৩. জুরিখের রাস্তাঘাট

২১.

জুরিখের রাস্তাঘাট। কত রকম মানুষের মিছিল এগিয়ে চলেছে। তার মধ্যে সুন্দরী মেয়েদের দেখা গেল। তারা মাংসের কারবারী। হ্যাঁ, পুরুষের কাঁচা মাংস।

এদের মধ্যে একজনকে আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। লম্বা, আচরণে আভিজাত্য। ওই অসামান্য রূপবতী। চোখের তারা সবুজ। সে বোধহয় এক রাজকন্যা। সকলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কারও দিকে তাকাচ্ছে না।

শেষ পর্যন্ত সে একটা রেস্টুরেন্টের টেবিলে গিয়ে বসল। চারদিকে তাকাল। ফিসফিসানি কণ্ঠস্বর।

ফ্রাঞ্চ, বুঝতেই পারছ, এমন সুযোগ জীবনে আসবে না। ৫০ হাজার ফ্রাঙ্ক, তোমার আৰ্দ্ধেক, আমার আর্ধেক। আমাকে কমিশন দেবে তো?

-হ্যাঁ, আমি দেব।

লোকটি বলল, যে কথাটি সে বলল না, তা হল আমার স্ত্রীকে বন্ধক দিয়ে আমি এই টাকাটা এনেছি।

বলো, আমি কি কখনো তোমাকে বিপথে চালনা করেছি।

হ্যাঁ, অনেক টাকা। লোকটি ভাবল, না, আর কোনোদিন আমি আমার স্ত্রীর সাহচর্য পাব না।

এসো, আমরা টাকার খেলায় মেতে উঠি।

–হ্যাঁ, আমি তোমার হাতে হাত মেলাব।

ফ্রাঞ্চ, ভবিষ্যতে কখনও আপসোস হবে না তো?

মেয়েটি তাকাল, এই সংলাপকে শেষ করতে হবে।

 কোণের টেবিলে এক পুরুষ আর এক মহিলার মধ্যে চিৎকার শুরু হয়েছে।

-যিশুখ্রিষ্ট, তুমি কী করে জানলে যে, তুমি গর্ভবতী।

মনে মনে, বোকা হদ্দ, কুকুরি কোথাকার।

–বোকার মতো প্রশ্ন করো না। তোমার ওটাই তো এই কাজটা করেছে।

–হ্যাঁ, এবার সাবধানে আলোচনা করতে হবে।

–টিনা, ব্যাপারটা মেটাতে হবে। তুমি কি গর্ভপাতে রাজী হবে?

না, আমি তোমার বউকে সব বলে দেব।

-শোনো হনি, এখন একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি। এখন এরকম আচরণ করো না, লক্ষ্মীটি।

সময়টাও আমার কাছে ভালো নয় পল, আমি ভাবতেই পারছি না, তুমি আমাকে ভালোবাসতে না।

–তোমাকে আমি ভালোবাসি সোনা। কিন্তু আমার বউয়ের কানে খবরটা পৌঁছে দিও না।

-হ্যাঁ, আমি সবই বুঝতে পারছি। তুমি কেন বুঝতে পারছ না, আমার পেটে তোমার বাচ্চা।

হনি, চুপ করো-চুপ করো। ওই ছেলেটিকে আমিও তো ভালোবাসব।

পাশের টেবিলে এক পুরুষ একা বসে আছে। মনে মনে সে ভাবছে, তারা আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল, আমি কেন বোকার মতো আচরণ করলাম। সব টাকাটা ঢেলে দিয়েছি। অডিটররা আসার আগেই আমাকে পালাতে হবে। না, জেলের জীবন আমি সইতে পারব না। আত্মহত্যা করব। আমি নিজেকে মেরে ফেলব।

আর একটি টেবিলে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কথাবার্তা মাঝপথে থেমে গেছে।

আমাকে ওই পাহাড়ের ওপর নিয়ে যাবে? হ্যাঁ, আগামী সপ্তাহে আমি যাব।

 এসো, আমরা দুজনে বিছানায় শুয়ে সময় ভাগাভাগি করি।

আমি জানি না ব্যাপারটা কেমন হবে।

–এর মধ্যে আর যৌনতা এনো না। বুঝতে পারছ, তোমায় কিছুক্ষণ শান্ত থাকতে হবে। আমাকে তুমি ভাই হিসেবে ভাবতে পারো।

সুন্দরী মেয়েটি চারদিকে তাকাল। বিভিন্ন ভাষায় কথা হচ্ছে। সে বেশিক্ষণ সেখানে থাকবে না। তাকে এবার উঠতে হবে। তার হাতে একটা ছোট্ট ট্রান্সমিটার। এর ভেতর নিওরোনেট সিস্টেম আছে। যার অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, অন্য কোনো মহাপৃথিবীতে। অসংখ্য কোশের সমাহার। যদি কোনোটা মরে যায়, অন্যটা সঙ্গে সঙ্গে বেঁচে উঠবে।

সে কিছু ভাবার চেষ্টা করল। না, আর দাঁড়াতে পারছে না। দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

 ক্যাশিয়ার বলল- মিস, আপনি দাম দিতে ভুলে গেছেন।

আমি দুঃখিত। আপনারা যে টাকাপয়সা লেনদেন করেন, আমার কাছে তা নেই।

 –আপনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলুন।

 যুবতী মেয়েটি ক্যাশিয়ারের চোখের দিকে তাকাল। সে ওখান থেকে বেরিয়ে এল।

 না আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। তা না হলে আমি বাঁচব কী করে?

 জল ছাড়া আমি বেঁচে থাকতে পারব না!

.

২২.

পঞ্চম দিন, বার্ন, সুইজারল্যান্ড।

রবার্ট এখন সিদ্ধান্তের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছেন। তিনি নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছেন। রবার্ট ভাবলেন, গল্পটা কি এখানেই শেষ হয়ে গেল? যখন আমি মাদারশেডের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলাম, তখন কেন আর একটু তৎপর হলাম না। হানস বেকারম্যান একবার বলেছিলেন, কোনো কাজ ফেলে রাখতে নেই।

এখন আমি কী করব?

বার্ন এয়ারপোর্টে তিনি একটা গাড়ি ভাড়া নিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে চললেন। বানের প্রধান রাস্তা। চারপাশে সুন্দর বাড়ি।

রবার্ট প্রশাসন ভবনের সামনে এসে ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিলেন। রিসেপশন হলে পৌঁছে গেলেন।

বেকারম্যান বলেছিলেন, এই ভদ্রলোক একজন জার্মান। সোমবার তিনি তার লেকচার দেবেন।

রিসেপশনিস্ট মহিলার সাথে কথা হল। রবার্ট তার প্রতীক পত্রটা বের করে বললেন ইন্টারপোল। আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ অন্বেষণার কাজে এখানে এসেছি। মিস, আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন?

কী ধরনের কাজ?

 –আমি একজন প্রফেসারের সন্ধান করছি।

—তার নাম কী?

–আমি তার নাম জানি না।

নাম জানেন না, তাহলে পাবেন কী করে?

 –তিনি একজন ভিজিটিং প্রফেসার। কয়েকদিন আগে এখানে লেকচার দিয়েছেন।

প্রত্যেকদিন কত আমন্ত্রিত অধ্যাপক এসে ভাষণ দেন। তার বিষয় কী? কী বলছেন?

–তিনি কী বিষয়ে পড়ান?

 –আমি জানি না।

–তাহলে, আমি তো আপনাকে সাহায্য করতে পারব না। এইসব অবান্তর প্রশ্ন শোনার মতো সময় আমার হাতে নেই।

ভদ্রমহিলা অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে নিল।

-না, বাজে প্রশ্ন নয়। আমি কি আপনাকে বলতে পারি? ওই ভদ্রলোক একটা বেশ্যাচক্রের সঙ্গে জড়িত।

 রিসেপশনিস্ট মেয়েটির মুখ কালো হয়ে গেল।

ইন্টারপোল অনেক দিন ধরেই ওনার অনুসন্ধান করছে। ওনার সম্পর্কে টাটকা খবর পাওয়া গেছে। উনি এখন জার্মান দেশে আছেন। উনি এই মাসের পনেরো তারিখে এখানে এসে একটা লেকচার দিয়েছিলেন। যদি আপনি আমাকে সাহায্য করতে চান, তাহলে ভালো হয়। আর যদি না করতে চান, তাহলে আমরা সরকারি তরফ থেকে তল্লাশি চালাব। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কলঙ্কিত হবে।

না-না, মেয়েটি বলে উঠল– ইউনিভারসিটির সাথে এই ধরনের নোংরা ব্যাপার কখনওই জড়াবেন না। ঠিক আছে, আমি দেখছি, উনি কবে লেকচার দিয়েছিলেন?

-পনেরো তারিখ, সোমবার।

মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। ফাইলিং ক্যাবিনেটের দিকে হেঁটে গেল। সে সেটা খুলল। কতগুলো কাগজ দেখে বলল, এই তো পাওয়া গেছে। সেদিন তিনজন গেস্ট প্রফেসার এসেছিলেন।

–আমি যাঁকে খুঁজছি, তিনি জার্মানদেশীয় ভদ্রলোক।

-এঁরা সকলেই জার্মান দেশের মানুষ। একজন অর্থনীতিবিদ, একজন রসায়নবিদ, একজন মনোস্তত্ত্ববিদ।

–আমি কি দেখতে পারি?

উদাসীনভাবে মেয়েটি কাগজগুলো তুলে দিল।

রবার্ট কাগজগুলো ভালো করে পরীক্ষা করলেন। প্রত্যেকের নাম এবং বাড়ির ঠিকানা লেখা আছে।

–আমি প্লিজ এগুলো কপি করে আপনাকে দেব?

মেয়েটি জানতে চাইল।

— না, ধন্যবাদ। রবার্ট নাম ঠিকানাগুলো মনে রেখেছেন।

 তারপর তিনি বললেন- না, এঁদের কাউকেই আমি খুঁজছি না।

মেয়েটির চোখে মুখে উদ্বেগহীনতার চিহ্ন–অনেক-অনেক ধন্যবাদ। হায়, বেশ্যাবৃত্তি, আমরা কখনও এ ধরনের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ি না।

-আপনাকে বিরক্ত করলাম বলে দুঃখিত।

রবার্ট টেলিফোন বুথের দিকে এগিয়ে গেলেন।

 প্রথমেই তিনি বার্লিনে ফোন করলেন প্রফেসার টুবেল?

–হ্যাঁ।

–আমি সানসাইন ট্যুরিস্ট বাস কোম্পানি থেকে বলছি। গত রোববার আপনি চশমা ফেলে গেছেন, যখন আপনি সুইজারল্যান্ড বেড়াতে এসেছিলেন।

-আপনি কে বলছেন, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

–আপনি কি ১৪ তারিখে সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন? নাকি আমার ভুল হচ্ছে?

–না-না, ১৫ তারিখে। বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা লেকচার দিতে।

আপনি কি বাসে করে টুর করেননি?

