০৭. পথের পাঁচালী

০৭. পথের পাঁচালী

পাথরের খাঁজ-কাটা সিঁড়ি দিয়ে পাতালের দিকে নামতে লাগলাম আমরা। কেটারের পরিধি ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে। শতিনেক ফুট হবে হয়তো খানিক নিচে। আর সেই নিচে আছে পাতাল-ছায়া অন্ধকার। গহরের যতটুকু দেখা গেল তাতেই মনে হলো, এর পাঁচিল সোজাসুজি নিচে নেমে গেছে। হয়তো অতি মণ রেখায়। অবশ্য পাঁচিলের গায়ে মাঝে-মাঝে এমনভাবে খাজের মত পাথর বেরিয়ে ছিলো যে তাতে আমাদের সিঁড়ির কাজ হয়ে গেলো। উপরে যদি কোথাও বড়ো একটা দড়ি বাধা যেত, তবে সহজেই সেই দড়ির সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামা যেত। কিন্তু তার জন্যে বড়ো বড়ো দড়ির দরকার, ততো বড়ো দড়ি কি আছে আমাদের?

কাকামণি বললেন : এর জন্যে এতো ভাবনা তোর?

চারশো ফুট লম্বা একটা দড়ি নিয়ে তার ঠিক মাঝখানটা পাঁচিলের গায়ের একটা পাথরের সঙ্গে দু-তিন পাক জড়িয়ে দিলেন উনি। বুঝতে পারলাম যে, দুহাতে দড়ির দুই প্রান্ত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে। দুশো ফুট নেমে দড়ির এক প্রান্ত ধরে টানলেই দড়ি উপর থেকে খুলে আসবে। তখন ঐভাবেই দড়ির সাহায্যে সহজেই আরো নিচে নামা যাবে।

এই বন্দোবস্তই ভালো হলো, কী বলিস? বললেন কাকামণি। কিন্তু, সমস্যা হলো, মালপত্রের ব্যবস্থা কী করা যায়। যতটুকু সম্ভব আমাদের সঙ্গে করে নিতে হবে। বিশেষ করে যেসব জিনিশ একটুতেই ভেঙে যেতে পারে। হাস, তুমি নাও কিছু যন্ত্রপাতি আর খাবার-দাবার। অ্যাজেল, তোর কাছে গুলি-বারুদ আর কিছু খাবার থাক। বাকি খাবার আর যন্ত্রপাতিগুলো আমিই নিচ্ছি।

বললাম : তা না-হয় নেয়া গেলো, কিন্তু বিছানাপত্র, কাপড়-চোপড় আর অন্য সব জিনিশের কী হবে?

কাকামণি জানালেন : সেজন্যে ঘাবড়াতে হবে না তোকে। তারা আপনি আমাদের সঙ্গে যাবে। এই বলে বাকি জিনিশপত্র একসঙ্গে খুব ভালো করে বেঁধে কাকামণি গহ্বরের মধ্যে ছুঁড়ে ফেললেন। শো করে বাণ্ডিলটা নেমে গেলো। যতক্ষণ দেখা গেলো, কাকামণি সেটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর নির্বিকার গলায় বললেন : চল, এবার নামা যাক।

আর দ্বিরুক্তি না করে মরিয়া হয়ে পাতালের দিকে নেমে চললাম। সবচেয়ে আগে হা. তারপর কাকামণি এবং সবশেষে আমি। একের পর এক তিনজনে দড়ি ধরেধরে নামতে লাগলাম। আলগা পারগুলি পায়ের আঘাতে ঝুরঝুর করে নিচে পড়তে লাগলো।

আধ ঘণ্টা নামবার পর দড়ির শেষ প্রান্তে পৌঁছে একটু প্রশস্ত চত্বরের মতো দেখা গেলো। সেখানেই থামলাম আমরা। টান দিয়ে উপর থেকে দড়িটা খুলে নিলেন কাকামণি। আবার দড়ি বাধা হলো তিন-চার পাক দিয়ে। আবার নিচের দিকে নেমে চললাম।

