেজ দেখে তো খুব খুশি হয়ে পড়লেন। গাড়িটা বেশ ভালোই, অনায়াসেই পাঁচ-ছজন লোক ধরবে তাতে। গাড়ির ঠিক মাঝখান থেকে একটা মাস্তুল উঠেছে উপরে, আর তাতে ঝুলছে বড়ো-একটা পাল। হালও ছিলো গাড়ির।

স্লেজ-ওলা বললে : পশ্চিম থেকে হাওয়া বেশ জোরে বইছে, বরফও জমে খুব শক্ত হয়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা ওমাহা স্টেশনে যেতে পারবো। ওমাহায় নিউইয়র্ক আর শিকাগোর বহু ট্রেন পাওয়া যায়।

তখন বেলা আটটা। ফগ তখুনি যাত্রার ব্যবস্থা করলেন। সবাই স্লেজে উঠে বসলেন। স্লেজ-ওলা পাল তুলে দিলে। প্রবল হাওয়ায় পাল ফুলে উঠলো। দুলতে লাগলো স্লেজ। তক্ষুনি সেই মসৃণ অথচ কঠিন বরফের উপর দিয়ে তীরবেগে ছুটলো স্লেজ। হিশেব করে দেখা গেলো, স্লেজ যাচ্ছে ঘণ্টায় চল্লিশ মাইল বেগে। ফোর্ট-কিয়ার্নি থেকে ওমাহা স্টেশন দুশো মাইল। এভাবে স্লেজ চলতে থাকলে বেলা একটার মধ্যেই ওমাহা পৌঁছুনো যাবে বলে আন্দাজ হলো।

শীতে গায়ের রক্ত পাম্ভ জমে যাবার জোগাড় হয়েছিলো। সবাই নির্বাক হয়ে বসে রইলেন। দিগন্তবিহীন বরফের উপর দিয়ে ছুটে চললো স্লেজ। সুদক্ষ স্লেজ-ওলা দৃঢ়হাতে হাল ধরে সোজা নাক-বরাবর স্লেজ চালিয়ে দিলে। স্লেজ যেন উড়ে চলতে লাগলো।

বেলা বারোটার সময় স্লেজ-ওলা পাল নামিয়ে দিয়ে বললে : ঐ-যে ওমাহা দেখা যায়।

ফগ তাকিয়ে দেখলেন, দূরে কতগুলো বরফ-ছাওয়া ঘরদোর দেখা যাচ্ছে। স্লেজ সেখানে গিয়ে থামতেই তারা দ্রুতপদে স্লেজ থেকে নেমে শিকাগোর একটা ট্রেনে উঠে বসলেন। আর পাঁচমিনিট দেরি হলেই ট্রেনটা ধরা যেতো না।

পরদিন দশই ডিসেম্বর বিকেল চারটের সময় শিকাগোতে পৌঁছেই তারা শুনলেন, এক্ষুনি নিউইয়র্ক যাবার জন্যে একটা ট্রেন ছাড়ছে। ফগ তার দলবল নিয়ে ট্রেনে উঠতেই ট্রেন ছেড়ে দিলে। পরদিন বেলা এগারোটার সময় ট্রেন এসে নিউইয়র্কের জাহাজ-ঘাটে থামলো। ট্রেন থেকে নেমে তারা শুনলেন, লিভারপুলে যাবার জাহাজ চায়না পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে বন্দর ছেড়েছে! পাসপার্তু কাতরকণ্ঠে বলে উঠলো : হায়, হায়! চায়নার সঙ্গে-সঙ্গে ফগের সকল আশাই অথৈ জলে ভেসে গেলো। লিভারপুলে যাওয়ার তখন আর-কোনো জাহাজ ছিলো না।

পাসপার্তু পাগলের মতো হন্যে হয়ে উঠলো। আউদা তো একেবারে ভেঙে পড়লেন। মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটের জন্যেই শেষে সব গেলো! এত পরিশ্রম, এত টাকাখরচসব গেলো বৃথা! পাসপার্তু নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো। সে জানতো যে, তার জন্যেই এ-বিভ্রাট ঘটলো। ফগ কিন্তু তাকে একফোঁটাও তিরস্কার করলেন না। সর্বনাশ হয়ে গেলো দেখেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না। সোজা নিকোলাস হোটেলে এসে আশ্রয় নিলেন। আউদাকে সানা দেবার জন্যে একবার শুধু বললেন : ককখনো হতাশ হতে নেই।