না, এসব বাজে ব্যাপারে যোগ দেবার মতো সময় আমার হাতে ছিল না। আমি একজন ব্যস্ত মানুষ।

ভদ্রলোক টেলিফোনের রিসিভার নামিয়ে দিলেন।

 দ্বিতীয় কলটি করা হল হামবুর্গে।

–অধ্যাপক হেইনরিচ বলছেন?

-হ্যাঁ, আমি অধ্যাপক হেইনরিচ বলছি।

–সানসাইন ট্যুরিস্ট বাস কোম্পানি থেকে কথা বলছি। আপনি সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন ১৪ তারিখে?

–কেন, আপনি জানতে চাইছেন?

–আমরা আমাদের বাসে আপনার ব্রিফকেস খুঁজে পেয়েছি প্রফেসার।

–আপনি ভুল লোককে ধরেছেন। আমি তো কখনও আপনার বাসে চড়িনি।

তৃতীয় ফোনটা করা হল মিউনিখে।

–প্রফেসার অটোস্মিডট?

–হ্যাঁ।

–প্রফেসার স্মিটট, আপনি সানসাইন ট্যুরিস্ট বাস কোম্পানির তরফ থেকে বলছি। আমাদের বাসে আপনি চশমা ফেলে গেছেন?

–আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।

রবার্টের মন এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাহলে? কী করে যোগাযোগ হবে?

 কণ্ঠস্বর শোনা গেল– এই তো চশমা আমার হাতেই আছে।

–আপনি কি ঠিক বলছেন প্রফেসার? আপনি ১৪ তারিখে আমাদের বাসে ওঠেননি?

–হা-হা, আমি উঠেছিলাম। কিন্তু আমি তো কিছু হারাইনি।

–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রফেসার, রবার্ট টেলিফোনটা নামিয়ে রাখলেন। শেষ পর্যন্ত আমি জ্যাকপটটা পেয়ে গেছি।

.

দু-মিনিটের মধ্যে রর্বাট জেনারেল হিলিয়াড়ের সাথে কথা বললেন।

দুটো বিষয়ে কথা বলতে হবে, লন্ডনের প্রত্যক্ষদর্শীর ব্যাপারে আমি আগেই বলেছিলাম।

-হ্যাঁ।

–গত রাতে অগ্নিকাণ্ডে তার মৃত্যু হয়েছে।

সত্যি? খুবই খারাপ খবর।

-হ্যাঁ, স্যার। আর একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে আমি চিহ্নিত করতে পেরেছি। আমি শীগগিরই। তার সম্বন্ধে খবর পাঠাচ্ছি।

কমান্ডার, আপনার খবরের জন্য আমি অপেক্ষা করব।

.

জেনারেল হিলিয়াড জানুসকে রিপোর্ট দিচ্ছিলেন।

কমান্ডার বেলামি আর একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পেয়েছেন।

–ভালো। দলটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। খুব তাড়াতাড়ি এই ফাইলগুলো বন্ধ করতে হবে।

–আরও খবর শিগগিরই দেব।

–খবর নিয়ে আমার কী হবে। আমি ফল চাইছি।

–হ্যাঁ, জানুস।

 মিউনিখের শান্ত সুন্দর আবাসন এলাকা। ৫ নম্বর বাড়িটা সহজেই পাওয়া গেল। লেখা আছে অধ্যাপক অটোস্মিডট। রবার্ট বেল বাজালেন।

অ্যাপার্টমেন্টের দরজা খুলে গেল। লম্বা শীর্ণ চেহারার এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। রবার্ট জানতে চাইলেন- অধ্যপক স্মিডট?

-হ্যাঁ।

–আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।

আমরা আগেই কথা বলেছি, অধ্যাপক স্মিডট বললেন। আপনি তো আজ সকালে আমাকে ফোন করেছিলেন, তাই না? মানুষের কণ্ঠস্বর চিনতে আমার ভুল হয় না। আসুন।

রবার্ট লিভিংরুমে ঢুকে পড়লেন। মেঝে থেকে ছাদ অব্দি শুধু বই আর বই। বইয়ের এক মহাসমুদ্র। টেবিলে, মেঝেতে চেয়ারে– সব জায়গায় বই পড়ে আছে।

–আপনি কি সানসাইন ট্যুরিস্ট বাস কোম্পানিতে ছিলেন?

হা।

রবার্ট আমতা আমতা করতে থাকেন।

–আপনি কি আমেরিকান?

–হ্যাঁ।

 –তাহলে আপনি এখানে কেন এসেছেন? আমার হারানো চশমা দিতে নয়, নিশ্চয়ই।

–হ্যাঁ, আমি বুঝিয়ে বলছি।

–আমি যে উড়নচাকি দেখেছি, আপনি কি সেটার ব্যাপারে আগ্রহী? অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো নয়। আমি ভেবেছিলাম, ওটা আছে, কিন্তু জীবনে দেখতে পাব, তা কোনো দিন ভাবতে পারিনি।

–এটা দেখে আপনি কি খুব আঘাত পেয়েছেন?

–হ্যাঁ।

–আপনি কি একটু গুছিয়ে বলবেন?

–এটা প্রায় জীবন্ত, নীল রঙের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে অথবা ধূসর, আমি ঠিক বলতে পারব না।

ম্যানডেলের বর্ণনা মনে পড়ে গেল রবার্টের আলো রং পাল্টাছিল, কখনও নীল, কখনও সবুজ।

–এটা ভাঙা অবস্থায় পড়েছিল, দুটো শরীর ভেতরে ছিল, ছোটো কিন্তু মস্ত বড়ো চোখ। তারা রূপোর পোশাক পরেছিল।

–আপনার সহযাত্রীদের সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন?

 –আমার সহযাত্রীরা?

–হ্যাঁ।

অধ্যাপক কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন তাদের কাউকেই চিনি না। তারা সকলেই সম্পূর্ণ অচেনা। পরের দিন সকালে আমাকে যে ভাষণ দিতে হবে, তা নিয়ে আমি ব্যস্ত ছিলাম।

রবার্ট ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকালেন, অপেক্ষা করলেন।

অধ্যাপক বললেন- যদি আপনার সাহায্য হয়, তাই বলছি, আমি রসায়ন পড়াই, কিন্তু মানুষের ভাষা অন্বেষণ করা আমার অন্যতম হবি।

–আপনি কী পর্যবেক্ষণ করেছিলেন?

–এক ইতালিয় ধর্ম্যাজক ছিলেন, একজন হাঙ্গারির বাসিন্দা, এক আমেরিকান টেকসান ভাষায় কথা বলছিলেন, এক ব্রিটিশ, এক রাশিয়ান মেয়ে।

রাশিয়ান?

–হ্যাঁ, উনি কিন্তু মস্কো থেকে আসেননি, আমি ওনার ভাষা শুনে বুঝেছি, উনি এসেছেন কিয়েত থেকে। অথবা কিয়েতের কাছাকাছি কোনো অঞ্চল থেকে।

রবাটের অপেক্ষা, তারপর জিজ্ঞাসা–ওনারা কেউ কি নাম বলেছিলেন। অথবা নিজস্ব পেশা সম্পর্কে আলোচনা?

–আমি দুঃখিত, আমি তো আগেই বলেছি, লেকচার নিয়ে মনটা ভারাক্রান্ত ছিল। অন্য কোনো দিকে মন দিতে পারিনি। টেকসান ভদ্রলোক আর ওই যাজক মশাই পাশাপাশি বসেছিলেন। টেকসান ভদ্রলোক বকর বকর করেই চলছিল। ব্যাপারটা খুবই আপত্তিকর। আমার মনে হল বেচারা যাজক বোধহয় মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে পারছেন না।

যাজক?

–উনি রোমান টানে কথা বলছিলেন।

 –আর কিছু?

অধ্যাপক কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন- না, আমি আর কিছু বলতে পারছি না। মুখ থেকে পাইপ বের করলেন। তারপর বললেন, এই তথ্যগুলো কি আপনার কাজে লাগবে?

হঠাৎ একটা জিনিস মাথায় এল রবার্টের। আপনি একজন রসায়নবিদ? •

-হ্যাঁ।

–আচ্ছা অধ্যাপক, দেখুন তো এটাকে চিনতে পারেন কিনা?

রবার্ট পকেট থেকে বেকারম্যানের দেওয়া ধাতুর টুকরোটা অধ্যাপকের হাতে তুলে দিলেন।

অধ্যাপক স্মিডট এই বস্তুটা হাতে নিলেন। পরীক্ষা করলেন। মুখের ভাষা পাল্টে গেল। উনি বললেন- কোথা থেকে এটা পেলেন?

–আমি বলতে পারব না। বলুন এটা কী?

–এটা কোনো বিকিরিত যন্ত্রের অংশবিশেষ।

আপনি ঠিক বলছেন?

–এখানে যে ক্রিস্টালটা আছে, সেটা হল ডিলিথিয়াম। সেটা কোথাও পাওয়া যায় না। আমি তো ভাবতেই পারছি না, এটা কোথা থেকে পেলেন। হায় ঈশ্বর, আমি কোনোদিন এই ধরনের ধাতব টুকরো দেখিনি। আপনি কি এটা আমাকে দেবেন? আমি তা হলে বর্ণালী পরীক্ষা করব।

না, অধ্যাপক, তা দেওয়া যাবে না।

–কিন্তু…

দুঃখিত, রবার্ট ধাতব টুকরোটা চেয়ে নিলেন।

 অধ্যাপক খুবই দুঃখ পেয়েছেন, তিনি বললেন- ঠিক আছে, আবার দেখা হবে। সঙ্গে কার্ড আছে?

রবার্ট দুঃখিত স্বরে বললেন না, আমি কার্ড সঙ্গে আনি নি।

অধ্যাপক স্মিডট শান্তভাবে বললেন আমি তাই অনুমান করেছিলাম।

.

-কমান্ডার বেলামি কি লাইনে আছেন?

জেনারেল হিলিয়াড টেলিফোন নিলেন- হ্যাঁ, কমান্ডার বলুন।

সর্বশেষ যে প্রত্যক্ষদর্শীর নাম পাওয়া গেছে, উনি হলেন অধ্যাপক স্মিডট। উনি প্ল্যাটারসে বাস করেন, ৫ নম্বর বাড়ি

রবার্ট, বুঝতে পারলেন, যিনি শুনছেন তিনি আরও তথ্য পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

রবার্ট তখনও বলে চলেছেন- আর কোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে পাব কিনা বুঝতে পারছি না।

না, বিফলতা শব্দটাকে রবার্ট ঘৃণা করেন। সকলের পরিচয় মোটামুটি পাওয়া গেছে, একজন টেকসাসবাসী, এক ধর্মযাজক, উনি এসেছেন রোম থেকে, লক্ষ লক্ষ ধর্মযাজক রোমে বসবাস করেন। কী করে ওনাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করব? না, আমি ওয়াশিংটনে ফিরে যাই, নাকি রোমে গিয়ে শেষ চেষ্টা করে দেখব?

.

বার্লিন শহর, প্রশাসনিক ভবন। দোতলাতে আছে কনফারেন্স রুম। এখানকার প্রধান ইন্সপেক্টর অটো জোয়াকিন। মেসেজ করছেন। দুবার করলেন। লাল টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন।

.