আমি তখন নিজেকে সামলাতে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে শিলাস্তরের বিন্যাসের দিকে নজর দেবার মতো অবসর ছিলো না। এমন পাগল ভূতত্ত্ববিদ কে আছে যে এই অবস্থায়ও চারদিককার শিলাস্তরের নানান লক্ষণ খেয়াল করতেকরতে নামতে পারে? কাকামণি কিন্তু শিলাস্তরের বিন্যাস করতে করতেই নামতে লাগলেন। তাঁর রকম-সকম দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেন কোনো মিউজিয়ামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

হঠাৎ একবার কাকামণি আমায় বললেন : যতোই নামছি নিচের দিকে, ততোই নিঃসন্দেহ হচ্ছি। এই অগ্নিগিরির শিলান্তরের বিখ্যাস দেখে মনে হচ্ছে যে পৃথিবীর অভ্যন্তরে খুব বেশি উত্তাপ নেই। দেখছিস নে, এখন আমরা যে শিলান্তরের মধ্য দিয়ে চলেছি, তা-ই হলো পাথরের আদিম অবস্থা। ধাতব পদার্থের গায়ে জল হাওয়া লেগে তখন যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটেছিলো, এখনো তার চিহ্ন পাথরের গায়ে বর্তমান। তুই ভালো করে নজর রাখলেই বুঝতে পারবি সব।

আমি কোনো কথা বললাম না। দড়ি ধরে কোনোমতে টাল সামলিয়ে নামতে লাগলাম শুধু। ইতিমধ্যে গহর ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছিলো, গাঢ় হচ্ছিল অন্ধকার! আলগা পাথরের টুকরোগুলি ক্রমশ আরো জোরে নিচে পড়তে লাগলো, আর তাদের নিচে পড়ার শব্দ ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠতে লাগলো।

প্রায় দুহাজার আটশো ফুট নামবার পর কাকামণি যখন জানালেন যে আমাদের পথ আপাতত এখানেই শেষ হয়ে গেছে, তখন রাত দুপুর হয়ে গেছে। নিচে যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করা এই রাত্তিরে মোটেই সহজ ব্যাপার নয় বলে আমরা রাত কাটাবার উদ্যোগে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। সহজেই একটি প্রশস্ত সমতল ভূমি পাওয়া গেলো। আমাদের শোওয়া বসার কোনো অসুবিধে হলো না। কিছু খেয়ে নিয়ে কোনো রকমে শুয়ে পড়লাম আমরা।

চারদিক নিস্তব্ধ। সুচীতে অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মধ্যে আকাশ-পাতাল কতো-কি যে ভাবতে লাগলাম, তার ইয়ত্তা নেই। ঘুম যখন ভাঙলো, তখন বেলা আটটা। মৃদু সূর্যরশ্মির সরু একটি রেখা এসে পড়ছিলো আমাদের পাশে।

আমার ঘুম ভেঙেছে দেখে কাকামণি হেসে বললেন : কী রে, কেমন লাগছে তোর? কাল রাত্তিরের মতো এমন শান্তিতে ঘুমিয়েছি আর কখনন? গাড়ি বোড়ার গোলমাল নেই, লোকনের সোরগোল নেই–কী রকম নিস্তব্ধ চারদিক দেখছিস?

এতে নিস্তব্ধ বলেই তো ভয় করছে বেশি।

কাকামণি হেসে উঠলেন : এখনই ভয় করছে তোর? এরই মধ্যে? এখনো তো প্রচুর পথ বাকি! সত্যি কথা বলতে গেলে আমরা তো এখনো পৃথিবীর অন্তঃপুরে প্রবেশই করিনি—ঠিক সমুদ্রের সমতলে আছি।

অবাক হয়ে বললাম : সে কী করে হয়?