সে-রাত্রে উৎকণ্ঠায় অন্য-কারু ঘুম না-এলেও ফগের ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।

পরদিন বারোই ডিসেম্বর। ফগের হাতে তখন মোট সময় ছিলো ন-দিন তেরোঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। যদি চায়না জাহাজ ধরা যেতো, তাহলে ঠিক সময়ের মধ্যেই লণ্ডন পৌঁছে বাজি জিততে পারতেন ফগ। পাসপার্তু এইসব কথা ভেবে-ভেবে নিজের মাথার চুল ছিড়তে লাগলো।

ফগ সঙ্গীদের বললেন : যতক্ষণ-না ফিরে আসি, আপনারা এখানেই থাকবেন। ডাকবামাত্রই যাতে রওনা হতে পারেন তার বন্দোবস্ত করে রাখবেন। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। যাবার কোনো উপায় হয় কি না আমি একবার দেখে আসি।

ফগ হাডসন নদীর তীরে এসে হাজির হলেন। দেখলেন, অনেক জাহাজই বন্দর ছাড়বার উদ্যোগ করছে, কিন্তু সেগুলো সবই পালের জাহাজ, কলের নয়। সুতরাং এত জাহাজ থাকলেও কোনো সুবিধে হলো না! ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে এস, এস, আঁরিয়েতা নামে একটা ছোটো জাহাজ তার নজরে পড়লো। ফগ একটা নৌকো করে জাহাজে গিয়ে উঠলেন। ক্যাপ্টেন জাহাজেই ছিলেন। তার সঙ্গে দেখা করে ফগ বললেন : আমার নাম ফিলিয়াস ফগ, বাড়ি লণ্ডনে। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

আমিই ক্যাপ্টেন। নাম আন্দু সিপার্ভি, বাড়ি কার্দিফে।

আপনি বুঝি এখুনি জাহাজ ছাড়ছেন?

একঘণ্টার মধ্যেই ছাড়বো। বোর্দো যাচ্ছি।

কী বোঝাই নিয়েছেন?

কিছু-না। জাহাজ খালি। না, কোনো যাত্রী নেই জাহাজে। আমি যাত্রী নিইনে, বড় বিরক্ত করে তারা।

আপনার জাহাজ কি তাড়াতাড়ি চলতে পারে?

ঘণ্টায় তেরো-চোদ্দ মাইল যায়। আঁরিয়েতা জাহাজের নাম এ-এলাকায় সব্বাই একডাকে জানে।

আপনি কি অনুগ্রহ করে আমাকে আর আমার তিন বন্ধুকে লিভারপুল নিয়ে যেতে পারেন?

বিদ্রূপের সুরে ক্যাপ্টেন বললেন : লিভারপুল! বলুন না কেন একদম চিনদেশেই নিয়ে যাই! ও-সব আমার দ্বারা হবে-টবে না। আমি বোর্দো যাবো ঠিক করেছি, সেখানেই যাবো।

যদি অনেক টাকা দিই?

টাকায় কী হবে? এ-জাহাজ আমার। আমাকে টাকার লোভ দেখাবেন না।

আমি যদি জাহাজ ভাড়া চাই?

ভাড়া? আমি ভাড়া দিইনে।

ভাড়া না-দিলে বিক্রি করুন।

তাও না।

অবিচলিত-চিত্ত ক্যাপ্টেনের কথা শুনেও ফগ হতাশ হলেন না। যে করেই হোক, অ্যাটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে লিভারপুল যেতেই হবে। মনে-মনে একটা মৎলব স্থির করে ক্যাপ্টেনকে আবার বললেন : ক্যাপ্টেন সিপার্ডি, আপনি কি আমাকে বোর্দো নিয়ে যাবেন?

হাজার টাকা দিলেও যাত্রী নেবো না আমি।

আমি যদি একেকজনের জন্যে পাঁচশো পাউণ্ড করে দিই?

প্রত্যেক যাত্রীর জন্যে?