ছ নম্বর দিন মিউনিখ, জার্মানি

পরের দিন সকালে অটোস্মিডট তাঁর কেমিস্ট্রি ল্যাবোরেটরির দিকে এগিয়ে চলেছেন। আগের সন্ধ্যাবেলা ওই আমেরিকান আগন্তুকের সঙ্গে তার যে কথা হয়েছিল, সে বিষয়ে ভাবছিলেন। ব্যাপারটা আশ্চর্যের। আমেরিকান ভদ্রলোক তাকে অবাক করে দিয়েছেন। তিনি কেন বাসের সহযাত্রীদের সম্পর্কে আগ্রহী? আমরা সবাই ওই ফ্লাইং সসারটা দেখেছি বলে? কেন এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাইলেন না? নাঃ, খুবই ভাববার মতো জিনিস।

অধ্যাপক ল্যাবোরেটরিতে ঢুকলেন। জ্যাকেট খুলে টাঙিয়ে রাখলেন। অ্যাপ্রন পরলেন। টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন। অনেক সপ্তাহ ধরে তিনি এখানে একটা রাসায়নিক পরীক্ষা করছেন। যদি এই পরীক্ষাটা শেষ পর্যন্ত সফল হয়, তিনি হয়তো নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাবেন। তিনি দুটো তরল পদার্থের মধ্যে মিশ্রণ ঘটালেন। অবাক কাণ্ড। এত উজ্জ্বল হলুদ আলো আসছে কোথা থেকে।

বিস্ফোরণটা ছিল ভয়ঙ্কর। পুরো ল্যাবোরেটরি ভবনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। দেওয়ালের গায়ে লেপটে গেল কাঁচ এবং মানুষের মাংসের টুকরো।

গুরুত্বপূর্ণ খবর চরম গোপনীয়তার সঙ্গে পাঠ করতে হবে।

 চার নম্বর চিহ্নিত মানুষ অটোস্মিডট, শেষ হয়ে গেছে।

খবর শেষ হল।

বেচারী রবার্ট, তিনি অধ্যাপকের মৃত্যুসংবাদ জানতে পারেননি। তখন তিনি প্লেনে চড়ে বসে আছেন, গন্তব্য রোম।

.

২৩.

ডাসটিন ফরনটন অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। তার হাতে এখন অসীম ক্ষমতা। অনেকটা মদের মতো। তিনি আরও চাইছেন। তার শ্বশুরমশাই উইলার্ড স্টোন শপথ নিয়েছেন।

ফরনটন শ্বশুরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। এখন শ্বশুরের সঙ্গেই লাঞ্চ করেন তিনি।

একবার শ্বশুরমশাইকে ফোন করলেন। সেক্রেটারি বললেন- আমি দুঃখিত, মি. স্টোন আজ আর আসবেন না।

–খুবই খারাপ লাগছে। আগামী শুক্তবারের লাঞ্চের ব্যাপারে কিছু বলা আছে কি?

দুঃখিত মি. ফরনটন, মি. স্টোন আগামী শুক্রবারে থাকবেন না।

ব্যাপারটা খুবই অবাক করা। ফরনটনের সাথে দু-সপ্তাহ আগে কথা হয়েছিল। একই উত্তর ভেসে এসেছে। উনি গেলেন কোথায়? প্রতি শুক্রবার কেন থাকেন না? উনি কি গলফ খেলেন? অথবা ওনার অন্য কোনো হবি আছে?

এই সমস্ত প্রশ্নের একটিই উত্তর। তা হল এক রপসী সুন্দরী।

উইলার্ড স্টোনের স্ত্রী প্রচন্ড সামাজিক। অনন্ত অর্থশালিনী। তিনি তার স্বামীর মতোই শক্তিশালী। কোনো ব্যাপারে অনুশোচনা করেন না।

ডাসটিন ফরনটনের মনে হল, ব্যাপারটার শেষ দেখে ছাড়তে হবে।

.

ভোর পাঁচটা, পরের শুক্রবার ডাসটিন ফরনটন একটা গাড়িতে বসে আছেন। উইলার্ড স্টোনের বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। কনকনে হাওয়া বইছে। ভোর হবার আর বেশি বাকি নেই।

স্টোনের এই স্বাভাবের অন্তরালে কী আছে, তা দেখতেই হবে। হঠাৎ ফরনটনের মনে হল, এভাবে বাজে সময় নষ্ট করে কী লাভ? এখন সকালে সাতটা, ড্রাইভওয়ের দরজা খুলে গেল। একটি গাড়ি বেরিয়ে এল। উইলার্ড স্টোন বসে আছেন চালকের আসনে। কিন্তু তার পরিচিত লিমুজিন গাড়ি নয়। এটা একটা ছোট্ট কালো ভ্যান, বাড়ির লোকেরা এটা ব্যবহার করে থাকেন। ফরনটনের সমস্ত শরীরে উত্তেজনা। উনি বুঝতে পারছেন। এই নাটকের অন্তরালে আছে অবশ্যই এক রহস্যময়ী নারী।

ফরনটন ওই গাড়িটিকে অনুসরণ করতে থাকেন। পথ চলে গেছে আরলিঙ্গটনের দিকে।

ব্যাপারটা খুব সাবধানে পরিচালনা করতে হবে, ফরনটন ভাবলেন, সামান্য ভুল হলেই সর্বনাশ।

নিজের ভাবনায় ফরনটন ব্যস্ত ছিলেন, তাই হয়তো আর অনুসরণ করতে পারলেন না।

কালো ভ্যানটা একটা ড্রাইভওয়েতে অদৃশ্য হয়ে গেল।

 ডাসটিন ফরনটন গাড়ি থামালেন। এখন কোন্ দিকে যাবেন? বুঝতে পারা যাচ্ছে না। এখন কি অপেক্ষা করবেন? দেখবেন। কোন মহিলা রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হয়?

ফরনটন গাড়িটাকে দাঁড় করালেন। ছোট্ট পথ দিয়ে এগিয়ে গেলেন। এই তো দোতলা বাড়ি। এখানেই আমার শ্বশুরমশাই ঢুকেছেন। বাড়ির পেছনে চলে যাওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। ফরনটন গেট খুললেন। ভেতরে ঢুকলেন। আহা, ভারী সুন্দর সাজানো বাগান।

তিনি গাছের ছায়ার ভেতর দিয়ে হাঁটতে লাগলেন। পেছনের দরজার দিকে চলে গেলেন। এখন কী করবেন? হাতে প্রমাণ চাই। টাটকা তাজা প্রমাণ। তা না হলে বৃদ্ধ মানুষটি হো-হো করে হেসে উঠবেন।

ফরনটন দেখলেন, পেছনের দরজায় কোনো তালা নেই। তিনি টুক করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন, একটা বিরাট পুরোনো দিনের কিচেনে পৌঁছে গেলেন। আশেপাশে কেউ নেই।

সামনে এগিয়ে গেলেন। মস্ত বড়ো রিসেপশন হল। তার পাশে একটা লাইব্রেরি। ফরনটন ধীরে ধীরে হাঁটছেন। শব্দ শোনা যাচ্ছে কি? না, জীবনের উন্মাদন নেই। তা হলে? বুড়ো শ্বশুরমশাই নিশ্চয়ই এখন তার বেডরুমে আছেন।

ফরনটন আর একটা দরজার সামনে এগিয়ে গেলেন। ওর কী? শ্বশুরমশাই দাঁড়িয়ে আছেন। চারপাশে অন্তত বারোজন লোক বসে আছেন। বিরাট টেবিলের চারপাশে।

উইলার্ড স্টোন শান্ত গলায় বললেন– ভেতরে এসো ডাসটিন, আমরা সকলে তোমার অপেক্ষায় বসে আছি।

.

২৪.

রোম শহরটা বারবার রবার্টকে অবাক করে দেয়। একটা অদ্ভুত স্মৃতির উন্মাদন। এখানেই সুশানের সঙ্গে কাটানো মধুচন্দ্রিমার প্রহর। আহা, কত-কত শুভ মুহূর্তের সমাহার। রোম শহরের নানা দিকে এত স্মৃতির সমাহার, রবার্টের ভালো লাগে না।

রবার্ট ভাবলেন, আমি কী কাজ করছি? আমি এই কাজে সফল হতে পারব?

ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত তাড়না। যে করেই হোক আমাকে সফল হতে হবে। তা না হলে নিজের সাথে লড়াইতে আমি হেরে যাব। হোটেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের মুখে এক গাল হাসি।

কমান্ডার বেলামি, কতদিন বাদে আপনার সাথে দেখা হল বলুন তো?

ধন্যবাদ, পিয়েত্রো। এক রাতের জন্য একটা ঘর পাব?

 –আপনার জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা।

 আগে যে ঘরে রবার্ট ছিলেন, সেই ঘরটি তাকে দেওয়া হল।

কমান্ডার কিছু লাগলে বলবেন।

আমার কী চাই, কমান্ডার ভাবলেন, একটা অদ্ভুত অলৌকিক ঘটনাপ্রবাহ।

মনটাকে পরিষ্কার করতে হবে। একজন ধর্মযাজক কেন রোম থেকে সুইজারল্যান্ডে যাবেন। অনেকগুলো সম্ভাবনা আছে। ছুটি কাটাতে যেতে পারেন, অথবা যাজকদের ধর্মসভায় যোগ দিতে। তিনি ছিলেন ওই বাসের একমাত্র যাজক। এর থেকে কী প্রমাণিত হচ্ছে। উনি কোনো দলে যাননি। তাহলে? বন্ধুদের কাছে বেড়াতে যাওয়া অথবা পরিবারের মানুষদের নিয়ে। কিংবা উনি একটা দলে ছিলেন। দলভুক্ত অন্য সদস্যরা শেষ মুহূর্তে মত পাল্টে ছিলেন। রবার্টের চিন্তাধারা ঘুরতে থাকে বৃত্ত করে।

তিনি আবার চিন্তার প্রথম অধ্যয়ে ফিরে এলেন। কীভাবে ওই যাজকমশাই সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তাঁর গাড়ি না থাকার সম্ভাবনা বেশি। কেউ কি লিভ দিয়েছিল? প্লেনে ভ্রমণ? ট্রেন অথবা বাস! যদি ছুটি কাটাতে যান তা হলে বেশি সময় হাতে ছিল না। প্লেনে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। এবার, এবার চিন্তাধারা কেন্দ্রীভূত হল। এয়ার লাইন্সে গেলে কী হয়? সেখানে তো যাত্রীদের পেশার কথা লেখা থাকে না, আর যদি? ওই যাজক অন্য কোনো নাম নিয়ে থাকেন? না, কিছুই বুঝতে পারা যাচ্ছে না।

.

ভাটিকান, মহামান্য পোপের রাজকীয় প্রাসাদ। ভাটিকান হিলের ওপর অবস্থিত। টিবা নদীর পশ্চিমপ্রান্তে, রোম শহরের উত্তর-পশ্চিমে। এখানে সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকা নামে একটি অসাধারণ স্থাপত্য কর্ম আছে। একদা যা মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর দ্বারা চিত্রিত হয়েছিল। আছে উঁচু পিজা, সারাদিন এখানে ধর্মসংগীত শোনা যায়।

রবার্ট এখানে এসে পৌঁছে গেছেন। তিনি জনসংযোগ অফিসে এলেন।

এক তরুণ ভদ্রলোক জানতে চাইলেন- বলুন স্যার, আপনাকে কীভাবে আমি সাহায্য করতে পারি?