আবার কাকামণির হাসির শব্দ শোনা গেলো : এই ব্যারোমিটার দ্যাখ,–ভূপৃষ্ঠের মতো এখানেও চাপ সমান। যখন ব্যারোমিটারে বাতাসের চাপ মাপা যাবে না, ম্যানোমিটারে মাপতে হবে, তখনই বোঝা যাবে যে আমরা সত্যি-সত্যি পৃথিবীর অন্দরমহলে প্রবেশ করেছি।

হঠাৎ একটা গুরুতর প্রশ্ন জেগে উঠলে মনে : কিন্তু কাকামণি, পৃথিবীতে যে-পরিমাণ বাতাসের চাপ সহ্য করা আমাদের অভ্যেস, এখানে তার চেয়ে বেশি চাপ হলে সহ করা যাবে না তো।

নিশ্চিন্ত গলায় কাকামণি বললেন : আমরা তো খুব আস্তে-আন্তে নামছি। যন হাওয়ায় নিশ্বাস নিতে-নিতে ক্রমশ আমাদের অভ্যেস হয়ে যাবে। আমরা তো জানি, বেলুনে যারা ঘুরে বেড়ায় তাদের উপরে বাতাসের চাপ কতো কম। কিন্তু তা তত তারা সহ করে থাকে।

তার মানে, তুমি বলতে চাইছে আস্তে-আস্তে অভ্যেস হয়ে যাবে?

হ্যাঁ। বললেন কাকামণি। আর অভ্যেস হলেই সহ হয়ে যাবে। কাল যে বাণ্ডিলটা ফেলে দিয়েছিলুম, এবারে তার খোঁজ নেয়া যাক।

খানিকক্ষণের মধ্যেই হান্‌স্ বাণ্ডিলটা খুঁজে বার করলে। আহার সেরে নিয়ে হান্‌স্‌ আর কাকামণি তাদের টর্চ জ্বালিয়ে নিলেন। তারপর সেই আলোয় পথ দেখে পাতালের অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চললাম সবাই।

বারোশো ঊনত্রিশ খ্রীস্টাব্দে মেফেলের শেষ অগ্নদগীরণ ঘটেছিল। এখনো তার চিহ্ন দেখতে পাওয়া গেলো। সেই আগ্নেয় উদগার জমাট বেঁধে কঠিন হয়ে গিয়েছিল। টর্চের আলোয় তা অজ্বল করতে লাগলো। পথ এতো গড়াননা যে, আমাদের খুব সাবধানে এগোতে হচ্ছিল। মাথার উপরে অসংখ্য কাৰ্তজোপলের স্বচ্ছ ফানুশ ঝড়ের মতো ঝুলছিলো, তাদের গায়ে যেন পরিচ্ছন্ন কাচ বসাননা। টর্চের আলোয় ফানুশগুলো ঝলমল করতে লাগলো। ভারি সুন্দর লাগলো দেখতে। লাল, নীল, সবুজ-নানান রঙের সব ফানুশ। তাদের উপর আলো পড়ে তৈরি হয়েছে পাতালের রামধনু।

অনেক দূর পর্যন্ত এগোলাম সেদিন। উত্তাপ কিন্তু সেই অনুপাতে বেড়েছে বলে মনে হলো না।

রাত্রে খেতে বসে আবিষ্কার করলাম, জল কমে এসেছে। আগেও জলের কথা কাকামণিকে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু ওঁর মুখে সেই এক কথা : ঝরনার জল পাওয়া যাবে পথে। কাজেই ভয় কিসের? কিন্তু এখন যখন দেখতে পেলাম অর্ধেকেরও বেশি জল ফুরিয়ে গেছে, তখন আবার জানালাম ওঁকে। শুনে কাকামণি বললেন : এতো ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? ঝরনার জল পাওয়া যাবে পথে। যখনই এই অগ্ন্যুদ্গারের দেয়াল ভেদ করবো, ঠিক তখুনি জলের দেখা মিলবে।

