২৩. পুনশ্চ

পুনশ্চ

চো ফিরে এলো নবোয়ের উপকূলের এক ধীবরের গৃহে। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি নেড আর কোনসাই উদ্বিগ্নভাবে আমার দিকে ঝুকে আছে।

কী করে যে সে রাতে ওই ভীষণ ঘূর্ণিপাকের হাত থেকে রেহাই পেয়েছি, তা আমরা কেউই জানি না।

লোফোডেন আইল্যাণ্ডের এই ধীবরের গৃহে বসে-বসে দু-মাস ধরে ফ্রান্সগামী জাহাজের প্রতীক্ষা করতে করতে আমার এই দশমাস জোড়া অভিজ্ঞতার কাহিনী লিখে ফেললুম। এখানে একটা কথাও নেই যা অতিরঞ্জিত, কি বিকৃত, কি অলীক কল্পনা। বরং বোধ হয় উনকথনের দোষই হয়েছে শেষ পর্যন্ত।

কিন্তু নটিলাস-এর কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। বারেবারে ওই অদ্ভুত ডুবোজাহাজটি হানা দেয় আমার মনের মধ্যে।

নটিলাস-এর কী হলো? মেলস্ট্রমের ওই ভীষণ মরণ-আলিঙ্গন থেকে সে কি বেরিয়ে যেতে পেরেছে? আর ক্যাপ্টেন নেমো? তিনি কি এখনো বেঁচে আছেন? এখনো তিনি কি তার প্রচণ্ড ও আর্ত হৃদয় নিয়ে প্রতিহিংসার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? না কি আবর্তমান সিন্ধুজলের অবিরাম ঢেউ তার অন্তঃকরণ থেকে ঘৃণা আর রোষ মুছে দিয়ে তাকে শুদ্ধ সুন্দর ও মহান করে দিয়ে গেছে? কে তিনি, কোন দেশের মানুষ, কী তার পুরো নাম-এ-সব তথ্য কি কোনো দিনই জানতে পারবো আমি?

জানি না।

আমি শুধু সেই আর্ত, প্রবল, শুদ্ধ মানুষটির জন্য প্রার্থনা করতে পারি। আমার বাড়ির সামনে দিয়ে বেলাভূমি দেখা যায়, যেখানে একের পর এক ঢেউ ভেঙে পড়ে বারেবারে। তাদের সেই অবিরাম ও ছন্দোময় স্পন্দনের মধ্যেও হয়তো সেই একই প্রার্থনা বেজেবেজে ওঠে।