রবার্ট তাঁর পরিচয়পত্রটা দেখালেন– আমি টাইম ম্যাগাজিনের তরফ থেকে এখানে এসেছি। আমি কয়েকজন ধর্মযাজকের ব্যক্তিগত জীবন এবং দর্শন সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখতে আগ্রহী, তারা সুইজারল্যান্ডে একটা কনভোকেশনে গিয়েছিলেন। দু-সপ্তাহ আগে। আপনি এ ব্যাপারে কোনে খবর দিতে পারবেন কি?

ভদ্রলোক বললেন- হ্যাঁ, কয়েকজন ধর্মযাজককে ভেনিসে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সুইজারল্যান্ডে নয়। আমি দুঃখিত। সাহায্য করতে পারছি না বলে।

ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোথায় গেলে খবর পাব বলুন তো?

–আপনি কি বলতে পারেন, যে যাজকদের আপনি খুঁজছেন, তারা কোন্ দলভুক্ত?

–আপনি কী বলছেন?

 –এখানে অনেকগুলো উপশাখা আছে, কোন্ দল বললে হয়তো আমি বলতে পারতাম।

 রবার্টের মাথা গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।

 রবার্ট জানতে চাইলেন অন্য কোনো সাজেশন?

না, আমি দিতে পারছি না।

রবার্ট ভাটিক্যান থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। রোমের রাস্তায় উদ্দেশ্যবিহীনভাবে হাঁটছেন। কত মানুষ হেঁটে চলেছেন। না, পিজায় বসলেন, কাফেতে গেলেন। কফির জন্য বললেন।

হঠাৎ তার মনে হল, ওই যাজকমশাই কি এখনও সুইজারল্যান্ডে আছেন? উনি কোন্ দলভুক্ত আমি কী করে জানব? অধ্যাপকের কথা থেকে বুঝেছি, উনি রোমান টানে কথা বলেছেন।

ড্রিঙ্কের পাত্রে চুমুক দিলেন, বিকেলের প্লেনে ওয়াশিংটন পৌঁছোতে হবে।

রবার্ট তাকালেন, কাফের একদিকে প্যাসেঞ্জাররা নামছে। দুজন যাজককে পাওয়া গেল। রবার্ট দেখলেন, ভালোভাবে তাকালেন। যাজকরা কনডাক্টরের কাছে এগিয়ে গেছেন। তাঁরা পয়সা দিলেন না, বসার জন্য সিট পেলেন।

ওয়েটার জানতে চাইলেন- আপনার চেক, সিনর।

রবার্ট যেন তার কথা শুনতেই পাচ্ছে না। তাঁর মন দ্রুত ছুটে চলেছে এখানকার ক্যাথোলিক চার্চে, যাজকদের জন্য আলাদা সুযোগ সুবিধা আছে।

সুইজ এয়ারের বাড়িটায় পৌঁছে গেছেন রবার্ট।

কাউন্টারের পাশে বসে থাকা ভদ্রলোক বললেন- আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করব?

–আমি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

রবার্ট পকেট থেকে তার পরিচয়পত্রটা বের করলেন মাইকেল হাডসন, ইন্টারপোল।

বলুন হাডসন, কী করতে পারি?

কিছু কিছু বিমান সংস্থা অভিযোগ করেছে, এখানে নাকি দাম কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোমে, কিন্তু আমরা তা করতে পারি না। যাত্রীদের ভাড়া সব জায়গায় একই রাখতে হবে।

সুইজ এয়ার তো কখনও তা করে না, মি. হাডসন। সকলকেই একই ভাড়া দিতে হয়।

সকলকে?

হ্যাঁ, খালি এয়ারলাইনের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়া হয়।

–কেন, আপনারা ধমর্যাজকদের জন্য ছাড় দেন না।

, এখানে তাদের পুরো ভাড়া দিতে হয়।

 –এখানে… রবার্টের কথাটা মনে হল।

এবার তার পরবর্তী পদক্ষেপ, এটা শেষ আশা- আলিতালিয়া।

ছাড়? ম্যানেজার অবাক। আমরা শুধু আমাদের কর্মচারীদের ছাড় দিই?

ধর্মযাজকদের জন্য?

 ম্যানেজারের মুখ উজ্জ্বল।–হ্যাঁ, তা দিতেই হবে। ক্যাথোলিক চার্চের সঙ্গে আমাদের ব্যবস্থা করা আছে।

রবার্টের মন আনন্দে উদ্বেল একজন ধর্মযাজক যদি রোম থেকে উড়তে চান সুইজারল্যান্ডে, তাহলে কি এই এয়ারলাইনটা ব্যবহার করতে পারেন?

-হ্যাঁ, এটাই সস্তা।

রবার্ট বললেন– আমদের কম্পিউটারকে সর্বশেষ তথ্য সংযুক্ত করতে হবে। আপনি কি বলবেন, গত দু-সপ্তাহে কতজন ধর্মযাজক এখান থেকে সুইজারল্যান্ডে উড়ে গেছেন? তাদের কোনো রেকর্ড আছে কি?

–হ্যাঁ, রেকর্ড তো রাখতেই হয়, করের ব্যবস্থার জন্য।

–এই তথ্যটা আমার চাই।

–আপনি জানতে চাইছেন, কজন ধর্মযাজক জুরিখ কিংবা জেনেভাতে গিয়েছিলেন, তাই তো? আমি কম্পিউটারটা দেখে আসছি।

পাঁচ মিনিট বাদে ওই ভদ্রলোক কম্পিউটার প্রিন্ট আউট হাতে নিয়ে ফিরে এলেন।

–গত দুসপ্তাহে মাত্র একজন আমাদের আলিতালিয়া বিমান ব্যবহার করেছিলেন।

 প্রিন্ট আউট দেখে উনি বললেন- সাত তারিখে উনি রোম ছেড়ে যান। জুরিখের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

–ওনার নাম?

–ফাদার, রোমেরো প্যাটরিনি।

–ঠিকানা।

কাগজ দেখে উনি ঠিকানাটা লিখে দিলেন- উনি বাস করেন অরভিয়েটোতে। আর কোনো তথ্য?

রবার্ট চলে গেলেন।

.

২৫.

অরভিয়েটো, ইতালি।

 গাড়িটা থামল নির্দিষ্ট জায়গাতে। এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা হবে। এটা এক বিখ্যাত ক্যাথিড্রাল। চারপাশ অন্তত ছটি চার্চ আছে।

শহরটা ভারী সুন্দর। প্রাচীন চিহ্নগুলোকে ধরে রেখেছে। একটা খোলা আকাশ বাজার আছে। চাষীরা তাদের শাকসবজি বিক্রি করছে।

রবার্ট এক বৃদ্ধ যাজকের সন্ধান পেলেন। ক্যাথিড্রালের মধ্যে।

ফাদার, আমি একজন ধর্মযাজকের সন্ধান করছি, যিনি গত সপ্তহে এখান থেকে সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন।

ওই ভদ্রলোক বললেন, মুখে বৈরীতার ছাপ– আমি এ ব্যাপারটা আলোচনা করতে পারব না।

রবার্ট অবাক– কেন বলুন তো?

উনি আমাদের চার্চের নন, উনি সানজিওভেনেলা চার্চের।

রবার্টের হঠাৎ মনে হল, ভদ্রলোক এমন ব্যাবহার করলেন কেন?

.

অবশেষে সানজিওভেনেলা। একটা সুন্দর অঞ্চলে অবস্থিত। মধ্যযুগীয় ছাপ আছে।

এক অল্প বয়সী যাজক এগিয়ে এলেন।

সিনর, আপনি কী জন্য এসেছেন?

সুপ্রভাত, আমি একজন যাজকের সন্ধান করছি, যিনি সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন গত সপ্তাহে।

-হ্যাঁ, ব্যাপারটা ভাবতে পারা যাচ্ছে না। উনি হলেন ফাদার প্যাটরিনি। শয়তানের রথটা দেখার পর তিনি তা সহ্য করতে পারেননি। তার স্নায়ুবিক বিকলন ঘটেছে। অধোম্মাদ অবস্থা।

–এটা শুনে আমার খারাপ লাগছে। উনি কোথায়? আমি কি ওনার সঙ্গে কথা বলতে পারি?

–ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পিজাডির কাছে। আমার মনে হয় ডাক্তাররা অনুমতি দেবেন না।

রবার্ট দাঁড়িয়ে আছেন, বুঝতে পারা যাচ্ছে, চিন্তাগ্রস্ত। এমন একজন মানুষ, যাঁর শরীর খারাপ। শরীরে দুর্বলতা। তিনি কি কোনো সাহায্য করতে পারবেন?

হাসপাতালটা একতলা, শহরের উপকণ্ঠে বিরাট বড়ো বাড়ি।

রবার্ট গাড়িটা এককোণে রাখলেন। ছোট্ট লবির ভেতর ঢুকে পড়লেন। রিসেপশন ডেস্কে এক নার্স বসেছিলেন।

রবার্ট বললেন– সুপ্রভাত, ফাদার প্যাটরিনির সঙ্গে দেখা করতে পারি কি?

–না, উনি কথা বলতে চাইছেন না।

 রবার্ট এখানেই থামবেন না। যে করেই হোক তাকে কথা বলতে হবে।

 তিনি বললেন- আমি কিন্তু তার জন্যই এসেছি।

–উনি আপনাকে আসতে বলেছিলেন?

–হ্যাঁ, উনি আমেরিকাতে আমাকে লিখেছিলেন। আমি এত দূরে এসেছি, শুধু ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য।

নার্স বললেন- কেন উনি আপনাকে ডেকেছেন, আমি বুঝতে পারছি না। ওনার শরীর খুবই খারাপ।

–আমাকে দেখলে শরীর ভালো হবে।

ডাক্তার এখানে নেই, ঠিক আছে, আপনি যেতে পারেন। তবে মাত্র কয়েক মিনিট থাকবেন, কেমন?

রবার্ট ছোট্ট ঘরে ঢুকে পড়লেন, বিছানায় যে মানুষটি শুয়ে আছেন, তার সমস্ত শরীরে মৃত্যুর ধূসর ছায়া। রবার্ট সামনে এগিয়ে গেলেন, বললেন- ফাদার?

ভদ্রলোক তাকালেন এত দুঃখ যন্ত্রণা কেন?

–ফাদার আমার নাম হল…

ভদ্রলোক রবার্টের হাত চেপে ধরে বললেন আমাকে সাহায্য করুন। আমার সমস্ত বিশ্বাস চলে গেছে। সারাজীবন ধরে আমি ঈশ্বরের আরাধনা করেছি। আমি বুঝতে পারছি, ঈশ্বর বলে কিছু নেই। আছে শুধু শয়তান।

ফাদার।

–আমি নিজের চোখে দেখেছি। দুজন বসেছিল, শয়তানের রথে। আঃ, আমি ভাবতে পারছি না, অন্যরা আসবে। আমরা নরকের অন্ধকারে পৌঁছে যাব।

ফাদার, আমার কথা শুনুন। আপনি যা দেখেছেন, সেটা শয়তান নয়, এটা হল একটা মহাকাশ যান।

ধর্মযাজক ভদ্রলোক আবার রবার্টের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন আপনি কে? এখানে কেন এসেছেন?