এ দেয়াল কতদুর গেছে, তা কী করে বুঝতে পারবে? আমরা যে নিচের দিকে খুব বেশি নামতে পেরেছি, তা কিন্তু মনে হচ্ছে না আমার। সমতল ক্ষেত্র দিয়েই বোধহয় চলেছি আমরা। কারণ যতো নিচে নামবে তততই তো উত্তাপ বাড়বার কথা। কিন্তু তাপ একটুও বাড়েনি। খুব বেশি হলে আমরা এগারোবারোশো ফুট নামতে পেরেছি।

হো-হো করে হেসে উঠলেন কাকামণি। তার ধারণা ভুল। এখন আমরা সমুদ্র-তলের চেয়েও দশ হাজার ফুট নিচে।

দুচোথ বিস্ফারিত করে বললাম : আঁ? বলো কী কাকামণি?

কাকামণি অঙ্ক কষে তার সিদ্ধান্তের প্রমাণ দিলেন।

পরদিন ভোরবেলাতেই আবার আমাদের চলা শুরু হলো। দুপুর বেলায় আমরা দুটি সুড়ঙ্গ পথের মোহানার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালাম। দুটি পথই সঙ্কীর্ণ, অন্ধকার এবং অপ্রশস্ত। সেই অন্ধকার সুড়ঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে যদি অনন্তকাল ভাবতাম কোন পথ দিয়ে যাবে, তাহলেও পথের সন্ধান পাওয়া যেতো না। কাকামণি কিন্তু চট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। বললেন : পূর্বদিকের সুড়ঙ্গ দিয়েই যাওয়া যাক, কী বলিস?

এগোতে-এগোতে দেখতে পেলাম ঐ সুড়ঙ্গের অবসর্প বেশ কম, আর সামনের দিকে তোরণের পর তোরণ যেন আমাদেরই জন্য উন্মুক্ত হয়ে আছে। মাইলখানেক যেতে-না-যেতেই তোরণগুলি ক্রমশ ছোটো হয়ে আসতে লাগলো। সেই কারণে কোথাও আমাদের মাথা নুইয়ে চলতে হলো, কোথাও বা এগোতে হলো বুকে হেঁটে অতি সন্তর্পণে।

উত্তাপ এখনো সহনীয়। তবে, এক-একবার যখন মনে হচ্ছিল যে এই পথ দিয়ে একদা প্রচণ্ড আবেগে তরল আগুনের স্রোত বয়ে গিয়েছিলো, তখুনি ভয়ে শিউরে উঠছিলো শরীর। এমনও তো হতে পারে যে এখন কোথাও আবার শুরু হয়েছে দ্রবীভূত আগুনের অসহ্য তাণ্ডব! আর তার মানেই হলো নিশ্চিত মৃত্যু।

কাকামণি কিন্তু নির্বিকারভাবে এতো কষ্ট সহ্য করেও এগিয়ে চললেন। হাসেরও ঠিক তেমনি বিরামহীন গতি। শুধু আমারই ভারি কষ্ট হচ্ছিল এগোতে।

সন্ধের সময় যখন আমরা জিরোবার জন্যে থামলাম, তখন হিশেব করে দেখা গেলো যে আমরা মোটে ছমাইল পথ অতিক্রম করেছি সারাদিনে, আর নিচের দিকে নেমেছি মাত্র আধমাইল।

পরদিন ভোরবেলায় আবার যাত্রা শুরু হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা গেলো সুড়ঙ্গ-পথ নিচের দিকে না গিয়ে সমতল ক্ষেত্রেই চলেছে। আমার তো মনে হলো আমরা ক্রমশ উপরের দিকে উঠছি। চলতে তখন ভারি ক্লান্তি লাগছিলো। আস্তে-আস্তে চলছি দেখে কাকামণি অধৈর্য গলায় আমাকে তাড়াতাড়ি হাঁটতে বললেন।

অবসন্ন গলায় বললাম : আর যে পারছি নে কাকামণি!