হ্যাঁ, প্রত্যেকের জন্যে।

আপনারা তো চারজন আছেন, না? ক্যাপ্টেন সিপার্ডি মাথা চুলকোতে লাগলেন। একসঙ্গে দু-হাজার পাউণ্ড লাভ, অথচ তার জন্যে একপয়সাও খরচ নেই। শেষটায় লোভই জয়ী হলো। ক্যাপ্টেন বললেন : আমি কিন্তু কাঁটায়-কাঁটায় ঠিক ন-টায় জাহাজ ছাড়বো। সময়মতো হাজির হতে পারলে জাহাজে জায়গা হবে।

ন-টার আগেই সবাই জাহাজে এসে উঠলেন। ন-টার সময় জাহাজ বোর্দো যাত্রা করলো। আর ফিক্স অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন, এ-কী! যাবো ইংল্যাণ্ডে আর কোথায় চলেছি। কোথায় বোর্দো আর কোথায় লিভারপুল! এর মানে তো কিছুই বুঝতে পারছিনে।

আঁরিয়েতা জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে ক্যাপ্টেনের যে বিশেষ সদ্ভাব ছিলো না, জাহাজে উঠেই ফগ তা বুঝতে পারলেন। প্রচুর টাকা দিয়ে একদিনের মধ্যেই নাবিকদের হাতে আনতে তাই ফগকে কোনো বেগ পেতে হলো না। যে-করেই হোক, আরিয়ে যাতে লিভারপুল যায়, সে-ব্যবস্থা করতেই হবে। নাবিকদের সাহায্যে ফগ ক্যাপ্টেন সিপার্ডিকে তার ক্যাবিনে বন্দী করে রাখলেন, আর নিজেই ক্যাপ্টেন হয়ে লিভারপুলের দিকে জাহাজ চালাতে লাগলেন।

এ-যে মিউটিনি! সমুদ্রে কোনো জাহাজে ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে অন্য মাঝিমল্লারা বিদ্রোহ করলে সে-যে ভয়ংকর কাণ্ড হয়। ধরা পড়লে প্রত্যেকের কঠোর সাজা হয়–প্রায়ই প্রাণদণ্ড জোটে বিদ্রোহীদের।

ব্যাপার দেখে ফিক্সের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। মনে-মনে আপোশ করতে লাগলেন, কেন মরতে এলুম এই দস্যুর সঙ্গে। ফিলিয়াস ফগ ককখনো লিভারপুল যাচ্ছে না। নিশ্চয়ই ও একজন বোম্বেটে, জলদস্যু, চলেছে নিজের গুপ্ত আড্ডায়। সেখানে না-জানি কী দুঃসহ দুরবস্থাই আমার বরাতে আছে!

ফগ যেভাবে জাহাজ চালাতে লাগলেন, তাতে মনে হলো এ-কাজে তিনি খুবই দক্ষ। পাসপার্তু তো রীতিমতো অবাক হয়ে গেলো। নাবিকেরা নতুন ক্যাপ্টেনের সদ্ব্যবহারে আর বদান্যতায় এত খুশি হয়েছিলো যে প্রাণপণে কাজ করতে লাগলো। আঁরিয়েতা পূর্ণগতিতে লিভারপুল অভিমুখে এগিয়ে চললো।

আজ যোলোই ডিসেম্বর। পঁচাত্তর দিন কেটে গেছে। এখনও অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের পথে অনেকদূর যেতে হবে। দুর্ভাগ্য ছিলো ফগের সঙ্গে-সঙ্গেই। আঁরিয়েতার এঞ্জিন ম্যান দুঃসংবাদ জানালে : জাহাজের কয়লা ফুরিয়ে এসেছে। যেদিন থেকে জাহাজ ছেড়েছি, সেদিন থেকেই সমানে আগুন রেখেছি। লিভারপুলে যাওয়ার মতো কয়লা জাহাজে ছিলো না। বোর্দো যাওয়ার মতোই কয়লা নিয়েছিলুম আমরা।

ফগ নিশ্চিন্তভাবে হুকুম দিলেন : আচ্ছা, যাও। যতক্ষণ কয়লা আছে, পুরোদমে চলিয়ে যাও তো। আমি এইফাকে ভেবে দেখি, কী করা যায়।

আঠারো তারিখে যখন এঞ্জিনম্যান এসে চরম খবর দিয়ে গেলো—আর একটুও কয়লা নেই, অবিচলিত ফগ তখন পাসপার্তুকে বললেন : ক্যাপ্টেন সিপার্ডিকে এখানে নিয়ে এসো।

ক্যাপ্টেন সিপার্ভিকে দেখে মনে হলো যেন একটা ভীষণ বোমা ফেটে পড়বার জন্য অপেক্ষা করছে। কাছে এসেই ক্যাপ্টেন গম্ভীরস্বরে ফগকে শুধোলেন : আমরা এখন কোথায় আছি?