–আমি একজন বন্ধু। আপনাকে সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ সম্বন্ধে কয়েকটা প্রশ্ন করতে এসেছি।

-ওঃ! আমি যে কেন ওই বাসের যাত্রী হলাম?

 ভদ্রলোক আবার উত্তেজিত।

রবার্ট কথা বললেন–উনি বললেন, আপনার পাশে এক টেকসাস ভদ্রলোক বসেছিলেন, মনে আছে। বকবক করছিলেন।

-হ্যাঁ, আমার মনে আছে।

–উনি কোথায় থাকেন, কিছু বলেছেন কি?

–উনি আমেরিকা থেকে এসেছেন।

–হ্যাঁ, টেকসাস থেকে। ঠিকানা দিয়েছিলেন।

–হ্যাঁ, উনি বলেছিলেন।

ফাদার? কোথায় বলুন তো?

–টেকসাস, শুধু টেকসাস বলেছিলেন।

–ঠিক আছে।

 –আমি দেখেছি, আমি নিজের চোখে দেখেছি। ভগবান যদি আমাকে অন্ধ করে দেন।

ফাদার, টেকসাসের কোন জায়গা তিনি বলেছেন?

–হ্যাঁ, বলেছিলেন, পেনটেরোসা।

–ওটা তো টেলিভিশনে বলা হয়েছে। এটা একজন সত্যিকারের মানুষের নাম। উনি আপনার পাশে বলেছিলেন।

-হ্যাঁ, এসে গেছে। বাইবেল মিথ্যে কথা বলছে। ওই শয়তানরা পৃথিবী জয় করবে। দেখো-দেখো, আমি দেখতে পাচ্ছি।

নার্স এসে গেলেন। উনি বললেন রবার্টকে, এবার আপনাকে যেতে হবে, সিনর।

–আর এক মিনিট।

–এবার যেতেই হবে। রবার্ট শেষবারের মতো ওই যাজকের মুখের দিকে তাকালেন। রবার্ট ফিরে যাবার জন্য পা বাড়ালেন। আর কিছুই বোধহয় করা গেল না। টেকসাস মানুষের ঠিকানা পাওয়া গেল না।

.

 রবার্ট গাড়িতে ফিরে এলেন। রোমের পথে এগিয়ে চললেন। এখন আর কী বাকি রইল? রাশিয়ান ভদ্রমহিলা, টেকসাস ভদ্রলোক, হাঙ্গেরির মানুষ। কিন্তু না, এনাদের বোধহয় আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না। এতদূর এগিয়ে এসেছি। আর কিছু? না, পেন্টারোসার ভদ্রলোক খুব টেলিভিশন দেখেন। ভুল বকছেন।

তার মানে? একটা বিখ্যাত টেলিভিশন শো। বোলানডা পেন্টারোসা, ওখানে কারবাইট পরিবার বাস করতেন। রবার্ট গাড়ির গতি আস্তে করলেন। তিনি রাস্তার দুপাশে তাকাচ্ছেন। ইউ টার্ন নিলেন। তাকে আবার অরভিয়েটোর দিকে যেতে হবে।

আধঘন্টা কেটে গেছে। রবার্ট একটা বারে বসে আছেন। বললেন- আপনাদের শহরটা সুন্দর শান্তির বাতাবরণ।

-হ্যাঁ, আমরা এখানে ভালোই আছি। এর আগে কি ইতালিতে এসেছেন?

–হ্যাঁ, আমি রোমে মধুচন্দ্রিমা কাটিয়েছি।

কথাটা কানে বাজল। সুশান বলেছিল– ছোটো থেকে আমার স্বপ্ন ছিল, বড়ো হয়ে একবার ইতালি বেড়াতে যাব।

আঃ, রোম, বড় বড় শহর, বড্ড বেশি শব্দ।

–হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি।

এখানে আমরা সুখেই আছি।

 –এখানে অনেক ছাদের মাথায় টেলিভিশন অ্যান্টেনা আছে।

–হ্যাঁ, আমরা সকলেই টেলিভিশনের ভক্ত হয়ে উঠেছি।

–এখানে কতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল আছে?

মাত্র একটা।

–ওখানে আমেরিকার শো দেখানো হয়?

না-না, এটা হল সরকারী চ্যানেল। আমরা ইতালির তৈরি সিরিয়াল দেখতে পারি। ধন্যবাদ।

.

রবার্ট অ্যাডমিরাল হুইট্যাকারকে ফোন করলেন। রবার্ট অফিসটা স্পষ্ট দেখতে পেলেন। চারপাশে কর্মব্যস্ততা।

বৃদ্ধ ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বর শোনা গেল কোথায় আছেন আপনি?

–আমি বলতে পারছি না, স্যার?

–আমি বুঝতে পারছি কী করতে হবে।

কারোর সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাইরের সাহায্য দরকার। আপনি কি সাহায্য করবেন?

-হ্যাঁ, চেষ্টা করব।  

–টেকসাসের কোথাও কি পেনটেরোসা নামে জায়গা আছে?

–একটু ভেবে দেখতে হবে। আমি জানাচ্ছি।

–আমাকে খবরটা দিন তো, এক-দুঘণ্টার মধ্যে, ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন।

রবার্টের মনে হল, এবার বোধহয় আশার আলো পাওয়া যেতে পারে।

লাইনটা কেটে গেছে।

.

রবার্ট অ্যাডমিরাল হুইট্যাকারকে ফোন করলেন। আমি আপনার ফোনের জন্য বসে আছি।

-খরবটা পেয়ে গেছি। হুইট্যাকার বললেন।

 রবার্ট জানতে চাইলেন- বলুন?

-টেকসাসে পেনটেরোসা নামে একটা অঞ্চল আছে। ওয়াকোর পাশে, ড্যান ওয়েনে নামে এক ভদ্রলোক এটার মালিক।

রবার্টের নিঃশ্বাস এখন স্বাভাবিক ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ অ্যাডমিরাল। ফিরে গেলে ডিনার খাওয়াবেন তো?

রবার্ট ফোন করলেন জেনারেল হিলিয়াডকে। বললেন–আমি আর একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পেয়েছি, ফাদার প্যাটরিনি।

একজন যাজক।

–হ্যাঁ। অরভিয়েটোতে উনি আছেন। হাসপাতালে। খুবই অসুস্থ। আমার মনে হয় না যে, ইতালিয় কর্তৃপক্ষ ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।

ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ, কমান্ডার।

.

দু-মিনিট কেটে গেছে। জেনারেল হিলিয়াড জানুসের সঙ্গে কথা বলছেন।

কমান্ডার বেলামির কাছ থেকে খবর পেয়েছি, সর্বশেষ প্রত্যক্ষদর্শী, যাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে, তিনি একজন ধর্মযাজক। অরভিয়েটোর:ফাদার প্যাটরিনি।

ব্যাপারটা ভেবে দেখতে হবে।

.

খবর, গুরুত্বপূর্ণ খবর, অপারেশন ডুমস ডে। পাঁচ নম্বর, ফাদার প্যাটরিনা।

খবর শেষ হয়ে গেল।

রোমের প্রান্তসীমায় একটি অফিস। চারপাশে ফার্মহাউস। আপাত শান্ত নিরীহ এই অফিসটির দিকে তাকালে বুঝতে পারা যাবে না, এখানে কত কাজ চলেছে।

কর্নেল ফ্রানসেস কোসিজার ওই ফ্ল্যাশ মেসেজটা পড়লেন। কর্নেলের বয়স বছর পঞ্চাশ। সুগঠিত চেহারা। বুলডগের মতো মুখ। তিনি আবার মেসেজটা পড়লেন।

তার মানে? শেষ পর্যন্ত শয়তানরা কাজ করতে শুরু করেছে। আমাদের এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

.

মধ্যরাত। অরভিয়েটো হাসপাতাল।

নার্স বললেন- সিনর ফিলিপ্পির সাথে দেখা করতে চান, অথবা অন্য কেউ?

ধমর্যাজিক শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ওই যাজকের ঘরে যাবেন। ভদ্রলোক ঘুমিয়ে আছেন। আহা, হাতদুটো বুকের কাছে জড়ো করা। চাঁদের আলো এসে পড়েছে। জানালা দিয়ে। সুন্দর শান্ত সমাহিত পরিবেশ।

সিস্টার একটা ছোট্ট বাক্স বের করলেন। তিনি কাট গ্লাসের পাত্র হাতে নিলেন। সেটা ওই বৃদ্ধ যাজকের হাতে তুলে দিলেন। এর মধ্যে কী আছে? এর মধ্যে আছে পুঁথি, যা দিয়ে আমরা ঈশ্বরের নাম জপি। হঠাৎ হাতে কিছু ঠেকল তার। রক্তরেখা বেরিয়ে এল। বাক্স থেকে একটা ছোটো বোতল বের করলেন তিনি। আই ড্রপারের সাহায্যে বিষ ঢুকিয়ে দিলেন।

কয়েক মুহূর্ত সময় দিলেন। বিষ কাজ করতে শুরু করেছে। সিস্টার ক্রশ চিহ্ন আঁকলেন বুকে। অন্ধকারের মধ্যে নীরবে বেরিয়ে গেলেন।

সংবাদ পাওয়া গেল। গোপন খবর, গোপন অপারেশন ডুমস ডে পাঁচ নম্বর ফাদার প্যাটরিনি, কাজ শেষ হয়ে গেছে।

.

২৬.

ফ্রাঙ্ক জনসনকে নেওয়া হয়েছে, কারণ ভিয়েতনাম যুদ্ধে তার অভিজ্ঞতা আছে। একসময় তাকে বন্ধুরা আদর করে কিলিং মেশিন নামে ডাকত। তিনি শুধু হত্যা করতে ভালোবাসেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমান সত্তা।

জানুস বললেন- হ্যাঁ, এই আমাদের আদর্শ চরিত্র। আমি ওনাকে হারাতে চাইছি না।

তখন এক ক্যাপ্টেন ফ্রাঙ্ক জনসনের সঙ্গে কথা বলছেন।

আমাদের সরকার সম্পর্কে চিন্তা করো না, এর অন্তরালে কিছু উৎসাহী মানুষ আছেন। তুমি ভয় পেও না। আমরা চিরদিন কেন আরবদের ওপর নির্ভর করব? নিজস্ব খনির সন্ধান করতে হবে।

-হ্যাঁ, আমি আপনার কথার সারমর্ম বুঝতে পারছি। ফ্রাঙ্ক জনসন বললেন।

–আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান, জনসনের মুখের দিকে তাকিয়ে উনি আবার বললেন, যদি কংগ্রেস আমাদের দেশটাকে বাঁচাবার চেষ্টা না করে তা হলে আমাদেরই করতে হবে।

–আমাদের?