পারছিস নে! অবাক হলেন যেন কাকামণি। এমন সুন্দর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে তোর কষ্ট হচ্ছে। মোটে তোত তিন ঘণ্টা হলো রওনা হয়েছি।

আমার পা যে ভেঙে আসছে, কাকামণি! উপরে ওঠা তো সহজ ব্যাপার নয়।

কী সর্বনাশ! তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি? কোনটা উঁচু, কোনটা নিচু তাও জানিস নে? চল, চল! কাকামণি তর্জনীসঙ্কেতে সামনের পথ দেখিয়ে দিলেন। আর কোনো দ্বিরুক্তি না করে মরিয়া হয়ে এগোতে লাগলাম।

দুপুরবেলায় দেখি শহরের প্রাচীর অন্যরকম রূপ নিয়েছে। আমাদের হাতের আলোয় আর তেমন উজ্জ্বল দেখাচ্ছে না। লক্ষ্য করে দেখি, এবার আর অগ্ন্যুদগারে গঠিত নয়, পাষাণময়। খানিকক্ষণ বাদেই দেখি, চারিদিক চূর্ণোপলে আর প্লেট-পাথরে ছাওয়া। গ্রন্থি-প্রান্তরের প্রাচীর পেছনে পড়ে রয়েছে।

আমাকে বিস্ময়ে অর্ধস্ফূট চিৎকার করতে দেখে কাকামণি শুধোলেন : ব্যাপার কী?

বললাম : দ্যাখো কাকামণি, আমরা কোথায় এসে পৌঁছেছি। যে-যুগে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব ঘটেছিলো, প্রথম উদ্ভিদ দেখা দিয়েছিলো, আমরা এখন সৃষ্টির সেই পরিবেশে এসে উপস্থিত হয়েছি। প্রাচীরের গায়ে আলো ফেলে দেবালাম ওঁকে। কাকামণি কিন্তু একটুও অবাক হলেন না। নীরবে এগিয়ে চললেন।

তবে কি আমারই ভুল হলো? হয়তো। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত যদি ঠিক হরে থাকে, তবে প্রাচীন যুগের উদ্ভিদ-জগতের কিছু-না-কিছু চিহ্ন নিশ্চয় পাওয়া যাবে। আমি তারই অপেক্ষায় রইলাম।

অল্পক্ষণের মধ্যেই লক্ষ্য করলাম, আমরা বালির উপর দিয়ে চলেছি। এখানে নদী নেই, সমুদ্রও নেই,–তবে বালি এলো কোত্থেকে? এ তাহলে উদ্ভিদের ধ্বংসাবশেষ ছাড়া অন্য কিছু না। আর একটু পরেই প্রাচীরের গায়েও উদ্ভিদ জগতের অভ্রান্ত চিহ্ন দেখা গেলো।

কাকামণি কিন্তু তবুও এগিয়ে চললেন। দেখে আর সত্যু হলো না। একটা ঝিনুক কুড়িয়ে কাকামণির হাতে দিয়ে বললাম : এই দ্যাখো কাকামণি, ট্রিলোবাইট জাতের ঝিনুক। এ দেখেও কি মনে হয় না–

–যে আমরা পথ হারিয়েছি? অকম্পিত স্বরে আমার কথাটা শেষ করলেন কাকামণি, তারপর বললেন : পথ তো অনেকক্ষণ হলো হারিয়েছি। গ্রন্থিপ্রকার আর অগ্ন্যুদ্গারের প্রাচীর ছাড়িয়ে আসার সঙ্গে-সঙ্গেই বুঝতে পেরেছি, আমরা ঠিক পথে আসছি নে। কিন্তু এই পথটাও যে পাতালে যায়নি, তারই বা প্রমাণ কী? এর শেষ না দেখে কি ফিরতে পারি?

অবাক গলায় বললাম : তুমি তবে পথের শেষ না দেখে ফিরবে না? ওদিকে যে আমাদের জল ফুরিয়ে এলো!

তাতে কী হয়েছে? নির্বিকার স্বরে কাকামণি বললেন : অল্প-অল্প করে খেতে হবে আর-কি!