লিভারপুল থেকে সাতশো সর মাইল দূরে।

জবাব শুনেই ক্যাপ্টেনের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত জ্বলে উঠলো। গর্জন করে বললেন, তবে রে বোম্বেটে!

সে-কথায় কান না-দিয়ে শান্তগলায় ফগ বললেন : আপনার জাহাজ আমার কাছে বিক্রি করুন।

ককখনো না!

যদি বিক্রি না-করেন, তবে বাধ্য হয়েই জাহাজটা পুড়িয়ে ফেলতে হবে আমায়।

কী! আপনার দুঃসাহস তো কম নয়! আমার জাহাজ পোড়াবেন!

নিশ্চয়ই। অন্তত উপরকার যা-কিছু কাঠের জিনিশ আছে, সবই পোড়াতে হবে। জাহাজের কয়লা ফুরিয়েছে। কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে!

চেঁচিয়ে উঠলেন ক্যাপ্টেন সিপার্ডি : আপনার যাওয়া চাই বলে আমার জাহাজ পোড়াবেন? জাহাজের দাম কত জানেন? নগদ পাঁচ হাজার পাউণ্ড!

এই নিন, আমি ছ-হাজার দিচ্ছি। ফগ তক্ষুনি একতাড়া ব্যাংক-নোট ক্রুদ্ধ ক্যাপ্টেনের পকেটের মধ্যে ফেলে দিলেন।

নগদ ছ-হাজার পাউণ্ড! মুহূর্তে সব রাগ জল হয়ে গেলো ক্যাপ্টেনের। পুরোনো একটা জাহাজের বদলে এতগুলো টাকা পেয়ে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলেন আন্দু সিপার্ডি। বললেন : জাহাজের খোল আর এঞ্জিন তো আমার?

বেশ। খোল আর এঞ্জিন আপনার। রাজি তো?

নিশ্চয়ই। টাকা গুনতে-গুনতে ক্যাপ্টেন বললেন : জাহাজের যত কাঠ আছে সবই আপনার।

খামকা-খামকা এতগুলো টাকা উড়ে গেলো দেখে পাসপার্তু আর ফিক্স তো হতভম্ব! তাও জাহাজের খোল আর এঞ্জিন কিনা ক্যাপ্টেনেরই রইলো।

কিন্তু তখন ভাববার কোনো সময় নেই, হতভম্ব হবারও নয়। পাসপার্তু একাই বিপুল উৎসাহে কাঠ কাটতে লাগলো। কয়লার বদলে জাহাজের শুকনো কাঠগুলো ব্যবহৃত হতে লাগলো। সেইদিনই জাহাজের ক্যাবিনগুলো, ডেকের একাংশ প্রভৃতি ছাই হয়ে গেলো।

পরদিন উনিশে ডিসেম্বর জাহাজের মাস্তুল আর বড়ো কাঠগুলো পোড়ানো হলো। প্রাণপণে জাহাজ চালাতে লাগলো নাবিকেরা।

পরদিন আঁরিয়েতার সব কাঠই গেলো ফুরিয়ে, শুধু খোলটা রইলো বাকি। আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে লিভারপুলে যাওয়া চাই। নাবিকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগলো।

দূরে কুইন্স-টাউনের আলো দেখে ক্যাপ্টেন সিপার্ডি বললেন : আর-কোনো আশা নেই, মিস্টার ফগ। এই সবেমাত্র আমরা কুইন্সটাউন ছাড়ছি। এখনও অনেকদূর যেতে হবে। আপনার বরাৎ খারাপ-আমি কী করবো বলুন?

ফগ বললেন : ঐ-যে আলো দেখা যাচ্ছে, সে কি কুইন্স-টাউনের? আমরা কতক্ষণে বন্দরে পৌঁছুতে পারবো?

তিনটের আগে না। জোয়ার চাই তো।

অবিচলিত স্বরে ফগ বললেন : তবে এখন জোয়ারের জন্যেই অপেক্ষা করা যাক। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। হতাশা মানেই তো মৃত্যু।