–হ্যাঁ। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।

পরের আলোচনা আরও সার্থক এবং সদর্থক।

-ফ্রাঙ্ক, একদল স্বদেশপ্রেমী এইভাবেই কাজ করতে চাইছেন। তারা পৃথিবীর অবস্থাটাকে পাল্টে দেবেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসম্পন্ন ভদ্রলোকেরা আছেন। তারা একটা কমিটি করে। কাজ করতে শুরু করেছেন। আপনি কি যোগ দিতে চাইছেন?

ফ্রাঙ্ক বললেন- হ্যাঁ, আমি খুবই আগ্রহী।

.

এইভাবেই শুরু হল। পরের অধিবেশনটা হয়েছিল কানাডার অটোয়াতে। ফ্রাঙ্ক জনসন এই কমিটির কজন সদস্যের সঙ্গে দেখা করলেন। হ্যাঁ, অন্তত গোটা ছয়েক দেশের প্রতিপত্তিশালী মানুষরাই এই দলটি তৈরি করেছেন।

এই ভদ্রলোক ফ্রাঙ্ককে বোঝাল– আমরা যথেষ্ট সংঘবদ্ধ। এখানে বিভিন্ন বিভাগ আছে, বিজ্ঞাপন বিভাগ, প্রচার বিভাগ, বিনিয়োগ বিভাগ, কর্মসংস্থান বিভাগ, জনসংযোগ বিভাগ।

আর আছে মৃত্যু বিভাগ। পৃথিবীর সমস্ত গুপ্তচর সংগঠন আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত।

–আপনি বলতে চাইছেন, গুপ্তচর সংঘের প্রধানরা…

–না, ঠিক প্রধানেরা নয়, সহকারীরা। আমরা এভাবেই পৃথিবীর সর্বত্র আমাদের জাল ছড়িয়ে দিয়েছি।

পৃথিবীর নানা প্রান্তে মির্টিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে, মরক্কোতে, চিনে। জনসন প্রত্যেকটা মিটিং-এ যোগ দিচ্ছেন।

.

ছমাস বাদে কর্নেল জনসনের সঙ্গে জানুসের দেখা হল।

গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

কর্নেল, আপনাকে আমি ভালো ভালো খবর দিয়েছি বলুন।

ফ্রাঙ্ক জনসন বললেন- হা, কাজটা আমার ভালো লাগছে।

এবার আপনি সাহায্য করবেন তো?

 কী করতে হবে বলুন।

–সিক্রেট এজেন্টদের ট্রেনিং দিতে হবে।

-আমি পারব। তারা কে কোন কাজে যুক্ত সেটা বের করতে হবে। আমি আপনার ওপর এই দায়িত্ব দিতে চাইছি। আমরা সবথেকে ভালো মানুষকে চয়ন করি।

কর্নেল জনসন বললেন- ঠিক আছে, আমার কোনো অসুবিধা হবে না। আমি আরও আরও বেশি কাজ করতে চাইছি। অপারেশন ডুমস ডে-ওর কথা শুনেছিলাম, এই ব্যাপারে আমি যোগ দিতে পারি কি?

-ঠিক আছে, আপনাকে নিয়ে নিলাম।

ধন্যবাদ। এই সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে কখনও দুঃখ প্রকাশ করতে হবে না। এভাবেই কর্নেল ফ্রাঙ্ক জনসন এক সুখী মানুষে পরিণত হলেন। এরপর তাকে আরও তৎপর হয়ে উঠতে হবে।

.

২৭.

আট নম্বর দিন। ওয়াকে, টেকসাস।

ড্যান ওয়েনের সকালটা ভালোভাবে শুরু হয়নি। বলতে গেলে বিপদের পর বিপদ। ওয়াকো কান্ট্রিকোর্ট হাউস থেকে তিনি এইমাত্র ফিরেছেন। তার বিরুদ্ধে নানা মামলা দায়ের করা হয়েছে। দেউলিয়ার মামলা। বউ, এক অল্প বয়সী ডাক্তারের সাথে অবৈধ প্রেমে মত্ত। ডিভোর্স করে চলে গেছে। যা ছিল সব নিয়ে। আর কী? একটির পর একটি ব্যবসায় ক্ষতি। কিন্তু কেন? ড্যান ওয়ানে ভাবেন, আমার নিজের দোষে কি?

এক সময় আমি এক ভালো স্বামী ছিলাম। বড়ো ব্যবসায়ী। এখন সব অন্ধ অতীত।

ড্যান ওয়েনে এক অহংকারী মানুষ। তিনি টেকসাস সম্পর্কে সব কটা জোকস জানেন। টেকসানরা হৈ-হৈ করতে ভালোবাসেন। বেহিসেবী উন্মাদনা। সবই তো তিনি করেছেন। আজ কেমন যেন হয়ে গেল।

দেখা করলেন ধমর্যাজকের সঙ্গে। বললেন– ওয়াকোর সব কিছু আছে, তা সত্ত্বেও কিছু নেই কেন বলুন তো? আমরা তেইশটি স্কুল স্থাপন করেছি। বিরাট বিশ্ববিদ্যালয়। চারটি সংবাদপত্র। দশটি রেডিও স্টেশন। পাঁচটি টেলিভিশন স্টেশন। টেকসাস র‍্যানজার ফল। তার মানে? ইতিহাসের পাতায় একথাই লেখা আছে। ফাদার, ফ্রানজোস নদীর কথা কি মনে পড়ে? সেখানে আমরা সাফারি র‍্যানচ করব। একটা আর্ট সেন্টার। আমি বলছি, ওয়াকো একদিন বিশ্বের অন্যতম সেরা শহরে পরিণত হবে। আপনি এখানে আসবেন তো?

ওই বৃদ্ধ যাজক হেসেছিলেন। ওয়েনে ভেবেছিলেন, হয়তো এই স্বপ্নটা একদিন সফল হবে।

ড্যান ওয়েনের বাবা তার হাতে এক হাজার একর জায়গা দিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বিরাট পশুশালা তৈরি হল। দু হাজার থেকে দশ হাজার। দিয়েছিলেন দামী উৎসাহী ঘোড়া। তার থেকে অনেক টাকা আসত।

ওয়েনে এক সুইজ ভদ্রলোকের কথা শুনেছিলেন। তিনি টেকসাসে ঘোড়দৌড়ের আসর বসাতে ইচ্ছুক। জুরিখে উড়ে গেলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। ব্যাপারটা শেষ হল কি? বৃথা অনুসন্ধান নাঃ, উনি চাইছেন একটা ফল-ফুলের বাগান করতে।

এইভাবেই ড্যান ওয়েনের পতন শুরু হল। শেষ পর্যন্ত উনি কোথায় পৌঁছোবেন কেউ জানে না।

জনি, কী হবে বলো তো? আমি কি আর উঠতে পারব?

 ড্যান তাঁর প্রিয়তম মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করলেন- হ্যাঁ, আবার ভালোভাবে চেষ্টা করতে হবে। 

তখনই ডোরবেল বেজে উঠল।

 রবার্ট বললেন আপনি কি ড্যানিয়েল ওয়েনে?

-হ্যাঁ, আমার নাম ড্যান।

তিনি রেগে আরও বললেন

–আমার প্রাক্তন বউ কি আপনাকে চর হিসেবে লাগিয়েছে নাকি? আপনি কি তার হয়ে কাজ করছেন?

না।

–ঠিক আছে। আপনি বোধহয় ওই উড়ন চাকির সম্পর্কে খবর চাইছেন? হ্যাঁ, ব্যাপারটা অদ্ভুত। প্রতি মুহূর্তে রং পাল্টাচ্ছিল। তার মধ্যে কিছু শত্রু বসেছিল- মৃত অথবা জীবিত, বুঝতে পারা যাচ্ছিল না। এখনও আমি চোখ বন্ধ করলে ওই ছবিটার স্বপ্ন দেখি।

মি. ওয়েনে, আপনি অন্য সহযাত্রীদের সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন? যাঁরা বাসে ছিলেন?

-না, আমি তো একাই ছিলাম।

–কিন্তু আপনি কয়েকজন সহযাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

-সত্যি কথা বলতে কী, আমার মাথায় অনেক কিছু ছিল। আমি কারও দিকে সেভাবে নজর দিই নি।

মনে পড়ে তাদের কারও কথা?

 ওয়েনে এক মুহূর্ত নীরবতা পালন করলেন। এক ইতালিয় যাজক ছিলেন। আমি তার সাথেই বেশি কথা বলেছি। ভদ্রলোক খুবই ভালো প্রকৃতির। আর কী বলব? ওই উড়ন চাকি তার মনকে ধাক্কা দিয়েছিল। শয়তানের কথা বলছিলেন।

–আর কিছু?

-না-না, হ্যাঁ একটু ভাবতে দিন তো। আমি এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, যাঁর ব্যাঙ্ক আছে কানাডাতে। সত্যি কথা বলতে কী, এখানে আমার একটু সমস্যা আছে। আর্থিক সমস্যায় হয়তো এই ব্যবসাটাকে আমি আর ধরে রাখতে পারব না। আমি ব্যাক্তারদের সাথে কথা বলতে চাই না। তারা রক্ত চুষে খেতে ভালোবাসে। ভেবেছিলাম, ওই ভদ্রলোক বোধহয় আলাদা প্রকৃতির হবেন। যখন আমি শুনলাম, উনি একজন ব্যাঙ্কার, আমি ওনার কাছে ঋণের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম। উনি অন্যসব ব্যাঙ্কারদের মতোই নির্বিকার এবং নিমর্ম।

-উনি এসেছিলেন কানাডা থেকে, তাই তো?

–হ্যাঁ, ফোর্থ স্মিথ নর্থওয়েস্ট রিটারিতে। এইটাই আমি বলতে পারি।

রবার্ট তার উত্তেজনা দমন করার চেষ্টা করলেন।

মি. ওয়েনে, আপনার কথা আমার কাজে দেবে।

–সত্যি?

–হ্যাঁ।

আপনি কি রাতের খাবার খাবেন?

না, ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

এবার যেতে হবে ফোরথ স্মিথে, কানাডাতে, উত্তর পশ্চিম প্রদেশ।

.

রবার্ট জেনারেল হিলিয়াডকে বললেন- আর একজনকে পাওয়া গেছে, ড্যান ওয়েনে, উনি টেকসাসের ওয়াকো অঞ্চলের বাসিন্দা, ওনার বিরাট অশ্বশালা আছে। মস্তো বড়ো।

–ঠিক আছে। ডালাসের অফিসের সাথে এখনই কথা বলতে হবে।

 খবরটা ভেসে এল অত্যন্ত গোপনীয়, ছ-নম্বর সাক্ষী, ড্যানিয়েল ওয়েনে, ওয়াকে, খবরটা শেষ হয়ে গেল।

.

ভার্জিনিয়া, সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্সির ডেপুটি ডিরেক্টর ওই ট্রান্সমিশনটা ভালোভাবে পড়লেন। ছ নম্বর দেওয়া আছে। কমান্ডার বেলামি সাংঘাতিক ভালো কাজ করছেন। তাকে নির্বাচন করাটা সত্যি একটা ভালো সিদ্ধান্ত। জানুস ঠিকই বলেছেন। জানুসের কথা কখনও ভুল হয় না।

ডিরেক্টর আবার ওই মেসেজের দিকে তাকালেন, আঃ, মনে করো এটা একটা অ্যাকসিডেন্ট, তিনি ভাবলেন, ব্যাপারটা ঘটানো খুব একটা শক্ত হবে না। তিনি একটা বাজারে হাত দিলেন।

.

র‍্যানচে দুজন ভদ্রলোক এসেছে। ঘন নীল রঙের ভ্যানে চড়ে। ভ্যানটা বাগানের ধারে রেখে দিল। চারপাশে তাকাল। ড্যান ওয়েনে ভাবলেন, তারা বোধহয় এই র‍্যানচের দখলদারী নেবার জন্য এসেছে। তিনি দরজা খুলে দিলেন।

–ভ্যান ওয়েনে?

বলুন কী করতে পারি?

দুজন ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে।

 তাদের মধ্যে যে একটু লম্বা সে, আরো কাছে এগিয়ে এল।

কিছু বোঝার আগেই লোহার অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হল ড্যানের মাথার ওপর। ড্যান চোখে অন্ধকার দেখলেন।

দেহটা তুলে ফেলা হল ওই আস্তাবলের মধ্যে, সুন্দর চেহারার শক্তিশালী একটা কালো রঙের ঘোড়া, ইলেকট্রিক চাবুক দিয়ে তাকে উত্তেজিত করা হল। তারপর? ঘোড়াটা অচৈতন্য ড্যানের শরীরের ওপর লাফালাফি করতে শুরু করল। পায়ের এক-একটি আঘাত ড্যানকে নরকের বাসিন্দা করে দিল।

একটু বাদেই সেই শুভ সংবাদটা পাওয়া গেল। অত্যন্ত গোপনীয়। ছ-নম্বর, ড্যানিয়েল ওয়েনে, ওয়াকো, কাজ শেষ হয়ে গেছে।

.

২৭.

ন নম্বর দিন, ফোরথ স্মিথ, কানাডা।

ফোরথ স্মিথ, উত্তর পশ্চিম প্রদেশের একটি উন্নয়নশীল শহর। দু-হাজার লোক বাস করে। তাদের বেশির ভাগই চাষী কিংবা পশুশালার মালিক। ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। আবহাওয়াটা ভারি সুন্দর। শীতকাল শুরু হয়ে গেছে। মনে হয় এই শহর বোধহয় ডারউইনের সেই প্রাচীন তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরেছে সর্বোত্তমরাই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ছাড়পত্র পায়।

 উইলিয়াম মান, এক বিশিষ্ট মানুষ। মিশিগানে জন্ম। তিরিশ বছর বয়সে তিনি ফোরথ স্মিথে আসেন। এখানেই থেকে যান। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। ব্যাঙ্কের সাথে যুক্ত হয়েছেন। দু বছর আগে। ব্যাঙ্কটা চালান খুবই ভালোভাবে। অঙ্কে মাথা আছে। তিনি জানেন যে সদস্যদের সাহায্য করতে হয়। তিনি কয়েকটা সরল দর্শনে বিশ্বাস করেন। ব্যবসা করার জন্য নগদ অর্থ ঋণ দেন। ঋণ ঠিকমতো পরিশোধ করা হয়।

এভাবেই মান আজ শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ বাসিন্দা। সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন, কজন ব্যাঙ্কারের সঙ্গে কথা বলতে, যাতে আরও বেশি মানুষকে ঋণ দেওয়া যেতে পারে।

মান ঠিক করলেন আলপস পাহাড়ে বেড়াতে যাবেন। সেখানে গিয়ে যা দৃশ্য। দেখেছিলেন, মনে থাকবে। টেকসাসের এক ভদ্রলোক, অশ্বশালার মালিক, ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। না, যাত্রাটা খুব একটা ভালো হয়নি। তবে সুইজ সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা কিন্তু ভালো ব্যবস্থাই করেছিল। তিনি ডিজনি ওয়ার্ল্ডে গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ভ্রমণটা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল।

উইলিয়াম মান সুখী সম্পৃক্ত মানুষ।

.

দিনের প্রত্যেকটা প্রহরকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেক্রেটারি এলেন, বললেন, একজন এসেছেন দেখা করতে। আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। তিনি ব্যাঙ্কারদের নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখছেন।

ব্যাপারটা একেবারে আলাদা। বেশি প্রচার দরকার। তাহলে ব্যবসাটা ভালো হবে। উইলিয়াম মান জ্যাকেটের ওপর হাত দিয়ে আঁচড়ে নিলেন। বললেন- ওনাকে পাঠিয়ে দাও।

এই আগন্তুক এক আমেরিকান, সুন্দর পোশাক পরা, বুঝতেই পারা যাচ্ছে, তিনি কোনো ভালো পত্রিকা কিংবা সংবাদপত্রে কাজ করেন।

মি. মান?

–হ্যাঁ।

রবার্ট বেলামি।

–আপনি আমাকে নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখবেন?

না, শুধু আপনাকে নিয়ে নয়। আমার কাগজে আপনার কথাই বারবার বলা হবে।

–কোন্ পত্রিকা?

 –ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

–বাঃ, বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা।

–এই জার্নালের মনে হচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাঙ্কারই সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে আলাদাভাবে বেঁচে থাকতে ভালোবাসেন। তারা পৃথিবীর কোথাও যান না। অন্য দেশে গিয়ে সেখানকার ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা দেখেন না। মি. মান, আপনি তো নানান দেশে ঘুরেছেন।

-হ্যাঁ, সত্যি কথা বলতে কী, আমি গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে এলাম।

সত্যি? ভালো লেগেছে?

–হ্যাঁ, আমি সেখানে আরও কয়েকজন ব্যাঙ্কারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমরা বিশ্বের অর্থনীতি পরিস্থিতি সম্পর্কে মত বিনিময় করেছিলাম।

রবার্ট সব কথাগুলো নোট বুকে লিখে নিচ্ছেন। তিনি বললেন- প্রমোদ ভ্রমণের সময় পেয়েছিলেন?

-না, সেভাবে পাইনি, তবে আলপস পাহাড় দেখতে গিয়েছিলাম।

কীভাবে? বলুন তো। বাসে কোনো বিশেষ মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল?

–বিশেষ মানুষ? না, তেমন কিছু নয়।

এক মুহূর্তের জন্য টেকসবাসী লোকটির কথা মনে পড়ে গেল।

মান রবার্টের মুখের দিকে তাকালেন। সাংবাদিক বোধহয় এখন আরও কিছু জানতে চাইবেন। আঃ, আমার জায়গাটা ভালোই হবে ওই আর্টিকেলে।

একজন রাশিয়ান মেয়ে ছিল?

রবার্ট জানতে চাইলেন। সত্যি? তার সম্পর্কে কী জানেন?

—আমরা যখন কথা বলছিলাম, আমি বোঝাচ্ছিলাম, রাশিয়া কত অনুন্নত। সেখানে নানা সমস্যা হয়েছে।

ভদ্রমহিলা নিশ্চয়ই খুব মন দিয়ে কথা শুনছিলেন?

–হ্যাঁ, তাকে দেখে মনে হয়েছিল, তিনি খুবই বুদ্ধিমতী রমণী।

নাম বলেছিল?

 হ্যাঁ, বোলগা এই জাতীয় কিছু।

–কোথায় থাকেন কিছু বলেছিলেন?

-হ্যাঁ, উনি ইয়েভোর এক গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক। এই প্রথম বিদেশ ভ্রমণে এসেছেন। আমার মনে হয় গ্লাসনস্টের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।

রবার্ট সবকিছু লিখছেন।

-বাঃ, এই খবরটার জন্য ধন্যবাদ।

আরও আধঘণ্টা তিনি ওই ব্যাঙ্কারের সঙ্গে কথা বললেন। পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা জেনে নিলেন।

এবার পরবর্তী পদক্ষেপ ফেলতে হবে।

.

রবার্ট হোটেলে ফিরে এলেন। জেনারেল হিলিয়াডের অফিসে ফোন করলেন– খবরটা পৌঁছে গেল। আরও একজনকে পাওয়া গেছে। উইলিয়াম মান, ফোরথ স্মিথ, কানাডার ব্যাঙ্কের স্বত্তাধিকার।

-ধন্যবাদ। এখনই কানাডিয় সরকারকে খবরটা দিচ্ছি।

–উনি আমাকে আর একটা তথ্য দিয়েছেন। আজ সন্ধ্যাবেলা রাশিয়াতে উড়ে যাচ্ছি। ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে।

–আপনি কোথা থেকে কথা বলছেন?

–ফোরথ স্মিথ থেকে।

স্টকহলমে কিছুক্ষণের জন্য থামবেন। ডেস্কের ওপর একটা এনভেলাপ থাকবে।

ধন্যবাদ।

ফ্ল্যাশ মেসেজ জ্বলে উঠল। অত্যন্ত গোপনীয়। সাত নম্বর সাক্ষী উইলিয়াম মান, ফোরথ স্মিথ। খবরটা শেষ হয়ে গেল।

.

উইলিয়াম মানের ঘরে ডোরবেলের শব্দ হচ্ছে। এত রাতে কে এসেছে? তিনি এইসব অবাঞ্ছিত অতিথিদের থেকে দূরে থাকতে ভালোবাসেন। হাউসকিপার চলে গেছে। বউ দোতলার ঘরে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। একটু চিন্তিত হয়ে মান দরজাটা খুলে দিলেন। কালো পোশাক পরা দুজন দাঁড়িয়ে আছে।

–উইলিয়াম মান?

হ্যাঁ।

 একজন পকেট থেকে তার পরিচিত পত্র বার করল- আমরা ব্যাঙ্ক অফ কানাডা থেকে আসছি। ভেতরে আসতে পারি কি?

কী হয়েছে?

 ভেতরে গিয়ে আলোচনা করতে হবে।

–আসুন।

 তারা লিভিংরুমে এলেন।

–আপনি সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন?

–হ্যাঁ, কী হয়েছে?

যখন আপনি ছিলেন না আমরা আপনার বইগুলো অডিট করেছি। আপনি কি জানেন, আপনার ব্যাঙ্কে প্রায় দশ লক্ষ ডলার কম পড়ছে।

উইলিয়াম মান ওই দুজন লোকের দিকে তাকালেন।

–আপনারা কী বলছেন? প্রতি সপ্তাহে আমি সবকটা বই নিজে পরীক্ষা করি। এক-পয়সা এদিক-ওদিক হবে না।

দশ লক্ষ ডলার, মি. মান। আমার মনে হয়, আপনি এসবের জন্য দায়বদ্ধ।

ভদ্রলোকের মুখ রাগে অপমানে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তিনি বললেন–কীভাবে? আপনারা এখনই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। নাকি আমি পুলিশ ডাকব।

–তাতে কোনো লাভ হবে না। পরে এই কাজের জন্য অনুশোচনা করতে হবে।

 রক্ত চোখে মান আগন্তুকদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি চিৎকার করে বলছেন– অনুশোচনা? কী জন্য? কেন আমায় বিরক্ত করছেন বলুন তো?

একজন পকেট থেকে একটা বন্দুক বের করল। বলল– বসে থাকুন মি. মান।

–আমার সর্বস্ব চুরি হচ্ছে, মান বললেন, সবকিছু নিয়ে যান, কিন্তু ঝামেলা করবেন না। হিংসার আবরণ আনবেন না।

বসুন।

 দ্বিতীয় লোকটি লিকার ক্যাবিনেটের দিকে গেল। ওটা বন্ধ ছিল। সে কাঁচ ভেঙে গ্লাস বের করল। তারপর স্কচ খেতে শুরু করল। একটা গ্লাস হাতে নিয়ে মানের কাছে চলে গেল।

-এটা ধীরে ধীরে পান করুন। মনটা ভালো লাগবে।

–ডিনারের পর আমি কখনও মদ খাই না। ডাক্তার বারণ করেছেন।

 অন্যজন বন্দুকটা উইলিয়াম মানের মাথায় ঠেকিয়ে দিল।

–ড্রিক করতেই হবে। না হলে এটা আপনার মাথা ফুটো করে দেবে।

 মান বুঝতে পারলেন, তিনি দুজন দস্যুর হাতে পড়েছেন। তিনি গ্লাসের দিকে তাকালেন। কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসখানা তুলে নিয়ে চুমুক দিলেন।

–এক্ষুনি খেয়ে নিতে হবে।

আরও একটু বেশি চুমুক।

–আপনারা কী চাইছেন? মান কথা বলার চেষ্টা করলেন। একটু গলা চড়িয়ে। মনে হল, বউয়ের বোধহয় ঘুম ভেঙে যাবে। বউ দোতলা থেকে চলে আসবে। না, আশা সফল হল না। ঘুম-ঘুম পাচ্ছে। কেন?

মান আবার বললেন– সব কিছু নিয়ে যান। আমি বাধা দেব না।

–গ্লাসটা পুরো খেতে হবে।

–আঃ, কেন জোর করছেন?

তিনি সবটা খেয়ে নিলেন, এক চুমুক। মনে হচ্ছে একটা আগুন বুঝি শরীরে প্রবেশ করল। ঘুম-ঘুম পাচ্ছে। বললেন– বেডরুমে আমার সিন্দুকটা আছে, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি এটা খুলে দেব? আমার বউয়ের ঘুম ভেঙে যাবে। ও কিন্তু চিৎকার করে পুলিশ। ডাকবে।

বন্দুক হাতে ভদ্রলোক বলল- না, আমাদের কোনো তাড়া নেই। আর একটা ড্রিঙ্ক নেবেন?

দ্বিতীয় লোকটি লিকার ক্যাবিনেট থেকে আর একটা গ্লাস নিয়ে এল। এই ড্রিঙ্ক খেয়ে নিন।

উইলিয়াম মান বললেন- না, আমার লাগবে না।

-হ্যাঁ, এটা আপনাকে খেতেই হবে।

আবার কানের পাশে বন্দুকের নল- এখনই খেয়ে নিন।

ওরা কী চাইছে বুঝতে পারা যাচ্ছে না।

–আমি খাব না, আমার ভালো লাগছে না।

একজন মানুষ শান্তভাবে বলল- যদি শরীর খারাপ লাগে তাহলে আমি আপনাকে হত্যা করব।

মান দুজনের দিকে তাকালেন, তারপর বললেন আপনারা কী চাইছেন?

মি. মান, আমরা তো বলেছি, পরে আপনাকে অনুশোচনা করতে হবে।

–ঠিক আছে, আমি অনুশোচনা করছি।

একজন আগন্তুকের মুখে হাসি। হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলা হল, লিখতে হবে, আমি দুঃখিত আমাকে যেন ক্ষমা করা হয়।

–এইটুকু?

–হ্যাঁ, এইটুকু। আমরা চলে যাব।

আনন্দ এসে গেল। লেখা শুরু হল।

কিন্তু পেনটা ধরতে পারছেন না। লেখা কি সম্ভব?

লেখা শেষ হল। মানের হাত থেকে কাগজ নিয়ে দুজন লোক দরজার দিকে এগিয়ে গেল। বলল- মি. মান, কত সহজে আপনাকে ছেড়ে দিলাম বলুন তো?

এবার আপনারা যাবেন তো?

–এখন চারদিকে অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। নিজেকে বাঁচাবার জন্য এই বন্দুকটা সঙ্গে রাখবেন।

একজন আগন্তুক বন্দুকটা মানের বাঁ হাতে দিল।

–আপনি কি জানেন, কীভাবে গুলি করতে হয়?

না।

ব্যাপারটা খুবই সহজ। এটা এইভাবে ব্যবহার করবেন।

ওই আগন্তুক উইলিয়াম মানের হাতে থাকা বন্দুকে চাপ দিলেন। ট্রিগারের ওপর চাপ পড়ল। একটা শব্দ শোনা গেল। তারপর? রক্তরঞ্জিত চিরকূটখানা মাটিতে পড়ে গেল।

একজন বলল- শুভরাত্রি মিমান। আমাদের কাজটা শেষ হয়ে গেছে।

.

ফ্ল্যাশ মেসেজ জ্বলে উঠল- গোপনীয়। সাত নম্বর, উইলিয়াম মান, ফোরথ স্ট্রিট, কাজ শেষ হয়ে গেছে। মেসেজ শেষ হয়ে গেল।

দশ নম্বর দিন, ফোরথ স্ট্রিট, কানাডা। পরের দিন সকালে ব্যাঙ্কের লোকেরা পরীক্ষা করে বলল, মানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দশ লক্ষ ডলার পাওয়া যচ্ছে না। পুলিশ মানের মৃত্যুর ঘটনাটাকে আত্মহত্যা বলে চিহ্নিত করল।

ওই হারানো টাকা কিন্তু কোনোদিন পাওয়া যায়নি।

.

২৯.

এগারো নম্বর দিন। ব্রাসেলস। রাত তিনটে।

ন্যাটো হেডকোয়ার্টারের প্রধান জেনারেল সিপলে, মাঝরাতে তার ঘুম ভাঙানো হয়েছে। টেলিফোনের আর্তনাদ- জেনারেল, আপনার ঘুম ভাঙানোর জন্য দুঃখিত। একটা খারাপ খবর আছে।

জেনারেল সিপলে উঠে বসলেন। কাল রাতে তাকে অনেকক্ষণ ধরে একটা বিনোদনের আসরে থাকতে হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একদল সেনেটর এসেছিলেন।

উনি বললেন- বিলি, কী সমস্যা হয়েছে?

র‍্যাডার টাওয়ার থেকে একটা সংকেত এসেছে, স্যার। কিছু অচেনা আগন্তুককে দেখা যাচ্ছে।

জেনারেল সিপলে উঠে দাঁড়ালেন পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি।

.

র‍্যাডার ঘরে বিশিষ্ট মানুষ এবং অফিসারদের ভিড়। ঘরের ভেতর র‍্যাডার স্ক্রিনটা রয়েছে। জেনারেল ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে র‍্যাডার স্ক্রিনের দিকে তাকালেন।

ক্যাপ্টেন মুলার বললেন- লুইস, ব্যাপারটা দেখো তো।

ক্যাপ্টেন মুলার আবার বললেন, ঘটনাটা অদ্ভুত। কেউ কি ঘণ্টায় ২২ হাজার মাইল দ্রুত ছুটতে পারে?

জেনারেল সিপলে জিজ্ঞাসা করলেন– কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

–গত আধ ঘন্টা ধরে র‍্যাডার স্ক্রিনে যেসব ছবিগুলো উঠছে, তা দেখে আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমরা ভেবেছিলাম, বোধহয় কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা রাশিয়ার মানুষদের সাথে কথা বলেছি। ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের সাথেও কথা বলা হয়েছে। তারাও র‍্যাডার স্ক্রিনে একই রকম ছবি দেখছে।

তাহলে? যান্ত্রিক পরীক্ষা নয়, তাই তো?

জেনারেল সিপলে মন্তব্য করলেন।

না, সারা পৃথিবীর সব র‍্যাডার যন্ত্র কি খারাপ হয়ে গেল নাকি?

 কতগুলো মুখ ভেসে বেড়াচ্ছে?

–অন্তত বারো চোদ্দোটা হবে। তারা এত দ্রুত ঘুরছে যে ভাবাই যায় না। আমরা তাদের সঙ্গে তাল রাখতে পারছি না। আমরা ভেবেছিলাম, এগুলো বোধহয় উল্কাখণ্ড। আগুনের গোলা, আবহাওয়া বেলুন নাঃ, কোনো কিছু নয়। বিমানের ধ্বংসাবশেষ নয়।

জেনারেল সিপলে র‍্যাডার স্ক্রিনের দিকে তাকালেন এখন দেখা যাচ্ছে?

যে ভদ্রলোক বসেছিলেন, তিনি বললেন- না, এই মুহূর্তে নেই। কিন্তু যে কোনো সময় ওরা আবার ফিরে আসবে।

.

৩০.

অটোয়া, সকাল পাঁচটা

জানুস জেনারেল সিপলের রিপোর্টটা পড়লেন। ইতালিয়ান ভদ্রলোক অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এবার যুদ্ধ শুরু হবে।

ফরাসি ভদ্রলোক বললেন- ইতিমধ্যে ওরা এসে গেছে।

 রাশিয়ান ভদ্রলোক বললেন- বড্ড দেরী হয়ে গেল। বাঁচার কোনো উপায় নেই।

জানুস বাধা দিলেন– ভদ্রমহাশয়রা, এটা এমন একটা দুর্ঘটনা, যার থেকে আমরা মুক্তি পাব না।

ইংরাজ ভদ্রলোক জানতে চাইলেন কী করে এমন কথা বলছেন? ওরা কী চাইছে?

ব্রাজিলিয় ভদ্রলোক বললেন– ওরা বোধহয় আমাদের সবকিছু কেড়ে নেবে। আমাদের এত বছরের বৈজ্ঞানিক চেতনা…

–আমাদের কী হবে? জার্মান ভদ্রলোক জানতে চাইলেন। ওরা কি আকাশপথে আক্রমণ করবে? কারখানাগুলো ধ্বংস করে দেবে?

-তাহলে আমরা আর গাড়ি তৈরি করতে পারব না।

জাপানি ভদ্রলোকের প্রশ্ন- সভ্যতা বাঁচবে কী করে?

–আমাদের সকলেরই একই অবস্থা হবে, রাশিয়ান ভদ্রলোকের মন্তব্য, যদি দূষণ বন্ধ করি, যেটা ওরা বলছে, তাহলে বিশ্বের অর্থনীতি ব্যবস্থা একেবারে ধ্বসে যাবে। দেখা যাক নক্ষত্র যুদ্ধ শুরু হয় কিনা।

জানুস বললেন হ্যাঁ, মানুষদের শান্ত করব কী করে? চারদিকে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে।

 কমান্ডার বেলামি কীভাবে কাজ করছেন? কানাডিয় ভদ্রলোক জানতে চাইলেন।

–উনি দারুণ কাজ করছেন। দু-একদিনের মধ্যে অভিযানের বাকি অংশটা শেষ হবে।